#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো
#পর্বঃ৪০
#Jhorna_Islam
আমি আপনার সাথে ফিরে যাবো না দায়ান।আমি আর কখনোই আপনার সাথে ফিরবো না।আপনি একাই চলে যান।আমি আর আপনার সাথে থাকতে চাইনা।
দায়ানের বুকে ধক করে উঠে সোহার এসব কথা শুনে।কাঁপা কাঁপা হাতে সোহার দুই গাল ধরে বলে,,,তুমি আমার সাথে মজা করতেছো তাই না জা’ন?
সোহা দায়ানের হাত গুলো সরিয়ে দিয়ে বলে,,”একদম মজা না।আমি সত্যি বলছি।আমার পক্ষে আপনার সাথে থাকা আর সম্ভব নয়।
কি বলছো তুমি পা’গলি নিজে যানো?দেখো এসব আমার একদম ভালো লাগছেনা।এসব ব্যাপার নিয়ে ম’জা করতে আসবা না।
সোহা এবার কিছুটা চিল্লিয়ে বলে,,,আমি বলছিতো আমি কোনো ম’জা করছি না।আপনি প্লিজ চলে যান।
আমার দোষটা কি আমায় বলবা? আমি কি কোনো ভুল করেছি জা’ন? বলো আমায় আমি শুধরে নিবো।তাও একথা বলো না।আমি মরেই যাবো এবার।প্লিজ তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো নাতো কলিজা।বলেই টলমল চোখে সোহার পানে তাকায়।দায়ানের এখন চিৎকার করে কাঁদতে মন চাচ্ছে।
একা কখনো সংসার করা যায় না।আমি সব সময় চেয়েছিলাম আমার একটা ভ’রা সংসার হবে।শ্বশুর -শ্বাশুড়ি,, ননদ-দেবর নিয়ে।আর আপনিতো একা আপনার কেউ নেই। আর এসব ভালোবাসা দুই দিন পরই হারিয়ে যাবে।
এভাবে বলো না জা’ন।প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেওনা।প্লিজ আমি তোমায় অনেক সুখে রাখবো দেখো।প্লিজ যেওনা।
সোহা হঠাৎ করে ঘুমের মাঝে বিরবির করে কথা শুনে উঠে বসে।দায়ানের দিকে তাকিয়ে দেখে দায়ান বলছে, আমাকে ছেড়ে প্লিজ যেওনা সোহা। তুমি এবার চলে গেলে মরেই যাবো।প্লিজ জা’ন এমন করো না।দায়ানের পুরু শরীর ঘেমে গেছে। সোহা দায়ানের হাত ধরে হাত গুলো ঠান্ডা হয়ে আছে।
সোহা দায়ানকে ডাকতে থাকে,,এই কি হয়েছে আপনার ঠিক আছেন? এমন করতেছেন কেনো? আমি কেনো আপনাকে ছাড়বো? আর কোথায়ই বা যাবো।কোথায় যাবো নাতো।দায়ান এই,, কোনো সারা শব্দ না পেয়ে ধাক্কা দেয় দায়ানকে।
দায়ান চোখ তুলে তাকিয়ে তাড়াহুরো করে বসে পরে।হাঁপাচ্ছে এদিক ওদিক তাকিয়ে।
সোহা টেবিলের পাশ থেকে পানির গ্লাস নিয়ে দায়ানের সামনে ধরে।দায়ান গ্লাস টা হাতে নিয়েও রেখে দেয়।
সোহা নিজের ওড়না দিয়ে দায়ানের কপালের ঘা’ম মুছে দেয়। দায়ানের মুখটা সোহার দিকে ঘুরিয়ে জানতে চায়,,কি হয়েছে আপনার? শরীর ঠিক আছে?
দায়ান সোহার দিকে তাকিয়ে শক্ত করে নিজের বুকের ভিতর আগলে ধরে। এতোটাই শক্ত করে ধরেছে যে সোহা ব্যাথা পাচ্ছে। তাও কিছু বলল না। লোকটা হয়তো ভ’য় পেয়েছে। কি হয়েছে বলেন আমায়।খারাপ স্বপ্ন দেখেছেন?
দায়ান কাঁপা গলায় বলে,, জা’ন,,,আ-আমি।
সোহা দায়ানকে থামিয়ে দিয়ে বলে,, থাক বলতে হবে না।দুঃস্বপ্ন দেখেছেন তাই না? আমায় নিয়ে দেখেছেন যে আপনাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছি।
দায়ান সোহার গলায় মুখ ডুবিয়ে জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে থাকে কিছু বলে না।
আপনি দুপুরের ঘটনা সব শুনেছেন তাই না? আর ঐসব ভেবেই স্বপ্ন দেখেছেন।দায়ান মাথা নাড়ায়।
বিকেলে যখন সোহা পুকুর পাড়ে ঘুরতেছিলো,,তখন তার সামনে তাদের ই গ্রামের এক বড় ভাই এসে দাঁড়ায়।
সোহা সামনে তাকিয়ে বলে,, কি ব্যাপার রনি ভাই আপনি এখানে? আর আমার সামনে এসেই বা দাড়ালেন কেনো?
যাক আমায় ভুলনি দেখছি।মনে আছে আমার কথা।আমিতো তোমায় কতো ভালোবেসেছিলাম সোহা।
কিন্ত আমি বাসিনি।
কেনো? আমার মাঝে কিসের কমতি ছিলো?
আমার আপনাকে ভালো লাগে না। তারউপর আর কোনো কথা থাকতে পারে না।
হ্যা আমাকে ভালো লাগবে কেনো? ভালোতো লেগেছে ঐই বড়লোক এ’তিম ছেলেকে।সংসার জীবনে টাকা পয়সা ছাড়া আর কিইবা দিতে পারবে তোমাকে? শ্বশুর শ্বাশুড়ি পরিবারের ভালোবাসা তো পাইবা না।এখনো তুমি চাইলে চলে আসতে পারো।আমি তোমায় মেনে নেবো আমার কোনো সমস্যা নাই।
দায়ান সোহাকে খুঁজতে পুকুর পাড়েই এসেছিলো।এই কথাগুলো কর্ণ’গো’চর হতেই থমকে যায়।অসহ্য য’ন্ত্রনা শুরু হয় বুকে।
সোহা রনির কথা গুলো একদমই নিতে পারেনি ঠাস করে চ’ড় লাগিয়ে দেয়।খবরদার রনি ভাই মুখ সামলে কথা বলবা।যা বলেছো বলেছো দ্বিতীয় বার আর বলবানা।নয়তো তোমার জিহ্বা টেনে ছিড়ে ফেলবো।
দায়ানের মনে ঐকথা গুলো গেঁথে গিয়েছে তাই এসব স্বপ্ন দেখেছে।
সোহা দায়ানের মুখটা ঘাড় থেকে তুলে।এসব আপনি শুনেছেন বলেননি কেন আমায়? নিজের মনের ভিতর চেপে রেখে কষ্ট পাচ্ছিলেন।পা’গল আপনি? কিসের জন্য ভ’য় পাচ্ছিলেন হ্যা? কোথায় যাবো আপনাকে ছেড়ে আমি?
আপনাকে আমি ছাড়ছিনা ওকে? মরে গেলেও ভূত হয়ে আপনার ঘাড়ে চেপে বসে থাকবো।আমি কোথাও যাবো না আপনাকে ছেড়ে।সব সময় সুখে দুঃখে পাশে পাবেন।এতোই সহজ ছেড়ে যাওয়া? আপনি বললেও আপনাকে ছাড়বোনা।
“ভালোবাসিতো আমার এই বরটাকে”। মানুষ যা বলার বলুক।সবসময় মনে রাখবেন,,,,
“আমি আপনার পরিবার।আর আপনি আমার।আর কাউকে লাগবে না আমাদের।এসব ঠুনকো কারণে আপনাকে আমি ছাড়ছিনা জনাব।”
বলেই দায়ানের কপালে চুমু একে দেয়।
দায়ান ও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখে সোহাকে।
—————————————–
“যে রত্নকে সস্তায় পাওয়া গেল তারও আসল মূল্য যে বোঝে সেই জানব জহুরি।”
(রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
ওমিও নোহার মতো আসল হীরে চিনতে পারলো না।তাইতো হেলায় হারালো।কথায় আছে ” কু’কু’রের পেটে কখনো ঘি হ’জ’ম হয়না।তাই ওমির ও নোহার মতো ভালো মানুষ তার কপালে সহ্য হয় নি।
নোহার ও মন উঠে গেছে ওদের উপর থেকে। সিরিয়ালের নাইকাদের মতো আর ফিরে যাবে না সুযোগ ও দিবে না।অনেকতো হলো আর না।
ওমিদের কে’স টা কোর্টে উঠেছিলো।ওমির মা আর তমাকে জা’মিনে ছাড়াতে পারলেও ওমিকে পারে নি।ওমির ৪ বছরের জে’ল হয়েছে।কোর্ট থেকেই নোহা আর ওমির ডি’ভো’র্সের সকল ব্যবস্থা করেছে।এবং নি’র্বি’ঘ্নে সব কিছু হয়েছে।এসব কিছু দায়ান নিজে পাশে থেকে সামলেছে।ওমির মা ও তমা ভালো মতো শাস্তি না পাওয়ায় সবারই মনটা একটু খারাপ ছিলো।
নোহা সবাইকে বলে তোমরা মন খারাপ করো না।ওদের পাপের শাস্তি ওরা ঠিক পাবে। রিভেঞ্জ অফ নেচার বলে একটা কথা আছে না।আমার একটুও আফসোস নেই।কারণ এটা দিয়ে ওদের শাস্তি মাত্র শুরু হয়েছে।
নোহা মনে মনে প্রার্থনা করে,,ওমির মুখ যেনো এই জীবনে আর কোনোদিন ও দেখতে না হয়।
———————————–
প্রায় অনেকদিন হয়ে গেছে সোহা আর দায়ান সোহাদের বাড়িতে আছে।
ঐদিকে সব কিছু পরে আছে।রুশ একের পর এক কল দিচ্ছে। সবকিছু একা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে বে’চারা।কতো কতো মিটিং ঝুলিয়ে রেখেছে।
এখানে আর বেশিদিন থাকলে দায়ানের ব্যবসা লা’টে উঠবে।
তাই সিধান্ত নিয়েছে কালই সোহা আর দায়ান ফিরে যাবে।নোহা এখন সুস্থ আছে।
সকাল থেকেই সোহার মনটা খারাপ হয়ে আছে। কান্না পাচ্ছে। এতোদিন থেকেছে সবার সাথে।মুক্ত পাখির মতো উড়েছে।আবার সেই বন্দী জীবন।তাও একটা কথা ছিলো দায়ান সাথে থাকলে।কিন্তু উনিতো পরে থাকে অফিসে।এক সকালে বের হয় রাতে আসে।কাজের চাপ না থাকলে মাঝে মাঝে দুপুরে এসে এক সাথে খায়।আর সারাক্ষণ একা ঘরে বন্দী পাখি।
সোহা আরো কিছুদিন এখানে থেকে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু দায়ান দিচ্ছে না।
তার এক কথা অনেকদিন এখানে থেকেছো আর না।তোমার ভার্সিটি আছে।আমার অফিস আছে।এখন আর থাকা যাবে না।পরের বার আবার এসে অনেকদিন থাকবো।আমি তোমায় নিয়ে আসবো।
অনেকবার বলার পরও যখন দায়ান রাজি হলো না।তখন সোহা মুখ কালো করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। দায়ান কথা বলতে আসলে উত্তর দেয় না। এড়িয়ে চলে যায়। কথাই বলবে না লোকটার সাথে হুহ।আর কয়টা দিন থাকতে দিলে কি এমন হতো?
লোকটা যা বলে তাই করবেই করবে।কোনো দাম নাই সোহার কথায়।
রাতে খাবার খাওয়ার সময় দায়ানের পাশে বসে খায়নি সোহা।চুপচাপ অন্য পাশে বসে খেয়ে উঠে চলে গেছে।দায়ান শুধু তাকিয়ে সোহার কর্ম’কান্ড দেখছে।
সোহা রুমে এসে বিছানায় অন্য পাশ ফিরে শুয়ে থাকে।দায়ান যখন রুমে এসে ঢুকে, সোহা ঘুমানোর ভা’ন করে চুপ হয়ে থাকে।
দায়ান সোহার দিকে তাকিয়ে বলে,, আমি জানি তুমি ঘুমোও নি।সো এদিকে ফিরো।
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
এদিকে ফিরতে বলছি আমি সোহা।তুমি শুনতে পারছো না?
তাও সোহা কোনো কথা বলছেনা।দায়ান এবার সোহাকে নিজের কাছে টেনে আনে।ইসসস রে আমার জা’ন আমার উপর এতো অভিমান করেছে? আমার কাছে আসছে না।আমার দিকে তাকাচ্ছে না।বলেই সোহাকে নিজের বুকের উপর উঠিয়ে নেয়।এতো অভিমান করতে হবে নাতো জা’ন। আমরা আবার আসবো বলছিনা? তুমি এখানে থাকলে আমি কি করে থাকবো বলোতো? আমার মন এখানেই পরে থাকবে।একটুও কাজে মন দিতে পারবো না।খাওয়া দাওয়া তো সব বাদ ই দিলাম।পরে কিছুদিন পরে গিয়ে দেখবা আমিই নাই হয়ে গেছি।মরে গেছি।
সোহা তারাতাড়ি করে দায়ানের মুখে হাত দেয়।কপট রাগ দেখিয়ে বলে,,, এসব বললে কিন্তু খবর আছে।আর একদিন ও যেনো এসব কথা না শুনি।ঠিক আছে যাবো আমি।
বলেই দায়ানের বুকে চুমু খায়। দায়ান সোহাকে ঘুরিয়ে নিচে ফেলে সোহার উপর উঠে জড়িয়ে ধরে। এইই উঠেন আল্লাহ আমি ভর্তা হয়ে যাবো।
হয়ে যাও।
—————————————–
ভোর সকালেই সোহা ঘুম থেকে উঠে পরে।দায়ান এখনো ঘুমুচ্ছে।
নোহা আর সোহা বেরিয়ে পরে একটু দুই বোন একা সময় কাটানোর জন্য। গ্রামের আকা বাঁকা মেঠো পথে হেটে চলেছে। আবার কবে দুই বোনের দেখা হবে কে জানে।তাই কথার ঝুড়ি খুলে বসেছে।অবশ্য সোহাই বেশি বকবক করে চলেছে।নোহা বোনের কথায় উত্তর দিয়ে চলেছে।তার বোনটার স্বভাব একটুও বদলায়নি।সেই আগের মতো চঞ্চলই আছে।
দুই বোন যখন হেঁটে চলেছে মনের সুখে। তখনই গ্রামের কিছু লোক নোহার দিকে কেমন করে যেনো তাকাচ্ছে। নোহা তা বুঝতে পারছে।তাই সোহাকে তাড়া দিয়ে বলে বোন অনেক হয়েছে এবার বাড়ি চল।তর উনি হয়তো উঠে তোকে খুঁজছে। আবার বেরোতেও তো হবে।পরে আবার দেরি হয়ে যাবে।দুই বোন আর কথা না বাড়িয়ে বাড়ির পথে হাঁটা দেয়। তখনই কানে আসে কিছু কথা।
দেখ দেখ নিজের সংসার ভেঙে কিভাবে আনন্দে ঘুরে বেরাচেছ যেনো কিছুই হয় নি।আরে না হয় মানলাম স্বামী একটু মেরেছে।তাই বলে পুলিশে দিবি? নিজের সংসার ভেঙে ফেলবি? কেমন নি’র্ল’জ্জের মতো আবার ঘুড়ে বেড়ায়।আমরা হলেতো বাড়ি থেকে বেরই হতাম না।
সোহা কথাগুলো শুনে এগিয়ে যেতে চায় জবাব দেওয়ার জন্য। কিন্ত নোহা আঁটকে দেয়। বোন মাথা ঠান্ডা কর। এসবে কান দিস না।ওদের কাজই হলো মানুষের নামে আজে বা’জে কথা বলা।চুপচাপ বাড়ি চল।এসব আমার গায়ে লাগেনি।
কিন্তু আপু,,,,,
কোনো কিন্তু না বাড়িতে চল। বলেই সোহাকে নিয়ে বাড়িতে চলে আসে।
বাড়িতে দায়ান আর সোহার বাবা বসে গল্প করতে ছিলো।সোহার মা তাদের চা নাস্তা দিচ্ছে। সোহা রাগে হনহন করতে করতে ওদের পাশে গিয়ে বসে। বাবা তোমরা সবাই রেডি হও।আমার সাথে তোমরা ও চলে যাবে।এখানে থাকতে হবে না।সবাইকে নিয়ে চলে যাবো।
কি বলো ছোট আম্মা এগুলা? আমরা কোথায় যাবো? আর কি হয়েছে?
গ্রামের লোক আপুর নামে নানান কথা বলছে।আমি চাই না আপুকে কেউ ছোটো করুক।তাই তোমরা ও আমাদের সাথে যাবে।
— আমরাতো আমাদের ভি’টে মাটি ছেড়ে যেতে পারবো না ছোট আম্মা।
— তাহলে আপুকে আমাদের সাথে যেতে বলো।
–পাশ থেকে নোহা বলে,,পা’গল হয়ে গেছিস সোহা এসব কি বলছিস?
— আমি ঠিকই বলছি।তুমিও যাবা।নয়তো আমি যাবো না।দায়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,, আপনি একটু আপুকে বোঝান না।প্লিজ।
হ্যা নোহা চলো আমাদের সাথে।আমিতো সারাদিন বাড়িতে থাকতেই পারি না।দুই বোন এক সাথে থাকবে ভালো লাগবে।না করো না ভাইয়ের কথাটা রাখো।নয়তো তোমার বোনকে তো চিনো।যাবেনা তোমায় ছেড়ে।সোহার বাবার দিকে তাকিয়ে বাবা আপনি পার্মিশন দিন না যাওয়ার।
সোহার বাবা অনেক ভেবে চিন্তে রাজি হয়।মেয়েটা এখানে থাকলে লোকের কথায় বাঁচতে পারবেনা।তার থেকে শহরে চলে যাওয়াই ভালো।হ্যা নোহা মা সোহা আর ছোটো আব্বা যখন বলছে তখন যাও ঘুরে আসো।
বাবা তুমিও? হাহ ঠিক আছে যাবো।
সোহার খুশি দেখে কে? আনন্দে লাফিয়ে উঠে। দায়ানের দিকে তাকায়,, দায়ান বসা থেকে উঠে মুচকি হেসে সোহার মাথায় টোকা দেয়।রুমে যেতে যেতে বলে,,তারাতাড়ি তৈরি হয়ে নাও। ড্রাইভার আংকেল গাড়ি নিয়ে আসলো বলে।
তারপর সবাই খাওয়া দাওয়া করে সবার থেকে বিদায় নিয়ে শহরের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
নতুন শহরেই হয়তো নোহার জীবনটা নতুন ভাবে শুরু হবে।শুধু সময়ের অপেক্ষা।
#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো
#পর্বঃ৪১
#Jhorna_Islam
শহরে এসে দায়ানের আবার যান্ত্রিক জীবন শুরু।ব্যস্তময় মুহূর্ত কাটছে।এতোদিনের ফেলে রাখা কাজ সব এখন করতে হচ্ছে। খাবার সময়টা ও পাচ্ছে না। সেই সকাল আটটায় বের হয়।আসতে আসতে রাত এগারোটা বারোটা বেজে যায়।
সোহা আর নোহার দিন ভালোই কাটছে।সারাদিন দুই বোন গল্প করতে থাকে। এটা ওটা নিয়ে আলোচনায় মেতে থাকে।সোহার সব দুষ্টুমি এখন বোনের সাথে। যেহেতু দায়ান কে এখন খুব একটা কাছে পায় না,তাই সব দুষ্টুমি বোনের সাথেই করে।সারাদিন কাজ করে ক্লান্ত হয়ে যখন বেচারা বাসায় ফিরে। তখন মুখ দেখেই সোহার খুব মায়া হয়।তাই আর নিজ থেকেই জ্বালায় না।
বিকেল হলে দুই বোন বাগানে চলে যায়। সোহার বাগানে এখন ফুলে ফুলে ভরে গেছে।কি সুন্দর লাগে দেখতে।বিকেলের সময়টা দুই বোন বাগানের গাছে পানি দিয়ে গল্প করতে থাকে। সে কতো শতো গল্প,, ছোটে বেলা কি করেছে না করেছে সব।রাতে বসে এক সাথে টিভি দেখা। সব মিলিয়ে দিন চলে যাচ্ছে।
নোহার মাঝে মাঝে নিজের অতীতের স্মৃতি চোখের সামনে ভাসে।যতোই হোক এতোদিন থেকেছে।একটা টানতো থাকবেই।তাও নোহা নিজের মন কে বোঝ দেয়।পাত্তা দেয় না বেশি।এড়িয়ে যায়।হয়তো একদিন এসব কালো অতীত থেকে বের হতে পারবে।
আজ শুক্রবার বিধায় অফিস বন্ধ। দায়ানের ও আজ কাজের চাপ নেই তাই বাড়িতেই আছে।
সকাল দশটা বাজে,দায়ান এখনো ঘুমুচ্ছে।কালও দেরি করে বাসায় আসছে।তাই সোহা আর ডাকেনি।ঘুমুচেছ যখন ঘুমুক।কয়দিন অনেক ধকল গেছে বেচারার উপর দিয়ে।
সোহা আর নোহা রান্না ঘরে রান্নায় ব্যস্ত। আজ অনেক কিছু রান্না করছে।অবশ্য সব নোহাই করছে।সোহা কে কিছু করতে দিচ্ছে না। বলে দিয়েছে তুই পাশে দাড়িয়ে থাক আমি করে দিচ্ছি। তাই সোহা চুপচাপ বসে বসে বোনের রান্না দেখছে।
রুশকে আজ বাসায় দাওয়াত দিয়েছে।সেই যে বাড়িতে দেখা হয়েছিলো আর হয়নি।তাই সোহাই ফোন করে বলে দিয়েছে আসার জন্য। সবাই এক সাথে খেয়ে গল্প করা যাবে।অবশ্য সোহার আরেকটা প্লেন আছে।দায়ান ও যখন বাড়িতে আছে,তাই ভেবে রেখেছে বিকেলে একটু ঘুরতে যাবে সবাই মিলে।তাহলে বোনের ও মনটা ভালো হয়ে যাবে।
সোহার ও শহরে এসে তেমন কোথাও ঘোরা হয়নি।নোহা ও আসার পর থেকে বাড়িতেই আছে।সো সবাই মিলে বাইরে একটু ঘুরাঘুরি করবে।আর বিকেলে খাওয়া দাওয়া করবে।
নোহা মনোযোগ দিয়ে রান্না করছে।সকলের জন্যই সকলের প্রিয় খাবার এক আইটেম করে তৈরি করছে। দায়ানের জন্য দায়ানের প্রিয় তরকারি রান্না করছে প্রথমে নোহা। তরকারি তে যখন মরিচ গুঁড়ো দিতে যাবে তখন সোহা লাফ দিয়ে বলে উঠে,, আপুওওও বেশি দিও না। নোহা ব্রু কোচকে বলে কেনো? তুইনা ঝাল খেতে ওস্তাদ তাহলে বেশি দিতে মানা করছিস কেনো? নোহা অবশ্য জানে না কার প্রিয় খাবার কোনটা।সোহা বলেনি,,সোহা শুধু খাবারের আইটেম গুলোর নাম জানিয়েছে,,এই খাবার গুলো রান্না হবে।
আসলে হয়েছে কি আপু,,,এটাতো আমার জন্য না।না মানে আসলে উনার জন্য। উনি ঝাল খেতে পারে না।তারপর আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে বলে,,এই খাবার গুলোতে ঝাল দিও না।এগুলো রুশ ভাইয়া আর উনার প্রিয় খাবার। আর দুইটার একটা ও ঝাল খেতে পারে না।বলেই মুচকি হাসে।
আহারে ঝাল খেতে পারে না তোমার উনিইই? কিছুটা টেনেই বলে নোহা।
এরই মাঝে দায়ানের ডাক পরে,,সোহাকে চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে ডাকছে।
নোহা মুচকি হেসে সোহার গাল টেনে বলে,,যাও তোমার উনিইইই ডাকছে।যাও যাও।
সোহা রুমে যেতে যেতে বলে,, লোকটাও আর সময় পেলোনা আমাকে ডাকার? সব সময় আমায় লজ্জায় ফেলে দেয়। কে বলেছিলো এভাবে ডাকতে।
সোহা রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলে,,কি হয়েছে কি এমন ষাঁড়ের মতো চিৎকার করছেন কেনো?
— দায়ান শোয়া থেকে উঠে বসতে বসতে বলে,,হোয়াট! আমি ষাঁড়ের মতো চিৎকার করছি?
— তা নয়তো কি? আশ্চর্য আমার সম্মানের দফা রফা করে দেন।
— আমি আবার কি করলাম?
— কি করেন নি তাই বলেন।এমন ভাবে ডাক দেওয়ার কি আছে? আপুর সামনে আমায় লজ্জায় ফেলে দিলেন।কি ভাবছে আপু বলুনতো?
— কিছুই ভাবছে না তোমার আপু।তোমার মতো গা’ধী না নোহা।
— সোহা এবার কোমড়ে হাত দিয়ে বলে,,এই আপনি কি বললেন আমি গা’ধী? আপনি গা’ধী।থুড়ি গা’ধা।আপনার বউ গা’ধী।বলেই জিহবায় কামড় বসায়।ধুর আপনার বউ তো আমি।গা’ল’তিছে মিসটেক হয়ে গেছে। আপনার বউ গা’ধী এই কথাটা আমি উঠিয়ে নিলাম।।
দায়ান হাসতে হাসতে বলে,,না না উঠাতে হবে না।তুমি একদম ঠিক ধরেছো।আমার বউ আসলেই একটা আস্ত গা’ধী।তানাহলে নিজের বর ডাকলে কেউ লজ্জা পায়।
এই চুপ করেন আপনার সাথে এখন ঝগড়া করার একদম মুড নেই।কি জন্য ডেকেছেন বলুন।নয়তো গেলাম আমি।
আরে কই যাও আমার কফি নিয়ে আসো।
সোহা মুখ ভেংচি দিয়ে চলে যেতে যেতে বলে আনছি।
দায়ান ও মুচকি হেসে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ায়।আর মনে মনে বলে পা’গলি আমার।
——————————————
নোহার রান্না বান্না শেষ। সব কিছু গুছিয়ে রাখার পালা এবার। সোহা দায়ানের জন্য কফি বানাচ্ছে। নোহাই দিয়েছে বানানোর জন্য। নোহা চায় দায়ানের সম্পর্কটা সোহার সাথে সব সময় সুন্দর গভীর ও ভালো থাকুক।
এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠে,,, সোহা কফি বানাতে বানাতে বোনের দিকে একবার আবার দরজার দিকে একবার তাকায়।
আপু তুমি একটু দেখোনা।দরজাটা একটু খোল প্লিজ। হয়তো রুশ ভাইয়া এসেছে।আমিতো কফি বানাচ্ছি।
আ-আমি?
তুই ই যা বোন।
কিছু হবে না।যাও উনার কফি দিতে দেরি হলে আবার রেগে যাবে।তুমি একটু দরজাটা খুলে দাও।আমি রুশ ভাইয়ার জন্য ও কফি নিয়ে নিচ্ছি।
নোহা ধীরে ধীরে হেটে দরজার কাছে যেতে থাকে।।খুবই অস্বস্তি হচ্ছে তার। লোকটার সাথে শুধু একবার দেখা হয়েছিলো।কথাও হয়নি।।এসব ভাবনা ভাবতে ভাবতেই দরজার পাশে এসে আস্তে আস্তে দরজা খুলে দিলো।দরজার ঐ পাশে রুশ দাঁড়িয়ে আছে।
নোহা রুশের দিকে একবার তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নেয়। রুশ ভেবে ছিলো সোহা এসে দরজা খুলবে।কিন্তু নোহাকে দরজা খুলতে দেখে মনে মনে বেশ অবাক হয়ে যায়। নোহার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।রুশের এমন করে তাকাতে দেখে নোহার অস্বস্তির পরিমান বারতে থাকে।দরজার পাশ থেকে সরে দাঁড়িয়ে ভিতরে আসুন বলেই তারাতাড়ি চলে যায়। রুশ নোহার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রয় কিছু সময়।তারপর নিজেও ভিতরে ঢুকে পরে।
সোহা কফি বানিয়ে রান্না ঘর থেকে বের হয়ে দেখে রুশ সোফায় বসছে।সোহা হাসি মুখে জিজ্ঞেস করে কেমন আছো রুশ ভাইয়া?
এইতো বোন ভালো আছি তুই কেমন আছিস?
আমিও খুব ভালো আছি।
সোহার কফি নিয়ে যেতে লে’ট হচ্ছে বলে, দায়ান রুম থেকে বেরিয়ে আসে। এসে দেখে তার বউ রুশের সাথে কথায় বিজি।তা ম্যাডাম কফি কি ঠান্ডা করে শরবত বানিয়ে খাওয়াবেন ভাবছেন?
সোহার এতক্ষনে মনে হয় কফির কথা।তাই তারাতাড়ি দায়ান আর রুশের হাতে কফি এগিয়ে দেয়।
রুশ একটা প্যাকেট হাত থেকে সোহার দিকে এগিয়ে দেয়।সোহা প্যাকেট টা হাতে নিতে নিতে বলে,, কি আছে এতে রুশ ভাইয়া?
খুলে দেখ।
সোহা প্যাকেট টা খুলে দেখে,,,,,পুরি- সিঙারা আছে অনেক গুলো।ওয়াও এতোগুলা পুরি-সিঙারা? এগুলাতো আপুর অনেক ফেভারিট। তুমি কি করে জানলে আমার আপু এগুলো খেতে ভালোবাসে?
সবাই ভূত দেখার মতো সোহার দিকে তাকায়। নোহার তো বোনের কথায় স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রুশের খালি মুখে বিষম খাওয়ার জোগার।অনেক কষ্টে নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে,, বোন আমিতো আসার টাইমে দোকান টা সামনে পেলাম,তাই ভাবলাম নিয়ে যাই।অন্য কিছু ভেবে আনিনি,মিনমিনিয়ে বলে।
সোহা নিজের মাথায় নিজেই থাপ্পড় দিয়ে বলে,, উফফ আমি যে কি বলিনা।তুমি কি করে জানবে আপুর পছন্দ। আসলে এসবতো আপু খেতে অনেক লাইক করে।তাই দেখে কি বলতে কি বলে ফেলেছি।তুমি কিছু মনে করো না।
তারপর সোহা ঐগুলা নিয়ে রান্না ঘরের দিকে চলে যায়। দুই বোন মিলে খাবার সাজাতে থাকে টেবিলে। রুশ ও দায়ান টুকটাক কথা বলতে থাকে।
খাবার টেবিলে সাজানো শেষ হলে,, সোহা রুশ আর দায়ানকে ডাকে।রুশ ও দায়ান দু জন এসে টেবিলে বসে।দায়ান নোহাকে আর সোহাকে বলে তোমরা ও বসো।সবাই এক সাথে খাই। আমরা আমাদেরটা নিয়ে খেতে পারবো।সোহা মাথা নাড়িয়ে দায়ানের পাশে বসে পরে।বোনকেও ইশারা করে বসার জন্য। আর দুইটা চেয়ারই বসার জন্য বাকি আছে।একটা রুশের পাশে আরেকটা সামনে।নোহা কি করবে বুঝে পায়না।ইতস্তত করতে থাকে। সোহা ও এদিক দিয়ে জোর করতে থাকে বসার জন্য। তাই কোনো উপায় না পেয়ে সামনের চেয়ারে বসে পরে।
রুশ খাবার খেতে খেতে বলে ওয়াও আমার পছন্দের খাবার? উফফ বোন তুই দিন দিন আরো ভালো রান্না করছিস।খাবার এতো সুস্বাদু হয়েছে না কি বলবো।আমিতো এমন খাবার হলে সারাজীবন বসে বসে খাইতাম।দায়ান ভাই বউ পেয়েছিস একটা।আমার বউ এমন ভালো রান্না করলে,,সারাদিন বসে বসে তার হাতে চুমু খেতাম।
রুশ খাবারের স্বাদ পেয়ে কি বলছে নিজেই জানে না। সবাই অবাক হয়ে রুশের দিকে তাকিয়ে আছে।
সোহা এবার বলে,,কিন্তু এগুলোতো আমি রান্না করিনি। আপু করেছে।
রুশ সোহার কথা শুনে বিষম খায়।কাশতে থাকে অনবরত।নোহা পানির গ্লাসটা এগিয়ে দেয়।রুশ নোহার দিকে তাকিয়ে একটু হাসার চেষ্টা করে তারাতাড়ি পানি ঢক ঢক করে গিলতে থাকে।
তারপর আর কথা বাড়ায় নি।চুপ চাপ খাবার শেষ করে।
————————————————-
খাওয়া শেষ করে সকলেই কিছু সময় বিশ্রাম নিতে চলে যায়। নোহা এখন সোহা আগে যেই রুমে থাকতো সেখানে থাকে।তাই ঐরুমে ঢুকে যায় বিশ্রাম নেওয়ার জন্য।
রুশ গেস্ট রুমে চলে যায় রেস্ট নিতে।
সোহা দায়ানের মাথায় বসে বসে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আর দায়ান সোহার কোলে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে আছে।
শুনো সোহা,তুমি কিন্তু আমার পাশে বসবে গাড়িতে। বুঝতে পেরেছো?
কিন্ত?
কোনো কিন্তু না।আমি যা বলছি তাই হবে।নয়তো আমার কথা না শুনলে ম’জা রাতে বুঝাবো। ঐ দিনের শাস্তির কথা মনে আছে নিশ্চয়ই। বলেই,,সোহার পেটে আস্তে করে জামার উপর দিয়েই কাম’ড় মেরে উঠে দাঁড়ায়। তারাতাড়ি তৈরি হও।
উফফ বা’জে লোক একটা।সব সময় জ্বালায় দূর।
বলেই তৈরি হতে যায়।
—————————————–
গাড়ির কাছে এসে দায়ান ড্রাইভিং সিটে বসে পরে।রুশ এখনো গাড়ির পাশে আসে নাই। সোহা দায়ানের পাশে বসতে যাবে,,এমন সময় নোহা সোহার হাত ধরে বলে,,তুই আমার সাথে পিছনে বস।সোহা পরেছে এবার মা’ই’ন’কা চি’পা’য়।দায়ানের দিকে তাকিয়ে দেখে দায়ান সোহার দিকেই তাকিয়ে আছে।
আপু বলছি কি তুই পিছনে বস না।আমি সামনে বসি? না মানে উনার সাথে কথা ছিলো কিছু।
নোহা বোনের দিকে তাকিয়ে ভাবলো থাক,তার বোনটা হয়তো দায়ানের সাথে সময় কাটাতে চায়।বসুক নোহার জন্য না আবার ওদের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। তাই বলল,,ঠিক আছে সমস্যা নাই বস।তারপর নোহা পিছনের সিটে বসে পরলো।
কিছুসময় পর রুশ ও আসে গাড়িতে উঠতে। সামনে তাকিয়ে দেখে সোহা দায়ানের পাশে বসেছে।তাই কথা না বাড়িয়ে পিছনের ডোর খোলে বসতে বসতে নোহার দিকে তাকায়। নোহা রুশের দিকে তাকিয়ে জানালার পাশ ঘেঁষে বসে। রুশ ও চুপচাপ বসে পরে।
দায়ান গাড়ি চালাতে চালাতে সোহার একটা হাত টেনে নিয়ে চুমু বসায়।সোহা অবাক হয়ে দায়ানের দিকে একবার পিছনের দিকে একবার তাকায়। পিছনে তাকিয়ে দেখে নোহা বাইরে তাকিয়ে আছে। রুশ ফোন টিপছে।এবার দায়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,, আপনিতো বে’শ লু/চু।এই জন্যই আমায় সামনে বসতে বলেছেন তাই না?
দায়ান সোহার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ মেরে বলে,,সেটা তোমার মোটা মাথায় এতোক্ষনে ঢুকলো?
সোহা দায়ানের দিকে চোখ কটমট করে তাকায় কিছু বলে না।
———–
প্রায় আধা ঘণ্টা পর দায়ান একটা পার্কের কাছে এসে গাড়ি থামায়।তারপর গাড়ি থেকে নেমে সবাই মিলে এদিক ওদিক ঘুরতে থাকে।সোহা তো প্রায় লাফালাফি শুরু করে দিয়েছে।
হঠাৎ করেই সোহা হাওয়াই মিঠাই দেখে।খুশিতে চকচক করে উঠে চোখ জোরা। দায়ানের হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যায় কিনে দেওয়ার জন্য।
নোহা আর ওদের সাথে আগায় নি।ঐখানেই দাড়িয়ে রয়।
ঠিক তখনই পাশে এসে রুশ দাঁড়ায়। নোহা একবার রুশের দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নেয়।
রুশ গলা খেঁকারি দিয়ে বলে,,কেমন আছেন?
–নোহা ইতস্তত করে বলে জ্বি আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি?
— এইতো চলে যাচ্ছে কোনো রকম।
‘,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,নোহা আর কিছু বলছেনা দেখে রুশই বলে,,
আমার জীবনে কাউকে এতোটা প্রতিবাদী হতে দেখিনি।আপনিই প্রথম। সত্যি বলতে প্রতিটা নারীরই উচিত সব মুখ বুঁজে সহ্য না করে,অন্যায়ের প্রতিবাদ করা।সবাই কিন্তু এতোটা সাহস করে না।ব’দ’না’ম নিজের ক্ষতির ভয়ে।আপনি সত্যিই সবার থেকে আলাদা।দেরিতে হলেও আপনি যে একটা খুব ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তার জন্য আপনার প্রতি আলাদা একটা শ্রদ্ধাবোধ কাজ করছে।
“ধন্যবাদ আপনাকে।”
এরপর ভবিষ্যতে কি করবেন ভাবছেন?
এখনো কিছুই ভাবিনি দেখি ভাগ্য কোথায় নিয়ে যায়।
সোহা একেরপর এক হাওয়াই মিঠাই নিয়ে চলেছে।দায়ান ও কম না বলে দিয়েছে কিনো ঠিক আছে। কিন্তু তুমি একটার বেশি খেতে পারবে না।পার্কে থাকা বাচ্চাদের দিয়ে দিবে।সোহা বলেছে ঠিক আছে আমি দুইটা রাখবো।
রুশ দায়ান আর সোহার দিকে তাকিয়ে বলে,, ওদের খুব সুন্দর মানিয়েছে তাই না।কি সুন্দর লাগছে এক সাথে দেখতে।
নোহা ও রুশের কথা মতো সামনে তাকিয়ে বলে,, হ্যা খুব সুন্দর লাগছে।
গম্ভীর, রা’গী ছেলে ভার্সেস চঞ্চল, দুষ্টু মেয়ে।বলেই রুশ নোহার দিকে তাকায়।
রুশের কথা শুনে নোহা মুচকি হাসে
#চলবে,,,,,,,,,,,
#চলবে,,,,,,,