তুমি হাতটা শুধু ধরো ২ পর্ব -০৫

#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো_২
#পর্বঃ৫(বোনাস)
#Jhorna_Islam

“ঘুরতে যাবেন আমার সাথে? ”
প্রশ্নটা করে সোহা নিজেই বে’কুব হয়ে গেলো।কি আ’জিব ওর সাথে ঘুরতে যাওয়ার কথা কেনো বলছে? সেতো রুশের কথায় দায়ান কে বলতে এসেছিলো রেডি হয়ে নিচে বের হওয়ার জন্য। লোকটার কাছে এসে সব গুলিয়ে গেলো!

সকলে মিলে সোহার নানির বাড়ি যাবে বলে ঠিক করেছে।এক গ্রামেই শেষ মাথায় সোহার নানির বাড়ি।সোহার নানি অসুস্থ হাঁটতে পারে না।

নিজের বড় নাতনি ও নাত জামাইকে এক সাথে দেখতে চেয়েছেন তিনি।যদিও আরো কয়েকবার রুশকে দেখেছে তাও তখন তো আর রুশকে নাত জামাই হিসাবে দেখেন নি আর ভাবেন ও নি।তাই দুইজন কেই এক সাথে দেখতে চান।সেজন্য বাড়ির সকলেই যাবে।

দায়ান কে রুশই আসছিলো বলার জন্য। কিন্তু মাঝ পথে অফিসের দরকারি কল আসে।তাই কথা বলতে হবে।এদিকে দায়ান কেও বলা লাগবে নয়তো রেডি হতে দেরি হয়ে যাবে।রুশ এসব ভাবনার মাঝেই দেখতে পায়,,

সোহা গুন গুন করে গান গাইতে গাইতে এদিকেই আসছে।তাই সোহার কাছে গিয়ে বলে,,

সোহা তুই না আমার ভালো বোন?

সোহা রুশের দিকে তাকায় নিশ্চয়ই এই বেটার কোনো মতলব আছে তাই কথায় এতো মাখন মিশাচ্ছে। তারপর বলে আমি কি সবাই জানে আমি ভালো।তোমার আর ঘ’টা করে বলতে হবে না। কি বলবা সোজাসাপটা বলে ফেলো।তার আগে তোমার হাতে বাজতে থাকা যন্ত্রটা উঠাও।রিংটোনে বিরক্ত লাগছে।

এই জন্যই তোকে ডাকছি। আমার জরুরি কল এসেছে কথা বলতে হবে।সকলে তো প্রায় রেডি। দায়ান কে এখনো বলা হয় নি।ওর তো রেডি হতে হবে নাকি? নয়তো আমাদেরই লেট হয়ে যাবে। আমি কলটা এটেনড করছি তুই প্লিজ উপরে গিয়ে দায়ান কে একটু তৈরি হতে বল বোন।

কিহ্ বলেই চিল্লিয়ে উঠে সোহা।আমি? আমি পারবনা।

প্লিজ বোন আমার যা।বলেই সোহাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই কল রিসিভ করে বাইরের দিকে চলে যায়।

সোহা রুশের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বিরক্তকর নিশ্বাস ছাড়ে। ঘুরে ফিরে সবাই ওকেই কেনো ঐখানে পাঠায়?

———————-
দায়ান সোহার কথা শুনে সোহাকে জিজ্ঞেস করে তোমার সাথে ঘুরতে যাবো মানে?

— না মানে আমার সাথে নাতো।ঐটা ভুলে বলে ফেলেছি।রুশ ভাইয়া বলেছে আপনাকে রেডি করাতে। না মানে রেডি হয়ে নিচে যেতে।

— ভালো করে বলতে পারো না? কিসব পেচিয়ে কথা বলছো!

— সোহা মনে মনে বলে আপনার সামনে আসলেইতো আমার পে’চ ‘গো’চ লেগে যায় আমার কি দোষ? মুখে বলল আসলে বাড়ির সকলে নানির বাড়ি যাবো। নানি আপুকে আর রুশ ভাইয়া কে একসাথে দেখতে চেয়েছেন।

— তো ওদের দেখতে চেয়েছে ওরা যাবে।

— বাড়ির সকলেই যাচ্ছি। আপনি একা বাড়িতে থাকবেন? আপনি কি যাবেন না?

— নাহ তোমরা যাও আমার ভালো লাগছে না।

— নানি আপনাকে ও দেখতে চেয়েছে সেই ছোট থাকতে নাকি দেখেছে।( ডা’হা মিথ্যা কথা)

— আমাকে তোমার নানি কেনো দেখতে চাইবে? ব্রু কোচকে জানতে চায় দায়ান।

— আমি কি জানি সেটা গিয়ে না হয় নানি কেই জিজ্ঞেস করবেন। তারাতাড়ি তৈরি হয়ে নিচে আসেন।সকলে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে বলেই সোহা দ্রুত বের হয়ে যায়।

———————————
সোহা সোফায় চুপচাপ বসে মোবাইল টিপছিলো।এমন সময় পিছন থেকে কেউ এসে ওর চোখ চেপে ধরে। হাত দুটি খুবই ঠান্ডা ও শীতল।সোহার শরীর কিছু টা কেঁপে ওঠে এমন স্পর্শে।

মনে মনে ভাবে কোন ব’জ্জা’ত রে। এমনিতেই এসব চোখ ধরা আর চুল টানাটানি নিয়ে সকালে কি কান্ড ঘটালো।এখন আবার সেই চোখ ধরা।

তারপর ই মাথায় আসে সোহার সাথে এরকম কাজ একজন ছাড়া আর কেউ করবে না। আর সেটা হলো তমা।

তা/মাক পাতা চোখ ছাড়। মনে হচ্ছে বরফ কু’ন্ড’লী থেকে হাত বের করে এনেছিস।উফফ কি ঠান্ডা আমার শীত লেগে কাঁপুনি উঠে গেলো।

সোহা বুঝতে পেরে গেছে বলে তমা সোহার চোখ ছেড়ে পাশে এসে বসে। তারপর মনটা খারাপ করে বলে,, তোর সাথে আমি মজা ও করতে পারি না। তুই সব সময় আমায় ধরে ফেলিস সব বোঝে যাস।

সোহা তমার দিকে তাকিয়ে মুখ বা’কায়।

এসব ছাড় আজ যে বাড়ি থেকে বের হলি না।ছাদে ও তো দেখলাম না আমাদের বাড়ি থেকে তোকে।কি করছিলি সারাদিন? এখন চল ঘুরে আসি গিয়ে।আমাদের আর কাজ কি মাত্র এক্সাম শেষ করলাম।কিছুটা দিন রিলেক্স করবো।

আমি এখন কোথাও যেতে পারবো না।নানুর বাড়ি যাচ্ছি সবাই মিলে।

ওহ আচ্ছা তাহলে আর কি করার? আমি চলে যাই।

সোহার মা পিছন পিছন বলে উঠে,, এসেছিস যখন তুই ও আয় আমাদের সাথে।

আমায় নিবা কাকি?

এটা আবার কেমন কথা? নেওয়ার জন্যই তো বললাম।

ঠিক আছে কাকি আমি ও তাহলে তোমাদের সাথে যাবো। বলেই তমা একটা হাসি দিলো।

পাশ থেকে সোহা চোখ মুখ কোচকে মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। মায়ের সবটায় বাড়াবাড়ি। এই আ’প’দ কে আবার বলার কি ছিলো? আর এই মেয়েকে দেখো এক বলায় কিরকম রাজি হয়ে গেছে। আবার এইখানে নাচানাচি শুরু করে দিয়েছে।তমার সাথে চলা ফেরা করলেও সোহার তমার অনেক কিছুই পছন্দ না।এখন মায়ের উপর কিছু বলতেও পারবে না।বললে না আবার ধমক দিয়ে বলে তমা যাবে তুই বাড়িতে থাক।তোরই কোথাও যাওয়া লাগবে না। অ’স’ভ্য মেয়ে।

সকলেই একে একে রেডি হয়ে নিচে উপস্থিত হচ্ছে।

সোহা শুধু বার বার উপরের দিকে তাকাচ্ছে। মনে মনে চাচ্ছে লোকটা যেনো আসে। আসবে তো লোকটা? নানি দেখতে চায় বলার পরও কি আসবে না? এতো কষ্ট করে মিথ্যা কথাটা বলল সেটা কি কোনো কাজে দিবে না?

পরোক্ষনেই আবার বলে ধূ’র আসলে আসবো না আসলে নাই আমার কি? আমি এতো ভাবছি কেনো?

এর মধ্যে সোহার বাবা বলে উঠে,, দায়ান যে এখনো নিচে এলো না।সে কি আমাদের সাথে যাবে না?

দায়ানের মা বলে উঠে,, বলেছিলাম তো ভাই। রুশকেও পাঠিয়ে ছিলাম।রুশ তো বাইরে। কে জানে কি বলেছে।যাবে কি না।

রুশের মা বলে উঠে আপা টেনশন নিও না আমি দেখে আসছি বলে সিরির দিকে তাকিয়ে পা থামিয়ে দেয়।

সোহা ও তার দৃষ্টি সিরি তে দিয়ে থমকে যায়। চোখ মুখে বিস্ময় খেলা করছে।

দায়ান হাত ঘড়ির বেল্ট লাগাতে লাগাতে নিচে নেমে আসছে।পরনে হোয়াইট টি-শার্টের উপর নেভি ব্লু শার্ট।শার্টের বোতাম গুলো খোলা।হাতা গুটিয়ে কুনুই পর্যন্ত রাখা। সোহা মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে। বুকের ভিতর শব্দ তরঙ্গ হচ্ছে জোরে জোরে ঢিপ ঢিপ। নিজের হাতটা বুকের বা পাশে রেখে আস্তে করে বলে উঠে হায়য়!

রুশের মা বলে উঠে ঐতো দায়ান বাবা এসে পরেছে।এবার সবার যাওয়া যাক?

সকলেই বলে হ্যা চলো।

সোহা এখনো দায়ানের দিকে তাকিয়ে আছে।পিছন থেকে কারো কথায় ধ্যা’ন ভাঙে। এইই সোহা এই মা/ল,, তমা আর কিছু বলার আগেই সোহা রাগী চোখে তাকায়।

না ইয়ে মানে আসলে এই হ্যা’ন্ড’সাম বয় টা কেরে? উফফ কি লুক ইয়ার।ক্রাশ খাইছি।

যে ভাবে ক্রাশ খাইলি সেভাবেই ব’মি করে ফেলে দে।ব’মি না আসলে বল আমি তোর মুখে বাম হাতের আঙুল ঢুকাই? তাহলে এমনিতেই ব’মি আসবে।

ছিঃ সোহা ইয়াক কি বলছিস এসব?

ঠিকই বলছি। একদম উনার দিকে নজর দিবি না।লু’চি পরোটা একটা।উনি আমাদের বাড়ির গেস্ট। ভাই নজরে নানা কাকা নজরে দেখবি।

এখন চল।সবাই আমাদের রেখেই চলে যাচ্ছে।

যেহেতু বেশি দূরত্বের নয় সোহার নানুর বাড়ি।তাই সকলে হেটেই রওনা দিয়েছে। গল্প করতে করতে যাচ্ছে সকলেই।

সোহা হাটছে আর আর চোখে দায়ানের দিকে তাকিয়ে দায়ান কে দেখছে।আর ভাবছে আচ্ছা লোকটাকে হাসলে কেমন লাগবে? আপুর কাছ থেকে লোকটার ব্যাপারে অনেক কিছু শুনেছে।অনেক নাকি হাসি খুশি ছিলো।

প্রায় পনেরো মিনিটের মাথায় সোহার নানির বাড়িতে সকলে উপস্থিত হয়। আরো আগে আসতে পারতো কথা বলতে বলতে আসায় একটু দেরি হয়ে গেছে।

সোহার মামিরা নানান ধরনের খাবারের আইটেম সাজিয়ে রেখে দিয়েছে। বাড়ির বড় সদস্য রা গিয়ে আগে সোহার নানির সাথে দেখা করে এসেছে।

তারপর রুশ আর নোহা যাবে।রুশ দায়ানকে জোর করে নিয়ে গেছে। দেখা করার জন্য।
সোহার নানি রুশ আর নোহাকে দেখে মন ভরে দোয়া করে দিলেন।এর মধ্যে রুশের কল আসায় আসছি বলে বের হয়ে যায়।

নোহা নানিকে দায়ানের পরিচয় দেয়।নানি দায়ানকে চিনতে পারে।

কিও নানু ভাই,,,ছোটোভাই হয়ে তোমার আগে রুশ কাজ সেরে ফেলল তুমি কবে সারবা? নাত বউ দেখবোনা?

সোহা তখন মাত্র নানির কাছে আসতে চেয়েছিলো। এসব কথা শুনে আর রুমে ঢুকে না।

নানির কথায় দায়ানের পুরোনো ঘা আবার তা’জা হয়ে উঠে। চোখ গুলো ছলছল করছে। কিছু না বলেই রুম থেকে সোহাকে পাশ কাটিয়ে বের হয়ে যায়।

নোহা বলে উফফ নানু তুমি যে কি করোনা ধুর।বলেই নোহা ও বের হয়ে যায়।

দায়ানের ছলছল করা চোখ দুটি দেখে সোহার খারাপ লাগে।সবই শুনেছে দায়ান আর তিশার ব্যাপারে।

——————–

দায়ান বাইরে এসে নিজেকে সামলে নেয়।

সকলে এটা ওটা নিয়ে ওদের আপ্যায়নে ব্যস্ত। পাশ থেকে পোলাপানের চিৎকার চেচামেচি শুনে দায়ান এগিয়ে যায় দেখার জন্য কি হয়েছে সেখানে।

আস্তে করে সকলেই এগিয়ে যায়। দায়ান এগিয়ে গিয়ে দেখে নোহার মামাতো ভাই বোনেরা সবাই মিলে রুশ কে আঁটকে ধরেছে।
রুশ ওদের বলছে ভাইয়েরা ও বোনেরা আমার তোরা থাম।আমার সাথে এমন করিস না।দারা তোদের চকলেট খাওয়ার টাকা দিচ্ছি। একথা শুনে সকলেই শান্ত হয়ে যায়।

মাঝখান থেকে সোহা বলে,,,,,,

“হেই রুশ তুমি হারিয়েছো কি তোমার হু’শ?”
বাচ্চা পোলাপানদের দিচ্ছো কেনো তুমি ঘু’ষ?
এদের হাত থেকে বাঁচার জন্য তুমি কি করছো উ’শ’খু’শ?
আমি কিন্তু তোমার পিঠে তাল(কিল)ফালাবো ঠাসঠুস।”

#চলবে,,,,,,,,,,

বিঃদ্রঃ যারা সোহার করা কাজ কে ন্যা’কা’মো ভাবছেন তাদের বলছি একজন গ’ম্ভী’র হলে আরেকজনকে কিছুটা চ’ঞ্চল হতে হয়।দুই জনকে গ’ম্ভী’র ভালো লাগবে না। আর অবশ্যই জানাবেন কেমন লাগলো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here