তোমাকে ঠিক চেয়ে নিবো পর্ব ৪

#তোমাকে ঠিক চেয়ে নিবো
লেখা আশিকা
পর্ব ০৪
নীল শাড়ী পড়া অস্পৃশ্য মানবীটি যখন ধীরে ধীরে প্রহরের সামনে এসে থমকে দাঁড়ায়। এক মূহূর্তের জন্য হলেও ওর হার্টবিট মিস হয়ে যায়। “সোনালি কাবিনে” নারীকে যতোরকম ভাবেই সম্বোধন করা হোক না কেন কোন বিশেষণেই যে এই রহস্য মানবীটিকে বিশেষায়িত করা যাচ্ছে না। যেন সবকিছুকে ছাপিয়ে এক অভিন্ন রহস্যময়ী মানবী ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে। একে কিভাবে সম্বোধন করা যায় তা এইমূহূর্তে ওর অজানা।
আপাদমস্তক চোখ বুলিয়ে নিলো প্রহর।

প্রতিক্ষা একনজর তাকিয়ে আবার অনিচ্ছাসত্ত্বেও চোখ নামিয়ে ফেললো। কিন্তু পরক্ষণেই আবার তাকাতে ইচ্ছে হচ্ছে। কিছুতেই ওর সামনে দাঁড়ানো বিশালাকার, সুঠাম দেহের অধিকারী, হ্যন্ডসাম সুদর্শন পুরুষের থেকে চোখ ফেরাতে পারছে না। চশমার ভেতর থেকে অপূর্ব সুন্দর চোখজোড়া যে ওকেই ঘোরলাগা চোখে দেখেছে। সেই দৃষ্টি এড়িয়ে কি করে ও ঐ চোখে চোখ রাখবে?
আবার নিজেকে সংযতোই বা কি করে রাখবে?
প্রহর ইতস্ততবোধ করে নিজেই প্রথমে কথা বললো,
— চলো ওইদিকটায় বসি।
প্রতিক্ষা প্রহরের পিছু পিছু বোটানিক্যাল গার্ডেনের ভিতর বিশালাকার বটগাছের নিচে একটা বসার মত যায়গা আছে ওখানে বসে পড়লো।
প্রতিক্ষা কি দিয়ে শুরু করবে ভেবে পাচ্ছে না। যা যা বলতে চেয়েছিলো সব এলোমেলো হয়ে গেছে।
“তুমি আগের থেকে অনেক বড় হয়ে গেছ। ”

” হুম আপনিও।”

প্রহর হো হো করে হেসে উঠলো।
“আমি?”
আমিও বড় হয়ে গেছি! আমিতো আগেই বড় ছিলাম, নতুন করে আর কি বড় হবো। এখনতো বুড়ো হবো…”

“হুম..”
“আচ্ছা তুমি কি হুম হুম করছো তখন থেকে। বুঝে করছো নাকি না বুঝে করছো। কিছু মনে করোনা একটা কথা বলি,
তোমাকে যেন সবাই কি নামে ডাকতো ভুলে গেছি। ”

” প্রতীক্ষা। শুধু বাবাই আমাকে ভালবেসে পিউ ডাকে।”
প্রহর প্রতিক্ষার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বলে,
” আমিও কিন্তু পিউ বলেই ডাকবো।”

প্রতিক্ষা চমকে উঠে প্রহরের দিকে তাকায়। প্রহরের ডান গালের পাশের কালো কুচকুচে তিলটা ফর্সা মুখশ্রীকে আরো দ্বিগুন সৌন্দর্যে ভরিয়ে তুলেছে। চোখ ফিরানো দায় হয়ে পড়েছে। আবার তাকিয়ে থাকলে ও কি ভাববে ওকে?
প্রতিক্ষা চোখ নামিয়ে নিয়ে আবার আড়চোখে তাকাতে লাগলো। মজার ব্যাপার হলো প্রত্যেকবারই চার চোখের মিলন হয়ে যাচ্ছিলো। বেশ কিছুক্ষণ ধরে এই লুকোচুরি খেলাটা চলতে থাকলো। প্রতিক্ষা বেশ লজ্জা পেয়ে এইবার নিচের দিকে তাকালো।

প্রহর প্রতিক্ষার দিকে একটু অন্যরকমভাবে তাকালো। কিছুক্ষণ পর আবার চোখটা নামিয়ে নিলো,

“আচ্ছা আমিতো তোমাদের বাসায় অনেকবারই গিয়েছি। কোনদিনোও সামনে আসোনি কেন?”
অনেকটা অভিযোগের সুরেই কথাটা বলেই থেমে গেল ও।

” আমাদের বাড়ীর কেউ মানে মেয়েদের ভাইয়ের ছেলে বন্ধুদের সামনে যাওয়া বারণ। এমনকি অপিচিত আত্নীয়দের সামনে যাওয়াও বারণ।”

প্রহর অবাক হয়ে প্রশ্ন করে,
“কেন?”
” কেন আপনি বুঝেন না কেন বারণ।”ধুম করে কথাটা বলেই অন্যদিকে তাকালো প্রতিক্ষা।

“আচ্ছা পিউ তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞাস করি?”
কৌতুহোলি হয়ে প্রতিক্ষার দিকে তাকালো।

প্রতিক্ষা চমকে উঠে প্রহরের দিকে তাকায়।
” আমি জানি আপনি কি প্রশ্ন করবেন?”

“বেশতো যদি জানোই তবে উত্তর গুলো কুইকলি দাও। ”

“কেন খুব তাড়া আছে বুঝি।”
তারপর থেমে প্রহরের উত্তরের অপেক্ষা না করে আবার বলল,
” আপনি আমাকে এইমূহূর্তে দুইটা প্রশ্ন করতে পারেন,
১. আমি কেন আপনাকে ফোন করছিলাম।
আর
২. ফোন করে কেন আমার পরিচয়টা দিলাম না।
এইতো।”

” দ্যাটস লাইক অ্যা স্মার্ট গার্ল। উত্তরগুলো কি এই জন্মে পাবো?”
” না পেলে আপনার খুব বেশি ক্ষতি হবেনা এইটা জানি। তবে হ্যা উত্তরগুলো আমি দিবো।”

তারপর দুজনেই নিশ্চুপ।
প্রতিক্ষা নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,
” আপনার হাতটা একটু বাড়ান যদি আপত্তি না থাকে।”
প্রহর সাত পাচ না ভেবে ওর হাত প্রতিক্ষার দিকে বাড়িয়ে দিলো।
প্রতিক্ষার প্রহরের হাতে একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিলো।
” এটা আপনার জন্য, বাসায় পৌছে এটা খুলবেন, আর হ্যা এখানে আপনার উত্তর ও পেয়ে যাবেন।”

প্রহর ও একটুপর একটা প্যাকেট প্রতিক্ষার সামনে ধরলো।
” পিউ তুমি যদি এইটা নাও আমার খুব ভালো লাগবে।”
প্রতিক্ষা কোনরকম ভণিতা ছাড়াই নিয়ে নিলো।”
এরপর আবার দুজনেই চুপ হয়ে গেলো।
বেলা বাড়তে থাকলো নান্দনিক গাছ গাছালির ছায়ার ঘেরা গার্ডেনের ভেতরেও পাতার ফাক দিয়ে দিয়ে কড়া রৌদ্রের তীব্রতা বিরাজ করছে। প্রতিক্ষা দাঁড়িয়ে পড়লো।
” কি হলো দাঁড়িয়ে পড়লে যে?”
” চলুন নদীর কাছটায় একটু বসি।”
প্রহর প্রতিক্ষার সাথে তালমিলিয়ে হাটতে লাগলো। মেয়েটা লম্বায় ওর কাধ পর্যন্ত, এতোটুকু লম্বাতেই ওকে বেশি মানিয়েছে। খুব বেশি লম্বাও না আবার বেটেও না। এককথায় পার্ফেক্ট যাকে বলে।

সামনে নদীটার দিকে তাকিয়ে প্রতিক্ষার ভাবুক হৃদয় চঞ্চল হয়ে উঠলো। ওর কল্পনায় ও এই নদীর তীরেই প্রহরের হাতে হাত রেখে হাটতে আসতো। এই কল্পনাকে যে ওর বড় সত্যি করে পাওয়ার সাধ জাগে। কিন্তু এজন্মে বোধ হয় প্রহরের হাতে ওর হাত রাখা হবেনা। তবুও ক্ষণিকের জন্য হলেও প্রহরের পাশেতো হাটতে পারছে। এই বা কম কিসে। কিছু কিছু মানুষ আছে যারা অল্পতেই খুশি থাকে প্রতিক্ষা তাদেরই দলে।
হঠা্ৎ মৃদুমন্দ বাতাস বইতে লাগলো। প্রতিক্ষার সারা শরীর মন ছুয়ে যেতে লাগলো। ওর শরীর আচল বাতাসের তাড়নায় আলগা হয়ে বারবার প্রহরের শরীরে কোমলতার ছোঁয়া দিতে লাগলো। প্রহরের মনে হলো এ ছোঁয়া প্রতিক্ষার! ওর খুব কাছ থেকে প্রতিক্ষাকে ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে হচ্ছে। ছিঃ কি ভয়ঙ্কর ইচ্ছে! প্রতিক্ষা জানতে পারলে কি ভাববে? তাছাড়া সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ব্যাপার হচ্ছে ওর কোনদিনও কোন মেয়েকে দেখে এইভাবে স্পর্শ করার ইচ্ছে জাগেনি।

প্রতিক্ষা প্রহরের দিকে তাকিয়ে একটা তুড়ি বাজায়,
” কি ভাবছেন এতো? ”

প্রহর প্রতিক্ষার চোখে চোখ রাখে,
” পিউ তোমাকে খোলা চুলেই বেশি ভালো লাগে।
একটা অন্যায় আবদার করবো।
যদি কিছু মনে না করো তোমার খোঁপাটা একটু খুলবে।”

প্রতিক্ষা নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছেনা। এই কথা প্রহর বলতে পারে?
ও আর কিছু ভাবতে পারছেনা।লজ্জার কোন রং হয় কিনা জানিনা। তবে ও একবার নীল আরেকবার লাল হতে লাগলো।
কোনকিছু না ভেবেই ও ওর খোপা খুলে ফেললো। লাফিয়ে পড়ে চুলগুলো মেঘের মত কোমড় ছাড়িয়ে গড়াগড়ি খেতে লাগলো। হাওয়ার তান্ডবে আলগা চুলগুলো উড়ে এসে প্রহরের শরীরে এক অদ্ভুত
শিহরণের জন্ম দিতে লাগলো। ইতিপূর্বে এই অনুভুতির সাথে ওর পরিচয় ঘটে নি।

——————

ক্লাস শেষে ইউনিভার্সিটি থেকে বের হতেই রিজভীর চোখ আটকে যায় নীল শাড়ী পড়া প্রতিক্ষার দিকে।
প্রতিক্ষা হয়তোবা ওকে লক্ষ্য করেনি। ওকে অনেকটা অন্যমনস্ক আর চিন্তিত লাগছে।
ও এইসময়ে বাইরে এটা ভাবতেই রিজভীর ভিতরটা তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে। ওকে দেখে অনেকটা সুস্থ মনে হচ্ছে।

ক্লাস মিস করে কোথায় গিয়েছিলো ও?
ওকেতো আমি সকালে ফোন করতে বলেছিলাম। সেটাও করেনি?
আমাকে এতোটা ইগনোর ও করে কেন আমি বুঝতে পারিনা। এই মেয়েটা আমাকে তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছে সেটা কি ও জানে না?
রিজভীর চিন্তায় ব্যাঘাত ঘটে প্রতিক্ষা আর রিক্সাওয়ালার কথোপকথন শুনে।

” এখান থেকে বোটানিক্যাল গার্ডেন ৪০ টাকা তাইনা!
মামুর বাড়ীর আবদার পাইছো।
১০ টাকার ভাড়া বলে কিনা ৪০ টাকা। এই নাও ২০ টাকা নিয়ে চুপচাপ বিদায় হও।”
রিক্সাওয়ালা কিছুক্ষণ গাইগুই করে পরে ঠিকি ভাড়া নিয়ে বিদায় হয়।
প্রতিক্ষা হাফ ছেড়ে বাচার মত একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে সামনে তাকায়।
রিজভীর চোখে চোখাচোখি হওয়ায় ও পালানোর পথ খুঁজতে থাকে। চোরের মত নিচে তাকায় থাকে।
” কোথায় গিয়েছিলে?”
গম্ভীরভাবে কথাটা বলেই থেমে যায় রিজভী।

কিছুক্ষণ আমতা আমতা করে প্রতিক্ষা উত্তর দেয়,
” আমার এক কাজিন এসেছিলো ওর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম।”ও যে মিথ্যে বলছে এটা ওর মুখ দেখে যে কেউ বলে দিতে পারবে।

রিজভী সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকায়,
” আচ্ছা কাজিনের সাথে মিট করতে কি শাড়ী পড়ে সেজেগুজে যেতে হয় আগে জানা ছিলো না।”

” না মানে অনেকদিনপর আমার শাড়ী পড়তে ইচ্ছে করছিলো তাই পড়লাম। আরতো কিছু না।”
রিজভী আর এক সেকেন্ড ও ওখানে ওয়েট না করে চলে আসলো।
চলবে.

2 COMMENTS

  1. এই যে ম্যাডাম। আপনার গল্পের ধারা ঠিক নেই কেন? ২ পর্বের পর ৪ পর্ব তারপর আসে ৩ পর্ব। কাহিনী কি?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here