#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো
#পর্বঃ৩৬
#Jhorna_Islam
এইই চুপ করে আছেন কেনো? আমার বাড়িতে সবাই ঠিক আছে তো?
দায়ান কি করে সোহাকে বলবে বুঝে পায়না।এখন কিছুতেই বলা যাবে না।বললে মেয়েটা পাগলামো করা শুরু করবে।ঐখানে গিয়ে তারপর না হয় কিছু একটা বলা যাবে।এখন বললে৷ সামলানো মুশকিল হয়ে যাবে।
দায়ান তাই সোহার মুখটা দুই হাতের মধ্যে নিয়ে বলে,,,বাড়িতে সবাই ঠিক আছে। কারো কিছু হয়নি। এতো হাই’পার হতে হবে না ওকে?
আজ অফিসে কোনো কাজ নাই।তাই আমি আর রুশ ভাবলাম একটু ঘুরে আসি। মাইন্ড টা ফ্রেশ হবে। ভাবলাম তোমাকেও নিয়ে যাই। যাও রে’ডি হও।
সোহা যেনো এইবার একটু শান্ত হলো।ঠিক আছে।আমি দশ মিনিটে রেডি হয়ে আসছি।
ওকে।
দায়ান সোহার দিকে তাকিয়ে বলে,, “স’রি জান।”
আজ সকালে যখন দায়ান অফিসে কাজে ব্যস্ত তখনই দায়ানের ফোনটা বেজে উঠে।দায়ান ভেবে ছিলো সোহার কল।পরে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে সোহার বাবার।ঐদিনের পর আর কল করা হয়নি। ভুলেই গিয়েছিল। ধ্যাত কল করা দরকার ছিলো।ভাবতে ভাবতেই কল টা রিসিভ করে।
সোহার বাবা পরে সবকিছু খুলে বলে নোহার ব্যাপারে।কাল ভোর রাতে জেলা হাসপাতালে ভর্তি করেছেন উনারা নোহাকে।পরিস্থিতি ভালো না।যে কোন সময় যে কিছু হয়ে যেতে পারে।সোহা কে নিয়ে যেনো দায়ান যায়।এসব ভাবনার মাঝেই সোহা জামা পাল্টে বেরিয়ে আসে। আয়নার সামনে গিয়ে একটু সাজতে নিবে তখনই দায়ান সোহাকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে এসে আটকে দেয়।
— কি হলো ছাড়েন। রেডি হবো না? লেট হয়ে যাবেতো না হলে।
—- রেডি হয়েছো।এতোটুকুতেই চলবে।এখন আর হতে হবে না।
— আরে কি বলেন এগুলো? এভাবে কেউ যায়।একটুতো সাজতে দিন।
— উহুু তুমি সাজলে আমি নিজেকে কনট্রোল করতে পারি না।তোমার ভাই কিন্তু সাথে যাবে।তুমি কি চাও তোমার ভাইয়ের সামনে রোমান্স শুরু করি? আমার কিন্তু কোনো সমস্যা নেই।
— “অ’স’ভ্য”
— চলো বলেই সোহার হাত ধরে হাঁটা দেয়।
— আরে জামা তো নিতে দেন।
কিছু লাগবে না চলো।বলেই বেরিয়ে পরে।
গাড়িতে পিছনে সোহা আর দায়ান বসে আছে।সামনের সিটে ড্রাইভারের পাশে বসেছে রুশ।তিন ঘন্টার মতো সময় লাগবে পৌঁছাতে।
সোহা রুশের সাথে নানান কথা বলে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
দায়ান খুব টেনশনে আছে।না জানি ঐদিকের পরিস্থিতি কি রকম।মনে মনে আশংকায় আছে।
দীর্ঘ তিন ঘন্টা জার্নি করার পর ওরা গ্রামের কাছাকাছি চলে আসে। আর বেশি রাস্তা বাকি নেই।
সোহাদের গ্রামে আর জেলা হাসপাতালে যাওয়ার পাশাপাশি দুইটা রাস্তা। ওদের গ্রামের রাস্তায় গাড়ি টা না ঢুকিয়েে ঐ রাস্তায় ঢুকায়।সোহা তা দেখে চিল্লিয়ে বলে,,,আরে আরে কি করছেন? ভুল রাস্তায় চলে যাচ্ছে তো।ঐ রাস্তা দিয়ে গ্রামে ঢুকে।
দায়ান সোহার হাত গুলো মুঠোর ভিতর নিয়ে বলে,,,গেলেই দেখতে পাবে।এখন চুপচাপ আমার কাঁধে মাথা রেখে রেস্ট নাও দেখি।
সোহার ভিতর ভয় ঢুকে যায়। কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠে,, আ-আপনারা হাসপাতালে যাচ্ছেন তাই না? কার কি হয়েছে বলেন আমায়।চিললিয়ে বলে কেনো বলছেন না কার কি হয়েছে। দায়ানের শার্ট ধরে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বলে,,কি হলো বলুন। বলেই কাঁদতে থাকে। দায়ান কতো কিছু বলে সোহাকে বোঝাতে চায়,,কিন্তু সে শুনতে নারাজ।
রুশ ও বোঝাতে চায় কিন্তু সোহা কারো কথা শুনছে না।এক পর্যায়ে সোহা উত্তেজিত হওয়ায় সোহার শ্বাস কষ্ট শুরু হয়ে যায়। জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে। আর কাদতেছে।
দায়ান সোহাকে আগলে ধরে,,,,, মনে মনে বলে,যে ভ’য় টা পাচ্ছিলাম তাই হলো।
এতো উত্তেজিত কেনো হচ্ছো জা’ন? গেলেই তো দেখতে পাবা।
আমায় এখনইইই বলে,,,, কথা জড়িয়ে যাচ্ছে। আর বলতে পারে না।শ্বাস বে’গতিক হারে বেড়ে চলেছে। হাত পা কেমন নিস্তেজ হয়ে আসছে।
দায়ান তারাতাড়ি ইনহেলার টা বের করে।সোহার মুখের কাছে নিয়ে ধরে।সোহা হাত দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয়।সে নিবে না।য-যতক্ষন নননা বলছেন কার কি হয়েছে আমি নিবো না।
এরকম পাগলামি করে না। তারাতাড়ি নাও।কষ্ট হচ্ছে তো।
হোক। মরে গেলেও নিবো না।আপনারা না বলা পর্যন্ত।
সোহার কথা শুনে দায়ান সোহাকে ছেড়ে দেয়।সোহার থেকে দূরে সরে আসে।
রুশ তখন বলে বোন তুই নে। তারপর আমি তোকে বলছি সব।
সত্যি তো?
হুম।
দায়ান দূরে সরার সময় ইনহেলার টা সিটের উপর৷ রেখে দিয়েছিলো।সোহা কাঁপা কাঁপা হাতে সেটা নিয়ে।শ্বাস নেয়।শ্বাস স্বাভাবিক হয়ে আসলেও শরীরটা দূর্বল হয়ে গেছে। আস্তে করে দায়ানের কাছে যায়।দায়ানের কাঁধে মাথা রাখে।দায়ান ঝটকা মেরে নিজের কাছ থেকে সোহাকে সরিয়ে দেয়।
রা’গে দাত পিষে বলে,,,এই একদম আমার কাছে আসার চেষ্টা করবিনা।দূরে থাক। আমার সাথে কথাও বলবি না।একদম কাছে আসবি না আমার।
রুশ বলে উঠে,, কি হচ্ছে টা কি দায়ান মেয়েটা দূর্বল হয়ে পরেছে।
দায়ান বলে,,দূর্বল মাই ফুট।কি করে বলল আমি এতো বলার পরও মরে গেলেও নিবে না।না জানা পর্যন্ত।
সোহা কাদু কাদু মুখ করে বলে ভুল হয়ে গেছে আর বলবো না।স’রি।
দায়ান কিছু বলবে,,,তখনই গাড়ি এসে জেলা হাসপাতালের সামনে এসে থামে।সোহা কিছু বলতে নিবে।তার আগেই সবাই গাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। দায়ান সোহার দিকে তাকিয়ে কিছু না বলে,সোহাকে রেখেই ভিতরে চলে যায়। সোহা বুঝতে পারছে রে’গে আছে লোকটা অনেক।
রুশ সোহাকে নিয়ে ভিতরে ঢুকে।
————————————————–
দায়ান এসেই দেখে সোহার বাবা আর মা ক্যাবিনের সামনে বসে আছে। সোহার বাবা নিচের দিকে মাথা দিয়ে চুপ করে আছে।সোহার মা আঁচলে মুখ ঢেকে কাঁদছে।
দায়ান সোহার বাবার পাশে গিয়ে বসে,,, কাঁধে হাত রাখে।উনি মুখ তুলে তাকায়।দায়ান কে দেখতে পেয়ে ধরা গলায়,,বলে ছো-ছোট আব্বা আমার বড় আম্মা টা আর কিছু বলতেই পারে না।এদিক ওদিক তাকিয়ে চোখের পানি লুকানোর চেষ্টা করে।
দায়ান সোহার বাবার কাধে হাত রেখে বলে,, চিন্তা করবেন না আমি দেখছি।কিছু হবে না।
সোহার বাবা যেনো ভরসা পায়।এবার নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে,, ওরা আমার মেয়েটাকে ক্যাবিনে নিয়ে একটা স্যালাইন দিয়ে শুইয়ে রাখছে শুধু শুধু অপারেশন করা লাগবে।কিছুই করছে না বাবা।এতোক্ষন রেখে দিলেতো আমার মেয়েটা বাঁচবেনা।
দায়ান শুনে বলে আমি এখনই দেখছি,,বলেই ডাক্তারের ক্যাবিনে যায়। ডাক্তার কে বলে,,,যত টাকা লাগুক অপারেশন শুরু করতে।নোহার যেনো কিছু না হয়।কিছু হলে একজনকে ও ছাড়বেনা।ডাক্তার বুঝতে পারলো দায়ান খুবই পাওয়ারফুল লোক,, আর এনারা সব কিছুই করতে পারে যদি ক্যারিয়ারটাই শেষ করে দেয়। তাই তারাতাড়ি সব ঠিক করতে লাগলো।
দায়ান মনেমনে তাচ্ছিল্যর হাসি দেয়। পৃথিবীটা টাকার গো/লাম।মানুষ ঠিকই বলে টাকা দিয়ে বাঘের চোখ ও কেনা যায়।অসুস্থ মেয়েটাকে সকাল থেকে ফেলে রাখছে।এখন কি সুন্দর টাকার কথা শুনে সব করছে।
ডাক্তারের ক্যাবিন থেকে দায়ান বেরিয়ে দেখে সোহা তার বাবার বুকে মাথা রেখে কাদছে।উনি যত্ন সহকারে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। রুশ পাশেই দেয়ালে হে’লান দিয়ে দাড়িয়ে আছে।
দায়ান সোহার বাবার পাশে গিয়ে বলে,,,আংকেল টেনশন নিবেন না অপারেশন শুরু হচ্ছে কিছু সময়ের মধ্যেই।
আধা ঘণ্টার মধ্যেই অপারেশন শুরু করা হয়।সোহা এখনও বাবার বুকে মুখ লুকিয়ে ফুপিয়ে যাচেছ।আর বিরবির করছে,,আমার আপুর কিছু হলে আমি কাউকে ছাড়বো না কাউকে না।সব কটাকে আমি নিজের হাতে খু/ ন করবো।
রুশ আর দায়ান এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে। ঠিক কিছু সময় পরই একটা নার্স বেরিয়ে আসে। পেশেন্টের জন্য বি পজেটিভ র/ক্তের ব্যবস্থা করুন তিন ব্যাগ র/ক্ত লাগবে।অনেক র/ক্ত গেছে।ইমার্জেন্সি লাগবে এখন এক ব্যাগ।আর হ্যা বাচ্চাটা মি’স’ক্যা/রে’জ হয়ে গেছে। একটা মানুষ কি করে এরকম পা/ষ ন্ডর মতো মারতে পারে বুঝিনা।
সোহা কথাটা শুনে চোখটা বন্ধ করে ফেলে।ঐদিনের কথাগুলো কানে ভাসছে।কতোটা খুশি ছিলো আপু বেবিটা নিয়ে।আর আজ,,,,,।অনেক কষ্টে নিজেকে সামলায় সোহা।
তারপর বলে উঠে আমার আর আপুর গ্রুপ এক।আমার থেকে নিন।দায়ান সোহার দিকে তাকায়।
সোহার বাবা বলে উঠে না ছোটো আম্মা আপনি অসুস্থ। আপনাকে দিতে হবে না।আমি দিবো বলেই উঠে দাঁড়ায়। নার্স সোহার বাবাকে নিয়ে চলে যায়।
দায়ান রুশকে সোহা আর ওর মার পাশে থাকার জন্য বলে,,,র/ক্ত যোগার করতে বেরিয়ে যায়। রুশ ও দায়ানের সাথে যেতে চেয়েছিল। দায়ান নেয়নি এখানে দুজন একা।ওদের পাশে কারো থাকা দরকার।আর রুশকে ও পাঠাতে পারছেনা কারণ রুশ এই দিকের কিছুই চিনে না।তাই রুশ কে ওদের পাশে রেখে দায়ানই যায়। শুন তোর বোনের দিকে ন’জর রাখিস। যাওয়ার আগে সোহার দিকে তাকায় মেয়েটা বসে বসে একটা কথাই বলছে,,আমি ওদের কাউকে ছাড়বোনা।
———————————————
আধাঘন্টার মাঝেই দায়ান র/ক্ত নিয়ে ফিরে আসে। এতো ঝামেলা পোহাতে হয়নি।তারাতাড়িই পেয়ে গেছে।
এসে দেখে রুশ পায়চারি করছে।সোহার মা একই ভাবে আঁচলে মুখ ঢেকে কাঁদছে। সোহাকে কোথাও না দেখতে পেয়ে ব্রু কোচকায়।নার্স কে ডেকে র/ক্ত বুঝিয়ে দিয়ে আসে।রুশ কে জিজ্ঞেস করে সোহা কই।
— ওয়াশরুমে গেছে।
— কতোক্ষন আগে?
— তুই যাওয়ার কিছুসময় পরই।
— এতোসময় ধরে ও এখানে নাই আর তুই এখানে দাঁড়িয়ে আছিস?
—ওয়াশ রুমে গেছে ভাই।এতো টেনশন নেওয়ার কিছু নেই।
ওহ তাই নাকি যা গিয়ে দেখে আয়তো ওয়াশরুমে আছে কি না।
কিন্ত,,,?
যা আমি বলছি যা।
রুশ দায়ানের দিকে তাকিয়ে চেক করতে যায়।
কিছু সময়ের মাঝেই ফিরে এসে দায়ানের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ায় যে পায় নি।
দায়ান বলে পাবি ও না।তোর বোন হাসপাতালে থাকলে তো পাবি। আমি যা ভেবে ভ’য় পাচ্ছিলাম তাই করেছে তোর বোন।এজন্যই তোকে বলে ছিলাম ন’জর রাখতে।
সোহার মা মুখ খুলে এবার।বাবা আমার ছোটো মেয়েটা।
দায়ান নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে আন্টি আপনি চিন্তা করবেন না।আমি দেখছি।আংকেলের খেয়াল রাইখেন।সোহার মা মাথা নাড়ায়।
দায়ান রুশকে নিয়ে বেরিয়ে যায়।
রুশ শোন তুই পুলিশ স্টেশনে চলে যা।আমি একটা ঠিকানা মেসেজ করছি তোকে ঐখানে নিয়ে আয়।
আর আমি গেলাম,,তর দ’/জ্জা’ল বোন মনে হয় এতোক্ষনে অ্যা’কশন শুরু করে দিয়েছে।বলেই দায়ান চলে যায়।
রুশ মনে মনে বলে শা/লা সব সময় আমাকেই পুলিশের চ’ক্করে ফালায়।
——————————————
যে বাড়িতে সারাদিন একটার পর একটা ঝা’মেলা চিল্লা চিল্লি লেগেই থাকে।সে বাসাটা আজ কেমন পিন-প’তন নিরবতা। সব যেমন থেমে আছে।
নোহাকে যখন ওর বাবা মা নিয়ে যেতে এসেছিলো,,তখন ওমি ও সাথে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু ওনারা নেয় নি।বলে দিয়েছে বলাতো যায় না,,আবার না যতটুকু প্রান আছে ততটুকু ও শেষ করে দেয়।৷ ওমির নানি ও দেয় নি।
তমা আর ওমির মা শুধুই সবটা চেয়ে চেয়ে দেখেছে।কিছুই বলেনি।
নোহাকে নিয়ে যাওয়ার পর সেই যে ওমি ঘরে ঢুকেছে আর বের হয়নি।
ওমির বাবা বাড়িতে নেই।এসবের কিছুই জানে না।আরো দুই দিন উনি বাড়িতে আসবে না।
ওমির নানি নোহাকে নিয়ে যাওয়ার পর সেই যে জায়নামাজ এ বসেছে আর উঠেনি।এক মনে মেয়েটার জন্য প্রার্থনা করে চলেছে। যেনো বেঁচে যায়।
ওমির মা আর তমা দুইজন বসে আছে সোফায় এক সাথেই।
— ফুপি কি হবে বলো তো? আমার কিন্তু ভ’য় করছে।
—- আমারও করছে।
— যদি মেয়েটার কিছু হয়ে যায়? তখন তো ওমি ভাইকে ওরা পুলিশে দিবে।মরে গেলে তো ফাঁ/সি তে ঝুলাবে।
— চুপ কর।বাজে কথা একদম বলবিনা।দোয়া কর যেনো বেঁচে যায়।
— কে বলেছিলো ফুপি তোমাকে এখনই এসব করতে।পরে না হয় অন্য কোনো পরিকল্পনা করতে।
—- এখন তুই আমাকে দোষ দিচ্ছিস? কার জন্য এসব করেছি আমি? আমার জন্য?
— রাগ করোনা ফুপি।আমি ঐভাবে বলতে চাইনি।
— আমাদেরও তো কোনো দোষ নেই। আমরা এমনটা চেয়েছি নাকি? আমরা শুধু ওরে বাড়ি থেকে তাড়াতে চেয়েছি। আমার ছেলের ও কোনো দোষ নেই।ইচ্ছে করে দিয়েছে নাকি? ঐ মেয়ের ভাগ্যতে যা ছিলো তাই হয়েছে।
তার মধ্যেই কলিং বেল বেজে উঠে। ফুপু ভাইজি দুইজনই কেঁপে ওঠে।
তমা বুকে থুতু দিয়ে বলে,,,ফুপু কে এলো।পু-পুলিশ নয়তো।
চুপ থাক তমা এসব কথা বলবিনা।হয়তো অন্য কেউ এসেছে। যা দরজা খুলে দেখ।
আমার ভয় করছে ফুপি।তুমি যাও।
ওমির মা বলে চুপচাপ গিয়ে দরজা খুল।আর মুখ স্বাভাবিক করে যা।তর জন্য না সঠিক টা সামনে এসে পরে যা।
তমা নিজেকে স্বাভাবিক করে কাঁপা কাঁপা হাতে দরজা খুলে।দরজার সামনে দাড়িয়ে থাকা লোকটার দিকে তাকিয়ে শুকনো ঢুক গিলে। ভিতরে কাঁপন সৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে।
#চলবে,,,,,,,#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো
#পর্বঃ৩৭
#Jhorna_Islam
দরজার অপর পাশের দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটাকে দেখে তমা ভিতরে ভিতরে খুব ভয় পাচ্ছে। দরজার অপর পাশে আর কেউ নয় সোহা দাড়িয়ে আছে। সোহাকে তমা চিনে।বিয়ের সময় দেখেছিলো।তাছাড়া মুখের আদলেও কিছুটা মিল রয়েছে।
ভিতর ভিতর ভ’য় পেলেও মুখে প্রকাশ করলো না। নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে বলে উঠে,,, কি ব্যাপার তুমি এখানে? কিছু বলবে?
সোহা তমার কথায় পাত্তা দিলো না। তমাকে এক প্রকার ধাক্কা দিয়ে ভিতরে ঢুকে গেল।তমা তাল সামলাতে দরজা আঁককে ধরে।কি সাং’ঘা’তিক মেয়ে সে তো ভালো কথাই জিজ্ঞেস করেছিলো আর এই মেয়ে তাকে ধাক্কা মারলো?
সোহা সোজা গিয়ে ড্রয়িং রুমের সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে।সামনে থাকা ওমির মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। মহিলা এখনো টের পায়নি সোহার উপস্থিতি। এক মনে চা খাচ্ছে। আর কি যেনো ভাবছে।
সোহা গলা খেকাড়ি দিলো।ওমির মা সামনে তাকিয়ে চক্ষু চড়কগাছ। কিছুটা ঘা’বড়ে যায়। শুকনো ঢুক গিলে কিছু বলতে নিবে,,, তার আগেই সোহা মুচকি হেসে বলে কি ব্যাপার আন্টি ভালো আছেন? অবশ্য ভালো থাকারই কথা।এই বয়সেও শরীরে এতো জোর।ভাবা যায়? আপনার বয়সের কতো মানুষ পৃথিবী ত্যাগ করেছে। কি খান বলুনতো? দিন দিন শুধু হাতির মতো ফুলতেছেন আর শক্তি বেড়ে চলেছে। অবশ্য আজাইরা খেলে শরীরের তো কোনো দোষ নাই মুটিয়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক।
কি বলছো তুমি মেয়ে তোমার সাহস দেখেতো আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি। বড়দের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় তুমি জানো না?
গলা নামিয়ে কথা বলুন একদম গলা উঠিয়ে কথা বলবেন না আমার সাথে।আমি আপনার খাইও না পরি ও না।খুব তে*জ হয়েছেনা আপনার? সেই তে*জ কমানোর জন্যই আমি এসেছি। তা আমার বোন নাকি আপনার চুল টেনে ধরেছে? তাই নাকি?
ইসসস আমার আফসোস হচ্ছে। চুল তো আপনার সবই ঠিক আছে।একটাও এদিক সেদিক দেখা যাচ্ছে না। আমার বোনকে নিশ্চই খেতে দেননি তাই না? না হলে হাতে জোর ছিলোনা চুল ছিরার? আমি তো পুরাই টা”ক বানিয়ে দিতাম আপুর জায়গায় হলে।ধুরর আমার আপুটা ও না কোনো কাজের না। আপনাকে টা’ক মাথায় দেখার আমার অনেক শখ ছিলো সেই শখটা পূরণ করতে পারলামনা। আপু করতে পারেনি বলে কি হয়েছে? আমি আছি না কাজ সম্পূর্ণ করার জন্য? আমার আবার অসম্পূর্ন কাজ সম্পূর্ণ করতে অনননেক ভালো লাগে।
ওমির মা গ’র্জে উঠে মুখ সামলে কথা বলো।ভেবে কথা বলবা কি বলতেছো।না হলে ঠাটিয়ে চ’ড় লাগাবো গালে বি’য়া’দ’প মেয়ে।
সোহা আরো গর্জে উঠে বলে,,,এইই গলা নিচে।আমার সাথে লাগতে আসবিনা বুড়ি।আমি নোহা নই সোহা। তোকে আমি তাই যা কিছু করে ফেলতে পারি।তুই আমার বড় বলে তোকে আমি ছেড়ে দিবো না।সম্মান তাকেই করা উচিত যে সম্মানের যোগ্য। তোর মতো কু’চু’টে মহিলাদের না।তোদের বড় বলে ছেড়ে দেওয়া মানেই অন্য নিষ্পাপ মানুষের সাথে অন্যায় করা।তাও শুকরিয়া কর তোকে এখনও কিছুই করি নি।
তমা এসব শুনে এগিয়ে এসে বলে উঠে,,, তোমার তো সাহস কম না মেয়ে।তুমি আমাদের বাড়িতে এসে আনার ফুপিকেই যা নয় তাই বলছো? তুই তুকারি করছো?
সোহা তমার কথা শুনে দৌড়ে এসে তমা আর কিছু বোঝার আগেই তমার চুলের মুঠি শক্ত করে ধরে।
তমা ব্যাথায় আহ্ বলে চুল ছাড়ানোর চেষ্টা করে। আমার চুল ছাড়ো বলছি।
ছাড়ার জন্য তো ধরিনি চা’ন্দু।তোরে আমার বিয়ের সময় ই ভালো লাগেনি।ঠিক বুঝেছিলাম তর মধ্যে কিছু একটা ঘা’পলা আছে।তুই এই বুড়ির সাথে মিলে আমার আপুকে অ’ত্যা’চার করেছিস।আমার আপুকে কষ্ট দিয়ে তরা ভালো থাকবি ভেবেছিস ? কক্ষোনো না।আমি সোহা বেঁচে থাকতে তো নই।বলেই তমার মুখ চেপে ধরে। সোহার এক হাত তমার চুলে আরেক হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে রাখা।তমা আ’ত’র্কিত হা’মলায় কিছু বুঝে উঠতে পারে নি।তাই পাল্টা আ’ক্র’মন করে উঠতে পারে নি।
ওমির মা নিজের ভাতিজির অবস্থা দেখে এগিয়ে যায় তমাকে ছাড়ানোর জন্য। কিন্তু কিছুটা এগিয়ে আসতেই সোহা ইচ্ছে করে নিজের পা টা এগিয় সামনে রাখে যা উনি খেয়াল করেন নি।ফলস্বরূপ পায়ের সাথে পা লেগে যাওয়ায় খেই হারিয়ে ফেলেন।নিজেকে সামলাতে পারেন নি ঠাস্ করে নিচে পরে যায়।পড়ার আগে টেবিলটা তাও ধরার চেষ্টা করে ছিলো।টেবিলের উপর চায়ের কাপটা হাত থেকে নিচে পরে ভেঙে গিয়েছে আর উনার হাতটা গিয়ে ভাঙা কাপের উপরই পরেছে।ফলসরূপ হাত কেটে গেছে।হাত দিয়ে র/ক্ত ঝড়ছে।
সোহা তমার চুলের মুঠি শক্ত করে ধরে টেনে গালে কয়েক ঘা লাগিয়ে দেয়।তোদের মতো কয়েকটা মেয়ের জন্য অন্য মেয়ের সংসার ভাঙে।আরে এতো যখন পিরিতি বিয়ের আগেই মানুষটাকে নিজের করে নিতি।অন্য মেয়ের জীবন কেনো নষ্ট করলি? বলেই আরেকটা তমার গালে লাগিয়ে দেয়।হাত আলগা করে জোরে ধাক্কা মারে তমাকে।তমা ছিটকে গিয়ে সোফার পাশে পরে।সোফার কোনায় গিয়ে মাথায় বারি খায়।বারি খেয়ে মাথা ভন ভন করে চড়কির মতো ঘুরে উঠে তমার।মাথা ধরে কিছু সময় বসে থাকে নিচেই।চুলের গোড়া যেমন আলগা হয়ে গেছে। গাল গুলো যেনো আর গাল নেই।আহ কি ব্যাথা। তার উপর আবার মাথায় চোট পেয়েছে।
সোহা তমার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ওমির মায়ের দিকে তাকায়। মহিলা হাতের ভিতর গেঁথে যাওয়া ভাঙা কাপ খোলার চেষ্টা করছে।
সোহা হাঁটু মোড়ে নিচে বসে।মুখ দিয়ে উচ্চারণ করে আহারে খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না? বলেই টুকরোটাতে হাত দিয়ে আরো চেপে ধরে। টুকরোটা আরো গেঁথে যায় হাতে।ব্যাথায় কোকিয়ে উঠে। কি হলো এই টুকুতেই এই অবস্থা? আর আমার আপুর কথাটা একটাবার ভাবুনতো। শরীর থেকে কি পরিমান র/ক্ত গেছে।মানুষ এতোটা পা’ষা’ণ কি করে হয়? আরে আমার আপুর পেটে তো এই বাড়িরই বংশধর ছিলো।নিজের নাতি-নাতনি ছিলো।তাদের কথাটা তো একবার ভাবতেন।ঐ নিষ্পাপ প্রাণটার কি দোষ ছিলো? বলেই সোহা ইমোশনাল হয়ে যায়। চোখের পানি গুলো বেরিয়ে আসতে চাইছে।
সোহা নিজেকে ধাতস্থ করার জন্য চোখ বন্ধ করে নেয়।এদের সামনে নিজের দূর্বলতা দেখিয়ে কোনো লাভ নেই। এরা মানুষের ইমোশন বুঝবেেনা।স্বার্থপর গুলো নিজেদেরটা শুধু বোঝে। এরা কখনো অপর পাশের মানুষটার কথা চিন্তা করে না। এদের নিজের ভালোটা সবার আগে।অন্যদের যা খুশি হয়ে যাক।
সোহার এসব ভাবনার মাঝেই তমা উঠে দাঁড়ায়। সোহা কে কিছু একটা ভাবতে দেখে,,নিজে সুযোগ পেয়ে যায়। মনে মনে শয়/তানি হাসি দিয়ে এগিয়ে আসে।
সোহার ভাবনার মাঝেই তমা সোহাকে টেনে তুলে।কিছু বোঝে উঠার আগেই ব’লে উঠে,,, তোর এতো সাহস আমাদের বাড়িতে এসে আমাদেরই তুই আ’ঘাত করিস? বলেই নিজের সর্ব শক্তি দিয়ে চ’ড় দেওয়ার জন্য হাত উঠায়।সোহা হঠাৎ হওয়া হা’ম’লাটা বুঝে উঠতে পারেনি।তাই চোখ বন্ধ করে ফেলে।কিন্তু অনেক সময় হয়ে যাওয়ার পরও যখন নিজের গালে বা শরীরে আঘা’ত পায় না।তখন পিটপিট করে চোখ খুলে।
তমা সোহাকে চ’ড় মারতে গিয়ে নিজের হাতে বাঁধা পেয়ে ব্রু কোচকে ফেলে। চোখ তুলে সামনে দাঁড়িয়ে নিজের হাত ধরে রাখা আ’গু’ন্ত’কের দিকে তাকায়। নিজের হাত লোকটার থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে। এতই শক্ত করে ধরেছে যে মনে হচেছ হাতের ভিতরের সব হাড্ডি গুড্ডি ভেঙে যাচ্ছে। হাত ছাড়ানোর জন্য ছটফট করেও একচুল ও নাড়াতে পারে না হাতটা।
সোহা চোখ তুলে দায়ানকে দেখে মনে মনে খুশি হয়ে যায়।পরোক্ষনে দায়ানের র/ক্ত চক্ষু নিয়ে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে শুকনো ঢোক গিলে।
দায়ানের রা’গে মাথা ফেটে যাচ্ছে। ইচ্ছে করছে ঠাটিয়ে লাগিয়ে দিতে দুটো।পাকামো করে এই খানে আসতে গেছে।এখন সে না আসলে কি হতো।ভাজ্ঞিস দরজাটা খোলা পেয়েছে।নয়তো এতোক্ষনে তো চ’ড় খেয়ে বেহুশ হয়ে যেতো।
তমা রাগে ফুঁসছে আর বলছে,,এই কে আপনি হাত ছাড়েন আমার।এই মেয়েটাকে আজ আমি মে’রেই ফেলবো।কতো বড় সাহস আমাকে আ’ঘাত করে।
দায়ান তমার কথা শুনে তমার হাত আরো জোরে চেপে ধরে। এই বার মনে হয় হাতের হাড় গুলো সত্যি সত্যিই ভেঙে গেলো।ব্যাথায় মাগো বলে চিৎকার করে উঠে।দায়ান ছোটো খাটো একটা ধাক্কা দিয়ে ছেড়ে দেয়।
নেক্সট টাইম এসব ভুলেতো দূরে থাক। স্বপ্নে ও ভাববেন না মিস।
“আমার ফুলের দিকে কেউ চোখ গ’র’ম করে তাকাক সেটাই আমি সহ্য করতে পারি না। আর আপনি তাকে আঘাত করার কথা বলছেন?” ভাবুনতো তাহলে আমি কি করবো।”
শুধুমাত্র মেয়ে মানুষ দেখে বেঁচে গেলেন।আমি সহজে মেয়েদের আ’ঘাত করি না।কিন্তু দ্বিতীয় চান্স ও দেই না।আপনি প্রথম তাই ছেড়ে দিলাম।পরবর্তীতে ভুলেও এটার রিপিট করবেন না।পরিনাম ভালো হবে না।শান্ত কন্ঠে ভয়ংকর হু’মকি শুনে তমা দু-পা পিছিয়ে যায়।
এতো চিৎকার চেচামেচি শুনে ওমি নিজের রুম থেকে বেরিয়ে আসে। ড্রয়িং রুমে এসে বলে,,,উফফ মা এতো চিৎকার চেচামেচি শুরু করেছো কেনো আবার? যেটা চেয়েছিলে সেটাতো হয়েছে।তাহলে শান্তিতে থাকোনা।বলেই সামনে তাকিয়ে সোহাদের দেখে ভড়কে যায়।আমতা আমতা করে বলে,,সোহা তুমি এখানে?
হ্যা আপনার সাথে অনেক হিসাব নিকাশ বাকি আছে দুলাভাইইই। সেসবই নিতে এসেছি।
ওমি প্রসঙ্গ পাল্টানোর জন্য ব’লে,,, তোমার বোন ঠিক আছে? আমি ভাবছিলাম যাবো।কি অবস্থা বলোতো।বিয়ে হয়েছে। স্বামী একটু আধটু মারতেই পারে।স্বামীর একটু মার সহ্য করতে পারে না এই গুলা কেমন মেয়ে মানুষ?
তাই নাকি এজন্য মারতে মারতে নিজের সন্তান কেই মেরে দিলি বুঝি? তুইতো মানুষ নারে। যে নিজের সন্তান পৃথিবীতে আসার আগেই মেরে দেয় সে যে সে মানুষ নয়।
মুখ সামলে কথা বলো সোহা ভুলে যেওনা আমি কে।এসব কি ধরনের ব্যবহার? আর এখনতো আমার সন্দেহ হচ্ছে। ঐ বাচ্চাটা কি আদোও আমার ছিলো? যদি হতোই আমি নিশ্চই জানতাম।কার না কার পাপের ফ’ল।আমার ঘারে চাপাতে চেয়েছিলো।
তাই নাকি জা/নো/য়ার।তুই তো কু/কুরের চেয়েও নি’কৃষ্ট পশু। তুই তো দুই পা বিশিষ্ট পশু।তুই মানুষনা।বলেই সোহা ওমির কাছে গিয়ে চ’ড় মারে।তুই আমার আপুর নামে বাজে কথা বলিস। হা/রা/ম/জা/দা বিশ্বাস কর আপু দেইখা তুই এখনো সুস্থ হয়ে দাড়িয়ে আছিস।আমি থাকতাম। তর হাড়,মাংস অস্তি’ম’জ্জা চিবিয়ে চিবিয়ে খেতাম।বলেই ওমির গালে এলোপাথাড়ি চ’ড় মারতে লাগলো।ওমি কিছু করতে নিবে তার আগেই দরজার দিকে চোখ যায়।
একজন লোক কয়েকজন পুলিশ নিয়ে আসছে।ওমি তাই আর কিছু করার সাহস দেখায় না।এমনতেই ঝামেলায় পরে গেছে।
সোহা অনবরত এখনো ওমি কে লাত্থি, ঘুষি মেরে চলেছে। দায়ান এতোসময় সোহার কান্ড দেখলেও,,রুশকে পুলিশ নিয়ে আসতে দেখে। সোহাকে কোমড় পেচিয়ে উপরে উঠিয়ে দূরে নিয়ে আসে।সোহা এখনো হাত পা ছুঁড়ে বলে,,,ছাড়ুন আপনি এরে আমি আজ নিজের হাতে খু/ন করবো।কতো বড় সাহস এতো বড় অপরাধ করেও আমার আপার নামে বা’জে কথা বলে।দায়ান সোহাকে শান্ত করার জন্য সোহার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,,,শান্ত হয়ে যাও পুলিশ ওদের যথাযত শাস্তি দিবে।আর আমিতো আছি।
এতোক্ষনে ওমির নানি ও এসে দাড়িয়েছে।তবে কিছু বলছেনা।চুপচাপ দেখে চলেছে।
পুলিশ অফিসারটি এবার বলে উঠে,,, মি. ওমি আপনার নামে আপনার মা ও মামাতো বোনের নামে নারী নির্যা’ত’ন।খুন করার চেষ্টা ও একটা অনাগত সন্তানকে ইচ্ছাকৃত ভাবে মায়ের অনুমতি ছাড়া মেরে ফেলার অপরাধে গ্রে’ফতার করা হলো।
কিন্ত অফিসার।
কোনো কিন্তু নেই।যা বলার থানায় গিয়ে বলবেন।ওমির মা আর তমা এদিকে ভয়ে কেঁদে দিয়েছে।
অফিসার মহিলা পুলিশকে৷ ইশারা করে,, তমা আর ওমির মাকে ধরার জন্য। আর ওমির হাতে হাতকড়া পরিয়ে দেয়।
ওদের টেনে নিয়ে যাওয়ার সময় ওমির নানি বলে দাড়ান অফিসার।অফিসার মহিলাটার দিকে তাকায়।
ওমির নানি প্রথমেই নিজের মেয়ের কাছে যায়।গিয়ে ঠাটিয়ে চ’ড় লাগায়। এই কাজটা আমার আরো আগে করা দরকার ছিলো। জানো/য়ার জন্ম দিয়েছিলাম।আর তার ঘরেও আরেকটা হয়েছে জানো/য়ারই।নিয়ে যান এদের।এদের কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করবেন।
ওদের নিয়ে গেলে সোহা দায়ানের কাছে এগিয়ে গিয়ে বলে,,আমার আপু কেমন আছে এখন? ঠিক আছে তো?
অপারেশব চলছে।চিন্তা নিওনা সব ঠিক হয়ে যাবে।আর তোমার এখানে একা আসা একদম ঠিক হয়নি।
স’রি। এদের নিজের হাতে কিছু না করলে শান্তি পাচ্ছিলাম না।
ওমির নানি এগিয়ে এসে সোহার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।অনেক বড় হ বুড়ি।যদি তোর মতো তোর বোনটাও হতো। তাহলে এতো খারাপ দিন দেখতে হতো না।তারপর উনি সোহাদের সাথেই হাসপাতালে চলে যায়।নোহাকে এক পলক দেখে তারপর নিজের বাড়ি চলে যাবে।
—————————————–
হাসপাতালে এসে দেখে সোহার বাবা আর মা চুপচাপ বসে আছে।
সোহা দৌড়ে বাবার কাছে যায়।বাবা ডাক্তার বের হয়েছে?
সোহার বাবা মাথা নাড়িয়ে না বোঝায়।
সোহা বাবার হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে,, চিন্তা করো না। সব ঠিক হয়ে যাবে। আপু ভালো হয়ে যাবে।ঐ শ/য়তান গুলো কে পুলিশে ধরিয়ে দিয়ে এসেছি।সোহার বাবা নিজের মেয়ের দিকে তাকিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। কিছু বলে না।
সবাই অপারেশন থিয়েটারের সামনে চুপচাপ পায়চারি করতে থাকে।প্রায় আরো পনেরো মিনিট পর ডাক্তার বের হয়ে আসে।ডাক্তার কে দেখে সোহার হাত পা কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে গেছে।
দায়ান ডাক্তারের কাছে এগিয়ে গিয়ে জানতে চায়,,ডাক্তার হাও ইজ সি?
দেখুন অপারেশন সাকসেসফুল।
সবাই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে।
ডাক্তার আবার বলে উঠে,, তবে বাহাত্তর ঘন্টার আগে কিছু বলা যাচ্ছে না।এর মধ্যে পেশেন্টের জ্ঞান ফিরলে চেক আপ করে তারপর নিশ্চিত করতে পারবো।
বলেই ডাক্তার চলে যায়।
অপারেশন সাকসেস হওয়ায় সবাই কিছু টা স্বস্থি পেলেও মনে মনে টেনশনে আছে।
কেউই হাসপাতাল থেকে বের হয় নি। সবার মুখ শুকিয়ে একটুখানি হয়ে গেছে। দায়ান তাই রুশকে ক্যাবিনের সামনে বসিয়ে সবাইকে নিয়ে নিচে খাওয়াতে যায়।কেউ রাজি হয়নি তারপর দায়ানের জোরাজোরি তে যেতে হয়েছে।
সবাইকে টেনশন মুক্ত করে নোহার সাত ঘন্টা পরই জ্ঞান ফিরে আসে। ডাক্তার চে’ক আপ করে বলে চিন্তার কিছু নেই।ঠিক আছে। তিনদিন পর বাড়ি নিয়ে যেতে পারবে।তারপর নোহাকে সাধারণ ক্যাবিনে শিফট করা হয় আইসিইউ থেকে।
নোহা এখনো ঘুমে। ওমির নানি নোহার সামনে আর পরতে চায় না।তাই নোহাকে একটু দেখে চলে যাবে।নোহাকে এক পলক দেখেই চলে যায়। নিচে ওনার ছোট ছেলে এসেছে বাড়ি নিয়ে যেতে।আগেই ফোন করেছিলো।
———————————————–
নোহার ঘুম ভাঙলে, সবাই ক্যাবিনে ঢুকে দায়ান আর রুশ অবশ্য দরজার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে।এখান থেকেই দেখা যাচ্ছে মেয়েটা কেমন নি’র্জীব প্রান’হীন দেহের মতো পরে আছে।উপরের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখের কোণটা ভিজা।
সোহা আর সোহার বাবা দুইজন দুই পাশে বসে পরে নোহার। মা মাথার কাছে দাঁড়িয়ে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
নোহার বাবা কাঁপা কাঁপা হাতে মেয়ের হাতটা নেয়।বড় আম্মা তুই ঠিক আছিস?
হুু বাবা। ভাঙা গলায় বলে,, নোহা।
নিজের প্রিয় মানুষগুলোই আমাদের সবচাইতে বড় ক্ষতি টা করে বড় আম্মা। তাই আমাদের ভেঙে পরলে চলবে না।শক্ত হতে হবে।তাদের বুঝিয়ে দিতে হবে আমরা দূর্বল নই।
“আমি কখনো তাদের প্রিয়জন ছিলাম না বাবা।
প্রয়োজন ছিলাম।”
#চলবে,,,,,,,,,,