#তুমি_যে_আমার🥀
#Writer_Nondini_Nila
#Part_26
বর্ষাকে জোর করে বেড়াতে নিয়ে এসেছে ওর ফ্রেন্ডরা। সবাই হাতিরঝিল এসেছে বেড়াতে। আগেও অনেকবার এসেছে এখানে। সব সময় এসে সবাই আড্ডা মাস্তি করছে। বর্ষা তো সব চেয়ে বেশি ও বেড়াতে খুব পছন্দ করে। ওর যতই মন খারাপ হোক না কেন বেড়াতে গেলে ওর মন ভালো হয়ে যায়। হৈ-হল্লা করা, কথা বলা, লাফালাফি সবচেয়ে বেশি ওই করে। কিন্তু এবার বেড়াতে এসে বর্ষা চুপচাপ। প্রথমে ওর মনটা কিছুটা আনন্দিত হলেও। বেড়াতে আসার পর থেকে বর্ষা চুপচাপ হাঁটছে আর চারিদিক তাকিয়ে কাউকে খোঁজ ছে ওর মনে হচ্ছে কেউ ওকে ফলো করছে।
পলকহীন ভাবে কেউ ওর দিকে তাকিয়ে আছে। সেই আশঙ্কা পর থেকে আর বেড়ানোর মজাটা অনুভব করতে পারলো না।
ওর ফ্রেন্ডরা জিজ্ঞেস করছে, ‘ কী হয়েছে এমন আতঙ্কিত মুখ করে আছিস কেন?’
ও কিছু বলেনি শুধু বলেছে, ‘ চল এখন থেকে আমার বেড়াতে ভালো লাগছে না!’
সবাই নিরাশ হয়ে গেলো। বর্ষার মন ভালো করতে বেড়াতে নিয়ে এসেছিলো কিন্তু তার কিছুই হলো না। বর্ষাকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে এলো সবাই। এসেই একটা কেবিনে ফিলাপ করে বসে পরলো। বর্ষার আইসক্রিম পছন্দ তাই ওরা আইসক্রিম অর্ডার দিল।
‘প্রথমে তো তোর মুখটা খুশি লাগছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই কেমন যেন তোকে চিন্তিত লাগছে। আর কাউকে যেন খুজছিলি আশেপাশে তুই কি কাউকে দেখেছিস?’
বর্ষা চুপ করে আছে। সত্যি তো ও কাউকে দেখেছ। ওর মনে হলো তূর্য কে দেখেছে এক নজর। এটা কিভাবে সম্ভব লোকটা এখনো ওর পিছু ছাড়ে নি। এখনো ওকে ফলো করে যাচ্ছে। লোকটার উদ্দেশ্য কি? একবার আবসা দেখছিল আর তো দেখেনি।এটা কি ওর মনের ভুল নাকি সত্যি ওকে ফলো করছে তূর্য।
তূর্য নামটা উচ্চারণ করতে ওর বুকের ভেতর ধক করে উঠলো। লোকটার জন্য বাসা থেকে বের হতে পারেনা আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী সবাই ওকে নিয়ে বাজে কথা বলে। কেমন যেন করে তাকিয়ে থাকে। সবকিছুই লোকটার জন্য হয়েছে। সমাজের চোখে খারাপ হয়ে গেছে। এইখানে তো ওর কোন দোষ নেই। তবুও সবার চোখে ওই অপরাধী হয়ে গেছে।সব শেষ করে এখনো ওর পেছনে পরে আছে আর কি চায় লোকটা। আমাদের কি মেরে ফেলতে চায় নাকি একদম।
চকলেট ফেভারের আইসক্রিম সামনে নিয়ে বসে আছে বর্ষা। সবাই খাচ্ছে কথা বলছে ও বিভোর আছে ওর চিন্তা নিয়ে। কারো ধাক্কা খেয়ে চমকে উঠলো।
” কিরে এমন করে বসে আছিস কেন? খাচ্ছিস না কেন? আমাদের খাওয়া শেষ হয়ে গেলো আর তুই হাত ও লাগালি না! আগে তো এমন হতো না সবার আগে তোর আইসক্রিম খাওয়া শেষ হতো আর আজ…
‘ আমার ভালো লাগছে না। আমি খাবো না।’
বর্ষার কথা শুনে সবাই অবাক চোখে তাকালো বর্ষার দিকে।এটা বর্ষা বললো কেউ বিশ্বাস করতে পারছে না।যে মেয়ে আইসক্রিম পাগল সে কিনা বলছে আইসক্রিম খাবে না বলছে। অন্যদিন হলে দুইটা ওর খাওয়া হয়ে যেতো আর আজ কি বলছে?
এতোটা চেঞ্জ হয়ে গেলো কি করে?
সবার খুব খারাপ লাগতে শুরু করলো ওর জন্য। বর্ষা সব সময় সবার মন ভালো করতো কথা বলায় বাঁচাল ছিলো ও। আর একটু পাগলি টাইপের চঞ্চল মেয়ে সব সময় হেসে খেলো চলতো। আর ওর এই অবস্থা কেউ মেনে নিতে পারছে না।
‘ এটা তোর ফেবারিট চকলেট আইসক্রিম তুই খাবি না!’
‘ না আমার ভালো লাগছে না।বাসায় যাব আমি।’
বলেই বর্ষা উঠে দাঁড়ালো। গলায় ঝুলিয়ে রাখা নীল ওরনা কাধের একপাশে ফেলে হাঁটা ধরলো।
সবাই দৌড়ে ওর পাশে দিয়ে হাঁটতে লাগলো। একজন বিল দিতে গেছে।
এদিকে তূর্য গাড়ির বসে বর্ষার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। একজন লোককে রাখা আছে যে সারাক্ষণ বর্ষার উপর নজর রাখে তার থেকে জানতে পেরেছে বর্ষা বাসা থেকে বেরিয়েছে । সেটা
শুনেই সব কাজ ফেলে এখানে চলে এসেছে তূর্য। অনেক দিন পর বর্ষাকে এক নজর দেখার ইচ্ছা দমাতে পারেনি। বর্ষাকে সেদিন ফিরিয়ে দেওয়ার পর থেকে তূর্য নিজের মধ্যে একটা অদ্ভুত অনুভুতির জন্ম দেয়। না চাইতেও ও বর্ষাকে মিস করা শুরু করে। ওর মস্তিষ্কে সব সময় বর্ষার চিন্তা ঘুরতে থাকে। এই যে চোখ বন্ধ করলেই ফ্যাচ ফ্যাচ করে কাদছে চোখের সামনে ভেসে ওঠে। বাসার আনাচে কানাচে বর্ষাকে দেখতে পায় ওর দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে। সাথে ঘুমের মধ্যে ও দেখে বর্ষা ওকে বলছে ‘ আপনি খুব পাষাণ একটা লোক দয়া মায়া বলতে কিছু না। আপনার কোন দিন ভালো হবে না। আপনি আমাকে খুব কষ্ট দিয়েছেন।’
মিস করা শুরু করে অসম্ভব ভাবে। খুব মায়া ওই মুখটায় আর সেই মায়া আটকে গেছে তূর্য। বর্ষা ওকে পাগল করে দিয়েছে। এইভাবে ওর স্বপ্ন এসে ওকে কথা শুনানো।
কোন কাজ ঠিকমতো করতে পারেনা। ঘুমিয়ে জেগে থেকে সবসময় বর্ষাকে মিস করে। শত চেষ্টা করেও বর্ষাকে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারছে না। আজ যখন বর্ষাকে দেখার সুযোগ পেলো ছুটে চলে এলো।
আর অদ্ভুতভাবে তূর্য কিনা একটা মেয়েকে ফলো করছে ওর সব কাজ ফেলে রেখে। বর্ষাকে রেস্টুরেন্টে থেকে বেরোতে দেখে ও সব চিন্তা এক পাশে ফেলে রেখে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে। ওরা চলে যেতে তূর্য অবাক হলো নিজের কাজে। ও যে বর্ষার মায়া জালে ভালো ফেসে গেছে বুঝতে পারছে। নিজের এমন কাজে নিজে লজ্জিত হয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে বাসা দিকে রওনা দিলো।এসব শাওন জানতে পারলে ওকে কি ভাববে? ছিঃ শেষে কিনা নিজের শত্রুদের কে নিয়ে আমি মাতামাতি শুরু করছি।
.
বিকেলে একটা আননোন নাম্বার থেকে নিবিড় চৌধুরির ফোনে কল আসে। কলটা তূর্য করেছিলো। কল করে নিবিড় চৌধুরীকে খুব সুন্দর ভাবে অপমান করেছে। এতদিনে নিবিড় চৌধুরী এর অহংকার এর চাকরিটা চলে গিয়েছে। এই চাকরির জন্য খুব অহংকার করতেন তিনি। এখন সেই চাকরিটায় আর তার নেই। তার নামের পাশে থেকে ব্যারিস্টার ডিলিট হয়ে গেছে। এইটাই তো করতে চেয়েছিল সবার সামনে নিবিড় চৌধুরীকে অপমানিত, লাঞ্চিত হতে দেখতে চেয়েছিল। সেটা দেখা হয়ে গেছে।
নিবিড় চৌধুরী ক্রোধান্বিত গলায় বলল, ‘ কে তুমি? আমার সাথে এসব কেন করছো? আমার সাথে তোমার কি শত্রুতা?’
‘কে আমি বললে ও আপনি আমাকে চিনবেন না।’
‘চিনব না! তাহলে তুমি আমার পরিচিত না অপরিচিত কেউ। তোমার সাথে তো তাহলে আমার বন্ধুত্ব বা শত্রুতা কোনটাই নাই। তাহলে তুমি আমার সাথে এইসব কেন করছো? এসব করে তুমি কি লাভ পাচ্ছো?’
‘এইটা ঠিক আপনার কাছে আমি পরিচিত না অপরিচিত একজন। কিন্তু আপনার সাথে বন্ধুত্ব না থাকলেও শত্রুতা আছে!’
‘অপরিচিত একজন আমার শত্রু কিভাবে হলো?আমি তোমার কি ক্ষতি করেছি দয়াকরে বলবে! যার জন্য তুমি আমার সাথে এত খারাপ করছো?’
‘অবশ্যই, কেন বলবো না! আপনি আমার একমাত্র আদরের ছোট ভাইকে জেলে পাঠিয়েছিলেন মনে আছে। ছেলেটার নাম ছিলো আহান। আজ থেকে 2 বছর আগে একটা মেয়ের মিথ্যা কথার উপর ভিত্তি করে আপনি তাকে শাস্তি দিয়েছিলেন। যার জন্য তাকে মেডিকেল থেকে বের করে দেওয়া হয়।পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায় আমার ভাইয়ের জীবন। আমি তখন বাংলাদেশের বাইরে ছিলাম। সবটা শুনে আমি আপনাকে ফোন করেছিলাম। বলেছিলাম এসব মিথ্যা আমি সব প্রমাণ করব এসে। আমার ভাইকে আমি নির্দোষ প্রমাণ করব। আপনি তাকে ছেড়ে দিন সবকিছু ধামাচাপা দিয়ে দিন কিছুদিনের জন্য। কিন্তু আপনি শোনেন নি আমার ওপর চিৎকার চেচামেচি করে ফোন রেখে দেওয়ার আগে বলেছিলেন,
‘তুই একটা লম্পট তোর ভাই ও একটা লম্পট। মেয়েদের সাথে অসভ্যতামি করে। এখানে একটা মেয়ের সম্মান নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে তোর ভাই। আর তুই সেগুলো ধামাচাপা দিতে বলছিস। তোর ভাইকে উচিত শাস্তি দেবোই আমি। একটা মেয়ের সাথে অসভ্যতামির শাস্তি ওকে পেতেই হবে। যেমন ছোট ভাই তেমনি তুই। কোথায় ভাইকে এর জন্য কঠিন কথা বলবি শাস্তি দিবি তা না তুই আমাকে সবকিছু ধামাচাপা দিতে এসেছিস। কোন চরিত্রহীন বাবা মায়ের সন্তান তোরা তোদের তো মনে হয় জাতের ঠিক নেই। রক্তের ঠিক নেই দেখছি।’
বাবা-মাকে চরিত্রহীন লম্পট বলেছিলেন। শুধু আমাদের খারাপ কথা বলে আপনি ছাড়েন নি। আমাদের বাবা-মা কে আপনি ইন্সাট করেছিলেন। আমাকে আজেবাজে কথা বলে আমার ভাইকে ঠিক জেলে পাঠিয়ে ছিলেন। সেদিন আমার ভাই ছিল একা। একা এই সব সহ্য করতে না পেরে আমার ভাই সুসাইড করে মারা গিয়েছিল। আমি আমার একমাত্র ভাইকে শেষবারের মতো দেখতে পাইনি।আমার ভাইয়ের মৃত্যুর পর কিন্তু সেই মেয়েটা সব সত্যি বলে দিয়েছিল। তিনি সব মিথ্যা অভিযোগ করেছিলো। আমার ভাইয়ের নামে মিথ্যা বলেছিল।তার সাথে আমার ভাই কোন অসভতামি করেছিলো না। সেদিন যদি আপনি আমার কথা শুনতেন তাহলে আমার ভাইকে মরতে হতো না।
সেই দিন আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম আপনাকে আমি ধ্বংস করে দেবো। এজন্য আমি আপনার একটা ছেলের খোঁজে ছিলাম কিন্তু পেলাম মেয়ে কি করবো তাকেই আমি টার্গেট করলাম। মেয়ে তো আপনার কলিজার টুকরা। তাইতো মেয়েকে ফাস্ট কিডন্যাপ করলাম।’
‘বর্ষাকে তুমি কিডন্যাপ করেছিল?’ রেগে বললো নিবিড় চৌধুরী।
‘হ্যা আমি করেছিলাম। যে অপরাধের দায়ে আপনি আমার ভাইকে শাস্তি দিয়েছিলেন সে অপরাধ আমি আপনার মেয়ের সাথে করার জন্য তাকে কিডন্যাপ করেছিলাম। আপনার তো নিজের ও নিজের পরিবারের সবাইকে নিয়ে খুব গর্ব। তারা খুব চরিত্রবান। আর আমি আমার ভাইয়ের তো চরিত্রের ঠিক নাই। তাই আপনার পরিবারের মেয়ের আমি ক্ষতি করতে এসব….
‘ কি তুমি আমার আমার মেয়ের সাথে এসব করতে কিডন্যাপ করেছিলে?তুমি আমার মেয়ের এত বড় সর্বনাশ করেছ এইজন্য তো আমার মেয়েটা গুমরিয়ে থাকে। তোমার সাহস কি করে হলো আমার মেয়ের সাথে এসব করার তোমাকে আমি পুলিশে দেবো।’
তূর্য কথা শেষ করতে না পেরে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। তারপর বাঁকা হেঁসে বললো,
‘আমাকে পুলিশে দিবেন। আচ্ছা কেস করে আসেন। আচ্ছা কার নামে কেস করবেন? আপনি কি আমার নাম জানেন? আই মিন আমাকে কখনো দেখেছেন? কি বলে কেস লিখবেন?’
নিবিড় চৌধুরী ঘাবড়ে গেলো আসলেই তো এই ছেলেটাকে তো উনি চেনেন না নাম ও জানেন না।
‘আচ্ছা এসব কিছু ভাবতে থাকেন।এখন তো আপনাকে এমনিতেই কেউ দেখতে পারেনা পাড়া- প্রতিবেশীর কেউই। আরেকটা কথা দুদিনের মাথায় আপনাকে বাসা থেকে হয়তো তাড়িয়ে দেওয়া হবে।কারণ আপনার ব্যাংকে থেকে অনেক লোন নেওয়া আছে। যেটা পরিশোধ করার টাকাপয়সা আপনার হাতে কিছুই নেই। সে সবের জন্য আপনাকে বাড়িটা ছেড়ে দিতেই হবে। আপনার জন্য আরেকটা সুন্দর ড্রামা কালকে দেখতে পাবেন। রাখি আল্লাহ হাফেজ।’
ফোনটা কেটে গেলো। নিবিড় চৌধুরী চিৎকার করে উঠলো বর্ষা বলে। ওনার বুকে ব্যাথা করছে। বর্ষা দৌড়ে এসে দেখে বাবা সোফায় বসে আছে বুকে হাত দিয়ে। ও বলল,
‘ বাপি কি হয়েছে তোমার?’
#তুমি_যে_আমার🥀
#Writer_Nondini_Nila
#Part_27
ড্রয়িংরুমে মাথা নিচু করে চোখের জল ফেলছে বর্ষা। নিবিড় চৌধুরী বুকে ব্যথা নিয়ে আক্ষেপ করে বলছে,
‘আমার ভুলের শাস্তি আমার মেয়েকে পেতে হলো কেন? আমার চাকরি চলে গেছে যে তো! আমার সবকিছু শেষ হতো দরকার হলে এর জন্য আমার জীবন চলে যেতো কিন্তু তার বদলে মেয়ের এত বড় সর্বনাশ কেন হলো? আমার ভুলের জন্য আজ আমার বর্ষার এতো বড় ক্ষতি হয়ে গেলো।নিজেকে আমি কি করে ক্ষমা করবো!’
বর্ষার মা মেয়ের বুকে জরিয়ে নিলেন। তিনিও কাঁদছে।
বর্ষা চুপচাপ মাথা মায়ের বুকে দিয়ে আছে। নিবিড় চৌধুরী মেয়ের সামনে বসে থাকতে পারছে না। তিনি বুকের ব্যাথা চেপে রুমে চলে এলো। বিছানায় শুয়ে পরলো। মেয়ের জীবনটা নষ্ট হয়ে গেলো শুধু তার জন্য। আবার বাসা থেকেও নাকি চলে যেতে হবে কোথায় যাবে সে। বুকের ব্যাথা বাড়ছে।
অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার কারণে নিবিড় চৌধুরী হার্ট অ্যাটাক করেন রাতেই। বর্ষা ও ওর মা নিবিড় চৌধুরীর অবস্থা দেখে ভয়ে আতকে উঠে। রাতে দুজন মেয়ে মানুষ কি করবে? বর্ষার মা স্বামীর পাশে বসে কাঁদতে থাকে। বর্ষা দৌড়ে দাড়োয়ান চাচাকে ডেকে নিয়ে আসে।
তারপর ড্রাইভার ও দাড়োয়ান এর সাহায্যে রাতেই নিবিড় চৌধুরীকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। স্বামীর এই অবস্থা মানতে পারেনা বর্ষার মা তিনি ও অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকেও ভর্তি করা হয়।
আর বর্ষা বাবা- মায়ের এই করুন অবস্থায় হাসপাতালের কডিটড়ে বসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। তখন একটা পরিচিত মুখ দেখতে পায়।
সে আর কেউ না নিদ্রা। নিদ্রা এগিয়ে আসতেই বর্ষা তাকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে লাগে। নিদ্রা বর্ষার মাথায় হাত রেখে শান্ত হতে বলে,
‘ শান্ত হও বর্ষা। তোমাকে এখন শক্ত হতে হবে। তুমি ভেঙে পরলে আঙ্কেল আন্টিকে দেখবে কে?’
‘ আমি শান্ত হতে পারছিনা। আমাদের সাথে এমন কেন হচ্ছে আপু। একে একে সব কষ্ট আমাদের আস্টেপৃষ্টে ধরছে কেন? সব দিক থেকে বিপদ আমাদের ঘিরে ধরেছে।’
‘ সব ঠিক হয়ে যাবে। পানি খাও ধরো।’
বলেই নিজের থেকে বর্ষাকে ছাড়িয়ে নিলো নিদ্রা আর পানির গ্লাস এগিয়ে দিলো। কাঁদতে কাঁদতে বর্ষার গলা শুকিয়ে গেছে। ও ঢকঢক করে পুরোটাই খেয়ে ফেলল।
নিদ্রা ওর পাশে বসলো। কি বলে শান্তনা দেবে নিদ্রার জানা নেই। নিদ্রা সুস্থ হয়েই হসপিটালে চলে এসেছিলো কাজ বেশি থাকায় রাত হয়ে গেছে।
বাসায় চলে যাচ্ছিল তখন বর্ষাকে ও ওর পরিবারের কে আসতে দেখে ঘাবড়ে যায়। কাছে গিয়ে সব জানতে পেরে নিজেই বর্ষার মাকে দেখেছে। বর্ষার বাবাকে সিনিয়র ডাক্তার দেখছেন। বর্ষা একা ছিলো এখানে ভেঙে পরেছিল কিন্তু পরিচিত নিদ্রা কে পেয়ে একটু ভরসা পেয়েছে। বিয়ের সময় নিদ্রার সাথে খুব ভালো একটা সম্পর্ক হয়েছে বর্ষার সাথে।ও নিদ্রাকে নিজের বড় বোন ভাবে তাই নিদ্রাকে পেয়ে কিছুটা স্বস্তি বোধ করছে।
‘ মাম্মা কেমন আছে আপু?’
‘ আন্টি সুস্থ আছে এখন। কিন্তু ওনার জন্য এই চিন্তা করাটা রিক্স। আগেও এর জন্য স্টক করেছেন উনি। তাই উনাকে চিন্তা থেকে দূরে রাখাটা বেটার।’
‘ দূরে কি করে রাখবো। সমস্ত দুশ্চিন্তা তো আমাদের জরিয়ে আছে। এটা থেকে মুক্তি নাই।’
নিদ্রা কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা। তাই চুপ করেই আছে। বর্ষার ফুঁপিয়ে কাঁদছে। ও তাকিয়ে আছে বর্ষার কান্না রত মুখের দিকে। মা যেদিন মারা গেলো আমিও এমন অবস্থা ছিলাম।কেউ পাশে ছিলো না। একা বসে কেদেছিলাম আজ নিজের জায়গায় বর্ষাকে দেখতে পাচ্ছে ও বর্ষার কষ্ট টা উপলব্ধি করতে পারছে কিন্তু তাকে শান্ত করতে পারছে না।
নিদ্রার চোখেও জল চলে এলো। কিছু বলতে যাবে ওর ফোন বেজে উঠলো। অভ্র কল করেছে।ও রিসিভ করলো না কেটে দিলো।পর পর কয়েকবার কল এলো তাই বাধ্য হয়ে রিসিভ করে সরে দাঁড়ালো আর কানে নিয়ে বললো,
‘ কি হয়েছে কেটে দিচ্ছি দেখছিস না। তাও কল করছিস কেন?’
‘ কাটছিস কেন?আর কোথায় তুই এই শরীর নিয়ে বাসা থেকে বের হয়েছিস কেন? আবার রাত হয়েছে গেছে এখনো বাসায় কেন আসিস নি?’
‘ আমি আর আসবো না।আমি আমার বাসায় ফিরে যাব।’
‘ হোয়াট?’
‘ রাখসি আমি বিজি আছি।’
‘ ওয়েট ওয়েট তুই কোথায় আছিস এখন?’
‘ হাসপাতালে।’
বলেই নিদ্রা কল কেটে দিলো। বর্ষাকে একা রেখে যেতে ও পারছে না। মেয়েটার মনের অবস্থা ভালো নাই তাই পাশে বসে রইলো। ডাক্তার বের হলো অনেকক্ষণ পর বর্ষার বাবার জ্ঞান ফিরেনি। জ্ঞান ফেরা না পর্যন্ত কিছু বলতে পারছে না। শত বলেও বর্ষাকে কিছু খাওয়াতে পারলোনা। অভ্র এলো আধা ঘন্টা পর এসেই বর্ষাকে দেখে চমকালো তারপর নিদ্রার থেকে সব শুনলো। নিদ্রাকে একপাশে টেনে নিয়ে গেলো অভ্র।
‘ কি হয়েছে টানাটানি করছিস কেন?’
‘ বাসায় চল।’
‘ সরি আমি আর ওই বাসায় যাব না। তোদের অনেক কষ্ট দিয়েছে অনেক বিরক্ত করেছি। আর করতে চাইনা।’
‘ পাগলামো করিস না। বাসায় পুলিশ এসেছে!
‘ মানে কেন? অবাক হয়ে বলল নিদ্রা।
‘ বাসায় গেলেই বুঝতে পারবি। চল আমার সাথে!’
‘ কিন্তু মেয়েটাকে এইভাবে একা রেখে..
‘ ওর আত্নীয় কাউকে আসতে বলি।’
‘ হুম।’
বর্ষাকে বলে চলে গেল নিদ্রা রা।
বর্ষা ওর মামা দের কল করেছিলো কেউ আসবে না। বিপদের সময় কেউ পাশে থাকে না। বর্ষা একাই বসে আছে ওর মাথা ব্যথা করছে ও মাথা চেপে চোখ বন্ধ করে আছে। তখন হাসপাতালে পুলিশ এসে ভিড় করা শুরু করলো।
নিবিড় চৌধুরী কে সব সময় পুলিশের নজরে রাখা হয়েছে। তার এই অবস্থায় কথা জানতে পেরেই সবাই চলে এসেছে। বর্ষাকে সবাই জেরা করা শুরু করলো। বর্ষা এখন বসে থাকতে পারছে না একেতে মাথা ধরেছে তার উপর বাবা মায়ের এই অবস্থা সেখানে এই প্রশ্ন গুলো একটু ও পছন্দ হচ্ছে না ও বিরক্ত হয়ে চুপ করে আছে।
‘ হঠাৎ নিবিড় চৌধুরী হার্ট অ্যাটাক কেন করলো? কি হয়েছিলো বাসায় কেউ কি এসেছিলো? বা কারো সাথে ফোনে ঝগড়া হয়েছে?’
নানা রকম এর প্রশ্ন করে যাচ্ছে বর্ষাকে। কোন উওর দিচ্ছে না দেখে সবাই ব্যর্থ হয়ে চলে গেলো।
দুইজন পুলিশ কে নিবিড় চৌধুরী এর জ্ঞান ফেরার জন্য রেখে গেলো। জ্ঞান ফিরলেই যাতে খবর দেয়।
নিদ্রা বাসায় এসে দেখলো তিনজন পুলিশ বসে আছে সোফায়। আর আয়েশ করে কফি খাচ্ছে। ও তাদের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে এগিয়ে এলো।
আদিল খুব তৃপ্তি করেই কফি খাচ্ছে। তখন কাউকে আসতে দেখে মাথা তুলে সামনে থাকালো। নিদ্রার মুখের দিকে তাকিয়ে থমকে গেলো আর দাঁড়িয়ে পরলো। বিষ্ময়ে ওর হাতে থেকে কফির কাপ নিচে পরে গেলো আর ঝনঝন শব্দ করে তা ভেঙে গেলো।
ও অবাক নয়নে নিদ্রার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। আর নিদ্রা হাঁটা থামিয়ে আদিল এর হতভম্ব হওয়া মুখটার দিকে তাকিয়ে আছে। মাথা নিচু করে ভাঙা কাপের দিকে তাকায়। বাসায় সবাই অবাক হয়েছে আদিল এর রিয়াকশন দেখে।
আদিল এর পাশ থেকে একজন আদিলের কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,
‘ স্যার আর ইউ ওকে! আপনি এমন করছেন কেন?’
আদিল হকচকিয়ে যায়। নিজেকে কন্ট্রোল করে স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়ে সবার দিকে তাকিয়ে বলে,
‘ সরি, আপনাদের কাপটা ভেঙে ফেললাম।’
বলেই গম্ভীর করে ফেললো মুখটা আদিল তারপর নিদ্রার দিকে তাকিয়ে বলে,
‘ আপনি মিসেস অভ্র?’
নিদ্রা হ্যা বলে। তারপর বলে,
‘ আপনি যাদের কথার ভিত্তিতে এখানে এসেছেন সেটা সম্পূর্ণ ভুল অফিসার!’
আদিল এগিয়ে এসে নিদ্রা মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বললো,
‘ আপনি কি বলতে চাইছেন?’
‘ আমাকে জোর করে বিয়ের আসরে বসানো হয়নি। আমি নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করেছি। আর ডির্বোস ও নিজের ইচ্ছায় ই দেবো। এখানে অভ্র বা ওর পরিবারের কোন দোষ নাই। তারা আমাকে যথেষ্ট ভালোবাসে। কোন রকম অত্যাচার করেনি। আমার চাচা চাচি নিজের স্বার্থ এ এসব করেছে। আপনি অভ্রকে জেলে নেবেন না প্লিজ।
‘ সরি, আমরা আপনার কথা রাখতে পারবো না। কেস যেহেতু করা হয়েছে মিস্টার অভ্রকে আমাদের সাথে যেতেই হবে।’
‘ এটা কি ধরনের কথা আমি নিজে বলছি তো এসব ওদের জোর জবরদস্তি নাই। আমার সম্মতি আছে। আর সম্পর্ক থেকে আমি বের হতে চাইছি।’
‘ এটাই সমস্যা। আপনারা যদি একসাথে থাকার সিদ্ধান্ত নিতেন তাহলে আপনার কথা মেনে নিতাম কিন্তু আপনাদের আলাদা হওয়ার কথা শুনে আমার মনে হচ্ছে কেসটা করা ঠিক হয়েছে।আর আপনি সত্যি বলছেন তার কি গ্যারান্টি এমন ও তো হতে পারে আপনার স্বামী আপনাকে ভয় দেখিয়ে, হুমকি দিয়ে এসব বলাচ্ছে নিজে বাঁচতে ’
‘ আপনারা আমার কথা বিশ্বাস না করে তাদের কথা কেন বিশ্বাস করছেন যারা আমাকে এক দন্ড সহ্য করতে পারে না। কষ্ট এরা না তারা আমাকে দিয়েছে। আর আপনি তাদের কথায় এখানে আমার হাজব্যান্ড কে গ্রেফতার করতে এসেছে কেন? আর অভ্র আমার বন্ধু ওকে আমি অনেক দিন ধরে চিনি ওকে আমি বন্ধুর বেশি ভাবিনা তাই ডির্ভোস দিয়ে আলাদা হবে যাবো এতে এতো সমস্যা কোথায়?’
‘ আপনার স্বামী অন্য কাউকে ভালোবাসে সে জন্য আপনাকে ডিভোর্স দিতে চায় শুনছি আমরা।’
নিদ্রা , অভ্র ও ওর পরিবারের সবাই পুলিশ কে বুঝানো চেষ্টা করলো কিন্তু পারলো না।অভ্রকে জেলে নিয়ে গেছে।নিদ্রা মাথায় হাত দিয়ে বসে পরলো সোফায়। এখন অভ্রকে জেলে থেকে ছাড়াবো কি করে ভাবছে নিদ্রা।
আদিল যাওয়ার আগেও নিদ্রার দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে ছিলো যা নিদ্রার চোখ এড়ায়নি।
#চলবে……….
#চলবে…….