তুমি_নামক_ব্যাধি পর্ব ১৮

#তুমি_নামক_ব্যাধি
#মুন্নী_আরা_সাফিয়া
#পর্ব_১৮

দরজা আটকে বিছানায় বসলাম।পার্সেলটা অনেক ভারী।এক মুহূর্তের জন্য মনে হলো কাউকে মেরে টেরে পাঠানো হয়নি তো?ধুর! কিসব ভাবছি আমি। অবশ্য ভাববারও অহেতুক কারণ নেই এমন না!

আজ পর্যন্ত আমার জন্য খুব বেশি হলে তিন থেকে চারটা পার্সেল এসেছে। তাও আবার এর মধ্যে দুইটা আমার অর্ডারের ছিল। আজকের পার্সেল প্রেরকের সম্পর্কে পরিচয়পর্ব বিষয়াদি আমার অজানা।একটা কাঁচি নিয়ে আস্তে করে খুলেই আশ্চর্য হয়ে গেলাম।

বাক্সের ভেতর পুরো সাদা গোলাপের বাগান!অনেক অনেক সাদা গোলাপ।এক সাইডে ছোট্ট একটা বক্স।বক্সটা খুলতেই লকেটসহ সাদা একটা চেইন বের হলো।ভয়ংকর সুন্দর। লাভ শেপের লকেটটা খুলে দেখলাম এক পাশে দিয়ানা লেখা, আর অন্য পাশে তিহাম লেখা। আর বুঝতে বাকি রইল না।

মনের গহীনে প্রশান্তির হাসি ছড়িয়ে পড়লো।জীবনে পাওয়া সেরা উপহার মনে হচ্ছে। বুকে জড়িয়ে ঠায় বসে রইলাম। হঠাৎ চিঠির কথা মনে পড়ল। ঝটপট কয়েকটি গোলাপ সরাতেই নীল আর সাদার কম্বিনেশনে ঘেরা খামটি নজরে এলো।

চিঠিটাতে ঠোঁট ছুইয়ে খুলতে নিয়েও খুললাম না।গভীর রাতে পড়বো।অপেক্ষা করা যাক না!আপাতত আন্দাজ করা যাক কি লেখা থাকতে পারে।বালিশের নিচে সযত্নে রেখে গোলাপ গুলো গোনা শুরু করলাম। হুম!৯৯ টা সাদা গোলাপ আজকেও।

ঠোঁটের কোণের হাসিটাকে উপেক্ষা করে প্রত্যেকটা গোলাপ থেকে একটা করে পাপড়ি ছিড়ে ডাইরির ভাজে রাখলাম।ডাইরিটা কলেজ লাইফের। কিন্তু কখনো তাতে লেখার বা যত্নে রাখার প্রয়োজনীয়তা হয়ে উঠেনি।কিন্তু আজ এতে আমার জীবনের মূল্যবান জিনিস রাখলাম।এর প্রতি দায়িত্ব বেড়ে গেল।

__________________

রাত এগারোটা বাজে। আজ বিকেল থেকে তিহাম ভাইয়ার সাথে কথা হয়নি।ইচ্ছে করেই বলিনি।ইদানীং ওনার সাথে স্বাভাবিক কথা বলতেই অনেক লজ্জা লাগে। আচ্ছা,এতো লজ্জা এতদিন কই লুকানো ছিল? সামান্য আভাসটুকু ও তো পাইনি।

আজ ইচ্ছে করে শাড়ি পড়েছি।আজ প্রথম নয়।ভার্সিটি লাইফে অনেক বার পড়া হয়েছে। কিন্তু আজ অন্য রকমের ভালো লাগা কাজ করছে। গলায় তিহাম ভাইয়ার দেয়া লকেট,সাদা চুড়ি আর চোখে গাড় করে কাজল দিয়েছি।কিন্তু কাজল দিয়ে তেমন একটা অভ্যেস নেই বলে বার বার চোখ ভিজে উঠছে।তাতে কি?মনের ভেতর তো খুশিতে ময়ূর পেখম মেলে নাচা শুরু করেছে।

মোমবাতি জ্বেলে উপুড় হয়ে চিঠিটা সামনে মেলে ধরলাম। গুটিগুটি বাংলা অক্ষরে অগোছালো ভাবনার প্রতিকৃতি।

“পিচ্চি বউ আমার,

আজ থেকে চৌদ্দ বছর আগের কথা। দুপুর বেলা একটু ঘুমিয়েছিলাম।কারো ভাইয়া ডাকার শব্দে একরাশ বিরক্ত নিয়ে কাঁচা ঘুম ভেঙে আধো চোখ খুলে সামনে তাকাতেই স্তব্ধ হয়ে গেলাম।মুহূর্তেই চোখ সচকিত হয়ে গেল।আমার সামনে যে লাল টুকটুকে এক পরী দাঁড়িয়ে। যার মুখে ভুবন ভুলানো এক গাল মিষ্টি হাসি।

যে কেউ সেই হাসির গভীরতায় নিজেকে তলিয়ে ফেলবে।নিজেকে আর সামলাতে পারলাম না।প্রেমে পড়ে গেলাম।হ্যাঁ, সদ্য ক্লাস ফোরে পড়ুয়া মেয়ের প্রেমে পড়ে গেলাম।তার ওই টুকু শরীরে বারো হাত শাড়ি, যার আঁচল অর্ধেক মাটিতে ঝুলছে সে তার পাপড়ির মতো পাতলা ঠোঁট নাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো,

—‘ভাইয়া,দেখোতো আমায় কেমন লাগছে? ‘

নিজের অজান্তেই বলে ফেললাম,

—‘একদম মায়াপরীর মতো লাগছে। আমার হবে তুমি?’

সে আমার কথার আগামাথা না বুঝে মিষ্টি একটা হাসি ছুড়ে দিল এক দৌঁড়।ওই দিনই পিচ্চিটা আমার অস্তিত্বের এক অংশ হয়ে গেছিল। সে চলে যাবার সঙ্গে সঙ্গে দরজা আটকে জীবনে প্রথম ছবি আঁকার চেষ্টা করলাম।মনের মাধুরি মিশিয়ে তাকে রঙে রঙিন করলাম।

কিন্তু আমার কাঁচা হাতের ছোঁয়ায় তার মুখটা স্পষ্ট হলো না।তাতে সুবিধাও হলো।সবসময় আমি সেই ছবিটাকে নিজের কাছে রাখি।কিন্তু কেউ বুঝতে পারে না কিছু। আসার বিদেশের মাটিতে একাকিত্ব ঘুচিয়েছে এই পিচ্চির ছবিটি।তবে কিছু দিনের মধ্যে বুঝতে পেরেছিলাম পিচ্চিটা শুধু আমার অংশ নয়,আমার পুরোটার দখল সে নিয়ে নিয়েছে।আমার সবকিছু জুড়ে শুধু সে আর তার অধিকারে টইটম্বুর।

হ্যাঁ,দিয়ামনি!তোমাকে ভালোবাসি।সেই ছোট্ট বেলা থেকে।কিন্তু বড় হওয়ার পর তোমাকে আর দেখা হয়নি।তোমাকে একটি বার দেখার জন্য পুরো ভার্চুয়াল লাইফ তন্নতন্ন করে খুঁজেছি।কিন্তু তোমার এফবিসহ কোথাও কোনো ছবি ছিল না।কাউকে জিজ্ঞেস করে তোমার কথা শুনতেও ভয় হতো।যদি আমার মনের ভাষা বুঝতে পারে!

তোমার সাথে চাইলে যোগাযোগ করতে পারতাম।কিন্তু ভয় হতো।যদি ভুল বুঝো।সেদিন দেশে আসার পর যখন শুনতে পেলাম তুমি নাকি তিথিদের বাসায় আছো,তখন নিজেকে আর আটকাতে পারিনি।

সেদিন বিকেলে লুকিয়ে গিয়েছিলাম।ভাগ্যও আমার সহায়ক ছিল। সেইজন্য সেদিন রুমে তুমি একা ছিলে।তাও আবার ঘুমিয়ে!আর তোমার মুখ কোনো কাঁথা দিয়ে ঢাকা ছিল না।এতগুলো বছর পরো তোমায় চিনতে আমার বিন্দুমাত্র কষ্ট হয়নি!

তোমার মুখ বরাবর ফ্লোরে হাঁটু গেড়ে বসে কতক্ষণ যে তাকিয়ে ছিলাম তার হিসেব ছিল না।বার বার মনে হচ্ছিল যদি সময় এখানেই আটকে যেত,মন্দ হতো না।নিজের অজান্তে চোখ থেকে দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়েছিল। খুব করে তোমাকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছিল। তোমার ঘন চুলে মুখ লুকাতে ইচ্ছে করছিল।

একসময় ঘোর কাটতেই উঠে বসলাম। তোমার কপালে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলাম।তোমাকে দেখার আগেই তিথিকে চিঠি লিখেছিলাম।ওকে বিয়ে করতে পারবো না তা জানানোর জন্য। সেই চিঠিটা তোমার বইয়ে রাখলাম।আমি চাচ্ছিলাম চিঠিটা তুমি পড়ো আর সব সত্যি জেনে যাও।তারপর তোমার বইয়ে কিছু লিখলাম নিজের পরিচয় লুকিয়ে। তারপর বেরিয়ে আসার সময় আবার তোমার গালে ঠোঁট ছুঁইয়ে চলে আসি।

সেদিন আমি আর আমার বাসায় যাইনি।তোমাকে দেখার লোভ সামলাতে না পেরে রাতের বেলা আবার আসি।কিন্তু আমি গেটের উপর দিয়ে বাসায় ঢুকার সময় দেখি তুমি ছাদে উঠছো।এত রাতে তোমাকে ছাদে দেখে প্রথমে অবাক হলেও পরে খুশিতে মনটা লাফালাফি করা শুরু করলো।

সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে অনেক্ক্ষণ তোমার দিকে তাকিয়ে রইলাম।পরে আর দ্বিতীয়বার না ভেবে তোমাকে জড়িয়ে ধরি।তুমি জানো,তোমাকে জড়িয়ে ধরার পর আমার বুকের ভেতর যে কি পরিমাণ শান্তি লাগছিল তা বলে বুঝাতে পারবো না। মনে হলো অবশেষে ঝড় থামলো।পরে তোমার কথায় ঘোর কাটলো।

আমি জানতাম ওই মুহূর্তে তুমি সবটা জানলে রিয়েক্ট করতে।তাই তোমাকে কনফিউজড করতে তিথির কথা বললাম। উত্তরে তোমার কথা শুনে বুঝলাম যে তুমি চিঠিটা পড়নি।আর অন্যকে লেখা চিঠি পড়বেও না।তবুও তোমাকে বার বার পড়তে বলতাম।

দিয়ামনি,তুমি জানো,সেদিন রাতে আমি বাসায় এসে সারারাত নাচানাচি করেছি। খুশিতে একদম আত্মহারা,পাগলপ্রায় হয়ে গেছিলাম।সারারাত ঘুমাতে পারিনি।ভোরবেলা থেকেই মাকে বলা শুরু করলাম, চলো ওদের বাসায় যাই।তারপর তোমার ওই হাতে মুখে বিন্দু বিন্দু পানি দেখে জলপরীর মতো লাগছিল।বুকের ঢিপঢিপানি আপনাআপনি বেড়ে যায় তোমাকে দেখলে।এই পিচ্চি, আমার হবে?একান্ত আমার??

আমার কাছে তাড়াতাড়ি চলে আসো পিচ্চি।অনেক অপেক্ষার প্রহর গুনেছি।প্লিজ এখন রক্ষা করো।আর পারছি না!ভালোবাসি তোমায়।পিচ্চি, ভালোবাসি তোমায়।সারাজীবন পিচ্চিটাকে আমার বুকে আগলে রাখার অধিকার দিয়ো।আই লাভ ইউ দিয়ামনি।

ইতি
তোমার ভুঁতিহাস”

চোখ দিয়ে আবার পানি পড়ছে আমার।ভেজা চোখ দিয়ে তিনবার চিঠিটা পড়লাম।ওনার এত ভালোবাসা পাওয়ার কি কোনো যোগ্যতা আমার আছে? মোবাইলটা হাতে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে মেসেজ দিলাম,

“অসংখ্য ধন্যবাদ। আই আ’ম সো মাচ টায়ার্ড অফ অ্যাক্টিং কুল।থাঙ্কস ফর অ্যাক্সেপ্টিং মি,দি ওয়ে আই আ’ম।ভালোবাসি।”

______________

দোহা এয়ারপোর্টে Doha to Italy Airlines এ বসে আছি।হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে দোহা আসতে টানা ছয় ঘন্টা লেগেছে।

এখানে আবার পাঁচ ঘন্টার যাত্রা বিরতি।এতক্ষণ লাউঞ্জে বসে পাঁচটা টিস্যু পেপার ভিজিয়ে ফেলেছি কেঁদে।কাজটা অনেক লুকিয়ে করেছি।যাতে কেউ বুঝতে না পারে।

সবাইকে ছেড়ে আসতে এত কষ্ট হবে জানলে কিছুতেই আসতাম না।কিন্তু আমি তো কলেজ লাইফ থেকেই হোস্টেলে থাকতাম।কই,তখন তো এত কষ্ট হয়নি!নাকি দূরত্ব ম্যাটার করছে?হয়তো! তাহলে তিহাম ভাইয়া এতগুলো বছর কিভাবে কাটাচ্ছে?

আমার পাশে এক চশমা পড়া এক ভদ্রলোক বসেছে।তার সাদা চামড়া দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে ফরেনার।তার থেকে চোখ সরিয়ে কাচের জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকালাম।কিছুক্ষণের মধ্যে বিমানবালার কন্ঠ শোনা গেল।প্রায় সঙ্গে সঙ্গে বিমান উড্ডয়ন করলো।

_____________

বিমান Bologna Airport এ থামলো।লাউঞ্জের দিকে গিয়ে ট্রলি নিলাম।ট্রানজিট এরিয়া থেকে বের হয়ে তিহাম ভাইয়াকে ফোন দিলাম।পার্কিং এরিয়ার দিকে তাকাতেই তিহাম ভাইয়ার দিকে নজর গেল।

ব্লাক শার্ট গায়ে চিন্তিত চোখে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। হাত নেড়ে ইশারা করে এগিয়ে গেলাম।তিহাম ভাইয়ার নড়চড়ের খবর নেই। ঠায় দাঁড়িয়ে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।ভ্রু কুঁচকে ওনার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হার্ট অ্যাটাক করলো নাকি?

ওনার ঘোর কাটতেই দুপা এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরলো। আমি ভূত দেখার মতো চমকে উঠলাম। আশপাশে হাজার হাজার মানুষ। নিজেকে ছাড়ানোর জন্য উশখুশ করতেই উনি আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। আমার দম আটকে যাওয়ার উপক্রম।হায়!হায়!এই পোলার সাথে এক বাসায় কেমনে থাকবো!আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম এই পোলা তো লুচিয়া নাম্বার ওয়ান।আস্তে করে বললাম,

—‘ইয়ে মানে,আমার না দম আটকে আসছে! ‘

তবুও ছাড়লো না।হাতের বাঁধন হালকা একটু ঢিল দিলো শুধু। নরম গলায় বললো,

—‘আসার পথে কোনো সমস্যা হয়েছে পিচ্চি? অসুস্থ হয়ে পড়েছিলে?বমি হয়েছে?’

—‘না,সুস্থ ছিলাম।এর আগে প্লেন জার্নি করা হয়নি তো তাই জানতাম না যে এটা অনেকটা প্রশান্তির।’

—‘জানো,আমি টেনশনে প্রায় কোমায় চলে গেছিলাম।তোমায় গিয়ে নিয়ে আসতে চাইলাম, কিন্তু তুমি রাজি হলে না।”

—‘বলছিলাম কি এখানেই থাকবেন নাকি বাসায় যাবেন?’

তিহাম ভাইয়া আমায় ছেড়ে মাথার চুল ঠিক করতে করতে মুচকি হেসে বললো,

—-‘এখানে থাকলেও প্রবলেম নেই। কারণ এরা কেউ আমাদের রোমান্সে বিঘ্ন ঘটাবে না।কিন্তু তুমি অনেক টায়ার্ড।তাই বাসায় যাই।অবশ্য বাসায় গিয়েও ওসব করার এনাফ টাইম পাবো।চলো’

তিহাম ভাইয়া হাত ধরে হাঁটা শুরু করতেই থামিয়ে ভ্র কুঁচকে বললাম,

—‘ওয়েট,ওয়েট!ওসব বলতে আপনি কি বোঝাতে চাচ্ছেন?কোনসব করার জন্য এনাফ টাইম পাবেন?খবরদার আপনার এই লুচিয়া মস্তিষ্ক আমার থেকে কয়েক গজ দূরে রাখবেন!’

তিহাম ভাইয়া শব্দ করে হেসে উঠলেন।বললেন,

—‘ওসব বলতে একটু হাত ধরতে দিবে,যখন তখন জড়িয়ে ধরতে দিবে,মাঝে মাঝে খোলা চুলে মুখ লুকাতে দিবে,ভেজা চুলের ঘ্রাণ নিতে দিবে,মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিবে,তোমার কোলে মাথা রেখে জোসনা দেখতে দিবে আর…….আর মাঝে মধ্যে কপালে একটু ঠোঁট ছুঁইয়ে দিতে দিবে।ব্যস!এইটুকুই!বাকি সব বিয়ের পরে।’

আমি অবাক হয়ে গোল গোল চোখ করে জিজ্ঞেস করলাম,

—‘এত কিছু তারপরো আপনার কাছে মনে হচ্ছে এইটুকুই? ‘

—-‘নো,আর কোনো কথা না।তুমি অনেক টায়ার্ড।গাড়িতে বসো!’

বলেই আমাকে সামনে বসিয়ে নিজে ড্রাইভিং সিটে বসলো।

(চলবে)

95/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here