তোমাকে চাই পর্ব -১৬

#গল্পের_নাম_তোমাকে_চাই
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ১৬
কারণ আইয়ুব হোসেন এসেছেন তার সাথে এসেছেন তৌহিদ হোসেন জোহোরা খাতুন ভয়ে ভয়ে এগিয়ে গিয়ে বললেন,
~আপনারা আসবেন তাতো আগে বললেন নি?
আইয়ুব হোসেন হেসে বললেন,
~ভাবলাম সারপ্রাইজ দিবো তাই এসে পরলাম আর আমি প্ল্যান করেছি আমরা সবাই মিলে বান্দরবন ঘুরতে যাবো।
জোহোরা খাতুনের অন্তরআত্মা আরো কেঁপে উঠলো সে একবার আইয়ুব হোসেনের দিকে তাকিয়ে দেখলো সে শয়তানি হাসি দিয়ে দাড়িয়ে আছে।অধরার বড় মামা বললেন,
~আপনারা ভিতরে আসুন এখানে দাড়িয়ে থাকবেন না।
তারা ভিতরে প্রবেশ করতেই সবাই তাদের দেখে অবাক হলো কিন্তু খুশিও হলো।রক্তিম সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছে তার বাবার আগমনে তাকে ভাবনায় ফেলে দিলো।যে মানুষ এতো বছরে কোনোদিন এই বাসায় পা পর্যন্ত রাখেননি সে আজ এবাসায় থাকবে।রক্তিমের চিন্তিত মুখ দেখে অধরা ফিসফিস করে বললো,
~কী ভাবছেন আপনি?
রক্তিম বললো,
~কিছু না।
অধরা মুচকি হেসে আবারো আড্ডায় মনোযোগ দিলো এতো মানুষের জন্য সবাইকে আলাদা আলাদা রুম দেওয়া সম্ভব নয় তাই সবাই মিলেমিশে থাকবে।জোহোরা খাতুন পানির জগ নিয়ে রুমে প্রবেশ করে বললো,
~আপনি কী করতে যাচ্ছেন?
আইয়ুব হোসেন বিছানায় হেলান দিয়ে বললো,
~আমি কী করছি?আমি তো পরিবার নিয়ে সময় কাটাতে চাচ্ছি।
জোহোরা খাতুন রেগে গিয়ে বললো,
~অনেক করেছেন আর কিছু করতে যাবেন না রক্তিমের মুখে আজ আমি সন্দেহ দেখেছি।দয়া করুন এসব ছেড়ে দিন রক্তিম আপনাকে ছাড়বেনা।
আইয়ুব হোসেন না বুঝার ভান করে বললেন,
~এসব কথা কেন বলছো?আমি কী করেছি?সবসময় তোমার কথা শুনি বলে আজও শুনবো কখনো না।
বলেই সে রুম থেকে বের হয়ে গেলেন আইয়ুব হোসেনের এহেন ব্যবহারে জোহোরা খাতুন স্তব্ধ হয়ে গেছে এই লোকটা অশান্তি করেই ছাড়বে।জোহোরা খাতুন বললেন,
~এখন সব রক্তিমকে বলতে হবে এছাড়া কোনো উপায় নেই।
আইয়ুব হোসেন সবাইকে জানিয়ে দিলেন তারা বান্দরবন যাচ্ছে অধরার মামারাও যাবে শুধু অধরার নানু যাবেনা সে বাসায় থাকবে।রক্তিম বললো,
~কবে যাওয়ার প্লানিং করেছো?
আইয়ুব হোসেন বললেন,
~১দিন পর রওনা দিবো।
রক্তিম মুচকি হেসে বললো,
~ঠিক আছে।
প্রিয়া,রায়হান,ইরা,শওকত,শাওন সবাই খুশি হয়েছে এই প্ল্যানে কিন্তু তারা জানেনা কতোটা ভয়াবহ কাজ করতে যাচ্ছে আইয়ুব হোসেন।আইয়ুব হোসেন সবার খুশি দেখে বাঁকা হেসে বললেন,
~সবাই যেমন হাসতে হাসতে যাবে তেমনি কাঁদতে কাঁদতে ফিরবে।
রক্তিম বারান্দায় দাড়িয়ে সব ঘটনা ভাবছে সবাই অনেক খুশির মধ্যে দিয়ে সময় কাটাচ্ছে তবুও তার মনটা হালকা লাগছেনা কোথাও কী যেন ভুল হচ্ছে।হঠাৎ অধরা এসে তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো,
~এতো কী ভাবছেন ঘরে যে বউ একা রয়েছে তা কী জানেন না?
অধরার দুহাত রক্তিমের বুকে রাখা রক্তিম সেই হাত দুটো ধরে বললো,
~ভুলতে চাইলেও ভুলতে পারবোনা।

______♥_______

অধরা বললো,
~ভুলেই তো গিয়েছেন এসব ডায়লগ মারলেও কোনো লাভ নেই।
রক্তিম অধরাকে সামনে টেনে নিয়ে আসলো তারপর কোমড় জড়িয়ে ধরে বললো,
~আমি ডায়লগ মারছে?
অধরা বললো,
~তো কী?আপনি আমাকে প্রমিজ করেছিলেন আমার পরীক্ষা শেষে আপনি আমাকে নিয়ে রাতের শহর দেখতে বের হবেন।করেছেন আপনি সেটা?
রক্তিম বললো,
~যাহ এটা তো ভুলেই গিয়েছিলাম সরি।
অধরা বললো,
~তাহলে কবে নিয়ে যাবেন?
রক্তিম বললো,
~যবে তোমার ইচ্ছে।
অধরা খুশি হয়ে বললো,
~এখনই যাবো শীতের রাতে গাড়ি নিয়ে ঘুরার মজাই আলাদা।
রক্তিম বললো,
~এখন যাবে?এতো রাতে তোমার ঠান্ডা লেগে যাবে।
অধরা বললো,
~এখন যদি না নিয়ে যান তাহলে আমি আপনার সাথে কথা বলবোনা।
রক্তিম হেসে বললো,
~ঠিক আছে চলো আমি গাড়ির চাবি নিয়ে আসছি।তুমি সোয়েটার পরে নিবে বুঝেছো?
অধরা বললো,
~ঠিক আছে।
কিছুক্ষন পর অধরা আর রক্তিম বাসা থেকে বের হয়ে আসলো অধরার কাছে বাসার এক্সট্রা চাবি আছে তাই কোনো সমস্যা হয়নি।রক্তিম আর অধরা গাড়িতে বসে পরলো।ঠান্ডা বাতাসে মৃদু কেঁপে উঠছে দুজনার শরীর।রাস্তা পুরো ফাঁকা শীতের রাতের রাস্তার নিস্তব্ধতা অধরাকে মুগ্ধ করছে।অধরা প্রাণ খুলে শ্বাস নিয়ে রক্তিমকে বললো,
~ব্যস্ততার দিন গুলো থেকে আমার কাছে নিস্তব্ধতার রাত অনেক প্রিয়।
রক্তিম বললো,
~কেন?
অধরা বললো,
~এইযে আপনি আমার পাশে আছেন আমার সব কথা আমি শুনছি আপনি আমার কথাগুলো শুনছেন।এতে যে ভালোলাগা কাজ করছে তা আর কিছুর মধ্যে নেই।
রক্তিম বললো,
~আজকাল আমি ব্যস্ত থাকিনা তুমি ব্যস্ত থাকো সবাই তোমাকে ঘিরে থাকে আমাকে নয়।
অধরা বললো,
~আপনি যে সবসময় বাংলার পেঁচার মতো করে রাখেন কি ভাবতে থাকেন আপনি এতো?
রক্তিন বললো,
~সময় হলে সব জানাবো।
অধরা আর কথা বাড়ালোনা রক্তিমের কাঁধে মাথা রেখে সব চিন্তা নিশেষ করে দিলো।হঠাৎ অধরার নজরে পরলো চায়ের দোকান অধরা রক্তিমকে বললো,
~গাড়ি থামান ওই যে দেখেন চায়ের দোকান।
রক্তিম বললো,
~এতো রাতে চায়ের দোকান খোলা?
অধরা বললো,
~এতে আপনার কী চলেন চা খেয়ে আসি।
রক্তিম গাড়ি থামিয়ে অধরাকে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে পরলো তারপর সেই চায়ের দোকানের বেঞ্চে বসে পরলো।চায়ের দোকানের মালিল তার ফোকলা দাঁতে হেসে বললো,
~চা দিম আপনাগো?
রক্তিম বললো,
~দুই কাপ চা দিন।আর এতো রাতে দোকান করছেন যে?
দোকানী বললো,
~আপনাগো মতো অনেক মানুষ রাতের শহর দেখতে বের হয় তাগো সেবার লেইগা খোলা রাখি।
রক্তিম আর কিছু বললোনা দোকানি চা দিলে রক্তিম আর অধরা চা শেষ করে দোকানিকে টাকা দিয়ে গাড়িতে বসে পরে।রক্তিম বললো,
~এবার বাসায় যাওয়া যাক?
অধরা বললো,
~ঠিক আছে।
রক্তিম বাসার উদ্দেশ্যে গাড়ি ড্রাইভ করতে লাগলো অধরা জানালা বাহিরে তাকিয়ে রইলো।

______♥______

সকালে ঘুম থেকে উঠে শাওন বুঝতে পারলো তার পায়ের ব্যাথাটা একদমই চলে গেছে।সে বিছানা থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বের হয়ে সোজা খাবার টেবিলে বসে বললো,
~ছোট চাচী ক্ষুধা লেগেছে নাস্তা দেও।
রান্নাঘর থেকে তাহিদা ইসলামের বদলে নাদিয়া বের হয়ে আসলো শাওন নাদিয়াকে দেখে অবাক হলো ওড়না কোমড়ে গুজে রেখেছে হাতে ময়দা লেগে আছে।শাওনকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে নাদিয়া বললো,
~আপনি এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?
শাওন চমকে উঠলো নাদিয়ার কথায় সে আমতা আমতা করে বললো,
~আসলে আমি ভেবেছি ছোট চাচী রান্নাঘরে তাই।
নাদিয়া মুচকি হেসে বললো,
~ফুপি ছাদে গিয়েছে কাপড় শুকাতে।আপনি একটু অপেক্ষা করুন নাস্তা তৈরি হয়ে যাবে।
শাওন বললো,
~তুমি নাস্তা বানাচ্ছো?
নাদিয়া বললো,
~আমি একা না মা,চাচী,ফুপিও আছে সাথে।
শাওন বললো,
~আচ্ছা বুঝতে পেরেছি শুনো ধন্যবাদ আমার পায়ের ব্যাথা অনেকটাই কমে গেছে।
নাদিয়া বললো,
~ঘরোয়া চিকিৎসা অনেক সময় কাজে লেগে যা বুঝতে পেরেছেন।
এতোটুকু বলে নাদিয়া রান্নাঘরে চলে যায় শাওন তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো,
~মেয়েটার বুদ্ধি আছে ঘরের কাজও করে পারে যার ঘরে বউ হয়ে যাবে অনেক ভাগ্যবান হবে সেই ব্যক্তি।
সবাই মিলে নাস্তা শেষ করে যে যার রুমে চলে যায় প্যাকিং করতে জোহোরা খাতুন সুযোগ বুঝে চলে যায় রক্তিমের রুমে।রক্তিম কিছু কাজ করছে তখনই জোহোরা খাতুন ঘরে প্রবেশ করে বললো,
~রক্তিম তোর সাথে কথা আছে।
রক্তিম হাতের কাজ সাইডে রেখে বললো,
~বলো মা কী বলবে?
জোহোরা খাতুন শুকনো ঢোক গিলে কিছু বলতে নিবে তখনই আইয়ুব হোসেন ঘরে প্রবেশ করে বললেন,
~এসে পরেছো ছেলের কান ভরতে?
জোহোরা খাতুন আইয়ুব হোসেনকে দেখে অনেক ভয় পেয়ে যায়।রক্তিম বাবার কথা শুনে বললো,
~কী হয়েছে বাবা?
আইয়ুব হোসেন বললেন,
~তোমার মা বলছে সে এখন শপিং করতে চায় আমি বললাম কালকে জার্নি করবে আজ এতো প্রেসার নেওয়ার দরকার নেই।উনি রাজি না সে নিজেরটাই করবে
রক্তিম হালকা হেসে বললো,
~মা,বাবা ঠিক বলেছে আজ কোথাও যাওয়ার দরকার নেই তুমি রেস্ট নেও।
জোহোরা খাতুন মুচকি হেসে বললেন,
~ঠিক আছে বাবা। প্রিয়ার জন্য টেনশন হচ্ছে এতো দূর জার্নি করবে
রক্তিম বললো,
~আল্লাহ ভরসা সব ঠিক হবে মা তুমি টেনশন কম নেও।

______♥________

জোহোরা খাতুন ভয়ে ভয়ে ঘরে এসে করলেন আইয়ুব হোসেন তার সাথে কথা বলবেন তাই তাকে ডেকে পাঠিয়েছেন।জোহোরা খাতুন ঘরে প্রবেশ করতেই আইয়ুব হোসেন অতি শীতল গলায় বললেন,
~কী বলতে গিয়েছিলে?
জোহোরা খাতুন বললেন,
~আপনি ভুল ভাবছেন আমি কিছু বলতে যায়নি।
আইয়ুন হোসেন বললেন,
~চোরের মতো রক্তিমের ঘরে ডুকেছো তুমি আর বলছো কিছু বলতে যাওনি?
জোহোরা খাতুন এবার হাতজোড় করে বললেন,
~আমি জানি কেন আপনও সবাইকে নিয়ে বান্দরবন যাচ্ছেন আপনি ওখানে অধরার ক্ষতি করবেন।
আইয়ুব হোসেন বললেন,
~কতসুন্দর পাহাড় সেখান থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়ার মজাই আলাদা কী বলো?
জোহোরা খাতুন বিছানায় বসে বললেন,
~ভুল আমারই আপনার অন্যায়কে প্রশয় দিতে দিতে আপনার হাত বড় করে দিয়েছি।
আইয়ুব হোসেন বললেন,
~এসব ন্যাকামী করে লাভ নেই ব্যাগ গুছিয়ে ফেলো। আর মুখ বন্ধ রাখো নাহলে তোমাকেও আমি ছাড় দিবো না।
এতটুকু বলে সে চলে গেলো জোহোরা খাতুন তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে চোখর পানি ফেললো।
রাতে অধরা রক্তিমের বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে অধরা বললো,
~বড়চাচী অনেক টেনশনে থাকে আজকাল মনে হয়।
রক্তিম বললো,
~হয়তো প্রিয়াকে নিয়ে।
অধরা বললো,
~তাকে আজ আমি কান্না করতেও দেখেছিলাম।
রক্তিম একটু অবাক হলো পরক্ষণেই পরিস্থিতি সামলাতে সে বললো,
~তুমি এসব ভেবোনা আমি কথা বলনো মায়ের সাথে।
অধরা রক্তিমকে জড়িয়ে ধরে বললো,
~ঠিক আছে।

চলবে

(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন।আর ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো 🥰🥰। Happy Reading 🤗🤗)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here