#গল্পের_নাম_তোমাকে_চাই
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ১১
প্রতিবেশীদের সামনে মাথায় ঘোমটা দিয়ে বসে আছে অধরা তার অনেক লজ্জা করছে সবাই তার দিকে তাকাচ্ছে আর চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে।তাদের মধ্যে একজন বলে উঠলো,
~আমরা কিন্তু কোনোদিন বুঝতেই পারিনি রক্তিম আর অধরার মধ্যে এসব চলছে।
অধরা চোখ তুলে একবার সেই মহিলার দিকে তাকালো আরেকজন বললো,
~অধরা তো বিয়ের পর আরো সুন্দর হয়ে গেছে।
অধরা আবারও মাথা নিচু করে ফেলে জোহোরা খাতুন গম্ভীর কন্ঠে বললেন,
~২দিন পর ওদের বিয়ে উপলক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে আপনারা সবাই আমন্ত্রিত।
ইরা এবার মজার ছলে বললো,
~আপনারা আবার বিয়ে হয়ে গেছে ভেবে খালি হাতে এসে পরবেন না গিফট সাথে করে নিয়ে আসবেন।
সব মহিলা হা করে ইরার দিকে তাকিয়ে আছে অধরা মুচকি মুচকি হাসছে।সবাই অধরারকে গিফট দিয়ে নিজ নিজ বাসায় চলে গেলো অধরা নিজের রুমে গিয়ে শাড়ি পাল্টে ফ্রেশ হয়ে কাউচে বসে পরলো বই আর খাতা নিয়ে পড়তে শুরু করলো অনেকদিন এগুলোর ধারে কাছে যাওয়া হয়নি এইবার হয়তো ফেলের তকমা লেগে যাবে তার মাথায়।সে পড়ায় মনোযোগ দিচ্ছে তখনই দরজা ঠেলে ঘরে চলে আসে রক্তিম অধরা বই থেকে মুখ তুলে সামনে তাকাতেই দেখতে পেলো রক্তিম দেওয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে পকেটে হাত গুজে। অধরা বইটা টেবিলে রেখে বললো,
~কী হয়েছে?
রক্তিম বললো,
~আগামীকাল শপিংয়ে যাবো আমরা।
অধরা বিরক্তি নিয়ে বললো,
~মাফ করবেন আমি কোথাও যেতে পারবোনা আপনি করে নেন শপিং আমাকে টানবেন না। সেই প্রিয়া আপুর বিয়ে থেকে শুরু হয়েছে আমার পড়া অনেক বাকি রয়েছে পরীক্ষা শুরু হয়ে যাবে।
রক্তিম মনোযোগ সহকারে সব কথা শুনে বললো,
~যা আনবো তাই পরতে হবে মনে রেখো।
অধরা বললো,
~কোনোদিন দেখেছেন এসব নিয়ে ক্যাটক্যাট করতে।
এতটুকু বলে অধরা কার্বাড থেকে একটা কম্বল বের কাউচে শুয়ে পরলো তা জড়িয়ে। বই হাতে নিয়ে পড়তে শুরু করলো রক্তিম বাঁকা হেসে অধরার পাশে শুয়ে পরলো কম্বলটা নিজ শরীরে জড়িয়ে অধরার পায়ের উপর পা তুলে দিলো ঘটনার আকস্মিকতায় অধরা কী করবে বুঝতে পারছেনা?রক্তিমের ঠান্ডা পা তার পাকে স্পর্শ করতেই অধরা চেঁচিয়ে বললো,
~আপনি পা সরান ঠান্ডা পা আপনার প্লিজ সরে যান।
রক্তিম কাউচে হেলান দিয়ে আরো আয়েশ করে শুয়ে বললো,
~এভাবে শুয়ে থাকো তাহলে দেখবে পা গরম হয়ে যাবে।
অধরা এবার রেগে বললো,
~অসভ্যতামি করবেন না আর আমার রুমে কেন এসেছেন?বড়চাচা বলে দিয়েছে অনুষ্ঠানের দিন পর্যন্ত আপনি আমার পাশে ঘেষবেন না বের হন এখান থেকে।
রক্তিমের এতে হেলদোল হলোনা সে অধরার কোমড় জড়িয়ে ধরে শুয়ে পরলো অধরা বললো,
~কী মুসকিল রে বাবা?
রক্তিম মুচকি হেসে আরো নিবিড়ভাবে অধরার কোমড় জড়িয়ে শুয়ে থাকে।
______________♥______________
অনুষ্ঠানের দিন চলে আসলো সবাই কাজে ব্যস্ত প্রিয়ারাও চলে আসে অধরার হাতে মেহেদী দেওয়া হচ্ছে।প্রিয়া অধরার পাশে বসে বললো,
~আমার তো অনেক খুশি লাগছে মা যখন ফোন করে বললো ঘটনা আমি তো পুরো হা হয়েছিলাম।
ইরা বললো,
~আমি তো পুরো শকড ছিলাম আমার সামনেই রক্তিম
ভাইয়া
ইরার পুরো কথা শেষ হওয়ার আগেই সেখানে উপস্থিত হয় পৃথুলা সে হাসিহাসি মুখ করে বললো,
~অধরা,তোমার সবকিছু গুছিয়ে আমি রক্তিমের রুমে দিয়ে এসেছি আজ থেকে তো সেখানেই থাকবে।
অধরা মুচকি হেসে বললো,
~ধন্যবাদ আপু।
পৃথুলা বললো,
~তোমার শাড়িটা কিন্তু বেশ সুন্দর রক্তিমের চয়েজ আছে বলতে হবে।
ইরা বললো,
~তাই তো অধরা আপুকে পছন্দ করেছে।
ইরার কথা শুনে প্রিয়া হো হো করে হেসে উঠলো।পৃথুলা সেসময়ই রুম থেকে বের হয়ে চলে যায় নিজ কাজে।
রক্তিম,শাওন ডেকোরেশনের কাজ দেখছে হঠাৎ রক্তিমের নজর গেইটের দিকে পরলো রক্তিম ছাদ থেকে গটগট করে নিচে নেমে সেই ব্যক্তিটির সামনে দাড়ালো। রক্তিমের আগমনে সেই ব্যক্তিটি একটু হকচকিয়ে গেলো রক্তিম বললো,
~ইফতি সাহেব আপনি এখানে?
ইফতি বললো,
~আসলে তৈয়ব আঙ্কেলের সাথে কথা বলতে এসেছিলাম।
রক্তিম পা থেকে মাথা পর্যন্ত ইফতিকে দেখে নিয়ে বললো,
~দেখা করার কারণটা কী?
ইফতি আমতা আমতা করে বললো,
~আমার মনে হচ্ছে আপনাদের বাসায় কোনো অনুষ্ঠান আয়োজিত হচ্ছে আমি পরে আসবো।
ইফতি চলে যেতে নিবে তখনই রক্তিম ইফতিকে বললো,
~অনুষ্ঠান তো অবশ্যই আমার আর অধরার বিয়ের অনুষ্ঠান। আজকে রাতে আপনিও চলে আসবেন
ইফতি অবাক নয়নে রক্তিমের দিকে তাকালো রক্তিম হালকা হেসে বললো,
~ইফতি সাহেব,আপনি কী খুশি হননি?
ইফতি বললো,
~খুশি হওয়ার কথা তো আমার না রক্তিম সাহেব তবুও বলবো সুখে থাকুন অধরাকে আগলে রাখুন।
বলেই সে এক সেকেন্ডও সেখানে দাড়ালোনা গটগট করে চলে গেলো।রক্তিম তার যাওয়ার পাণে তাকিয়ে বললো,
~জীবনের মোড় ঘুরতে সময় লাগেনা আমি দোয়া করলাম যাতে আপনিও সুখে থাকুন।
____________♥_____________
অধরা রক্তিমের দেওয়া লাল শাড়ি সকল গহনা পরে তৈরি হয়েছে বউসাজে অধরাকে অনন্যময়ী লাগছে। তাহিদা ইসলাম অধরাকে দেখে বললো,
~মাশআল্লাহ আমার মেয়েকে তো অনেক সুন্দর লাগছে কারো খারাপ নজর যাতে তোর উপর না পরে।
অধরা মুচকি হাসলো প্রিয়া বললো,
~ছোটচাচী সব মেহমান চলে এসেছে রক্তিম ভাইয়া স্টেজে চলে এসেছে অধরাকে নিয়ে যেতে হবে।
তাহিদা ইসলাম বললেন,
~অবশ্যই নিয়ে যাও।
প্রিয়া আর ইরা দুজন অধরাকে নিয়ে ছাদে চলে আসলো অনেক সুন্দর করে পুরো ছাদটা সাজানো হয়েছে।রক্তিম অধরাকে দেখে স্টেজ থেকে নিচে নেমে পরলো অধরা রক্তিমের সামনে এসে দাড়াতেই রক্তিম হাত বারিয়ে দিলো অধরা কাঁপা হাতটা রক্তিমের হাতে
রাখলো।রক্তিম খুব শক্ত করে অধরার হাতটা ধরলো তারপর দুজনই একসাথে স্টেজে উঠে পরলো। সবাই তাদের দেখতে ব্যস্ত সবাই খুশি থাকলেও একজন সহ্য করতে পারছেনা তাদের একসাথে। সে হচ্ছে পৃথুলা রক্তচক্ষু নিয়ে সে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে রক্তিম আর অধরা নানান পোজে ছবি তুলছে।পৃথুলা সবার পিছে দাড়িয়ে ক্ষোভে ফেটে পরছে বুকে চিনচিন ব্যাথা করছে।পৃথুলা দ্রুত পায়ে ছাদ থেকে নেমে নিজ রুমে চলে গেলো দরজা ধপাস করে বন্ধ করে কার্বাড থেকে মদের বোতল বের করে গটগট করে তা খেতে লাগলো।লেহেঙ্গার ওড়নাটা ফ্লোরে ফেলে দিয়ে বললো,
~অনেক হয়েছে ভালোগিরি এখন সবাই দেখবে পৃথুলার খারাপ রূপ।অধরাকে মরতে হবে রক্তিমকে একা বাঁচতে হবে আমি যে কষ্ট অনুভব করছি তা ওকেও পেতে হবে।
ছাদে সবাই ব্যস্ত ইরা অধরার সাথে দাড়িয়ে ছবি তুলেই যাচ্ছে। শওকত তাদের পাশে দাড়িয়ে আছে শাওন তা লক্ষ্য করে শওকতের কানে কানে বললো,
~আমার বোনের সাথে তো অনেক ছবি তুললে এখন আমার সাথেও ছবি তুলো।
শওকত বললো,
~তুমি কী বলছো এসব?
শাওন বললো,
~চোখে যা দেখছি তাই বলছি।
শওকত মাথা চুলকে বললো,
~শাওন,আমার তো এখন চাকরিও হয়ে গেছে ভালো বেতনও পাই। মা আর আমি ছাড়া তো পরিবারে কেউ নেই তুমি যদি ব্যাপারটা একটু দেখতে
শাওন বুকে হাত গুজে বললো,
~তো এখন কী করবো?
শওকত বললো,
~আন্টি আর আঙ্কেলের সাথে একটু কথা বলো আমার ব্যাপারে।
শাওন বললো,
~দেখছি আমি কিন্তু শর্ত একটাই আমার বোনের সাথে কোনো প্রেম করতে পারবেনা।
শওকত বললো,
~তোমার হুকুম মাথার উপরে রাখবো।
_____________♥______________
রক্তিমের রুমে বসে আছে অধরা বিছানায় গোলাপের পাপড়ি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বুকটা ধুকধুক করছে।একটু আগে প্রিয়া এসে তাকে বিছানার মাঝে বসিয়ে মুচকি হেসে চলে গেলো।অধরার কেমন জানি অদ্ভুত ফিলিং আসছে ভয়,ভালো লাগা সব একসাথে কাজ করছে।হঠাৎ বাহিরে অনেক চেঁচামেচির আওয়াজ আসতেই অধরা অনেক ঘাবড়ে যায় কিন্তু পরক্ষণেই তাদের কথা শুনতে পেয়ে অধরা লজ্জা পেয়ে লাল হয়ে যায়।সবাই রক্তিমের ঘরের দরজায় দাড়িয়ে আছে রক্তিম কোমড়ে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে প্রিয়া বললো,
~এভাবে দাড়িয়ে না থেকে পকেটটা হালকা করো তোমার জন্যই ভালো হবে।
রক্তিম বললো,
~চেহারা দেখ আয়নায় তারপর টাকা চাইতে আসিস।
ইরা বললো,
~ভাইয়া ভুলে যেওনা রুমের ভিতরে যেতে দিবো না দরকার পরলে আমি অধরা আপুর সাথে থাকবো।
শাওন বললো,
~ভাইয়া চিপায় পরে কেমন লাগছে?
রক্তিম শাওনের দিকে তাকিয়ে বললো,
~তোর বউ যখন আসবে তখন দেখিস কী করি?
শাওন বললো,
~বিয়ের রাতে চলে যাবো কক্সবাজার একদম নেটওয়ার্কের বাহিরে।
রক্তিম পকেট থেকে ৫ হাজার টাকা বের করে প্রিয়ার হাতে দিয়ে বললো,
~এতে চালিয়ে নে আর যদি প্যাকপ্যাক করেছিস ঠাটিয়ে চড় দিবো।
প্রিয়া টাকা নিয়ে বললো,
~আমাকে রায়হান ডাকছে এই ইরা চল।
শাওন বললো,
~All the best bro.
রক্তিম বললো,
~get out.
শাওন শিস বাজাতে বাজাতে সেখান থেকে চলে গেলো রক্তিম দরজা ঠেলে রুমে প্রবেশ করতেই তার চোখ আটকে গেলো বিছানায় বসে থাকা নতুন বধুর উপর।চোখ যেন পলক ফেলতে চাইছেনা রক্তিম ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো অধরার দিকে। অধরা খামচে ধরলল শাড়ি তার কেনজানি মনে হচ্ছে এখনই সে জ্ঞান হারাবে
রক্তিম বিছানার কাছে এসে অধরার ঘোমটা
চলবে
(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন।ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো 🥰🥰।Happy Reading 🤗🤗)