তুমি হাতটা শুধু ধরো ২ পর্ব -২৯+৩০

#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো_২
#পর্বঃ২৯
#Jhorna_Islam

ভালোবাসা কখন কিভাবে এসে মনের মাঝে নিজের অজান্তেই ঘর বাঁধে বোঝা মুশকিল। মনের ঘরে কে কখন জায়গা করে নেয় তা আমরা বুঝতেই পারি না।ভালোবাসা নিয়ে মনের উপর জোর চলে না।

দায়ান তার ভালোবাসার কথা গুলো সোহা কে আজ জানিয়েই দিলো।এই পা/গলি টা কে সে হাড়াতে চায় না। কোনো মতেই না মনের ঘরে যতন করে আগলে রেখে দিতে চায়।

তার পাখিটা তার আকাশে মুক্ত পাখির মতো উড়বে আর সে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে তা দেখবে। তার আর কিছু এখন চাওয়ার নেই শুধু এইটুকুই চাওয়া সোহা সুস্থ হয়ে তার জীবনে ফিরে আসুক।

সোহাকে জরিয়ে ধরে দায়ান মনে মনে এটাই প্রার্থনা করছিলো।

দায়ানের প্রতিটি কথা সোহার কানে গেছে। মস্তিষ্কে পৌঁছেছে।সে ইচ্ছে করেই সারা দিতে চায় নি।তার বাঁচতেই ইচ্ছে করেনি। মনের জোর হাড়িয়ে ফেলেছিলো।একটা কথাই শুধু মনে হয়েছে দায়ান কে জীবনে না পেলে এ জীবন তার চাই না।

সোহা নড়েচড়ে উঠে। দায়ান সোহার কাছেই ছিলো তখন ও। সোহা হাত পা নাড়িয়ে চোখ পিটপিট করে তাকায়।

সোহা তার ডাকে সারা দিয়েছে এটা ভেবে দায়ানের অন্তরে খুশির ঢেউ খেলে যায়।তার পাখি চোখ খুলেছে।

দায়ান খুশি হয়ে সোহার সারা মুখে চুমু খায়। চোখ দিয়ে তার পানি ঝড়ছে।যা সোহার মুখে ও পরছে সোহা নিজের মুখে পানির অস্তিত্ব টে’র পেয়ে বুঝতে পারে দায়ান কাঁদছে।

তার দায়ান তার জন্য কাঁদছে? ভাবতেই সোহার চোখের কোণেও পানি জমে।

লোকটার সারা মুখ লাল হয়ে আছে।কেমন অগোছালো লাগছে। সোহার খুব ইচ্ছে করছে দায়ান কে ঝাপটে ধরতে।কিন্তু সে ধরবে না।তাকে শাস্তি পেতে হবে।এতোদিন ভালোবেসেও না বলার জন্য শাস্তি।

সোহা মনে মনে ঠিক করে নেয় দায়ান কে সে পুরোপুরি ইগনোর করবে কথাই বলবে না। দেখুক কেমন লাগে। একটু শাস্তি পাওয়া দরকার।

দায়ান সোহার হাত ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। তুমি ঠিক আছো? কোথাও কষ্ট হচ্ছে? আমাকে বলো প্লিজ।

সোহা চুপচাপ শুয়ে রয় কিছুই বলে না। দায়ান সোহা কে ডাকে সে সারা দেয় না।

সোহা এইই সোহা কথা বলবানা আমার সাথে? আমার মনের ডাক্তার কি আমার উপর খুব রে’গে আছে? কথা কি বলা যায় না?
একটু ও কি বলা যায় না?

প্লিজ আমার তোতা পাখি একটু কথা বলো তোমার কথা শুনতে ইচ্ছে করছে খুব।

সোহা এবার অন্য পাশে মুখ ঘুরিয়ে শোয়।

দায়ান বুঝতে পারে সোহা এখনও তার উপর অভিমান করে আছে। কথা বলতে চায় না। তাই আর জোর করে নি।কিন্তু সোহার কাছ থেকে সরেও নি। এই যে বসে আছে সোহার একটি হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে। সোহা অবশ্য হাতটি ছাড়ানোর চেষ্টা করেছে।দায়ান ছাড়ে নি।

—————

বিকেলের মধ্যে সোহার বাবা মা এসে পরে। এসে থেকে সোহার মায়ের সে কি কান্না। কেউ থামাতে পারছেনা। বিলাপ করে করে কাঁদছে। সাথে নোহা ও আবার যুক্ত হয়েছে। দুই মা মেয়েকে কেউ শান্ত করতে পারছে না।

ক্যাবিনে ঢুকে সোহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর কাঁদছে।

আম্মু তুই আমার উপর রা’গ করে আছিস? সব নিজের মধ্যে কেনো চেপে রেখেছিলি মা? এতো ব্যাথা সহ্য করে গেছিস তাও আমাদের একটুও বুঝতে দিস নি কেন?

আমি তোর এতটাই পর হয়ে গেছি মা?

মা তোকে খুব বকতো বলে বলতি না তাই না মা? মায়ের উপর খুব অভিমান তোর?

সোহা মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,, এসব তুমি কি বলছো মা? প্লিজ এসব কথা বলো না। আমিতো জানি তুমি আমার ভালোর জন্যই বকতে।

সোহার বাবা মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। সোহার মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,, তোমার কাঁদা বন্ধ করবে? কি শুরু করেছো তোমরা মা মেয়ে?

আমার ছোট আম্মার কিছু হয়নি।সামান্য একটু অসুস্থ হয়েছে। কিছু দিনের মাঝেই ঠিক হয়ে যাবে। তোমরা ওর সামনে কেঁদে ওকে আরো অসুস্থ বানাচ্ছো।চুপ করে থাকো।কান্না বন্ধ করো বলছি।নয়তো এখান থেকে যাও তোমরা।একদম ওর সামনে কাঁদবে না।

আব্বু থাক ওদর বকো না। আমি একটু শোয়া থেকে উঠবো।আমাকে একটু ধরে বসাও তো!

সোহার বাবা মেয়েকে ধরে বসায়।পিঠের নিচে একটা বালিশ দিয়ে।সোহা হেলান দিয়ে বসে। চারদিকে তাকিয়ে দেখে দুই পরিবারের সকলেই এখানে উপস্থিত। সকলের মুখই শুকিয়ে গেছে।

তোমরা সবাই মুখ টা কে এমন করে রেখেছো কেনো বলোতো? আমার কিছু হয়নি আমি একদম ঠিক আছি।বলেই সোহা মিষ্টি করে হাসি দেয়।

দায়ান ক্যাবিনের এক পাশে দাড়িয়ে সোহার দিকেই তাকিয়ে আছে। সবার সাথে কথা বলছে অথচ তার সাথে কথা বলা তো দূর ফিরে ও তাকাচ্ছে না মেয়েটা। এতে যে দায়ানের বুকে হাহাকার করছে সেটা কি সোহা বুঝতে পারছে না?

বাড়ির সকলে সোহাকে আদর করে দিচ্ছে।

এমন সময় দায়ানের স্যার ডাক্তার খান আবার আসে ক্যাবিনে।

কি ব্যাপার শুনলাম মিসেস শেখের নাকি জ্ঞান ফিরেছে।

সকলেই উনার দিকে ঘুরে তাকায়।সোহা ও।

ডাক্তারের মুখে মিসেস শেখ শুনে সোহার বুক টা কেঁপে ওঠে। অন্তরে পরিতৃপ্তি পায়। ইশশ বার শুনতে ইচ্ছে করছে মিসেস শেখ।

ওর সাথে কথা শেষ হলে আপনারা একটু বাইরে যান। আমি একটু ওকে চে’ক আপ করবো।

উনার কথায় সকলেই বেরিয়ে যায়। শুধু দায়ান থেকে যায়।

কি ব্যাপার মামুনি কি অবস্থা এখন তোমার?

ভালো আছি ডাক্তার সাহেব।

উহু ডাক্তার সাহেব না।আংকেল বললে খুশি হবো। আমাকে তুমি আংকেলই ডাকবে। তোমার মতো মিষ্টি মেয়ের মুখে আংকেল ডাক টা শুনতে চাই।

সোহা মুচকি হেসে বলে,, ঠিক আছে আংকেল।

তারপর উনি সোহা কে চেক আপ করতে করতে বলে,,তোমার হাসবেন্ড দায়ান কিন্তু আমার ছাত্র। আমার সবচাইতে প্রিয় ছাত্র।

সোহা আর চোখে দায়ানের দিকে তাকায়। তখনই চোখাচোখি হয়ে যায়। কারণ দায়ান আগে থেকেই সোহার দিকে তাকিয়ে আছে। সোহা তারাতাড়ি চোখ সরিয়ে নেয়।

খাওয়া দাওয়া মনে হয় একদমই করো না।আর এই বয়সে কিসের এতো টেনশন?

ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করবা।একদম টেনশন নিবা না ঠিক আছে?

সোহা মাথা কাত করে। তারপর জিজ্ঞেস করে,,, আমার কি হয়েছে আংকেল?

বড় কোনো অসুখ করেছে? আমিকি আর বাঁচবো না? ধরা গলায় জানতে চায় সোহা।চোখ দুটো ছলছল করছে।

দায়ান তারাতাড়ি সোহার পাশে বসে হাত ধরে বলে,,এসব কি কথা সোহা? তেমন কিছুই হয়নি তোমার।একদম ঠিক আছো তুমি।আজেবাজে কথা একদম ভাবতে যাবে না।নয়তো মাইর লাগাবো।

তেমন কিছুই হয়নি তোমার মামনি।বু’কে তো তোমার পেইন হয় তাই জন্য ছোট্ট একটা অপারেশন করা লাগবে। দেন একদম সুস্থ হয়ে যাবে।আর ব্যাথা করবে না। তুমি রেস্ট নেও ওকে?

এসব নিয়ে চিন্তা করো না তুমি ঠিক আছো। চে’ক আপ শেষ করে উনি চলে যায়। যাওয়ার আগে বলে যায়।সময় করে যেনো দায়ান একটু দেখা করে।

—————
তারপর দায়ান ডক্টর খানের সাথে দেখা করলে উনি জানায়,,,এখনই অপারেশন টা করতে চাচ্ছে না। আরো এক সপ্তাহ পর করবেন।এখন সোহার শরীর খুবই দূর্বল।মানসিক অবস্থা ও ততোটা ভালো না। এই এক সপ্তাহ সোহাকে যেনো ভালো করে খাওয়া দাওয়া করানো হয়।মানসিক ভাবে সুস্থ হলে তারপর করবেন। নয়তো আরো রিস্কি হয়ে যাবে।

সোহা কে হাসিখুশি রাখতে হবে।

আর আজ যেনো সোহাকে হাসপাতালে রাখে।কাল বাড়িতে নিয়ে যেতে।

দায়ান সব শুনে সম্মতি জানায়।

বাড়ির সকলকে জোর করে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। দায়ান একাই সোহার সাথে থাকবে।সোহার মা কিছুতেই যেতে চেয়েছিলো না মেয়েকে ছেড়ে। সকলেই থাকতে চেয়েছিলো। দায়ান সকলেকে জোর করে বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছে। বলে দিয়েছে টেনশন না করতে।সোহার জন্য সে নিজেই যথেষ্ট।

দায়ানের জে’দের কাছে হার মেনে সকলেই বাড়ি চলে যায় সোহাকে একবার দেখে।সোহা ঐসময় ঘুমাচ্ছিলো তাই জানতে ও পারে নি সবাই চলে গেছে।

#চলবে,,,,,,#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো_২
#পর্বঃ৩০
#Jhorna_Islam

সোহার ঘুম ভেঙে যায় আড়মোড়া ভেঙে পিটপিট করে চোখ খুলে আশেপাশে তাকায়।কিছু সময়ের জন্য সে ভুলেই গিয়েছিলো সে হাসপাতালে আছে।

তারপর আস্তে আস্তে সব মনে হয়। ক্যাবিনে সে ছাড়া আর কেউ নেই। একা একা ভালো লাগে না সোহার।তাই আস্তে করে নোহাকে ডাক দেয়। কয়েকবার ডাক দিয়ে ও কোনো সারা শব্দ পায় না।

এবার মা,বাবা কে ডাক দেয় ওদের ও কোনো খবর নেই। শরীরটা খুবই দূর্বল।অনেক কষ্টে শোয়া থেকে উঠে বসে।একেক করে সকলকেই ডাকে কারো কোনো খবর নেই।
এবার সোহার ভিতর থেকে কান্নারা ঠেলে বেরিয়ে আসে।

বাচ্চাদের মতো ফুপিয়ে কেঁদে উঠে। কাঁদতে কাঁদতে বলে,,তোমরা কোথায় চলে গেলা আমার ভালো লাগছে না। আম্মু, বড় ফুপি এই আপু।বলেই এবার শব্দ করে দুই হাতে মুখ ঢেকে কেঁদে উঠে।

দায়ান তখনই ক্যাবিনে প্রবেশ করে। সোহার দিকে তাকিয়ে দেখে মেয়েটা মুখ ঢেকে কাদছে।দৌড়ে সোহার কাছে যায়।

বেডের উপর বসে সোহাকে নিজের সাথে জড়িয়ে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে,, এই পা/গলি কি হয়েছে কাঁদছো কেনো? খারাপ লাগছে? কোথাও কষ্ট হচ্ছে বলো আমায়।

সবাই কোথায় চলে গেছে? কখন থেকে ডাকছি কেউ সারা দিচ্ছে না। আমার একা একা ভালো লাগছে না।

সবাইকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি।তুমি ঘুমোচ্ছিলে তাই বলা হয়নি। সবাই খুব ক্লান্ত ছিলো রেস্ট নেওয়ার দরকার নয়তো ওরা ও অসুস্থ হয়ে যাবে। তাই আমিই জোর করে পাঠিয়ে দিয়েছি।

আমি বাড়ি যাবো।এখানে আমি থাকবো না।আমি একদম সুস্থ আছি।আমায় বাড়ি নিয়ে চলুন।

যাবো তো কালই আমরা চলে যাবো। এখানে থাকতে হবে না। শুধু আজকের রাতটা একটু কষ্ট করো। ভ’য় পেয়ে ছিলে একা একা?

আ’ম সো স’রি পাখি।তুমি ঘুমোচ্ছিলে বলে আমার ক্যাবিনে গিয়েছিলাম একটু।আর যাবো না ঠিক আছে? এই যে তোমার পাশে থাকবো।

সোহা দায়ানের থেকে সরে এসে বালিশে হেলান দিয়ে বসে চুপচাপ অন্য দিকে তাকিয়ে থাকে।দায়ান সোহার কাজে নিঃশব্দে হাসে।পা’গলিটার অভিমান এখনো শেষ হয়নি।

ঠিক তখনই দরজায় কেউ ন’ক করে।

দায়ান তাকিয়ে দেখে নার্স খাবারের প্লেট নিয়ে দাড়িয়ে আছে। দায়ান অনুমতি দেয় ভিতরে আসার।নার্সটা খাবারের প্লেট এনে টেবিলের উপর রাখে।তারপর সোহার কাছে এগিয়ে যায় খাইয়ে দেওয়ার জন্য।

সোহা খাবারের দিকে তাকিয়ে চোখ মুখ কোচকে ফেলে। এসব কি ছিঃ ইয়াক আমি এসব খাই না। এইসব ঘাস পাতা সরান আমার সামনে থেকে। আমি এসব একদম খাবো না।

দায়ান নার্সকে উদ্দেশ্য করে বলে,,আপনাকে খাইয়ে দিতে হবে না। আমিই খাইয়ে দিবো।তারপর নিজেই প্লেট টা হাতে তুলে নেয়। এক চামচ সোহার মুখের সামনে ধরে।সোহা মুখ ফিরিয়ে নেয়। তারপর নার্সের দিকে চোখ যায়।মেয়েটা দায়ানের দিকে তাকিয়ে আছে।

সোহার রা’গ উঠে যায়। দাঁত কটমট করে বলে,,,আপনি আমাকে খাবার খাওয়াতে এসেছেন? নাকি নিজে চোখ দিয়ে খেতে এসেছেন?

নার্স টা হকচকিয়ে তারাতাড়ি দৃষ্টি সরিয়ে নেয়। দায়ান নার্সটার দিকে তাকিয়ে বলে,, আপনি যান আপনাকে এখানে আর প্রয়োজন নেই।নার্সটা তারাতাড়ি মাথা নাড়িয়ে বেরিয়ে যায়।

খেয়ে নাও পাখি প্লিজ। তুমি তো একটু অসুস্থ তাই এসবই খেতে হবে। সুস্থ হয়ে যা খেতে চাইবে তাই খাওয়াবো।প্লিজ খেয়ে নাও।

আমি খাবো না খিদে নেই এগুলো সরান আমার সামনে থেকে।

কাল রাতে কিছু খাওনি।আজ সারাদিন ও তোমার কিছু খাওয়া হয়নি।আবার বলছো খিদে নেই প্লিজ পাখিটা খাও।দেখো আমিও তোমার মতো কাল থেকে না খেয়ে আছি।প্রচুর খিদে লেগেছে আমার।তুমি না খেলে আমারও খাওয়া হবে না।

আর আমি খাবোওনা তুমি না খেলে।
সোহা আড় চোখে দায়ানের দিকে তাকায়। মুখ টা শুকিয়ে আছে। সোহা না খেলে যে দায়ান ও খাবে না সেটা সে বোঝে গেছে।
তাই কিছু সময় ভেবে বলে,,ঠিক আছে খাচ্ছি কিন্তু পুরো টা খাবো না।
দায়ান সোহার কথায় খুশি হয়ে যায়। সে দেখা যাবে তুমি আগে খাওয়া তো শুরু করো।তারপর জোর করে পুরো খাবার সোহাকে খাইয়ে ঔষধ খাইয়ে দেয়।

—————–
পরের দিন সকাল সকাল ই সোহাকে নিয়ে বাড়ি চলে আসে দায়ান।
সেই থেকে যে লাপাত্তা হয়েছে সোহা দায়ানের সামনেই পরছেনা।হয় ওর মায়ের আঁচল ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছে নয় দায়ানের মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে থাকছে।

দায়ান সোহার কাছে আসলেই এড়িয়ে যায় নয়তো ঘুমের অভিনয় করে পরে থাকে।

দায়ান সোহাকে দেখলেই স’রি বলে। কিন্তু সে পাত্তাই দেয় না।

সোহা দায়ানকে পাত্তা না দিলেও দূর থেকেই সোহার খাওয়া দাওয়ার উপর ন’জর রাখছে। সকলকে বলে দিয়েছে তাকে যেনো হাসি খুশি রাখে।

সোহার খাওয়া শেষ হলেই ঠিক টাইমে দায়ান ঔষধ নিয়ে হা’জির হয়। সোহা অন্য দিকে তাকিয়ে দায়ানের হাত থেকে ঔষধ খেয়ে নেয়।

এমন করেই চলছে প্রতিদিন। তারপর হুট করেই দায়ান বলে উঠে তাদের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতার কোনো দরকার নেই। যা করার যেনো করে আজ থেকেই দায়ানের রুমে যেনো শিফট করা হয় সোহাকে।

সোহা হা করে দায়ানের দিকে তাকিয়ে রয়। কেমন ঠোঁট কাটা লোক।কিভাবে বলে দিলো তাকে যেনো লোকটার রুমে শিফট করে। লজ্জা করলো না?

পরিবারের লোক দায়ানের কথায় আপত্তি করে নি।তারা পারিবারিক ভাবেই ওদের সব কিছু শে’ষ করে।সোহা অনেক বলেছে কিন্তু তার কথা কেউ শুনেনি।

তাই রা’গ করে কারো সাথে সে কথা বলছে না। চুপচাপ নিজের রুমে বসে আছে। এখানে বসে থাকলেই কি নোহা সব জামা কাপড় জিনিস পত্র বিকেলেই দায়ানের রুমে রেখে এসেছে।

সোহা তো অন্য ভ’য় পাচ্ছে। কাল তার অপারেশন সবাই বললেও ছোট্ট একটা অপারেশন তার মন মানছে না। মনটা খালি কু ডাকছে। অজানা ভয়ে ভিতর টা মোচড় দিয়ে উঠছে।এই কয়দিন দায়ানের থেকে দূরে থাকলেও তার ভালোবাসার গভীরতা খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছে।

দায়ানের কথা ভাবলে বুক টা কেঁপে ওঠে। লোকটা তার প্রথম ভালোবাসা হারিয়েছে।এখন সোহা কে ভালোবাসে।যদি সোহার ও কিছু একটা হয়ে যায়। তাহলে লোকটা তো বাঁচবেই না।হয়তো পা’গল হয়ে যাবে।

তাইতো আরো বেশি করে দায়ানের থেকে দূরে থাকতে চাইছে সোহা।কিন্তু বেহায়া মন তো মানে না।দায়ানের কাছে দৌড়ে গিয়ে দায়ানের প্রশস্ত বুকে নিজেকে লুকিয়ে রাখতে ইচ্ছে করে। বলতে ইচ্ছে করে আপনার এই বু’কের ভিতর আমায় ঢুকিয়ে রাখুন।আমি কোথাও যেতে চাই না আপনাকে ছেড়ে। আমার যে বড্ড ভ’য় করছে। আপনার সাথে আমি অনেক অনেক বছর পথ চলতে চাই।
একসাথে হাতে হাত রেখে জীবন টা পাড় করতে চাই।আমায় শক্ত করে ধরে রাখুন তো একদম ছাড়বেন না।

কিন্তু কিছুই বলা হয় না। এই কয়দিনে এমনিতেই দায়ানের মুখ টা শুকিয়ে গেছে। খাওয়া দাওয়া আর ঘুম যে কিছুই ঠিক মতো করছে না দেখেই বোঝা যায়।

সোহা এসব ভেবে মুখ চেপে কেঁদে উঠে। কেনো সে লোকটার জীবনে আসতে গেলো যদি নাই বাঁচতে পারে এক সাথে। আরো কেনো আগে জানতে পারলো না তাহলে দায়ান কে নিজের অনিশ্চিত জীবনের সাথে কিছুতেই জড়াতো না। সোহার কিছু হয়ে গেলে লোকটা মরেই যাবে।

সোহার হাউমাউ করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। দৌড়ে ওয়াশরুমের ভিতরে ঢুকে যায় সোহা।পানির টে’প জোরে ছেড়ে হাউমাউ করে কেঁদে দেয়। মাঝে মাঝে নিজের ভিতর টা হালকা করার জন্য জোরে জোরে কাঁদা দরকার।প্রায় অনেক সময় নিয়ে সোহা বাথরুমের দেয়ালে হেলান দিয়ে কাঁদে। মনটা কিছু টা হালকা হলে চোখে মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে বেরিয়ে আসে। হাতে টাওয়াল নিয়ে মুখ মুছতে মুছতে ড্রেসিং টেবিলের উপর চোখ যায়। একটা কাগজ রাখা।

কৌতূহল বসত এগিয়ে গিয়ে কাগজ টা হাতে তুলে নেয়।

“একটু ছাদে আসবে? তোতাপাখি প্লিজ একটু আসো।”

দায়ান তাকে ছাদে কেনো যেতে বলছে? লোকটা কেন এমন পা’গলামো করে সোহা তো আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারে না।লোকটা কেনো বুঝার চেষ্টা করে না।

প্রায় অনেক সময় বসে থেকেও দায়ানের ডাক উপেক্ষা করতে পারে নি সোহা। দৌড়ে ছাদে চলে যায়।

ছাদে গিয়ে বেশ অবাক হয় পুরো ছাদ বাহারি মরিচা বাতিতে লাইটিং করা।কতো সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। নানান ধরনের ফুল আর বেলুন দিয়ে ডেকোরেট করা হয়েছে সব কিছু। সোহা অবাক হয়ে চারপাশ দেখে।

হঠাৎ করেই সব আলো নিভে যায়।সোহা এতে কিছুটা হকচকিয়ে যায়। তারপর আবার আলো জ্বলে উঠে।

সোহা সামনে তাকিয়ে দেখে তার সামনে দায়ান হাঁটু গেড়ে বসে আছে। হাতে ফুলের তোরা।

দায়ান সোহাকে মায়াময় কন্ঠে ডেকে উঠে,, সোহা,,,

সোহা দায়ানের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়।

আমি জানি না কিভাবে প্রপোজ করতে হয়।এতো ঘুরিয়ে পেচিয়ে কথা বলতে ও পারি না। তাই সোজাসাপটা বলছি।

“আই লাভ ইউ ”

আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি।তোমার সাথে আমার জীবন টা কাটাতে চাই।তুমি আমার এই ছন্ন ছাড়া জীবনে এসে আমাকে আবার নতুন করে বাঁচতে শিখিয়েছো।আমি আমার এই পাখি কে অনেক ভালোবাসি।

আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি সোহা।

হুমম ধন্যবাদ।

ধন্যবাদ মানে? আমি তোমাকে ভালোবাসি তো।

এই জন্যইতো বললাম ধন্যবাদ। আপনি আমাকে ভালোবাসেন তার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

ভালোবাসার বিপরীতে কেউ ধন্যবাদ বলে? প্লিজ উত্তর টা দাও না। তোমার মুখ থেকে উত্তর টা শোনার জন্য আমার কান দুটো অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।

ভালোবাসিতো পাখি।

#চলবে,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here