#তুমি_হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_৫৪
” আদ্রিয়ান স্যার। আপনারা এত রাতে এখানে! ”
লেকের ধারে দাঁড়িয়ে তূর্ণ। তার বক্ষস্থলে পৃষ্ঠ ঠেকে মাইরা’র। একে অপরের সান্নিধ্যে মনোরম মুহূর্ত উপভোগ করছে তারা। একান্ত জনের হস্তদ্বয়ে বন্দী দুয়া’র কোমল গাত্র। বদ্ধ দু’জনার আঁখি পল্লব। ঝিরিঝিরি হাওয়া ছুঁয়ে যাচ্ছে কায়া। জাগতিক হুঁশ হারিয়ে তারা এখন প্রণয় বসুধায়। মগ্ন একে অপরেতে। ঠিক সে মুহূর্তে শোনা গেল সম্পূর্ণ অনাকাঙ্ক্ষিত কণ্ঠস্বর। ঘোর কেটে গেল তূর্ণ, দুয়া’র। আঁখি মেলে তাকালো। তড়িঘড়ি করে দুয়া সরে যেতে উদ্যত হলো। তবে পুরোপুরি সফল হলো না। ওর ডান হাতটি মুঠোয় নিয়ে পিছু ঘুরে তাকালো তূর্ণ। চমকালো তিয়াশকে দেখে! শুধু তিয়াশ একা উপস্থিত নয়। পাশে অবাক নেত্রে তাকিয়ে মিহাদ! মিহাদ শীঘ্রই অবাকতার রেশ কাটিয়ে দুষ্টু হেসে দিলো। তূর্ণ মৃদু গম্ভীর স্বরে শুধালো,
” তোমরা এখানে? ”
” হাঁ ভাইয়া আমরা। তবে তোমরা এখানে কি করছো? ভাবির সাথে হ!টিনটি টাইম স্পেন্ড করছিলে বুঝি? আমরা এসে খুব ডিস্টার্ব করে ফেললাম? ”
মামাতো ভাইয়ের কথা শুনে লাজে আর’ক্ত হলো দুয়া। শেষমেশ ভাইয়া এমন করে লজ্জা দিচ্ছে! সে দৃষ্টি অবনত করে মিনমিনে গলায় ডেকে উঠলো,
” ভাইয়া! ”
মিহাদ দাঁত কেলিয়ে হাসলো। জিভ কা মড়ে হাসি মুখে বলে ফেললো,
” ওপস্ সরি সরি। ভাবিজি লজ্জা পাচ্ছেন। ”
তূর্ণ চোখ পাকিয়ে তাকালো। প্রশ্নবিদ্ধ চাহনিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
” তুই এত রাতে এখানে কি করছিস? বি ড়ি টানতে এসেছিস?”
তৎক্ষণাৎ নেতিবাচক মাথা নাড়লো মিহাদ। চোখ বড় বড় করে বলে উঠলো,
” আসতাগফিরুল্লাহ্! না না। ছিঃ! আমি ওসব খাই নাকি? ”
” খাস কিনা বললি নাকি জিজ্ঞেস করলি? ”
মিহাদ ঢিমি স্বরে বললো, ” আমি ওসব ছাইপাশ খাই না। ”
” গুড। তাহলে এত রাতে এখানে কি করছিস? আমি না হয় বউয়ের সাথে হ!টিনটি টাইম স্পেন্ড করছিলাম। কিন্তু তুই? তুই এখানে কি করছিস? আমাদের ফলো করতে করতে এসেছিস? ”
স্যারের মুখে এমন বেশরম উক্তি শুনে তিয়াশ লজ্জায় পড়ে গেল। কোন আক্কেলে যে এখানে আসতে গিয়েছিল? এখন অহেতুক বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। ইশ্! মিহাদ ভাইয়ের কথার পৃষ্ঠে থেমে থেমে বললো,
” আসলে ভাইয়া। আমার ঘুম আসছিল না। তার ওপর তুমি রুমে ছিলে না। তাই হাঁটতে হাঁটতে এদিকটায় চলে এলাম। পথে অবশ্য ওর সাথে আই মিন তিয়াশের সাথে দেখা হলো। ও-ও নিদ্রাহীন হয়ে ইতিউতি করছিল। তাই হাঁটতে হাঁটতে… ”
” বড় ভাইয়ের কোয়ালিটি টাইমে বাগড়া দিতে চলে এলি? তাই তো? ”
মিহাদ কিছু বলার পূর্বেই দুয়া স্বামীকে আটকালো। কর্ণ কুহরে অধর ঠেকিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,
” তুমি থামবে? কিসব বলছো? ছোট ভাই, স্টুডেন্ট ওরা। একটু তো বুঝেশুনে কথা বলো। সবসময় সব জায়গায় ঠোঁটকা-টা কথা বলতে নেই। ”
তূর্ণ বক্র হেসে সম্মোহনী স্বরে বললো,
” তবে কি শুধু বউয়ের কাছেই ঠোঁটকা-টা নির্লজ্জ অবতার নেবো? ”
লাজে আড়ষ্ট রমণী স্বামীর বাহুতে আলতো চাপড়
মে রে দ্রুত কদম ফেলে সেথা হতে প্রস্থান করলো। অর্ধাঙ্গীর গমন পথে তাকিয়ে তৃপ্তিময় হাসলো তূর্ণ। তিয়াশ স্বচক্ষে অবলোকন করলো বন্ধুর সংসার জীবন। আসলেই দুয়া খুব ভালো আছে, সুখে আছে। আদ্রিয়ান স্যার বিহীন অন্য কেউ ওর মতো পা,গলীকে এত সুন্দর রূপে আগলে রাখতে পারতো না। এরা দু’জনে প্রকৃত রূপে একে অপরের পরিপূরক!
•
পরেরদিন। সূর্য মামার আলোক রশ্মিতে উজ্জ্বল ধরিত্রী। বিছানায় বসে তাহমিদা। দু হাঁটু ভাঁজ করে ডান পার্শ্বে এলিয়ে রাখা। কোলে শুয়ে তার কনিষ্ঠ কন্যা দুয়া। উনি মাতৃস্নেহ বুলিয়ে চলেছেন মেয়ের কেশের ভাঁজে ভাঁজে। আজ আদুরে কন্যার মেহেদী অনুষ্ঠান। আর মাত্র ক’দিন। স্বামীর সনে দ্বিতীয়বারের মতো পবিত্র এক বাঁধনে বাঁধা পড়তে চলেছে মেয়েটা। ওনার ছোট সে-ই আদুরে মেয়েটা দেখতে দেখতে সময়ের পরিক্রমায় কত বড় হয়ে গেল। এখন পড়াশোনা, ঘরসংসার দু-ই সামলাতে শিখে গেছে। এই মেয়েকে নিয়েই তো ওনার চিন্তার অন্ত ছিল না। ছোট থেকেই গুলুমুলু মেয়েটা সবার আদরের। অল্পতেই মন জয় করতে জানে। মিশুক স্বভাবের। বড় মেয়ে যেখানে স্বল্পভাষী সেখানে ছোট মেয়ে ছিল ননস্টপ রেডিও। সকলের মাঝে নিজেকে মানিয়ে নেয়ার অসীম কারিশমা রয়েছে ওর মধ্যে। তবে বড় আলসে ছিল। মাঝেমধ্যে ভীত হয়েও পড়তো। নিজের কাজ নিজে করতে চাইতো না। উনি এবং তানজিনা ই ওর কাজগুলো করে দিতেন। দিনে দিনে মেয়েটা যেন আরো আলসে, পরনির্ভরশীল হয়ে পড়ছিল। এজন্য ওনার চিন্তার শেষ ছিল না। মেয়ের বিয়ের বয়স হয়েছে। যেকোনো সময় যেকোনো জায়গা থেকে বিয়ের প্রস্তাব আসতে পারে। বিয়ের পর এই আলসে মেয়েটা করবে কি? নিজের কাজ করা তো পরের কথা, শ্বশুরবাড়ির লোকগুলোকে আগলে রাখতে পারবে তো? তবে স্রষ্টার অসীম কৃপায় ওনার চিন্তা হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। মেয়ে হলো বড় বোনের পুত্রবধূ। সেথায় আদরে ভালোবাসায় ওনার অবুঝ, দুষ্টু মেয়েটা বুঝদার হতে শুরু করলো। আজ সে বেশ সংসারী হয়ে উঠেছে। ক’দিন পর বিবাহিত জীবনের এক বর্ষ পূর্ণ হবে। সুখেশান্তিতে রয়েছে ওনার সে-ই অবুঝ পা*গলী মেয়েটা। বিয়ের পর সব মেয়েরা বুঝি এভাবেই বুঝদার হয়ে যায়। ঘরসংসার আগলে রাখতে শিখে যায়। এজন্য কোনো প্রশিক্ষণ কিংবা পূর্ব অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয় না। স্বয়ংক্রিয় ভাবে স্রষ্টার রহমতে হয়ে যায়। মুচকি হেসে মেয়ের কেশের ভাঁজে চুম্বন এঁকে দিলেন উনি। আঁখি পল্লব বুজে থাকা মেয়েটি মাতৃস্নেহ উপলব্ধি করে তৃপ্তিময় হাসলো।
.
আঁধারিয়া রজনী। রিসোর্টের একাংশে ফাঁকা স্থানে আয়োজন করা হয়েছে চমৎকার আউটডোর মেহেন্দি সজ্জা। এ বহিরাঙ্গন মেহেদী অনুষ্ঠানের সাজ অত্যন্ত সুন্দর থিম, শৈলি এবং রঙের মিশ্রনে অপূর্ব লাগছে! চারিপাশ হতে হলদে কার্টেন গিয়ে সংযুক্ত হয়েছে, সামিয়ানা হিসেব মাথার উপরিভাগে থাকা হলদে কাপড়ে। আশপাশে অসংখ্য ফেইরি লাইটস আলো ঝলমলে পরিবেশ তৈরি করেছে। হলদে রঙা অপূর্ব ক্যাবানার অন্দরে বেশ চমৎকার আয়োজন করা হয়েছে। বসার জন্য বেশ কতগুলো হলদে মোড়কে আবৃত আসন। সেগুলোর ওপর কমলা রঙে রঙিন কুশন সমূহ। পাশে কিছু বেতের তৈরি সিঙ্গেল আসনও রয়েছে। সব মিলিয়ে সে এক মনোরম আয়োজন!
বরাদ্দকৃত স্থানে বসে দুয়া। পড়নে তার হলদে রঙা বন্ধনী আনারকলি। আনারকলি’র গোলাকার গলা এবং গলার ডিজাইনে পোটলি বোতাম। সাদা এবং হলুদ চিনন শিফন দোপাট্টা’তে দেহের উর্ধাংশ শালীনতার সহিত আগলে রাখা। চুলের মধ্যখানে লম্বা সিঁথি টানা। দীঘল কালো কেশ পৃ্ষ্ঠে লেপ্টে। মুখখানিতে হালকা কৃত্রিম প্রসাধনীর ছোঁয়া। দু কানে ঝুমকা। এতটুকুই সাজ। দেখতে অপরূপা লাগছে! মেহেদী অনুষ্ঠানে আজ পুরুষরা নিষিদ্ধ। শুধুমাত্র রমণীবৃন্দ সেথায় উপস্থিত। দুয়া’র হাতে ব্রাইডাল মেহেদী রাঙিয়ে দিচ্ছে মেহেদী আর্টিস্ট। পাশে বসে আলাপণে ব্যস্ত পুষ্পি, সিনথিয়া, বিন্দু, দিবা। দুয়া হাসিমুখে বসে তো রয়েছে। তবে তার অবাধ্য দৃষ্টি খুঁজে বেড়াচ্ছে একজনকে। কোথায় সে? কিয়ৎক্ষণ পূর্বে এখানেই তো উপস্থিত ছিল।
.
বাবা এবং চাচুর সঙ্গে প্রি ওয়েডিং ফাংশন নিয়ে আলাপণে লিপ্ত তূর্ণ। তারা দাঁড়িয়ে এই মুহূর্তে রিসোর্টের লনে। আঁধার পরিবেশে কৃত্রিম আলোর আচ্ছাদন। কথোপকথনে লিপ্ত তৃ পুরুষ। ঠিক সে মুহূর্তে সেথায় উপস্থিত হলো নিশাদ। অনিচ্ছা সত্ত্বেও ওদের কথোপকথনে বাঁধা প্রদান করতে বাধ্য হলো। মৃদু স্বরে ডেকে উঠলো বন্ধুকে,
” তূর্ণ! ”
ওর ডাকে সাড়া দিয়ে তাকালো তূর্ণ, ” হুম বল। ”
” একটু এদিকে আয়। ”
তূর্ণ বন্ধুর কথায় অতটা পাত্তা না দিয়ে বললো,
” একটু দাঁড়া। কথা শেষ করে আসছি। ”
নিশাদ উদ্বিগ্ন কণ্ঠে তাড়া দেখিয়ে বললো,
” আরে ভাই। জলদি আয় না। লাইনে রয়েছে একজন। ”
নিশাদের হাতে মোবাইল। কেউ কলে রয়েছে। নিজাম সাহেব এ লক্ষ্য করে ছেলেকে বললেন,
” তুই কথা বল। আমরা আসছি। ”
দুই ভাই সেথা হতে প্রস্থান করলেন। তূর্ণ বন্ধুর কাঁধ চাপড়ে শুধালো,
” কি হয়েছে বল। এত হাপুশ হুপুশ করছিলি কেন? ”
নিশাদ মোবাইল এগিয়ে দিলো। চিন্তিত স্বরে বললো,
” কথা বল। বুঝতে পারবি। ”
তূর্ণ ঠিক বুঝতে পারলো না। হাত বাড়িয়ে মোবাইল নিলো। ঠেকালো কর্ণ কুহরে।
” হ্যালো আসসালামু আলাইকুম। আদ্রিয়ান আয়মান তূর্ণ স্পিকিং। ”
.
তৃষা ব্যস্ত পায়ে হেঁটে চলেছে রিসোর্টের করিডোর ধরে। এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। তৃষ্ণার্ত নয়ন জোড়া খুঁজে চলেছে একজনকে। তাকে না দেখা অবধি শান্ত হচ্ছে না অন্তঃস্থল। ঝড়ো হাওয়ায় ল.ণ্ডভণ্ড হয়ে যাচ্ছে সব। ভেতরে ভেতরে গুমড়ে উঠছে মেয়েটি। বরফের ন্যায় ঠাণ্ডা শীতলতা জেঁকে ধরছে আষ্টেপৃষ্ঠে। শরীরে বিদ্ধ হচ্ছে অবিরাম। র-ক্তাক্ত করে তুলছে ভেতরকার সবটুকু। অত্যন্ত ব্যথিত বদনে হেঁটে যাচ্ছিল মেয়েটি। হঠাৎ তার পদযুগল থমকে গেল। নয়নে ধরা দিলো অতি আকাঙ্ক্ষিত জন। তৃষা অমোঘ আকর্ষণে ব*শীকরণ হলো বোধহয়। দ্রুত পায়ে সেদিকে অগ্রসর হতে লাগলো।
দুশ্চিন্তায় মস্তিষ্কে ভ;য়াবহ গর্জন হচ্ছে। শুকনো বদনে দাঁড়িয়ে নিশাদ। দৃষ্টি নিবদ্ধ জমিনে। মাথার পেছনের চুলগুলো ডান হাতে আঁকড়ে ধরে অস্থির হয়ে রয়েছে। ঠিক তখনই শুনতে পেল হৃদয়ে লুকানো রমণীর কণ্ঠ,
” এসময়ে এখানে কি করছেন? ”
অসীম খুশিতে ভরে উঠল হৃদয়। তার প্রেয়সী! সে। সে স্বেচ্ছায় কথা বললো! তার খোঁজ করছে? পূর্বের ন্যায় সবটা থাকলে এ মুহূর্তে নিশাদের চেয়ে খুশি বোধহয় আর কেউ হতো না। তবে এখন সময়, পরিস্থিতি, প্রত্যাশা সবটাই ভিন্ন। তাই তো জোরপূর্বক নিজেকে দমিয়ে নিলো নিশাদ। মুঠো মুক্ত করলো চুল। হাতটি নামিয়ে নিলো। কোনোরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত বিহীন সেথা হতে চলে যেতে উদ্যত হলো। তবে বাঁধাপ্রাপ্ত হলো আচমকা।
” চলে যাচ্ছেন? জবাবটা দিলেন না তো। ”
তৃষা ঘাবড়ে রয়েছে। নিজে থেকে কথা তো বলতে এসেছে। তবে কি থেকে কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না। ভুলভাল বলে চলেছে। গণ্ডস্থল শুকিয়ে মরুভূমির ন্যায় শুষ্ক। খাঁ খাঁ করছে। শব্দমালা যেন পলায়ন করেছে ভূতুড়ে রজনীর বুকে। তৃষার এই অপ্রত্যাশিত আচরণ আর সইতে পারলো না মানুষটি। তৎক্ষণাৎ তেঁতে উঠলো। পিছু ঘুরে ওর চোখে চোখ রেখে কাঠিন্যতা মিশ্রিত স্বরে বলে উঠলো,
” জবাব দিতে হবে? কেন? হু আর ইয়্যু? আমার জিএফ, বউ নাকি বাগদত্তা? কোনটা? কোনোটাই নয়। তুই শুধুমাত্র আমার বন্ধুর বোন। সো স্টে ইন ইয়্যুর লিমিটস। ওকে? ”
হতবিহ্বল রমণীর অক্ষি ফেটে অশ্রু বিন্দু উপচে পড়তে চাইছে। চরমভাবে ধরাশায়ী অন্তঃস্থল। সর্বদা এ মানুষটির মিষ্টিমধুর শাসন পেয়ে এসেছে সে। কখনো এমন কঠিন স্বর শুনতে পায়নি। সেখানে আজ সামান্য, ক্ষুদ্র কারণে মানুষটি এভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছে? অভিমান নাকি অপমান জানা নেই। টলমলে চোখে তাকিয়ে তৃষা। ক্ষীণ স্বরে প্রশ্ন করে বসলো,
” আ আপনি এমন করে বলছেন কেন? ”
” তাহলে কিভাবে বলবো? অস*ভ্য লোকেরা এর চেয়ে ভালো ভাষায় কথা বলে বুঝি? ”
” আ-আমি আসলে.. ”
ডান হাতের তেলো দেখিয়ে থামতে ইশারা করলো নিশাদ।
” স্টপ। মনমেজাজ এমনিতেই ভালো নেই। আগুনে আর ঘি ঢেলে দিস না। জাস্ট লিভ মি অ্যালোন। ”
সেথা হতে প্রস্থান করার ইশারা করলো নিশাদ। প্রেয়সীর অশ্রুসিক্ত বদন দেখেও সে যেন আজ ভাবলেশহীন। কঠিন। কিছুই এসে যায় না। চুপচাপ মুখ ঘুরিয়ে দাঁড়ালো। এমন বিরূপতা সইতে পারলো না তৃষা। একরাশ যাতনা নিয়ে সেথা হতে ছুটে পালালো। পেছনে রয়ে গেল চিন্তিত এক মানব।
.
আনন্দে মুখরিত মেহেদী অনুষ্ঠান। সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হলো। হবু কনের দু হাত রাঙা হলো মেহেদীর পরশে। মেহেদী রাঙা কোমল দু’টো হাত সাবধানে আগলে রেখে কক্ষের উদ্দেশ্যে রওনা হলো দুয়া। পৌঁছালো কক্ষে। নয়নতারায় আবদ্ধ হলো ননদের অবয়ব। বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে মেয়েটি। মুখ গুঁজে বালিশের আবরণে। ক্ষণে ক্ষণে কম্পিত হচ্ছে কায়া। সে দৃশ্য অবলোকন করে দুয়া সম্পূর্ণ ভাবলেশহীন ভাবে করে বসলো অনাকাঙ্ক্ষিত এক প্রশ্ন,
” নিশাদ ভাইয়ার সঙ্গে তোর কি চলছে? ”
ক্রন্দনে লিপ্ত রমণী হতবিহ্বল হলো। ভুলে গেল ক্রন্দন। অশ্রুসজল নয়নে পিছু ঘুরে তাকালো। দুয়া ওর দিকে না তাকিয়ে বিছানার এক ধারে গিয়ে বসলো। ডান হাতের তর্জনী ও মধ্যমা ব্যবহার করে কোনোমতে দেহ হতে ওড়না সরিয়ে নিলো। সিলিং ফ্যানের নিম্নে আরামে দেহ এলিয়ে দিলো হেডবোর্ডে। তৃষা ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে। বোধগম্য হচ্ছে না কিছুই। কি বলবে, কেমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করবে তা অজানা। প্রশ্নের উত্তর না পেয়ে চক্ষু বন্ধ করে দুয়া পুনরায় শুধালো,
” চুপ করে আছিস কেন? বল। কবে থেকে মনের লেনাদেনা চলছে? ”
তৃষা সোজা হয়ে বসলো। কাট-কাট কণ্ঠে বললো,
” কিসের লেনাদেনার কথা বলছিস? কো কোনো লেনাদেনা নেই। ”
চক্ষু মেলে তাকালো দুয়া। ভ্রু উঁচু করে নিশ্চিত হতে শুধালো,
” আচ্ছা? ”
তৃষা অবনত মস্তকে জবাব দিলো, ” হুম। ”
” তাহলে তোমার চোখে অশ্রু কেন ললনা? কাঁদছিলেই বা কেন? ভাবির শোকে? ” দুয়ার কণ্ঠে উপহাসের ছাপ।
তৃষা দু হাতে তড়িঘড়ি করে অশ্রু বিন্দু মুছে নিলো। মৃদু শব্দে হাসলো দুয়া। চক্ষু বন্ধ করে কাব্যিক ভাবে বলতে লাগলো,
” ওহে ললনা! প্রণয় নামক বি!ষধর সাপ তোমায় দং*শন করে ফেলেছে। এবার যে তোমার প্রণয়াসক্ত বি’নাশ আসন্ন।”
মেয়েটির অক্ষি কোল গড়িয়ে অবিরাম অশ্রু ঝড়তে লাগলো। সে ডানে বায়ে মাথা নাড়িয়ে নাড়িয়ে নিজেকে বুঝ দেয়ার ভঙ্গিতে বলতে লাগলো,
” না না। এ-এ হতে পারে না। ”
” ইতোমধ্যে হয়ে গেছে। স্বীকার করতে শিখ তৃষ। অন্যথায় দেরি না হয়ে যায়। ”
দুয়া অনিমেষ নেত্রে তাকিয়ে। চোখে চোখ পড়তেই দৃষ্টি সরিয়ে নিলো তৃষা। পুনরায় বালিশে মুখ লুকিয়ে শুলো। যেন নিজেকে আড়াল করলো। গোপন করলো তার হৃদয়ে লুকানো অনুভূতির বহর। দুয়া তার প্রিয় বন্ধুসম ননদের পাশে দুঃখী চাহনিতে তাকিয়ে রইলো। মনে মনে ভেবে নিলো কিছু ভাবনা।
.
তমস্র রাত্রি। বারিদের আড়ালে লুকায়িত সুদানিধি। লুকোচুরি খেলে চলেছে পেঁজো তুলোর ন্যায় বারিদের সনে। চারিপাশ আঁধারে ঘনিভূত। দূর আকাশে অবস্থিত সুদানিধি’রও বুঝি আজ মন খারাপ। তাই তো আঁধার নেমেছে প্রকৃতির বুকে। ছাদের একাংশে রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে তূর্ণ। থমথমে তার সুকান্ত মুখশ্রী। কপালে সরু এক ফালি ভাঁজ। মানসপটে চলছে অবর্ণনীয় দুশ্চিন্তা। অনাকাঙ্ক্ষিত এ কোন ঝড়ো হাওয়া বয়ে আসছে? ল*ণ্ডভণ্ড করে দিতে চাইছে সাজানো গোছানো সুখের সংসার। একসাথে প্রায় এক বর্ষ কাটালো দু’জনে। অবশেষে বিবাহ বার্ষিকীর দিন নতুন করে আরও একবার পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হতে যাচ্ছিল তারা। আর তো মাত্র ক’টা দিন। তন্মধ্যে এ ঝড়ের আভাস! এটা কি খুব দরকার ছিল? সবটা কি নির্বিঘ্নে সুষ্ঠু রূপে হতে পারতো না? হয়তো পারতো। তবে মহান রবের পরিকল্পনা ছিল ভিন্ন কিছু। তাই তো এ অনাহুত বিপদের উঁকিঝুঁকি! আচ্ছা এ বিপদ কাটাতে তার কি করা উচিত? বেশি বেশি ইবাদত বন্দেগী তো করবেই। এছাড়াও! এই বিপদে তার আপনজন, পরিবারের সদস্যরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না তো? তাদের কিছু হয়ে গেলে…! না না। এ কি ভাবছে সে! ওপর ওয়ালা রয়েছেন। উঁনি নিশ্চয়ই রক্ষা করবেন। সর্বশ্রেষ্ঠ রক্ষক যে উঁনি। মনের মধ্যে একঝাঁক চিন্তাভাবনা ডানা মেলে উড়ে বেড়াচ্ছে। খৈ হারিয়ে ফেলছে চেতনার বৈঠা। ওলোটপালোট কত কি ভেবে চলেছে। নির্ঘুম ছাদে সময় অতিবাহিত হতে লাগলো। কখনো মৃদু পবনে গা ভাসিয়ে দিচ্ছে। কখনোবা হেঁটে বেড়াচ্ছে ছাদের এ প্রান্ত হতে ও প্রান্ত। একটুও স্বস্তি মিলছে না। একাকী রাত। সঙ্গীহীন একেলা বিরহে, দুশ্চিন্তায় পাড় হলো।
চলবে.
[ শেষের পথে তূর্ণয়া’র পথচলা। আর অল্প কিছু পর্ব। সমাপ্ত হতে চলেছে ‘ তুমি হৃদয়ে লুকানো প্রেম ‘. কেমন লাগলো আজকের পর্বটি? বেশ বড় একটি পর্ব দিলাম। শব্দসংখ্যা ২০০০+. গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি। ]#তুমি_হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_৫৫
ভানু’র দ্যুতি ছড়িয়ে ধরনীর বুকে। জানালার ধারে দাঁড়িয়ে বিরহে কাতর ললনা। তার অশ্রুসজল নয়ন জোড়া নিবদ্ধ অর্থহীন ঠিকানায়। অনুশোচনা-অনুতাপে ক্লিষ্ট অন্তঃস্থল। স্মরণে এসে পড়ছে তূর্ণয়া’র বাগদানের মধ্যাহ্ন লগ্ন। সে-ই অনাকাঙ্ক্ষিত মুহুর্ত। দুঃখময় চেহারা, সে চেহারায় একরাশ আকুলতা, নয়ন জোড়ায় অসীম ভালোবাসা। মেয়েটির কপোল ছুঁয়ে গড়িয়ে পড়লো নেত্রজল।
___
আজ তূর্ণ, দুয়া’র বাগদান। স্বাভাবিকভাবেই ব্যস্ত সকলে। তৃষা পুষ্পির সঙ্গে কথা বলতে বলতে লন ধরে এগিয়ে যাচ্ছিল। কিছুটা পথ অগ্রসর হয়ে বিভক্ত হলো তাদের পথ। বায়ের পথে এগিয়ে গেল পুষ্পি। তৃষা ডান দিকের পথে পা বাড়ালো। হঠাৎই হাতে অনুভূত হলো হ্যাঁ’চকা এক টান। ডান পার্শ্বের দেয়ালে পৃষ্ঠ ঠেকে গেল কিংকর্তব্যবিমূঢ় মেয়েটির। তার অবাক নেত্রে দৃশ্যমান হলো নিশাদের মুখখানা। মানুষটির অধরে লেপ্টে দুষ্টু হাসির রেখা। নিশাদ ওর বাহুপাশ সংলগ্ন দেয়ালে দু হাতের ভর ছেড়ে দিলো। কিঞ্চিৎ ঝুঁকে গেল মায়াবী মুখপানে। ফিসফিসিয়ে আদুরে কণ্ঠে শুধালো,
” কি জানেমান? আমায় ছেড়ে কোথায় যাওয়া হচ্ছে? ”
তৃষা ততক্ষণে নিজেকে ধাতস্থ করতে সক্ষম হয়েছে। গমগমে স্বরে বলে উঠলো,
” এ কেমন ধরনের আচরণ? এভাবে কেউ টান দেয়? ”
” নিশাদ দেয়। ” একরোখা জবাব।
কঠোর স্বরে মেয়েটা বলে উঠলো,
” আমার পথ ছাড়ুন বলছি। ”
ঈষৎ নড়েচড়ে ওঠে, ” যেতে দিন। ”
” নো। ” দৃঢ় উত্তর এলো।
” তাহলে কি করবেন? চিপায় এনে র*ঙ্গলীলা করবেন?”
তৃষার অভিব্যক্তি কেমন অস্বাভাবিক। চোখমুখ ম্লান। ওর থেকে হঠাৎ এমন অপ্রত্যাশিত নোং রা বাক্য আশা করেনি নিশাদ। মানুষটার দু হাত স্বয়ংক্রিয়ভাবে আলগা হয়ে গেল। এ কি শুনতে পেল সে? আস্তে ধীরে সোজা হয়ে দাঁড়ালো নিশাদ। হতাশ কণ্ঠে প্রশ্ন করে বসলো,
” এ-এসব কি বলছিস তৃষা? র*ঙ্গলীলা? এ কেমন শব্দ? ”
” ভুল কিছু বলেছি কি? বন্ধুর ছোট বোনকে নিয়ে মানুষ চিপাচাপায় কেন যায়? লুডু খেলতে? ”
নিশাদ তৎক্ষণাৎ বাঁধা প্রদান করলো,
” স্টপ ইট। কিসব ল্যাঙ্গুয়েজ ইউজ করছিস তুই? নিজে আদৌও শুনছিস তো? ”
তৃষা দৃষ্টি নত করে নিলো। জবাব দিলো,
” নিশ্চয়ই শুনছি। আমি তো আর কানে কালা নই। ”
” হাঁ আমি জানি তুই কানে কালা নস। তবুও। তখন থেকে কিসব বলে যাচ্ছিস? শুনতে বাজে লাগছে। ”
চোখ তুলে তাকালো মেয়েটা। বিদ্রুপের স্বরে শুধালো,
” আচ্ছা? শুনতে বাজে লাগে। করতে বাজে লাগে না? লজ্জা করে না বন্ধুর ছোট বোনকে নিয়ে এমন করতে?”
” না করে না। বন্ধুর ছোট বোন হোস তুই। নিজের বোন তো আর নয়। তাহলে লজ্জা করবে কেন? আর তাছাড়াও। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় বন্ধুর ছোট বোনদের প্রতি ছেলেদের আলাদাই একটা অধিকার বোধ থাকে।”
” ওহ্ আচ্ছা। সেই অধিকার বোধের অসৎ ব্যবহার করছেন? ”
দৃষ্টি নত করে,
” আমার তো ভাবতেও অবাক লাগছে আপনি ভাইয়ার বন্ধু। ভাইয়া বন্ধু নির্বাচন করতে শেষমেষ এমন ভুল করে বসলো! কি করে? ”
তৃষার মায়াবী মুখশ্রীতে আজ জিজ্ঞাসু ভাব। নিশাদ অবাক নেত্রে তাকিয়ে। এসব কি বলছে তৃষা? মেয়েটা আজ এমন অদ্ভুদ আচরণ করছে কেন? কি হয়েছে ওর? নিশাদ কোনোমতে নিজেকে সামলে তৃষার মাথায় বাঁ হাত স্থাপন করলো। কেশে আদুরে হাত বুলিয়ে নরম কণ্ঠে শুধালো,
” তৃষা। কি হয়েছে তোর? বল আমায়। নিশাদ ভাইয়া শুনছি। কোনো অসুবিধা হলে বল। ইনশাআল্লাহ্ সলভ্ করে দেবো। বল না কি অসুবিধা হচ্ছে। এমন করে বলছিস কেন? কেউ কিছু বলেছে? নাকি কোনো আবদার পূরণ হয়নি? বল আমায়। নিশাদ ভাইয়া শুনছি। ”
কেশে বুলাতে থাকা হাতটি ঝটকা মে.রে সরিয়ে দিলো তৃষা। দাঁড়ালো মুখ ঘুরিয়ে। অধর কা’মড়ে নিজস্ব অনুভূতি লুকাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। নেত্রকোণে জমায়িত হতে লাগলো অশ্রু কণা। থেমে থেমে বললো,
” অসুবিধার কথা জিজ্ঞেস করছেন? সবচেয়ে বড় অসুবিধা তো আ-আপনি নিজে। ”
হৃদয়ের অন্তঃস্থলে ধক করে উঠলো নিশাদের। অসহনীয় যাতনা জাপ্টে ধরলো চরমভাবে। শুকিয়ে কাঠ হলো গণ্ডস্থল। কণ্ঠনালী বুঝি অবরুদ্ধ। ভেতরটা ছিঁড়ে খানখান। ক্ষীণ কম্পিত স্বরে পুনরায় নিশ্চিত হতে প্রশ্ন করলো,
” আ আমি অসুবিধা? ”
তৃষা ভিন্ন দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে। দৃঢ় স্বরে বললো,
” তা নয়তো কি? দিন নেই রাত নেই অ;ভদ্রের মতো পিছু পড়ে আছেন। আ-পনার জন্য একমাত্র বড় ভাইয়ের বিয়েতে আনন্দ উদযাপনও করতে পারছি না। সবসময় ঝা-ঝামেলা ফেস করতে হচ্ছে। ”
টলে উঠলো সুঠামদেহী মানবের পদযুগল। কর্ণদ্বয় বুঝি আজ বে`ইমানি করে চলেছে। যা নয় তাই শ্রবণ হচ্ছে কর্ণ কুহরে। তৃষা কখনোই এমনটি বলতে পারে না। সে ভুল শুনছে। হাঁ ভুল শুনছে সে। তবে কেন শ্রবণ ইন্দ্রিয়ে পৌঁছাচ্ছে,
” আপনাকে আমি এত করে এড়িয়ে চলছি। বারবার বোঝানোর চেষ্টা করছি ইয়্যু আর নাথিং টু মি। তবুও আপনি পিছে পড়ে আছেন। অস`ভ্য, অ;ভদ্রের মতো তাড়া করে বেড়াচ্ছেন। বড় ভাইয়ের বন্ধু বুঝি এমন হয়? লুজ ক্যারেক্টার? ”
” তৃষা! ” অস্ফুট স্বরে বেদনাদায়ক কণ্ঠ নিঃসৃত হলো নামটি।
” হাঁ তৃষা। আ-আপনার বন্ধুর ছোট বোন। আপনারও ছোট বোনের মতো। তাই দয়া করে এসব বন্ধ করুন। লোক জানাজানি হলে আমার সম্মানহানি হবে। আপনার তো আর কিছু হবে না। আফটার অল পুরুষ মানুষ আপনি। পুরুষ মানুষের আবার কিসের স-ম্মানহানি? সব দোষ তো নারী জাতির। ”
ভেজা কণ্ঠে বলে চলেছে তৃষা। ওদিকে ঘুরিয়ে রাখা মুখখানি। বড় কষ্টে এমন নি ষ্ঠুর শব্দমালা ব্যক্ত করছে সে। পারছে না আর নিজেকে সামলাতে। নিশাদও পারছে না আর শুনতে। আজ এমন করুণ মুহূর্তে নিজস্ব অনুভূতি লুকাতে ব্যর্থ হলো। রয়েসয়ে বেদনা মিশ্রিত স্বরে বলে উঠলো,
” তৃষা আ-আমি তোকে ভা.. ”
অসম্পূর্ণ রয়ে গেল বাক্যটি। তৃষা বাঁধা প্রদান করে বললো,
” ওহ্ প্লিজ। এসব সো কল্ড অ্যাট্রাকশনকে যেনতেন নাম দেবেন না। ”
” অ্যাট্রাকশন! নাহ্। না। বিশ্বাস কর আমি। আমি তোকে সত্যিই.. ”
ডান হাত প্রদর্শন করে বাঁধা দিলো তৃষা। তার কপোল ছুঁয়ে গড়িয়ে পড়লো অশ্রু কণা। যা রয়ে গেল নিশাদের দৃষ্টির আড়ালে। মেয়েটি কাট-কাট কণ্ঠে বলে উঠলো,
” কিচ্ছু নেই আমাদের মধ্যে। বুঝেছেন? এসব অ্যাট্রাকশন ফ্যাট্রাকশন ভুলে যান। আমাকে আমার মতো বাঁচতে দিন। প্লিজ। আপনার কাছে হাতজোড় করে মিনতি করছি। ”
হায়! নি ষ্ঠুর নিয়তি! তার হৃদয়ে লুকানো অনুভূতি আজ স্বেচ্ছায় তার কাছ থেকে মুক্তি চাইছে। হাতজোড় করে মিনতি করছে। তার প্রগাঢ় ভালোবাসাকে অ্যাট্রাকশনের নাম দিয়ে ধামাচাপা দিতে চাইছে। বেদনায় কাতর মানুষটির আঁখি যুগল আর’ক্ত হলো। ভারী হলো কণ্ঠস্বর। টলমলে পদযুগল মন্থর গতিতে পিছু হটতে লাগলো। বেসামাল তৃষা একটিবারের জন্যও পিছু ঘুরে তাকালো না। নিজেকে সামাল দিতে দৌড়ে প্রস্থান করলো সেথা হতে। পেছনে রয়ে গেল একজনার আধুরি কাহানি।
___
তার নি ষ্ঠুর বাক্যমালা সত্যিই মেনে নিয়েছে মানুষটি। সেদিন সে প্রহরের পরমুহুর্ত হতে আর স্বেচ্ছায় সামনে আসেনি। কখনো ভুলে দেখা হয়ে গেলেও দৃষ্টি সরিয়ে প্রস্থান করেছে। যেন সে অদৃশ্য, অস্পৃশ্য। সে তো এমনটাই চেয়েছিল। তাই তো ভেতরকার নাম না জানা অনুভূতি দা ফন করে নি’ষ্ঠুর রূপ ধারণ করলো। শোনালো কিছু অবাঞ্চিত বাক্য। আজ সে মুক্ত বিহঙ্গ। নেই কোনো পিছুটান। তাড়া করে বেড়াচ্ছে না কোনো নিশাদ নামধারী শা;সক। তবে? কেন যাতনায় পিষ্ট হৃদয়! কেন সহে না এ ব্যবধান? কেন? জানা নেই এ বোকা- অবুঝ ললনার। সে তো শুধু জানে ক্রন্দনের লীলা। বরাবরের ন্যায় কপোলের কোমল আবরণে মুক্তোর মতো দানা জ্বলজ্বল করে চলেছে। অসহনীয় যন্ত্রণা তোলপাড় করে দিচ্ছে অন্তঃপুর।
” তৃষা? অ্যাই তৃষা? ”
আকস্মিক মায়ের কণ্ঠস্বর শুনে হকচকিয়ে গেল তৃষা। তড়িঘড়ি করে অশ্রুবিন্দু মুছে নিলো। কক্ষে ব্যস্ত পায়ে প্রবেশ করলেন তাসলিমা।
” কি রে! কখন থেকে ডাকছি শুনতে পাচ্ছিস না? ”
তৃষা ধীরে ধীরে পিছু ঘুরে তাকালো। দৃষ্টি নত করে মিহি স্বরে বললো,
” সরি আম্মু। ”
তাসলিমা চমকালেন! ওনার চঞ্চল মেয়ে আজ কথা না পেঁচিয়ে স্বেচ্ছায় দোষ স্বীকার করছে! এ যে অভাবনীয়! উনি হাতে থাকা কিছু পোশাক বিছানায় রেখে মেয়ের পানে এগিয়ে গেলেন। মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে আদর মাখা স্বরে জিজ্ঞেস করলেন,
” কি হয়েছে মা? তুই ঠিক আছিস তো? ”
তৃষা মায়ের কাঁধে মুখ লুকালো। আলিঙ্গনে আবদ্ধ হয়ে জড়ানো স্বরে মিথ্যে বললো,
” আ’ম ফাইন আম্মু। ”
তাসলিমা উদ্বেগ প্রকাশ করলেন,
” সত্যি বলছিস তো? ক’দিন ধরে তোকে কেমন দেখাচ্ছে। ব্যস্ততার জন্য কিছু যে জিজ্ঞেস করবো সে সুযোগ অবধি পাচ্ছি না। তুই সত্যি ঠিক আছিস তো মা? বিয়েবাড়িতে কিছু হয়েছে? ”
তৃষা মেকি হেসে মায়ের ডান কপোলে চুমু এঁকে দিলো।
” আমি ঠিক আছি আম্মু। তুমি শুধু শুধু চিন্তা করছো। আ’ম ফাইন, ওকে? ”
মাতৃহৃদয় তো! দুশ্চিন্তা সরাতে পারলেন না। তবুও মিথ্যে হেসে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। বললেন,
” আচ্ছা ঠিক আছে। দেখ তো তোর আব্বু কোথায়। সে-ই কখন থেকে খুঁজে বেড়াচ্ছি। মানুষটা রীতিমতো উধাও। ”
” ওকে মাদার। আমি এই যাচ্ছি আর পিতাজিকে খুঁজে নিয়ে আসছি। ”
একটুও বিলম্ব করলো না তৃষা। মায়ের সন্দেহভাজন দৃষ্টি এড়াতে দ্রুত পায়ে কক্ষ ত্যাগ করলো।
.
নিজস্ব ভাবনায় মশগুল মেয়েটি লন ধরে এগিয়ে চলেছে। বিপরীত দিক হতে ফোনে কথা বলতে বলতে এগিয়ে আসছে তূর্ণ। হঠাৎ তার কণ্ঠ শুনে ভাবনায় ছেদ পড়লো দুয়া’র। মেয়েটি স্বামীকে দেখে হাসি হাসি মুখ করে তাকালো। তূর্ণ নৈকট্যে পৌঁছাতেই সে কিছু বলতে উদ্যত হলো। কিন্তু হতাশ হলো চরমভাবে। পাশ কাটিয়ে চলে গেল তূর্ণ। একটিবারের জন্য তাকালো না। মলিন হলো মায়াবী বদন। মানুষটি তাকে এভাবে পাশ কাটিয়ে চলে গেল! কেন? গতরাতের জন্য? সে তো ইচ্ছাকৃত ভাবে এমনটি করেনি। হাঁ মেহেদী অনুষ্ঠান শেষে রাত্রি বেলা ছাদে যাওয়ার কথা ছিল। ছিল সাক্ষাত করার পরিকল্পনা। কিন্তু তৃষার ভাবনায় মশগুল সে যেতে পারেনি। ভাবতে ভাবতে এক পর্যায়ে নিদ্রায় তলিয়ে গিয়েছিল। সেজন্য মানুষটি গোস্যা করেছে! সামান্য কারণে বাবুর এত গোস্যা! অতল গহ্বরে হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম দুয়া’র। একদিকে প্রিয় বন্ধুর না বলা আধুরি কাহানি। এর ওপর স্বামীর অভিমান। কোথায় যাবে সে? কোনটা রেখে কোনটা আগে সমাধান করবে? বুঝে উঠতে পারছে না সে। এমন সময় সেথায় হাজির হলো পুষ্পি, বিন্দু। পুষ্পি উদগ্রীব হয়ে ডান হাতের তেলোয় হবু কনের মেহেদী রাঙা হাতটি রাখলো। দেখলো ওর গাঢ় আভায় আচ্ছাদিত হাত। উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলো বেশ।
” হায়! মেহেদির রঙ কি গাঢ় হয়েছে! আদ্রিয়ান স্যার তো ফাটিয়ে দেবেন জাস্ট। বান্দুপি আমগো সোহাগী সাগরে দিবা-রাত্রি রীতিমতো হাবুডুবু খাইবো। ”
পুষ্পির দুষ্টু কথার রেশ ধরে বিন্দু হাসিমুখে বললো,
” আর আসছে বছরে আমরা খালামনি হয়ে যাবো। ভাগ্নে, ভাগ্নী হাজির হো। ”
সশব্দে হেসে উঠলো ওরা দুজন। তবে এসবের ভিড়ে একদম অনুপস্থিত দুয়া। থেকেও যেন নেই। মন যে আঁটকে ভিন্ন কোথাও। কোনো অতল ভাবনায়।
.
একদিকে তূর্ণয়া’র বিবাহ আয়োজন। খুশিতে আত্মহারা প্রতিটি সদস্য। অন্যদিকে অজানা এক স্থানে চলছে কুটিল ষ*ড়যন্ত্র। কারো থেকে আপনজন কেড়ে নেয়া, বুঝিয়ে দেয়া কষ্টের সপ্ত কাহন।
আহা সে কি য’ন্ত্রণাদায়ক, বি*ভৎস পরিকল্পনা!
.
সারাটা দিন যেনতেন ভাবে অতিবাহিত হলো দুয়া’র। বরাবরই খেয়াল করেছে তূর্ণ কেমন অন্যমনস্ক। বিগত দিনগুলোর ন্যায় উৎফুল্ল, সতেজ নয়। কেমন একটা লাগছে। কোনো চিন্তায় মগ্ন কি? সুযোগের অভাবে জানা হলো না। তবে মনে মনে দ্বৈত ভাবনা পোষণ করে চলেছে দুয়া। আজ রাত কিছু হতে চলেছে। কিন্তু কি?
.
আঁধারিয়া রজনী। হিমাংশু’র দ্যুতি ছড়িয়ে ধরনীর বুকে। হিমেল পবনে নৃত্যরত বৃক্ষপত্র। ভাবনায় মশগুল তূর্ণ ইটে বাঁধানো পথ ধরে হেঁটে চলেছে। আশপাশে অবস্থিত গাছপালা পেছনে ফেলে পৌঁছে গেল গন্তব্যে। সেথায় পৌঁছাতেই চমকালো বেশ! এক লহমায় পালিয়ে গেল ভাবনার দল। ত্রিকোণ আকৃতির ক্ষুদ্র ছাদ। চারটে চিকন পায়ার ওপর দন্ডায়মান ছাদটি। ফেইরি লাইটস জ্বলজ্বল করে কৃত্রিম আলোকছটা ছড়িয়ে চলেছে চারিধারে। ছাদের নিম্নভাগে ছোট্ট এক টেবিল। টেবিলের দু প্রান্তে দু’টো চেয়ার। মোহময়ী রমণী বসে একটি চেয়ারে। পড়নে তার লাল রঙা থ্রি-পিস। পাতলা ওড়না জড়িয়ে মাথায়। ওড়নার অন্তরাল হতে উঁকিঝুঁকি দিয়ে চলেছে একগুচ্ছ কেশ। ফেইরি লাইটের কৃত্রিম আলোয় অবর্ণনীয়-মোহনীয় লাগছে! সম্মোহিত হলো পৌরুষ চিত্ত। ধীরজ গতিতে এগিয়ে গেল তূর্ণ। বসলো অর্ধাঙ্গীর বিপরীতে। নয়নে নয়ন মিলিত হলো। দৃষ্টি আকর্ষণ করলো কপোলে লেপ্টে থাকা লজ্জালু আভা। কিছুটা সময় ধরে মুহুর্তটুকু উপভোগ করলো তূর্ণ। অতঃপর গলা খাঁকারি দিয়ে পরিবেশ স্বাভাবিক করার প্রয়াস চালালো। সফল হলো বটে। লাজুক রমণী অবনত করে নিলো দৃষ্টি। তূর্ণ মৃদু হাসলো। আশপাশে তাকিয়ে বললো,
” নাইস অ্যারেজমেন্ট! ”
দুয়া তৃপ্ত হলো। ওর পানে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো মানুষটি। ফিচেল হেসে বলল,
” বউকে একবেলা এড়িয়ে চললে এত ভালো চমক পাওয়া যায় জানা ছিল না তো। এখন মনে হচ্ছে মাঝেমধ্যে এমন ছোটোখাটো চমকের জন্য হলেও এড়িয়ে যেতে হবে। ”
কথাটা পছন্দ হলো না দুয়া’র। সে সরু চোখে তাকিয়ে বললো,
” আরেকবার শুধু আমাকে অ্যাভয়েড করে দেখো না। তখন জানবে এড়িয়ে যাওয়ার ফলাফল কি। ”
” তাই নাকি? কি করবে বউ আমার? ” দুষ্টু হেসে প্রশ্ন করলো মানুষটি। বিপরীত দিক হতে জবাব এলো,
” সোজা বাপের বাড়ি চলে যাবো। ”
সশব্দে হেসে উঠলো তূর্ণ। দুয়া এতে অসন্তুষ্ট হলো। তূর্ণ হাসতে হাসতে বললো,
” লাইক সিরিয়াসলি! পাঁচ মিনিটের দূরত্বে বাপের বাড়ি। এখন বরের সাথে ক্যাঁ’চাল করে বাপের বাড়ি চলে যাবি? ”
” দরকার হলে যাবো। ”
” তাহলে আমিও শ্বশুরবাড়ি হানা দিয়ে বউ তুলে নিয়ে কেটে পড়বো। ”
” ইশ্! ভাষার কি দশা! ” চোখমুখ কুঁচকে ফেললো দুয়া।
তূর্ণ দু হাতে টি-শার্টের কলার ঠিক করে গর্বিত কণ্ঠে বললো,
” বাঙালি আমরা। মাঝেমধ্যে এমন ভাষাশৈলী প্রয়োগ করা উচিত। বুঝলি? ”
” ঘেঁচু বুঝলাম। ”
হেসে উঠলো তূর্ণ,
” এই তো বউ আমার বুঝে গেছে। তা ম্যাডাম। এবার বলুন হঠাৎ তলব কেন? বরের জন্য মন কেমন করছিল? ”
” জ্বি না। ”
” তাহলে? ” জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে তূর্ণ।
দুয়া ওর পানে তাকালো। মৃদু স্বরে আমতা আমতা করে বললো,
” আ আসলে কিছু বলার ছিল। ”
” সরি বলতে চাস? ”
” সরি! কেন? মানে সরি বলবো কেন? ”
” গতরাতে ছাদে এলি না। বরের কথা অমান্য করলি। সেজন্য। ”
” না মশাই। এমন কিছুই নয়। ”
” তাহলে কি? ”
দুয়া কিছু বলতে উদ্যত হতেই তূর্ণ থামিয়ে দিলো। ডান পার্শ্বে অবস্থিত সরু জলধারা দেখিয়ে বললো,
” চল ওখানে গিয়ে বসি। ঠাণ্ডা হাওয়া বইছে। ”
মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো মেয়েটি। স্বামীর সঙ্গে উঠে দাঁড়ালো। হেঁটে পৌঁছালো গন্তব্যে। বসলো জলধারা সংলগ্ন সবুজ ঘাসের আচ্ছাদনে।
চলবে.
[ ঈদ মোবারক পাঠকবৃন্দ! আল্লাহ্’র রহমতে নিরাপদ ও বরকতময় হোক আপনার কোরবানি।
কেমন লাগলো আজকের পর্বটি? নিশাদ-তৃষার বিষয়টি দুই বা এক পর্বের মধ্যেই পুরোপুরি খোলাসা হতে চলেছে। একটু ধৈর্য ধারণ করার অনুরোধ রইলো। ধন্যবাদ সবাইকে পাশে থাকার জন্য। ]#তুমি_হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_৫৬
আমি তখন সদ্য অষ্টাদশে পা দিয়েছি। স্টাডি, ফ্রেন্ড সার্কেল, ফ্যামিলি। সব মিলিয়ে দিনকাল বেশ কাটছিল। একদিন কোচিং সেন্টার থেকে বাড়ি ফিরে চমকে গেলাম। পুরো বাড়িতে খুশির কলরব। আম্মুর ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি। আমি যারপরানাই অবাক হলাম। কাঁধে থাকা ব্যাগ সোফায় ফেলে ছুটে গেলাম আম্মুর কাছে। দু হাতে আম্মুর গলা জড়িয়ে দুষ্টুমি করে জিজ্ঞেস করলাম,
” কি ব্যাপার আম্মুজি? হঠাৎ এত খুশি কেন? খুশিতে তো একেবারে ড্যান্স করার মতো অবস্থা। ”
আম্মু অতি উৎফুল্ল হয়ে বললো,
” তোর খালামণি আসছে রে বাবা। ”
খালামণি! তাহমিদা খালামণি সপরিবারে ঢাকা আসছে। একেবারের জন্য। এখন থেকে ঢাকাতেই নাকি থাকবে। আমাদের বাসার কাছাকাছি। শুনে বেশ খুশি হলাম। খালামণি আমার বেশ সুইট। দেখলেই শ্রদ্ধা, ভালোবাসা জন্মে। কেমন মা মা ঘ্রাণ পাই। আম্মুর কাছে শুনেছি আমি জন্মের পর খালামণির বেশ ন্যা*ওটা ছিলাম। আম্মু যখন কাজে ব্যস্ত থাকতো তখন খালামণি আমায় সামলাতো। আমিও দ্বিতীয় মায়ের কাছে স্বাচ্ছন্দ্যে থাকতাম। সে-ই খালামণি বিয়ের পর কেমন পর হয়ে গেল। নিজের সংসার জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। চলে গেল বগুড়া। তেমন একটা আসাযাওয়া হতো না। তবে খালামণির দুই পুঁচকে মেয়ের জন্মের সময় আমরা সবাই বগুড়া গিয়েছিলাম। দেখেছিলাম দু’টো ছোট পুতুল মতো মেয়েকে। তবে জাহিনের সময় আমি যেতে পারিনি। এদিকে আঁটকে পড়েছিলাম। যাই হোক। তাহমিদা খালামণি আসছে। মানে আমার পুঁচকে দুই বোনও আসছে। জাহিন তো তখন এ পৃথিবীতে আসেইনি। তো আমি আর তৃষা বেশ এক্সাইটেড হয়ে পড়লাম। অপেক্ষা করতে লাগলাম কখন আসবে সবাই। যথারীতি সেদিনটা চলে এলো। অপেক্ষার প্রহর শেষে বাসায় প্রবেশ করলো খালামণি, খালু। আমি ধীরপায়ে গিয়ে সালাম দিলাম। তাদের সাথে কুশল বিনিময় হলো। স্বভাবতই আমি বড় ছটফটে। বড়দের মাঝে ভালো লাগছিল না। বারবার এদিক ওদিক তাকাচ্ছিলাম। খুঁজছিলাম আমার দুই বোনকে। শেষমেষ তাদের থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির বাহিরে এলাম। এসেই অবাক! যাদের জন্য এত অপেক্ষা তারা এখানে এসব করছে!
তৃষার ছোট সাইকেলে বসে পুঁচকে মেয়েটা। বয়স সাত আটের মতো হবে। বেশ গুলুমুলু দেখতে। একটা হলদে ডিজাইনিং ফ্রক পড়ে ছিল। ছোট ছোট হাত-পা দিয়ে সাইকেল চালানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করছিল। তবে পারছিল না। ব্যর্থ হয়ে কি কিউট একটা ফেস করছিল! বড় মায়াবী লাগছিল ওকে। ফুলো ফুলো গাল দু’টো রৌদ্রে লাল হয়ে গেছে। তবুও থেমে নেই মেয়েটা। তৃষা আর পাশে থাকা বড় মেয়েটা মানে তানজি ওকে ধরে ধরে সাবধানে সাইকেল চালাচ্ছে। হঠাৎ আমি গমগমে স্বরে বললাম,
” তোরা রৌদ্রের মধ্যে এখানে কি করছিস? ”
আকস্মিক সাইকেল থেমে গেল। বড় বড় চোখ করে কিউট মেয়েটা আমার দিকে তাকালো। ওর চাহনিতে ধক করে উঠলো আমার ভেতরটা। অজানা তৃষ্ণায় কাতর হলো গলা। তৃষা হাসিমুখে দৌড়ে এলো আমার কাছে। হাতের ইশারায় ওদের দেখিয়ে খুশিমনে বলতে লাগলো,
” ভাইয়া। ভাইয়া! ওই যে। তানুপু। দুয়া। ”
কিশোরী তানজি আমার কাছে এলো। কুশল বিনিময় হলো। তবে ছোট্ট মেয়েটা তেমন কিছু বললো না। শুধু আস্তে করে সালাম দিলো। সালাম দেয়ার সময় ওকে বড্ড কিউট লাগছিল। মন চাইছিল ফুলো গালটা টিপে দেই। তবে তা করলাম না। নিজেকে সংবরণ করলাম। তো… আমাদের প্রতিবেশী হয়ে গেল খালামণি এবং তার পরিবার। ঘন ঘন আমাদের দুই বাড়িতে যাতায়াত শুরু হলো। যাকে বলে অবাধ বিচরণ। আমিও খুশিমনে যেতাম। ছোট দুই বোন এসেছে। আমার সঙ্গী বেড়েছে। সামনেই এইচএসসি পরীক্ষা। স্টাডি কমপ্লিট করে সুযোগ পেলেই ও বাড়ি যেতাম। তবে লক্ষ্য করলাম দুয়া পুঁচকেটা আমায় কেমন এড়িয়ে চলে। দেখলেই কাঁচুমাচু করে। ও কি আমায় ভয় পায়? সেই শিশুকালে দেখেছে আমাকে। স্বাভাবিক ভাবেই মনে নেই। তাই বলে ভয় পাবে! আমি কি বাঘ না ভাল্লুক? ওকে খেয়ে নেবো? ওর এই ভীত ভাব আমার পছন্দ হলো না। মেয়েটা কেমন ইন্ট্রোভার্ট টাইপের। সবার সাথে মিশতে পারে না। সময় লাগে। একদিন আমি সন্ধ্যাবেলা ও বাসায় গেলাম। আম্মুকে ডাকতে। আম্মু সে-ই দুপুরে গিয়েছে। এখনো ফেরার নাম গন্ধ নেই। গিয়ে দেখলাম দুই বোন সোফায় বসে আড্ডা দিচ্ছে। পুরনো স্মৃতিচারণ করে সেন্টি খাচ্ছে। আমি আম্মুকে ফেরার তাগাদা দিয়ে তৃষার খোঁজে এ রুম ও রুম খুঁজতে লাগলাম। হঠাৎ এক রুমে গিয়ে লক্ষ্য করলাম বোন আমার বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে কারুকার্য করছে। আই মিন ড্রয়িং করছে। কৌতুহলী হয়ে আমি এগিয়ে গেলাম। হালকা ঝুঁকে তৃষার ফটো দেখে ঝটকা খেলাম বেশ। বোন আমার পৃথিবীর সবচেয়ে বিদঘুটে বিড়ালের ছবি আঁকছে। ইয়াক! এমন বিশ্রী বিড়াল পৃথিবীর কোনো কুকুর ই তাড়া করবে না। ইশ্! তৃষার ফটো দেখে কিছু বলবো হঠাৎ চোখ গেল দুয়া’র দিকে। সে-ও উপুড় হয়ে শুয়ে আঁকিবুঁকি করছে। একটা সাদা গোলাপি মিশ্রনের ফ্রক পড়া। আমি দুষ্টু হেসে বলে উঠলাম,
” কি রে পুতলা? কি আঁকছিস? ”
হঠাৎ আমার কণ্ঠ শুনে দুজনেই ভয় পেল। তাড়াহুড়ো করে উঠে বসলো। দুয়া কেমন অদ্ভুদ চাহনিতে তাকিয়ে আছে। আমি পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম,
” কি রে পুতলা? সাইলেন্ট মোডে চলে গেলি নাকি? ”
মেয়েটা নাকমুখ কুঁচকে বললো,
” আমি পুতুল না। ”
ওর অভিব্যক্তি দেখে সেদিন হো হো করে হেসেছিলাম। গুলুমুলু মেয়েটাকে যে-ই দেখে সে-ই নাকি আদর করে গাল টেনে দেয়। পুতুল বলে। এতে সে মহা বিরক্ত। আমিও পেয়ে গেলাম সুযোগ। ওকে ক্ষ্যা;পানোর জন্য যখন তখন পুতুল, পুতলা বলে ডাকা শুরু করলাম। এতে বেশ কাজে দিলো। ইন্ট্রোভার্ট মেয়েটা ক্ষে পে যেতো। রাগে মুখমণ্ডল লাল হয়ে যেতো। প্রতিবাদ করে উঠতো সে পুতুল না। আমি তা শুনলে তো। ইচ্ছাকৃত ভাবে আরো ক্ষে,পিয়ে দিতাম। রাগে ক্ষো’ভে চিৎকার করে উঠতো মেয়েটা। কখনো কখনো কাঁদতো। আম্মু সে কি বকা দিতো আমাকে। আমি শুধু হাসতাম আর এনজয় করতাম। এভাবেই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের সমীকরণ বদল হতে লাগলো। আমি হুটহাট ক্ষে’পিয়ে দিতাম আর সে রণমূর্তি ধারণ করতো। আবার ওর কোনো আবদার অপূর্ণ থাকলে আমি তা যথাসাধ্য মেটানোর চেষ্টা করতাম। এভাবেই আমাদের মধ্যে এক নামহীন টম এন্ড জেরি সম্পর্কের সূচনা হলো। আমরা একে অপরের পেছনে লাগি। আবার অন্যজনের সামান্য কিছুতে আতঙ্কিত, বিচলিত হয়েও পড়ি। এভাবেই বড় হতে লাগলাম আমরা। কোনো এক অজানা কারণে ওকে কখনো কোথাও আমার বোন হিসেবে পরিচয় করানো হয়নি। ওর একটাই পরিচয় ছিল। ও জাহিরাহ্ দুয়া। আমার ছোট্ট কিউট জেরি। টমের জেরী।
আমি নিজের স্টাডি লাইফের বাহিরে যতটা সময় পেতাম ওকে আগলে রাখার চেষ্টা করতাম। গাইড করতাম। মেয়েটা আমার কথায় ত্যা;ড়ামো করলেও শেষে কিন্তু মান্য করতো। আমাদের মধ্যে চমৎকার বোঝাপড়া ছিল। একে অপরকে খুব করে বুঝতে পারতাম। তবে তা প্রকাশ করতাম না। মেয়েটা তখন এসএসসি ক্যান্ডিডেট। নিউ টেন এ উঠেছে। পড়াশোনার বেশ চাপ। আমি তো চ্যালেঞ্জ করে বসলাম ও টেনেটুনে এ গ্রেড পাবে। এর বেশি নয়। মেয়েটা আমার কথায় ভ্রুক্ষেপ করলো না। নিজের মনমতো পড়তো। একদিন আমি বিকেলবেলা বাড়ি ফিরছিলাম। একা ছিলাম। হঠাৎ রাস্তার ওপাড়ে চোখ গেল। দুয়া দাঁড়িয়ে ফুচকা খাচ্ছে। ও একা নয়। সাথে তৃষাও আছে। আর একটা ছেলে। তন্ময় নাম ছিল বোধহয়। দুয়া’র ক্লাসমেট। দু’জনে খুব হা হা হি হি করছিল। ছেলেটা রসিয়ে রসিয়ে আলাপ করছিল। ওকে নিজ হাতে ফুচকা খাইয়ে দিচ্ছিল। অজানা ঈর্ষায় আমার ভেতরটা জ্বলে উঠলো। শিরায় উপশিরায় দাউদাউ করে আগুন লেগে গেল। দুয়া অন্য কোনো ছেলের হাত থেকে ফুচকা খাচ্ছে! কেন? ও কি নিজ হাতে খেতে পারে না? খেতে অক্ষম? নাকি ওকে কখনো ফুচকা খাওয়াইনি? ওই ছেলেটার হাত থেকে কেন ফুচকা খাবে? দাঁত কেলিয়ে হাসবে? সহ্য করতে পারলাম না আমি। সেদিন প্রথমবারের মতো নিজের ভেতরে ভিন্ন এক অনুভূতি টের পেলাম। ঈর্ষান্বিত হলো অন্তঃপুর। সে-ই আরম্ভ।
এরপর… দিন যায় রাত আসে। নিজের মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন অনুভব করতে লাগলাম আমি। দুয়া! হাঁ দুয়া। যার খুশিতে আমার খুশি লুকিয়ে। যার যন্ত্রণায় ছটফটানি আমার ভেতরে। আমার প্রতিটি মোনাজাতে যার নামে দোয়া পাঠ হয়। সে দুয়া। আমার হৃদয়ে লুকানো অনুভূতি। জাহিরাহ্ দুয়া।
__
” আরে বাহ্ ভাইয়া বাহ্। আই অ্যাম তো পুলকিত! ”
আকস্মিক মিহাদের কণ্ঠে ধ্যান ভঙ্গ হলো তূর্ণ’র। ভাবনার দুনিয়া ত্যাগ করে বাস্তবে পদার্পণ করলো। বন্ধু ও কাজিন মহল আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে। মিহাদ হঠাৎই পাল্টি খেয়ে নাকমুখ কুঁচকে বললো,
” ছিঃ! শেষমেষ এই ছিল তোমার মনে? আমরা ভাবতাম বোনের লাগি কাঁদে ভাইয়ের মন। এখন দেখি খালাতো বোন যখন বউ। ও মা গো! এ তো ইতিহাস কাঁপানো টুরু লাভ! ”
সিনথিয়া ভাইয়ের পিঠে দুম করে লাগিয়ে দিলো এক ঘা। অসন্তুষ্ট কণ্ঠে বলে উঠলো,
” শ* পোলা। নিজে আজ পর্যন্ত এক পিস জোটাতে পারিসনি। তুই আবার বড় ভাইয়ের লাভ স্টোরি নিয়ে মক করছিস? ”
পরিস্থিতি বিবেচনা করে বোকা হাসলো মিহাদ।
” আই অ্যাম জোকিং। ”
” শ* একপিস! ” বিড়বিড় করে গা’লমন্দ করে চলেছে সিনথিয়া।
একদিকে বন্ধুরা এবং কাজিনমহল তাদের বহু আকাঙ্ক্ষিত প্রেম কাহিনী শুনতে পেরে উৎফুল্ল। আর দুয়া? মেয়েটা টলমলে নয়নে তাকিয়ে স্বামীর পানে। বিস্ময়ে অভিভূত অন্তঃস্থল। প্রায় পাঁচ-ছয় বছরের লুকায়িত অনুভূতি আজ প্রকাশ্যে এলো! এভাবে? এমনটি হবে জানা ছিল না। তারা দু’জনে তো বসে ছিল জলধারা সংলগ্ন। দুয়া বলতে চাইছিল কিছু। কিন্তু তাদের ব্যক্তিগত মুহূর্তে হুট করেই হানা দিলো এরা। কথায় কথায় জোরপূর্বক প্রকাশ্যে এনে ফেললো তূর্ণ’র হৃদয়ে লুকানো প্রেম কথন। দুয়া তো অজ্ঞাত ছিল এসব সম্পর্কে। কতবার জানতে চেয়েছে। কিন্তু মানুষটি বলেনি। চেপে গেছে। বলেছে যথাসময়ে বলবে। আজ বললো অবশেষে। তার যে এখন খুব করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। মানুষটির বুকে মুখ গুঁজে নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করবার আকাঙ্ক্ষা জাগছে। সকলের ভিড়ে তা পূরণ করবে কি করে?
•
দিবাকরের আলোয় উজ্জ্বল বসুন্ধরা। বিছানায় ডান কাত হয়ে শুয়ে সুঠামদেহী মানব। অনাবৃত দেহের উপরিভাগ। কটির নিকটে অবহেলায় পড়ে পাতলা কাঁথা। ধীরপায়ে বিছানার ধারে এগিয়ে এলো মানবী। বসলো ঘুমন্ত মানবের শিয়রে। ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমানো স্বামীর নিষ্পাপ মুখশ্রী অবলোকন করে মেয়েটির অধরকোণ প্রসারিত হলো। মনে পড়ে গেল পূর্ব রাত্রির প্রেমাসক্ত স্বীকারোক্তি। মানুষটি যখন তার হৃদয়ে লুকানো অনুভূতি সকলের সম্মুখে ব্যক্ত করছিল তখন তার চোখেমুখে প্রকাশ পাচ্ছিল আলাদা ঝলকানি। এক তৃপ্তিময় আভা। স্বর্ণালী অতীতে হারিয়ে যাওয়ার উচ্ছ্বাস। অতীতের স্মৃতি রোমন্থন করে সে অগণ্য সময় তাকিয়ে ছিল অর্ধাঙ্গীর বিহনে। সকলের হাসিঠাট্টা, খুনসুটি অগ্রাহ্য করে সে মগ্ন হয়েছিল মাইরা’তে! তার হালাল প্রিয়তমাতে। নয়নে মিলিত হয়েছিল নয়ন। ভুলে গিয়েছিল দু’জনে জাগতিক সকল ভাবনা। অবশেষে পুষ্পি এবং দিবা’র ধাক্কায় বাস্তবে ফিরে এসেছিল। বিগত রাতের কথা স্মরণ করে লজ্জালু আভা ছড়িয়ে পড়লো মেয়েটির মায়াবী বদনে। স্বামীর ঘুমন্ত মুখপানে চেয়ে দুয়া। মিহি স্বরে একাকী বলতে লাগলো,
” এত ভালোবাসো আমায়? কি করে? এতগুলো বছর ধরে হৃদয়ে লালন করে গেলে। কখনো প্রকাশ করলে না। জানো তো। তোমার আচরণে কোনোদিন বিন্দুমাত্র আঁচ পাইনি। টেরও পাইনি আমি যে কে তোমার। বুঝতে পারিনি… তোমার হৃদয়ের কতখানি স্থানে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে চলেছি আমি। হাঁ। শুধু আমি। তোমার মাইরা। আমার তূর্ণ’র হৃদয়ে লুকানো অনুভূতি। যে অনুভূতি সময়ের সঙ্গে গাঢ় হয়েছে। ভালোবাসার বটবৃক্ষ বপন করেছে আমার মনের বাগিচায়। মহান রবের নিকট অসীম শুকরিয়া আদায় করছি! তিনি তোমাকে আমার করে পাঠিয়েছেন। দুয়া’র জন্য সঙ্গী রূপে শুধু একজন ই। তার তূর্ণ! ইহকাল শেষে পরকালেও তোমাকে সঙ্গী হিসেবে চাইছি প্রিয়। হবে কি আমার চিরসঙ্গী? ”
ঘুমন্ত মানবের নিকট হতে জবাব এলো না। নিভৃতে আরেকটু ঘনিষ্ট হলো তূর্ণ। বাঁ হাতে আলিঙ্গন করলো মেদহীন কটি। লাজুক হাসলো মেয়েটি। স্বল্প ঝুঁকে এলো। অর্ধাঙ্গের ললাট কার্নিশে বসালো ওষ্ঠ চাপ। দীর্ঘস্থায়ী হলো সে প্রেমময় পরশ।
.
রিসোর্টের এক বৃক্ষতলে দাঁড়িয়ে নিশাদ। কথা বলছে দিবা, মনিকা, পুষ্পি, বিন্দুর সঙ্গে। অধরে লেপ্টে তার মিথ্যে হাসির রেখা। সে মুহূর্তে ওদের থেকে খানিক দূরে উপস্থিত হলো তৃষা। অপ্রত্যাশিত ভাবে নিশাদকে লক্ষ্য করে তার সবটুকু হতাশা উড়ে গেল। সে কি টের পেল তা? মেয়েটি খুশি খুশি ছুটে গেল এদিকে। বড় বড় কদম ফেলে এসে পৌঁছালো নিশাদের বাঁ পার্শ্বে। নিশাদের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বন্ধুদের উদ্দেশ্যে বললো,
” তোরা এখানে? আমি আরো কোথায় কোথায় খুঁজছি।”
নিশাদ এতক্ষণ যা-ও মিথ্যা হেসে যাচ্ছিল। কিন্তু নি ষ্ঠুর রমণীর আগমনে তা-ও পলায়ন করলো। জোরপূর্বক হেসে পকেট হতে মোবাইল বের করলো সে। ওদের উদ্দেশ্যে বললো,
” এক্সকিউজ মি। আমাকে একটা ইম্পর্ট্যান্ট কল অ্যাটেন্ড করতে হবে। ইউ গাইজ ক্যারি অন। ”
কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নি’ষ্ঠুর রমণীর পানে বিনা তাকিয়ে সেথা হতে প্রস্থান করলো নিশাদ। মেয়েটির চেহারায় ফুটে উঠলো ঘোর অমাবস্যা। যন্ত্রণা অনুভূত হলো বুকের মাঝে। তা অন্য কেউ লক্ষ্য করেনি বটে। তবে মনিকার দৃষ্টিগোচর হলো। সে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল তৃষার পানে।
চলবে.
[ তূর্ণ’র হৃদয়ে লুকানো অনুভূতি আজ প্রকাশিত হলো। আশা করি পাঠকবৃন্দ সবটা বুঝতে সক্ষম হয়েছেন। ধন্যবাদ সবাইকে পাশে থাকার জন্য। আসসালামু আলাইকুম। ]