#তুমি_শুধু_আমার
#written_by_ayrin
#part1
মা এই মেয়ে এবাড়িতে কেনো? তুমি তো বলেছিলে এই মেয়ে এখানে থাকেনা। তুমি কি আমাকে মিথ্যে বলে এ বাড়িতে নিয়ে আসছো? যদি এরকম হয়ে থাকে তাহলে আমি আজকের নেক্সট ফ্লাইটেই কানাডায় বেক করবো। রিহান কথাটা বলে ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে উত্তরের আশায়,,
মেহের এ বাড়িতে এসেছিলো নিহান এর অনুরোধে। কিন্তু এখানে এসে যে এরকম পরিস্থিতিতে পরবে ভাবতেই পারেনি। তাও আবার নিজের স্বামী তাকে এই কথা বলেছে। অবশ্য এই সম্পর্কের কোন গুরুত্বই নেই রিহান এর কাছে। তাই তো বিয়ের পাঁচ বছর পর ও তাকে অপমান করতে ভুলছে না।
ছয় বছর আগে,,
রিহান এর সাথে মেহেরের বিয়ে হয়েছে পাচ বছর আগে ।এই বিয়েতে মেহের কিংবা রিহান কেউই রাজি ছিলোনা। মেহের এর যখন ১৩ বছর বয়স তখন রিহান এর সাথে তার বিয়ে হয়। তখন রিহান এর বয়স ছিলো ১৯ বছর। মেহের এর যখন ১২ বছর বয়স তখন একটা এক্সিডেন্টে মেহের এর বাবা মা মারা যায়। একমাত্র মেয়ে হওয়ায় আর কোন ভাই বোন ছিলোনা মেহের এর।মেহের এর বাবা মা পালিয়ে বিয়ে করার কারণে মেহেরের বাবা মায়ের মৃত্যুর পর ওর বাবার ফেমিলি বা ওর মায়ের ফেমিলির কেউ রাজি ছিলোনা ওর দায়িত্ব নিতে। রিহান রা প্রতিবেশী ছিলো মেহেরদের।মেহের কে রিহানের দাদী খুবই আদর করতো তাই পরবর্তীতে রিহান এর দাদীই ওর দায়িত্ব নেয়। আর তার এক বছর পর যখন রিহানের দাদী শয্যাশায়ী হলেন তখন তিনি শেষ ইচ্ছে আবদার করেন মেহের এর সাথে রিহান এর বিয়ে দিতে চান।
তখন রিহান এর মা মেহের এর সাথে রিহান এর বিয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানায়। কিন্তু রিহানের বাবা তার মায়ের শেষ ইচ্ছে পূরণ করতে রিহানের সাথে মেহেরের জোর পূর্বক বিবাহ সম্পন্ন করেন। বিয়ে হবার কিছুক্ষণ পরই তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। রিহান এই বিয়েটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলো না তাই তার কিছুদিন পর কানাডায় চলে যায় পড়ালেখার কথা বলে। আর তখন থেকে রিহান এর মায়ের চোখের কাটা হয়ে ওঠে মেহের। উঠতে বসতে মেহেরকে কথা শুনাতো রিহানের মা। মেহের সবসময় চুপচাপ শুনতো কখনো প্রতুত্তরে কিছু বলতো না। মেহের অল্প বয়সেই খুব ম্যাচিউর হয়ে গিয়েছিলো। রিহান এর মা যখন ওকে কথা শুনাতো তখন ও ভাবতো ঠিকই তো বলেছে ওর জন্যই রিহান এ বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে।
এভাবেই মেহের রিহানদের বাড়িতে থেকেই এসএসসি পরিক্ষা দিয়েছে। ওর যত খরচ হতো ও সব টিউশন করে করতো। এই বাড়ি থেকে একটাকাও নেয়নি গত একবছর,,বাকিটা ওর বাবার রেখে যাওয়া টাকা দিয়েই করতো। এসএসসি তে গোল্ডেন পেয়ে পাশ করেছে ও। আর মেহের কে রিহান এর মা দেখতে না পারলেও রিহান এর বাবা আর ওর ছোটভাই নিহান ওকে অনেক স্নেহ করতো। মেহের এর বেস্টফ্রেন্ড হলো রিহানের ছোট ভাই নিহান। এসএসসি কমপ্লিট হওয়ার পর মেহের হোস্টেলে চলে গিয়েছে। এতে অবশ্য রিহানের মা খুশিই হয়েছেন। নিহান আর ওর বাবা বাধা দিতে গিয়েও ওর মায়ের কারনে ওকে আটকাতে পারেনি। নিহান আর মেহের একসাথে স্কুল কলেজে পড়ার কারনে ওদের বন্ধুত্ব অনেক গভীর। নিহান আর মেহের দুজনেই দুজনকে নিজের ভাই আর বোন মনে করে। মেহের সবার সামনে ম্যাচিউর থাকলেও একমাত্র নিহান এর কাছে তার বাচ্চামো সব আবদার থাকে।
আজ মেহের আর নিহানের রেজাল্ট প্রকাশের দিন। তাই ওর চেহারার মধ্যে কিছুটা দুশ্চিন্তার ছাপ ফুটে উঠেছে। কিন্তু তাকে এই সময়ে সাপোর্ট করার মতো কেউ নেই। কারন ও একজন এতিম। আর এজন্যই নিজের রেজাল্ট নিয়ে ভয় পাচ্ছে । কারণ ওর রেজাল্টের মাধ্যমেই ওর ক্যারিয়ার ডিপেন্ড করে আছে। মেহের কারো বোঝা হয়ে থাকতে চায়না,, নিজে কিছু করতে চায়।
তাই নিহান মেহেরের মন ভালো করার জন্য জোর করে তাদের বাড়িতে নিয়ে এসেছিলো। কিন্তু নিহান জানতো না আজকে রিহান আসবে। যদি জানতো কখনো মেহের কে নিয়ে আসতো না।
থাপ্পড়ের শব্দ পেয়ে মেহের বাস্তবে ফিরে আসে। আসলে মেহের কে থাপ্পড় দিয়েছে নিহানের মা।
অমনোযোগী হওয়ায় টাল সামলাতে না পেরে দেয়ালের সাথে ধাক্কা খেয়ে ফ্লোরে পরে যায়।
নিহানের মা- এই মেয়ে এই বাড়িতে আবার এসেছিস কেনো। যেই শুনেছিস আমার ছেলে বাড়িতে এসেছে তাই তুই ও এই বাড়িতে চলে এসেছিস। বেহায়া মেয়ে কোথাকার। আমি তো ভেবেছিলাম আর জীবনেও তোর চেহারা আমাকে দেখতে হবে না। আমার ছেলেটা আসতে না আসতেই নিজের অপয়া মুখ টা আমার ছেলেকে দেখিয়ে দিলি।
মেহের ফ্লোর থেকে মাথা তোলে একবার নিহানের দিকে তাকিয়ে থেকে ওর মাকে বললো আন্টি আমি জানতাম না উনি আসবেন, জানলে কখনোই এখানে আসতাম না। তারপর নিহানের দিকে তাকিয়ে বললো আমি এখন যাচ্ছি।
আর কিছু না বলেই মেহের বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেলো। সেদিকে তাকিয়ে রিহানের মা বললো আপদ বিদায় হলো।
নিহান এতক্ষণ স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিলো। মেহের কে চলে যেতে দেখে মেহের এর পিছু পিছু যেতে নিলে ওর মা ওর হাত ধরে আটকে দেয়।
নিহান ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো মা আমার হাতটা ছাড়ো। এখন যদি আমাকে যেতে না দাও তাহলে আজকেই এ বাড়িতে আমার শেষ দিন।
নিহার এর মা আর কিছু না বলে হাত ছেড়ে দিলেন। কারণ নিহান শান্ত স্বভাবের হলেও একবার রেগে গেলে মেহের ছাড়া আর কেউ ওকে শান্ত করতে পারেনা।
নিহান দৌড়ে বাড়ির বাহিরে চলে গেলো। কিন্তু ওখানে মেহের কে না পেয়ে কিঞ্চিৎ আশাহত হলো। দেরি না করে মেহের এর হোস্টেল এর দিকে এগিয়ে গেলো। কারণ ও ভালো করেই জানে আজকে মেহের ঠিক কতটা কষ্ট পেয়েছে।
এতক্ষন রিহান চুপচাপ এককোনায় দাড়িয়ে সব দেখেছে। কিন্তু সে ঘুনাক্ষরে ও ভাবেনি ওর মা মেহের এর গায়ে হাত তুলবে। এখন রিহান আফসোস করছে ও যদি মাকে এই কথা না বলতো তাহলে মেয়েটা সবার সামনে চড় খেতোনা। কিন্তু কেনো যেনো মেয়েটাকে মার খেতে দেখে ওর মন খারাপ লাগছে।
তারপর আবার ভাবছে ঐ মেয়ের কারণে নিহান আমার সাথে কথা বলেনা। নিশ্চয়ই মেয়েটা আমার নামে আমার ভাইকে উল্টাপাল্টা কিছু বুঝিয়েছে। তা নাহলে যে নিহান আমাকে ছাড়া কিছু বুঝতো না।সে আমার সাথে প্রায় চার বছর ধরে কথা বলে না সেটা কিভাবে সম্ভব।ঠিক হয়েছে মা ঐ মেয়েকে মেরেছে।
কিন্তু আমার কষ্ট কেন হচ্ছে ঐ মেয়েকে দেখে। মনটাও আজকাল আমার কথা শুনতে চায় না। নিজের মনে বিরবির করতে করতে রুমে চলে গেলো।
এদিকে নিহান হোস্টেল এর বাহিরে দাড়িয়ে মেহের কে অনবরত কল করে যাচ্ছে,, রিসিভ হচ্ছে না। গার্লস হোস্টেল হওয়ার কারণে ছেলেদের ভেতরে ঢুকার পারমিশন নেই। দারোয়ান কে কতবার রিকোয়েস্ট করলো ও কে যেন ভিতরে যেতে দেয় কিন্তু খাটাস বেটা ভেতরে যেতেই দিচ্ছে না।
নিহান বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে প্রায় একঘন্টা হতে চললো,,, তখন শুনলো কেউ তাকে বলছে এটা খেয়ে নে মাথা ঠান্ডা হবে। আর বেশি বেশি এনার্জি পাবি আমাকে বকা দেওয়ার জন্য। নিহান কিছু না বলে মুখ ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো।
মেহের কান ধরে নিহান কে সরি বললো,, কিন্তু নিহান কোন রিয়েকশন ই করেনি। মেহের ভাবছে কিভাবে নিহান এর রাগ ভাঙ্গাবে,, তখন রাস্তার অপর পাশে দেখলো একটা মেয়ে ফুল বিক্রি করছে তাই নিহানের জন্য ফুল নেওয়ার জন্য অপর পাশে গেলো,,
নিহান এতক্ষণ পাশ ফিরে দাড়িয়ে ছিলো মেহেরের কোন রেসপন্স না পেয়ে সামনে তাকিয়ে দেখলো সামনে অনেক মানুষ ভীর করে আছে। কৌতুহল বসত সেদিকে এগোতেই মেহের কে রক্তাক্ত অবস্থায় পরে থাকতে দেখলো,,,