#তুমি_থেকে_যাও_আমি_রেখে_দিব
#পর্ব_১০
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
ঘড়ির কাটা পাঁচটা ছুঁই ছুঁই।অধরা কোনো রকম বাসা থেকে বেড়িয়ে চৌধুরী বাড়িতে চলে আসলো।গেটের সামনে আসতেই দেখলো দারোয়ান ঘুমিয়ে আছে।হাজার চেষ্টা করে’ও বাসার ভেতর প্রবেশ করতে পারলো না।বাধ্য হয়ে দারোয়ানকে বলল দরজা খুলে দিতে।দারোয়ান অধরা কে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে উঠলেও প্রশ্ন করার সাহস পাই নাই সে।অধরা আস্তে করে বাসার ভেতর চলে গেলো।আহানের রুমের সামনে এসে নক করেই যাচ্ছে।কিন্তু আহানের দরজা খোলার নামে কোনো নাম-ই নেই।রেগে জোরে দরজায় বারি দিতে শুরু করলো।আহান বিরক্ত হয়ে,এসে দরজা খুলে দিলো।সবাই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।রান্নার করার লোকেরা অধরা কে দেখে ফেলছে।কি জানি কি মনে করলো।অধরাকে দেখে চোখ বড় বড় করে তাকালো আহান।চিৎকার করতে যাবে।তখনি অধরা আহানের মুখ চেপে ধরে।
–একদম ষাঁড়ের মতো চিল্লাবেন না।আমি শুধু আপনার বাবার সন্মান রক্ষা করার জন্য এসেছি।বলল অধরা।
–হয়েছে আর ভালো সাজতে হবে না।আমি জানি তুমি আবার আসবে।এত বাড়ির বউ হয়েছো।সুখের রাজ্য ছেড়ে কেউ কোনোদিন যেতে চায়।এই কয়েক ঘন্টার জন্য নাটক করে কি হলো।বলল আহান।
–আপনার সাথে আমি পরে কথা বলছি।দেখি সরুন আমার ব্যাগ টা কোথায় আমার জামা কাপড় সব নিয়ে এসেছে।বলেই খুঁজতে লাগলো।আলমারির এক কোণে চোখ যায় অধরার সেখানে গিয়ে।নিজের একটা জামা বের করে।সোজা ওয়াশরুমে চলে যায়।আহান অধরার কান্ড দেখছে খালি।চোখে একরাশ ঘুৃম।একটু পরে অধরা একবারে গোসল করে বের হলো।আহান ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।কি সাহস মেয়েটার,এই সাত সকাল বেলা কেউ গোসল করে।ভাবতে’ই আহানের পুরো শরীর কাঁপুনি দিয়ে উঠলো।
–এই মেয়ে তুমি এই সাত সকাল বেলা গোসল করলে।তোমার শীত লাগলো না।
–কিসের শীত আমার সেই গরম লাগছে।মনে হচ্ছে আবার গোসল করে আসি।
–আমার রুম থেকে বের হয়ে গিয়ে গোসল করো।আমার রুমে তোমার কোনো জায়গা নাই।
–কাল সারারাত মশা জ্বালিয়েছে।এখন আপনি জ্বালাবেন না।আমার অনেক ঘুম পেয়েছে,আমাকে দয়া করে ঘুমোতে দেন।
–কি মিসেস অধরা বাসর রাতে শেষমেষ মশা আপনাকে আদর করে ছেড়ে দিলো।
–তাহলে কি করবে জামাই আদর করার কথা ছিলো।জামাই আদর করে নাই।তাই মশাই আমাকে আদর করে দিয়ে গেছে।বলেই জিভে কামড় দিলো অধরা।
অধরার কথায় আহান কেমন জানি লজ্জা পেলো।আর কোনো কথা বলল না।বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ল।আর অধরাকে বলল একদম আমার বিছানায় শুবে না।বলেই ঘুমিয়ে গেলো।অধরার রাতে ঘুম হয় নাই ভালো করে।অধরা ফ্লোরে বসে আহানের বিছানায় মাথা ঠেকিয়ে ঘুমিয়ে গেলো।এত ঝগড়া করার সময় নেই।ঘুমটা আগে দরকার।বলেই ঘুমিয়ে গেলো।
আটটার দিকে আশরাফুল চৌধুরী অধরার নানিকে ফোন দিলো।কিন্তু অধরার নানি ফোন তুললেন না।কাজে ব্যস্ত ছিলেন।কিছুয় ভয় কাজ করছে।সবাই যদি অধরাকে না দেখে সবাইকে কি উত্তর দিবে।আশরাফুল চৌধুরী অবাক করে দিয়ে।তিতির আহান আর অধরাকে নিয়ে নিচে আসলো।আশরাফুল চৌধুরীর ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো।মেয়েটা সত্যি খুব দায়িত্ববান।ঠিক তার কথা রেখেছে।মানুষ জন এসে ভরে গেছে পুরো বাসায়।সবাই নতুন বউকে দেখে যাচ্ছে।বিকেলের দিকে অধরার নানিরা আসলেন অধরাকে নিয়ে যেতে।সবাই খাওয়া দাওয়া করে।সন্ধ্যা বেলা বিদায় নিলেন।আত্নয়ী স্বজন প্রায় সবাই চলে গেছে।দু-এক জন আছে।সকাল হলে বাসার উদ্দেশ্য রওনা দিবে।আহান প্রথমে যেতে রাজি না হলে,বাবার রাগ দেখে বাধ্য হয়ে অধরাদের বাসায় গেলো।রাত আটটার দিকে অধরাদের বাসায় এসে পৌঁছালো।রাতে খাওয়া দাওয়া করে যে যার মতো রুমে চলে আসলো।আহান আগেই অধরার বিছানায় বসে বসে ফোন ঘাটছে।
–একটু নামুন তো।আমি বিছানার গোছাবো।তারপরে আবার বসবেন।
–আমি পারবো না।আমার পায়ে ব্যাথা করছে।আহান চৌধুরী তোমাদের বাসায় এসেছে।এটাই তোমাদের ভাগ্য ভালো।আবার আমাকে নামতে বলছো।
অধরা বিরক্ত হয়ে বিছানার উপরে গিয়ে বসলো।ফোন হাতে নিতেই দেখলো আকাশ ফোন দিয়েছিলো।কোনো কথা না বলে আকাশকে ফোন দিলো।রিং হতেই আকাশ ফোন ধরে বলল।
–আপাই তুই কোথায় ছিলি।আমি তোকে কতবার ফোন দিয়েছি।তুই ধরিস নাই কেনো।আপাই তুই শহরের গিয়ে আমাদের ভুলে গেলি।জানিস আপাই আজ আমাদের রেজাল্ট দিয়েছে।আমি ফাস্ট হয়েছি।আমার স্কুলে বেতন আঁটকে গেছে।স্যার বলেছে সাতদিন এর মধ্যে বেতন পরিশোধ করতে না পারলে। আমাকে স্কুল থেকে বের করে দিবে।আমার কি পড়াশোনা করা আর হবে না আপাই।বাবাও অসুস্থ।আমাদের হসপিটালে থাকতে হয়।আমি হসপিটালে থেকে পড়াশোনা করে পরীক্ষা দিয়েছি।জানিস আপাই রোদের মধ্যে হেঁটে যেতে আমার অনেক কষ্ট হয়।এভাবে হাজারো অভিযোগ করেই যাচ্ছিলো আকাশ।অধরার চোখের কোনো পানি এসে জমা হয়েছে।
–আকাশের আপাই থাকতে।আকাশের পড়াশোনা কখনো বন্ধ হতে পারে।তুই চিন্তা করিস না।আমি তোর জন্য টাকা পাঠিয়ে দিব।তোর আর হেঁটে যেতে হবে না।আমাদের বাবা খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে।তোর আপাই খুব তাড়াতাড়ি তোর কাছে আসছে ভাই।
–আপাই সত্যি তুই আসবি।তুই তাড়াতাড়ি চলে আয়।তোকে ছাড়া আমার একদম ভালো লাগে না।আম্মু সারাদিন আমাকে বকে।
–আমি আসলে আর বকতে পারবে না।আপাইয়ের ওপরে ভরসা করিস না আকাশ।
–হ্যাঁ আমি আমার থেকে-ও বেশি তোকে ভালোবাসি আপাই।
–তাহলে কথা না বলে এবার ফোনটা মায়ের কাছে দে।
অধরার মা ফোন হাতে নিয়ে বলল।
–একদম লাই দিয়ে ওকে মাথায় তুলবি না।দিন দিন ওর আবদার বেড়ে যাচ্ছে।এত জেদ আসে কয় থেকে ওর।গরীবের ঘরে জন্ম নিয়েছে।কষ্ট ওর করতেই হবে।তুই কি টাকার ব্যবস্থা করতে পেরেছিস।না পারলে বলে দে।আমি বাড়িটা বিক্রি করে দিব।
–আম্মু তুমি পাগল হয়ে গেছো।আকাশকে আমি কখনো কোনো কিছুর অভাব বুঝতে দিব না।তুমি এতটা রেগে যাচ্ছো কেনো।আমাকে তিনটা দিন সময় দাও আমি আসছি।টাকার ব্যবস্থা হয়ে গেছে।
অধরার মা রেগে কল কেটে দিলো।হাজার হলে-ও অধরার বাবা তার ভালোবাসার মানুষ।ভালোবাসার মানুষের এত কষ্ট কেউই সয্য করতে পারবে না।অধরার মায়ের ক্ষেত্রে’ও তার ব্যাতিক্রম নয়।শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখের পানি মুছে নিলেন অধরার আম্মু।
আহান ভ্রু কুঁচকে অধরার দিকে তাহালো।ফোনটা রেখেই অধরা একদম চুপচাপ হয়ে গেলো।সকালে অফিস যেতে হবে।তাই অধরা তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ল।আহান বোকার মতো অধরার দিকে চেয়ে রইলো।একটু পরে সে-ও ঘুমিয়ে গেলো।সকালে খাওয়া দাওয়া আহান চলে আসলো।অধরা থেকে গেলো।অধরা আর চৌধুরী বাড়িতে যাবে না।সকালে খেয়ে অফিসের উদ্দেশ্য বেড়িয়ে পড়ল।অফিসে আসতেই সবাই কেমন করে তাকিয়ে আছে অধরার দিকে।আদিলের মন খারাপ।শুকনো মুখে অধরার দিকে তাকিয়ে আছে।মিমি রাগে ফুঁসছে।তার যদি ক্ষমতা থাকতো তাহলে অধরাকে এখনি শেষ করে দিলো।তবুও মুখে হাসি এনে অধরার দিকে এগিয়ে এসে বলল।
–নতুন বউ যে,বিয়ে না হতেই অফিসে আসলে।বলল মিমি।
–কোথায় লেখা আছে।যে,বিয়ে হলে অফিসে আসা যাবে না।মাস শেষে তো আমাকে এমনি এমনি বসিয়ে বেতন দিবে না।যা-ও নিজের কাজ করো।বলেই গটগট করে চলে গেলো অধরা।আদিল একগাদা ফাইল নিয়ে অধরার কেবিনে গেলো।
–আসতে পারি ম্যাডাম।
–আরে আদিল আপনি অনুমতি নেওয়া ধরলেন কবে।তবে এটা করা ভালো।
–তোমাকে শাড়িতে অনেক সুন্দর লাগছে অধরা।
–ধন্যবাদ কিছু বলবেন।
–এই ফাইল গুলোতে আহান স্যারের সাইন লাগবে।তিন দিন হলো এসে জমা হয়েছে।
–আচ্ছা আপনি রেখে যান।আমি স্যার কে দিয়ে সাইন করিয়ে রাখবো।আপনি এসে নিয়ে যাবেন।আদিল ভেতর রাখতে যাবে।তখনি তাল সামলাতে না পেরে পড়ে যেতে লাগলে অধরা ধরে ফেলে।
–কোনো সমস্যা আদিল।আপনি ঠিক আছেন।এসে থেকে দেখছি।আপনি কেমন জানি একটা হয়ে আছেন।আপনার হাত পা কাঁপছে কেনো।খাওয়া দাওয়া করেন নাই নাকি।
আদিল কিছু বলতে যাবে তখনি আদিলকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে অধরার গালে কষে থাপ্পড় বসিয়ে দেয় আহান।ঘটনা এত দ্রুত ঘটায় আদিল,অধরা দুজনেই হতভম্ব হয়ে যায়।আহান রেগে চিৎকার দিয়ে বললে।
–এটা কাজ করার জায়গা।নষ্টামি করার জায়গা না।নষ্টামি যদি করতে হয়।তাহলে অফিসের বাহিরে গিয়ে করবেন।
অধরা এক গালে হাত রেখেই বললো।
–এসব কি বলছেন।কি করেছি আমরা।
–লজ্জা করছে না বলতে।আবার বলছেন।
–স্যার আপনি ভুল বুঝছেন।আমি অধরা ম্যাডামকে ফাইল দিতে আসছিলাম।বলল আদিল।
–এসে নষ্টামি শুরু করে দিয়েছেন।আগে থেকেই আপনাকে আমার পছন্দ না।
–কি সব যা-তা বলছেন।একদম বাজে কথা বলবেন না।আমাদের নিয়ে বাজে কথা বললে একদম মেনে নিব না।বলল অধরা।
–তাই নাকি কি করবে শুনি।
–আচ্ছা আমরা যদি কোনো কিছু করে থাকি তাহলে আপনার কি।
–আমার কি মানে,আমার অনেক কিছু কারন তুমি আমার বউ।
বউ কথাটি শুনে স্তব্ধ হয়ে যায় অধরা।কি বলবে বুঝতে পারছে না।তবু্ও তাকে নিয়ে বাজে কথা বলছে আহান,তার ধারনা যে ভুল তাকে প্রমাণ করে দিতেই হবে।অধরা আহানকে নিয়ে আহানের কেবিনে গেলো।তারপরে বলল।
–আপনি সিসি ক্যামেরা চেক করে দেখুন।সিসি ক্যামেরা চেক করে আহান নিজেই লজ্জায় পড়ে যায়।অধরা কোনো কথা না বলে আহানের কেবিন থেকে বেড়িয়ে যায়।
–স্যার আপনি আসছেন না কেনো।আমার টাকা টা খুব তাড়াতাড়ি লাগবে।আমি গ্রামে যাব।আমি যদি আমার বাবাকে সুস্থ-ই করে তুলতে না পারি।তাহলে পরে টাকা নিয়ে আমি কি করবো।বলল অধরা।
–তোমাকে আমি অফিসে বা চৌধুরী বাড়ি থেকে টাকা দিতে পারবো না।টাকা নিতে হলে বাহিরে থেকে নিতে হবে।তুমি কলেজের সামনে আসো।আমি আসছি।বললেন আশরাফুল চৌধুরী।
অধরা অফিস থেকে বেড়িয়ে গেলো।কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।আহান অধরা কে সরি বলার জন্য আসছিলো।অধরাকে বেড়িয়ে যেতে দেখে সে-ও অধরার পিছু নিলো।
–এই তুমি অধরা না কেমন আছো।তোমাকে কতদিন পরে দেখলাম।বলল সানভি।
–আরে সানভি যে,কেমন আছো।কি অবস্থা তুমি শহরেই থাকো।
–হ্যাঁ আমি শহরে থাকি বিয়ে করছি।একদিন আমাদের বাসায় এসে ঘুরে যাবে।তুমি শহরে আসলে কি করে।সেই স্কুল জীবনে আমরা সবাই আলাদা হয়েছি।আর কারো সাথে দেখা নাই।কে কোথায় চলে গেছে।বলল সানভি।
–হুম আমি এখানে জব করি।
–ও আচ্ছা ভালো।এটা আমার কার্ড রাখো সময় করে একদিন আসবে।অধরা হাত বাড়িতে কার্ডটি নিলো।স্কুল জীবনের ফ্রেন্ড সানভি।কতদিন পরে দেখা।দূর থেকে সবকিছুই দেখছিলো আহান।রাগে চোখ লাল হয়ে গেছে।জোরে গাড়িতে একটা লাথি মেরে চলে গেলো আহান।সানভিও চলে গেলো।একটু পরে আশরাফুল চৌধুরী আসলেন।অধরার হাতে টাকা ধরিয়ে দিলেন।টাকা গুলো হাতে পেয়ে অধরার মনে হলো যেনো, তার প্রাণ ফিরে পেলো।তার মাকে ফোন করে জানিয়ে দিলো সে,বিকালে গাড়িতে উঠবে।অফিসে গিয়ে ছুটির এপ্লাই করবে।
অফিসে আসতেই আহান অধরার সামনে এসে দাঁড়ালো।
–কাজ রেখে কোথায় গিয়েছিলে।
–আমার একটু জরুরি একটা কাজ ছিলো।তাই গিয়ে ছিলাম।
–এভাবে কাজ করলে অফিসে আসার দরকার নেই।
–সরি স্যার আর হবে না।
–যতক্ষণ সময় বাহিরে ছিলে।তার থেকে দিগুন কাজ তোমাকে করতে হবে।বলেই আহান চলে গেলো।
চলবে…..