#তৃণশয্যা
#নিয়াজ_মুকিত
#৭ম_পর্ব
আদনান আগে চারুর নার্ভ চেক করে।চারুর থেকে ১০হাত দুরে পরে আছে নিত্তিয়া।নিত্তিয়ার মাথা দিয়ে রক্ত ঝড়ছে কিন্তু চারুর মাথা দিয়ে নয় হাত দিয়ে রক্ত ঝড়ছে।আদনান চারুর নার্ভ চেক করে বুঝতে পারে চারুর নিশ্বাস বইছে এখনো।তারপর দৌড়ে আদনান চলে যায় নিত্তিয়ার কাছে।চোখের পানি ফেলতে ফেলতে নিত্তিয়ার হাতটা ধরে।হাতটা ধরেই চমকে ওঠে আদনান।সবকিছু ঠান্ডা হয়ে গেছে।আদনান নার্ভ চেক করে নিত্তিয়ার।নার্ভ চেক করেই আদনান নিত্তিয়ার হাতটা নিজের বুকের মধ্যে ধরে কান্না করতে শুরু করে।এদিকে চারুর হাত দিয়ে রক্ত বইছে এখনো।
এই মুহুর্তে আদনানের কি করা উচিত ভেবে পাচ্ছেনা সে?নিত্তিয়াতো এই পৃথিবীকে,আদনানকে বিদায় জানিয়ে ওপারে চলে গেছে কিন্তু চারুতো এখনো আছে।তাকে বাঁচাতে হবে।আদনান মুহুর্তের মধ্যে উঠে দাঁড়ায়।ভাবতে শুরু করে নিত্তিয়ার লাশ টাকে কোথায় রাখবে?আদনান কোলে তুলে নেয় নিত্তিয়াকে।নিত্তিয়ার রক্তে ভিজে যায় আদনানের সাদা পাঞ্জাবী।আদনান নিত্তিয়ার লাশটাকে নিয়ে গিয়ে রাখে তাদের বাসার সামনে।
তারপর দৌড়ে এসে চারুকে নিজের বাইকে তোলে।চারুকে এই অবস্তায় নিয়ে যাওয়া যাবে না তাহলে ঢলে পড়ে যাবে।আদনান চারুকে বাইকের সামনে বসায়।চারুর নিথর দেহটা পড়ে যেতে ধরে।আদনান অনেক কষ্টে চারুকে একহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বাইক চালাতে শুরু করে।কাছাকাছি মেডিকেল থাকায় বেশি কষ্ট করতে হয় না আদনানকে।সে মেডিকেলের সামনে এসে চারুকে নিজের কোলে তুলে নেয়।তারপর ডাক্তার ডাক্তার বলে চিল্লাতে চিল্লাতে ভিতরে প্রবেশ করে আদনান।তার চোখ দিয়ে পানি ঝড়ছে।আদনানকে এই অবস্তায় দেখে এগিয়ে আসে একজন ডাক্তার।তিনি কয়েকজন নার্সকে আদেশ দেন চারুকে ভিতরে নিয়ে যেতে।তিনি আদনানকে অপেক্ষা করতে বলে নিজে ভিতরে প্রবেশ করেন।
আদনান ধপ করে বসে পড়ে মেঝেতে।সাথে সাথে আবার উঠে দাঁড়ায় আদনান।কান্না করতে করতে বাইক নিয়ে আবার রওনা দেয় নিত্তিয়াদের বাসার উদ্দেশ্যে।কিছুক্ষন পরই সেখানে পৌছায় আদনান।নিত্তিয়ার মৃত দেহটা এখনো পড়ে আছে দরজার সামনে।আদনান নিত্তিয়াকে কোলে নিয়ে দৌড়াতে শুরু করে।একপর্যায়ে রাস্তায় হোচট খেয়ে পড়ে যায় আদনান।নিত্তিয়া তার কোল থেকে ঢলে পড়ে।আদনান নিত্তিয়া জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে জোরে জোরে।
১১.
কিছুক্ষন পরই জ্ঞান ফেরে চারুর।তাকিয়ে দেখে হাতে ব্যান্ডেজ করা।পাশে দাঁড়িয়ে আশে একজন সুদর্শন ডাক্তার।চারু খানিকটা উত্তেজিত হয়ে ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করে,
—‘ আমি কি এখন নিরাপদ?আর কতক্ষন অজ্ঞান হয়ে ছিলাম? ‘
চারুর মুখের কথা শুনে ডাক্তারটা খানিকটা হেসে বলে,
—‘ ১ঘন্টা যাবৎ আপনি অজ্ঞান ছিলেন।আপনি এখন নিরাপদ।শুধু মাত্র এই হাতটাতে চোট পেয়েছে আপনার।আপনাকে একটা ছেলে কোলে নিয়ে এসেছিল।কিন্তু এখন তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। ‘
চারু বুঝতে পারছে ডাক্তার কার কথা বলছে।নিজের জন্যে যতটা না চিন্তা হচ্ছে তার চেয়ে বেশি চিন্তা হচ্ছে নিত্তিয়ার জন্য।নিত্তিয়া ঠিক আছে কিনা নেই।চারু আস্তে করে উঠে দাঁড়ায়।ডাক্তার তাকে নিষেধ করলেও সে শুনে না।তাকে এখন কষ্ট করে হলেও নিত্তিয়াদের বাসায় যেতে হবে।চারু বের হয়ে হাটতে শুরু করে।রাস্তা দিয়ে হাটতেছে আর চারদিকে তাকাচ্ছে।
প্রায় ১০মিনিট হাটার পর চারু এক অবাক করা দৃশ্য দেখতে দেখতে পায়।ভালো করে দেখার জন্য আরেকটু সামনে যায়।সামনে এগিয়েই চমকে ওঠে চারু।মাটিতে পড়ে আছে নিত্তিয়ার দেহ।তার বুকের উপর মাথা রেখে নিরবে কান্না করছে আদনান।রাতের চাদের আলোয় আবছা আবছা দেখা যাচ্ছে আদনানের মুখটা।
চারু আদনানকে দেখলেও আদনান এখনো চারুকে দেখতে পায়নি।আদনান এবার উঠে দাঁড়ায়।তারপর নিত্তিয়ার মাথাটা নিজের কোলে তুলে নেয়।তারপর রক্তাক্ত কপালে একটা ভালোবাসার পরশ একে দেয়।চোখদুটোতেও ছুয়ে দেয় ভালোবাসার পরশ।তারপর চুলগুলো নাড়তে নাড়তে আদনান বলতে শুরু করে,
—‘ নিতি তুমি আমাকে ছেড়ে গেলে এভাবে।আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না।মনটা বারবার বলছে,নিতি যায়নি এইতো নিতি শুয়ে আছে। ‘
এইটুকু কথা বলে চোখের পানি মুছে আদনান আবার বলতে শুরু করে,
—‘ যাই হোক।আমি জানি তুমি আর ফিরে আসবে না।কিন্তু তোমার এই দেহটা সারাজীবন আমার কাছে থাকবে।তুমি শুধু আমার থাকবে।যেদিন আমার মৃত্যু হবে সেদিন এক সঙ্গে একইকবরে দুজনই থাকবো।আমি থাকতে তোমাকে কারো হতে দেব না।এই মাটিও যেন তোমাকে ছুতে না পারে। ‘
এই বলে নিজের মাথাটা নিত্তিয়ার বুকের উপর রাখে আদনান।চারু সব কিছু দেখছিল এতক্ষন ধরে।চারুর চোখের পানি বাধ মানছে না।চারু আস্তে আস্তে আদনানের দিকে এগোতে থাকে।আদনানের কাছে গিয়ে ধপ করে বসে থাকে।একহাতে ব্যান্ডেজ থাকার কারনে অন্যহাতটা দিয়ে আদনানের মাথায় হাত দেয়।আদনান চমকে ওঠে।তারাতারি করে উঠে বসে।সামনে চারুকে দেখে সাথে সাথে চারুকে জড়িয়ে ধরে আদনান।চারুকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে আদনান।চারুও এক হাত দিয়ে আদনানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।
১২.
‘ বাবা আদনান,ছেড়ে দেও না ওকে।ওতো মরে গেছে।ওকে রেখে কি হবে।তুমি ওকে ছেড়ে দেও।ওর জানাজা হবেতো। ‘
কথাটা আদনানকে উদ্দেশ্য করে বলে আদনানের মা।তার সাথে নিত্তিয়ার মা-বাবা,চারুর বাবা-মা সবাই রয়েছে।সবাই খবর পেয়ে এসে ভিড় জমিয়েছে রাস্তাটায়।চারুই আদনানের মোবাইলটা দিয়ে চারুর বাবা-মাকে কল দিয়েছে।আশেপাশের কয়েকজন প্রতিবেশিও আছে সেখানে।আদনান এখনো নিত্তিয়াকে ধরে আছে।
একপর্যায়ে নিত্তিয়ার বাবার কথামতো আদনানকে নিত্তিয়ার কাছ থেকে আলাদা করে নেয় কয়েকজন প্রতিবেশি।সাথে সাথে নিত্তিয়াকে সেখান থেকে নিয়ে যায় কয়েকজন মহিলা।আদনান পাগলের মতো গালাগাল করছে।সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে নিত্তিয়ার কাছে যাওয়ার।একপর্যায়ে নিত্তিয়াকে ভিতরে নিয়ে যেতে দেখে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আদনান।
১৩.
নিত্তিয়ার কবরের উপর শুয়ে আছে আদনান।তার পাশে বসে আছে চারু।দুজনের চোখ দিয়েই পানি পড়ছে।দিনের আলো ফুটেছে অনেক আগেই।গোরস্থানে মানুষ আসছে আত্মীয়দের করব যিয়ারত করার জন্য।চারু আদনানকে তোলার চেষ্টা করলে আদনান চারুকে ঝটকে ফেলে দেয়।তারপর আদনান কবরটার উপর শুয়ে বলতে শুরু করে,
—‘ নিতি,তোমার সাথে শেষ দেখাটাও হলো না।মাফ করে দিও আমাকে।তোমার বুকে মাথা রেখে কাটাতে চেয়েছিলাম সারাজীবন।কিন্তু ভাগ্য আমার পক্ষে ছিল না।জানো এখন আমার খুব মনে পড়ছে তোমার কথাগুলো।ইচ্ছা করছে তোমার কাছে চলে যেতে।আমি তোমার কাছে যাব..’
এইবলে আদনান পাশে থাকা একটা লোহা হাতে তুলে নেয়।নিজেই নিজের মাথায় মারার প্রস্তুতি নিতে শুরু করে।চারু দৌর দেয় আসনানের দিকে…
#তৃণশয্যা
#নিয়াজ_মুকিত
#৮ম_পর্ব
আদনান লোহাটা নিজের মাথায় মারার আগেই চারু দৌড়ে এসে হাতটা এগিয়ে দেয়।ফলস্বরুপ মাইরটা লাগে চারুর হাতে।চারু ব্যাথায় ককিয়ে ওঠে।আদনান হাতে থাকা লোহাটা ফেলে দিয়ে চারুর দিকে তাকায়।তারপর চোখের পানি ফেলতে ফেলতে বলে,
—‘ কেন আমাকে মরতে দিচ্ছিস না চারু।আটকাচ্ছিস কেন?ওপারে যে আমার নিতি আমার জন্য অপেক্ষা করছে?আমাকে কেন তার কাছে যেতে দিচ্ছিস না তুই?কেন কেন কেন..? ‘
এই বলে আবার কান্না করতে করতে কবরটা খুড়তে থাকে আদনান।পাগলের মতো মাটি সড়াচ্ছে আর চোখের পানি ফেলছে।সাথে মুখ দিয়ে বলছে,
—‘ আমি আসছি নিতি।তুমি শুধু আমার সাথেই থাকবে।তোমার আর আমার কবর হবে একটা। ‘
এই বলে আরো জোরে খুড়তে থাকে আদনান।আদনানের পাগলামি দেখে চারু দৌড়ে আসে আদনানের সামনে।আদনানের মুখটা নিজের দিকে করে নেয়।তারপর দুইহাত দিয়ে আদনানের মুখটা শক্ত করে ধরে বলতে শুরু করে,
—‘ ভাইয়া কি করছো তুমি?এটা বিশ্বাস করো যে নিত্তিয়া আপু আর আমাদের মাঝে নেই।সে আমাদের ছেড়ে চলে গেছে।আর কখনো আসবে না।এটা বিশ্বাস করো..’
আদনান চারুকে ঝটকে ফেলে দেয়।তারপর আবার মাটি সড়াতে শুরু করে।
—‘ না নিতি আমার জন্য অপেক্ষা করছে।আমি তার কাছে যাবোই।কেউ আটকাতে পারবে না আমাকে। ‘ আদনান মাটি খুড়তে খুড়তে বলতে থাকে।
এই মুহুর্তে সেখানে উপস্তিত হয় রিমি আর রিমির বাবা।ছেলের এই অবস্থা শুনে শত কাজ ছেড়ে চলে এসেছেন তিনি।তিনি দৌড়ে নিজের ছেলের কাছে যান।এক ঝটকায় ছেলেকে নিজের দিকে করে বুকে জড়িয়ে কাঁদতে থাকেন।আদনানও নিজের বাবাকে জড়িয়ে কাঁদতে থাকে আর বলতে থাকে,
—‘ বাবা!আমার সব চলে গেল।জীবনের মুল্যবান জিনিসটাকে হাড়িয়ে ফেললাম।জীবন থেকে চলে গেল সব সুখ শান্তি।বাবা আমার এখন তার কাছে যাওয়া উচিত তাইনা।সে নিশ্চয় আমার জন্য বসে আছে।বাবা আমি যাই বেশিক্ষন অপেক্ষা করানো যাবে না নিতিকে।খুব রেগে যাবে কিন্তু,শেষে আবার তার রাগ ভাঙ্গতে অনেক কষ্ট করতে হবে আমাকে।আমি যাই হ্যাঁ বাবা.. ‘
ছেলের পাগলামি দেখে কান্নার আওয়াজ আরো বেরে যায় হালিম সাহেবের।ছেলেকে বুকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,
—‘ না বাবা!সে অনেক স্বার্থপর,তোমাকে রেখে চলে গেছে।কয়েকদিন পর আমরা সবাই মিলে একসঙ্গে তার কাছে যাবো।তুমি আর কারো কথা না ভাবো কিন্তু তোমার এই ছেলেটার কথা ভাবো।তুমি তো বলতে আমি তোমার ছেলে তুমি আবার বাবা।আজকে কেন এই ছেলেটাকে এতিম করে চলে যেতে চাচ্ছো।কোনো বাবা কি নিজের ছেলেকে এতিম করতে পারে বলো? ‘
এই বলে তিনি আদনানকে আরো জোরে ধরিয়ে ধরেন।মুখটা চুমুতে ভড়িয়ে দেন আদনানের।বাবা-ছেলের এমন দৃশ্য দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারে না চারু আর রিমি দুজনেই।আদনান কান্না করতে করতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে।তাকে ধরাধরি করে গাড়িতে তোলে সবাই।আদনানের বাবা ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি চালাচ্ছেন।ভাইয়ের মাথাটা নিজের কোলে নিয়ে মাথায় হাত বুলাচ্ছে রিমি।সাথে বিসর্জন দিচ্ছে চোখের পানি।চারু মাথা নিচু করে বসে আছে।
১৪.
সন্ধ্যা নামছে পশ্চিম আকাশে।এখনো জ্ঞান ফেরেনি আদনানের।আজকে যে বিয়ের কথা ছিল সেটা বেমালুম ভুলে গেছে বাসার সবাই।সবাই আদনানকে ঘিরে বসে আছে।চারু এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আদনানের দিকে।আজ তার দোষের কারনেই আদনানের এই অবস্তা।তখন যদি দেখে শুনে রাস্তাটা পার হতো তাহলে এটা হতো না।চারুর নিজেই আবার নিজের মনকে বলে,তারতো কোনো দোষ নেই।সেতো দেখতেছিল নিত্তিয়াইতো দৌড় দিল।
হঠাৎ চোখ খুলে যায় আদনানের।চোখ পিটপিট করে তাকাতে থাকে চারদিকে।বাসার সবাইকে নিজের সামনে দেখে খানিকটা অবাকই হয় সে।তারপর আস্তে করে উঠে বসে বিছানায়।সে উঠে বসতেই তার বাবা-মা দুজনেই একসঙ্গে জিজ্ঞাসা করে,
—‘ এখন কেমন লাগছে বাবা? ‘
আদনান তার বাবা-মা দুজনের দিকে তাকিয়ে উত্তর দেয়,’ ভালো।কিন্তু খুব ক্ষুধা লাগছে। ‘
ছেলের ক্ষুধার কথা শুনে সাথে সাথে খাবার আনতে যান মা।এদিকে আদনান চারুর দিকে তাকিয়ে আছে।একপর্যায়ে সে চারুকে বলে,
—‘ কিরে,তুই মাথা নিচু করে কি ভাবছিস?নিশ্চয় বিয়ের কথ… ‘
কথাটা সম্পুর্ন করে না আদনান।তার আগেই খাবার নিয়ে এসে তার সামনে ধরে তার মা।আদনান একবার তার মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দেয়।তারপর খেতে শুরু করে।সবাই বুঝতে পারছে সদ্য অজ্ঞান থেকে উঠে নিত্তিয়ার কথা ভুলে গেছে আদনান।কেউ মনে করিয়েও দিচ্ছে না তাকে।
খাওয়া শেষ করে আদনান উঠে দাঁড়ায়।তারপর সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,
—‘ তোমরা সবাই একটু বাহিরে যাওতো।আমি গুরুত্বপুর্ন একটা কাজ করবো। ‘
এই মুহুর্তে ছেলেকে একা ছাড়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নেই হালিম সাহেবের।তবুও অনিচ্ছাসত্ত্বে সবাইকে নিয়ে বাহিরে বের হয়ে আসেন তিনি।ধপ করে সোফায় বসে পড়েন হালিম সাহেব।চোখের কোনে জলজল করছে পানি কণা।হালিম সাহেবের এই অবস্তা দেখে চারুর বাবা আমজাদ সাহেব বলেন,
—‘ এই মুহুর্তে আমাদের এখানে থাকা ঠিক নয়।আমরা বরং আজকেই চলে যাই! ‘
আমজাদ সাহেবের এই কথাটা শুনে মাথা তুলে তার দিকে তাকান হালিম সাহেব।চশমাটা খুলে টেবিলের উপর রাখতে রাখতে বলেন,
—‘ নাহ।আপনাদের এখন এখানেই থাকতে হবে।আমার ছেলে যতদিন সুস্থ হয়নি ততদিন এখানেই থাকবেন আপনারা।আর আজকেতো চারু আর আদনানের বিয়ের ডেট ছিল।আজকেতো হলো না তবে কালকে বিয়ে হবে।আমি জানি এই মুহুর্তে আদনানকে একমাত্র চারুই ঠিক রাখতে পারবে।সেদিন আমি দেখেছি সব চারু কিভাবে আদনানকে বোঝাতে পারে। ‘
এই বলে তিনি উঠে দাঁড়ান।আস্তে আস্তে চারুর দিকে এগোতে থাকেন।একেবারে চারুর সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে চারুর হাতটা ধরে নিজের হাতের উপর রেখে বলেন,
—‘ চারু মা,তুমি আমার মেয়ের বয়সি।তোমার কাছে আজকে একটা অনুরোধ করবো।এটাই তোমার কাছে আমার প্রথম এবং শেষ চাওয়া।তুমি আমার ছেলেটার পাশে থেকে তাকে আবার আগের মতো করো প্লিজ।আমি অনুরোধ করছি…’
চারু কি করবে ভেবে পাচ্ছেনা।হ্যা বলবে নাকি না বলবে বুঝতে পারছে না।সে এক এক করে তার বাবা মায়ের দিকে তাকায়।সবাই চোখের ইশারায় হ্যা বলতে বলে।অবশেষে সে তাকায় রিমির দিকে।রিমি চোখের ইশারায় চারুকে অনুরোধ করে হ্যা বলতে।চারু তার চোখ বন্ধ করে হ্যা বলতে যাবে এই মুহুর্তে তার হাত থেকে নিজের হাতটা সড়িয়ে নেন হালিম সাহেব।
চারু অবাক হয়ে চোখ খুলে তাকায় সামনের দিকে।একটা ছেলে এসে জড়িয়ে ধরে চারুকে।ছেলেটার পিছনে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে তার মা।চারুও জড়িয়ে ধরে ছেলেটাকে।তারপর সে ছেলেটার কপালে চুমু খায়।ছেলেটা তার গালে চুমু খায়।সবাই তাকিয়ে আছে তাদের দিকে।
চলবে..
{মাথায় এখনো ব্যাথা থাকার কারনে গল্পটা ভালো করে সাজিয়ে লিখতে পারিনি।আজকে ধামাকার কথা ছিল।অনেকে বলেছে ধামাকাটা কি?আমি এই পর্বে ধামাকা দিলাম না ধামাকা হবে পরের পর্বে।আর ধামাকাটা দেখতে পাশেই থাকুন।}
•••গুরুত্বপুর্ন কথা-কমেন্ট বক্সে অনেকে আমাকে আপু বলে ডাকে।তারা হয়তো জানেনা আমি মায়ের পেট থেকে জলজ্যান্ত ছেলে হয়ে জন্ম নিছি মেয়ে না।এই জলজ্যান্ত ছেলেটাকে মেয়ে বলে ডাকলে বুকের ভিতর মোচর মারে।কেউ আপু বলবেন না প্লিজ।
কেমন হয়েছে জানাবেন।
নামাজ কায়েম করুন।আল্লাহ হাফেজ।
চলবে..
{আজকে গল্প দেওয়ার কথা ছিলনা।আমার চাচার দোয়া অনুষ্টান আজকে।তবুও দিলাম।কালকে চারু আর আদনানকে নিয়ে একটা ধামাকা দিয়ে চাই।সবাই মন্তব্য করুন।প্লিজ কেউ নাইস নেক্টট লিখবেন না।}
••আরেকটা গুরুত্বপুর্ন কথা।আমি বাদে আমার গল্প অন্য কেউ পোষ্ট করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্তা নিতে বাধ্য হব।এমনকি কার্টেসি ছাড়াও পোষ্ট করবেন না কেউ।
নামাজ কায়েম করুন।আল্লাহ হাফেজ।