#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো_২
#পর্বঃ২১
#Jhorna_Islam
পরীক্ষার ঝামেলা শেষ এখন মুক্ত পাখির মতো উড়ে বেড়াচ্ছে সোহা আর পেরা নাই শুধু চি’ল আর চি’ল.।
এক্সাম মানেই মাথায় বিশালাকার একটা টেনশন। কয়েক দিনের জন্য সেই টেনশন থেকে মুক্তি পেলো সোহা।
আর এখন সব ভুলে হাসি আনন্দে সেই সময় টা কাজে লাগাচ্ছে সে। পরীক্ষা দিয়ে আসার পর যখন জিজ্ঞেস করা হলো তাকে কেমন দিয়েছে সে?
এক উত্তরে বলে দিয়েছে জানে না।
সকলেই তখন জিজ্ঞেস করলো এটা আবার কেমন কথা?
তখন যুক্তি দিলো,,,দেখো আমি যদি বলি ভালো হয়নি।পরে যদি রেজাল্ট ভালো আসে।তোমরা কি বলবে যে আমি মিথ্যা বলেছি।আসলেই তো সেটা মিথ্যা বলাই হবে।।
আবার ধরো বললাম ভালো হয়েছে কিন্তু রেজাল্ট খারাপ আসলো।তখন সকলে বলবে যে আমি খারাপ করেও ভাব নিতে বলেছি ভালো হয়েছে। এতেও আমি মিথ্যাবাদি প্রমানিত হবো।
সো কেউ আমায় এখন রেজাল্টের কথা জিজ্ঞেস করে লজ্জা দিবা না।বের হলে জানতেই পারবা।
সোহার যুক্তি শুনে সকলেই বোকা বনে গেলো।কি আর করার কেউ আর কিছু জিগ্যেস করেনি।
সোহার বাবা মা বলেছে খুব শি’ঘ্রই আসছে তারা।সোহাতো জানে না কি উদ্দেশ্যে আসছে।
————————————
“ জীবনের মুক্ততার পর একটু বন্ধন আমরা সবাই মেনে নেই। একজন ইংরেজ কবি লিখেছেন যে বিয়ের বাক্যটি আকাঙ্ক্ষার সমুদ্রের মধ্যে একটি দ্বীপের মত। দ্বীপে দ্বীপে ঢেউয়ের ধাক্কা লাগে, শরীর কেঁপে ওঠে অন্ধকারে ভাসমান নৌকার মত। একটি নতুন সময়ের লীলায় জীবনে পরিবর্তন আসে। ”
বিয়ে কথাটা হালকা ভাবে সহজে বলা গেলেও এর অর্থ প্রচন্ড ভা’রি। এইযে তিন অক্ষরের শব্দ উচ্চারণ করে আমরা নিজেকে অন্যর সাথে সারাজীবনের জন্য জড়িয়ে নেই।এক সুতোয় বেঁধে ফেলি একে অপরকে।এই বন্ধনে অপর পাশের মানুষটার সাথে সারাজীবনের জন্য আঁটকে যাই।সু্খ দুঃখের সাথী হয়ে যাই।একটা মানুষ সারাজীবনের জন্য নিজের নামে আবদ্ধ হয়ে যায়।
এই যে এখন সোহা আহাম্মকের মতো তাকিয়ে আছে দায়ানের দিকে। ভালোবাসার কথা হলো না।প্রকাশ করা হলো না।কিছুই হলো না।এসব কিছু না হওয়ার আগেই কিনা এতো কিছু হয়ে গেলো।কতো স্বপ্ন দেখে রেখেছে ভালোবাসার মানুষ টা তাকে ফিল্মি স্টাইলে প্রপোজ করবে।
সব আশায় শেষে কিনা তার পরিবার আর দায়ানের পরিবার জল ঢেলে দিলো।এখন যে তার কান্না পাচ্ছে। প্রচুর কান্না।
দুই কারণ মিলিয়ে এখন তার গড়াগড়ি খেয়ে কান্না করতে ইচ্ছে করছে।
এক ভালোবাসার মানুষ টা কে সারাজীবনের জন্য নিজের নামে করে নেওয়ার এক ধাপ এগিয়ে গেছে। কিছু সময় আগেই পরিবারের সকলের উপস্থিতিতে “দায়ান ও সোহার আ’ক’দ সম্পন্ন হয়।
এসবের কোনো মানে হয়? একেবারে উঠ ছে’রি তোর বিয়া।
আজকে সোহা সারাদিন শুধু অবাকের উপর অবাক হয়ে চলেছে।
এই যে সকালে ঘুম থেকে উঠে জানতে পারলো আজ তার বাবা মা আসছে।কি যে খুশি লাগতেছিলো কতোদিন পরে দেখবে বলে। তারপর আবার কিছু টা মন খারাপ হয়ে গেছে এটা ভেবে সোহাকে তো উনারা নিতেই আসবে।দায়ান কে ছেড়ে থাকতে হবে।
এগারোটা না’গাদ সোহার বাবা মা এখানে এসে পৌছায়। তখনো সোহা জানতোনা তাদের বাবা মায়ের এখানে আসার আসল উদ্দেশ্য।
দুই পরিবারের সকলে মিলে যে তার জীবনের মোর ঘুরিয়ে দিবে।
হঠাৎ করেই সন্ধায় নোহা এসে সোহাকে নিয়ে সোহার রুমে চলে যায়। তারপর সোহার বিছানার পাশে রাখা একটা শপিং ব্যাগ হাতে তুলে নেয়।মনে হয় সোহাকে আনার আগে রেখে গেছে।
সোহা চুপচাপ বোনের কাজ দেখছে।কি করতে চাচ্ছে তাকে?
নোহা ব্যাগ থেকে সুন্দর একটা নীল রং এর শাড়ি বের করে। আর সাথে শাড়ির সাথে পড়ার সকল জিনিস। সোহা হা করে শাড়ির দিকে তাকিয়ে আছে।
ওয়াও আপু এটা কি সুন্দর।
— হুম পছন্দের মানুষ এনেছে তো তাই একটু বেশিই সুন্দর।
— রুশ ভাইয়া এনেছে তোমার জন্য? তারপর খাটের উপর গিয়ে পা তুলে আরাম করে বসে।
দেখেছো রুশ ভাইয়া তোমার জন্য কি সুন্দর শাড়ি এনেছে। আর আমি যে তার একটা শা/লি আছি সে ভুলেই গেছে। আমার জন্য কিছুই আনলো না।
তুমি কি কোথাও যাবা এটা পরে? আসো তোমায় সাজিয়ে দেই। আমাকেও এক দিন শাড়িটা দিও। পরে ছবি তুলবো।তারপর এফবিতে পিক আপলোড দিবো।কতোদিন হয়ে গেলো প্রোফাইল বদলানো হয় নি।সেই যে তোমার বিয়ের মধ্যে আপলোড দিয়েছিলাম।
হ্যা দিবি তো।আর কতো সিংগেল পিক দিবি? এইবার ফেভারিট পার্সোনের সাথেই যেনো দিতে পারিস সেই ব্যবস্থা করছি।
মানে?
এতো মানে এর উত্তর দিতে পারবো না।তারপর সোহার হাতে শাড়ি পরার জন্য ব্লা’উ’জ, আর পে’টি’কো’ট হাতে ধরিয়ে দিয়ে বাথরুমের ভিতর ঠেলে পাঠিয়ে বলে,,,দশ মিনিটের বেশি টাইম লাগাবিনা।তারাতাড়ি চেঞ্জ করে আয়।
কিন্তু আমি,,,,,,?
তারাতাড়ি কর বলেই নোহা দরজা লাগিয়ে দেয়।
সোহা বাথরুম থেকে গুটি গুটি পায়ে বেরিয়ে আসে। তারপর নোহার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। আপু বলবিতো আমাকে কেনো এসব পড়তে দিয়েছিস?
নোহা শাড়ি পরাতে পরাতে বলে,,,একটু পরই জানতে পারবি।
আমরা কি কোথাও যাবো আপু?
হুম নিচে।
আর একটা কথা ও সোহাকে বলতে দেয় নি।কিছু জিগ্যেস করলেও নোহা চুপ ছিলো।তারপর সুন্দর করে সোহাকে সাজিয়ে দেয়।
ওয়াও আমার বোনকে একদম নীল পরির মতো লাগছে।আজ তো একজন পুরোপুরি ঘা/য়েল হয়ে যাবে।
কে ঘা/য়েল হবে?
নোহা কিছু বলতে নিবে তখনই ওর ফোনে মেসেজ টো’ন বেজে উঠে। রুশ মেসেজ পাঠিয়েছে।
” এদিকে সব রেডি।যাদের আসার কথা তারা ও এসে পরেছে।ওরা আসলেই আ’ক’দ শুরু। সোহাকে নিয়ে আসো।”
নিচে গিয়ে বলছি চল।বলেই সোহাকে নিয়ে নিচে আসে।পরিবারের সকলেই উপস্থিত। সাথে আরো কয়েকজন যাদের সোহা চিনে না।
চুপচাপ মায়ের পাশে গিয়ে বসে। কি হচ্ছে বলোতো মা? আমরা কি কোথাও যাচ্ছি? বলতে বলতেই উপরের দিকে চোখ আটকায়।
দায়ান নীল পাঞ্জাবি পরেছে।উফফ কি যে লাগছে।সোহা এক দৃষ্টিতে দায়ানের দিকে তাকিয়ে রয়। হায় এই লোকটা দিন দিন আর কতো ভাবে সোহাকে মুগ্ধ করবে।এই যে দিন দিন লোকটার জন্য সোহা পা/গল হয়ে যাচ্ছে। একে বারে পা/গল হয়ে গেলে তার দা’য় ভা’র কি দায়ান নিবে?”
সোহার এমন দৃষ্টিতে দায়ানের দিকে তাকিয়ে থাকা দেখে সকলেই মুখ টিপে হাসে।নোহা কানের কাছে গিয়ে বলে,,আরেকটু স’বুর কর।তারপর লাইসেন্স পেয়ে যাবি দেখার।
দায়ান সোফায় এসে বসতেই নোহা সোহাকে টেনে নিয়ে দায়ানের পাশে বসিয়ে দেয়।
দায়ানের বাবা শুরু করতে বলে,,,সোহার আর বাকি নেই বুঝতে কি হতে চলেছে। সেও দায়ানকে চেয়েছে তাই বলে এভাবে হুট করে? দায়ান কি রাজি? এখনোতো মুখ ফোটে সোহাকে ভালোবাসার কথা ও বলেনি।
তারপর দেখলো দায়ানকে যা যা করতে বলল বিনা সংকোচে সব নিমিষেই করে দিলো।সোহা শুধু তাকিয়ে আছে।
তারপর যখন সোহার পালা আসলো সে নির্বিকার।কারো কোনো কথাই তার মাথায় ঢুকছে না।সে তো কতো কিছু ভাবতেছে।
দায়ান সোহার দিকে তাকিয়ে সোহার চুপ করে থাকার মানে বের করার চেষ্টা করছে। তাহলে কি সোহা রাজি না? তার মা যে বলল সোহা রাজি! দায়ান সোহার হাতের উপর আলগোছে নিজের হাতটা রাখে।
সোহা দায়ানের হাতের ছোঁয়াতে নিজের ভাবনা চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসে।
দায়ানের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে দেয়।নিজেকে দায়ানের নামে করে দেয়।
সকলেই এখন হাসিখুশিতে মেতে আছে মিষ্টি খাওয়া খাওয়ি করছে। সোহা কিছু সময় রোবট সেজে বসে ছিলো।তারপর ভাবলো যা হওয়ার ভালোই হয়েছে । ভালোবাসার কথাটা তো দায়ানের মুখ থেকে সে বলিয়েই ছাড়বে। সব চিন্তা দূর হয়ে মনের কোণে আনন্দের হাওয়া বইছে।
ইশশশ সকলে দেখো কিরকম মিষ্টি খাচ্ছে। অথচ যাদের জন্য খাচ্ছে তাদেরই খবর নেই।আমাকে মিষ্টি কেনো দিচ্ছে না। আমিও খাবো।
এর মধ্যেই রুশ মিষ্টি এনে দায়ানের মুখের সামনে ধরে।
আমি মিষ্টি খাইনা।তুই জানিস না সেটা?
একবার খেলে কি এমন হবে ভাই? খেয়েনে,,ভুলে যাসনা আমি তোর ভা’য়’রা ভাই । সম্পর্কে বড় আছি।আমার কথা শুনতে হবে।
থা’প্প’ড় না খেতে চাইলে সর।
আহা দে’বা’র’জি এই করলারে মিষ্টি না সেধে ভাবিকে খাওয়ান।ভাবিকে খাওয়ালে ভাবি দোয়া দিবে।বড় ভাবি বলে কথা।
হ্যা ভাবি বলেই রুশ সোহার মুখের ভিতরে পুরো মিষ্টি ঢুকিয়ে দেয়।
দায়ান সোহার দিকে সরু চোখে তাকায়।
সোহা দায়ানের দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করে। দায়ানের পাশ থেকে উঠে যায়।
নিচ থেকে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যায় সোহা তার নিজের রুমে। অবশ্য সকলকে ফাঁকি দিয়ে যাওয়ার একটা কারণ আছে।রুমে গিয়ে সেই টা পূরণ করবে।
—————————————
নিজের রুমে এসে দরজাটা ভালো করে লাগিয়ে দেয় সোহা।
তারপর এগিয়ে গিয়ে সাউন্ড বক্সে নিজের পছন্দ মতো একটা গান চালু করে। তারপর শাড়ির আঁচল টা কোমড়ে গুজে দেয়।
গানের তালে তালে উড়াধুরা পা/গলা ডান্স করতে থাকে। যেমন ভাবে পারছে তেমন ভাবেই হাত পা নাড়িয়ে নেচে চলেছে। আর মনে মনে শুধু একটা কথাই বলছে ফাইনালি উনি আমার।
প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে এক তালে নেচে চলেছে। ক্লান্ত হয়ে গেলেও পাত্তা দিচ্ছে না। সে আজ অনেক খুশি।
অন্যদিকে যে বাইরে থেকে ক্রমাগত কেউ দরজা ধাক্কাচ্ছে আর তাকে ডাকছে সে দিকে তার হুঁশ নেই। ফোনটা ও বিছানার উপরে রাখা। যা অনবরত বেজে চলেছে। গানের আওয়াজে তা কানে আসছে না সোহার।
নাচতে নাচতে যখন দরজার কাছে আসে। তখন দরজায় সোহার পিঠটা একটু ঠেকে। আর বুঝতে পারে কেউ দরজায় ধাক্কা দিচ্ছে। তার মানে তাকে ডাকছে। তারাতাড়ি করে সোহা গান বন্ধ করে।
তারপর নিজেকে ঠিক ঠাক না করেই দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দেয়। দরজার অপর পাশে দায়ান দাঁড়িয়ে।
সোহাকে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত দেখে নিয়ে তারপর বলে,,যুদ্ধ হয়ে গেলে নিচে আসো।খেতে ডাকছে সকলে।
আরেকটু এগিয়ে এসে সোহার পাশে দাঁড়ায়। মুখ টা সোহার কানের কাছে এগিয়ে এনে বলে,,,,,,,,,
এমন ভাবে আমার সামনে আর এসো না পুরো পুরি আমার কাছে আসার আগে।কোনো ভু’ল টু’ল হয়ে যেতে পারে ডাক্তারের ডাক্তার মেম।তারপর সোহার কানে একটা ফু দেয়। কোমড়ে গুজে রাখা শাড়ির আঁচল টা সোহার শরীরে স্পর্শ ছাড়াই কোমড় থেকে ছাড়িয়ে দেয়।
সোহার আবেশে চোখ বন্ধ হয়ে যায়। দায়ান সোহার মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে চলে যায়।
#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো_২
#পর্বঃ২২
#Jhorna_Islam
” আমার কাছে একটু আসতে পারবেন?”প্লিজ!
কি নিঃসংকোচ সেই আবদার! এরকম ডাক বুঝি সহজে কেউ অবহেলা করতে পারে? বুকের ভিতর টা নিজের অজান্তেই মোচড় দিয়ে উঠলো দায়ানের। কন্ঠ টাতে অনেক টা আকুলতা আর অপারগতা লুকিয়ে আছে বুঝি।
মেয়েটা ঠিক আছে তো? কিছু হয়নি তো আবার?
শুধু শুধু এইভাবে ডাকার মেয়েতো সোহা না।খানিকটা ভ’য় কাজ করছে মনে।
কাঁপা কাঁপা কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে সোহা?
তুমি ঠিক আছো তো?
প্লিজ আপনি তারাতাড়ি আসুন না।আমি একদম ঠিক নেই।আমার খুব ভ’য় করছে। আমার শরীর খারাপ লাগছে।
ওকে। আমি এখনই আসছি একদম ভ’য় পাবে না ঠিক আছে?
এখন কোথায় আছো আমাকে লোকেশন মেসেজ করো আমি এখনই আসছি। বলেই দায়ান ফোন কেটে দেয়।
মনে মনে নিজেকেই নিজে গা/লি ছুড়ে কেনো সে সোহাকে ওর কোচিং এর বান্ধবীদের সঙ্গে যেতে পার্মিশন দিলো।
তারপর দায়ান হাসপাতালের মিটিং রুমে প্রবেশ করে। ওখানে সকল ডাক্তারদের নিয়ে মিটিং বসেছে আজ।তাই দায়ান সকাল সকালই এসে পরেছে।প্রায় আধা ঘণ্টা মিটিং এর পর দশ মিনিটের জন্য ব্রেক দেওয়া হয়েছিলো। সকলেই যেনো একটু রিলেক্স করতে পারে।
এই দশ মিনিটের জন্য যে যার ক্যাবিনে চলে গিয়েছিলো।দায়ান ও তাই।ব্রেক শেষে বের হয়ে আবার মিটিং রুমে ঢুকতে নিবে দায়ানের আরেক সিনিয়র ডাক্তারের সাথে কথা বলতে বলতে তখনই দায়ানের ফোনটা পকেটে ভাইব্রেট হতে থাকে।
দায়ান ফোন টা হাতে নিয়ে দেখে সোহার কল।তাই দায়ান এ’ক্স’কি’উ’জ’মি বলে একটু দূরে সরে যায় তারপর রিসিভ করতেই সোহা কথা গুলো বলে উঠে।
দায়ান মিটিং পুনরায় শুরু হওয়ার তিন মিনিট পর মিটিং রুমে প্রবেশ করে। তখন এক সিনিয়র ডাক্তার আর দায়ানের স্যার বক্তব্য রাখছিলো।দায়ান কে ঢুকতে দেখে জিজ্ঞেস করে এনি প্রবলেম দায়ান?
এ’কচু’য়া’লি স্যার,,, আই হেভ টু গো নাউ।ইট’স এন ইমার্জেন্সি।
স্যার কিছু একটা ভেবে তারপর বলে,,,ওকে যাও।মিটিং টা তো ভিডিও করে রাখা হচ্ছে তুমি পরে দেখে নিও।
ঠিক আছে স্যার।ধন্যবাদ বলেই দায়ান হাসপাতালের বাইরে হাঁটা দেয়। হাঁটতে হাঁটতেই হাতের ফোনের মেসেজ টিউন টা বেজে উঠে। সোহা লোকেশন সেন্ড করেছে।
তারপর দায়ান তারাতাড়ি গাড়িতে উঠে গাড়ি দিয়ে সোহার পাঠানো ঠিকানা তে যেতে থাকে।
বার বার একটা কথাই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে দায়ানের কেন যে কাল যখন সোহা তার কোচিং এর বান্ধবীদের সঙ্গে যখন দেখা করার জন্য অনুমতি চেয়েছিলো সকলের কাছে তখন দায়ান কেনো না করলো না? না জানি মেয়েটার কি হয়েছে।
দায়ান গাড়ির স্পিড আরো বাড়িয়ে দেয়।যতো দ্রুত পৌছানো যায়। ত্রিশ মিনিটের রাস্তা দায়ান দশ মিনিটে শেষ করে একটা শপিংমলের সামনে এসে থামে।তারপর গাড়িটা তাড়াতাড়ি পার্কিং করে দৌড়ে মলের ভিতর ঢুকে। এদিক ওদিক তাকিয়ে সোহাকে খোঁজার চেষ্টা করে। না খোঁজে পেয়ে ফোন হাতে নিয়ে কল লাগায়।
সোহা কল রিসিভ করে কিছু বলবে তার আগেই দায়ান বলে কোথায় আছো আমি পৌঁছে গেছি।
পশ্চিমের দিকে আসুন একটু।
দায়ান সোহার কথা মতো গিয়ে দেখে দুইটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে। আরেকটা মেয়ে মাথা নিচু করে বসে আছে। দায়ানের আর বুঝতে বাকি নেই ঐটাই সোহা।। প্রায় দৌড়ে ঐখানে যায়।৷
কি ব্যাপার সোহা কি হয়েছে তোমার?..
সোহা মাথা তুলে মলিন মুখ করে দায়ানের দিকে তাকায়। মুখটা কেমন শুকিয়ে গেছে। চোখের কোণে অশ্রু জমে হালকা ফুলে লাল হয়ে আছে।
দায়ান কে দেখে কান্নারা যেমন বি’দ্রো’হ করে বাইরে বের হয়ে আসতে চাইছে। মুখ দিয়ে এবার যেনো একটা কথা ও বের হচ্ছে না। সব গলায় আটকে আছে।
সোহাকে চুপ করে থাকতে দেখে পাশের দাঁড়ানো একটা মেয়ে বলে উঠে। আসলে ভাইয়া হয়েছে কি আমরা একটু ঘুরাঘুরি করে শপিং করে দেন খেয়ে বাড়িতে ফিরে যাওয়ার প্লে’ন করেছিলাম।
তো সেই উদ্দেশ্য নিয়েই এখানে আসতেছিলাম।শপিং মলের সামনেই কয়েক জন লোক কিছু একটা নিয়ে কথা কাটাকাটি করছিলো।তো এক পর্যায়ে একটা লোকের মাথায় লাঠি দিয়ে বাড়ি দেয় তারপর ধাক্কা মারে।যার ফলে লোকটা ছিটকে এসে সোহার পায়ের কাছে এসে পরে।লোকটার মাথা দিয়ে প্রচন্ড ব্লিডিং হচ্ছিল। সোহার পায়ের সামনে পরেই কা’ত’রা’তে থাকে।
তারপর থেকেই সোহা কেমন যেনো করছে। আমরা ওকে ধরে এনে এখানে বসিয়েছি। তারপর কিছু টা ঠিক হয়েই আপনাকে কল দিয়েছে।
দায়ান সব শুনে সোহার দিকে এগিয়ে আসে।হাঁটু গেঁ’ড়ে সোহার সামনে বসে। সামনের ছোট্ট চুল গুলো এলোমেলো হয়ে আছে। যত্ন করে নিজের হাতে ঠিক করে দেয়।
সোহা দায়ানের দিকে তাকিয়ে রয়।
ঠিক আছো না এখন?
সোহা মাথা কা’ত করে যে সে ঠিক আছে।
দায়ান সোহার হাতের দিকে তাকিয়েই বোঝে গেলো মেয়েটা এখনো ভ’য় পাচ্ছে হাতগুলো মৃদু কাঁপছে।
দায়ান সোহার দুই হাত নিজের হাত দিয়ে শক্ত করে ধরে। রিলেক্স একদম ভ’য় পেয়ো না।ঐসব ভুলে যাও।ভাবো কিছুই হয়নি তুমি ঐসব দেখোনি ঠিক আছে?
আমি আছি না? আর একটুও ভ’য় পেওনা।
এখন উঠতে পারবে?
সোহা নিজেকে একটু ধা’ত’স্ত করে উঠে দাঁড়ায়। তখন ও দায়ান তার হাত ছাড়েনি।
সোহার মন থেকে এখনই ভ’য় টা দূর করতে হবে। নয়তো এটার বে’ড এফে’ক্ট পরবে পরবর্তীতে সোহার উপর। তাই দায়ান সোহার হাত ধরে নিজেই সোহাকে নিয়ে এগিয়ে যেতে যেতে তার বান্ধবীদের বলে,, তোমরা ও আসো আমার সাথে। প্রায় অনেক সময় তো হলো বাড়ি থেকে বের হয়েছো নিশ্চয়ই খুব খিদে পেয়েছে। এখানকার সেকেন্ড ফ্লোরে একটা ভালো রেস্টুরেন্ট আছে।খুব ভালো খাবার পাওয়া যায়। আজ আমার তরফ থেকে তোমাদের জন্য ট্রিট।
তারপর সকলেই রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসে।দায়ান সকলের পছন্দ জেনে তারপর খাবার অর্ডার দেয়। সোহা এখনো চুপচাপ বসে আছে। দায়ান সোহার হাত টায় হালকা একটু চা’প দিয়ে আস্তে করে বলে,,,একটু ফ্রি হও সোহা।দেখো তোমার জন্য ওদের মধ্যে কেমন জড়তা কাজ করছে।
সোহা ওদের দিকে তাকিয়ে দেখে আসলেই ওরা কেমন জড়তা নিয়ে বসে আছে। তারপর সোহা একটু ঠিক ঠাক হয়ে বসে।
দায়ান ওদের কে সহজ হওয়ার জন্য পরিচয় জানতে চায়। সকলেই ওদের পরিচয় জানায়।দায়ান ও নিজের পরিচয় দেয়। খাবার টেবিলে আসলে সবাই কে সহজ হয়ে খেতে বলে। দায়ানের ব্যবহারে সকলেই এবার জড়তা কাটিয়ে আস্তে আস্তে খেতে থাকে। সোহা শুধু খাবার নাড়াচাড়া করছে।
সোহা ভালো করে খাও।তুমিতো কিছুই খাচ্ছ না।
আমি আর খাবো না।
কিন্তু,,,,,,,,
প্লিজ,, সোহা অসহায় দৃষ্টিতে বলে।তাই দায়ান আর জোর করে না।সকলেই খাওয়া দাওয়া শেষ করে উঠে দাঁড়ায়। ওরা দুজন বেরিয়ে যেতে চাইলে দায়ান বাঁধা দেয়। জানায় সে নিজে দিয়ে আসবে।এমন ভর দুপুরে গাড়ি পাওয়া মুশকিল হয়ে যাবে ওদের জন্য। সোহা ও বলে গাড়িতে উঠে বসতে।তারপর দায়ান দুইজন কে গাড়ি দিয়ে ওদের বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে আসে।
সোহা গাড়ির সিটে মাথা হেলিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে।
দায়ান বুঝতে পেরেছে সোহার মনে ঐ ঘটনা টা ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। তাই সে গাড়ি ঘুরিয়ে শহরের থেকে একটু দূরে নদীর পাড়ের দিকে যাওয়ার সিধান্ত নিয়ে গাড়ি চালায়।খোলা মেলা পরিবেশে গেলে হয়তো মনটা ভালো হবে।
সোহার বু’কে আস্তে আস্তে যে প্রচন্ড ব্যাথা শুরু হচ্ছে তা সে বুঝতে পারছে। নিজেকে কিছুতেই শান্ত করতে পারছে না। চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করে। হয়তো এতে ব্যাথাটা একটু কমবে।কিন্তু না বেড়েই চলেছে এই অসহ্য যন্ত্রনা।আর সহ্য করতে পারছে না।সাথে শ্বাস ও নিতে পারছে না। অনেক কষ্ট হচ্ছে।
কয়েক বার জোরে নিশ্বাস নিয়ে নিজেকে কিছু টা ধা’তস্ত করে দায়ানের হাত খা’ম’চে ধরে।
দায়ান হঠাৎ করে এমন হওয়ায় গাড়ি চালাতে চালাতে সোহার দিকে তাকায়। সোহা কিছু বলতে চাচ্ছে।
দায়ান দ্রুত গাড়ির ব্রেক করে।সোহার কাছে এগিয়ে বলে,,,, কি হয়েছে সোহা খারাপ লাগছে? কষ্ট হচ্ছে বলো আমায়?
কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,,, আমার বুকে খুব ব্যাথা করছে সহ্য করতে পারছি না আমি। নিশ্বাস নিতে পারছিনা।গলায় যেমন কেউ টিপে ধরে রেখেছে যেনো শ্বাস নিতে না পারি। শ্বাস কষ্ট হচ্ছে আমার।
দায়ানের খুব অসহায় লাগছে এখন নিজেকে।ডাক্তার হয়েও মাথা কাজ করছে না তার।সোহা জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে। অনেকটাই দূরে এসে পরেছে দায়ান গাড়ি নিয়ে। কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। কেন যে এখানে আসতে গেলো।নিজের চুল এবার নিজেই টেনে ধরে দায়ান।
সোহা দায়ানের হাত এমন ভাবে খা’মচে ধরেছে ছিলে র/ক্ত বের হয়ে গেছে। সোহা আস্তে আস্তে নেতিয়ে পরছে।
দায়ান চোখ বন্ধ করে কিছু সময় নিয়ে কিছু একটা ভাবে।তারপর সোহার দিকে তাকায়।
সোহা অসহায় চোখে দায়ানের দিকেই তাকিয়ে আছে।
দায়ান তার শুকনো গলা ঢুক গিলে ভিজিয়ে নেয়।তারপর সোহার দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,,,,,,,,,, আ’ম স’রি! সো স’রি জান।
সোহা দায়ানের দিকে প্র’শ্না’ত্ত’ক দৃষ্টিতে তাকায়।
দায়ান আবার বলে,,,, আমাকে ভুল বুঝো না প্লিজ। এটা ছাড়া এখন আর আমি কোনো উপায় দেখছি না। আমি চাইনি আমাদের কাছে আসা।প্রথম স্পর্শ এমন ভাবে হোক। বাট আ’ম হেল্পলেস।বলেই সোহাকে দুই হাত দিয়ে টেনে নিজের কোলে বসিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। তারপর,,,,,,,,,
#চলবে,,,,,,,