#তুমি_নামক_প্রশান্তি
#লেখনীতে_জেনিফা_চৌধুরী
#পর্ব_তেইশ
ভালোবাসার মানুষটাকে চোখের সামনে অন্য একটা মেয়ের হাত ধরে রাস্তা পার হতে দেখে, বেলীর বুকের ভেতর দুমড়েমুচড়ে উঠলো। নাহ, অবিশ্বাস বা ঠকে যাওয়ার ভয় হচ্ছে না। কারণ, ‘ও’ জানে নীলাভ্র কখনো তার বেলীপ্রিয়াকে ঠকাবে না। বেলীর বুকের ভেতরে তোলপাড় শুরু হয়েছে নীলাভ্রর পাশের মেয়েটাকে দেখে। এই মেয়েটা তো নীলাভ্রকে ভালোবাসতো। ‘ওর’ জন্য কত পাগলামী করেছিলো। বেলীর গায়ে অব্দি হাত তুলেছিলো। প্রায় তিন বছর পর মেয়েটাকে দেখে, পুরনো কিছু স্মৃতি চোখের পাতায় ভেসে উঠলো। মেয়েটা আবার কেন ফিরে এসেছে? আবার কি কোন ঝড় আসবে বেলীর জীবনে? ভার্সিটি ছুটির পর রাকিব আর বেলী একসাথেই ফিরছিলো বাসায়। হুট করে রাকিবের একটা জরুরী ফোন আসায়, ‘ও’ অন্য রাস্তায় চলে যায়। বেলী নীলাভ্রকে ফোন করার জন্য রাস্তার এক সাইডে দাঁড়িয়ে ছিলো। তখনি, এই দৃশ্যটা দেখতে পায়। এক নজরে তাকিয়ে ছিলো ‘ওদের’ দিকে। নীলাভ্রর কোলে একটা ফুটফুটে বাচ্চা মেয়ে, মাত্রই চোখে পড়লো বেলীর। একদম বিদেশীদের মতো লাগছে বাচ্চাটাকে! কি সুন্দর! কিন্তু, এই বাচ্চাটা কার? মস্তিস্ক জানান দিলো, বাচ্চাটা তাসফিয়ার নয় তো? বেলী নীলাভ্রর কাছে যাওয়ার জন্য রাস্তায় এক পা ফেলতেই, হুট করে ফোনটা বেজে উঠলো। হঠাৎ শব্দে বেলী ভয় পেয়ে হকচকালো। ফোন স্ক্রিনে নীলাভ্রর নামটা দেখে ভয়ের মাঝেও ঠোঁটে হাসি ফুটলো। তড়িঘড়ি করে রিসিভ করে কানে ধরতেই, ওপাশ থেকে নীলাভ্র ধমকের স্বরে বললো,
“রাস্তায় অনেক গাড়ি চলছে, চোখে দেখতে পাচ্ছিস না? কোন সাহসে পা ফেললি রাস্তায়? বেশি পাকনা। সবসময় এক লাইন বেশি বুঝে কাজ করে। যেখানে আছিস, সেখানেই দাঁড়িয়ে থাক। আমি আসছি।”
বেলী কোনো টুঁশব্দ করতে না দিয়ে ফোন রেখে দিলো। নীলাভ্রর ধমক শুনে বেলী আহাম্মকের মতো দাঁড়িয়ে রইলো। এই কথাগুলো তো ভালোভাবেই বলতে পারতো। এমন করে ধমকানোর কি আছে? আজব! ভেবে মুখ বাঁকালো। পরক্ষণেই হেসে ফেললো। মনের মধ্যে প্রশান্তির হাওয়া বইতে শুরু করলো। এত ভীড়ের মাঝে নীলাভ্র যে বেলীকে খেয়াল করেছে, ভাবতেই বেলীর খুশিতে নাচতে ইচ্ছে করছে। মনে মনে ভাবলো,
” এতটা যত্নে করে কেউ ভালোবাসতে পারে? আপনি আমার জীবনটাকে অদ্ভুত সুন্দর করে দিলেন। এতটা ভালোবাসতে কে বলেছে আপনাকে? নিজের প্রতি নিজের হিংসা হয়।”
প্রায় পাঁচ মিনিটের মাথায় নীলাভ্র এসে দাঁড়ালো বেলীর কাছে। কিন্তু বেলীর সেদিকে খেয়াল নেই। সে আকাশ-পাতাল ভাবতে ব্যস্ত। বেলীকে ভাবুক ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে, নীলাভ্র বেলীর মাথায় গাট্টা মে*রে বলে উঠলো,
“রাস্তার মধ্যে দাঁড়িয়ে কী ভাবছিস?”
নীলাভ্রর কন্ঠস্বর কানে আসতেই, বেলী ঘুরে তাকালো। নীলাভ্রর গুমোট মুখটা দেখে, কিছুসময় চেয়ে রইলো। তারপর শান্ত স্বরে প্রশ্ন করলো,
“তাসফিয়া আপুর হাত ধরেছিলেন কেন?”
বেলীর এমন প্রশ্নে নীলাভ্রর হাসি পেলেও, দমিয়ে রাখলো। গা ছাড়া ভাব নিয়ে বললো,
“আমার ফ্রেন্ডের হাত, আমি ধরেছি। তাতে তোর কী?”
উত্তর শুনে বেলী মুহূর্তেই চোখ, মুখের রঙ বদলে বললো,
“এহহ, আইছে আমার ফ্রেন্ড। আলগা ঢং, যত্তসব।”
বেলীর কথায়, নীলাভ্র মুখ ঘুরিয়ে একটু হাসলো। তারপর পূর্বের ন্যায় শুধালো,
“এখন বল, তুই কী ভাবছিলি? ”
বেলী এবার বেশ আয়েস করে বুকে হাত গুঁজে দাঁড়ালো। তারপর বললো,
“আমার জামাইর কথা।”
নীলাভ্রর চোখ গুলো মার্বেলের মতো হয়ে গেলো। অবাক স্বরে বললো,
“জামাইর কথা মানে! কোন জামাই? কে জামাই? বাড়ি কই? থাকে কোথায়? কবে বিয়ে হলো? আমাকে দাওয়াত দিলিনা তো। নাহ! এটা ভারী অন্যায় করে ফেলেছিস। এখন তোর শাস্তি পেতে হবে।”
নীলাভ্রর এত গুলো প্রশ্ন শুনে, বেলীর বিরক্তি ধরে গেলো। চোখ গরম করে তাকালো, নীলাভ্রর দিকে। কোমরে হাত রেখে, বাজখাঁই গলায় বললো,
“আমার জামাইয়ের উপর একটা পে*ত্নী ভর করেছে। তাকে কোন ঝা’টার বাড়ি মে*রে তাড়াবো, সেটাই ভাবছিলাম। পে*ত্নীটাকে তাড়িয়ে আমার জামাইটাকে, একবার নদীর থেকে চু’বিয়ে আনব।”
কথাটা শুনেই নীলাভ্রর চেহারাটা চুপসে গেলো। হঠাৎ, কাঁশি উঠে গেলো। তা দেখে বেলী হাত দিয়ে নীলাভ্রকে বাতাস করতে লাগলো। দাঁতে দাঁত চে*পে বললো,
“এইটুকুতেই কাঁশি উঠে গেলো বুঝি? এটা তো ট্রেইলার ছিলো। পুরো কাহিনী এখনো বাকি।”
বেলীর এমন অদ্ভুত সব কথা শুনে, নীলাভ্র জোরে ধমক দিয়ে বললো,
“রাখ, তোর সিনেমার ডায়লগ। চল,এখন। আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।”
বলে বেলীর হাত ধরে রাস্তা পার হওয়ার জন্য, পা বাড়ালো। আর বেলী আপনমনে বকবক করতে লাগলো। মানে, তাসফিয়ার গুষ্টি উদ্ধার করা শুরু করলো। রাস্তা পার হয়ে আসতেই, তাসফিয়া এসে সামনে দাঁড়ালো। বেশ হাসি মুখে প্রশ্ন করলো,
“কেমন আছো, বেলী? অনেকদিন পর তোমাকে দেখলাম।”
বেলী মুখটা অন্ধকার করে উত্তর দিলো,
“আমি ভালো আছি, তাসফিয়া আপু। আপনি কেমন আছেন? হঠাৎ, এতদিন পর কোথার থেকে টপকালেন?”
বেলীর এমন কথায় তাসফিয়া হাহা করে হেসে দিলো। আর, নীলাভ্র রাগান্বিত চোখে বেলীর দিকে তাকালো। বেলী নীলাভ্রর বাহু আঁকড়ে ধরে মেকি হাসলো। তাসফিয়া হাসতে হাসতে বললো,
“তুমি তো দেখি, সেই আগের মতোই চঞ্চল আছো।”
তাসফিয়ার কথায় বেলী জোর করে হাসলো। তখনি তাসফিয়া বেশ নিচু স্বরে বললো,
“আমার বিয়ে হয়ে গেছে। তোমার হবু বরের দিকে নজর দিব না। টেনশন করো না।”
বলে এবার তাসফিয়া জোরেই হেসে দিলো। ওমনি বেলীর মুখটা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে গেলো। একটু লজ্জা পেলো। এবার নীলাভ্রও হাসতে লাগলো। আর বেলী লজ্জায় নীলাভ্রর পেছনে মুখ লুকালো। নিজের গালে নিজেরেই থা*প্পড় মা*রতে ইচ্ছে করতাছে৷ এত বেশি বকবক করতে কে বলেছে? এইজন্যই নীলাভ্র বলে, বেশি পাকনা মেয়ে। তাসফিয়া পুনরায় বললো,
“লজ্জা পেতে হবে না৷ নিজের ভালোবাসার মানুষকে, কোনো মেয়ে অন্যের সাথে সহ্য করতে পারেনা। চলো, একটু আড্ডা দেওয়া যাক।”
বেলী মাথা নাড়ালো। তাসফিয়ার কোলের বাচ্চাটা, ড্যাবড্যাব করে বেলীর দিকে চেয়ে আছে। হয়তো, চিনতে পারছে না। ভাবছে ‘এরা আবার কারা’। বাচ্চাটার মুখে কি মায়া! অসম্ভব সুন্দর! বাচ্চাটার চুলগুলো ব্রাউন কালার। বেলী আন্দাজ করলো, হয়তো ৯-১০ মাস হবে বাচ্চাটার। বেশ মোটাসোটা। চোখ গুলো দেখে মনে হচ্ছে, ছলছল করছে। এতে যেন, সৌন্দর্য আরো দ্বিগুণ হয়ে গেছে। বাচ্চাটাকে কোলে নেওয়ার তীব্র ইচ্ছা বেলী, কিছুতেই দমিয়ে রাখতে পারছে না। কোলে নেওয়ার জন্য বাচ্চাটার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো। সাথে সাথে বাচ্চাটা হামাগুড়ি দিয়ে চলে আসলো বেলীর কাছে। বেলী কোলে নিয়েই প্রথমে বাচ্চাটার গালে চুমু খেলো। তারপর প্রশ্ন করলো,
“নাম কি তোমার, পুচকি?”
তাসফিয়ে উত্তর দিলো,
“ভালো নাম উমায়রা। আর, ডাকনাম ‘এ্যানি’।
বেলী সাথে সাথে প্রশ্ন করলো,
” এ্যানি নামটা একটু বিদেশী টাইপ লাগছে। তবে খুব সুন্দর!”
তাসফিয়া একটু হেসে উত্তর দিলো,
“ওর বাবা কানাডিয়ান। তাই ‘এ্যানি’ নামটা তার খুব পছন্দ। কিন্তু আমি উমা বলেই ডাকি৷ বাংলা ভাষার মতো এত শান্তি আর কোনো ভাষায় নেই, বুঝলা।”
তাসফিয়ার কথা শেষ হতেই, নীলাভ্র বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলো,
“তোরা কি রাস্তায় দাঁড়িয়ে বকবক করবি। আমার খুব ক্ষুদা লাগছে, ভাই। তাসফি, তুই বড়লোক মানুষ। ট্রিট দে, বইন।”
তারপর সবাই মিলে। সামনের একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকলো। কর্ণারের একটা টেবিলে গিয়ে বসলো। উমায়রাকে নীলাভ্রর কাছে রেখে, তাসফিয়া আর বেলী দুজনে খাবার অর্ডার করতে গেলো। নীলাভ্র উমায়রাকে টেবিলের উপর বসালো। উমায়রার গাল টেনে প্রশ্ন করলো,
“এ্যানি, তুমি কি জানো? তোমার মায়ের সাথে আমার বিয়ে হলে, আমি তোমার কি হতাম?”
ছোট্ট উমায়রা নীলাভ্রর হাতের ঘড়ি নিয়ে খেলতে ব্যস্ত। নীলাভ্র আবারো বললো,
“ও বুঝেছি। তুমি জানো না, তাইতো? আচ্ছা, কোনো সমস্যা নাই। আমি বলছি, যদি তোমার মায়ের সাথে আমার বিয়ে হতো, তাহলে আমি তোমার বাবা হতাম। কিন্তু তোমার বাবা হতে গিয়ে, মামা হয়ে গেছি। হায় কষ্ট!”
নীলাভ্র একাধারে বকবক করেই যাচ্ছে। আর উমায়রা কখনো খিলখিল করে হাসছে। আবার, কখনো নীলাভ্রর মুখপানে চুমু খাচ্ছে। উমায়রাকে এমন হাসতে দেখে, ‘ওকে’ কাঁদানোর বড্ড ইচ্ছে হলো, নীলাভ্রর। তখনি, শুরু করে দিলো বাচ্চাদের মতো দুষ্টামি। কখনো উমায়রার গাল, নাক টানছে, আবার একটু কান টানছে। বেলী ফিরে এসে নীলাভ্রর এমন কান্ড দেখে, হতবাক হয়ে প্রশ্ন করলো,
“এ কি করছেন আপনি! বাচ্চাটার গাল, নাক, কান টা’নছেন কেন? ব্যাথা পেয়ে কান্না করবে তো।”
বেলীর অবাক স্বরে কথাগুলো শুনে, নীলাভ্র মাথা তুলে তাকালো। দেখলো, বেলী কোকাকোলা হাতে দাঁড়িয়ে আছে। নীলাভ্র যেন কথাগুলোয় পাত্তা দিলো না। বললো,
“বাচ্চারা কান্না করলে অনেক কিউট লাগে, জানিস তো। আমার বাচ্চা দেখলেই ইচ্ছে করে, থা*প্পড় মে*রে কান্না করাই। দেখতে কত মিষ্টি লাগে, উফফ!”
বলে একটু হেসে আবারো নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। একটু গাল টা’নছে, আবার একটু কাতুকুতু দিচ্ছে বা কখনো চোখ রাঙিয়ে উমায়রাকে ভয় দেখাছে। নীলাভ্রর এমন কান্ডে বেলী চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। বিস্ময়ের ঘোর কা’টতেই চাইছেনা। ছেলেটা এইসব কি করছে!
এর মধ্যেই উমায়রা উচ্চসর করে কান্না করে উঠলো। ঠোঁট ফুলিয়ে ফুলিয়ে কাঁদছে। দেখতে কি মিষ্টি লাগছে! উমায়রাকে কান্না করতে দেখে, নীলাভ্র আপন মনে হাসছে। বেলী এবার একটু ক্ষ্যাপা স্বরে বললো,
“বাচ্চাটাকে শুধু শুধু কাঁদালেন কেন? আপনার ব্যাপারটা কি, বলুন তো?”
বেলীর কথায় উমায়রা যেন, আরেকটু কান্নার আওয়াজ বাড়িয়ে দিলো। তা দেখে নীলাভ্র হেসে উঠলো। উমায়রাকে কাতুকুতু দিতে দিতে বললো,
“পুচকি, তুমি কান্না করলে কত কিউট লাগে, তা কি তুমি জানো? একদম লাল টমেটো লাগে।”
উমায়রা নীলাভ্রর কথা কি বুঝলো, কে জানে? খিলখিল করে হেসে দিলো। নীলাভ্র উমায়রার নাকের সাথে নাক ঘষে বললো,
“তুমি একদম প্রিন্সেস। জানো, একদিন আমার ও তোমার মতো একটা প্রিন্সেস হবে।”
কথাটা শুনে বেলীর ঠোঁটে হাসি ফুটলো। নীলাভ্র কথাটা শেষ করেই বেলীর দিকে একবার তাকালো। উমায়রাকে কোলে তুলে নিতেই, উমায়রা একদম নীলাভ্রর বুকের সাথে মিশে গেলো। মনে হলো, নীলাভ্র ‘ওর’ কত দিনের চেনা। শান্ত, চুপচাপ হয়ে গেলো। বেলী মনোমুগ্ধকর দৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়ে। এক মুহূর্তের জন্য নীলাভ্র কি সুন্দর চঞ্চল হয়ে পড়লো! দৃশ্যটা চমৎকার! ছেলেটা যে সকালে রাগ করে চলে গেছিলো। সেটা বোধহয় ভুলেই গেছে? তা ভেবে বেলী একটু হাসলো। নীলাভ্রর পাশের চেয়ারটায় বসে পড়লো। এবার দুজনে মিলেই উমায়রার সাথে দুষ্টামিতে মেতে উঠলো।
তাসফিয়া ফিরে আসতেই, ‘ওরা’ তিনজন মিলে আড্ডা মেতে উঠলো। আড্ডার এক পর্যায় বেলীর ফোনটা বেজে উঠলো। বেলী ফোনটা রিসিভ করতেই, ওপাশ থেকে রিতা বলে উঠলো,
“তাড়াতাড়ি বাসায় আয়। খুব দরকার আছে। ”
বলে রেখে দিলো। হঠাৎ এমন করে বলায় বেলী একটু ভয় পেলো। হাসি মুখটা চুপসানো দেখে, নীলাভ্র প্রশ্ন করলো,
“কি হয়েছে? কে ফোন করেছিলো?”
বেলী উত্তর দিলো,
“মা, বাসায় যেতে বললো।”
বেলীর কথা শুনে নীলাভ্র তাসফিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
“অন্য একদিন আড্ডা দিব। আজ একটু উঠি।”
তারপর তাসফিয়ার থেকে বিদায় নিয়ে ওরা চলে আসলো। উমায়রা শক্ত করে নীলাভ্রর শার্ট ধরে রেখেছিলো। কিছুতেই যেতে চাইছিলো না। বেলী আর নীলাভ্র দু’জনেরই উমায়রাকে ছাড়তে ইচ্ছে করছিলো না। তবুও আসতে হলো। অল্প সময়েই বাচ্চাটার উপর খুব মায়া পড়ে গেছে। গাড়িতে উঠে বেলীর মন খারাপ লক্ষ্য করে, নীলাভ্র বলে উঠলো,
“এ্যানির জন্য মন খারাপ লাগছে?”
বেলী মাথা নাড়ালো। অর্থাৎ ‘হ্যাঁ’। নীলাভ্র একটু হেসে বললো,
“বল’দ, মন খারাপ করিস না। কালকে আবার নিয়ে যাব।”
খুশিতে বেলী লাফিয়ে উঠে বললো,
“সত্যি”
নীলাভ্র সাথে সাথে উত্তর দিলো,
“একদম ১০০% সত্যি। ”
বেলী খুশিতে যেন, পা’গল হয়ে যাবে। আর নীলাভ্র ওর কান্ড দেখে আস্তে করে বলতে লাগলো,
“তুই আবার চঞ্চল হয়ে উঠেছিস। চুপচাপ তোকে একদম মানায় না রে, বেলীপ্রিয়া। এমন চঞ্চল, প্রানবন্তর, হাসিখুশি থাকিস, সবসময়।”
—
বাসায় ফিরে কলিং বেল চা’পতেই, মিনিটের মাথায় রিতা এসে দরজা খুলে দিলো। বেলী আর নীলাভ্রকে দেখে হাসি মুখে বললো,
“আরে নীল বাবা, তুইও এসেছিস। যাক ভালো হয়েছে। আয়, ভেতরে আয়।”
তারপর বেলীর দিকে তাকিয়ে বললো,
“তুই সোজা তোর ঘরে যাবি। ফ্রেশ হয়ে, বিছানার উপর যেই শাড়িটা রাখা আছে, সেটা পড়ে আয়।”
রিতার কথায় বেলী আর নীলাভ্র দুজনেই বেশ অবাক হলো। বেলী সাথে সাথে প্রশ্ন করলো,
“হঠাৎ, এইসব?”
রিতা একটু হেসে জবাব দিলো,
“তোকে পাত্রপক্ষ দেখতে এসেছে।”
কথাটা শুনেই নীলাভ্র আর বেলী দুজনের মাথায়, গোটা আকাশটা ভে’ঙে পড়লো, বোধহয়? নীলাভ্রর মুখের রঙ বদলে গেলো, এক নিমিশেই। আর বেলীর শরীরটা যেন, জমে গেলো। ভনভন করে মাথা ঘুরতে লাগলো। বেলীকে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে, রিতা একটু জোরেই বললো,
“তাড়াতাড়ি যা, মা৷ উনারা অনেকক্ষণ যাবৎ অপেক্ষা করছে।”
#চলবে
[