#তৃণশয্যা
#নিয়াজ_মুকিত
#৯ম_পর্ব{খানিকটা ধামাকা}
ছেলেটা চারুর গালে চুমু খেলো।চারুও ছেলেটার গালে চুমু খায়।এতক্ষন সবার মুখটা মরমরা থাকলেও এখন কিছুটা হাসি ফুটে ওঠে সবার মুখে।পিছন থেকে ছেলের মা এসে ধপ করে বসে পড়ে সোফায়।চারু ছেলেটাকে নিজের কোলে তুলে নেয়।আসলে ছেলেটা চারুর চাচাতো ভাই।৫বছর বয়সে পা দিয়েছে কয়েকদিন আগে😋অনেকদিন থেকে চারুর সাথে তার দেখা নাই।তাই এখানে চারুকে দেখেই দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে ছেলেটা।
চারুর চাচিমার সাথে কথা বলছে সবাই।রিমি আর চারু ছেলেটা মানে রাব্বির সাথে মজা করছে।কিছুটা মুহুর্তের জন্য সবাই ভুলে গেছে আদনানের কথা।একপর্যায়ে চারুর চাচিমা চারুকে নিজের কাছে ডাকে।চারু রাব্বিকে রিমির কোলে দিয়ে আস্তে করে বসে পড়ে তার চাচিমার পাশে।বসতেই তার চাচিমা তাকে জিজ্ঞাসা করে,
—‘ কেমন আছিস মা?সেই ২বছর আগে গেছিলাম তারপর আর তোর সাথে দেখাই না।দুরে থাকি বলে কি একটু আসবিও না? ‘
চারু হাসি মুখে বলে,
—‘ এখনতো দেখা হলো।তুমি যদি আমাদের সাথে রংপুরে থাকতে তাহলেতো প্রতিদিন দেখা করতাম।তুমিতো এখানে তাই দেখা হয়না। ‘
চারুর চাচিমা আর কোনো কথা না বলে রিমির মায়ের কাছ থেকে ওয়াসরুমের ঠিকানা নিয়ে সেদিকে রওনা হয়।তিনি চলে যাওয়ার সাথে সাথে হালিম সাহেব আবার বলে ওঠে,
—‘ চারু মা,তুই কিন্তু আমার কথার উত্তর দিলি না এখনো। ‘
চারু পুনরায় তার বাবা-মায়ের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ একটা শ্বাস নিয়ে বলে,
—‘ আমি রাজি ‘
কথাটা শুনে হালিম সাহেব সহ সকলের মনে আনন্দের হিল্লোল বয়ে যায়।চারু লজ্জা পেয়ে সেখান থেকে উঠে রিমির রুমের দিকে রওনা দেয়।যাওয়ার পথে হঠাৎ-ই মনে হয় আদনানের কথা।দৌড় দেয় সেদিকে।চারু দরজায় হাত দিতেই দরজাটা খুলে যায়।ভিতরে বিছানার উপর শুয়ে আছে আদনান।চারু আস্তে করে ভিতরে প্রবেশ করে আদনানের হাতে থাকা জিনিসটা দেখে খুব জোরে চিল্লিয়ে ওঠে।
তার চিৎকার শুনে সবাই তারাতারি করে সেখানে উপস্তিত হয়।উপস্থিত হয়ে সবাই থমকে দাঁড়ায়।আদনানের মুখ দিয়ে গোল্লা বের হতে শুরু করেছে।হাতে ঘুমের ওষুধের পাতা।হালিম সাহেব আর আদনানের মা মাথায় হাত দিয়ে সেখানেই বসে পড়ে।চারু হাত-পা সব কিছু অবশ হয়ে গেছে।রিমি থ মেরে দাঁড়িয়ে আছে এক জায়গায়।এই মুহুর্তে যে একটা আম্বুলেঞ্চ দরকার সেটা কারো মনে ঢুকছে না।
সবার এই অবস্থা দেখে নিজের ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে আম্বুলেঞ্চকে ফোন করে চারুর চাচি।কিছুক্ষনে মধ্যে পৌছে যায় আম্বুলেঞ্চ।কয়েকজন লোক আদনানকে ধরে আম্বুলেঞ্চে তোলে।আদনানের সাথে আম্বুলেঞ্চে ওঠে তার বাবা-মা ও চারু।বাকিরা বাড়িতেই থেকে যায়।
১৫.
আদনানের অপারেশন চলছে।ডাক্তার বলেছে একসাথে ৪টা ঘুমের ওষুধ খাওয়ার জন্য কিছুটা রিক্স আছে তবে বেশি না।ডাক্তারের কথায় কিছুটা হলেও আস্থা পেয়েছে হালিম সাহেব ও তার স্ত্রী,সাথে চারুও।তবে সবারই মনের মধ্যে একটা চিন্তা ঘুরঘুর করছে।
১ঘন্টা পর,
অপারেশন চেম্বার থেকে বের হয়ে আসে ডাক্তার।দৌড়ে তার কাছে যায় হালিম সাহেব।তার পিছন পিছন চারু ও রিমির মা রাহিনা বেগমও যায়।হালিম সাহেব ডাক্তারকে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই ডাক্তার বলে,
—‘ আপনাদের ভাগ্য ভালো যে ঠিক সময়ই নিয়ে এসেছেন।আর একটু হলেই হয়তো বড় ধরনের সমস্যা হতো।তবে এখন ঠিক আছে।জ্ঞান ফিরতে কিছুটা সময় লাগবে ‘
এই বলে ডাক্তার সেখান থেকে চলে যায়।ডাক্তারের কথায় অনেকটা আস্থা পায় সবাই।সবাই গিয়ে বসে পড়ে চেয়ারে।বসার সাথে সাথেই হালিম সাহেব চারু আর রাহিনা বেগমকে উদ্দেশ্য করে বলে,
—‘ আমি জানি আদনান কেন ঘুমের ওষুধ খেয়েছে।সে তখন নিজে থেকেই ভালো হওয়ার অভিনয় করেছিল।নিত্তিয়াকে ভুলে থাকার অভিনয় করেছিল।সে আমাদের কষ্ট দিতে চায় না।তাই আমাদের সাথে হাসি মুখে কথা বলে রুম থেকে বের করে দিয়েছে।তারপর…’
এই কথাগুলো শোনার পর রাহিনা বেগম হালিম সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বলে,
—‘ তুমি এত কিছু জানলে কিভাবে? ‘
হালিম সাহেব কোনো কথা না বলে তার পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে রাহিনা বেগমের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
—‘ এইখান থেকে ‘
রাহিনা বেগম স্বামীর কাছ থেকে এক ঝটকায় কাগজটা নিয়ে পড়তে শুরু করে।চারুও মাথাটা এগিয়ে দিয়ে পড়তে শুরু করে।কিছুক্ষন আগে হালিম সাহেব যে কথাগুলো বললেন তাই সাজিয়ে লেখা আছে এতে।পড়া শেষ হলে মাথা তুলে হালিম সাহেবের দিকে তাকায় স্ত্রী রাহিনা বেগম।তার চোখের কোণে পানি চিকচিক করছে।তিনি খানিকটা কান্না মৃশ্রিত গলায় বলেন,
—‘ আমার ছেলেটার জীবন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।সে কেন বুঝতেছে না যে আত্মহত্যা মহাপাপ।তাকে এখন চোখে চোখে রাখা প্রয়োজন।পাশ থেকে সাপোর্ট করা প্রয়োজন।এই সবকিছুই চারু করতে পারবে।আমি বাসায় গিয়েই কাজি সাহেবকে ফোন দিব।আজকেই বিয়ে হবে। ‘
চারু কোনো কথা না বলে একদৃষ্টিতে আদনানের ক্যাবিনের দিকে তাকিয়ে আছে।মনের মধ্যে হাজারো উল্টাপাল্টা ভাবনা আসতেছে।সে বুঝতে পারছে আদনান তাকে খুব সহজে মেনে নেবে না।ভালোবাসবে না তাকে।কারন তার জীবনে একজন ছিল যাকে সে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসতো।কিন্তু চারু আদনানকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসবে।অতীতে চারুর জীবনে কেউ ছিল না।আদনানই প্রথম পুরুষ চারুর জীবনের।
হঠাৎ আদনানের ক্যাবিন থেকে একটা নার্স বের হয়ে আসে।তারপর হাসিমুখে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,
—‘ ওনার জ্ঞান ফিরেছে।আপনারা দেখে আসুন। ‘
এই কথা শোনা মাত্র আর এক সেকেন্ডও সেখানে বসে থাকেনা কেউ।সবাই গিয়ে প্রবেশ করে আদনানের ক্যাবিনে।আদনান উপরের দিকে তাকিয়ে আছে আর চোখের পানি ফেলতেছে।
১৬.
পরেরদিন সকালে তার রিলিজ হয়।বাসায় নিয়ে আসা হয় তাকে।বাসায় ঢুকেই চমকে ওঠে সবাই।বাসাটাকে সাজিয়ে ফেলা হয়েছে।কাজি সাহেব এসে বসে আছে।কে করলো এসব বুঝতে পারছে না কেউ?রিমি হাসিমুখে সবাইকে দেখছে।তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে তার খালাতো ভাই ইশান।বয়সে রিমির ছোট সে।সবাই বুঝতে পারে কে করেছে এসব।
রিমি দরজা থেকেই চারুকে আলাদা করে নিজের রুমে নিয়ে যায়।ইশান আর আমজাদ সাহেব আদনানকে তার রুমে নিয়ে যায়।ভুলিয়ে ভালিয়ে একটা পাঞ্জাবী পড়ায় আদনানকে।
অবশেষে দুজনে এসে বসে কাজির সামনে।সবার অনুমতি নিয়ে বিয়ে পড়াতে শুরু করেন কাজি সাহেব।প্রথমে চারুকে তিনবার কবুল বলতে বলতে চারু কিছুটা চোখের পানি ফেলে কবুল বলে দেয়।কিন্তু আদনানকে বলতেই আদনান চিৎকার করে উঠে দাঁড়ায়।তার চোখ দিয়ে আগুনের ফোয়ারা ছুটছে মনে হয়।
তার সাথে উঠে দাঁড়ায় তার বাবা ও মা।তার মা তার সামনে গিয়ে আদনানের হাতটা ধরে তার নিজেরই মাথার উপর রেখে বলে,
—‘ আজকে তোর ভালোবাসার প্রমাণ হবে।তুই যদি নিত্তিয়াকে সত্ত্যিই ভালোবেসে থাকিস তাহলে এখনি কবুল বলবি পর যদি না ভালোবাসতিস তার সাথে ছলনা করেছিস তাহলে বলবি না।এখন কি করবি বল? ‘
আদনান খানিকটা রেগে বলে,
—‘ মা আমি নিত্তিয়ার সাথে ছলনা করিনি।তাকে মন থেকেই ভালোবেসেছি।তাকে ছাড়া আমি অন্যকাউকে বিয়ে করার কথা ভাবিনি আর ভাবতেও চাইনা। ‘
সাথে সাথে আদনানের বাবা বলে,
—‘ তাহলে কবুল বল।বাবা দেখ নিত্তিয়া মারা গেছে।সে ওপাশ থেকে চেয়ে আছে কখন তুই কবুল বলবি।তুই কবুল বললেই সে চলে যাবে।খুব খুশি হবে। ‘
তবুও আদনান রাজি হয় না।শেষ পর্যন্ত আর কোনো উপায় না পেয়ে রাহিনা বেগম ফলকাটা ছুরিটা নিজের গলায় ধরেন।আদনান এই দেখে চমকে ওঠে।রাহিনা বেগম আদনানকে উদ্দেশ্য করে বলে,
—‘ তুই কবুল না বললে এটাই আমার শেষ কথা হবে। ‘
আদনান মায়ের দিকে তাকিয়ে ধপকরে বসে পড়ে।এই মুহুর্তের নিত্তিয়ার কথা খুব মনে পড়ছে।নিজের জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসতো যাকে তাকে ছেড়ে অন্য একজনকে বিয়ে করতে যাচ্ছে আদনান।আদনান কিভাবে এটা করতে পারতেছে।সে তো নিত্তিয়া বলেছিল কখনো তাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করবে না।আদনান এসব ভাবতে ভাবতে চোখের পানি ফেলতে শুরু করে।তারপর নিজের মায়ের দিকে তাকিয়ে পরপর তিনবার কবুল বলে দেয় আদনান।
কবুল বলার পর এক মিনিটও সেখানে থাকেনা সে।রওনা দেয় নিজের রুমের উদ্দেশ্যে।খারাপ কিছু করে ফেলতে পারে মনে করে তার পিছন পিছন যায় চারু।আদনান নিজের রুমের দরজা লাগিয়ে দেয়ার আগেই ভিতরে প্রবেশ করে চারু।আদনান চারুকে দেখে খুব রেগে যায়।সে চারুকে বিছানায় ফেলে দিয়ে তার উপর চেপে বসে।পকেট থেকে বের করে ডেসলাইট।
চারু ভিষন চমকে যায়।আদনান ডেসলাইটটাতে আগুন জালাতে জালাতে বলে,
—‘ তুই নিত্তিয়া আর আমার মাঝে এসেছিস।তোকে মারলে আমার আর নিত্তিয়ার মাঝে আর কেউ থাকবে না। ‘
এই বলে আদদান চারুর শাড়ির আচলের কাছে আগুন নিয়ে যায়।হুট করে শাড়ির আচলে লেগে যায় আগুন..
#তৃণশয্যা
#নিয়াজ_মুকিত
#১০ম_পর্ব
আগুন লেগে যায় চারুর শাড়ির আচলে।আদনান এখনো চারুর উপরে বসে আছে।আগুন আস্তে আস্তে উপরের দিকে উঠতে শুরু করেছে।আদনান থ মেরে শুধু দেখছে।চারু বুঝতে পারছে এভাবে থাকলে তাকে আগুনে পুড়ে মরতে হবে।এদিকে শাড়ির আচল থেকে বেডশীটও পুড়তে শুরু করেছে।আস্তে আস্তে বৃদ্ধি পাচ্ছে আগুনের আচ।একপর্যায়ে চারুর পেটে লাগে আগুনের ছ্যাঁকা।চারু এক ঝটকায় আদনানকে উপর থেকে ফেলে দিয়ে উঠে দাঁড়ায়।দৌড় দেয় বাথরুমের উদ্দেশ্যে।দৌড়ানোর কারনে বাতাস পেয়ে আগুন আরো উঠতে শুরু করে।তবে বাথরুমে প্রবেশ করে বাথট্যাবে শাড়ির আচলটা রাখতে একেবারে নিভে যায় আগুন।চারু দীর্ঘ একটা নিশ্বাস নেয় তারপর একটা মগে পানি নিয়ে দৌড়ে ঘরের মধ্যে আসে।এসেই পানি গুলো ঢেলে দেয় বিছানার উপর।আগুনটা নিভে যায় বেডশীট থেকে।তবে অর্ধেকের চেয়ে বেশি পোড়া গেছে বেডশীট ও তোশক।আরেকটু হলে বেডটাতেও আগুন লাগতো।
আদনান এখনো নিচেই পড়ে আছে।চারু একবার আদনানের দিকে তাকিয়ে বের হয়ে যায় রুম থেকে।চুপিচুপি সে প্রবেশ করে রিমির রুমে।রিমি নেই দেখে তারাতারি দরজাটা লাগিয়ে দেয়।তারপর ব্যাগ থেকে একটা জামা বের করে বাথরুমে গিয়ে চেঞ্জ করে নেয়।চেঞ্জ করে এসে সে আবার আদনানের রুমে যায়।আদনান সোফার উপর বসে আছে আর বেডশীটটা দেখছে।
চারু প্রবেশ করতে তার নজরটা পড়ে চারুর দিকে।চারু আদনানের সামনে দিয়ে বেডটার কাছে যায়।তারাতারি করে বেডশীটটা তুলে ফেলে।তোশক পোড়া যাওয়ার কারনে আরেকটা বড় বেডশীট বিছিয়ে দেয় সে।এবার সে তাকায় আদনানের দিকে।আদনান তার দিকে তাকিয়ে আছে।হাতে দেশলাইটটা এখনো আছে।
১৭.
সমস্ত দিনটা পার করে ডিনার টেবিলে বসে আছে সবাই।লক্ষ্য ডিনার করা।রাহিনা বেগম সবাইকে খাবার তুলে দিচ্ছেন।আদনান প্লেটের দিকে তাকিয়ে আছে।কমবেশি সবার নজরই তার দিকে শুধুমাত্র চারু বাদে।তার পেটে প্রচন্ড ক্ষিধা থাকার কারনে নজরটা খাবারের দিকে।রাহিনা বেগম চারুর প্লেটে খাবার দিতেই চারু খেতে শুরু করে।খাওয়ার মাঝখানে আমজাদ সাহেব বলে ওঠে,
—‘ তাহলে আমরা কালকে চলে যাচ্ছি। ‘
এই কথাটা শুনে হালিম সাহেব কড়া চোখে তাকান আমজাদ সাহেবের দিকে।
—‘ কালকে যাবেন মানে,আরো কয়েকদিন থাকুন ‘ হালিম সাহেব বলে।তার কথার প্রতিউত্তরে আমজাদ সাহেব বলে ওঠে,
—‘ নাহ আর থাকা যাবেনা।অনেকদিন হইছে,অফিসের একটা গুরুত্বপুর্ণ কাজ আছে তাই যেতে হবে। ‘
শেষ পর্যন্ত সবাই অনেক জোর করলেও আমজাদ সাহেব নিজের সিদ্ধান্তেই অটল থাকেন।বাবা-মা চলে যাবে শুনে মনটা প্রচুর খারাপ হয়ে যায় চারুর।চোখের কোনে পানি চলে আসে।রিমি চারুর ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বলে,
—‘ খালা-খালু কালকে যাবে তার দুইদিন পর আবার আমরা খালা-খালুর বাসায় যাব। ‘
রিমির এই কথাটা শুনে মুখ তুলে তার দিকে তাকায় চারু।রিমির হাসি দেখে তার মুখেও হাসি ফুটে ওঠে।রিমির কথার উত্তরে আমজাদ সাহেব বলে,
—‘ অবশ্যই যাবে ‘
সেদিনের মতো শেষ হয়ে খাওয়া-দাওয়া।সবার আগে টেবিল থেকে উঠে পড়ে আদনান।কারো সাথে কোনো কথা না বলে পানি খেয়ে চলে যায় নিজের রুমে।চারু সবার দিকে তাকিয়ে বলে,
—‘ আমি কি আজ রিমির সাথে থাকবো! ‘
চারুর এরকম বোকা বোকা প্রশ্নে বিব্রত হয় তার বাবা-মা।কিন্তু রিমি মুচকি হেসে বলে,
—‘ বিয়ের পর কেউ বরের সাথে না থেকে ননদের সাথে থাকে নাকি ‘
চারু বুঝতে পারে তাকে আজ আদনানের সাথে থাকতে হবে।সকালের ঘটনার পর আদনানের সাথে একবারও কথা বলেনি চারু।আদনান কয়েকবার কথা বলার চেষ্টা করলেও এড়িয়ে গেছে চারু।চারু খাবার শেষ করে পানি খেয়ে রওনা দেয় আদনানের ঘরের উদ্দেশ্য।আস্তে করে দরজা খুলে দেখে আদনান কি করতেছে?কিন্তু সে আদনানকে ঘরে দেখতে পায় না।কৌতুহল নিয়ে ঘরের ভিতরে প্রবেশ করে চারু।
ভিতরে প্রবেশ করে দরজাটা লাগিয়ে দেয় সে।তারপর ছোক-ছোক করে খুঁজতে শুরু করে আদনান নামক বস্তুটাকে।চারু খুঁজতে খুঁজতে একপর্যায়ে দেখতে পায় আদনান ব্যালকনির ইজি চেয়ারটা বসে আছে।বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে আছে নীল ডায়েরীটা।চারু আস্তে আস্তে করে আদনানের দিকে এগোতে থাকে।একোর্যায়ে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে আদনানের ঠিক পিছনে।আদনান নীল ডায়েরীটা বুকে জড়িয়ে নিরবে চোখের পানি ফেলছে।চারু মনে মনে ভাবে,এই ছেলেটা এত ছ্যাচকাঁদুনি কেন?একটা মেয়ের জন্য কেউ এরকম থেকে থেকে কাঁদে।
চারু গিয়ে দাঁড়ায় একেবারে আদনানের সামনে।আদনান চারুর দিকে তাকিয়ে ভালো করে বসে।চারু সরাসরি আদনানের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করে,
—‘ ঘুমাবেন না! ‘
আদনান চারুর দিকে তাকিয়ে বলে,
—‘ তুই ঘুমিয়ে পড় ‘
চারু এবার দৌড়ে রুমে প্রবেশ করে।তারপর একটা টুল নিয়ে গিয়ে ঠিক আদনানের সামনে বসে পড়ে।আদনান অবাক হয়ে চারুকে দেখছে।এবার চারু আদনানের দিকে তাকিয়ে বলে,
—‘ আমি আপনার মতো ছিঁচকাদুনে ছেলে জীবনেও দেখি নাই।একটা মেয়ের জন্য কেউ এভাবে কাঁদে বলেন? ‘
চারুর বলার ভঙ্গি এমন ছিল যা দেখে আদনান না হেসে পারে না।আদনানকে হাসাতে পেরে চারু নিজে নিজে খুশি হয়।আদনান ঠোটের কোণে হাসিটা রেখে বলে,
—‘ আমি কই কান্না করতেছি।আমিতো এমনি বসে আছি।ভাবছি তখনকার জন্য তুই আমাকে মাফ করেছিস কিনা? ‘
চারু ভাবে এই সুযোগ।সে আদনানকে বলবে আপনি যদি আমার এই কথাটা রাখতে পারেন তাহলে আমি আপনাকে মাফ করবো।
তার ভাবনার শেষে আদনান বলে ওঠে,
—‘ তুই কি আমাকে মাফ করেছিস? ‘
চারু গলাটা পরিষ্কার করে বলে,
—‘ নাহ করিনি তবে করতে পারি যদি আপনি আমার একটা কথা রাখতে পারেন। ‘
আদনান ভ্রু-কুঁচকে চারুর দিকে তাকিয়ে বলে,
—‘ কি কথা? ‘
চারু হাসতে হাসতে বলে,
—‘ আপনি আর কখনো কাঁদবেন না।কখনো না!কথা দিন? ‘
এই বলে চারু তার হাতটা আদনানের দিকে এগিয়ে দেয়।আদনান কি যেন ভেবে হাসতে হাসতে চারুর হাতের উপর হাত রেখে বলে,
—‘ আচ্ছা যা কথা দিলাম। ‘
চারু এবার বলে,–‘ চলুন ঘুমিয়ে পড়ি ‘
আদনান চারুর দিকে তাকিয়ে বলে,–‘ তুই ঘুমা আমি একটু পর ঘুমাবো ‘
চারু ধপ করে আদনানের কোলে বসে পড়ে।চারুর এরকম কাজে আদনান অবাকের শেষ সীমানা পার হয়ে যায়।মুহুর্তের মধ্যে তার মাথার তার আবার ছিড়ে যায়।পকেট থেকে বের করে পকেট নাইফ।যেটা তার কাছে সবসময় থাকে।শুধু তার কাছে নয় পকেট নাইফ কমবেশি অনেক মানুষের কাছেই থাকে।এই নাইফটা দিয়ে কোনো কোনো সময় বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
আদনান নাইফটা বের করে।চারু চমকে ওঠে।সে কোল থেকে ওঠার আগেই….
চলবে..
{একটা কথা আজকে সবাই শুধু নাইস\\নেক্টট কমেন্ট করবেন।}
নামাজ কায়েম করুন।আল্লাহ হাফেজ।
চলবে..
{ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।নাইস\\নেক্টট কমেন্ট করবেন না প্লিজ।}
নামাজ কায়েম করুন।আল্লাহ হাফিজ।