তুমি হলেই চলবে পর্ব ২৩

#তুমি~হলেই~চলবে 🍁
#writer~হাফসা~আলম 🍂
২৩.
.
.

কাঁচের টেবিলটা উপড়ে তুলে ধাম করে নিচে ছুড়ে দিতেই এক বিকট শব্দে সম্পূর্ন্য হসপিটাল কেঁপে উঠেছে।আমি চোখ দিয়ে সম্পূর্ন্য রুম একবার চোখ বুলিয়েই আমার প্রান আত্না উঠে গেছে।গলা শুকিয়ে আসছে।যে সত্য চার মাস নিজের মাঝে ধারন করে রেখেছি তা কি তাহলে আযমান যেনে গেছে??সেন্সলেস হওয়ার পরে আর কিছু মনে নেই।চোখখুলে নিজেকে হসপিটালের বেডে আবিষ্কার করেছি।তখন কানে শুধু উনার চিৎকার এসেছে খুব রেগে ডাক্তারের কলার ধরে বলছে….
—ডাক্তার লিজা কোথায়??আমার সামনে নিয়ে আসুন।খুন করে দিব বলে দিলাম।এত বড় কথা কিভাবে লুকাতে পারলো??আর আপনারা কিসের ডাক্তার??রোগীর গার্ডিয়ান আমি আমাকে না জানিয়ে কি করে এত বড় সিদ্ধান্ত নিলেন ??বলেন???(বলেই ধাড়াম।মানে কেবিনের কাঁচের টেবিল ছুড়ে দিয়েছে)
.
রুমের কিছুই ঠিক নেই সব ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে।আমি নিঃশব্দে কাদঁছি।উনাকে দেখেই ভয়ে আমার সারা শরীর কাপঁছে। উনি সত্যিটা জানলে এতটা ভয়ঙ্কর হবে আমি ভাবীনি ।কিন্তু আমার কাছেও সেকেন্ড অপশান ছিল না।তাই আমি এটা করেছি।আযমান নিজের মাথার চুল গুলো নিজের দুহাতে টানছে আর চেঁচিয়ে উঠছে।তার চোখগুলো অসম্ভব লাল হয়ে আছে।হাত দিয়ে গড়গড়িয়ে রক্ত পড়ছে।যেটা আমার মোটেও সজ্জ হচ্ছে না। আমার দুই হাতে এক হাতে স্যালাইনের নল আর অপর হাতে রক্তের নল।আমি চোখ বুলিয়ে মা বাব আম্মু আব্বু ভাইয়াকে খুঁজেই চলেছি তারা কোথায় আর কেনোইবা উনাকে আটকাচ্ছে না।ডাক্তার নার্স সবাই কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।সবার মাঝেই ভয়েরা হানা দিয়েছে।ভয়েই কেউ কথা বলছে না।আমি এবার নিজের ভয়কে দমিয়ে বলে উঠলাম…..
—আপনি এমন কেন করছেন??কি হয়েছে বলেন আমাকে ??
.
আমার কন্ঠ শুনে উনি চকিতেই আমার দিকে ভয়ঙ্কর ভাবে তাকিয়ে আছে।ভয়ে ত আমার কলিজা শুকিয়ে গেছে।তার এই অস্বাভাবিক লাল চোখ আমি আমার জীবনে এই প্রথম দেখছি।ঘামে সারা শরীর একাকার হয়ে আছে।এসি চলছে তবুও উনাকে এমন ঘামাচ্ছে কেন।ইশশ্ হাত থেকে কত রক্তেইনা ঝড়ছে।আমি ঢোক গিলে চোখ নামিয়ে নিলাম।উনি এবার ডুলডুল পায়ে আমার সামনে এগিয়ে আসছে।আর ভয়ে আমার বুক ক্রমশ ধাকধাক শব্দ করছে।উনার চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে।লাল লাল চোখ পানিতে ভাসছে মনে হচ্ছে। নাক কান গাল লাল হয়ে আছে।উনি ধীর পায়ে এবার আমার পাশে দাঁড়িয়ে পড়লেন।আটকে আসা গলায় বলে উঠে…….
—তুমি ধোঁকা দিলে আমায় আয়ুজান??
.
বুকটা কেঁপে উঠল তার কথায়। আমি কিছু বলতে পারছিনা।চোখ নামিয়ে নিলাম।কি বলব তাকে??সেটাই মনে মনে খুঁজছি।কি বলা উচিত?? কি বললে উনি ঠান্ডা হবে তাই ভাবছি।উনি আবার ঠান্ডা মিনমিনে গলায় বলে উঠে….
—কিছু জিগ্যেস করেছি তোমাকে।তুমি আমাকে ধোঁকা দিয়েছ আয়ানা???আর কেন দিলে তাও বল???ফার্স্ট। জাস্ট ওয়ান মিনিট টাইম দিলাম।বল??
.
আমি এবার হাত কচলাতে শুরু করলাম।ভয়ে আমার হিঁচকি উঠছে।চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।ভয়ে দুই তিনটা শুকনো ঢোক গিললাম। আমি ভয় মিশ্রিত চোখে তার দিকে তাকাতেই আবার চোখ নামিয়ে নিলাম।কি ভয়ঙ্কর লাল হয়ে আছে চোখ গুলো।মনে হচ্ছে সব ভস্ম করে দিবে চোখের আগুনে।আমার কোন শব্দ বের হচ্ছে না দেখে উনি চেঁচিয়ে বলে উঠে……
—বলবে তুমি???
.
বলেই পাশে থাকা টেবিলটা ছুড়ে মাড়লেন।সাথে সাথে বিকট এক শব্দে সারা শরীর কেঁপে উঠেছে।আমি ভয়ে কানে দু হাত গুঁজে গুটি মেড়ে বসে পড়লাম। উনার এই ভয়ঙ্কর রূপ আমি প্রথম দেখছি।এই আযমানকে আমার সম্পূর্ন্য অপরিচিত মানুষ লাগছে।উনি এবার আমার দুই বাহু ধরে কাছে টেনে নিলেন আমাকে তার মুখোমুখি করে বলে উঠে……
—-কেনো করলে এমন বল??আমার চোখের দিকে তাকাও আয়ানা??কেনো এখন চোরের মত চোখ লুকাচ্ছ আয়ানা??কেনো??কেনো বলনি আমাকে এত বড় কথা?? কেনো???
—কি হচ্ছে এখানে?? আর মি.আযমান কি হয়েছে??
.
ডা.লিজাকে দেখে ভয়ে আমার হাত পা ধীগুণ গতিতে কাঁপা কাঁপি করছে।উনিত আগেই রেগে আছে।লিজাকে দেখে না যানি কি করে???উনি আমার থেকে চোখ সরিয়ে লিজার সামনে দাঁড়ালেন।একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলে……
—তা আপনি এতক্ষণ কোথাই ছিলেন???
—ওটি ছিল।কিন্তু কেবিনের এমন অবস্থা কে করেছে???আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না??আর আয়ানার কখন জ্ঞান ফেরেছে??ও এখন ভালো আছে ডা.নিশা??
.
ডা.নিশা একবার আমার দিকে একবার উনার দিকে তাকালেন।কিন্তু কিছু বললেন না। চোখ নিচে নামিয়ে নিলেন।আযমান এবার সরু হয়ে লিজার দিকে তাকিয়ে বলে…..
—-আয়ানা প্রেগন্যান্ট এটা যানেন আপনি ডা.লিজা??
—অবশ্যই যানি উনি তো আমার কাছেই টেস্ট করিয়েছে।কিন্তু এটা আপনিও যানেন।হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন??আর আয়ানা আমার রেগুলার পেসেন্ট। আপনি নিজেইত নিয়ে আসতেন তাহলে এমন প্রশ্নের মানে কি???সব তো আপনি যানেন।
—ওও সব আমি যানি?? এটাই আপনার মনে হয় তাই না??তাহলে আমি এটা কেন যানিনা আয়ানার প্রেগন্যানসিতে কম্পিলিকেসন আছে?? তাও নরমাল না??কেন যানি না এটা বলেন???
.
উনার চিৎকারে উপস্থিত সবার কাপাঁ কাঁপি শুরু। লিজা আমার দিকে অবাক হয়ে তাকায়।আমি অসহায়ের মত তাকিয়ে আছি তার দিকে।মাথা নেড়ে বুঝাতে চাইছি উনি যেনে গেছে।লিজা নিরাশ হয়ে নিচের দিকে তাকায়।আযমান এবার আরো রেগে চিৎকার করে বলে উঠে……
—-আপনার সাহসত কম না আপনি আমার হসপিটালে থেকে আমাকেই ধোঁকা দিলেন??আপনি যানেন আমি আপনার লাইসেন্স এখন এই মুহূর্তে ক্যান্সেল করতে পারি??ইউ নো দ্যাট???আর আমি সেটাই করব।আপনার মত ডাক্তারের প্রয়োজন নেই আমার।আপনার সাহস বড্ড বেশি।তা না হলে এত বড় কথা কিভাবে লুকাতে পাড়লেন। কিভাবে আমাকে যানানো প্রয়োজন মনে করলেন না??আমি বাচ্চার বাবা।ওকে আমার প্রয়োজন কি না সেটা পরের কথা কিন্তু হাজবেন্ড নিসেবে আমার ওয়াইফকে সম্পূর্ন্য নিরাপদ রাখা আমার দায়িত্ব। আপনার এই একটা কথা লুকানোর জন্যে ওর লাইফ রিক্স কত বেশি আপনি যানেন???মাএ ১০%। মাএ ১০% ওর সেফটি লাইন।৯০% রিক্স নিয়ে কিভাবে আপনি ওকে বাচ্চাটা রাখার অনুমতি দিলেন ডা.লিজা ট্যাল মি..???হাউ?? কেন করলেন বলেন??আর বলতে হবে না আপনার লাইসেন্স ক্যান্সেল করার ব্যবস্থা করছি।
.
বলেই মোবাইলটা পকেট থেকে বের করে।লিজা আমার দিকে অসহায়ের মত তাকিয়ে আছে।আসলেইত তার কোন দোষ নেই সব আমি নিজে করেছি।আমি তাকে এটা বলতে নিষেধ করেছি।এখন আমার কি করা উচিত??আমি চারপাশে চোখবুলিয়ে সাহস নিয়ে একটা শ্বাস নিলাম।এবার আমি চিৎকার করে বলে উঠলাম……
—ডা.লিজার কোন দোষ নেই??
—তুমি সবার জন্য দিল দরদী আমি জানি এসব বলে কাজ হবে না.।(বলে মোবাইলটা কানে দিলেন)
—আমি সব যানতাম। আমি আমিই উনাকে বলতেনা নিষেধ করেছি।শুধু নিষেধ না ফোর্স করেছি।
.
চোখ বুজে এক নিশ্বাসে বলে দিলাম।সাথে সাথে ঠাসসস করে শব্দ হল।আমি চোখ খুলে তাকিয়ে দেখি উনি লাল লাল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।হাতের মোবাইলটা খন্ডে খন্ডে বিভাজিত হয়ে ফ্লোরে পড়ে আছে।আমি ভয়ে চাদুরটা টেনে নিলাম।চারপাশে পিনপিনে নিরবতা কেউ কোনো কথা বলছেনা।সবাই এতসময়ে এটা বুঝে গেছে উনার রাগ কতটা ভয়ঙ্কর। আমি চোখ নামিয়ে নিলাম।ফ্যাসফ্যাস করে নিশ্বাসের গতি বেড়েই চলেছে।আমি নিজেকে শান্ত রাখতে চাচ্ছি কিন্তু পারছিনা।উনি এবার ভাবলেশহীন ভাবে আমার সামনে দাঁড়ালেন। হাটুগেড়ে বেডের পাশে বসে পরলেন।রক্তাক্ত হাত এগিয়ে দিলেন আমার দিকে।আমি তাকিয়ে আছি তার হাতের দিকে।উনি এবার আমার ডান হাত নিজের রক্তে ভেঁজা হাতে নিলেন।আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি।হাতটা তার গালে ছুঁয়ে বলে উঠে……
—আমার ভালোবাসায় তুমি কি ত্রুটি খুঁজে পেয়েছ আয়ুজান????
.
আমি মাথা দুপাশে ঝাঁকালাম যার অর্থ না।উনি এবার করুন চোখে আমার দিকে তাকালেন।তাকিয়ে বলে উঠে….
—তা হলে কেন এমন করলে??কেন করলে আয়ুজান??? যানো তোমাকে আয়ুজান কেন ডাকি???কারন একটাই তোমাতেই আমার জান।তাহলে কেনো এমন করে আমাকে মারতে চাও বল??কেনো বুঝলেনা আমাকে??কেনো এত যন্ত্রনা দিচ্ছ আমার বুকে??কেনো তুমি আমার বেলায় এত নিষ্ঠুর?? এত ভালোবেসেও কি নিষ্ঠুরতাই আমার প্রাপ্য বল??বলছো না কেনো তুমি??
.
উনার এমন হৃদয় কাপাঁনো চিৎকারে আমি কেঁপে উঠলাম।উনি এবার উত্তেজিত হয়ে প্রথম থেকে বলতে বলছে।ভয়ে আমার অবস্থা খারাপ।উনার ধমকানিতে বলতে শুরু করলাম….
—-রিপোর্ট পাওয়ার পরের দিন ডা.লিজা আমাকে কল করে বলেছে এই বাচ্চা নিলে লাইফ রিক্স ৯০%।তাই না নেওয়াই বেটার হবে।কিন্তু আমিই তাকে বলেছি আমি নিতে চাই।এতেও উনি রাজি হল না আপনাকে বলতে চেয়েছে তাই আমি বলেছি উনাকে চাকরি থেকে বেড় করে দিব ।তাই নিজের চাকরি বাঁচাতে উনি এটা করেছে।এতে উনার কোন দোষ নেই।আমি মা হতে চাই আযমান। এতে লাইফ রিক্স হলে হবে।কিন্তু পৃথিবীর সবচাইতে সুন্দর জিনিসটার ভাগিদার আমিও হতে চাই।আমিও চাই আমার কোল আলো করে আমাদের প্রিন্সেস আসবে।সরি আমার আপনাকে বলা উচিত ছিল।তাই আমি সরি বলছি।তবুও এমন পাগলামি ছাড়েন প্লিজজজ।
.
একদমে কথা গুলো বলে তার দিকে তাকিয়েই আমি অতৎঁকে উঠলাম।চোয়াল শক্ত করে লাল লাল চোখে আমার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।ভয়ে আমি আবার চোখ নামিয়ে নিলাম।উনি কঠিন কন্ঠে বলে উঠে…..
—আজ আমি সত্যেই বুঝতে পারছি তুমি আমাকে বিন্দু মাএও ভালোবাস না।আমিই কাঙ্গালের মত তোমাকে ভালোবেসে নিজেকে শেষ করে দিচ্ছি।আমারো তোমার মত নিষ্ঠুর হয়ে নিজের প্রিন্সেসকে নিয়ে ভাবা উচিত তাই না??তুমি থাকলেই কি না থাকলেই কি?? রাইট??
.
আমি অশ্রুসিক্ত চোখে তার দিকে তাকালাম।উনি এবার শব্দ করে কেঁদে উঠলেন।আমি অবাক নয়নে তার কান্না দেখছি।একটা লোক এতটা ভালোবাসতে কি করে পারে???উনি হঠাৎ আমাকে জাপ্টে জড়িয় ধরে।তার চোখের প্রতিটি ফোটা জানান দিচ্ছে কতটা ভালোবাসে আমাকে। এই লোকটাকে ছেড়ে আমিও যেতে চাইনা।কিন্তু কিছু করার নেই।উনি কান্নার গতি বাড়িয়ে দিল।সবাই তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে।এতক্ষণে বাসার সবাইও চলে এসেছে।সবাই অবাক হয়ে সব দেখছে।উনি কান্নায় জড়িয়ে আসা কন্ঠে চিৎকার করে বলে উঠে……
—-তাহলে আমি কেনো এটা মানতে পারচ্ছি না???কেনো আমার কলিজা ছিঁড়ে যাচ্ছে??কেনো আমার দম আটকে আসছে??কেনো নিঃশ্বাস নিতে পারছি না???কেনো এই যন্ত্রনা হচ্ছে??? কেনো ভয়ে আমার হৃদপিন্ড চলা বন্ধ করে দিচ্ছে?? কেনো আমার দম খিঁচে আর্তনাদ আসছে???কেনো আমি জীবিত থেকে মৃত্যুর সাদ পাচ্ছি?? কেনো আমার সব বিষাক্ত লাগছে??কেনো আমার নিজের রক্ত নিজের প্রিন্সেস নিজের অনাগত সন্তানের প্রতি নারাজি কাজ করছে??কেনো তাকে শত্রু মনে হচ্ছে??? কেনো শুধু মনে হচ্ছে তোকে আমি চাই না??কেনো তোমার বিনিময়ে আমি নিজের জীবনটাকেও মেনে নিতে পারব না??কেনো সব অন্ধকার লাগছে??কেনো??কেনো??এত কেনোর কোনো আন্সার আছে তোমার কাছে???থাকলে বল প্লিজজজ??আমার এত কষ্টের ঔষুধ আছে বল??তাহলে দেও না প্লিজজজ।
.
আমি তাকে এখনো জড়িয়ে আছি।চোখে বাধ ছাড়া কান্নার ঝড় বইছে।মনের মাঝে উত্তাপ বইছে।সবার চোখে পানি দেখে আমি অবাক হলাম।ভাবছি সবাই উনার কষ্ট এতটা ফিল করতে পারছে??কিন্তু আমার কেন ফিল হচ্ছে না??আমি বাবুকে বেশি ভালোবাসি তাই??এটা তো সার্থপরের মত হল??হ্যাঁ নিজেকে আমার বড্ড সারথ্যপর মনে হচ্ছে।আমি সারথ্য পরের মত তার সাথে এটা করতে পারলাম??মা হওয়ার তৃপ্তির জন্য আমি নিজের স্বামীকে এভাবে দুঃখ দিব আমি আসলেই ভাবতে পারিনি।ভেবেছি আমি ছাড়াও কেউ তাকে ভালোবাসার মত রেখে যেতে পারব।কিন্তু উনি এতটা অসুখী হবে আমি বুঝতে কেনো পাড়লাম না??কেনো তুমি~হলেই~চলবে কথার মানে বুঝলাম না??এত কেনোর জবাব একটাই আমি মা হতে চাই।সবার কথা উপেক্ষা করে আমি মা হতে চাই।আমি উনার পিঠে হাত বুলালাম।উনি আবার ক্ষীণ কন্ঠে বলে উঠে…..
—উত্তর দিলে না যে??নেই উত্তর??প্রতিবারের মত আমি এবারও তোমার হাত ধরে রাখতে চেয়েছি আয়ুজান। এবারও তোমাকে করা প্রশ্নের উত্তর আমি নিজে দিতে চেয়েছি।অনেক খুঁজে কি আন্সার পেয়েছি যানো???না তুমি যানো না।যানবে কি করে বোকা তো তুমি।আমি বলি??শুনবে??ভালোবাসি তোমাকে আমি।শুনতে পাচ্ছো আমি ভালোবাসি তোমাকে। তাই এত এত কেনোর সৃষ্টি। বুঝতে পারচ্ছ???আর আমার ভালোবাসার বদলে তুমি কি দিলে???কিছু না।এবারও নিজের জন্য চেয়ে নিলে।নিজে মা হতে চাও তাই এমন করলে??না কি আমাকে বেস্ট গিফট দিতে চাও বলে এমন করলে??কিন্তু তুমি কি যানো আমাকে বেস্ট গিফট দিতে গিয়ে আমাকেই হারিয়ে ফেললে।আমাকে তুমি নিঃশ্ব করেছ অনেক আগেই এখন নিঃশেষ করতে চাও??ঠিক আছে আমি নিঃশেষ হতে চাই তোমার হাতে।তোমার মা হওয়ার বিনিময়ে আমি নিজেকে নিঃশেষ করতে চাই।তুমিও থাকবে না আমিও না।তবে প্রিন্সেস থাকবে।সবাই আয়ানার মেয়ে বলে জানবে।সব কিছুর বিনিময়ে ভালোবাসি তোমাকে।আমিতো বলেছিলাম তুমি হলেই~চলবে তবুও কেন করলে…??
.
উনি থেমে থেমে কাদঁছে। আমি বুঝতেই পাড়ছিনা কি করব।উনার কার্য দেখে মনে হচ্ছে আমি সত্যিই মারা গেছি।তার প্রতিটি কথায় আমি অপরাধী।উনি এবার মাথা তুলে আমার মুখের সামনে নিজের মুখ নিয়ে আসে।করুন চোখে তাকিয়ে রক্তাক্ত হাত দিয়ে দুইগাল আঁকড়ে ধরে।চোখমুখ ফুলে একাকার অবস্থা তার।আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে বলে উঠে……..
—ডা.লিজা বেস্ট ডাক্তারদের আমি হসপিটালে দেখতে চাই।তোমার ১% কেও আমি কাজে লাগাতে চাই।আল্লাহর উপড় বিশ্বাস বরাবরের মত আছে।তবে তোমাকে ক্ষমা করতে পারবো না আয়ুজান।সরি। সরিটা তোমাকে না আমার নিজেকে দিলাম।ভুলটা তো আমিই করেছি।নিজের ভালোবাসার সঠিক যত্ন নিতে পাড়লাম না।তা না হলে এত বড় কথা লুকাতে পারতে না।দোষী আমি।ব্যর্থ আমার ভালোবাসা।তবুও বলব ভালোবাসি।তোমাকে ছাড়া বাঁচা মশকিল হলেও আমি বাঁচতে চাই না।ধুকে ধুকে মরব না।তুমি নেই তো আমিও নেই।
.
কথাটা বলে আমার বুকে ডুলে পড়লেন। আমি সহ সবাই অবাক।আমি কিছুক্ষণ ডাকলাম।কিন্তু শারা পেলাম না।ডাক্তার এগিয়ে দেখে বলে উঠে……..
—-অতিরিক্ত মানুষীক চাপে সেন্সলেস হয়ে গেছে।আর হাত থেকেও বেশ রক্ত ঝড়েছে।তাই সব মিলিয়ে এমনটা হয়েছে।ইনজেকশন দিয়ে দিব আপনি টেনশন নেবেন না একদম।তাহলে আপনার জন্যও
.
আমার কানে কথাই আসছেনা।কেমন যেন ঘুড়ছে সব।ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে সব।সব অন্ধকার লাগছে।সাথে অপরাধীর ভার আমাকে আরো চেপে ধরছে।আমি কি সত্যিই অপরাধী??? কিন্তু আমিও যে আপনাকে খুব ভালোবাসি।সত্যিই ভালোবাসি।
.
.
#চলবে……………🍁
ভুলগুলো আল্লাহর দেওয়া মহান গুন ক্ষমার চোখে দেখবেন…………🍂

~একগুচ্ছ~জোনাকির ~আলো🍁
.
সাফা ভিড় ঠেলে রিভলভার হাতের মানুষদের পিছনে ফেলে নিভ্রনীলের সামনে এসে দাড়িয়ে পড়ে।তাকে এভাবে ভিতরে ডুকতে দেখে উপস্থিত সবার চোখ কোটর থেকে বেড়িয়ে আসছে প্রায়।নিভ্রনীল আজও মাক্স পড়েছে।সাফার হাতে হকিস্টিক.. স্টিকটা সে এবার ক্রমাগত ঘুড়াতে শুরু করে।রাগে তার মুখশ্রী লাল আভায় ফুটে উঠেছে।প্রচন্ড রাগ নিয়ে সে তার হাতের স্টিকটা দিয়ে নিভ্রনীলের মাথায় আঘাত করে।নিভ্র নিজের জায়গা থেকে দুই পা পিছিয়ে পড়ে তার মাথাটা হালকা কাত হয়ে পড়ায় সানগ্লাসটি একটু ঝুঁকে পড়ে।বারি দেওয়ার সাথে সাথে সাফার মাথায় দশ বারোটা রিভলভার অনায়াসে উঠে গেছে।সাফা একবার উপড়ের দিকে তাকিয়ে আবার নিভ্রের বরাবর মুখ করে তাকিয়ে থাকে।মা বলেছিল ভয়কে জয় করতে সাহস লাগে।রাতে ভূতের মুভি দেখে সে ভয়ে বাবা মায়ের মাঝে গুটিশুটি মেড়ে ঘুমানোর সময় মা বলত।ভয় পেলে পিছনে তাকাতে নেই।তাহলে বিপক্ষ দল দূর্বল ভাবে।তাই সেও তাকাবেনা।তাই নিভ্রের দিকে তাকিয়ে আছে।নিভ্রের মাথার একসাইডে রক্তের গড়াগড়ি হচ্ছে। তবুও সে এস্ট্রং.. ডান হাত তুলে ইশারায় রিভলভার গুলো নিচে নামাতে বলে তারা গান নামাতেই সাফা এক বিস্তর হাসি দিয়ে বলে উঠে…..
.
এবার হল ইকোল ইকোল..ট্রিট ফর ট্রেট..(নিভ্রর হাত টেনে তাতে কিছু টাকা দিয়ে বলে উঠে)দশহাজার আছে।এর বেশি আর লাগবে না।আপনি নিজের ট্রিকমেন্ট করিয়ে নিয়েন।মি.ভিলেলললন..বাবা বলেছে অন্যায় যে করে এবং যে সহে সকলেই সমান অপরাধি তাই আমি আপনার পাওনা দিয়ে নিজেকে অপরাধ মুক্ত করলাম।আমাকে মেড়েছেন এবার আমিও মেড়েছি..সোধ বোধ…আর হ্যা হ্যা এতই যখন নিজেকে শক্তি শালী মনে হয় তবে এই সব চেলা পেলা রাখার কি আছে বলেন ত।আমার তো মনে হয় আপনি নিজে কিছুই করতে পারেন না।শুধু এদের কে দিয়ে করান।আসল বীর সেই যে বডিগার্ড নিয়ে ঘুড়ে না।বুঝলেন ?? ফ্রীতে জ্ঞান দিলাম… কাজে লাগাতে পারেন.. টা টা
.
কথাটা বলে স্ট্রিকটা ফেলে দিয়ে নিজের গায়ের উড়নাটা উড়িয়ে দিতেই নিভ্রের চোখে মুখে রেশম পালকের মত তা আছঁড়ে পড়ে।ঝাপসা চোখে নিভ্র সাফার দাতঁ কেলানো হাসিই দেখতে পেল।তারপরই সাফা ভিড় ডেলে আবার চলে গেল।এত এত লোকের ভিড় থেকে বেড়িয়ে সে এক বিস্তর হাসি হাসল।মনটা কেমন নেচে নেচে উঠছে।ফুরফুরে মেজাজের লাগছে তাকে।মনে মনে ঠিক করেছে ঝুমা,মুক্তা,শিরিন,সাব্বির, আর অভি ভাইয়াকে ট্রিট দিবে…
.
নিভ্র এখনো দাড়িয়ে আছে। তার মত প্রভাবশালী ছেলেকে একটা পুচকি মেয়ে এভাবে মেড়ে যাবে ব্যাপারটা তার লোকেরা স্বপ্নেও ভাবে নি।তাদের এটা ভেবেই ভয় লাগছে।না যানি এ রগ চটা ছেলে তাদের কি হাল করে।

®হাফসা~আলম 🍁

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here