তুমি হলেই চলবে পর্ব ১৫+১৬+১৭+১৮

১৫+১৬+১৭+১৮
#তুমি~হলেই~চলবে 🍁
#writer~হাফসা~আলম 🍂
১৫.
.
.
ধিংতানানা টুনের ইতি টেনেছে ওই সাগর নামের ছেলেটা।সে এগিয়ে এসে আযমান ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠে…
.
দোস্ত কেমন আছস??
.
ভালো। তুই এখানে কেন??
.
আরে ওনারা আমাদের আত্নিয় তাই তাদের নিতে এসেছি।কিন্তু তুই এখানে কেন?? তোকেত বুয়েটের ক্যাম্পাসে আর দেখাই যায় না।এখন নাকি আইবিএতে কোর্স করছিস??তা কেমন চলছে সব??
.
বাহ তুই দেখি আমার সব খবরই রাখস।ভালো আমিও উনাদের আত্নিয় তাই গ্রামে বেড়াতে এসেছি।সব ঠিকঠাকি আছে।
.
তোর খবর রাখাটাই সাভাবিক নয় কি ক্লাসের টপাদের খবর রাখাই সাভাবিক…
.
আমি টপার হলে তুইও তো কম না.. আমার কুরসি নিয়া তো প্রাই টানাটানি করতি..ভুলে গেলি নাকি??
.
না তা ভুলি নি তবে টানাটানি করলেও তুই কখনোই ছাড়িসনি।আরে সারফারাজওতো আছে দেখছি…
.
সারফারাজ ভাইয়ার সাথে কোলাকুলি করে বকবক শুরু করলো।সব শেষ আমি মানে আমার সাথে ভাইয়া সাগর নামের ছেলেটাকে পরিচয় করিয়ে দিতে এগিয়ে এলো..
.
ওও হল আমাদের লিটেল পরী মানে ছয় ভাই চম্পা।একমাএ বোন আমাদের…
.
ছেলেটা এবার সবার চোখ এড়িয়ে আমার দিকে তাকায়।আমি মুচকি হাসি দিয়ে ভাইয়ার দিকে তাকাই উনি কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আমার সামনে এসে বলে উঠে…
.
হাই লিটেল পরী..দেখতে কিন্তু পরীর মতই।আমার নামতো জানা হয়েগেছে.. আরো জানার সুযোগ আছে…তো বল কেমন আছ.??
.
তার কথা শুনে আমি যতটাই সাভাবিক ছিলাম কিন্তু আযমান ভাইয়া আমার হাত চেপে ধরায় আমি প্রচণ্ড ভাবে অবাক হলাম।উনার চেহারা দেখার মত এত রেগে যাওয়ার মত কি হয়েছে বুঝতে পারছিনা।আজব..উনি খুব শক্ত করে আমার হাত ধরে আছে মনে হচ্ছে ছেড়ে দিলেই আমি পালিয়ে যাবো।আমি ছোট করে জবাব দিলাম…
.
ভালো….
.
আযমান ভাইয়া আর কথা বারাতে না দিয়ে বলে উঠে….
.
সবাই খুব টায়ার্ড তাই যাওয়া উচিত.. আয়ু আমার সাথেই যাবে।চল..
.
উনি একপ্রকার হাত টেনে সবার সামনে থেকে আমাকে নিয়ে হাটা দিল গাড়ির কাছে এসে দরজা খুলে বসিয়ে দিল আর বলে উঠে….
.
বসে থাক।
.
.
মেয়েরা হিংসুটে হয় যানি কিন্তু এই আযমান ভাইয়ারে না দেখলে তো যান হত না ছেলেরা এর চাইতেও ভয়ঙ্কর হিংসায় মাতে।বাড়ির সামনে বিশাল গেট।দুইপাশেই লাল টকটকে কৃষ্ণচূড়ার গাছ।গাছের নিচটাও লাল হয়ে গেছে কৃষ্ণচূড়ার লাল পাপড়ির কারনে।গেটের ভিতরে ডুকেই বুঝতে পারছি কত সুন্দর বাড়িটা।সামনে উঁচু দেয়াল বিশিষ্ট একটি বিল্ডি আছে সামনে বড় উঠান।ইশশ্ কি সুন্দর সব আমি তো এখানেই থেকে যাবো।নানুজান ঘরের সামনেই বসে ছিল.. এই বৃদ্ধ বয়সেও দারুন সুন্দর সে।আম্মু তার মতই হয়েছে।কিন্তু আমি আব্বুর মত দেখতে হয়েছি সবাই তাই বলে..আম্মুত আবার কান্নাজুড়ে দিয়েছে সে কি কান্না সবাই কান্নাকাটির পর্ব চালু করেছে।আমার কথা এখন কেউই মনে রাখবে না।আযমান ভাইয়ার কি হয়েছে আমার হাতটা শক্ত করে আঁকড়ে আছে।নানাজানের বিল্ডিংয়ের অপর পাশে বিশাল বাগান দেখা যাচ্ছে।খুব সুন্দর বাগান মনে হয়। এখানে নানা নানু,দুইটা কাজের লোক আর দাড়োয়ান থাকে।কাজের লোক হবে না দুজনেই মহিলা।আমরা ভিতরে গিয়ে একটু অবাক হলাম পুরাতন আমলের ডুপ্লেক্স বাড়ি। বেশ সুন্দর বাড়ি..আমার সাথে প্রথমেই নানার পরিচয় হল উনি এগিয়ে এসে বলে……
.
তা এই মেয়েকে তোমরা কোথায় কুড়িয়ে পেলে??
.
কথাটা শুনার সাথে সাথে ঠোঁটগুলো উল্টে কান্না চলে এল।আমার নানাজান এমন হবে ভাবতেই পারিনি।উনি আমাকে চিনতেই পাড়লো না।আমার চোখে পানি চিকচিক করছে।কান আর নাক লাল হয়ে এসেছে।আমি প্রায় কেঁদেই বলে উঠলাম….
.
এভাবে বলতে পারলেন নানাজান.. আমি তো আপনার নতুন বউ….
.
আমার চেহারা দেখে আর কথা শুনে সবাই হু হা করে হেসেঁ উঠলেন সাথে নানাজানও.. হাসতে হাসতে জড়িয়ে ধরে বলে উঠে….
.
এত দিনে একটা বিউটিফুল বউ পেলাম।তাহেরা তোমার চাইতেও হাজার গুনে সুন্দর বুঝলে।আর দেখ কত সুন্দর পুতুল পুতুল…আমার তো এখন একটা কবিতা শুনাতে ইচ্ছে করছে বলি….
“আমার নাতিন রূপ সুন্দরী রাস্তা দিয়ে যায়.. রোদে করে ঝিলিকমিলিক আমার নাতনিকে অপ্সরীর মত দেখা যায়।””
.
সবাই হেসেঁ উঠল আবার সাথে আমিও। আল্লাহ পৃথিবীতে অনেক কিছু সৃষ্টি করেছে তার সৃষ্টি সবকিছু সুন্দর এত সুন্দর সৃষ্টির মাঝে সবচাইতে সুন্দর হল পরিবার।এনাদের না পেলেত আমার জানাই হত না এই মহান বাক্যটি।নানাজান আর আম্মুর কান্না থামছেই না আর আব্বুতো নানাজানের পায়ের কাছেই বসে আছে।হয়ত তার নিজেরও মেয়ে আছে তাই সেও বাবার কষ্ট বুঝতে পারছে।পরিবারের সবাইকে একসাথে দেখে আপনাআপনি চোখে পানি চলে এসেছে।আযমান ভাইয়া আমার কানের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বলে উঠে…..
.
কি পাষান তুমি..কিভাবে পারলে আমার সতীন বানাতে.??বল কিভাবে??সন্ধ্যার পরে ছাদে দেখতে চাই এই আপরাধের বিরাট শাস্তি হবে…..
.
আবার হেসেঁ দিলাম তার কথায় উনি চোখ মেড়ে সামনে গিয়ে নানাজানের সামনে গিয়ে বলে উঠে….
.
এই যে বুড়া নানাজান এবার সাইডদেন তো কখন থেকেই দেখছি বসে আছে আর কান্না করছেন।এই বয়সে এসে এত সুন্দর বউ পেয়েছেন কোথায় একটু খুশিতে নাচানাচি করবেন তা না কেঁদে চলেছেন।সরেন তো…
.
বলেই নানাজানের গা ঘেঁষে বসে পড়েন আমি একটু অবাক হয়েই তাকিয়ে আছি।নানাজান হতভম্ভ চোখে তাকিয়ে বলে উঠে…..
.
তুমি ওর ছেলে(বাবাকে ইশারা দিয়ে দেখিয়ে)
.
কেন আপনার সন্দেহ হচ্ছে নাকি?? এই এখন এই বুড়া বয়সে এসে বলবেন না যে ডিএনে টেস্ট করাতে।কেমন লাগবে না?? (ভ্রু তুলে বলে উঠে)
.
এত বড় হয়ে গেছ। একদম বাবার মতই হয়েছ??(জড়িয়ে ধরে বলে উঠে)
.
তা আপনি কি বলতে চান ছোটই থাকবো নাকি??আরে বিয়ে সাদি করতে তো বড় হওয়া লাগেই আর আমি তো ছোট থেকেই বড়(আমার দিকে তাকিয়ে)আমি হলাম বাপকা বেটা তাই বাবার মতই হয়েছি…
.
.
নানাজানও হেসেঁ দিলেন।সবার মুখেই হাসি হাসি ভাব।আমিও মুচকি হেসেঁ পাশে তাকাতেই সাগর নামের ছেলেটাকে দেয়াল ঘেঁষে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আবার চোখ ফিড়িয়ে নিলাম।উনি আমার পাশে দাড়িয়ে বলে উঠে…..
.
পরিবারের সবাই একসাথে খুব সুন্দর লাগছে না.???.
.
হুম.. খুব..
.
লিটেল পরী কিসে পড়??
.
আইবিএতে.. আর আপনি??
.
আমি একটা কোম্পানিতে আর্কিটেক্ট হিসেবে আছি…কোন সেমিস্টারে আছ??
.
ফার্স্ট এয়ারে…
.
আরে বাস তুমিতো একদম পিচ্ছি..
.
এই মোটেও পিচ্চি বলবেন না।১৮+কিন্তু আমি..যাকে দেখি সেই পিচ্চি পিচ্চি বলে এমন কি আমার বেস্টুও আমারে পিচ্চি বাচ্চা বলে কেমন ডা লাগে শুনতে বলেন?? আমাকে কি দেখতে বাচ্চাদের মত নাকি??
.
মোটেও না ভুল হয়েগেছে সরি..আর ভুলেও পিচ্চি বলবো না বুড়ি…
.
তার কথায় চোখ বাঁকিয়ে তাকাতেই সে হাসতে হাসতে বাহিরে চলেগেলেন।…
.
ঝগড়া হচ্ছে। আমি কিন্তু করছিনা করছে ভাইয়ারা। আর তাদের ঝগড়ার করন কিন্তু আমি… আমি কোন রুমে ঘুমালে ভালো হবে তারা এটা নিয়েই ঝগড়া করছে।ভাবা যায়??না মোটেও ভাবা যায় না অবশেষে সবার ঝগড়াকে এড়িয়ে আমার জায়গা হয়েছে ছাদে সিঁড়ির পাশের দুই রুম আগের একটা রুমে।রুম আগেই পরিষ্কার করা ছিল।রুমের সাথে বিস্তর বারান্দা। যেখান থেকে খুব সুন্দর প্রকৃতির দৃশ্য দেখা যায়।কিন্তু একটাই সমস্যা আমার বারান্দার সাথে পাশের রুমের বারান্দা এটাচ করা।যদিও সবাই পরিবারের লোক তবুও কেমন যানি লাগছে। ভাইয়ারাও বারান্দায় আসবে আমিও কেমন জানি লজ্জা লজ্জা লাগে।শত হোক তারা তো বড়।আমি শাওয়ার নিয়ে একটু বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই ঘুমেরা হানা দিয়ে এসে হাজির।আমি ঘুমে তলিয়ে গেলাম।……….
.
🍁
.
পা টিপে টিপে ছাদের সিঁড়ি বেয়ে উপড়ে উঠছি।বুকের ভিতর ধুকপুকানি বেড়েই চলেছে। বুঝিনা উনার কাছে গেলেই এমন অবস্থা হয়।ছাদের দরজাটা ভিড়ানো ছিল। হালকা ঠেলে ভিতরে ডুকতেই সামনের দৃশ্য দেখে বুকের মাঝে চিনচিন ব্যাথা হচ্ছে।চোখ জোড়াও বড্ড জ্বালা করছে।মনে হচ্ছে এখনই একরাশ বৃষ্টি অঝড়ে ঝড়ে পড়বে। কিছু শব্দ কানে আসতেই গাটা জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে….
.
আমি তোমাকে ভালোবাসি আযমান…
.
শালি এ জীবনে কি আমার জামাই ছাড়া তোদের ভালোবাসার আর মানুষ নাই।সবার নজরই আমার জামাইয়ের দিকে।আর কচুর জামাই কি দুঃখী ভঙ্গি নিয়ে কাধে হাত দিয়ে শান্তনা দিচ্ছে।আর ওই শাঁকচুন্নি মালিহা কেঁদে কেটেঁ সাগর মহাসাগর বানিয়ে ফেলেছে।আশ্চর্য…
.
দেখ এভাবে কাদার কিছু নেই..
.
কিভাবে বলতে পারো তুমি এটা আযমান?? আমি তোমাকে সেই ছোটবেলা থেকে ভালোবাসি..তুমি একবারো বুঝার চেষ্টা করছনা…
.
কেন রে তোরে বুঝার ঠেকা নিয়ে রেখেছে বুঝি আমার জামাই??এত বুঝে কি করবে। আর আযমাননা তোরে তো পরে দেখমু..তোর এত কিসের দরদরে। এই মেয়ে কেঁদে কেটেঁ ফালাফালা হয়ে যাক দরকার হলে সাগর বানাক মহাসাগরে ভাসুক তোর কিরে শালা…এমন ভাব যেন জীবন আটকে আছে..আবার হাত বুলিয়ে শান্তনাও দিচ্ছে দেখ.. মন তো চাচ্ছে এই হাতটাই ভেঙে গুড়ো গুড়ো করে কফির সাথে মিশিয়ে চিনি ছাড়াই গিলে ফেলি..খাচ্চোর একটা।
.
দেখ মালিহা আমি অনেক আগে থেকে আর একজনের হয়ে গেছি।সে ছাড়া আমার জীবনে আর কিছুই নেই।আমি শুধু তাকেই চাই..ওই আমার প্রথম দেখা ভালোবাসা।ওকে ছাড়া তো আমি কিছুই ভাবতে পাড়ি না।
.
আমি ও তো তোমাকে ছাড়া কিছুই ভাবতে পারি না।তুমি ওত আমার প্রথম ভালোবাসা।তবে কেন আমারটা কেন হবে না বল… প্লিজজ বল…
.
হায় আল্লাহ আমি তো শেষ।আমার জামাইয়ের গলায় এই ঝুলন্ত ডোঙি সত্যিই ঝুলে পড়বে আমি ভাবতেও পারি নি।আর খাটাস কেরেক্টারলেস হাজবেন্ড ওরে এই ভাবে জড়িয়ে ধরার কি আছে।খাটাসটারে লাথি দিয়ে উখান্ডা পাঠাতে মন চাইতাছে।বিরক্তির লিমিট থাকে আমার তো সব লিমিট ক্রশ হয়ে গেছে মাথা ধাপধাপ করে গরম হচ্ছে সাথে যন্ত্রনার আগমন।মাথা ছিড়ে যাচ্ছে। এদের নেকামি দেখে নিজের চুলনিজেরই ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে।কিন্তু নিজেরটা কেন ছিঁড়বো ছিড়লে এদের গুলো ছিঁড়ব….
.
দেখ মালিহা গায়ের উপড় এভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ার মানে হয় না।দুরে যা একটু তারপর বল।দেখ তোকে বুঝাতে বুঝাতে আমি প্রায় টায়ার্ড আমি এই জীবনে একজনকেই ভালোবাসি আর সে হল আয়ু। ও ছাড়া কেউ ছিলনা আর কিউ আসবেও না।ওকে ছাড়া আমার বাচা মশকিল। এবার বল আমি কিভাবে নিজের জীবন ঝুঁকিতে ফেলি…
.
ঠিক আছে তবে আমিও তোমাকে ছাড়া বাচবো না।এবার বল আমি নিজের জীবন কিভাবে ঝুঁকিতে ফেলবো??আমি কি করবো??এই ছাঁদ থেকে লাফিয়ে জীবন দিব.??বলল.. এটাই ঠিক হবে তুমিও জীবনে হ্যাপি হবে আমিও আর কষ্টে থাকবনা…
.
ইয়া আল্লাহ এই মেয়ে দেখি ইমোশনালি ব্লাকমেইল করছে।একি এখান থেকে লাফি পরবে হতেও পারে।উনি এবার আপুকে ঝাঁকিয়ে ধমকের সুরে বলে উঠে…
.
মাথা খারাপ হল নাকি??এগুলো কেমন কথা।আর এসব পাগলামি ছাড়..চল নিচে যাই।এসব মোটেও ঠিক না তোর মাথা গরম এখন।সামান্য কথায় ভেঙে পড়ে এমন জঘন্য কাজের কথা মাথায় আনার মানে কি???
.
ভেঙে পড়েছে..নেকা আরে এই মেয়ে ভেঙে যাক মোচকাই যাক দরকার হলে গুড়ি গুড়ি টুকরাটাকরা হয়ে যাক আপনার কি?? হুম নেকা।মালিহা আপু এবার কান্নার মাএা আরো বাড়িয়ে রেলিংয়ের কাছে গিয়ে লাফানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।আর উনি বারবার ঝাঁকিয়ে সরিয়ে আনছে।আমি এবার তাদের কাছে গিয়ে বলে উঠি……
.
আপু এত ছোট জায়গা থেকে লাফিয়ে লাভ নেই তুমি মরবেনা।তার চাইতে বরং ওই বিল্ডিং বেশি উঁচা (সামনে ইশারা করে)ওটা একটা শপিং মল সাথে হোটেলও মানে এগারো তালা বিশিষ্ট। তুমি বরং ওই খান থেকে লাফিয়ে পর।তবেই কিছু একটা হবে।তা না হলে এখান থেকে পড়ে সর্বচ্চ হাত পা ভাঙবে।এর বেশি আর কিছুই হবে না।তাই বলছিলাম শুধু শুধু এক্সট্রা এনার্জি নষ্ট করে কি লাভ বল।একবারেই কাজ হবে এমন কিছু করা উচিত ঠিকনা।তাই বলছিলাম.. জাস্ট একটু কষ্ট করে লিফটে উঠবেন আর ছাদ থেকে টপ করে লাফাবেন কাজ খাতাম…….
.
একটু অভিনয় করে দেখিয়েছি।সবটুকু মনযোগ দিয়ে অভিনয় করেছি তাই তাদের রিয়েকশন দেখা হয় নি।এবার তাদের দিকে তাকাতেই দেখি দুজনেই আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।আশ্চর্য আইডিয়াটা কি খারাপ ছিল নাকি…..??
.
#চলবে………………🍁
ভুলগুলো আল্লাহর দেওয়া মহান গুন ক্ষমার চোখে দেখবেন……………..🍂
#তুমি~হলেই~চলবে 🍁
#writer~হাফসা~আলম 🍂
১৬.
.
.
মগেরমুলুক পাইছেন নাকি??এভাবে জাপটাজাপটি করবেন আর আমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখবো??কখনোই না আপনারা রং লিলা করছেন তো আমাকে ওত একটু ভাগ বসাতে হয় বলেন??আপনারা প্রেমলিলা করবেন আর আমি এটা হতে দিব ভাবলেন কিভাবে।কখনোই হতে দিব না।হুম..হ
.
আমি মোটেও জাপটাজাপটি করছিলাম না আয়ু।ও নিজেই কেঁদে কেটেঁ গায়ের উপর পরছিল।তাই আজে বাজে কথা রাখ..
.
মোটেও রাখা রাখি হবে না।আর উনি জাপটে পরলেই আপনাকেও বুঝি জাপটে নিতে হবে?? হাত বুলাতে হবে??তা ছাড়া শান্তনাও দিতে হবে না?? নেকামি যত সব।
.
দেখ ইচ্ছে করে মোটেও ওকে জড়িয়ে ধরিনি। ও নেজেই বারবার এমন ভাবে জাপ্টে পরছিল আমি সামলাতে না পেরেই এমনটা করতাম।
.
তাই নাকি?? কিন্তু আমি তো দেখেছি আপনি শান্তনা পুরুষ্কার দিচ্ছিলেন।নিজের ছোঁয়া দিয়ে??মনে হচ্ছে শিশুকে ললীপপ দিচ্ছেন কান্না থামানর জন্যে??
.
মাইড ইউর ল্যাঙ্গুয়েজ আয়ু।এগুলো কেমন কথা ছিহহ..তুমি ছাড়া কাউকেই আমি ওভাবে ছুঁয়েও দেখিনা বাই দ্যা ওয়ে আর ইউ জেলাস আয়ুজান…??
.
অবশ্যই জেলাস।এমনকি এই জেলাসির অগুনে আমি জ্বলে পুরে যাচ্ছি। জেলাসিটাই কি সাভাবিক নয়??অবশ্যই এটা সাভাবিক। আপনি একেত আমার হাজবেন্ড তার উপড় প্রথম ক্রাশ সাথে এখন ভালোবাসাটাও উড়ে এসে জুড়ে বসেছে।এখন বলেন আমার কি জেলাস হওয়া উচিত নয়??অবশ্যই উচিত হান্ডেট পার্সেন উচিত….মেয়েরা আর যাই হোক হাজবেন্ডের ভাগ কখনো দিতে চায় না। আর এখানেত জড়াজড়ি হচ্ছে….
.
উনি এবার কোমড়ে হাত দিয়ে হেসেঁ উঠে।তার হাসি দেখে আমার রাগ আরো শত গুনে বেড়ে গেছে বিরক্তি আর রাগ নিয়ে এবার হাটা দিলাম। পিছনে ঘুড়তেই উনি হাত চেপে ধরে বলে উঠে…..
.
ওর বাবা নাই। ওর কিছু হলে ফুফির কি হবে?? আর ফুফি ওর দায়িত্ব আসার সময় আমার কাছে দিয়েছে।একজন মামাত ভাই হিসেবে ওর দেখা শুনা করা আমার দায়িত্ব। আর ওকে বুঝানের ইচ্ছা আমার কখনোই ছিল না কিন্তু কিছু করার নেই। দায়িত্ব নিয়েছি বলেই এত বুঝানো। ওর কিছু হলে ফুফিকে কি জবাব দিব বল??তাই একটু বুঝিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিলাম।কিন্তু এই মেয়ে যা গায়ে পড়া টাইপের ওওওহহহ্।তবে তুমি আসাতে আমাকে একপ্রকার বাঁচালে।কি ভয়ঙ্কর মেয়ে ও আমি দূরেদূরেই থাকতে চাই।বাপরে কেমন চিপকু টাইপের।(বলেই উনি একটা নিশ্বাস নিল)যাই হোক তোমার এভাবে বলা উচিত হয়নি।এভাবে না বললেও পারতে।
.
ও তাই নাকি।থাকেন আপনি আপনার মালিহা নিয়ে। আমি যাই। খুঁজলে আপনার চাইতেও বেস্ট পোলা পামু। হুম.. হ্
.
হাত ঝাড়ি দিয়ে সামনে হাঁটা দিলাম।এসব নেকামি মোটেও ভালো লাগছে না।কি এমন বলেছি। ভালো একটা আইডিয়া দিয়েছিলাম। আইডিয়া শুনেই মালিহার বাচ্চা ডালিহা ভ্যা ভ্যা করে চলে গেছে আর উনি পেনপেনানি শুরু করেছে।আবার বলছে আমি জেলাস নাকি।জেলাসি মিশন শুরু।আপনি এবার দেখেন জেলাসি কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি….
.
🍁
.
ডাইনিং টেবিলে সবাই বসে আছে উদ্দেশ্য খাওয়াদাওয়া। আমি টেবিলের সামনে গিয়ে দাড়াঁতেই দেখলাম দুটো চেয়ার খালি আছে একটা আযমান ভাইয়ার পাশে আর অপরটা ওই সাগরের পাশে।কিন্তু এই সাগর যে রাতে আমাদের বাসায় আসবে এটা আমার জানা ছিল না। আমি আযমান ভাইয়ার পাশে আসবো বলেই এগিয়ে যাচ্ছিলাম কিন্তু কথা থেকে ওই মালিহা চলে এসেছে।মালিহা আপু উনার পাশে বসে পড়েছে।সাথে সাথে আযমান ভাইয়া উঠেও গেল। মালিহা আপুও দাড়িয়ে কানে কানে ফিসফিস করে কি যেন বলে উঠে।আবার সে বসেও পড়ে।যাই বলুক আমি সাগর ভাইয়ার পাশে বসে পড়ি।আমি পাশে বসাতে উনি নিশ্চুই খুশি হয়েছে। হেসেঁ হেসেঁ দাতঁ কেলিয়ে বলে উঠে….
.
লিটেল পরী দেখি আমার পাশে..
.
কেন কোন অসুবিধা হলে বলেন আমি বরং সোফায় বসি??
.
আরে না তেমন কিছু না। বস।
.
আমি হেসেঁ হেসেঁ ইচ্ছে করেই সাগর ভাইয়ার সাথে কথা বলছি।আমার সামনে বসেছে উনি।রাগে ফুঁসফুঁস করছে।একবার আড়চোখ তাকিয়েই চোখ নামিয়ে নিলাম। তার চোখগুলো কেমন লাল লাল হয়ে আছে।কাটাঁ চামুচ দিয়ে প্লেটে টুংটাং শব্দ করছে কিন্তু খাবার মুখেই দিচ্ছে না।না দিক আমার কি??যা খুশি করুক আই ডোন্ট কেয়ার….আমি নিজেও কেন যেন তেমন খাওয়া দাওয়া করতে পারলাম না।হয়ত উনি খায়নি বলে।এই বাঙালি মেয়েদের আজাইরা প্রবলেম…. আমার মাঝেও যে তা কাজ করছে ব্যাপারটা সত্য……
.
সাগর ভাইয়া ভালো ছেলে।দেখতে যেমন সুন্দর কথা বলাও সুন্দর। খুব গুছিয়ে কথা বলে।আমি এখন উনার সাথেই বাগান দেখছি ঘুড়ে ঘুড়ে। সে হেঁসে হেঁসেই কথা বলে।শুধু আমি হাসলেই এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।ব্যাপারটায় প্রথমে ব্যাপক আনইজি লাগত।এখনো লাগে তবে তেমন একটা না।এখন তার সাথে আমার দারুন সখ্যতা তৈরি হচ্ছে। উনি খুব মজার মজার কথা বলে যা শুনে আমি মাঝে মাঝে হেঁসে মাটিতে গড়াগড়ি খাওয়ার মত অবস্থা। তার এখন কার কথা হচ্ছে গার্লফ্রেন্ড নিয়ে।তার জীবনে গার্লফ্রেন্ডের বহু অনাগোনা ছিল তবে বেশি টিকতো না। উনি নাকি খুব কিপটুস ছিল তাই গার্লফ্রেন্ডরা ভাগত।আসল কথা হচ্ছে উনি সত্যি কারে কোন মেয়ের প্রেমে তেমন পড়েনি।ওরাই প্রপোজাল দিত ওরাই আবার ব্রেকাপ করতো।আযমান ভাইয়া আজ বেপক রেগে আছে।থাকুক রেগে আমার কি??হুম..হ্
.
ছাদে গল্পের আসর জমেছে।আমি তো ঘুমঘুম চোখে ডুলে পড়ছি.. দিল পাশে বসে কি যেন পেঁনপেঁন করছে।তাতে আমার বিন্দু মাএ ইন্টেরেস্ট নেই।আমি তো তার কাদেঁ মাথা দিয়ে ঝিমাছি।দিল এবার আমাকে ছাড়ি দিয়ে বলে উঠে…
.
ভাই তুই কি আমার দুঃখের কথা শুনতে পাচ্ছিস??
.
আমি চোখ ডোলে হাই তুলতে তুলতে বলে উঠি…বল কি বলবি??আর তোর মত এত সুখি সুখি মেয়ের আবার কি দুঃখের কথা থাকতে পারে??নেকামি ছাড় আর বল??
.
আব্বু আম্মু আর কিছুদিন পরেই বিয়েটা দিয়ে দিতে চায়।আয়ুরে আমার কি হবে??কিভাবে পালাবো বল??
.
কি হবে মানে কি??আর পালাবি কেন??পাগলের মত প্রলেপ বন্ধ কর বুঝলি।আর এই সব হাঁপাহাঁপি ছাড়।এখনো তোর মাথায় পালানো ঘুড়ছে ভাবতেই এক গ্লাস পানিতে ডুব দিতে মন চাচ্ছে। ফাউল মাইয়া।বিয়ে তো একটা খুবি ইজি ব্যাপার।টপাটপ তিনবার কবুল বলবি শেষ কেল্লা ফাতে..এত কষ্ট নেসকা বুঝলাম না??
.
এমন ভাবে বলছিস যেন কত কত বিয়ে করে ফেলেছস।শালি তোর তো আর কষ্টও নিতে হয় নি বাচ্চা কালে বিয়ে হয়ে গেছে।
.
তো বাচ্চা কালে হলেওত হয়েছে।বাদ দে তুই এত টেনশন নিস না ?? আমার মামনি কিন্তু সেই শাশুড়ি। খুব ভালো।এত টেনশন নিশনা টপাটপ বিয়া করে বাসর করে ফেলবি তারপর জমজের কারখানা। আহাহা কেয়া বাত হে।ছোট ছোট একগাদা বাচ্চা তাদের আবার পিচ্চি পিচ্চি হাত কি কিউট ব্যাপার না।আমি তাদের নিয়ে খেলাধুলা করবো।আমারে কি ডাকবে ফুফসস নাকি খালামনি বুঝতে পারছিনা।এত চাপ নিস না। এবার তোর কাধ দে আমি ঘুমামু…
.
দিলবার হা করে তাকিয়ে আছে।ও হয়ত ভাবতে পারেনি আমি এমন কিছু বলতে পারি।কেউই এদানিং ভাবতে পাড়ছেনা আমি কি বলব।এমন কি আমি নিজেই জানিনা পরের কথা আমি কি বলব।আসলে নিজের মাথাই আওলাঝাওলা হয়ে আছে।
.
বুকের মধ্যে ভাড়ি কিছু অনুভব হতেই আমার ঘুমটা হালকা হয়েগেছে।টিপটিপ করে চোখ খুলতেই ঘরময় অন্ধকারের ছড়াছড়ি। আমি তো ছাদে ছিলাম। এখানে কিভাবে এলাম।আর এটা কার রুম তাও দেখার কোন অপশান নেই।কেউ একজন খুব যত্নের সাথে আমাকে যাপটে ঘুমিয়ে আছে।আমি এবার নড়েচড়ে উঠতেই আর একটু জোড়ে চেপে ধরে সে বলে উঠে….
.
ঘুমাও না.. নিজেও ঘুমাও আমাকেও ঘুমাতে দেও..
.
আপনি আমার রুমে কি করছেন??আর আমি তো ছাদে ছিলাম এখানে কিভাবে এলাম??এই সরেন তা নাহলে কিন্তু ভালো হবে না।সরেন….
.
আমি উনাকে ঠেলছি আর উনার সে দিকে খবরই নেই।সে আরামের ঘুম দিচ্ছে। তার ভাড়ি নিশ্বাস আমার গলায় আছড়ে পড়ছে।বুকের মাঝে এক আজানা শিহরণ বয়ে যাচ্ছে। হাতপাও কাপঁছে। আশ্চর্য উনি এখনো উঠছেনা কেন কে যানে। আমি এবার প্রচণ্ড অসস্থিতিতে ভুগছি।তাই নিজের সব শক্তি দিয়ে তাকে ঠেলে উঠে বসে পড়লাম।আচমকা এমন ধাকা খেয়ে উঠে নিজেও উঠে বসেছে।আমি বিছানা থেকে নেমে লাইট জ্বালাতেই উনার লাল লাল চোখ দেখে ভয়ে চুপসে গেলাম।যে সাহস নিয়ে আমি তাকে ধাক্কা দিয়েছি তা এখন শূন্যের কোটায়।এবার সারা রুমের দিকে একবার চোখ বুলালাম বুঝতে পারলাম এটা আমারই রুম।কিন্তু উনি এখানে কেন বুঝলাম না।আমি তার দিকে এগিয়ে গিয়ে তাকাতেই উনি রাগী গলায় ফুঁসফুঁস করতে করতে বলে উঠে…..
.
ওর সাথে যেন আর কথা বলতে না দেখি..
.
কার সাথে..??
.
কেন তুমি যানো না করার সাথে??আজ সারা দিন যার সাথে হিহি হুহা করেছ তার সাথে।আমি সাগরের কথা বলছি।ওর সাথে যাতে তোমাকে সেকেন্ড টাইম আর না দেখি।
.
আপনি যদি মালিহা আপুর সাথে জড়াজড়ি করতে পাররেন আমি কেন পারবো না।আর এটা আমার পার্সনাল ব্যাপার ভাইয়য়য়য়া আমার যার সাথে খুশি তার সাথে কথা বলবো।আর সাগর ভাইয়া তো ভালোই কত কিউট….
.
জাস্ট শেট আপ আয়ু.. মাজাজ খারাপ করবে না আর কি বললে ভাইয়া.. আমি তোমার কোন জন্মের ভাই হে??ফাইজলামি কর?এগুলো বন্ধ কর।আর ওই সাগরের আশেপাশে যাতে তোমাকে না দেখি??মাইন্ড ইট।।
.
সরি ভাইয়া মাইন্ডে রাখা যাবে না.. কিন্তু সাগর ভাইয়ার সাথে আপনার কিসের এত শত্রুতা বলবেন???
.
দেখ আয়ু আমাকে রাগাবে না। এমনেতেই মাথা রাগে ফেটে যাচ্ছে আর যদি একবার ভাইয়া টাইয়া ডাক তো আমি কি করব যানিনা….. আর আমি একবার বলেছি সাগর থেকে দূরে থাকবে মানে থাকবে।তা না হলে আমার ভয়ঙ্কর রূপ দেখবে বলে দিলাম।এখন ঘুমাও….
.
সরি ভায়া আমি আপনার কথা রাখতে পারমু না। আপনি হলেন আমার ভায়া আর আমার বাচ্চার মামা.. হিহি..
.
উনি রাগে লাল হয়ে গেছে ভাগাই অতি উত্তম। আগে থেকেই দরজা খুলে রেখেছি তাই দিলাম এক ভৌ দোড়…….
.
#চলবে……..🍁
.
ভুলগুলো আল্লাহর দেওয়া মহান গুন ক্ষমার চোখে দেখবেন…….,🍁
#তুমি~হলেই~চলবে 🍁
#writer~হাফসা~আলম 🍂
১৭.
.
.
সূর্যের লাল অভা যখন তোমার মুখে পড়েছে আর তোমার মুখ লাল টুকটুকে হয়েছে ঠিক তখনই এই চোখের দৃষ্টি কেড়েছ তুমি..ঠিক তখনই প্রথম কারো চোখের মায়ায় আটকা পড়েছি আমি।ভালোবাসি তোমাকে। এত কম সময়েও ভালোবাসা যায় তুমি হয়ত বিশ্বাস করবে না কিন্তু কি করব বল আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি। বিয়ে করতে চাই। তুমি কি রাজি আছ???
.
আমি সপ্তম আকাশ বেধ করে জমিনে পরেছি মনে হয়। কি কয় এই পোলা।আরে আমার তো বিয়া পিচ্চি কালেই শেষ হয়েছে।এই পোলা কয় কি??এই জন্যেই আযমান ভাইয়া আমাকে বলেছে এর সাথে তেমন কথা বলতে না।কেন যে ডিঙ্গির মত কথা বলতে গেলাম এবার বুঝ ঠেলা।সিঁড়ি দিয়ে উপড় থেকে নামতেই দেখলাম সাগর ভাইয়া এসে হাজির সাথে তার বাবা মাকেও নিয়ে এসেছে।সেখানে আমার সম্পূর্ন পরিবারও আছে।সাথে বাবা মা আর আযমান ভাইয়াও আছে।আমি নিচে নেমে আসতেই সাগর ভাইয়ার মা আমার হাত ধরে নিয়ে গিয়ে বলে উঠে তার নাকি আমাকে খুব পছন্দ হয়েছে।আজব পছন্দের মানে কি??তখনো ভালো করে বুঝে উঠতে পারলাম না কিন্তু এখন তা বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছি।সাগর ভাইয়ার এভাবে হাটুগেড়ে বসে হাতে আংটি নিয়ে বলার ধরনে বেশ বুঝতে পারছি।আমি আযমান ভাইয়ার দিকে করুন চোখে তাকিয়ে আছি।আর উনি মনের মাধুড়ি মিশিয়ে ফোন গুতাচ্ছে। আরে শালা আবুল তোর বউরে বিয়ের জন্যে টানা টানি কতাছে আর তুই মাধুড়ি মিশাইয়া ফোন গুতাচ্ছস।তোরেত এই ফোনে চুবিয়েই মাড়বো। আমি আম্মুরদিকে তাকিয়ে দেখি সে এখনো শক্ট হয়ে দাড়িয়ে আছে।সবাই প্রায় অবাক কিন্তু সবার মাঝে দুইজনের চোখমুখ চকচক করছে খুশিতে।এক আমার নানাজান আর এক মালিহা আপু।আমার তো এবার কান্না পাছে এটা কোনো সাধারন কান্না না হাত পা ছড়িয়েছিটিয়ে চিৎকার চেঁচামিচি করে কাদঁতে ইচ্ছে করছে।উনার গলাটা চেপে ধরতে ইচ্ছে করছে।উনার বউ নিয়া টানা টানি চলছে আর উনি মোবাইলে আটকে আছে।আমি তো মনে মনে রাগ আর অভিমানের কারনে রিংটা পোড়েই নি ভাবছি।মেজাজ টাই বিগড়ে আছে।আমি বিড়বিড় করে উনাকে অনেক বকে দিলাম।এবার একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে।তাকাতেই আযমান বেটা হাজির।আর সাগর ভাইয়ার হাত থেকে ঝড়ের গতিতে আংটিটা নিয়ে বলে উঠে…..
.
তুই এবারও লেইট বেটা..
.
মানে??(সাগর ভাইয়া অবাক হয়ে বলে উঠে)
.
মানে তুই এবার ভুল সময়ে এন্ট্রি নিয়েছস।এবার তো তুই আমার জানে হাত দিছিসরেরর। যাই হোক একদিক দিয়ে ভালোই করেছিস।আমি বরং আংটি বদলের কাজ আজই শেষ করে দি।তাহলে বিয়ে করতে বেশি টাইম লস হবে না।বিয়েটাও তাড়াতাড়ি করা হয়ে যাবে।আমার বউ নিয়ে যেভাবে টানাটানি হচ্ছে এতে বউকে দূরে রাখা কত ঝুঁকিপূর্ন বলা দুষ্কর। আর আমি অতও আহাম্মক স্বামী না তাই নিজের জিনিস নিজের কাছে রাখাই অতি উত্তম….
.
সারগ ভাইয়া এবার বিস্ময় নিয়ে বলে উঠে….
আয়ানার সাথে কি তোর রিলেশন আছে??
.
আরে ওর সাথে ওর জন্মের পরে থেকেই রিলেশন যাকে বলে পবিএ রিলেশন আরে আমার পিচ্চি কালের পিচ্চি বউ ও।দেখি হাতটা দেও আমি পড়িয় দি।আর তুই সাগর তোর এই আংটিটার প্রাইজ বলে দিস।টাকা দিয়া দিমু।আবার বলবি আমি তোর টাকায় এনগেইজমেন্ট করেছি। তা বউ হাতটা দিবা নাকি এটাও আমি বাড়িয়ে নিব??
.
আমি এখন বিস্ময়ের চরম পর্যায়ে আছি।বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে থাকা ছাড়া মনে হয়না আমার দাড়া কিছু হবে।উনি এবার হাটুগেড়ে বসে বলে উঠে….
.
প্রিয়তমা প্রিয়লি লতা..তোমায় যে নামে বলি সবই কম কথা।বুকের পাঁজরটা মিসিং যথাতথা। তবে তা আর বেশিদিন হবে না ।বুঝলে??অনেক তো হল এবার আমার হও।যদি অনেক আগে থেকেই তুমি আমার।তবুও হেই নানাজান আপনার হয়ত জানা নেই ও আমার বউ।তাইত মুখটা এত খুশিতে চকচক করেছে।তা আমি কি সাগরের থেকে খারাপ নাকি???
.
নানাজান মুচকি হেসেঁ সামনে এগিয়ে এসে বলে উঠে….
মোটেও না।তুমি তো বেস্ট।
.
উনি হেসেঁ উঠে আবার আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠে…
ভালোবাসা এক অপ্রকাশিত কথা।এটা প্রকাশ করার ভাষা থাকে না।আমি প্রকাশ করতেও চাই না। তবে বলতে চাই কতটা চাই তোমাকে আমি নিজের করে।তোমার জন্যে চাদঁ আনা প্রসিবল না হলেও এই কলিজায় আটকে রাখতে আমি সর্বদা প্রস্তুত।আমার এই এক পৃথিবীর তুমি ছাড়া অন্যকাউকেই জীবনসঙ্গী হিসেবে চাইনা।তুমি হলেই চলবে আমার।
.
উনি আমার হাতটা টেনে আংটি পরিয়ে দিল।আমি তো এখনো হা।চোখগুলো জ্বলজ্বল করছে। হতে পারে খুশিতেই অশ্রুরা সামিল হতে চাচ্ছে। উনি বলে উঠে…
ওই শালা সাগর তুই কি একটাই আংটি এনেছিস??
.
সাগর ভাইয়ার তো কাঁদোকাঁদো অবস্থা। তবুও নিজেকে সামলিয়ে পকেট থেকে আর একটা আংটি বেড় করে বলে উঠে..
.
নে এটা দিয়ে সম্পূর্ন কর তোর এনগেইজমেন্ট। শালা তুই সবসময়ের মত আজও হারিয়ে দিলি।কেন রে তোর কি আমি ছাড়া এই পৃথিবীতে আর কাউকেই চোখে পড়েনা??বল??বাটপার একটা।আয়ানা শুন এই ছেলে ভার্সিটি লাইফ থেকে আমার পিছনে হাত ধুয়ে পড়ে আছে।প্রথমেত ফার্স্ট হওয়া নিয়ে তারপর গার্লফ্রেন্ড। শালার কুত্তা স্টাইলের কপাল তা নাহলে আমার গার্লফ্রেন্ড ওকে দেখার দুই দিন পড়ে এসে নেকা নেকা করে ডুলতে ডুলতে এসে বলে কিনা…
শুন আমি না তোমার ওই বন্ধু আছেনা আযমান ওকে ভালোবেসে ফেলেছি।তাই তোমার সাথে ব্রেকাপ করতে চাই।..শালি এতটুকুতেই খামত হয়নি আবার বলে কিনা আমার হয়ে একটু ওকে বলে দিবে।মন চেয়েছে মেরে দি।কিন্তু শালি নিজে নিজেই সুইসাইড করে বসেছিল তাও আযমান বিবাহিত শুনে।আমি তো ভেবেছি এই শালা তো বাচ্চা কালেই বিয়ে করে ফেলেছে তাই এই বার আমার প্রথম দেখায় ভালোবাসা মনে হয় টিকে যাবে। কিন্তু হারামিটা এবার বড় ভাবে জিতে গেল।আর আমি বলদ তারই বউরে বিয়া করতে নাচতে নাচতে হাজির হলাম।শালা এই জীবনে আর যাই করি তোর সাথে দেখা করমু না।দরকার হলে আমি বনবাস যাবো।তাও তোর সামনে পরমু না।পরে দেখা যাবে আমার বউও বলবে.. ওগো আমি তোমার বন্ধু আযমানের প্রেমে পড়েছি ওকেই বিয়ে করব।তুমি একটু কষ্ট করে ডিভোর্স দিয়ে দিবা।তখন হবে আর এক জ্বালা।এই ভাই রিং নে…..
.
সবাই মুখ টিপে হাসছে কিন্তু আমার না বড্ড কষ্ট লাগছে বেঁচারা সাগর ভাইয়া।তার দুঃখগুলোও সাগরের পানির মত বেশি বেশি তাইতো শেষই হচ্ছে না।আহারে….আযমান ভাইয়া রিং এগিয়ে দিয়ে বলে উঠে….
.
পরিয়ে দেও। তা না হলে অবার কে এসে পড়ে বলা যায় না।
.
আমি উনাকে রিংটা পরিয়ে দিলাম।উনি এবার সবার উদ্দেশ্য ঘোষনা ভর্তা দিচ্ছে টাইপের করে বলে উঠে….
.
উপস্থিত সকলকে উদ্দেশ্য করে বলছি আমি আমার বউকে আবার বিয়ে করতে চাই কারো কি আপত্তি আছে??আর থাকলেও কিছু যায় আসে না।
.
সবাই একবেলা হেসেঁ উঠেছে আর লজ্জায় আমার মাথা কাটাঁ যায় টাইপের অবস্থা। উনি এবার নিজের বাবা মায়ের কাছে গিয়ে দাড়িয়ে বলে উঠে….
.
দেখ পরে বলবে ছেলে নিজের বিয়ে নিজে করে ফেলেছে। তাই বলছি আমি আয়ানা হায়াতকে বিয়ে করতে চাই তোমরা কি রাজি আছ???আর না থাকলেও সমস্যা নেই বুঝলা..
.
দুজনে হেঁসে উনার দুই কান ধরে বলে উঠে…
.
অবশ্যই রাজি…..

…..🍁

রাত প্রায় ১২টা ছুঁই ছুঁই ঘুম আসছেনা।ঘুমেরা মনে হচ্ছে লুকুচুরি খেলছে।আমি কম কিসের তাই উঠে পড়েছি।আমি পা টিপে টিপে ছাদের হাওয়া খেতে সিঁড়ির দিকে যাচ্ছি। ছাদের দরজাটা খোলা। হাওয়া আসছে হুহু করে।শীতল হাওয়া। আমি লাস্ট সিঁড়িতে আসতেই কানে এল সাগর ভাইয়ার গলা……
.
এবারো জিতে গেলি..
.
জিতার কিছু নেই। আয়ুকে নিয়ে আমি কখন কোন খেলায় নামি নি ও আমার ছিল আছে ইনশাআল্লাহ্ থাকবে।ওকে নিয়ে আর যাই হোক হার জিত টাইপের প্রশ্নই উঠেনা।
.
তুই খুব লাকি ইয়ার।মেয়েটা সত্যই অতুলনীয় ভালো।
.
হুম। জানি। তোর কি কষ্ট হচ্ছে??
.
হুমরে অনেক। আমি বুঝতেও পারিনি এতটাও কাউকে মন থেকে চাইতে পারি।কেউ এতটাও আপন মনে হতে পারে।আর সবচাইতে বড় কথা এত কম সময়ে আমি কাউকে এভাবে ভালোবেসে ফেলব ভাবতে পারিনি।কিন্তু আজ যখন ওর হাত তোর হাতে দেখেছি তখন সত্যই ভালোবাসায় হারালে যে এত কষ্ট হয় এটা বুঝতে পেরেছি।গোলাপে যে কাটাঁও হয় এটা এত দিনে আজ টের পেয়েছি।কেমন যেন দম বন্ধ দম বন্ধ লাগছে।মন চাচ্ছে ওকে তোর থেকে কেড়ে নিয়ে নি।ওকে নিজের করি।আর নিজের মনের জেলে চিরদিনের জন্যে বন্ধি করি।ভাই সত্যই আমি ওই একমুঠো মেয়ের প্রেমে না ভালোবাসায় পাগল হয়েছি।তোর সাথে হারা এটাই বেস্ট হার হল আমার।যা জীবনের সব ক্ষেএে মনে থাকবে।আচ্ছা তুই কি ওকে দিয়ে এবারের মত আমাকে জিতিয়ে দিবি প্লিজজজ।আমি সারা জীবন কৃতজ্ঞ থাকব।দিবি…
.
আমি এবার চোকাট পেরিয়ে ছাঁদে পা রাখলাম।ছাদ জুড়ে চাঁদের আলোর ছড়াছড়ি।কি সুন্দর পরিবেশে।আযমান ভাইয়াকে চাঁদে আলোয় বেশ মায়াবি লাগছে।সে সাগর ভাইয়ার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।আর সাগর ভাইয়া উৎসাহ ভড়া চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে।আযমান ভাইয়া এবার চাঁদের দিকে মুখ করে বলা শুরু করে…..
.
তুই ওকে ভালোবেসে ফেলেছস।আর আমাকে বলতে চাচ্ছিস আমি ওকে তোর করে দিতাম??আচ্ছা তুই ওকে কত দিন চিনিস এই তিন কি চারদিন তাইনা।এই তিন চারদিনে যদি তুই ওকে ভালোবেসে দম বন্ধ অবস্থা হয় তাহলে আমি যে কিনা ১৯টা বছর ওকে ভালোবেসেছি তার ওকে ছাড়া কি অবস্থা হবে বল ত??তুই যদি বলতে পারিস তবে আমার কলিজা তোকে দিয়ে দিব।যা বল।
.
সাগর ভাইয়া এবার চুপ করে আছে।
.
পারবি না বলতে।আরে ও নিজেইত বলতে পারবে না।ওকে ছাড়া তো আমি মারাই যাবো।ওতো অক্সিজেন ইয়ার।তুই ওর সাথে তিন-চারদিন কথা বলেই ওর ভালোবাসায় নিজেকে হারিয়েছিস আর আমি যে কিনা ওর এত কাছে থেকেও ওর জন্যেই নিজেকে দুরে রেখেছি আমার কি হবে বল??তুই তিন-চারদিনই ওকে ভালোবেসে বিয়ে করতে চলে এলি আর আমি বিয়ে করে ১৭ বছর পরেও ওকে হারানোর ভয়ে ঘুমাতে পাড়িনা।ওর হাজবেন্ড কম বডিগার্ড বেশি থেকেছি।এই হাতে ওকে খাইয়েছি,ও কত কত কামড় দিয়েছে যানিস?? আমি নিজে ওত তখন ছোট ছিলাম তবুও সেগুলো আমার কাছে ভালোই লাগতো।যে ছেলে একটা বল পছন্দ হলে তা কিনার জন্যে চিৎকার চেঁচামিচি করে বাড়ি ঘর মাথায় নিত। সে নিজের টাকা জমিয়ে ওই মেয়েটার জন্যে চকলেট আইসক্রিম কিনেছে। আর সেই মেয়েটাকেই তোকে দিয়ে দিতে বলছিস ।ওর দিকে কোন ছেলে খারাপ নজরে তাকালে তার অবস্থা কেমন হত যানিস তো।ও তুই এটা যানিস আমি ওই ছেলেটাকে মেড়েছি কিন্তু কেন তা যানিস না হ্যাঁ ওর জন্যেই মেরেছি।ওর জন্যেই তো আমি সব করতে পারি।আমার তো ও হলেই~চলবে আর তুইত ওকেই চাইছিস।তাই এটা ইম্পসিবল। সরি রে।
.
সাগর ভাইয়া কি বুঝে উনাকে যাপটে ধরে।তারপর আবার বলে উঠে….
.
তোর মত প্রেমিক ওওপসস সরি হাজবেন্ড হওয়া মশকিল।৬বছরের প্রেমি বলে কথা।ভালো থাকিস আর ওকেও ভালো রাখিস।কিন্তু যাই করিনা কেন আমার বউকে তোর সামনে আনমু না যদি বিয়ে সাদি করি আরকি।তবে মনে হয়না করতে পারব।(বলেই হেঁসে দিল)
.
দুজনেই হাসছে আমি একটু সাইডে চলে এসেছি সাগর ভাইয়ার চোখে পড়তে চাইনা।ওনি আরো কিছুক্ষণ কথা বলে চলে গেল।আমিও ধীর পায়ে যাওয়ার জন্যে পা বারাতেই টান পরল।কেউ একজন আমার হাত টেনে ধরেছে।এই কেউ যে উনি তা যানা হয়েগেছে। উনি হেচকা টান দিয়ে আমাকে দেওয়ালের সাথে চেপে আমার হাতগুলো নিজের দখলে নিয়ে আমার সামনে দাঁড়িয়ে পড়ে।আমি একটু চোখমুখ খিঁচে বলে উঠি….
.
সমস্যাটা কি এভাবে ধরে রেখেছন কেন???
.
ভালোবাসি তাই….
.
.
#চলবে……….🍁
ভুলগুলো আল্লাহর দেওয়া মহান গুন ক্ষমার চোখে দেখবেন……….🍁
#তুমি~হলেই~চলবে 🍁
#writer~হাফসা~আলম 🍂
১৮.
.
.
সবার বিয়ে কেন্সেল। মানে সবার আগে আমাদের বিয়েটাই হবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।আযমান ভাইয়ার ফারাফারিতে সবাই প্রায় বিরক্ত। তার একটাই কথা যত তাড়াতাড়ি অনুষ্ঠান সম্পূর্ণ করতে তা নাহলে সে এমনে আমাকে নিয়ে যাবে।সে নাকি রিক্স নিতে চায় না।আশ্চর্য এখানে রিক্সের কি আছে??আমি তো তারই বউ। যানি না তার এত রিক্স কোথা থেকে আসে।কথাগুলো ভাবছি আর সিঁড়ি দিয়ে নামছি।ওও আমাদের নানু বাড়ি থাকার সময় ফুঁড়িয়েছে।আমরা ঢাকা বেক করছি আজ।এই সবও উনার ক্রিয়া ধাড়া।উনি সবই তারাতাড়ি করতে চায়। নানাজান আর নানুজানও আমাদের সাথে যাচ্ছে। সবকিছু এত তারাতাড়ি হচ্ছে সব আমার মাথার উপড় দিয়ে যাচ্ছে। গাড়িতে আযমান ভাইয়ার পাশে বসেছি। যাওয়ার সময় আর লঞ্চে যাওয়া হল না।আমি গম্ভীর হয়ে বসে আছি দেখে উনি বলে উঠে……
—তোমার কি মন খারাপ??
.
আমি তার দিকে একবার তাকিয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে নিলাম। কত সখ ছিল আমি অনেক দিন থাকব।আর উনি সব কিছুতে পানি ফেলে বিয়ে করার জন্যে লাফালাফি করছে।বিরক্তকর।আমি মুখ ফুলিয়ে জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছি।উনি আর একটু ঘেঁষে বলে উঠে….
—কি হল আয়ুজান কথা বলছনা কেন??
—আমার ইচ্ছে করছে না।(জানালার দিকে তাকিয়ে)
—এটা কেমন কথা ইচ্ছে করছেনা??এদিকে তাকাও।আচ্ছা তুমি আরো থাকতে চেয়েছ?? যাও আমরা আবার আসব।চিল বেবী.. চিল…
–এত চিল আসছে না আমার।বিয়েটা কি আপনাকেই করতে হবে??(উনার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে বলে উঠলাম)
.
উনি অবাক চোখে আমাকে দেখছে।আমার সেদিকে তেমন পাত্তা নেই এই আজগোবি লোকটাকে বিয়ে করে এর সাথে থাকতে হবে ভাবা যায়??উনি এবার গম্ভীর হয়ে বলে উঠে…..
—তাহলে তুমি কি করতে চাও??আমাকে বিয়ে করবে না??
—না (সোজা হয়ে বলে উঠলাম)
.
মুহূর্তেই উনি চোয়াল শক্ত করে বলে উঠে….
—তাহলে কি আমি মালিহাকে বিয়ে করে নিব??
.
শালা কয় কি??রাগতো আগে থেকে আছে তার মধ্যে এই লোকের আজাইরা কথা।আমি রেগে উনার কলার ধরে বলে উঠে…..
—করামু তোরে বিয়া।জীবনের তরে।এমন বিয়া করামু তখন বুজবি বিয়া কি??
.
উনি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে হয় ত এমন কথা আমার কাছ থেকে আসা করে নি।তাতে কি আমিও কি আসা করেছি নাকি উনি এমন কথা বলবে??আজব!!!আমি একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে উনার কলার ছাড়তে যাবো উনি হাত টেনে কোমড় জড়িয়ে ফিসফিসে বলে উঠে….
—বিয়েত করবই তাও তোমাকেই আয়ুজান।এবার আমিও দেখি তুমি কেমন বিয়ে করাও আমায়।যেহেতু বলেছ আমায় বিয়ে করাবে।
.
ঢাকায় বেক করেছি একদিন হয়েগেছে। এই একদিনে উনাকে আর দেখলাম।সেও আসলনা।আজ আমরা তাদের বাসায় যাবো। বাবা মা এসে ইনভাইট করে গেছে।তাই আমরা সবাই মিলে তাদের বাসায় যাওয়ার জন্যে তৈরি হচ্ছি।আম্মু চায় আমি শাড়ি পরি। যদিও ইচ্ছে নেই। শাড়ি সামলানো একটা মহান ব্যাপার।এটা যদি ছেলেদের সামলাতে দেওয়া হত তবে তাদেরত মনে হয় জীবনটাই শেষ হয়ে যেত।আমি শাড়ি পড়ব না বলে ঠিক করেছি কিন্তু আম্মু মানল না।তাই একটা নীল জামদানি গায়ে জড়িয়েছি। আম্মু মুখে গাম্ভীর্য রেখে বলে উঠে….
—খারাপ না।মাসআল্লাহ্ সুন্দর লাগছে।
—সুন্দর লাগছে নাকি ছাই লাগছে আমার থেকে জিগ্যেস কর বুঝলি তা না হলে তো তো বাচ্চা জামাই তোরে পেত্নী ভেবেই দৌড়ে পালাবে।
.
ভাইয়া পিছন থেকে বলে উঠেছে।রাগী চোখে তাকিয়ে বলে উঠি….
—পেত্নী হবে তোমার বউ।আর আম্মু তোমার ছেলেত কম বড় হয়নি আমার তো মনে হয় ও বুড়া হয়েগেছে।কয়দিন পরে দেখবে ওর জন্যে বিয়ে বাজারে পাত্রীই নেই। যদিও আমাদের দেশে বিসিএস ক্যাডারদের সাথে সাদা চামড়ার বিয়ে হয় তবুও তুমি বউ পাবে না ভাইয়া দেখে নিয়।
.
—আমার বউ নিয়ে চিন্তা ছাড় আর নিজের জামায় নিয়া ভাব।বুঝলি…
.
বাড়িতে ডুকেই এদিক ওদিক তাকালাম কিন্তু আশ্চর্য উনাকে খুঁজেই পেলাম না।তেমন কোন মেহমান নেই। আমরা আর উনাদের কিছু আত্নিয়। বাবা মারা আম্মু আব্বুর সাথে স্পেশাল কথা বলবে তাই আমাকে তাদের সঙ্গ ত্যাগ করতে হল।আমি চারপাশে শুধু উনাকেই খুঁজে বেড়ালাম।লাস্টে আর খুঁজে না পেয়ে ছাঁদে যাওয়ার জন্যে হাটাঁ দিলাম।তখনই কাজের মেয়ে রূপালীর সাথে দেখা। একে নাকি নতুন রাখা হয়েছে।আমাকে দেখেই একবিকট চিৎকার দিয়ে বলে উঠে……..
—-ওও মা ভাবি গো আপনি তো ছবির চাইতেও বহুত সুন্দর।
.
আমি অবাক হয়ে বললাম….
—তুমি আমাকে চিন??
—আরে কি যে কন আপনারে না চিনার কি আছে?? ভাইজানের রুমে গেলেই আপনারে চিনা যায়।উনারে যখন বলছিলাম আপনি সুন্দর উনি কিডা কইছে যানেন??
—না বললে জানবো কিভাবে??
—আপনি নাকি বাস্তবে আরো বেশি সুন্দর.. (বলে হাঁসি দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে চলেগেল।আমি কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে সিঁড়ি বেয়ে উঠা ধরলাম।আজ অনেক বছর পড়ে তাদের বাসায় আসা।কিন্তু আমার জীবনে আমি কখন উনার রুমে ডুকতে পারিনি।কি আছে ওই রুমে কে যানে?মনে তো হয় খাজানা আছে।তা না হলে আমাকে কেন ডুকতে দেয় না??
.
🍁
উনার রুমের সামনে এসেই বুঝতে পাড়লাম দরজা আটকানো হয়নি।ভিড়িয়ে রেখেছে। আমারত মনে হয় উনি রুমেই নাই।তার এই রুমে ডুকার প্রবল আগ্রহ আছে আমার তাই পা টিপে টিপে ভিতরে ডুকতেই ঘুটঘুটে অন্ধকারের সাথে আলাপ।চারিদিক এত অন্ধকার যে কিছুই দেখা যাচ্ছে না।আমি চারপাশে লাইটের সুইচ খুঁজে চলেছি।তাদের বাসা আমার কাছে পূর্ব পরিচিত হলেও তার রুমটা নতুন।অনেক খুঁজে লাইটের সুইচ পাওয়া গেল।লাইট জ্বালাতেই আমি অবাক হয়ে রুম দেখছি।সব কি সুন্দর গোছানো।কাঁচের গ্লাসে তৈরি সব।আলমারির কাঁচের ভিতর দিয়ে উনার জামা কাপড় দেখা যাচ্ছে। সাথে মেয়েদের জামা কাপড়ও।আজব উনিকি মেয়েদের ড্রেসস পড়ে নাকি??আমি এবার সামনে তাকিয়ে আরো অবাক হলাম।বিছানার পিছনে এক বিশাল ছবি।একটা ছোট ছেলে লাল পাঞ্জাবি পড়ে লাল টুপি পড়ে বসে আছে আর তার কোলে লাল জামা পড়া একটা বাচ্চা মেয়ে।কি কিউট ছবি..আমি কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে বুঝতে পাড়লাম এটা আমার আর উনার ছবি।এমন আরো অনেক ছবি আছে।কোনটাতে আমি ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদছি আর উনি কান্না থামানোর চেস্টায় আছে।এই সব ছবিকে ছাড়িয়ে সুন্দর যের চূড়ায় আছে হসপিটালে একটা ছবি।উনি একটা তোয়ালে পেছানো বাচ্চাকে কোলে নিয়ে তার কপালে চুমু খাচ্ছে। ছবিটা দেখেই আমার চোখ দিয়ে অনায়াসে কিছু পানি গড়িয়ে পরছে।কি সুন্দর করে নিজের সাথে জড়িয়ে রেখেছে।ইশশ্ আমি তো ফিদা…আর সেদিনের শাড়ি পড়া ছবিও আছে।এত এত ছবি কখন তুলেন বুঝতেই পারছিনা??বেড টেবিলে আমার একটা ঘুমন্ত ছবি আছে উনাকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছি।এটাত সেই দিনের যে দিন বৃষ্টিতে ভিজেঁ আইসক্রিম খেয়েছি।এই ছবি কখন তুলেছে??সারা রুমে সাদার ছড়াছড়ি। বিছানা থেকে শুরু করে বুকশেলফও সাদা।রুমের একসাইডে কিছু বিল্ডিং এর ডিজাইনের ছবি আঁকা আছে।আমি ঘুড়ে ঘুড়ে সব দেখছি।হুট করে ওয়াসরুমের দরজা খোলার সাউন্ডে আমি সে দিকে তাকিয়েই এক চিৎকার……. উনি শুধু একটা টাউজার পড়ে দাড়িয়ে আছে।তার শরীর বেয়ে এখনো পানি ঝড়ছে।মনে হয় শাওয়ার নিয়েছে।খোলা বুকে বিন্ধু বিন্ধু পানির ছিটাছিটি। চুলগুলো দিয়েও পানি টপটপ করে পড়ছে।সামনের চুলগুলো লেপ্টে আছে কপালে।গলায় সাদা তোয়ালে ঝুলানো।আমার কানে হাত দিয়ে চিৎকার দেওয়া দেখে উনি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে।আমি এবার সামনে থেকে পিছন ফিড়ে দৌড় লাগামু বলে পিপারেশন নিচ্ছি। যেই না দৌড়টা লাগাবো উনি খপ করে হাত ধরে তার সামনে ঘুড়িয়ে বলে উঠে…..
—যাচ্ছটা কোথায়??প্রথম বার আমার রুমে এসেছ একটু তো খাতিল দাড়ি করাই লাগে।তাই না বউ??
.
উনার এমন সাধারন কথাও আমার কাছে কেমন যেন লাগছে।লজ্জায় আমি চোখবুজে দাঁড়িয়ে আছি।প্রথম কোন পুুরুষকে এভাবে খালি গায়ে দেখে তো আমার হৃদস্পন্দনই বন্ধ হয়ে গেছে।বুকের ভিতর হার্টবিড ধাকাধাক সাউন্ড করছে।আমি জোড়ে একটা নিঃশ্বাস নিয়ে চোখ বুজেই বলে উঠি….
—আমি বরং যাই আপনি ড্রেস পরে আসেন…
—তুমি বলতে চাও আমি এখন ড্রেস ছাড়া দাঁড়িয়ে আছি??এটা কিভাবে বলতে পারলে বলত??চোখ খুলে দেখ আমি কিন্তু টাউজার পরা অবস্থায় আছি বুঝলে??এমন ভাবে বলছ যেন কিছুই পড়ি নি?বাই দ্যা ওয়ে তোমাকে নীল শাড়িতে নীল পরী লাগছে।
.
কথাটা শুনেই আমি হকচোটিয়ে গেলাম।চোখ খুলে হাত ছাড়িয়ে পালানোর জায়গা খুঁজতে লাগলাম।এখন মনে হচ্ছে পালাতে পারলেই বাঁচি।কোন দুঃখের যে উনার রুম পর্যবেক্ষণে এসেছি আল্লাহ মালুম.. উনি এবার আমার আর একটু কাছে এসে কোমড় জড়িয়ে নিজের দৃশ্যমান বুকের সাথে লেপ্টে দিয়েছে।আমি নিজের দু হাত তার বুকে রাখতেই কেমন যানি শিহরণ দিয়ে যাচ্ছে গায়ে।দম বন্ধ হয়ে আসছে।শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। আমি এবার একটু চেঁচিয়ে বলে উঠি…..
—এই এই দূরে যান আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছিনা।দম আটকে আসছে। আমারত মনে হয় আমি দম আটকেই মারা যাবো। প্লিজজজ এত তাড়াতাড়ি মরতে চাইনা।এখনো বিয়েও হয় নি বাচ্চাও হয় নাই ওদের বিয়ে দেখাও হল না আর নাতিনাতনি ওদের কি হবে বলেন কে গল্প শুনাবে।ছাড়েন প্লিজজজ…
.
আমি এবার চোখ খুলে দেখি উনার মুখ হালকা হা করে রেখেছে। আমি বুঝতে পেরেছি উনি অবাক হয়েছে। আর এই সুযোগের আমি সৎ ব্যবহার করে এক ঝাটকায় উনার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে দিলাম এক দৌড়।আর একটুর জন্যে জীবন যায় যায় অবস্থা।রুম থেকে বাহিরে আসতেই রূপালির সাথে বেসামাল ভাবে ধাক্কা খেলাম..ওকে সরি বলতেই সে চেঁচিয়ে বলে উঠে…..
—ভাবি জান আপনার কিতা হয়ছে??ভাইজান কি গলা টিপ্পা ধরছে নাকি??
.
ওর এমন আজগোবি কথায় আমি ভ্রুকুঁচকে তাকাতেই সে জিহ্বায় কামড় দিয়ে বলে উঠে….
—সারি ভাবিজান..আমার মনে হইল আর কি আপনে হাপাইতে ছেন ত তাই। আইচ্ছা আপনার কি হাপানির রোগ আছে??
—প্রথমত ওটা সারি না সরি আর কেউ আমাকে গলাও টিপে ধরে নি আর আমার হাপাঁনিও নেই।
.
বলে হাঁটা দিলাম। কি অদ্ভুত সব কথা।
.
খাওয়াদাওয়া শেষে আমি আবার উনার রুমের সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম ঠিক তখনই কেউ হঠাৎ কোলে তুলে নিল আমি তো ভয়ে চিৎকার করতে যাবো।তখনই কেউ কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে উঠে….
—একদম নেকা মেয়েদের মত চিৎকার করবে না।আমাকে এভাবে ধোকা দিয়ে রুম থেকে আসার শাস্তি কিন্তু নিচে ধাড়াম করে ফেলে দিয়ে দেখিয়ে দিব।চুপচাপ থাক..
.
উনি সিঁড়ি বেয়ে ছাঁদে উঠছে।সম্পূর্ণ ছাঁদ চাঁদের আলোয় আলোকিত হয়ে আছে।উনি আমাকে নিয়ে সোজা সুইমিংপুলের পাশে বসিয়ে দিয়ে নিজে আমার কোলে মাথা দিয়ে কোমড় জড়িয়ে শুয়ে পড়েছে।তার এমন ছোঁয়ায় সারা শরীরে কাঁপনি দিচ্ছে। আমি চাদঁ দেখছি আর পানিতে পা ভিজেঁ বসে আছি।শাড়িটা হাটু পর্যন্ত ভিজেঁ গেছে।মৃদু বাতাস হচ্ছে। শরীরে দোল খেলনো টাইপের আর উনি মনের সুখে ঘুম দিচ্ছে। এত কম সময়েও কারো এত গভীর ঘুম হতে পারে এটা আমার জানা ছিলনা।উনাকে না দেখলেত বিশ্বাসই করতাম না….
.

.
#চলবে………..🍁
.
ভুলগুলো আল্লাহর দেওয়া মহান গুন ক্ষমার চোখে দেখবেন।…..কালকে প্রচণ্ড মাথা ব্যাথা ছিল তাই দিতে পারিনি তার জন্যে সরি…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here