“ছেলেরাতো শারিরীক চাহিদা মেটানোর জন্যই বিয়ে করে।”
আয়ুশীর কথা শুনে তন্ময়ের কপালে ভাজ চলে এলো।যেনো সে এমন কথা জীবনেও শোনে নি।আজ আয়ুশীকে দেখতে এসেছে ছেলে পক্ষ।তাই ওদের একটু আলাদা কথা বলতে দেওয়া হয়েছে।কিন্তু আলাদ কথা বলতে এসে আয়ুশীর মুখে এমন কথা যেনো তন্ময়ের কোনো ভাবেই কাম্য ছিলো না।তন্ময় গলায় কৌতূহল ভাবটা ঢেলে দিয়ে বলল
“এমন কেনো মনে হলো আপনার?”
“যেকোনো একটা যুক্তিসঙ্গত কারণ বলুন ছেলেদের বিয়ে করার তাহলেই এমন মনে করবো না।”
“সারাজীবন পাশে পাবার জন্য একজন স্থায়ী সঙ্গীর নিশ্চয়তা,বিপদে আপদে পাশে পাবার নিশ্চিয়তা,বিষন্নতা কাটানোর মাধ্যম আর যদি শারীরিক বিষয়ের কথা বলেন তবে শুধু ছেলেরা নয় মেয়েরাও এইজন্যই বিয়েটা করে।”
“কখনোই না।মেয়েরা এজন্য বিয়েটা করে না।ওদের জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়।”
“ও এতক্ষণে ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম যে আপনাকে আপনার বাবা মা বিয়ের জন্য জোর করছে তাই তো?”
“হুম ব্লাকমেইল করছে।”
“কিভাবে ব্লাকমেইল করছে?”
“কয়দিন পর ওনারা মারা যাবে তারপর আমার কি হবে।বিয়ে না হলে আমার রাস্তা ভিক্ষার থালা নিয়ে নামতে হবে।আচ্ছা এতোই যদি চিন্তা হয় আমার জন্য তবে আমার ছোট বোনটার জন্য কেনো হয় না?ওনারা তো কয়দিন পর মারাই যাবে তাহলে ওকে ও বিয়ে দিয়ে দেওয়া হোক।”
তন্ময় হাসতে হাসতে বলল
“অনেক রেগে আছেন বোধ হয় বাবা মার উপর।”
“হ্যাঁ ভিষণ রেগে আছি।”
“তো কি করা যায়?”
“কি আর করবেন খুব সিম্পল। গিয়ে বলবেন আপনি বিয়েটা করবেন না।”
“এটা বললে কি হবে?”
“কি হবে মানে?আমাকে আর বিয়েটা করতে হবে না।”
“আচ্ছা বেশ বুঝলাম কিন্তু আমি নাহয় না করে দিলাম কিন্তু এরপর যে আসবে সে তো মানা না ও করতে পারে।তাহলে আমি কেনো মানা করবো?”
“এরপর যে আসবে তাকে তখন দেখে নেবে কিন্তু আপনি এখন না বলবেন।”
“আচ্ছা চলো ভেতরে।”
আয়ুশী আর তন্ময় ভেতরে চলে গেলো।ভেতরে গিয়ে তন্ময় না করলো না বরং বললো সে এই বিয়েটা করতে চায়।আয়ুশী পারছে না তন্ময়ের চুল ছিড়ে ফেলতে।এতো ফাজিল কেনো লোকটা?”না না এর হাতে কিছুতেই পড়া যাবে না।কিছু একটা করতেই হবে।”
বিয়ের কথা পাকাপাকি হয়ে গেলো।আয়ুশী কিছুই বুঝতে পারছে না কি করবে।রুমে এসে কাকে যেনো ফোন দিলো তারপর উদ্বিগ্ন গলায় বলল
“বইন আমি শেষ।”
“কেন কি হইলো?ঠাডা পড়লো নাকি?”
“ধূর ঠাডা না মাডা পড়ছে।”
“মাডা আবার কি?”
“ঠাডার বড় ভাই।”
“হায় হায় কস কি?খুইল্লা ক কি হইছে?”
“কি খুলমু?”
“আরে কাহিনী ক।”
আয়ুশী সব গড়গড় করে ফোনের ওপাশে থাকা মেয়েটাকে বলল।তারপর কাদুনে গলায় বলল
“আরশি বইন আমি এখন কি করমু বল?”
“আচ্ছা মামা কোনো চিন্তা করিস না।আমি এইতো দুই দিনের মধ্যে আসতাছি।”
“সত্যি?”
“হ সত্যি।ওই তন্ময় না টন্ময় ওইটারে রিমান্ডে নিমু।”
“ওহো!!তাইলেতো আমার টেনশন ই নাই।”
“আচ্ছা রাখি তাইলে আম্মু ডাকে।”
“ওকে।”
আহিন সদ্য অনার্স পাশ করা একটা বেকার ছেলে।চাকরির জন্য দৌড়াচ্ছে।দুইবোন আর মা এই নিয়ে তার পরিবার।বাবা কয়েকবছর আগে মারা গেছেন।শুধুমাত্র টিউশনি করিয়ে সংসার চলে।দুইজন সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে।দুইজন জমজ।আহিন একটা স্টুডেন্টকে পড়িয়ে আসছিলো বাসায় হঠাৎ তার ছোট দুইবোন মানে জমজ বোন আফরিন আর আরিন ফোন দিয়েছে।আহিন ফোন কানে ধরে জিগ্যেস করলো
“হ্যাঁ বল।”
“ভাইয়া বলো তো আমি আফরিন নাকি আরিন?”
প্রতিবার ফোন ধরে আহিন এই প্রশ্নটার সম্মুখীন হয়।তাই আহিন না ভেবেই বলল
“আরিন বল।”
আরিন হেসে বলল
“আমার জন্য একটা চকলেট এনো।”
“আচ্ছা আফরিন কি করে?”
“ও পড়তে বসেছে।”
“আর তুমি কি মুরি বেচো?”
“না আমি বান্দরের সাথে কথা বলি।”
“কিহ!!তুই আমারে বান্দর বললি!!তোর চকলেট আর আনমু না।”
“আরে আমি কি তোমারে বান্দর বলছি নাকি?বলছি আমি একটা বান্দর আর ওই বান্দরের সাথে তুমি কথা বলতেছো।”
“হুম সত্যি কথা বলছিস।আচ্ছা রাখ।আমার ফিরতে রাত হবে।মা কে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিস।আর তোরাও খেয়ে নিস।”
“আচ্ছা তুমি তাড়াতাড়ি এসো।”
আহিন ফোন রেখে আরেকটা স্টুডেন্টের বাসায় পড়াতে গেলো।তার এই টানাপোড়েনের জীবনে টিউশনি একমাত্র ভরসা।আল্লাহ জানে এরপর কপালে কি আছে।মধ্যবিত্ত পরিবারে এটাই আতঙ্ক।পড়া শেষ করে চাকরি পাওয়া যায় না।হাটতে হাটতে একবার আয়ুশীকে ফোন দিলো আহিন।তিনবার রিং হওয়ার পর আয়ুশী রিসিভ করলো তারপর বলল
“কেমন আছো?”
“এইতো প্রতিদিন যেমন থাকি।তুমি কেমন আছো?”
“আমি আলহামদুলিল্লাহ ভালো।”
“ওহ!!খেয়েছো?”
“হুম, তুমি?”
“হুম।চাকরির কোনো গতি হলো?”
“না এখনো কিছু হয় নি।”
“আর কবে হবে বলো।বাবা মা বিয়ের জন্য চাপাচাপি করছে।তুমি প্লিজ কিছু একটা করো।”
“হ্যাঁ দেখতেছি।”
“আচ্ছা।ভালো থেকো আল্লাহ হাফেজ।”
আয়ুশী আজকের ঘটনাটা আহিনকে বলল না।থাক না কি দরকার মানুষটাকে চিন্তায় ফেলার।আরশিতো আসছেই।মানুষটা সারাদিন খুব পরিশ্রম করে।
ফোন রাখতেই কানে এলো আয়ুশীর মা পাশের বাসার আন্টির সাথে কথা বলছে তন্ময়ের ব্যাপারে।আয়ুশী একটু আড়ি পাতলো।ওর মা বলছে।
“ছেলে মাশাল্লাহ ভালোই।ইঞ্জিনিয়ার।আর মেয়েও বড় হইছে।তাই বিয়ে দেওয়াই উচিত।”
আয়ুশী মায়ের কথায় রেগে মনে মনে বলল’বুড়ি হয়ে গেছি আমি মাত্র অনার্সে উঠলাম।আর এর মধ্যেই বিয়ে দিতে হবে।অসহ্য।”
আয়ুশী ওর ছোটবোন আরিশার রুমে এসে দেখে ও গেমস খেলছে।মায়ের রাগ আরিশার উপর দিয়ে তুললো সে।কড়া গলায় বলল
“পড়া বাদ দিয়ে তুমি গেমস খেলো!!এক্ষুণি মা কে বলতেছি দাড়া!!”
“না আপু প্লিজ বইলো না।আমি ফোন রেখে দিচ্ছি।”
“না না এক্ষুনি বলতেছি।”
আয়ুশী আরিশার কথা শুনলো না গিয়ে মা কে ডেকে নিয়ে আসলে।ওদের মা এসেই বকা শুরু করে দিলো।সব ময়েরই একটা সমস্যা আছে।একজনকে নিয়ে বলা শুরু করলে সবার নামে বলা শুরু করে।ওদের মা ও ব্যাতিক্রম নয় সেও আরিশাকে বকার সাথে সাথে আয়ুশীকেও বকছে।মায়ের বকা শুনে আয়ুশী বুঝতে পারলো সে একটা গাধার মতো কাজ করেছে।শুধু শুধুই মা কে বলল।ধূর ভাল্লাগে নূ।ঘরে গিয়ে আবার আহিনকে ফোন দিলো রিসিভ করতেই বলল
“কালকে একটু দেখা করবে?”
“কেনো?”
“প্রোয়জন আছে তাই।”
“ওহ!!আচ্ছা আসবো।”
আরো কিছুক্ষণ কথা বলে ফোনটা রেখে দিলো ওরা।এমনিতে সপ্তাহে একদিন মানে শুক্রবারে ওদের দেখা হয়।আর কালকেতো রবিবার।কাল কি এমব জরুরি কথা বলার জন্য ডাকতে পারে ব্যাপারটা আহিনের মাথায়ই ঢুকছে না।আচ্ছা যাইহোক ডেকেছে যখন যেতেই হবে।”
পরের দিন….
আয়ুশী ভার্সিটি শেষ করে আহিনের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো।আহিন প্রায় পনেরো মিনিট পরে এলো।আহিন আসতেই আয়ুশী রুমাল দিয়ে মুখ মুছিয়ে পানি এগিয়ে দিলো তারপর বলল
“এতো ঘেমেছো যে?জগিং করতে করতে এসেছো নাকি?”
“হুম দৌড়ে এসেছি।স্টুডেন্ট পড়িয়ে তারপর।”
ওরা একটু একটু করে হাটছে আর কথা বলছে।
তন্ময় গাড়ি দিয়ে বাসায় ফিরছিলো।হঠাৎ একজোড়া যুবক যুবতী দেখে রাস্তার পাশে গাড়ি থামালো।রাস্তার এই পাশ থেকে স্পষ্ট দেখতে পেলো আয়ুশী একটা ছেলের হাত ধরে হাটছে।
চলবে…🍁
#তুমি_ফিরে_এসো🍂
#পর্বঃ০১
#Arshi_Ayat
(