#তুমি_আছো_মনের_গহীনে 💖
#পর্ব- ২৫
#Jannnatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
মেহেভীন আরহামের হাসিমুখের দিকে তাকিয়ে ভাবলো লোকটার এই হাসিমুখটাকে দেখে,যেকোন রমনী সারাটাজীবন পার করে দিতে পারবে। আচ্ছা অভ্রের আগে যদি আরহাম মেহেভীনের জীবনে আসতো,তাহলে হয়তো মেহেভীনের জীবনটা অন্যরকম হতে পারতো। আরহামের ভালোবাসায় জীবনটা অন্যরকম সুন্দর হতে পারতো।
নিজের মাথায় এইরকম উদ্ভুট ভাবনা চলে আসায়, মেহেভীন নিজের মাথায় নিজেই টুকা মারে। এইসব কি ভাবছে সে? তার কি এতো ভাগ্য আছে যে, আরহামের মতো মানুষ তাকে ভালোবাসবে। আরহাম তো অন্য কাউকে ভালোবাসে। সেই ভাগ্যবতী রমনীকে একটিবার চোখের দেখা দেখতে চায় মেহেভীন। আরহামের তো চমৎকার মানুষ যাকে ভালোবাসে, সে নিশ্চয় খুব বিশেষ কেউ হবে। মেহেভীনের ভাবনার মাঝেই, আরহাম বিঘ্ন ঘটিয়ে বলে,
‘ এইযে মেয়ে তখন থেকে কি এতো ভাবছে বলো তো? ‘
‘ আরহাম সাহেব আমার মাঝে মাঝে মনে হয় কিছু কিছু মানুষ যদি আমাদের জীবন একটু আগে আসতো, তাহলে বোধহয় কিছু পরিনতি সুখময় হতো। ‘
মেহেভীনের কি হলো কে জানে মেহেভীন কথাটি বলেই উঠে বারান্দায় চলে গেলো। সে আরহামকে নিয়ে এতোক্ষন ধরে যা ভাবছিলো, যা ভাবতে গেলেই মেহেভীনের মুখে লজ্জা এসে ভীর করে। সে কীভাবে আরহামকে নিয়ে ভালোবাসার কথা ভাবলো? তার মনে কী নতুন কোন অনুভুতি উঁকি দিচ্ছে? যাকে বলে ভালোবাসার অনুভুতি। আরহাম মেহেভীনের পিছনে এসে বলে, ‘ কি হলো এইভাবে উঠে চলে এলে কেন?’
আরহামের সামনে মেহেভীনের কেন যেন দাড়াতে ইচ্ছে করছে না, মেহেভীন দৌড়ে রুমের বাইরে চলে যায়। আরহাম তাজ্জব বনে যায়। মেয়েটার হঠাৎ কি হলো?
আরিয়ান কাল রাতে একপ্রকার ঘুমায়নি বলতে গেলে। কিছুক্ষন পরেই, আরিয়ানকে হসপিটালে চলে যেতে হবে। আরিয়ান বাগানে দাড়িয়ে দাড়িয়ে কফি খাচ্ছিলো, তখনি তার চোখ যায় বাগানে থাকা দুই প্রেমিক-প্রেমিকার দিকে। যারা আর কেউ নয় বাড়ির কাজের মহিলারাহেলা এবং ড্রাইভার মজনু। মজনু কিছুটা ভাব নিয়ে রাহেলাকে বলছে,
‘ বুঝছো নি রাহেলা? আমাগো গ্রেরামে মাইনষে আমারে আবার অনেক সম্মান করে। তোমার যখন আমার বউ কইরা গ্রেরামে লইয়া যামু। সবাই খালি তোমার দিকে চাইয়া থাকবো। তুমি তো চাইয়া থাকার মতোই সুন্দরী। ‘
রাহেলাকে ‘ সুন্দরী ‘ বলে সন্মোধন করায় লজ্জায় মুখ ফিরিয়ে নেয় রাহেলা। মজনু রাহেলার আরেকটু কাছে গিয়ে বলে,
‘ রাহেলা সুন্দরী তোমার হাত টা একটু দাও তো দেখি। ওইদিন তো কুদ্দুস আইসা পড়ছিলো। শালাডা আইসা সব শেষ করে দিছিলো। ‘
রাহেলা লজ্জা নিয়েই, মজনুর দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়। আরিয়ান নিজের চোখ বন্ধ করে ধমকে বলে,
‘ এই তোমরা থামো ভাই। আমি এখনো সিংগাল। এইসব প্রেম-ভালোবাসা আমার সামনে একদমই এলাও না। ‘
সঙ্গে সঙ্গে রাহেলা নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয়। তার ইচ্ছে করছে মাটি ফাক করে ঢুকে যেতে। ছোট সাহেব তাকে এখন কি ভাব্বে? মজনু তো পারলে এখন চিৎকার করে কাঁদতো। তার রোমান্সের সময়েই শুধু সবাই এসে বাঁধা দেয়। রাহেলা লজ্জায় দৌড় দেয়।
মেহেভীন দৌড়ে নীচে নেমে বাগানে আসতেই, রাহেলার সাথে ধাক্কা খায়। মেহেভীন কোনরকম ‘সরি’ বলে। রাহেলাকে পায় কে? সে তো দৌড়। মজনুও দুঃখে বাগান থেকে চলে গেলো। আরহাম বারান্দায় দাড়িয়ে সব কান্ড দেখছে। আরহাম বললো,
‘ বুঝলাম না। সবার হচ্ছে টা কি? সবাই এতো লজ্জা পাচ্ছে কেন?’
আরহামের মা এইসব দেখে বললেন,
‘ কিরে আরিয়ান রাহেলার আবার কি হলো? ‘
আরিয়ান হাসতে হাসতে এসে বললো,
‘ লজ্জা পেয়েছে মা। প্রেম করতে গিয়ে, লজ্জা পেয়েছে। তুমি বরং এইবার রাহেলা মজনুর বিয়েটা দিয়েই দাও। ‘
আরহামের মা হাসেন। আরিয়ান খেয়াল করলো, মেহেভীনের মুখেও লজ্জায় ভাব। আরিয়ান মেহেভীনের কাঁধে হাত রেখে বললো,
‘রাহেলার লজ্জার কারণটা বুঝলাম,কিন্তু তুই এতো লজ্জা পাচ্ছিস কেন বইন? ‘
আরিয়ানের প্রশ্নে থতমত খেয়ে যায় মেহেভীন। মেহেভীন আরহামের দিকে তাকাতেই খেয়াল করলো, আরহামের দৃষ্টি মেহেভীনের মাঝেই সীমাবদ্ধ। আরহামের এমন দৃষ্টিতে আরেকদফা লজ্জা পেলো মেহেভীন। মেহেভীনর আচরণ সব কিছুই আরিয়ানের মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।
________________
ইশরা বেগম মায়রার ঘরে এসে দেখে,মায়রা ঘরের এক কোনে চুপটি মেরে বসে আছে। ইশরা বেগম মায়রার দিকে এগিয়ে গিয়ে, মায়রার পাশে বসে বললেন,
‘ তোমার মুখটা এমন শুকনো লাগছে কেন মায়রা? ‘
মায়রা চুপ হয়ে রইলো। ইশরা বেগম জানেন মায়রার কি হয়েছে। অভ্রের আওয়াজ তিনি নীচ থেকেই শুনেছেন। অভ্রের মাথায় মেহেভীনের ভূত খুব ভালো করেই ঢুকেছে,তিনি তা বুঝতে পারছেন। মায়রা নিরবতা ভেঙ্গে বললো,
‘ আমি বোধহয় অভ্রকে ধরে রাখতে পারলাম না। অভ্র মেহেভীনকে ভূলতেই পারছে না। ‘
ইশরা বেগম মায়রার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
‘ মায়রা তুমি এইভাবে ভেঙ্গে পড়ো না। তুমি তো এখন একা নও। তোমার সাথে এখন আমার বংশের প্রদীপ আমার অভ্রের সন্তান ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছে। তাই বলছি একটু শান্ত হও। চট্টগ্রামে ট্রিপে তো পরশু যাচ্ছো। সেখানে তুমি এবং অভ্র থাকবে শুধু। সেখানে মেহেভীন নামক কোন ছায়া থাকবে না তোমাদের জীবনে। দেখবে অভ্র আবারো তোমাকে ভালোবাসবে। ‘
নিজের শাশুড়ির কথায় নিশ্চিন্ত হয় মায়রা।
___________
অভ্র প্রতিদিনই অফিস থেকে এসেই প্রথমে মেহেভীনের রুমে ঢুকে। একটু শান্তির জন্যে। মেহেভীনের ঘরে প্রতিটা কোণায় কোণায় মেহেভীনের স্মৃতি জমে আছে। আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি। অভ্র আজকেও অফিস থেকে এসে,প্রথমে মেহেভীনের রুমে ঢুকে,কিন্তু রুমে ঢুকেই সে হতবাক। মেহেভীনের জিনিস সব ফেলে দিচ্ছে জবেদা। জবেদা হচ্ছে অভ্রদের বাড়ির কাজের লোক। এইভাবে মেহেভীনের জিনিস ফেলে দেওয়ায়, অভ্রের মাথায় আগুন ধরে যায়। অভ্র জবেদার থেকে জিনিসগুলো নিয়ে বলে,
‘ হাও ডেয়ার ইউ? কার পারমিশনে তুমি মেহুর জিনিসে হাত দিয়েছো? ‘
‘ আমার পারমিশনে। ‘
ইশরা বেগম কথাটি বলে রুমে ঢুকেন। অভ্র অবাক হয়ে বলে,
‘ মা তুমি এইসব কেন করতে বলেছো? ‘
‘ কেন আবার? শুধু শুধু এইসব জিনিস রেখে কি লাভ? ঘরটা খালি করে দেওয়ায় ভালো। ‘
অভ্র ক্ষিপ্ত গলায় বললো,
‘ ব্যাস মা। তোমার অনেক কথা শুনেছি আমি। এই কথাটি আমি শুনতে পারবো না। এখান থেকে মেহুর একটা জিনিসও সরানো হবে না। যদি তা করা হয়,তাহলে এর ফল খারাপ হবে। ‘
অভ্র গটগট করে রুমে চলে গেলো। ইশরা বেগম হতভম্ভ হয়ে গেলেন। যে ছেলে তার মুখের উপর কথা বলতে সাহস দেখাতো না,সে ছেলে কিনা তাকে একপ্রকার শাসিয়ে চলে গেলো। এইসব হচ্ছে টা কি?
___________________ [লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি]
ড্রইং রুমে আরিয়ান ও আরহামের বাবা বসে আছেন। আরহামের মা বার বার মেহেভীনকে খেতে বলছে, কিন্তু মেহেভীন কী খাওয়ার মতো মেয়ে? সে কিছুতেই খেতে চাচ্ছে না। আরিয়ান টিভি দেখতে দেখতে বলে,
‘ ভাবি তুমি এখন ভালোমতো খেয়ে নাও, নাহলে ভাই এসে ধমকে তোমাকে খাওয়াবে। ‘
আরিয়ান বলতে দেরী হলেও,আরহাম তা কাজে করে দেখাতে দেরী করালো না। আরহাম অফিস থেকে এসেই মেহেভীনের কান্ড দেখে রামধমক দিয়ে বললো,
‘ এই স্টুপিড! তুমি খাচ্ছো না কেন? তোমাকে ঠিক কি বললে তুমি একটু ঠিক হবে?’
মেহেভীন ঠোট উল্টিয়ে বলে,
‘ আমার খেতে ইচ্ছে না করলে কি করবো আমি? ‘
আরহামের মা বললেন,
‘ আহা আরহাম মেয়েটাকে এইভাবে বকিস না। ‘
আরহামের বাবা খবরের কাগজ ভাজ করে বললেন,
‘ আমার মেয়েটাকে একদম বকবে না এইভাবে আরহাম। প্রেগন্যান্সির সময় মেয়েদের রুচি থাকে না। একটু ভালো করে বুঝিয়ে খাওয়াতে হয়। ‘
আরহাম তার কাঁধের ব্যাগটা রেখে, বললো,
‘ তোমাদের কি মনে হয়? আমি বলেনি? এই স্টুপিড মেয়ে ভালো কথা শুনার মেয়ে না। ওকে ধমকিয়েই খাওয়াতে হবে। আমি যে কি করবো আমি জানি না।
পরশু আমি চট্টগ্রাম যাচ্ছি কাজে। এই কয়দিন তো এই স্টুপিড টা তার সব আজগুবি কাজ করবে। ‘
আরিয়ান কিছু একটা ভেবে বললো,
‘ ভাই আমার কাছে একটা প্ল্যান আছে? ‘
‘কি? ‘
‘ আমি, ভাবি আর তুই একসাথে চট্টগ্রাম যাই। তুই কাজ করবি আর আমরা ঘুড়বো। তুই ভাবির উপর নজর ও রাখতে পারবি। ‘
আরহামের বাবা সঙ্গে সঙ্গে বললেন,
‘ ইহা সত্যিই উত্তম প্রস্তাব। আমার মনে হয় মেহু মায়ের এইসময় একটু ঘুড়াঘুড়ি করলে,মনটাও ভালো থাকবে। তুই কি বলিস আরহাম? ‘
আরহাম মাথা নাড়িয়ে বলে,
‘ আমার কোন আপত্তি নেই।’
মেহেভীনের মুখে হাসি ফুটে উঠলো এতোদিন পর সে কোথাও ঘুড়তে যাবে।
তৎক্ষনাক আরিয়ানের ফোনটা বেজে উঠলো। আরিয়ান তাকিয়ে দেখে ফারিয়া ভিডিও কল করেছে। আরিয়ান উঠে বাগানের দিকে চলে যায়।
আরিয়ান ফোন রিসিভ করতেই তার চোখ যায় ক্লান্তিতে মিয়ি যাওয়া মেয়েটার দিকে। চোখ-মুখে একরাশ ক্লান্তি তবুও মেয়েটাকে ভালো দেখাচ্ছে।
ফারিয়া ক্লান্তিমাখা গলায় বললো,
‘ এইযে ডাক্তার সাহেব আপনার কথামতো এক কিলোমিটার রাস্তা আমি দৌড়িয়েছি। আমার তো অবস্হা বেহাল। এখন একটু ঘিলু আসবে তো মাথায়? ‘
আরিয়ান মুচকি হেসে বললো,
‘ সবে তো শুরু মাত্র। এখনো আর কিছু করতে হবে আপনাকে তবেই আপনার বুদ্ধি বৃদ্ধি পাবে। ‘
আরিয়ানের কান্ড পিছন থেকে মজনু দেখে ফেললো। আরিয়ান ভিডিও কলে একটা মেয়ের সাথে মুচকি মুচকি হাসছে। নিশ্চই এই মেয়েটা আরিয়ানের প্রেমিকা হবে। তাহলে তো কথাটা জানাতে হবে সবাইকে। আজ আরিয়ান মজনুর সাধের রোমান্সের বারোটা বাজিয়েছে, সেও আজকে দেখাবে মজা। কথাটি ভেবে, মজনু দৌড়ে বাড়িতে এসে হাপাতে হাপাতে বললো,
‘ আপনারা এহানে খাড়াইয়া আছেন? ওইদিকে আরিয়ান ভাইজানতো প্রেম- পেরেতি করতাছে। ‘
কথাটি শুনার সাথে সাথেই আরহাম কেঁশে উঠে। আরহাম বাবার মুখ থেকে চা বেড়িয়ে যায়। আরিয়ানের মা দাড়িয়ে পড়ে। মেহেভীনের মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে সব। আরহামের বাবা ধমক দিয়ে বলে,
‘ কি বললি? আমার হাদারাম টা কি করছে? ‘
‘ আরিয়ান ভাইজান প্রেম-ভালোবাসা করতাছে হাইসা হাইসা একটা মাইয়ার লগে। ‘
আরিয়ান যা করেছে তার থেকেও দ্বিগুন বানিয়ে বানিয়ে মজনু বলছে সবাইকে। আরহামের মা ঝাটা হাতে নিয়ে বলে,
‘ হতচ্ছাড়া। কই সে? আজ ওর খবর আমি নিচ্ছি। ‘
কথাটি বলেই আরহামের মা বাগানে চলে যায়। আরহামের মায়ের পিছন পিছন বাকি সবাইও যায়। আরিয়ান আর কিছু বলতে চাচ্ছিলো ফারিয়াকে, তখনি সে খেয়াল করে তার মা ঝাড়ু হাতে নিয়ে এগিয়ে আসছে। আরিয়ান কি বুঝলো কে জানে? সে কট করে ফোনটা কেটে দৌড়ানো শুরু করলো। ফারিয়াও বুঝতে পারলো না আরিয়ান হঠাৎ এইভাবে কেটে দাওয়ার মানে কি?
#তুমি_আছো_মনের_গহীনে 💖
#পর্ব- ২৬
#Jannnatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
আরহাম মেহেভীনের ঘুমন্ত মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাঁসছে। মেয়েটার মুখে এখনো খাবার লেগে আছে। সত্যিই পুরো বাচ্ছা মেয়েটা। ঠিক করে খেতেও পারেনা। আরহাম মেহেভীনকে খায়িয়ে বাইরে গিয়েছিলো, মেহেভীন খাবারটুকু খেয়েই,ঘুমিয়ে পড়েছে। আরহাম টিস্যু বের করে, মেহেভীনের মুখটা পরিষ্কার করে দেয় যত্ন করে। আরহাম কি হলো কে জানে, কিছুক্ষন মেহেভীনের দিকে অপলকভাবে তাকিয়ে রইলো। হয়তো সেই চাহনীতে ছিলো, শুধুই মুগ্ধতা।
অতঃপর মেহেভীনের পাশেই বসে,ল্যাপটপ হাতে নিয়ে, অফিসের কিছু কাজ করতে লাগলো। মেহেভীনের ঘুম ভেঙ্গে যায়। মেহেভীন নিজের চোখ খুলে দেখে, আরহাম তার পাশেই বসে ল্যাপটপ হাতে নিয়ে ঘুমিয়ে গেছে। মেহেভীন কোনরকম উঠে,আরহামের থেকে ল্যাপটপ টা নিয়ে, আরহামকে ভালো করে শুয়িয়ে দেয় বিছানায়। মেহেভীন আরহামের দিকে তাকিয়ে বলে,
‘ আরহাম সাহেব এই স্টুপিড মেয়েটার খেয়াল রাখতে রাখতে আপনি নিজের খেয়াল রাখাটাই ভূলে গেছেন। ‘
কথাটা বলে মেহেভীন উঠতে নিলে, তার হাত টান পড়ে। সে তাকিয়ে দেখে আরহাম তার হাতজোড়া আকড়ে ধরে, ঘুমাচ্ছে। মেহেভীন বিছানায় বসে পড়ে। আরহামের পাশেই বসে,হেলান দিয়ে বসে থাকে।মেহেভীন আপাতত চাইছে না নিজের হাত টা সরিয়ে, আরহামের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে। মেহেভীন চোখে পুনরায় একরাশ ঘুম এসে ধরা দিচ্ছে। মেহেভীন নিজের চোখজোড়া বন্ধ করে ফেলে আস্তে আস্তে।সে জানে সে সবসময়ই নিরাপদ আরহামের কাছে। আরহাম মানুষটাই এতোটা ভরসার। আরহাম ও মেহেভীন উভয়েই গভীর ঘুমের দেশে তলিয়ে যায়।
_________
আরিয়ান নিজের পায়ে গরম শেক দিচ্ছে। আজ আচ্ছা দৌড়ানি খেয়েছে সে। আরিয়ানের মা ছেলের জন্যে কফি নিয়ে আসতেই, তার ছেলে মুখ ঘুড়িয়ে ফেলে অভিমানে। কিছুক্ষন আগে মজনুর কথা শুনে, আরিয়ানের মা আরিয়ানকে ঝাড়ুর বাড়ি দেওয়ার জন্যে, আরিয়ানের পিছন পিছন দৌড়াতে থাকে। এমনকি দুই তিনটে ঝাড়ুর বাড়ি দিয়েও ফেলে। হঠাৎ এইরকম ঝাড়ুর বাড়ি দেওয়ার কারণ আরিয়ান জানতে চাইলে, তার মা বলে দেয় মজনুর বলা কথাগুলো। অতঃপর আরিয়ান দীর্ঘশ্বাস ফেলে সবাইকে বলে সে শুধু তার কলিগের সাথে অপারেশন এর ব্যাপারে ভিডিও কলে কথা বলছিলো,সেইটা না বুঝে মজনু সবাইকে উল্টো কথা বলেছে। যদিও আরিয়ান সত্যি কথাটা বলেনি। আরিয়ানের কথা শুনে, আরিয়ানের মাসহ সকলের ভূল ধারণা ভেঙ্গে যায়। এমনকি মজনু নিজের বোকামির জন্যে, যথেষ্ট বকাও খায়।
ছেলেকে চুপ থাকতে দেখে, আরিয়ানের মা বললেন,
‘ আমি তো বুঝিনি রে। তুই এভাবে রাগ করে থাকিস না বাবা। ‘
আরিয়ান মুখ ফুলিয়ে থাকে। আরিয়ান মা আবারোও বলে,
‘ কেউ যদি এইভাবে রাগ করে থাকে, তাহলে আমি ভেবেছিলাম আজকে আলুর পরোটা করবো। তা আমি করবো না। ‘
‘ আলুর পরোটা’ আরিয়ানের সবসময়ই পছন্দ। তার পছন্দের খাবার হবে শুনে, আরিয়ান সঙ্গে সঙ্গে তার মাকে বললো,
‘ মা আমি একদম রেগে নেই। আমি সব ভূলে গিয়েছি। এখন তাড়াতাড়ি গিয়ে পরোটা বানাও। ‘
ছেলের কান্ড দেখে আরিয়ানের মা মুচকি হেসে বললেন,
‘ পাগল ছেলে আমার। আচ্ছা তুই দাঁড়া আমি আসছি। ‘
কথাটি বলেই আরিয়ানের মা রান্নাঘরে চলে যায়। আরিয়ানের মা চলে যেতেই, আরিয়ানের ফোনটা বেজে উঠে। আরিয়ান দেখে ফারিয়ার ফোন। আরিয়ান ফোনটা রিসিভ করার সাথে সাথেই, ফারিয়া উৎকন্ঠি হয়ে বলে,
‘ ডক্টর সাহেব আপনি ওইসময় ফোন কেটে দিলেন কেন? আমার কি কোথাও ভূল হয়েছে?’
আরিয়ান বিড়বিড় করে বললো,
‘ ওইসময় তো আমি ঝাড়ু বাড়ি খেতে ব্যস্ত ছিলাম, তাও তোমার জন্যে। ‘
‘কি বললেন? ‘
‘ না মানে, বলছিলাম কি আসলে আমার নেট প্রব্লেম হয়ে গিয়েছিলো তাই কেটে দিয়েছিলাম। ‘
‘ওহ আচ্ছা। যে কারনে আপনাকে ফোন দিলাম। সেইটাই তো বলা হলো না। ‘
‘কিসের জন্যে? ‘
ফারিয়া ফিসফিস করে বললো,
‘ আমি না আমার বন্ধু-বান্ধুবীদের সাথে ট্যাুরে যাচ্ছি। তাই এই কয়দিন আপনার সাথে যোগাযোগ করতে পারবো নাম তাই চিকিৎসাও নিতে পারবো না। আমি বরং ট্যাুর থেকে এসে, আপনার সাথে যোগাযোগ করবো ওকে? ‘
ফারিয়ার সাথে কয়দিন আরিয়ানের যোগাযোগ থাকবে না, কথাটি ভেবে আরিয়ানের মনটা কেন যেন খারাপ হয়ে গেলো। আরিয়ানের ভাবনার মাঝেই ফারিয়া বলে,
‘ ডক্টর সাহেব আমি রাখছি আল্লাহ হাফেজ। ‘
‘ আল্লাহ হাফেজ। ‘
ফারিয়া ফোনটা কেটে দিলো। তার ও মনটা খারাপ হয়ে গেলো হঠাৎ করে।
__________________
আরহাম সকালে উঠেই দেখে মাথাটা তার ভিষন ধরেছে। এই সময় চা হলে মন্দ হতো না। আরহাম উঠতে নিলে, তার চোখ যায় পাশে থাকা চায়ের কাপে। আরহাম চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে দেখে তার পাশে ছোট্ট চিরকুট। তাতে লিখা,
‘ শুভ সকাল আরহাম সাহেব। এইবার একটু নিজের খেয়াল টাও রাখুন। ‘
আরহাম জানে এইসব মেহেভীনের কাজ। আরহাম মুচকি হেসে চায়ে চুমুক দিলো।
_____
আরহাম এয়ারপোার্টে দাড়িয়ে আছে তাহসান, রুশা ও বাকি অফিস কলিগদের সাথে। কিছুক্ষন পরেই তাদের চট্টগ্রামে যাওয়ার ফ্লাইট। আরহাম ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আছে। তাহসান আরহামের দিকে এগিয়ে এসে বললো,
‘ তুই নাকি গাড়িতে করে আসবি আরহাম? তুই তো আমাদের সাথে প্লেনে করেই চলে আসতে পারিস। ‘
আরহাম চাইলে আরিয়ান এবং মেহেভীনকে নিয়ে
প্লেনে করেই যেতে পারতো, কিন্তু এখন মেহেভীন প্রেগনেন্ট। এই অবস্হায় মেহেভীনের প্লেনে উঠা ঠিক হবে না। আরহাম ভেবেছে মেহেভীনকে নিয়ে গাড়ি করেই নিয়ে যাবে। আরহাম বললো,
‘ আমি গাড়ি করেই যাবো। তোরা যা। আমি ঠিক পৌঁছে যাবো। ‘
রুশা বুঝতে পারলো না আরহাম কেন তাদের সাথে যাচ্ছে না? জানার আগ্রহ থাকলেও, সে মুখে তা প্রকাশ করলো না। রুশা ঠিক করেছে, চট্টগ্রামে গিয়েই সে তার মনের কথা খুলে বলবে আরহামকে।
আরহামের থেকে বিদায় নিয়ে, সকলের প্লেনে উঠে গেলো। আরহাম গাড়ি করে বাড়ির ফিরে আসার পথে, তার মাকে ফোন করলো। আরহামের মা এবং মেহেভীন একসাথে মিলে কাপড় গুজাচ্ছে। আজকে রাতেই আরহাম, মেহেভীন ও আরহাম বেড়িয়ে পড়বে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে। আরহামের মায়ের ফোন বেজে উঠতেই, তিনি তা রিসিভ করার সাথে সাথেই আরহাম বললো,
‘ হ্যালো মা? তোমাদের প্যাকিং করা সব শেষ? ‘
‘ হয়ে গেছে প্রায়।’
‘ আচ্ছা শুনো তুমি মেহেভীনের সব ওষুধগুলো একটু দেখে নিও। ও যা স্টুপিড ওষুধ গুলোও ঠিকমতো নিতে পারবে না। ‘
‘ হুম বাবা। বুঝেছি আর কিছু? ‘
‘ মেহেভীনের পথে বমি হতে পারে, তাই ব্যাগেও কিছু আচার দিয়ে দাও। ‘
আরহামের মা হেসে বললেন,৷ ‘ সব রেখেছি আমি। বউকে নিয়ে তোর এতো চিন্তা বাপ রে বাপ। ‘
আরহাম বললো, ‘ চিন্তা করবো না? যা স্টুপিড মেয়ে একটা। নিজের একটুও খেয়াল রাখবে না। আমি তো পারলে এইরকম জার্নির জায়গায় মেহেভীনকে নিতাম না,কিন্তু মেহেভীন তো মেহেভীনই। সারাদিন শুধু স্টুপিড কাজ করে বেড়াবে। আমি তো ওকে রেখে গেলেও ওখানে গিয়ে, শান্তিমতো কাজ করতে পারবো না। আমার মাথায় শুধু এইটাই ঘুড়পাক খেতো স্টুপিড মেয়েটা নিজের খেয়াল না রেখে,সব স্টুপিডের কাজ করছে। ‘
কথাগুলো একদমে বলে কেটে দিলো আরহাম। ফোনটা স্পিকারে ছিলো যার কারনে আরহামের কথা মেহেভীন ও শুনেছে। যদিও তাকে স্টুপিড বলেছে, তবুও তার কেন যেন এই স্টুপিড ডাকটাকেই বড্ড আপন মনে হচ্ছে। এই মানুষটার কত চিন্তা তাকে নিয়ে। মেহেভীন তো তার কেউ না। তাহলে শুধু দায়িত্ববোধের জন্যে একটা মানুষ আরেকটা মানুষকে নিয়ে এতোটা চিন্তা করে? আরহামের মা মেহেভীনের ললাটে ধরে বললেন,
‘ মেহু মা দেখলি? আমার ছেলেটার ঠিক কতটা চিন্তা তোকে নিয়ে। আমার ছেলেটা এতোটা ভালোবাসো ফেললো কি করে রে? আমার ছেলেটা কতটা বেখায়ালি ছিলো, আজ সে কতটা খেয়াল রাখে তোর। কতটা ভালোবাসলে,মানুষ এইভাবে চেঞ্জ হতে পারে। ‘
‘ভালোবাসার ‘ কথা শুনে মেহেভীনের বুকটা ধক করে উঠে। আরহাম তাকে ভালোবাসে? এইসব কি ভাবছে সে। সে তো জানে আরহাম শুধু দায়িত্ব পালন করছে। তবুও মনে একটা প্রশ্ন উঁকি দেয়। সবটাই কি দায়িত্ব?
_________
অভ্রের মায়ের থেকে বিদায় নিয়ে,মায়রা এবং অভ্র গাড়িতে বসে পড়ে। মায়রার মনে তো অনেক খুশি। এইবার সে সবকিছু ঠিক করে ফেলবে। যদিও অভ্রের মুখে হাঁসির বিন্দুমাত্র ছিঁটেফোটাও নেই। তার মন শুধু মেহেভীনের মাঝে সীমাবদ্ধ। মায়রা অভ্রকে বললো,
‘ অভ্র কি ভাবছো? ‘
‘ তেমন কিছু না। ‘
অভ্র গাড়ি চালানো তে মনোযোগ দিলো। দুজনের মাঝে পিন পিন নিরবতা। দুজন একসাথে থেকেও আজ কতটা আলাদা!
_________
আরহাম, আরিয়ান ও মেহেভীন গাড়ি দিয়ে রওনা হয়েছে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে। সামনের সিটে ড্রাইভার মজনু এবং তার পাশে আরিয়ান। পিছনের সিটে মেহেভীন এবং আরহাম। আরহাম ল্যাপটপে কাজ করছে, এবং আড়চোখে মেহেভীনের দিকে তাকাচ্ছে। মেহেভীনে জানালার কাছে ঘেষে বসে আছে। মেহেভীনের মনটা হুট করেই আজ খারাপ হয়ে গেলো। কেন যেন তার মনে হচ্ছে সামনে যা হবে, তা ভালো হবে না। নিশ্চই কিছু একটা খারাপ হবে।
এখন বেশ রাত। নিস্তব্ধ রয়েছে শহরটা। রাতের শহর দেখতে বেশ ভালো লাগে।
আরিয়ান তার ক্যামেরা দিয়ে রাস্তায় বসে থাকা বিভিন্ন মানুষের মুহুর্তে ক্যামেরাবন্দী করে রাখছে।
সামনে পিচঢালা রাস্তা, তাই মজনু কিছুটা ঘুড়িয়ে গাড়িটা চালায়,যার ফলে তাল সামলাতে না পেরে মেহেভীন………..
#তুমি_আছো_মনের_গহীনে
#পর্ব- ৩৪
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
মেহেভীনকে এইভাবে হুট করে উধাও হয়ে যেতে দেখে আরহামের ভিতরে ভয় ঢুকে যায়। সে দ্রুত নাঁচ বন্ধ করে দিয়ে, মেহেভীনকে খুঁজতে যাওয়ার জন্যে, পা বাড়াতে গেলে তা চোখ আটকে যায় সামনে থাকা শাড়ি পরিহিতা রমনীর দিকে। মেহেভীনকে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর রমনীরা তাদের মতো করে শাড়ি পড়িয়ে দিয়েছে। মেহেভীন শাড়িটা কিছুটা তাদের মতো করেই কোমড়ে গুজে পড়েছে। চুলগুলো ছেড়ে দিয়েছে। মুখে নেই কোন কৃত্রিম ম্যাকাপের প্রলেপ। তার ঠোটজোড়া জুড়ে রয়েছে হাল্কা লিপ্সটিপ। মেহেভীনের এমন রুপের স্নিগদ্ধতায় যেকোন পুরুষ ঘায়েল হতে প্রস্তুত। মেহেভীনকে দিকে আরহাম মেহেভীনের দিকে এগিয়ে আসে। মেহেভীন লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। মেহেভীন ভেবেছে আরহাম হয়তো তার প্রশংসা করবে, কিন্তু আরহাম তার সব আশায় জল ঢেলে দিয়ে, বাজখাই গলায় বললো,
‘ এইরকম স্টুপিডের মতো শাড়ি পড়ে আছো কেন? এমনিতেই সারাক্ষন হোচট খেতে থাকো। তার মধ্যে এই ভারি শাড়িতে তো বার বার হোচট খাবে। তুমি কী এইসব শাড়ি ক্যারি করতে পারো? স্টুপিড মেয়ে একটা। ‘
মেহেভীনের এখন রাগে কান্না আসছে। কই ভেবেছিলো, সে শাড়ি পড়েছে বলে লোকটা তার একটু প্রশংসা করবে, তা না করে সে বকেই যাচ্ছে। আরিয়ান ও ফারিয়া মেহেভীন এবং আরহামের কাছে আসে। আরিয়ান মেহেভীনের কাঁধে হাত রেখে বললো,
‘ কি হলো ভাই? তুমি আমার কিউটি ভাবিটাকে এইভাবে বকছো কেন? দেখছো না? শাড়িতে আমার কিউটি ভাবিটাকে কতটা কিউট লাগছে। তুমি আমার ভাবির প্রশংসা না করে, উল্টো বকছো?’
ফারিয়াও আরিয়ানের কথায় সায় দিয়ে বলে,
‘ সত্যিই তো আজ মেহেভীন আপুকে অনেক সুন্দর লাগছে। ‘
মেহেভীন আগুনরুপী রুপ ধারণ করে, ক্ষিপ্ত গলায় বললো,
‘ না উনি আমার প্রশংসা করবে কেন? আমি তো শাড়ি ক্যারিই করতে পারি না। ওই মেয়েগুলো আছেনা? যাদের সাথে উনি নাঁচানাঁচি করছিলেন? তারাই তো শাড়ি ভালো করে ক্যারি করতে পারে। আমি তো কিছুই পারি না। আমি গেলাম। উনি বরং ওই মেয়েগুলোর সাথেই নাঁচতে থাকুক। ‘
মেহেভীন কিছুটা দূরে গিয়ে বসে পড়লো। রাগে সে একেবারে আগুনরুপী রুপ ধারন করে আছে। আরিয়ান ও ফারিয়াও মেহেভীনের সাথে গিয়ে বসে পড়ে। মেহেভীনের দিকে তাকিয়ে, আরহাম ঠোটের কোণে মুচকি হাঁসি ফুটিয়ে তুলে। সে মেহেভীনকে কিছুটা রাগানোর জন্যেই বকাবকি করেছে। আরহামের কেন যেন মেহেভীনের রাগান্বিত চেহারাটা বেশ লাগছিলো।আরহামের চোখে মেহেভীনের জন্যে একরাশ মুগ্ধতা ধরা দিচ্ছে। মেহেভীন হয়তো জানে না আরহাম ছাড়াও আরেকজন মেহেভীনের দিকে মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে আছে। সে আর কেউ নয় অভ্র।
অভ্রের কাছে শাড়ি পরিহিতা মেহেভীনকে কোন হুরপরীর থেকে কম সুন্দর লাগছে না। তার মেহুর চোখ-মুখে আজ কতটা মায়া। ভেবেই অভ্র মৃদ্যু হাসে। তা মায়রার নজরে এড়ায় না। তবুও মায়রা চুপ থাকে। আজ-কাল তার কিছুই বলতে ইচ্ছে করেনা।
______
আরিয়ান মেহেভীনের কানের কাছে গিয়ে বললো,
‘ কিছু পুড়ছে মনে হয়? ‘
মেহেভীন আরিয়ানের দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
‘ না মানে.. তুই যেভাবে রাগ করে আছিস। দেখে মনে হচ্ছে তুই চেয়েছিলিস ভাইয়া যেন তোর একটু প্রশংসা করুক। তার মানে ভাইয়ের প্রতি তোরও কিছু এক্সপেকটেশন ছিলো তাইনা? ‘
আরিয়ান কথাটি বলেই উঠে চলে যায়। মেহেভীন গভীর চিন্তায় ঢুবে যায়। সত্যিই তো আরহাম তার প্রশংসা করেনি বলে সে এতো রেগে যাচ্ছে কেন? তার মানে কি সে ও চাইছিলো আরহাম যেন তার প্রশংসা করুক। সবকিছু মিলেই এইটাই দাঁড়ায় মেহেভীনেরও আরহামের প্রতি আশা তৈরি হচ্ছে। তাহলে কী মেহেভীনের মনে আরহামের জন্যে যে সুপ্ত অনুভুতি ছিলো, তা কী দিনের পর দিন বেড়ে উঠছে?
মেহেভীনের ভাবনার মাঝেই, তার ফোনে আবারো মেসেজ আস সেই অচেনা নাম্বার থেকে। তাতে লিখা,
‘ওগো রমনী! শাড়ির আঁচলটা নিয়ে নিজের মুখশ্রীটা এইবার একটু ঢেকে রাখো। তুমি কী জানো? তোমার এই আগুনরুপী রুপ আমার ভিতরটাকে পুড়িয়ে দিচ্ছে। প্রেয়সী তোমার এই আগুনরুপী রুপে যে, আমি শতবার মরে যাই। তুমি জানো কি? ‘
মেহেভীন চমকে উঠে। তার মানে যে চিঠিপ্রেরক তাকে চিঠি লিখে পাঠাতে সে এখানেই আছে? কিন্তু কোথায় সে?
_________
রাইসা সবে মাত্র দেশে ফিরেছে। দেশে ফিরেই সে ডক্টর জেসমিনের চেম্বারে এসেছে। ডক্টর জেসমিনেই তাকে ডেকে পাঠিয়েছেন। কেননা তার কাছে মেহেভীনের প্রেগন্যান্সির দুটো রিপোর্ট ছিলো, একটি তিনি মেহেভীনকে দিয়ে দিয়েছিলো। অপরটি তিনি মেহেভীনের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্যে রাইসার কাছে রিপোর্টটি দিয়ে দেন।কারন তিনি কিছুতেই মেহেভীনের সাথে যোগাযোগ করতে পারছেন না।তিনি খুব ভালো করেই রাইসাকে চিনে। তিনি এইটাও জানেন রাইসার সাথে মেহেভীনের ভালো সম্পর্ক আছে। তাই তিনি রাইসার কাছে রিপোর্টটা দিয়ে দেয়। রিপোর্টটা দেখে রাইসার আর বুঝতে বাকি থাকলো না যে, মেহেভীনের গর্ভে অভ্রের সন্তান বেড়ে উঠছে। কেননা রিপোর্টটা মেহেভীন এবং অভ্রের ডিভোর্সের দুইদিন আগের। তখন মেহেভীন দুই মাসের প্রেগন্যান্ট ছিলো। রাইসা চেম্বার থেকে বেড়িয়ে আসে। সে সিদ্ধান্ত নেয় সে সবকিছুই অভ্রকে জানাবে।
________
নভেম্বর মাসেই শীত প্রায় চলে এসেছে বলতে গেলে। এখুনি এই শীতে সবার কাঁপাকাঁপির অবস্হা। এখানকার ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর লোকেরা বড় বড় কাঠ
দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে রেখেছে,শীতটাকে নিয়ন্ত্রন করার জন্যে। আগুনের পাশেই সবাই নাঁচ-গান করছে। বেশ ভালো পরিবেশ তৈরি হয়ে গিয়েছে। পরিবেশটাকে আরো ভালো করার জন্যে,আরিয়ান আরহামকে গান গাইতে বলে। আরিয়ানের সাথে বাকি সবাইও আরহামকে অনুরোধ করে। তাই আরহাম গান গাইতে রাজি হয়ে যায়। মেহেভীন চিঠি প্রেরকে খুঁজার উদ্দেশ্য পা বাড়াতে নিলে, আরহাম পিছন থেকে মেহেভীনের হাত ধরে নিজের সাথে হাল্কা করে মিশিয়ে গাইতে থাকে,
তুমি হাসলে আমার ঠোঁটে হাসি,
তুমি আসলে জোনাকি রাশি রাশি
রাখি আগলে তোমায় অনুরাগে
বলো কিভাবে বোঝাই ভালোবাসি?
সব চিঠি সব কল্পনা জুড়ে
রং মিশে যায় রুক্ষ দুপুরে
সেই রং দিয়ে তোমাকেই আঁকি
আর কিভাবে বোঝাই ভালোবাসি।
হ্যাঁ প্রাণ দিতে চাই, মন দিতে চাই
সবটুকু ধ্যান সারাক্ষন দিতে চাই
তোমাকে, ও.. তোমাকে।
মেহেভীন ও নিচের দিকে তাকিয়ে তাল মিলিয়ে গাইতে থাকে,
যেদিন কানে কানে সব বলবো তোমাকে
বুকের মাঝে জাপটে জড়িয়ে ধরবো তোমাকে।
পথ চেয়ে রই, দেরি করোনা যতই
আর ভোলা যাবেনা জীবনে কখনোই,
তোমাকে, ও.. তোমাকে।
মেহেভীন ও আরহাম একে-অপরের চোখের দিকে নিষ্পলকহীনভাবে তাকিয়ে গান গাইতে থাকে। রুশা আরহাম ও মেহেভীনের এতোটা কাছে দেখে কষ্ট পায়। সে দুঃখী মনে অনুষ্টান ছেড়ে চলে যেতে নিলে, তাহসান তার হাতজোড়া শক্ত করে চেপে চোখের ইশারায় জানান দেয় রুশা যেন শক্ত থাকে। তাহসান সবসময়ই তার পাশে রয়েছে। রুশা যায়না বরং খানিক্টা ভরসা পেয়, তাহসানের পাশে বসে থাকে।
ফারিয়াও গানটা চোখ বন্ধ করে অনুভব করছে। আরিয়ান ফারিয়ার দিকে তাকিয়ে স্মিত হাঁসে। অভ্র দুজনকে এইভাবে এতোটা কাছে দেখে, নিজের মাথা ঠিক রাখতে পারেনা। সে আড়ালে চলে আসে। তার বুক ফেটে কান্না আসছে। সে নিজেকে শক্ত রাখতে চাইলেও সে তা পারছে না।সে বুঝতে পারছে মিথ্যে ভালেবাসার অভিনয় করতে গিয়ে,নিজের অজান্তেই সে অনেকটা ভালেবেসে ফেলেছে মেহেভীন। কিন্তু সে তার ভালোবাসাটা উপলব্ধি করতে গিয়ে,বড্ড দেরী করে ফেলেছে। কেননা মেহেভীন তো এখন অন্য কারো।
____
আরহাম ও মেহেভীন একে-অপরের চোখে যেন হারিয়ে যাচ্ছে। হাতে তালির শব্দে তাদের ঘোর ভেঙ্গে যায়। সবাই তাদের গানকে ভিষনভাবে উপভোগ করছে। মেহেভীন কিছু একটা ভেবে দৌড়ে চলে যায় কিছুটা দূরে। মেহেভীনকে এইভাবে দৌড়াতে দেখে সবাই কিছুটা অবাক! আরিয়ানও মেহেভীনের পিছন পিছন চলে যায়। মেহেভীন দৌড়ে এসে ঢুকরে কেঁদে উঠে। এক মুহুর্তের জন্যে সে আরহামের চোখে হারিয়ে গিয়েছিলো। আরহামের প্রতি তার যেই অনুভুতি রয়েছে, তা ভয়ংকর পরিনতির সৃষ্টি করতে পারে, যা কিছুতেই চায় না মেহেভীন।
‘ আজ না হয় পালিয়ে এলি সবার থেকে,কিন্তু কাল? পরশু? আর কতদিন এইভাবে নিজের অনুভুতির থেকে পালাবি মেহু? ‘
আরিয়ানের কথা শুনে, মেহেভীন কান্নাভেজা গলায় বলে,
‘ তুই জানিস আরিয়ান। ভালোবাসা আমার কাছে ভূল ছাড়া আর কিছুই না। একবার ভালোবেসে আমি ঠকে কষ্ট পেয়েছি, সেই কষ্ট আমি দ্বিতীয়বার পেতে চাইনা। আমার পক্ষে দ্বিতীয়বার ভালোবাসা সম্ভব না। ‘
আরিয়ান মেহেভীনের কাঁধে হাত রেখে বলে,
‘ তোকে কিছু বুঝাতে চাইনা আমি৷ শুধু এইটুকুই বলবো লাইফে সঠিক মানুষটা চলে এলে, মানুষ যতই তার অনুভুতির থেকে পালানোর চেষ্টা করুক না কেন,সে দ্বিতীয়বার ভালোবাসতে বাধ্য। সত্যি বলছি লাইফে একজন সঠিক ভালোবাসার মানুষ খুব দরকার। তাহলেই বুঝবি ভালোবাসা মন্দ নয়।’
আরিয়ান কথাটি বলেই প্রস্হান করে। মেহেভীন কথাগুলো শুনে চুপ হয়ে পড়ে। তখনি সে অনুভব করে কেউ তার চোখ………
#তুমি_আছো_মনের_গহীনে 💖
#পর্ব- ৩৫
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
মেহেভীন বুঝতে পারছে না তার এই মুহুর্তে ঠিক কি করার উচিৎ। মেহেভীনের ভাবনার মাঝেই, কেউ তার চোখ বেঁধে দেয়। হুট করে এমন করাতে মেহেভীন কিছুটা ভরকে যায়। কে তার চোখ বেঁধে দিলো? মেহেভীন চিল্লাতে নিলে,কেউ তার মুখ আলতো করে চেপে, মেহেভীনের কানের কাছে মুখ নিয়ে ধরা গলায় বলে, ‘ প্রেয়সী!তুমি আবারোও ছটফট করছো? কাজের সময়ই এতো ছটফটে হয়ে যাও কেন?ইটস নট ফ্যায়ার। ‘
কথাটি বলেই যুবক তার প্রেয়সীর কানের লতিতে তার ঠোটের উষ্ম পরশ দিয়ে দেয়। কন্ঠটা শুনে মেহেভীনের শরীরের শীরায় শীরায় মৃদ্যুভাবে কেঁপে উঠে। মেহেভীনের শরীরটা যেন তার গতি
হারিয়ে ফেলছে। ভূত দেখলে মানুষ যেভাবে কেঁপে উঠে,তেমনি অচেনা আগুন্তকের হুটহাট স্পর্শে মেহেভীন কেঁপে উঠছে। কন্ঠটা পরিচিত লাগলেও তেমন একটা বুঝতে পারছে না। কিন্তু মেহেভীন এইটুকু আন্দাজ করতে পারছে, রং খেলার দিন মেহেভীনকে যে রং মাখিয়েছিলো, সেই আজ তার চোখ বেঁধে দিয়েছে। অর্থাৎ সেই চিঠি প্রেরকটা। কিন্তু এই অচেনা যুবকটি হঠাৎ করে মেহেভীনের চোখ বাঁধলো কেন? মেহেভীন এইবার আরো জোড়ে জোড়ে নরাচরা করা শুরু করলো। যুবকটি মেহেভীনের কান্ডে বিরক্ত হয়ে বললো,
‘ এইভাবে নরাচরা করছো কেন? ‘
মেহেভীন ভিতু গলায় বললো,
‘ আমাকে ছেড়ে দিন বলছি। আমি এখন চিৎকার করবো। আমাকে ছাড়ুন। আমি বেশ বুঝতে পারছি আপনি আমার চোখে কাপড় বেঁধে আমার মুখ চেপে,আমাকে মেরে এখানকার পুকুরে আমার লাশটা ফেলে চলে যাবেন। যাতে কেউ বুঝতে না পারে। আমি সব বুঝে গেছি আপনার মতলব টা।’
মেহেভীন এইরকম বোকা কথায় যুবকটির রাগে মাথা গরম হয়ে যায়। সে অনেক কষ্টে নিজের রাগটুকু নিয়ন্ত্রন করে, মৃদ্যু সুরে বললো,
‘আমি তোমাকে মারতে যাবো কেন? তুমি তো আমার প্রেয়সী। ‘
মেহেভীন নিজের থেকে অজানা ব্যক্তিকে সরানোর চেস্টা করে বলে,
‘ আমি জানি না কিছু। আমাকে ছেড়ে দিন। আরহাম সাহেব এবং বাকিরা আমার জন্যে অপেক্ষা করছে। আমাকে যেতে হবে। আমি কিন্তু এখন চিল্লাবো, না ছাড়লে। ‘
কথাটি বলেই মেহেভীন চিৎকার করতে নিলে,যুবকটি তার মুখে চেপে ধরে বলে,
‘ চিৎকার করে কোন লাভ নেই। আজ তোমাকে তোমার সব প্রশ্নের উত্তর দিবো আমি। আজ তোমার সব অপেক্ষার অবসান হবে প্রেয়সী। তার জন্যে একটু অপেক্ষা করতে হবে তোমাকে। ‘
মেহেভীন কিছু বলার আগেই, অজানা ব্যক্তিটি মেহেভীনকে কোলে তুলে, গাড়ির দিকে এগোতে থাকে। মেহেভীন কোলের মধ্যেই নড়তে থাকে,কিন্তু তেমন কোন লাভ হয়না।মেহেভীনের মুখ ও টেপ দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে। মেহেভীনের চোখ বেঁধে দেওয়ায়, মেহেভীনের কাছে সবকিছু ধোঁয়াশা লাগছে। কিচ্ছু দেখতে পারছে না সে। মেহেভীন এইটুকু বুঝতে পারছে,আপাতত সে চলন্ত গাড়িতে আছে। এই গাড়ির গন্তব্য কি? কোথায় নিয়ে যাবে তাকে এই অচেনা যুবকটি?
___
অভ্রের পক্ষে নিজেকে সামলানো দায় হয়ে পড়েছে। নিজের উপর খুব রাগ হচ্ছে তার। কেন সে মিথ্যে অভিনয় করতে গেলো? আজ যদি সে মেহেভীনের সাথে প্রতারণা না করতো, তাহলে তো আজ মেহেভীনের সকল হাঁসিখুশি থাকার কারণ অভ্র হতো, আরহাম নয়। অভ্র মাটিতে ধপ করে বসে, ভেজা গলায় বললো,
‘ মেহু তোকে ফিরে পাওয়ার কি কোন উপায় নেই? একটিবার তোকে ফিরে পেলে, সত্যি বলছি কখনো হারাতে দিবো না তোকে। তুই কি আমাকে ক্ষমা করবি না কখনো মেহু? আমিই বা কি করতাম? আমিও তো বাধ্যই ছিলাম, বিশ্বাস কর নাহলে আমি কিছুতেই তোর সাথে প্রতারণা করতাম না। ‘
অভ্রের মাথায় শুধু একটা কথাই ঘুড়ছে, কোন একটা উপায়ে যদি মেহেভীনকে সে নিজের করে পেতো। অভ্রের জীবনে আশার এক ফালি আলো হয়ে আসে রাইসা। অভ্রের ভাবনার মাঝেই, তার ফোনটা বেজে উঠে। অভ্র রিসিভ করতেই, রাইসা কিছুটা তাড়াহুড়ো করে বলে,
‘ অভ্র তুই আপাতত যেখানেই আছিস। তাড়াতাড়ি ঢাকায় ফিরে আয়। অনেক জরুরী কথা আছে তোর সাথে। ‘
‘ কিন্তু আমি তো এখন চট্টগ্রামে আছি। এখন কীভাবে আসবো? ‘
‘ তুই তাহলে এখুনি রওনা দে অভ্র। কথাটা বলা তোকে অনেক জরুরী বলে আমি মনে করি। তোর এবং মেহেভীনের জীবনের এক চরম সত্য যা তুই জানিস না,কিন্তু এই সত্যিটা তোর জানার সম্পুর্ন অধিকার। তাই বলছি ভাই তুই যত তাড়াতাড়ি পারিস ঢাকায় ফিরে আয়। ‘
কথাটি বলেই রাইসা ফোনটা কেটে দেয়। অভ্র উঠে দাঁড়ায়। অভ্রের কাছে রাইসার গলাটা কেমন যেন লাগলো। কি এমন সত্যির কথা রাইসা বললো? যা মেহেভীন জানলেও অভ্র জানে না। রাইসা যথেষ্ট পরিমানের বুদ্ধিমান মেয়ে। সে বলেছে তার মানে নিশ্চয় এর পিছনে অন্য কোন ঘটনা লুকিয়ে আছে।
অভ্র অনুষ্টানের জায়গায় যায়। সেখানে সবাই দাঁড়িয়ে আছে। অভ্র আরিয়ানের কাছে গিয়ে বলে,
‘ সবাইকেই দেখছি,কিন্তু আরহাম -মেহেভীন কোথায়? ‘
আরিয়ান চারপাশে তাকিয়ে বলে,
‘ মেহেভীন তো পুকুরের দিকটায় গেলো। ভাইয়া কিনারা গিয়েছে,অফিস থেকে জরুরী কল এসেছে। এখানে তো নেটওয়ার্ক পাওয়া যাইনা বলতে গেলে। তাই। ‘
অভ্র কিছু একটা ভেবে বললো,
‘ আমি এবং মায়রা এখন ঢাকায় যাওয়ার জন্যে রওনা দিবো। তোরা না হয় থাক। আমি না হয় পরে তোদের সাথে যোগাযোগ করে নিবো। ‘
অভ্রের এমন কথায় আরিয়ানসহ সবাই হয়ে যায়। আরিয়ান অবাক গলায় বলে,
‘ কিন্তু ভাই? তুমি হঠাৎ এখুনি রওনা দিবে কেন? ‘
‘ তা আপাতত বলতে পারছি না, কিন্তু যাওয়াটা খুব জরুরী। মায়রা তুমি যাবে তো? ‘
মারায় নিচু স্বরে বলে,
‘ তুমি যখন যাবে,তখন আমি আর এখানে থেকে কি করবো? চলো তাহলে। ‘
অভ্র এতোটাই তাড়ার মধ্যে ছিলো যে, আরহামকে জানিয়ে বিদায় নেওয়ার কথাটা তার মাথা থেকেই বেড়িয়ে গেছে। সে নিজের গাড়ি করেই, মায়রাকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্য বেডিয়ে পড়ে। আরিয়ান অভ্রের এমন কান্ডে অবাক হয়ে যায়। অভ্র হঠাৎ এতোটা তাড়া নিয়ে, এমন কোন কাজের জন্যে বেড়িয়ে গেলো?
____________
মেহেভীন উপলব্ধি করে গাড়িটা থেমে গেছে। মেহেভীনকে অচেনা যুবকটি আস্তে ধীরে গাড়ি থেকে নামিয়ে একটি বাড়ির ভিতরে নিয়ে যায়। মেহেভীনের মনে অজানা ভয় জন্ম নিয়েছে। অচেনা যুবকটির উদ্দেশ্য কি? হুট করে অচেনা যুবকটির হাতে তালিতে বাড়ির সব লাইট বন্ধ হয়ে গেলো। মেহেভীন বুঝতে পারছে, যুবকটি তার চোখের কাপড়টা খুলে দিচ্ছে। এমনকি মুখের টেপ ও খুলে দিচ্ছে। মেহেভীন মুখ দিয়ে আওয়াজ বের করতে নিলেই,সঙ্গে সঙ্গে বাড়ির প্রতিটা লাইট জ্বলে উঠে। মেহেভীন বাড়িটির দিকে তাকিয়ে, হতভম্ব হয়ে যায়। বাড়িটা বেশ বড়। বাড়িটার পাশেই বেশ বড় বাগান রয়েছে। মেহেভীন তো তখনি অবাকের শীর্ষে চলে যায়, যখন সে দেখে দেয়ালের সবটুকু অংশ জুড়ে তার ছবি ছড়িয়ে আছে। সব ছবির মাঝখানেই রয়েছে, মেহেভীনের সেই সবুজ রং এর ছবিটা। যেই ছবিটাতে মেহেভীন লজ্জামাখা মুখশ্রীটা শাড়ির আঁচল দিয়ে ঢেকে রেখেছে। ছবিটা কেউ নিজের প্রতিভা দিয়ে, নিপুনভাবে একেঁছে। এই ছবিটা এর আগেও সেই অচেনা চিঠিপ্রেরক মেহেভীনকে পাঠিয়েছিলো। দেয়ালজুড়ে প্রায় সবগুলো ছবিগুলো অত্যন্ত নিপুনতার সাথে অনেকটা যত্ন নিয়ে একেঁছে কেউ। সবগুলো ছবিতেই মেহেভীনের ছোট্ট ছোট্ট আনন্দের মুহুর্তকে তুলে ধরা হয়েছে। মেহেভীনের কাছে মনে হচ্ছে যে ছবিগুলো একেঁছে, সে নিশ্চয় খুব প্রতিভাবান হবে,কেননা প্রতিটা ছবিই যেন ক্যামেরার ছবিকে হার মানানোর মতো সুন্দর। মেহেভীন ছবিগুলোর প্রতি তাকিয়ে মুগ্ধ হয়ে যায়। তখনি সে শুনতে পায়,কারো মধুর গলায় গাওয়া গান। মেহেভীন ছুটে বাগানের দিকে চলে যায়। বাগানের চারপাশে জুড়ে রয়েছে নানারকমের ফুলের গাছ। তার পাশে ছোট্ট একটা পুল রয়েছে। বাগানটা দেখেই বুঝা যাচ্ছে বেশ ভালোবাসা নিয়ে বাগানটি নিজ হাতে বানিয়েছে। মেহেভীন আরেকটু এগিয়ে যেতেই শুনতে পায়, সেই অচেনা যুবকটি বাগানের এক পাশে দাঁড়িয়ে কিছু একেঁ যাচ্ছে এবং গাইছে,
ছন্নছাড়া মনে, এসেছ গোপনে
মুখে বলেছি যে, নিয়ো না তো টেনে
অজানাকে ভুলে সাজা খেটে চলি
জানি শোধরানো হবে না কখনো
তবু গভীরে, সে থাকে গভীরে
যার আঁকা ছবি রে, সে ছিল গভীরে
গভীরে গভীরে, সে থাকে গভীরে
যার আঁকা ছবি রে, সে ছিল গভীরে
সে পাশে নাই, কী জানি নাই
সে পাশে নাই, কী জানি নাই
গানের গলাটা মেহেভীনের কাছে কেমন যেন চেনা চেনা লাগছে। মেহেভীন আরেকটু কাছে যেতেই দেখতে পায়, অচেনা যুবটি মেহেভীনের সেসময়ের একটা ছবি একেঁ যাচ্ছে, যখন মেহেভীন শাড়ি পড়ে আরহামের দিকে লজ্জামাখা দৃষ্টিতে এগিয়ে আসছিলো। সেই মুহুর্তটাকেও কি সুন্দরভাবে নিজের শিল্প দিয়ে ফুটিয়ে তুলছে অচেনা যুবকটি। যুবকটি উল্টো দিকে মুখ করে থাকায়,মেহেভীন তার মুখটা দেখতে পারছে না। মেহেভীন কাঁপাকাপি গলায় বললো,
‘কে….কে আপনি? কি আপনার পরিচয়? ‘
অচেনা যুবকটি এইবার মেহেভীনের দিকে ঘুড়ে তাকালো। মেহেভীন তো স্তব্ধ হয়ে গেছে। তার গলা দিয়ে স্বরটুকুও বের হচ্ছে না। সে কখনোই আশা করেনি তার সামনা থাকা ব্যক্তিটি আর কেউ নয় বরং স্বয়ং আরহাম হাসান তালুকদার। মেহেভীম মিয়ে যাওয়া গলায় বলে,
‘ আরহাম সাহেব! আপনি? ‘
#তুমি_আছো_মনের_গহীনে 💖
#পর্ব- ৩৬ [It’s love]
#Jannatul_ferdosi_rimi. (লেখিকা)
মেহেভীনের মুখের ভাষা যেন হারিয়ে গেছে,সে কখনোই আশা করেনি তাকে পাঠানো অচেনা চিঠি প্রেরক আর কেউ নয় আরহাম হাসান তালুকদার। আরহাম মেহেভীনের সামনে চমৎকার হাসি ঠোটে ঝুলিয়ে রেখেছে। পরণে তার ফরমাল ড্রেসাপ। আরহাম এমন হাসিতে যেকোন মেয়ে অতলে ঢুবে যেতে পারে। মেহেভীনের অবস্হাটা বুঝতে পেরে, আরহাম মেহেভীনের সেই অসম্পুর্ন ছবিখানা আঁকতে শুরু করে দেয় এবং বলে, ‘ জানো প্রেয়সী?
ছোটবেলা থেকেই আমার ছবি আঁকার বড্ড শখ ছিলো। অত্যন্ত সুন্দর কিছু দেখলেই, তা না একেঁ আমি থাকতে পারি। আমার কাছে এখন আঁকা যত ছবি আছে। সবকয়টিই তোমার। কেননা তুমি সবথেকে সুন্দর। ‘
‘ আমি তো অতো সুন্দর নই। ‘
মেহেভীনের এমন কথায় আরহাম না হেসে থাকতে পারেনা। মন মাতানো হাঁসি দিয়ে বলে,
‘আমার কাছে আমার দেখা এই পর্যন্ত সবথেকে সুন্দর তুমি ছাড়া আর কেউ নয়। কেননা আমার চোখেই আমার ভালোবাসার মানুষটিই সেরা।তুমি যেন অন্যন্যা সুন্দর। এই সৌন্দর্য়ের বর্ননা কি শুধুমাত্র কয়েকটা শব্দ দিয়ে প্রকাশ করা যায়? ‘
মেহেভীন কিছু বললো না।তার চোখ-মুখ দেখে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে, তার মনে অনেক প্রশ্ন লুকিয়ে আছে। মেহেভীন এইবার আরহামের কাছে গিয়ে ক্ষিপ্ত গলায় বললো,
‘ তার মানে এতোদিন আপনি আমার সাথে এই লুকোচুরি খেলা খেলেছেন? কিন্তু কেন? ওইদিন রং খেলার দিন ও আপনি ছিলেন তাইনা? এমনকি আমাকে পাঠানো প্রতিটা ম্যাসেজও আপনি পাঠাতেন? এইসব খেলার মানে কি মিঃ আরহাম হাসান তালুকদার? আর আপনার সাথে আমার যে মিথ্যে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ছিলো, সেইটাও পূর্ব পরিকল্পনা তাইতো? কি হলো বলুন? ‘
আরহাম কিছু বলার আগেই,মেহেভীন আরহামের শার্টের কলার চেপে, কান্নামিশ্রিত গলায় বললো,
‘ আমি আপনাকে সম্মান করতাম আরহাম সাহেব,কিন্তু আপনিও এতোদিন আমার বিশ্বাস নিয়ে খেললেন? আমার সাথে এতো বড় গেম খেললেন?ছিহ! আমিও বা কার থেকে এইসব আশা করছি? যার ভাই এতোটা খারাপ হতে পারে,সে নিশ্চয় সাধু হবে না।আসলে রক্ত বলে কথা। রক্ত তো আপনাদের এক। আপনিও আজ প্রমাণ করে দিলেন, আপনিও অভ্রের মতো প্রতারক! ‘
মেহেভীনের এমন কথায় আরহামের মাথায় যেন রক্ত উঠে গেলো। আরহাম মেহেভীনের বাহু শক্ত করে চেপে ধরে বলে,
‘ কি বললে আমি প্রতারক? কি প্রতারণা করেছি আমি। ‘
‘ আমার বিশ্বাস নিয়ে এতোদিন ধরে খেলেছেন, তা প্রতারণা নয়? ‘
আরহাম মেহেভীনকে ছেড়ে দিয়ে, নিম্ন স্বরে বলে,
‘ আমি ভালোবেসেছি তোমায় মেহেভীন,যদি বলো তোমাকে ভালোবাসাটা প্রতারণা। তাহলে হ্যা আমি প্রতারক। কিন্তু বিশ্বাস কর এতোদিন আমি যা কিছুই করেছি,তাতে খারাপ কোন উদ্দেশ্য ছিলো না। আমি শুধুই তোমাকে ভালোবেসে গিয়েছি। ব্যাস এইটুকুই।’
মেহেভীন কিছু বলার আগেই, আরহাম মেহেভীনকে থামিয়ে বললো, ‘ তোমার সব প্রশ্নের উত্তর আমি আজ দিবো। ‘
আরহাম মেহেভীনের হাত ধরে বাড়ির ভিতরে নিয়ে যায়। এই গেস্ট হাউজটা সম্পুর্নটাই আরহামের। আরহাম কিনে রেখেছিলো তার ভালোবাসার মানুষটার জন্যে। নিজের হাতে বাড়িটির প্রতিটা কোনা সে সাঁজিয়ে তুলেছিলো,শুধুমাত্র তার প্রেয়সী তার মেহেভীনের জন্যে। আরহাম মেহেভীনকে বাড়ির ড্রইং রুমটায় নিয়ে গিয়ে, দেয়ালের এক কর্নারের ছবিটার দিকে ইশারা করে বলে,
‘ ছবিটা দেখতে পারছো? ‘
ছবিটার দিকে তাকিয়ে মেহেভীন অবাক হয়ে যায়। কেননা ছবিটার দুইবছর আগের। আরিয়ানদের সাথে মেহেভীনের যখন বন্ধুত্ব হয়, তখন মেহেভীন আরিয়ানের সাথে আরিয়ানদের কলেজের প্রোগামে গিয়েছিলো, তাও আবার লাল রংয়র টকটকে শাড়ি পড়ে। শাড়িটা পড়ে, মেহেভীনকে একেবারে মায়াবতী লাগছিলো, তার রুপের প্রতিটা ঝলক যেন জানিয়ে দিচ্ছিলো, এই রমনীর প্রেমে না পড়ে কি থাকা যায়না। সেই প্রোগামে আরহাম ও গিয়েছিলো। বলতে গেলে আরিয়ানের সাথেই দেখা করতে সে গিয়েছিলো, তখনি তার চোখ আটকে যায় মায়াবী এক রমনীর দিকে। আরহাম অদ্ভুদভাবে যেন প্রথম দেখাতেই মেহেভীনের প্রেমে পড়ে গেলো। তার রাত দিন যেন কেটে যেত মেহেভীনের প্রতি ভাবনায়।
আরহাম মেহেভীনের দিকে ঝুঁকে বলে,
‘ ছবিটা দেখতে পারছো? ছবির মেয়েটার কি প্রানবন্ত হাঁসি তাইনা? মুখটায় কী অজস্র মায়া। এই মায়ার দিকে তাকিয়ে প্রেমে না পড়ে কি থাকা যায়? সেই হাসির মায়ায় আমিও মোহিত হয়ে ভালোবেসেছিলাম তোমাকে প্রেয়সী। ‘
মেহেভীনের বুকটা কেঁপে উঠে। আরহামের মুখে ‘ ভালোবাসার ‘ শব্দটি যেন তার ভিতরে তোলপাড় সৃষ্টি করে দিচ্ছে।
আরহাম এইবার মেহেভীনকে, পাশের ছবিটার দিকে তাকাতে বলে, মেহেভীন তাকিয়ে দেখে তার পাশেই আরহামের ছবিখানা সেই ছবিটা মেহেভীন আরহামের বাড়িতেও দেখেছিলো। ছবিটাতে আরহাম মুগ্ধ হয়ে কারো দিকে তাকিয়ে ছিলো।
আরহাম ছবিটার দিকে মুচকি হেসে বলে,
‘ ছবিটা দেখতে পারছো মেহু? আরিয়ান তুলেছিলো। সেই অনুষ্টানের দিনে। আমি তোমার হাঁসিমাখা মুখটার দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিলাম। বিশ্বাস করো এতোটা মুগ্ধতা নিয়ে আমি কারো দিকে তাকয়নি প্রেয়সী। এতোটাই মায়াবী তুমি।তোমার প্রতিটা হাসি আমাকে প্রতিবার ঘায়েল করতে যথেষ্ট।’
মেহেভীন এইবার মুখ খুলে শক্ত গলায় বললো,
‘ আপনি যে এতো ভালোবাসার কথা বলছেন! আপনি আদোও জানেন অতীতে আমার সাথে কি হয়েছিলো?৷ কি আমার আসল পরিচয়? ‘
মেহেভীন কথায় বিদ্রুপের হাসি দেয় আরহাম।
‘ আমি তোমাকে ভালোবাসি অথচ তোমার অতীত সম্পর্কে জানবো না? ‘
কথাটি বলেই, আরহাম মেহেভীনের দিকে এগিয়ে এসে, মেহেভীনের হাতজোড়া শক্ত করে ধরে বলে,
‘ আমি সবটাই জানি মেহেভীন। ‘
মেহেভীন চমকে উঠে। আরহাম সবকিছু জানে মানে? তার মানে কি আরহাম এইটাও জানে মেহেভীম অভ্রের প্রাক্তন স্ত্রী? মেহেভীনের ভাবনার মাঝেই, আরহাম বলে উঠে,
‘ আরিয়ান জানতো আমি তোমায় ভালোবাসি। তাই তোমার সব ইনফরমেশন আমায় দিতো। তুমি যখন ঢাকায় চলে এলে, তখন আমি তোমার সব খবর নিয়ে জানতে পারি তুমি তো অভ্রেরই কাজিন হয়। সবকিছু যেন আমার কাছে আরো সহজ হতে লাগলো। ভেবেছিলাম অভ্রের সাহায্য নিয়ে তোমাকে নিজের মনের কথা বলবো,কিন্তু সেদিন গাড়িতে দেখালাম ,তোমার ভার্সিটির নবীর বরনের দিনে অভ্র তোমাকে সবার সামনে নিজের ভালোবাসার কথা প্রকাশ করেছে,তুমি তখন সবুজ রংয়ের শাড়িটা পড়েছিলে,লজ্জায় নিজের মুখখানা ঢেকে রেখেছিলে? যার মানে তুমি সম্মতি বুঝিয়েছো। বিশ্বাস করো সেদিন মনে হচ্ছিলো, কেউ বোধহয় আমার বুকটাকে ছিড়ে ফেলেছে। বুক ফেটে কান্না আসছিলো,কিন্তু আমি যে ছেলে মানুষ। ছেলেদের তো কাঁদতে নেই তাইনা? ‘
কথাটা বলতে গিয়ে, একফোটা জল গড়িয়ে পড়লো আরহামের চোখ থেকে। মেহেভীনেরও কেন যেন বড্ড কান্না পাচ্ছে। আরহাম ভেজা গলায় বললো,
‘ আমি ভেবেছিলাম তুমি এবং অভ্র একে-অপরকে ভালোবাসো, তাই তো তোমাদের মাঝ থেকে সরে এসেছিলাম আমি। আমি তো শুধু এইটুকুই চেয়েছিলাম আমার ভালোবাসা ভালো থাকুক। সে আমার গল্পের না হোক, অন্য কারো গল্পের নায়িকা হয়েই ভালো থাকুক। ‘
আরহাম মেহেভীনের একটা ছবি বের করে, হাত বুলাতে বুলাতে বলে,
‘ জানো প্রেয়সী? আমি নিজেকে অনেক বুঝিয়েছি। তোমার থেকে সবসময় দূরে থাকতে চেয়েছি। এমনকি বিদেশেও চলে গিয়েছিলাম। তোমাকে আমি ভূলতে সবকিছু করেছি,কিন্তু পারেনি। তুমি হীনা আমার জীবনটা ছন্নছাড়া হয়ে গিয়েছিলো,
আমার হৃদপাখিটা তো তোমার কাছে ছিলো। বার বার তোমাকে দেখার জন্যে ছটফট করতো। কিন্তু আফসোস তোমাকে আমি চেয়েও ভূলতে পারিনি। কেননা তুমি_আছো_মনের_গহীনে। আমার ঠিক মনের গহীনে তোমার বসবাস। তোমাকে আমি কখনো ভূলতে পারেনি, আর না কখনো ভূলতে পারবো। ‘
মেহেভীনের চোখ দিয়ে অজান্তেই জল গড়িয়ে পড়লো। মানুষটা তাকে এতোটা ভালোবাসতো? ভালোবেসে এতোটা কষ্টও পেলো। আরহাম থমথমে গলায় বললো,
‘ বাকি রইলো তোমার অতীত? আরিয়ান তোমার অবস্হা দেখে যখন আমাদের বাড়িতে নিয়ে এসে,আমার বউয়ের পরিচয়টা দিলো, তখন পর্যন্তও আমি জানতাম না অভ্রের করা অন্যায়ের কথা। বিদেশ থেকে এসে যখন শুনি তুমি প্রতারিত হয়েছো, তখন খবর নিয়ে সবটা জানতে পারি। অভ্র কীভাবে
তোমার সাথে প্রতারণা করেছে।বিশ্বাস করো আমার তখন জাস্ট অভ্রকে খুন করে ফেলতে ইচ্ছে করছিলো। যাকে আমি এতোটা ভালোবাসি,তাকে অভ্র এতোটা কষ্ট দিলো?
আফটার অল আমার ভাই তো। আমার ভাইয়ের সন্তান তোমার গর্ভে। তাই আমি ঠিক করেছিলাম তোমাকে এবং আমার ভাইয়ের সন্তানকে আমার বাড়িতে আমার পরিচয়ে রাখবো। দিনের পর দিন তোমার সব স্টুপিড কাজ হোক কিংবা যেকোন কাজ বার বার তোমার প্রতি যে আমার ভালোবাসাটা ছিলো,তাকে দ্বিগুন বাড়িয়ে তুলেছে। এমনকি তোমার গর্ভে যে সন্তান বেড়ে উঠছে, তার প্রতিও আমার অনেক মায়া হয়ে গেছে। সে পৃথিবীতে আসার আগেই, তাকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছি আমি। এখন তো আমি শুধু বেবীর পৃথিবীতে আসার অপেক্ষাতে থাকি। ‘
মেহেভীন সংকচ নিয়ে বললেন,
‘এতোদিন তা লুকিয়ে রাখলেন অথচ আজ বললেন যে? ‘
আরহাম দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
‘ সঠিক সময়ের অপেক্ষায় ছিলাম। যখন তুমি অভ্রের শোখে কাতর ছিলে,তখন আমি আমার ভালোবাসার চিঠি দিয়ে তোমায় স্বরং করিয়ে দিতাম যে, তোমারও ভালোবাসার কেউ আছে। কেউ আছে যে এখনো তোমাকে প্রতিনিয়ত ভালোবেসে যাচ্ছে। আর দেখতে দেখতে সেই একই সঠিক সময় চলে এসেছে। তাই তোমাকে এই চট্টগ্রামে নিয়ে এসেছি, নিজের মনের কথা জানানোর জন্যে। বলতে গেলে কিছুটা পরিকল্পিতভাবে,কিন্তু এখানেও অভ্র চলে আসে। এমনকি তুমি অভ্রের থেকে শোধ নিতে আমার কাছে আসতে, সেইটাও আমি বুঝতাম। তুমি কষ্টে গুমরে মরতে। তাও আমি দেখতাম। শুধু অপেক্ষা করতাম সঠিক সময়ের। ‘
‘ সঠিক সময় বলতে? ‘
আরহাম এইবার মাথা মেহেভীনের দিকে ঝুঁকে যায়। মেহেভীন দূরে যেতে নিলে,মেহেভীন হাতজোড়া নিজের বুকের মাঝে সীমাবদ্ধ করে বলে,
‘ আমি দেখতে চেয়েছিলাম,আমার সাথে সাথে থাকতে থাকতে তোমারও কি আমার প্রতি কোন সুপ্ত অনুভুতি তৈরি হয় কিনা এবং সব থেকে মজার ব্যাপার হলো তুমিও আমাকে এই কয়দিনে অনেকটাই ভালোবেসে ফেলেছো। শুধুমাত্র অভ্রকে জেলাস ফিল করানোর জন্যে তুমি আমার কাছে আসতে না, আমার প্রতি তোমার মনেও অজান্তেই সুপ্ত অনুভুতি জমে রয়েছিলো,যা আজ ভালোবাসার রুপে পরিনত হয়েছে। ‘
মেহেভীন নিজের থেকে আরহামকে সরিয়ে, তোতলিয়ে বলে,
‘ আমি আপনাকে ভালোবাসি না। ‘
আরহাম এইবার অসহায় কন্ঠে বলে,
‘ তুমি মিথ্যে বলছো মেহেভীন! তুমি আমায় ভালোবাসো। একটিবার শুধু বলো তুমি আমায় ভালোবাসো। কখনো তোমাকে কষ্ট পেতে দিবো না আমি। আমি তুমি এবং বেবী একসাথে বাকি জীবনটা সুন্দরভাবে কাটিয়ে দিবো প্রমিস। ‘
‘ আমি আপনাকে ভালোবাসি না। আমি কখনো কাউকে ভালোবাসতো পারবো না। শুনেছেন আপনি মিঃ আরহাম হাসান তালুকদার? ‘
মেহেভীন খানিক্টা চিৎকার করে কথাটি বলে, বাড়ি থেকে বেড়োতে নিলে, তার পথ আটকে কেউ দাঁড়ায়।
#তুমি_আছো_মনের_গহীনে 💖
#পর্ব- ৩৭
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
মেহেভীনের প্রতাক্ষানে আরহাম রাগে দেয়ালে ঘুষি দেয়। মেহেভীন চিৎকার করে কথাটি বলে বেড়োতে নিলে,কেউ তার পথ আটকে দাঁড়ায়। মেহেভীন তাকিয়ে দেখে আরিয়ান এবং ফারিয়া। আরিয়ানকে দেখেও মেহেভীনের রাগ উঠে যায়। আরিয়ান আগে থেকেই জানতো আরহাম এখানে আছে। তাই আরিয়ান ফারিয়াকে নিয়ে এখানে এসেছে। রাস্তায় আসতে আসতে ফারিয়াকে সবকিছুই বলেছে আরিয়ান। অল্প দিনের পরিচয় হলেও,ফারিয়ার সাথে ভালো সম্পর্ক হয়েছে আরিয়ানের। আরিয়ানের দিকে তেড়ে এসে মেহেভীন বলে, ‘ তুই ও সব জানতি আরিয়ান তাইনা? তাহলে এতোদিন ধরে কেন লুকিয়েছিস তুই? ‘
মেহেভীনকে দেখেই মনে হচ্ছে সে যথেষ্ট রেগে আছে।
আরিয়ান মেহেভীনের কাঁধে হাত রেখে নিচু গলায় বলে, ‘ তার আগে একটিবার তুই শান্ত হ। ‘
‘কি শান্ত হবো আমি? তোকে তো আমি ভরসা করেছিলাম আমি। তুই কেন আমাকে বললি না?’
মেহেভীন রাগে ফুশতে ফুশতে কথাটি বললো। আরিয়ান মেহেভীনের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ ভাই তো তোকে সবকিছুই বললো মেহু। কেন আমরা এইসব করেছিস তুই তো জানিস। অভ্র ভাই যা করেছে সবকিছুই আমরা জানতাম। ভাই শুধু তোর এবং বেবীর জন্যে এতোদিন নিজের ভালোবাসার কথা লুকিয়েছে। এছাড়া আর কোন স্বার্থ নেই ভাইয়ের। ভাই শুধু সঠিক সময়ের অপেক্ষায় ছিলো। ‘
‘ সঠিক সময় বলতে? কিসের সঠিক সময়? তুই বলতে চাইছিস আমি উনাকে ভালোবাসি? উহু তোর কিংবা তোর ভাইয়ের ধারণা সম্পর্ন ভূল। আমার পক্ষে আর কাউকে ভালোবাসা সম্ভব না। আমি চাইনা আর ঠকতে। আমি চাইনা আবারো ভালোবাসার মতো ভূল করে আমার হৃদয়টা ক্ষতবিক্ষত হোক। একবার আমি নিজেকে সামলিয়েছি, কিন্তু দ্বিতীয়বার আমি তা একেবারেই সহ্য করতে পারবো না। আমি শেষ হয়ে যাবো রে আরিয়ান। শেষ হয়ে যাবো।’
মেহেভীন কথাটি বলেই,নিজেকে সামলাতে পারে না। ঠোট কামড়ে কান্না আটকানোর প্রচেষ্টায় থাকে। মেহেভীনের চোখের প্রতিটা জল আরহামের বুকে গিয়ে ছুড়ির মতো ক্ষতবিক্ষত করে দিচ্ছে। মেহেভীনের কথাতে সবাই স্পষ্ট বুঝতে পারে,অভ্রের থেকে এত্তো বড় একটা ধাক্কা খাওয়ার পরে, মেহেভীনের মনে ভালোবাসার প্রতি অসম্ভব ভয় বাসা বেঁধে নিয়েছে। মেহেভীন কষ্ট পাওয়ার ভয়ে, আরহামের প্রতি তার সুপ্ত অনুভুতিগুলো লুকানোর প্রচেস্টায় আছে।
‘ যদিও আমি বাইরের মানুষ আমার হয়তো এই বিষয়ে কথা বলার উচিৎ নয়,কিন্তু আমি না বলে থাকতে পারলাম না। ‘
কথাটি বলেই, ফারিয়া মেহেভীনের হাত জোড়া ধরে, দেয়ালের প্রতিটা ছবির দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ ছবিগুলো দেখতে পারছো মেহু আপু? ডাক্তার সাহেবের থেকে শুনেছি, এই প্রতিটা ছবিগুলো নাকি আরহাম ভাইয়া নিজের হাতে একেঁছে। ছবিগুলো দেখেই মনে হচ্ছে কতটা নিপুঁনতার সাথে,কতটা ভালোবাসার সাথে প্রতিটা ছবি আকাঁ হয়েছে। তাহলে বুঝে দেখো? আরহাম ভাইয়ার ভালোবাসার গভীরতা ঠিক কতটুকু৷ ‘
মেহেভীন নিশ্চুপ হয়ে যায়। ফারিয়া আবারোও বলে,
‘ আমি বোকা মানুষ। বলতে গেলে আস্ত একটা গাধি। কিন্তু একটা কথা কী জানো আপু?
যে মানুষটা তোমার সম্পুর্ন অতীত জেনেও, তোমাকে আগলে রাখতে চায়,সে আর যাই হোক কখনো তোমাকে কাঁদাতে পারেনা। তার আগমনই ঘটে কোন সুখময় অধ্যায়ের সূচনার জন্যে। ‘
ফারিয়ার কথা শুনে আরিয়ান মুগ্ধ হয়। মেয়েটা কতটা গুছিয়ে কথাগুলো বললো। সত্যি মেয়েটার মাঝে বিশেষ কিছু আসে। আরিয়ানও এইবার মেহেভীনের হাত শক্ত করে চেপে ধরে বলে,
‘ একটিবার ভাইকে সুযোগ দে মেহু। ট্রাস্ট মি ভাই তোকে অনেক ভালোবাসে। ‘
‘ নাও স্পটড ইট আরিয়ান। ‘
আরহাম কিছুটা ধমক দিয়ে কথাটি বলে। আরহাম এতোক্ষন পর মুখ খুললো। আরহামের ধমকে দমে গেলো আরিয়ান। আরহাম পকেটে হাত গুজে মেহেভীনের দিকে ঝুঁকে, আরিয়ানকে উদ্দেশ্য করে বলে,
‘ আরহাম হাসান তালুকদারকে জোড় করে ভালোবাসতে হবে না। কাউকে কিছু বুঝানোর দরকার নেই। যে বুঝার সে এমনতিই বুঝবে। ‘
মেহেভীন মাথা নিচু করে ফেলে। আরহাম এইবার মেহেভীনের হাত ধরে, টেবিলের কাছে এনে বসিয়ে দেয়। মেহেভীন বুঝতে পারছে না আরহাম হঠাৎ কি করতে চাইছে? আরহাম এখন স্টাফকে ডেকে,মেহেভীনের জন্যে কিছু নাস্তা আনিয়ে নেয়। নাস্তা দেখে মেহেভীন অবাক হয়ে আরহামের দিকে তাকাতেই,আরহাম স্মিত হাঁসি দিয়ে বলে,
‘ তুমি আমাকে ভালোবাসো কিংবা না বাসো সেইটা এখন বড় ব্যাপার না। বড় ব্যাপারটা হলো এখন তোমার হাল্কা নাস্তা করতে হবে। এইসময় একটু পর পর খেতে হয়। একটু অনিয়ম হলেই, তা তোমার এবং বেবীর জন্যে ক্ষতিকর বুঝলে? ‘
আরহামের কথা শুনে, মেহেভীন হা হয়ে যায়। লোকটাকে সে প্রতাক্ষান করলো অথচ লোকটা এখনো তার খেয়াল রেখে যাচ্ছে। লোকটা আদোও মানুষ? আরহাম মেহেভীনের কানের কাছে গিয়ে, আস্তে করে বলে,
‘ তোমাকে আমি ভালোবাসতে কখনো জোড় করবো না, কিন্তু তোমার এবং বেবীর প্রতি আমার যেই অফুরন্ত ভালোবাসা রয়েছে, সেই ভালোবাসার অধিকারে আমি তোমাকে এবং বেবীকে সবসময় আগলে রাখবো । তুমি না চাইলেও। ‘
কথাটি বলেই, আরহাম মেহেভীনের দিকে খাবারের চামচ এগিয়ে দেয়। মেহেভীন খেয়ে নেয়। তার চোখ ছলছল হয়ে রয়েছে। এই মানুষটার প্রতি দূর্বল না হয়ে কি পারা যায়?
আরিয়ান এবং ফারিয়া মুগ্ধ হয়ে আরহামের কান্ড দেখে যাচ্ছে। আরহামকে মেহেভীন ভালোবাসে, তা তার চোখের জলেই প্রকাশ পাচ্ছে। এখন শুধু মেহেভীনকে তার ভয় কাটিয়ে, নিজের অনুভুতিটা প্রকাশ করতে হবে।
__________
রাইসার বাড়িতে অভ্র এবং মায়রা বসে আছে। রাইসা সেইদিন হোটেলের ঘটনা সবকিছুই খুলে বলেছে অভ্রকে। এমনকি সেই প্রেগ্ন্যাসির রিপোর্টটা ধরিয়ে দিয়েছে।
সবকিছুই শুনে অভ্রের দুনিয়াটাই যেন থমকে গেছে। তার মানে আরহাম এবং মেহেভীন স্বামী-স্ত্রী নয়। মেহেভীনের গর্ভে যেই সন্তান বেড়ে উঠছে, সেই সন্তান অভ্রের। রাইসার ধারণামতে, অভ্র মেহেভীন এবং তাদের অনাগত সন্তানের প্রতি অন্যায় করেছে,তাই অভ্রের উচিৎ মেহেভীনকে এবং মেহেভীনের সন্তানকে তাদের আসল মর্যাদা দেওয়া।
মায়রাতো একপ্রকারের জন্যে থমকে গিয়েছে। মেহেভীনের গর্ভে অভ্রের সন্তান বেড়ে উঠছে, তার মানে অভ্র এখন তার সন্তানকে পাওয়ার জন্যে মেহেভীনকে নিজের জীবনে ফিরিয়ে আনতে চাইবে। মায়রা তা কিছুতেই হতে দিতে পারেনা। মায়রা অভ্রের দিকে তাকিয়ে দেখে অভ্র কেমন একটা শান্ত হয়ে বসে আছে। অভ্রের এই শান্ত থাকাটা বিরাট বড় এক ঝড়ের সংকেত বানী । যা মায়রার বুঝতে বাকি রইলো না। অভ্র এইবার উঠে দাঁড়ালো। মায়রা অভ্রের দিকে তাকিয়ে মৃদ্যু গলায় বললো, ‘ অভ্র! তুমি যদি ভেবে থাকো তুমি এইবার মেহেভীনকে ফিরিয়ে আনবে, তাহলে…’
মায়রা কথাটি সম্পুর্ন বলতে পারলো না, অভ্র মায়রার মুখে চেপে ধরে, দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
‘ আর একটা কথাও না মায়রা। এইবার যা বলার আমি বলবো। ‘
মায়রা অভ্রের এমন রুপে ভয় পেয়ে যায়। অভ্র আরিয়ানকে ফোন করে জানায়, তারা যেন এখুনি ঢাকায় ফিরে আসে। আরিয়ানের কাছে কেমন যেন লাগলো কথাটি। প্রথমে অভ্র ঢাকায় গেলো এখন তাদেরকেও যেতে বলছে। অভ্র আসলে এখন চাইছে টা কি? আরিয়ান আরহাম এবং মেহেভীনের কাছে গিয়ে জানায় তাদের এখুনি ঢাকায় ফিরে যেতে হবে,অভ্র যেতে বলেছে। অভ্র হঠাৎ এইভাবে ঢাকায় ফিরে যেতে বলাতে, মেহেভীনের মনে ভয় জন্ম নিলো। আরহাম ও মেহেভীনের অবস্হা খানিক্টা হলেও বুঝতে পারছে। আরহাম মেহেভীনের হাত শক্ত করে ধরে, আশ্বাস দিলো যেন মেহেভীন ভয় না পায়।
ফারিয়াও ঠিক করলো, একেবারে আরিয়ানদের সাথেই ঢাকায় ফিরে যাবে। আরহাম এবং বাকিরা হোটেলে গিয়ে, আরহামেত কলিগদের থেকে বিদায় নিয়ে, ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। সবার মনের মাঝেই ঝড় বয়ে যাচ্ছে। আরহাম মেহেভীনের দিকে তাকায়।কেমন গুটিয়ে বসে আছে। কি নিষ্প্রান চাহনী। এই মেয়েকে কিছুতেই হারাতে দিবে না সে। আরহাম জানে অভ্র কিছু একটা করতে চাইছে। কিন্তু কি সেইটা?
সবাই ঠিক ভোরের দিকে রওনা দেওয়ায়, সকাল সকাল ঢাকায় পৌঁছে যায়। ফারিয়া নিজের বাড়িতে চলে যায়। আরহাম, মেহেভীন এবং আরিয়ান নিজেদের বাড়িতে ঢুকেই দেখতে পায় অভ্র বসে আছে। আরহামের বাবা-মা তার অপর পাশে বসে আছেন মাথা নিচু করে। অভ্রকে এতো সকালে তারা কেউই আশা করেনি। মেহেভীনের মনে যেই ভয়টা ছিলো,তা আরো দৃঢ় হয়ে উঠেছে। মেহেভীনকে দেখেই, হুট করে অভ্র একপ্রকার ছুটে গিয়ে মেহেভীনকে সকালের সামনে জড়িয়ে ধরে। মেহেভীন হতভম্ব হয়ে যায়।আরহাম রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলে।
…….চলবে….