তুমি হাতটা শুধু ধরো পর্ব -৪২+৪৩

#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো
#পর্বঃ৪২
#Jhorna_Islam

সোহার এক্সাম শুরু হয়ে গেছে ইয়ার চেঞ্জ। সে এখন পড়া নিয়ে প্রচুর বিজি। পড়তে একটুও ভালো লাগে না।এতোদিন শুধু দায়ান পড়ার জন্য চা’প দিতো।এখন নোহা ও যুক্ত হয়েছে। দুইটায় সারাক্ষণ মিলে কানের কাছে এক তবলাই বাজিয়ে চলে পড়ো পড়ো আর পড়ো।

একটু শান্তি নাই।পড়ার টেবিলে বসে,বইয়ে মুখ গোজে বসে থাকতে হয়।কোনো কাজ ও করতে দেয়না নোহা।সব কাজ নিজে করে।নয়তো জমেলা খালাকে সাহায্য করে।

আজ সোহার এক্সাম আছে।তাই দায়ানের সাথেই বেরিয়ে গেছে।দায়ান সোহাকে ভার্সিটিতে দিয়ে তারপর অফিসে যাবে।নোহার বাড়িতে একা একাই সময় কাটছে।

বাইরে থেকে ঘুরে আসার আজ পনেরো দিন হয়ে গেছে।ঐ দিনটা সবারই অনেক ভালো কেটেছে।গল্প গু’জ’বে হাসি ঠাট্টার মাধ্যমে। নোহার সঙ্গে প্রায় অনেকসময় ধরেই কথা বলেছে রুশ। নোহার মধ্যে রুশকে নিয়ে যে জড়তা টা ছিলো তা অনেকটাই কেটে গিয়েছিলো সেদিন।নোহা বুঝতে পেরেছিলো সোহার কথাটাই সত্যি। রুশ ততটাও খারাপ নয়।অনেক মিশুক।আর সোহার মতোই তার মানুষকে হাসানোর ও মন ভালো করার ক্ষমতা রয়েছে।এর মধ্যে যদিও রুশের সাথে দেখা হয়নি।

দায়ান সোহাকে ভার্সিটিতে দিয়ে,মাত্রই অফিসে এসেছে। নিজের ক্যাবিনে গিয়ে বসতেই মনে পরলো তার মিটিং এর ফাইল সাথে আনতে ভুলে গেছে। এখন আবার বাড়িতে যেতে হবে ভাবতেই ভালো লাগছেনা।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে মিটিং শুরুর আরো অনেক সময় বাকি। চোখ বন্ধ করে চেয়ারে কতক্ষন মাথা হেলিয়ে রাখে।

তারপর মাথায় আসে রুশ এখনো আসেনি।হয়তো রাস্তায় আছে।রুশকে বললেই তো নিয়ে আসতে পারবে।তাই দেরি না করেই ফোন লাগায় রুশ কে।

— হ্যা দোস্ত বল।

— কই আছিস তুই?

— আমিতো রাস্তায় আসতে আর বেশি টাইম লাগবে না।স’রিরে একটু লে’ট হয়ে গেছে। আসলে আজকে ঘুম থেকে উঠতে একটু লেট হয়ে গেছে।

— আরে ওসব রাখ।কোনো ব্যাপার না।তোকে একটা কাজ দিচ্ছি সেটা করে দেন অফিসে আয়।

— কি কাজ?

— আসলে মিটিংয়ের জন্য যেই ফাইলটা দরকার ঐটা বাড়িতে রেখে এসে পরেছি।তুই যেহেতু রাস্তায় আছিস আমার বাড়ি থেকে নিয়ে তারপর অফিসে আয়।মিটিং এর আরো অনেক সময় বাকি।সো আস্তে ধীরেই যা।

— কিন্তু সোহার না এক্সাম? ওতো বাড়িতে নেই।

— আরে নোহা আছে না।ওকে বললেই পাবি এবার যা।

— ঠিক আছে। যাচ্ছি।
—————-

নোহা সোফার উপর বসে বসে সুই সুতা দিয়ে একটা ব্যা’গ বানাচ্ছে। এসব খুব ভালো করেই পারে।এখন যেহেতু অ’লস সময় সোহা ও বাড়িতে নেই।তাই এই কাজ করাই ভালো।সারাক্ষণ শুয়ে বসে থাকতেও ভালো লাগে না।

প্রায় পনেরো মিনিট পরই রুশ দায়ানের বাসায় এসে পৌঁছায়। দরজার পাশে এসে কলিং বেল দেয়।

নোহা হঠাৎ করে কলিং বেল বেজে উঠায় কিছুটা ভ’য় পেয়ে যায়। হাতে গিয়ে সুই বিঁধে। ততোটা না লাগলেও একটু ব্যাথা পায়।

দরজার দিকে তাকিয়ে ভাবে এখন তো কারো আসার কথা না।কে আসলো? বোন তো মাত্র কিছুসময় আগেই বের হয়েছে।ওরাতো বলেও গেছে দরজা না খুলতে ওরা ফোন করার আগে।

নোহার ভাবনার মাঝেই দায়ান এর কল আসে নোহার ফোনে।নোহা তারাতাড়ি রিসিভ করে।

হ্যালো নোহা? আসলে রুশ একটু বাড়িতে যাচ্ছে। আমার একটা ফাইল রেখে এসে পরেছি ভুলে।ঐটাই ওকে আনার জন্য পাঠিয়েছি।তুমি দরজা খুলে দিও।আর ফাইল টা আমার রুমের টেবিলের উপর রাখা,প্লিজ বোন ওকে এনে দিও।

ঠিক আছে।

হুম বলেই দায়ান ফোন কেটে দেয়।নোহা বুঝতে পারে হয়তো রুশই এসেছে।তাই দরজা খুলে দেওয়ার জন্য এগিয়ে যায়।

রুশ একের পর এক কলিং বেল বাজিয়েই যাচ্ছে। আবার বেল বাজাতে যাবে এমন সময় দেখে দরজা খুলে গেছে।

নোহা রুশের দিকে তাকায়,, রুশ মুচকি হেসে বলে,,বাপরে আরেকটু লেট হলে দরজা খোলার জন্য,,, ইতিহাসের পাতায় আমার নাম উঠে যেতো।যে এক যুবক কলিং বেল বাজাতে বাজাতে ক্লান্ত হয়ে শ’হী’দ হয়ে গেছে।

নোহা রুশের কথায় মুচকি হেসে বলে,,আসলে আমি বুঝতে পারিনি আপনি।আর দায়ান ও আমায় এইমাত্র ফোন করে বলল যে আপনি আসবেন।

তা ম্যাডাম এই অ’ধমকে কি বাইরেই দার করিয়ে রাখবেন? নাকি একটু ভিতরে ঢুকার অনুমতি পাবো?

এমা ছিঃ ছিঃ কি বলছেন এগুলো? আসুন ভিতরে আসুন বলেই নোহা দরজার মাঝখান থেকে সরে দাঁড়ায়।

রুশ ভিতরে এসে সোফায় গিয়ে ধপাস করে বসে পরে।খুব টা’য়া’র্ড লাগছে। এখানেই বসে থাকতে মন চাচ্ছে। সকালে ঘুম থেকে ওঠে দেখে লেট হয়ে গেছে।দৌড়ের উপর রে’ডি হয়েছে।

নোহা দায়ানের রুমে ঢুকে টেবিলের উপর থেকে ফাইলটা নিয়ে আসে। এনে রুশের হাতে দেয়।রুশ মুচকি হেসে ফাইলটা হাতে নিয়েই বসে থাকে।

আপনি বসুন আমি পাঁচ মিনিটে আসছি।

কোথায় যাবেন আমি এখনই চলে যাবো।

বসেন বেশি টাইম লাগবে না। রুশ মাথা নাড়িয়ে সায় দেয়।

নোহা তারাতাড়ি রান্না ঘরে ঢুকে।কিছু সময় পরই হাতে দুই কাপ কফি নিয়ে আসে।এক কাপ রুশের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে,,নিন খান ভালো লাগবে।

রুশ কফিটা হাতে নিতে নিতে বলে,, আরে এসব কেনো করতে গেলেন কষ্ট করে শুধু শুধু?

এতোটাও কষ্ট হয়নি কফি বানাতে।আপনাকে দেখে টায়ার্ড মনে হচ্ছে খেলে ভালো লাগবে। আর আমার জন্য ও এনেছি।

রুশ কফির কাপে এক চুমুক দিয়ে চোখ বন্ধ করে রাখে।আহ্ কি টেস্ট! মনে হচ্ছে প্রথম বার এমন টেস্টি কফি খাচ্ছে। মেয়েটার হাতে জা’দু আছে।উমম এতো ইয়াম্মি কফি আমি আমার জীবনেও খাইনি।

নোহা বলে,,এটা একটু বেশি প্রসংসা হয়ে গেলো না?

মোটেও না সত্যি বলছি জাস্ট অসাধারণ। আপনার ঐদিনের রান্না করা খাবারের স্বাদ এখনো আমার জি’বে লেগে আছে।

— আবার সময় করে আসবেন। রান্না করে খাওয়াবো।

— তাতো অবশ্যই। আমি আবার কেউ দাওয়াত দিলে না করিনা।

— আপনি খুবই পে’টু’ক মনে হচ্ছে। বাট দেখে কিন্তু বোঝা যায় না।

— হ্যা তা আর বলতে। প্রথম যখন সোহার হাতে রান্না খেতে এসেছিলাম তখন কি হয়েছে জানেন? তারপর রুশ ভর্তা খেয়ে কি হা’ল হয়েছিলো সব নোহা কে বলে।

রুশের ঝাল খাওয়ার কাহিনী শুনে নোহা আর নিজেকে আঁটকে রাখতে পারে না।জোরে খিলখিলিয়ে হাসতে থাকে।

নোহার হাসিতে রুশের চোখ আঁটকে যায়।মুগ্ধ নয়নে নোহার হাসির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়।

নোহা হাসতে হাসতে নিজের চোখের কোনায় পানি জমে গেছে।নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে রুশের দিকে তাকায়। রুশকে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে কিছুটা ইতস্তত বোধ হতে লাগে। তারপর গলাটা একটু খেঁকারি দেয়,

রুশ নিজের মুগ্ধতা থেকে বেরিয়ে আসে। প্রসঙ্গ ঘুরানোর জন্য বলে,,থেংকস ফর কফি।এটার সত্যি প্রয়োজন ছিলো।সকালে তারাহুরো তে আর খাওয়া হয় নি।এখন না খেলে আর হয়তো খাওয়া ও হতো না।সারাদিন মাথা ধরে থাকতো।

নোহা কিছু বলে না।

রুশ কাপটা রেখে ফাইল হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। দরজার পাশে যেতে যেতে বলে,, দরজাটা লাগিয়ে নিন।

নোহা ও উঠে রুশের পিছন পিছনে যায় দরজা আটকানোর জন্য ।

রুশ দরজার বাইরে গিয়েও আবার নোহার দিকে তাকিয়ে বলে,,, প্রাণ খুলে হাসতে শিখুন।
মন খুলে বাঁচতে শিখুন। আপনাকে হাসলে কিন্তু অনেক সুন্দর লাগে।তাই সব সময় হাসি খুশি থাকবেন।

বলেই রুশ বড় বড় পা ফেলে চলে যায়।

নোহা রুশের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।

————————————

রাতে সোহা বসে বসে পড়ছে,আর দায়ান বসে লেপটপে অফিসের কাজ করছে। প্রায় এক ঘন্টা পরার পর আর মন বসছে না পড়াতে।উফফ পড়াশোনা করতে করতে জীবন টা তে’না তে’না হয়ে গেলো।

কিছু সময় বসে বসে এটা ওটা ভাবতে লাগলো। তারপর মাথায় হাত দিয়ে দেখে চুলের অবস্থা বারোটা বেজে আছে।না আচরালেই নয়।আর সোহার এখন মোটেই চুলের ঝামেলা নিজে থেকে করতে মন চাইছে না।

তাই টেবিল থেকে উঠে দাঁড়ায়,, ড্রেসিং টেবিলের সামনে থেকে চিরুনি নিয়ে ঘুরে দাঁড়ায়,,, নোহার কাছে যাবে বলে।

ঠিক তখনই দায়ান তার লেপটপ অফ করে সোহার দিকে তাকিয়ে বলে কই যাওয়া হচ্ছে?
আসলে দেখেন না মাথার চুলের কি অবস্থায়। না আচড়ালেই নয়।বাবুই পাখির বাসা হয়ে আছে। তাই আপুর কাছে যাচ্ছিলাম।আমি এসব ঝামেলা একদমই পারবো না।

কোথাও যেতে হবে না। এদিকে এসে আমার পাশে বসো।

কি বলছেন? দেখেন আমার চুলের কি অবস্থা। আজকে না ঠিক করলে পা’গলের মতো লাগবে।

আমিতো বলছি আমার কাছে এসে বসো।আমি ঠিক করে দিচ্ছি।

আপনি পারবেন?

হুু আসো।

সোহা গিয়ে দায়ানের পাশে বসে। দায়ান সোহার হাত থেকে চিরুনি নিয়ে আস্তে করে চুল আচরে দিতে থাকে।

জানেন এজন্যই আমার বড় চুলের ঝামেলা ভালো লাগে না।অ’স’হ্য লাগে। উফফ কতো যত্ন নেওয়া লাগে।শুকাইতে সময় লাগে।ছেড়েও রাখা যায় না।কতো বলেছি আমি এই বড় চুল রাখবো না।মা শুনেনি মা ই যত্ন সহকারে সব করতো।আমি চুলে বেশি হাত ও লাগাতাম না।এখন এসব ঝামেলা ভালো লাগছেনা।মা ও নেই ভাবতেছি কেটে ফেলবো।

দায়ান এতোসময় চুল আঁচড়ে দিতে ছিলো একমনে।সোহার চুল কেটে ফেলার কথা শুনে, চিরুনি রেখে সোহার চুল মুঠো করে ধরে।সোহা আহ্ কি করছেন? লাগছে তো বলেই মাথা উল্টিয়ে দায়ানের দিকে তাকায়।

দায়ান হাতের বাঁধন আলগা করে,, ঝুঁকে সোহার কপালে চুমু খায়।।।

যা বলেছো বলেছো,নেক্সট টাইম আর বলবা না ওকে?

সোহা ফ্যাল ফ্যাল করে দায়ানের দিকে তাকিয়ে রয়।

তুমি জানো তোমার চুলের প্রতি আমার কতো দূর্বলতা? তোমাকে কিছু করতে হবে না।এতোদিন মা তোমার চুলের যত্ন নিয়েছে এখন থেকে আমি নিবো।তাও চুল কাটার কথা একদম বলবেনা ঠিক আছে?

সোহা মাথা নাড়ায় যে সে বলবে না।

দায়ান মুচকি হেসে আবার সোহার চুল আঁচড়িয়ে সুন্দর করে বে’নি করে দেয়।

সোহাতো বে’নি দেখে অবাক।ওয়াও কতো সুন্দর করে বে’নি করতে পারেন আপনি।এমন ভাবে তো আমিও পারি না।

আগে মাকে করে দিতাম।আর আমি নিজেই শিখে ছিলাম।মাকে আর নিজের বউকে করে দেওয়ার জন্য।

সোহা বসা থেকে উঠে ঘুরে দাঁড়ায়।কোমড়ে হাত রেখে বলে,,সত্যি করে বলেন তো আপনি শুধু মাকেই বে’নি করে দিয়েছিলেন? নাকি ঐই তিশা,ফিশা কেও করে দিয়েছিলেন? নেকি কান্না শুরু করে।

দায়ান কপাল কুঁচকে সোহার দিকে তাকিয়ে বলে সাট আপ,, আমি আমার মা আর বউয়ের জন্য শিখেছি।আর তিশা আমার বউ ছিলো না ইডিয়ট। ওর সাথে এমন গ’ভীর সম্পর্ক ও ছিলো না।ওর কথা আরেকদিন তুলবা তো তোমার খবর আছে। মেয়ে মানুষের কাজই হচ্ছে দুই লাইন বেশি বোঝা। বলেই চিরুনিটা হাত থেকে রেখে বারান্দায় চলে যায়।

সোহা নিজের মাথায় নিজেই থা’প্পড় মেরে বলে,এই রে দিলিতো রা’গিয়ে।বলেই নিজেও বারান্দায় চলে যায়।

দায়ান আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।সোহা পিছন থেকে গিয়ে দায়ানকে ঝা’পটে ধরে।পিঠে মাথা ঠেকিয়ে বলে,,রাগ করেছেন? আমি অনেক গুলা স’রি। আমিতো সিরিয়াস ভাবে বলি নাই মজা করছি।

দায়ান সোহাকে পিছন থেকে সামনে এনে জড়িয়ে ধরে। মাথায় চুমু খেয়ে বলে এমন ম’জা আর করবানা ঠিক আছে? আমি অতীত ভাবতে চাই না।তুমিই আমার সব।ভালোবাসি অনেক আমার পা’গলিটাকে।

সোহাও দায়ানের বুকে থুতনি রেখে দায়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,, আমিও ভালোবাসি আমার এই বরটাকে।

————————————–
সময়ের চাকা ঘুরতে ঘুরতে ছয় মাস পার হয়ে গেলো আরো।দায়ান সোহার ভালোবাসাময় জীবন অতিবাহিত হচ্ছে। রা’গ অভিমান,খুনসুটি সব মিলে খুব ভালো সময় কাটছে।

রুশ আর নোহার জীবন ও ভালো না হলেও খুব খারাপ যাচ্ছে না। এর মধ্যে আরো কয়েকবার দেখা হয়েছিলো ওদের।এখন সম্পর্কটা বন্ধুত্বপূর্ণই ওদের বলা চলে।

এখন বিকেল সময়।নোহা ঘুমুচেছ। তাই সোহা নোহাকে না ডেকে বাগানে এসে পড়ে। দায়ানের ও আজ অফিস ছুটি তাই সে বাড়িতে।

সোহাকে বাগানে যেতে দেখে দায়ান ও যায়।অনেকদিন বাগানে যাওয়া হয় না।

সোহা গাছে পানি দিচ্ছে আর গুন গুন করে গান গাইছে। দায়ান পিছন থেকে সোহার গালে চুমু দিয়ে দোলনায় গিয়ে বসে পরে। হাতে মোবাইল নিয়ে দেখতে থাকে।এমন একটা ভাব যেমন কিছুই হয়নি।

সোহা দুই মিনিটের জন্য স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।তারপর দায়ানের দিকে কটমট করে তাকায়।

এইই আপনার সমস্যা কোথায়? ঘর বাহির তো কিছুই দেখা যায় মানেন না আশ্চর্য।যদি কেউ দেখে ফেলতো।

দেখলে দেখতো।দায়ানের এমন খাপ’ছাড়া কথা শুনে সোহা কি বলবে আর খুজেই পায় না। তাই চুপচাপ পানি দিতে থাকে।

ঠিক সেই সময় দায়ানের ফোনে রুশের কল আসে।

— হ্যা রুশ বল,,,,,

— আমি সব ব্যবস্থা করে রাখছি।কাল গিয়ে কিছু ফর্মালিটি পূরণ করলেই হবে।

— দেখে শুনে নিয়েছিস তো? পরে যেনো কোনো ঝামেলা না হয়।

— হ্যা সব দেখে শুনে নিয়েছি।কোনো ঝামেলা হবে না। তুই নোহাকে বলেছিলি এবিষয়ে?

— হ্যা বলেছি।কাল তাহলে তুই নোহাকে নিয়ে যাস।আর সাথে সোহা ও যাবে।ওদেরকে নিয়ে যাইস।

— ওকে তুই নোহাকে ফোনটা দে আমি সব বুঝিয়ে বলে দেই।ওরতো মনে হয় অনেক ধারণা আছে এ বিষয়ে। কোনো ঝামেলা হবে না।আর অনেক কিছু নিজে তৈরি ও করতে পারে।এখানে কিছুদিন ট্রেনিং নিলে সব কিছু পারবে।নিজেই স্বাবলম্বী হতে পারবে।

— হুম।আমি মানা করেছিলাম।দেখনা জেদ ধরে বসে আছে। নিজে কিছু করবে।অন্যর উপর নির্ভরশীল হবে না।আমিও ভেবে দেখলাম,,ওর নিজের স্বাবলম্বী হওয়ার দরকার।
আর শোন কাল আমি মিটিং সামলে নিবো তুই ওদের নিয়ে যাস। নোহা এখন ঘুমুচেছ। পরে কথা বলে নিস।

— ওকে সমস্যা নাই। সোহা কি করে?

দায়ান চোখ তুলে সোহার দিকে একবার তাকায়। সোহা গাছের যত্ন নিতে বিজি।

” আমার ফুল তার ফুল গাছের যত্ন নিচেছ।”

#চলবে,,,,,,,,,,,#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো
#পর্বঃ৪৩
#Jhorna_Islam

কয়েকদিন যাবত সোহার শরীর টা ভালো যাচ্ছে না। কেমন যেনো দূর্বল লাগে।পুরো শরীর ব্যাথা ব্যাথা হয়ে আছে। খেতে ইচ্ছে করে না একদম।অবশ্য কাউকে কিছু বলেনি।ভাবছে হয়তো ঠিক হয়ে যাবে।কিন্তু আজ একটু বেশিই খারাপ লাগছে।মাথা ও কি রকম ঘুরাচেছ।

আজ ভেবেছিলো নোহার সাথে যাবে।বোনের জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ দিন।তার বোন নিজে থেকে কিছু করবে।এটাতো সে অনেক আগে থেকেই চাইতো।তাইতো বোনের পাশে থাকতে চেয়েছিলো।

চুপচাপ শুয়ে আছে সোহা।উঠার মতো শক্তি পাচ্ছে না। সারাদিন শুধু ঘুমেই ধরে।বুঝে পায় না এতো ঘুম কই থেকে আসে।ঘুমের ঔষধ খেলেও মনে হয় এতো ভালো ঘুম হবে না।এসব ভাবনার মাঝে নোহার ডাক শুনতে পায়। ওকেই ডাকছে।দায়ান অফিসে চলে গেছে সকাল সকাল।

— এর মধ্যে নোহা রুমে ঢুকে। কিরে বোন শুয়ে আছিস যে? তৈরি ও দেখি হস নি।রুশ সাহেব তো নিচে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। বলেছিলাম উপরে আসতে এখন নাকি আসবেন না।যা উঠ তৈরি হো তারাতাড়ি।

— আপু আমার শরীরটা ভালো লাগছে না।তুই বরং রুশ ভাইয়ার সাথে চলে যা।

— কি হয়েছে তর, শরীর খারাপ আগে বলিস নি কেনো? বলেই কপালে হাত দেয়।কই জ্বর তো নেই।

— আরে আপু ব্যস্ত হতে হবে না।এমনিতেই ভালো লাগছে না। শরীরটা জাস্ট দূর্বল লাগছে আর কিছু না।

— ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া না করায় তোর এই অবস্থা। তাহলে আমি রুশ সাহেবকে বলে দিচ্ছি আমরা যাবো না।তুই সুস্থ হলেই যাবো।

— না না।তুই যা আমি একা থাকতে পারবো।আর আমার এতোটাও শরীর খারাপ হয় নি।

— কিন্তু,,,,,,,,

— কোনো কিন্তু না তুই যা।আর উনি আজ তারাতাড়ি ই এসে পরবে।মিটিং টা শেষ হলেই।চিন্তা করিস না আপু তুই যা।

— হুম যাচ্ছি। তুই নিজের খেয়াল রাখিস।কোনো অসুবিধা হলে আমাকে ফোন দিবি।

— ওকে যা।আর অল দা বেস্ট আপু।

থ্যাংকস সো’না।

—————————————-
নোহাকে একটি এনজিও সংস্থায় নিয়ে আসে রুশ।এইখানে নোহা কিছুদিন নানা ধরনের হস্ত শিল্প তৈরি করার জন্য ট্রেনিং নিবে।তারপর উনারাই কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিবে।

রুশ আর নোহা গাড়িতে বসে টুকটাক কথা বলতে বলতেই এনজিও সংস্থা তে এসে পৌছায়।

তারপর এখানকার হে’ড অফিসারের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে ট্রেনিং নেওয়ার জন্য ভর্তি হয়।আজ আঠাশ তারিখ তাই এক তারিখ থেকে জয়েন হতে পারবে।সকল প্রকার ফর্মালিটি পূরণ করে রুশ আর নোহা অফিস রুম থেকে বের হয়ে আসে।

মাঠে বসে বিভিন্ন বয়সের মেয়েরা কাজ করছে। এসবই ঘুরে ঘুরে দেখছে নোহা।রুশ হাটছে আর নোহার দিকে একমনে তাকিয়ে আছে। মেয়েটার মাঝে কি আছে বুঝে পায় না।এই যে সাধারণ একটা থ্রি -পিছে কি সুন্দর লাগছে। এই সবুজ কালারটা শরীরের সাথে কি সুন্দর দেখা যাচ্ছে। কোনো সাজ নাই তবুও যেনো চোখ ফেরানো দায়।

নোহা কথা বলছে রুশের সাথে রুশের কোনো পাত্তাই নেই।সে একমনে নোহাকে দেখছে। নোহা রুশের চাহনিতে কিছু টা অপ্রস্তুত হয়ে যায়। তাই রুশের মুখের সামনে তু’ড়ি বাজায়।

এতে রুশের ধ্যান আসে।অন্য দিকে চোখ ঘুরিয়ে নেয়।

নোহা রুশের দিকে তাকিয়ে বলে,, রুশ সাহেব আপনার সাথে কিছু কথা আছে।গাড়ির পাশে চলুন।

বলেই গাড়ির কাছে চলে যায়।

রুশ ও নোহা কি বলবে ভাবতে ভাবতেই গাড়ির পাশে গিয়ে হেলান দিয়ে দাড়ায় গাড়িতে।

মেয়েরা কে তাদের দিকে কোন নজরে তাকায়,তা কিন্তু খুব ভালো করেই বুঝতে পারে।

রুশ নোহার কথায় কিছু টা হকচকায়।

নোহা আবার বলতে শুরু করে,,,, ঐদিন কিন্তু আপনি আমার জন্যই পুরি-সিঙারা গুলো নিয়ে গিয়েছিলেন।কারণ আপনি জানতেন আমার অনেক পছন্দের খাবার ঐগুলো।

আর এই যে এনজিওর খোঁজ বা এই কাজের কথা আপনিই দায়ান কে বলেছেন তাই না? কারণ আমার এই স্বপ্নের কথা কেউ জানতো না।কেউ না মানে কেউ না। এমনকি সোহা ও না।

আ-আসলে নোহা হয়েছে কি,,,,,

আপনাকে বলতে হবে না। আমিই বলি।আপনি কি করে আমার পছন্দের কথা জানতে পেরেছেন।

আমার ডায়েরিটা আমাকে ফেরত দিয়ে দিলে খুব খুশি হবো রুশ সাহেব।আপনি ঐদিন আমার রুম থেকে আমার ডায়েরি টা নিয়ে এসেছিলেন তা আমি খুব ভালো করেই জানি। হাসপাতাল থেকে বাসায় এসে যখন নিজের রুমে গিয়েছিলাম,,তখন বইয়ের তা’কের উপর আমার ডায়রিটা পাইনি।

অনেক খুঁজেছি।কাউকে বলতেও পারছিলাম না। আমার রুমের জিনিস সাধারণত কেউ ধরে না।আর আমার বই পত্র গুলোতো একদম না।শুধু মাঝে মাঝে গিয়ে মা পরিষ্কার করে দেয়।

ডায়রিটা আমার বিয়ের আগের।তখন কি পছন্দ কি করতে ভালোবাসি সব লিখে রাখতাম।আমি নানা ধরনের হাতের জিনিস তৈরি করতে পারি।ভেবেছিলাম ভবিষ্যতে এসব নিয়েই কিছু করবো।আর এই ব্যাপারে কাউকে কিছুই বলিনি।ডায়েরি তে লিখে রেখেছিলাম।

বিয়ের পর আর ডায়েরি লিখা হয়ে উঠে নি।তাই ওটা ওখানে যত্ন সহকারে রেখে দিয়েছিলাম।ওটা যখন খুঁজে পাচ্ছিলাম না তখনই শুনি আপনি আমার রুমে ছিলেন।কিছুটা সন্দেহ হয়। কারণ কেউ নিবে না বাড়ির এটা আমি জানি।আপনি যে নিয়েছেন তবুও শিওর ছিলাম না।তাই চুপ ছিলাম।ঐদিন যখন আপনি খাবার গুলো নিয়ে গেলেন তখনই আমি শিওর হয়ে গিয়েছিলাম আমার ডায়েরি টা আপনার কাছে।

“আপনার চোখের ভাষা কিন্তু কিছুটা হলেও আমার বোঝার ক্ষমতা আছে রুশ সাহেব”।

রুশ নোহার কথাগুলো শুনে কিছুসময় চুপ করে থাকে হয়তো কি বলবে মনে মনে গুছাচেছ।

হ্যা আপনার ডায়েরি টা আমার কাছেই।ঐদিন যখন দেখেছিলাম সাথে করে নিয়ে এসেছি। আর আপনার ডায়েরি পরেই এতোসব করেছি। আপনার স্বপ্ন গুলো পূরণ করার চেষ্টা করছি।সব যখন জেনেই গেছেন এখন কিছু লোকানোর নেই।আমি সোজাসাপটা বলছি,,,,,,,

” আমি আপনাকে ভালোবাসি।হ্যা খুব ভালোবাসি।ঐদিন যখন আপনি হাসপাতালে সোহার সাথে কথা বলে হাসতে ছিলেন।বিশ্বাস করেন ঐসময় থেকে আমার সব উলট পালট হয়ে গেছে।আটকে গেছি আপনার হাসিতে।আর ফিরে আসা সম্ভব নয়। আর আমি চাই ও না ফিরতে।”

আপনাকে আমি অনেক ভালোবাসি নোহা।আপনার সাথে থাকতে চাই।আপনি কি আমায় বিয়ে করবেন?

নোহা রুশের কথায় স্তব্ধ হয়ে গেছে। বলেকি লোকটা একেবারে বিয়ের প্রস্তাব?

আপনার মাথা কি ঠিক আছে রুশ সাহেব? আপনি জানেন কি বলছেন? এসব কোনোদিন ও সম্ভব না।আমি আর আমার লাইফে কাউকে জড়াতে চাই না। আমার সংসার করার শখ মিটে গেছে। আর আপনি এটা কি করে বলতে পারেন? আমার সব কথা জেনেও।

আমার আপনার অতীত নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই।আমি সব জেনেই আপনাকে ভালোবেসেছি নোহা।আর ওমির মতো সবাই যে খারাপ হবে তা কিন্তু নয়।হাতের পাঁচ আঙুল কিন্তু সমান না।সবারই উচিত লাইফকে দ্বিতীয় বার একটা সুযোগ দেওয়া।

আমার মতো ডিভোর্সি মেয়ের পিছনে কেনো পরে আছেন রুশ সাহেব? এটা আপনার আবেগ ভালোবাসা না।আর আপনার বাবা মা ও এ সম্পর্ক কোনোদিন মেনে নিবেন না।

আমি এখন কিশোর বয়সের ছেলে না নোহা যে আমার ভালোবাসা কে আবেগ বলে চালিয়ে দিবেন।আর আমার বাবা মা কে নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না।।সেটা আমি সা’মলে নিবো।আপনি জাস্ট রাজি হয়ে যান।

নাহ্ কখনো না।আপনি আমার পিছনে পরে সময় নষ্ট করবেন না।অন্য কোথাও ভালো মেয়ে দেখে বিয়ে করে সুখে থাকুন।

বিয়ে করলেতো আপনাকেই করবো নোহা।যতদিন পর্যন্ত আপনি রাজি না হবেন ততোদিনে পিছু ছাড়ছিনা আপনার।দেখি আমার থেকে কতোদিন মুখ ফিরিয়ে থাকেন।

শুধু শুধু সময় নষ্ট হবে আপনার।বলেই নোহা গাড়িতে উঠে গিয়ে বসে।

রুশ বলে সে দেখা যাবে।আর আমরা এখন বাড়ি যাচ্ছি এমন। দুপুরের লাঞ্চটা একসাথে করবো।

আরে,,,,,,,

আপনার কোনো কথা শুনছিনা।
——————————–
দায়ান মিটিং শেষ করেই অফিস থেকে বের হয়ে গেছে।দরজার সামনে এসে কলিং বেল বাজায়।নোহা যাওয়ার আগে বলে গিয়েছে যে সোহা যায়নি।ওর নাকি ভালো লাগছে না তাই।

সোহা মাত্রই ব’মি করে ক্লান্ত হয়ে বিছানায় শুয়েছে।এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠে। তাই অনেক কষ্টে উঠে যায়।উফফ এতো দূর্বল লাগছে কেন ভেবে পায় না।দরজাটা খোলার শক্তি ও যেনো পাচ্ছে না। কাঁপা কাঁপা হাতে দরজা খুলে দেয়।
দায়ানকে দরজার ঐ পাশে দেখে দূর্বল শরীরে মুচকি হাসে।

দায়ান সোহার দিকে তাকায়,, মুখটা কেমন ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। এই তোমায় এমন দেখা যাচ্ছে কেনো।সকালেও তো এমন দেখা যায়নি।দুই হাতে মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,,জা’ন তুমি ঠিক আছো?

হু চিন্তা করবেন না।গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিন।দায়ান সম্মতি জানিয়ে সোহাকে নিয়ে রুমে চলে যায়। সোহাকে বিছানায় বসিয়ে তারাতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আসে।

আপনি বসেন আমি এখানেই আপনার খাবার নিয়ে আসছি।

একদম না তুমি চুপচাপ বসে থাকো আমি খাবার আনছি।আজ আমি নিজের হাতে তোমায় খাইয়ে দিবো।এতোদিন কাজের চাপে তোমার দিকে খেয়াল দিতে পারিনি।এজন্য শরীরের কি অবস্থা করেছো।কাল তোমায় নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাবো।তারপর দায়ান খাবার আনতে চলে যায়।

কিছু সময়ের মাঝেই খাবার নিয়ে রুমে আসে।সোহার পাশে বসে সোহার মুখে খাবার ধরে।

আমি খাবো না এখন আপনি খান।দায়ান চোখ রাঙিয়ে সোহার দিকে তাকায়। সোহা কোনো উপায় না পেয়ে মুখে নেয়।দুই লোকমা খেয়েই ভিতর থেকে সব উল্টে আসছে।দৌড়ে বাথরুমে ঢুকে,, বে’সিনের সামনে গিয়ে ব’মি করে দেয়।
দায়ান তারাতাড়ি গিয়ে সোহাকে আগলে ধরে। কি হয়েছে বলোতো?

সোহা ব’মি করে ক্লান্ত হয়ে দায়ানের উপর সব ভর ছেড়ে দেয়।দায়ান সোহার মুখটা মুছিয়ে দেয়। কি হয়েছে কলিজা তোমার শরীরতো অনেক খারাপ।তোমার শরীরেতো এক বিন্দুও শক্তি নেই। খুব খারাপ লাগছে জা’ন? সোহা দূর্বল শরীরে দায়ানের দিকে তাকিয়ে উপর নিচ মাথা নাড়ায় যে তার খারাপ লাগছে।দায়ান সোহার কপালে চুমু খেয়ে বলে চলো এখনই ডাক্তারের কাছে যাবো।

রুমে এসে সোহাকে বসিয়ে দিয়ে বলে,,তুমি একটু বসো।আমি খাবারের প্লেটটা রেখে এসেই তৈরি হয়ে নিচ্ছি।

দায়ান বেরিয়ে যেতেই সোহা উঠে দাঁড়ায় তৈরি হওয়ার জন্য। কিন্তু দুই কদম এগোতেই মাথা ঘুরে পরে যায়। ওখানেই জ্ঞান হারায়।

দায়ান রুমে এসে সোহাকে নিচে পরে থাকতে দেখে দৌড়ে সোহার কাছে যায়। হাঁটু গেড়ে বসে সোহার মাথাটা কোলে তুলে নেয়। জা’ন এই জা’ন কি হয়েছে? চোখ খুলো কলিজা।এইই এখানে পরলা কিভাবে।সোহার এই অবস্থা দেখে দায়ান কি করবে ভেবে পায় না।নোহা ও বাড়িতে নেই।

এই পা’গলি চোখ খোলো দেখো আমি ডাকছিতো।আর এক মুহূর্ত ও দেরি করে না দায়ান।তারাতাড়ি সোহাকে কোলে নিয়ে গাড়িতে করে হাসপাতালে ছোটে।সোহাকে ক্যাবিনে নেওয়া হয় চে’ক আপ করানোর জন্য। দায়ান বাইরে পাইচারি করছে।পরনে টাওজার আর টি-শার্ট। বাড়ির পোশাক পরেই এসে পরেছে।এসবের দিকে তার খেয়াল কই? এই দিকে তার জা’ন অসুস্থ হয়ে পরে আছে।

প্রায় অনেকসময় পর ডাক্তার ক্যাবিন থেকে বেরিয়ে আসে। দায়ান ছুটে ডাক্তারের কাছে যায়।ডক্টর আ-আমার ওয়াইফ? ওও ঠিক আছে তো, কিছু হয়নিতো?

রিলেক্স মি. শেখ।ভয়ের কিছু নেই কংগ্রে’চুলে’শন আপনি বাবা হতে চলেছেন। আপনার ওয়াইফ প্রেগন্যান্ট। আশ্চর্য উনি এতো সি’ম’টম দেখেও বুঝতে পারলেন না? সে যাই হোক মিষ্টি খাওয়াতে ভুলবেন না যেনো।আর আপনার ওয়াইফের ভালো করে খেয়াল রাখবেন।উনার শরীর অনেক উইক।বেশি বেশি খাওয়াবেন আর যত্ন নিবেন।বলেই ডাক্তার দায়ানের কাধে হাত চাপড়ে চলে যায়।

দায়ান আস্তে আস্তে করে ক্যাবিনের ভিতর ঢুকে।সোহা শুয়ে আছে।দায়ান গিয়ে দৌড়ে সোহাকে ঝাপটে ধরে। সোহা চোখ তুলে তাকায়। দায়ান সোহার সারা মুখে চুমুতে ভরিয়ে দিতে থাকে।তারপর গলায় মুখ গুঁজে জোরে জোরে নিশ্বাস নেয়। সোহা দায়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। কি হয়েছে? আমি ঠিক আছি তো।

আমি ঠিক নেই জা’ন আমি ঠিক নেই।আমি একদম ঠিক নেই।আমি এতো খুশি কই রাখবো জা’ন? আমারতো খুশিতে পা’গল পা’গল লাগছে নিজেকে।বলেই সোহার পেটের কাছে গিয়ে,,পেটে চুমু খেতে থাকে।

উফফ আমিতো ভাবতেই পারতেছিনা জা’ন আমি-আমি বাবা হবো।আমার পরিবারে কেউ আসতে চলেছে।

সোহা দায়ানের দিকে অবাক হয়ে তাকায়।

দায়ান চোখের ইশারায় বোঝায় যে সত্যি। সোহার চোখেও পানি চলে আসে।

দায়ান সোহার কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে বলে,,,,এতো সুখ সুখ লাগছে কেনোরে জা’ন সব কিছু?

#চলবে,,,,,,,,

❝ সবাই মিষ্টি মুখ করে যাও।❞

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here