রোজকার মতো আজকেও একটা মেয়েকে ধরে নিয়ে আসলো ফাহাদ হোসেন।একেকদিন একেক মেয়ের সঙ্গ না পেলে ফাহাদের চলে নাহ্।অনেক মেয়ে তার টাকা-পয়সা,ধনসম্পদ দেখে নিজেকে বিলিন করে দেয়।আবার অনেক মেয়েদের জোর করে ধরে এনে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাদেরকে ধর্ষণ করে!
মেয়েটাকে অচেতন অবস্থায় রুমের মধ্যে আটকে রেখে ফাহাদ একটা সোফায় এসে বসল।
রাফসান……(ফাহাদ জোরে চিৎকার দিয়ে বলল)
রাফসান দৌড়ে এসে ফাহাদের সামনে দাঁড়ালো।
জ্বী বস বলুন।(রাফসান)
মেয়েটাকে জাগিয়ে তুলো গিয়ে।তুমি তো জানোই অচেতন অবস্থায় থাকলে আমি আবার ফিলটা পাই নাহ্।(ফাহাদ)
ওকে বস আমি যাচ্ছি।(রাফসান)
ফাহাদ মেয়েটাকে যেই রুমে রেখে এসেছে রাফসান সেখানে গেল।
ফাহাদ জোরে চিল্লিয়ে বলল,
আরে তাড়াতাড়ি করো।আমার কাছে বেশি টাইম নেই।(ফাহাদ)
ফাহাদ বিয়ারের বোতলটা খুলে এক চুমুক খেলো।তখন কানে ভেসে আসলো একটা মেয়ের আত্মনাদ ‘আমাকে ছেড়ে দেও প্লিজ।’ফাহাদ একটা ডেভিল হাসি দিয়ে হাতের উল্টো পাশ দিয়ে মুখটা মুছে নিল।
ধীর পায়ে রুমের দিকে এগিয়ে গেল।গিয়ে রাফসানকে ইশারা করলো রুম থেকে বের হয়ে যেতে।রাফসান বের হতেই ফাহাদ দরজা লাগিয়ে দিল।
মেয়েটা গুটিসুটি মেরে বিছানায় বসে আসে।আর একভাবে কেঁদে চলেছে।মেয়েটার বয়স আনুমানিক ১৮-১৯ হবে।মেয়েটা দেখতে অপরূপ সুন্দরী।একবার দেখলে চোখ ফেরানো মুশকিল।কেউ চাইবে না এমন একটা মেয়েকে অপবিত্র করতে।তবে এতে ফাহাদের কিছু যায় আসে না।তার নেশাই হলো মেয়েদের দেহ ভোগ করা।
ফাহাদ শয়তানী হাসি দিয়ে মেয়েটার পাশে গিয়ে বসলো।
ওফ বেবি এতো দূরে বসে আছো কেন তুমি?আমার কাছে আসো।(ফাহাদ)
মেয়েটা আরো কিছুটা দূরে সরে বসলো।
প্লিজ আমার সাথে কিছু করবেন না।তাহলে আমি আর এই সমাজে মুখ দেখাতে পারবো নাহ্।(মেয়েটা)
আরে এখানে যা হবে তা তুমি আর আমি জানবো।সমাজ তো আর জানবে নাহ্।আর জানতেও পারে যদি তুমি জানাও।তবে আমার মনে হয় নাহ্ একটা মেয়ে সবাইকে বলে বেড়াবে সে নিজেকে একটা পরপুরুষের হাতে এক রাতের জন্য তুলে দিয়েছে!(ফাহাদ)
মেয়েটা কিছুক্ষণ ফাহাদের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,
প্লিজ আমার এতো বড় সর্বনাশ করবেন না।এগুলো জানলে আমার বাবা-মা মরে যাবে।আমাকে ছেড়ে দিন প্লিজ।বিশ্বাস করুন আমি আপনার কথা কাউকে জানাবো নাহ্।(মেয়েটা)
ফাহাদ জোরে হেসে দিল।
তোমাকে ছেড়ে দিলে আমি তো আর মজাটা পাবো নাহ্।বাই দ্যা ওয়ে আমার নাম ফাহাদ।তোমার নাম কি?(ফাহাদ)
আপনার মতো একটা লোকের সাথে আমার পরিচিত হওয়ার কোন ইচ্ছা নেই।(মেয়েটা)
ফাহাদ মেয়েটার গলায় একটা আই-কার্ড লক্ষ্য করলো।সম্ভবত এটা কোন ভার্সিটির কার্ড হবে।সেখানে স্পষ্ট লেখা আছে ‘অরবিণী ইসলাম অন্না।’
বাহ্ তোমার নামটা তো অনেক সুন্দর।’অরবিণী চৌধুরী অন্না।’ওয়াও!আসলে কি জানো আমি যেইসব মেয়েদের সাথে টাইম-স্পেইন করেছি তাদের নামের একটা তালিকা আছে।যদি তোমার নাম নাই জানতে পারি তাহলে তো আর তালিকায় তোমার নামটা উঠবে নাহ্।(ফাহাদ)
এতো জঘন্য মানুষ কি করে হতে পারে?একটা মেয়ে এতোবার করে বলার পরেও আপনি তার সাথে……(অন্না)
অন্না আর বলতে পারলো নাহ্।তার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।হঠাৎ করে সেন্সলেস হয়ে বিছানায় পড়ে গেল।
ধূর!এটাকে মনে হচ্ছে অচেতন অবস্থাতেই কাজ সারতে হবে।(ফাহাদ)
ফাহাদ অন্নার নিস্তেজ শরীরের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো।কাজ শেষ করে উঠে বসে শার্টের বোতামগুলো লাগিয়ে,প্যান্টের চেইন লাগালো।বসে বসে হাসছে আর জোরে জোরে শ্বাস ফেলাচ্ছে।
আহ্!যেখানে মানুষ একটা পায় না সেখানে আমি পনেরোটাকে নিজের করে পেয়েছি।(ফাহাদ)
ফাহাদ অন্নার নগ্ন দেহটার উপর একটা চাদর দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে চলে গেল।
সূর্যের আলো চোখে পড়ায় অন্না চোখ মেলে তাকালো।নিজের শরীরের দিকে তাকাতে তার আর বুঝতে বাকি রইলো নাহ্ তার সাথে কি হয়েছে!অন্না কান্নায় ভেঙে পড়লো।
আমি আমার বাবা-মাকে কি জবাব দিবো!উনারা দুজনে এইসব জানতে পারলে মরেই যাবে।কেন যে কালকে আমি ভার্সিটি থেকে দিশার বার্থডে তে গেছিলাম।ওখানেই তো এই নরপিশাচটার সাথে দেখা হলো।দিশাদের বাড়ি থেকে বের হতে যাবো হঠাৎ কে যেন আমার মুখে একটা রুমাল চেপে ধরল।তারপরে আর কিছুই মনে নেই।জ্ঞান ফিরতে দেখলাম আমি এই নরক আস্তানায়।(অন্না)
অন্নার কাঁদতে কাঁদতে হেচকি উঠে গেল।অন্না নিজেকে কিছুটা শক্ত করে তার কাপড়গুলো নিচে থেকে তুলে রুমের মধ্যে থাকা ওয়াশরুমে চলে গেল।
ওয়াশরুমে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লো অন্না।শাওয়ারের নিচে বসে একভাবে কেঁদে চলেছে সে।তার কান্না যেন বাঁধই মানছে নাহ্।নিজেকে অনেকবার সামলানোর চেষ্টা করেছে।তারপরেও কেন জানি পারছে না!
অনেক কষ্টে শাওয়ার নেয়া শেষ করে কাপড় পড়ে বাইরে বের হয়ে এলো।বিছানার চাদরের দিকে চোখ পড়তেই তার চোখ আবার ভিজে গেল।কারণ সেখানে খানিকটা রক্ত লেগে আছে।
আল্লাহ্ কেন হলো আমার সাথে এমন!আমি কি এমন পাপ করেছিলাম।(অন্না)
অন্না কান্নায় ভেঙে পড়ল।আই-কার্ডটা গলায় দিয়ে ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে দেখলো বাসা থেকে অনেকগুলো কল এসেছে।তার মাকে কল করলো।কল করার সাথে সাথে তার মা কলটা রিসিভ করলো।
কিরে মা তুই কোথায়?কাল সারা রাত বাসায় আসলি না কেন?কতবার কল করেছি হিসাব আছে তোর!(অনেমা বেগম অন্নার মা)
অন্নার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।অনেক কষ্টে কান্না চেপে ওর মা-কে বলল,
আম্মু কালকে তো দিশার জন্মদিন ছিলো।তা তো জানোই।আমি রাতে ওদের বাসাতেই ছিলাম।মোবাইলে চার্জ ছিল না তার জন্য ফোন করতে পারিনি।আর আম্মু আমি একদম ক্লাস করেই বাসায় আসবো।(অন্না)
যাক এখন আমি নিশ্চিত।আচ্ছা ক্লাস করেই বাসায় আসিস।সকালে নাস্তা করেছিস তুই?(অন্নার মা)
অন্না কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল,
হ্যাঁ আম্মু।দিশাদের বাড়িতেই নাস্তা করেছি।(অন্না)
অন্না ফোনটা রেখে দিল।তারপরে মোবাইলটা ব্যাগে ঢুকিয়ে বাড়ি থেকে বের হওয়ার পথ খুঁজছে।সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতেই দেখলো ফাহাদ সোফায় বসে মোবাইল টিপছে।অন্না রাগের কারণে কাঁপছে।ফাহাদের সিঁড়ির দিকে চোখ যেতেই দেখল অন্না দাঁড়িয়ে আছে।অন্নাকে দেখে ফাহাদ বাঁকা হাসি দিল।ফাহাদ মোবাইলটা পকেটে ঢুকিয়ে অন্নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
তা ডার্লিং রাতে কেমন লাগলো বলো?ওপ্স!তুমি তো কিছু টেরই পাও নাই।সবটা তো তোমার অবচেতনে করেছি।(ফাহাদ)
অন্না যেই ফাহাদের গালে থাপ্পড় দিতে যাবে সেই ফাহাদ অন্নার হাতটা চেপে ধরলো।
ইশ!তোমার সাহস তো কম না ফাহাদ হোসেনের গায়ে হাত তুলতে চাও।(ফাহাদ)
আমার হাতটা ছাড়ুন।অসভ্য লোক কোথাকার!আপনাকে দেখলেই আমার ঘৃণা হচ্ছে।(অন্না)
তুমি ঘৃণা করো যাই করো।আই ডোন্ট কেয়ার।তোমাকে পাওয়া শেষ।এখন তোমার কোন মূল্য নেই আমার কাছে।(ফাহাদ)
ফাহাদ অন্নার হাতটা ছেড়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠে যেতে যেতে বলল,
তবে একটা কথা কি জানো!এতোদিন অনেক মেয়েকে কাছে পেয়েছি বাট তুমি একটু ব্যতিক্রম।(ফাহাদ)
ফাহাদ বাঁকা হাসি দিয়ে দোতলার রুমের দিকে চলে গেল।অন্না চোখের পানি মুছে ফাহাদের বাড়ি থেকে বের হয়ে আসলো।তার বুকের মধ্যে হাহাকার করছে।তার বেঁচে থাকার ইচ্ছা তাই চলে গেছে।
অন্না একটা রিকশা নিয়ে ভার্সিটির দিকে গেল।ভার্সিটিতে যেতেই তার বান্ধবীদের দেখল ফুচকা খেতে।অন্য সময় হলে অন্না-ও তাদের সাথে তাল মিলিয়ে প্রতিযোগিতা করে ফুচকা খেতো।তবে আজকের দিনটা তার জন্য আনন্দের না।তাই অন্না তার ডিপার্ট্মেন্টের দিকে চলে গেল।
কি ব্যাপার অন্না আজ ফুচকা খেতে না এসে ক্লাসের দিকে চলে গেল।(দিশা)
আসলেই আমিও খেয়াল করলাম।কি হলো ওর?(নিতু)
আচ্ছা এখানে দাঁড়িয়ে থাকলে তো আর কিছু জানতে পারবো না।চল আমরা-ও ক্লাসে যাই।(তিথি)
ওরা ফুচকা খাওয়া বাদ দিয়ে ক্লাসের দিকে গেল।ক্লাসে গিয়ে দেখল অন্না আনমনে জানালার দিকে তাকিয়ে বসে আছে।কিন্তু অন্না সাধারণত এমন না।খুবই চঞ্চল প্রকৃতির একটা মেয়ে।
অন্না তোর কি হয়েছে?(দিশা)
অন্না চোখের পানি লুকিয়ে মুখে হাসি ফুটিয়ে বান্ধবীদের দিকে তাকালো।
কিছু না রে।জাস্ট শরীরটা ভালো নেই।(অন্না)
কিছু তো অবশ্যই হয়েছে আমরা তোকে ভালো করে চিনি তুই কখনোই এতো চুপচাপ থাকতে পারিস না।(নিতু)
আরে শরীর ভালো থাকলে ঠিকই বকবক করে তোদের মাথা খেতাম।(অন্না)
না এটা আমরা বিশ্বাস করতে পারলাম নাহ্।কারণ তুই অসুস্থ থাকলেও বাদরামো করতে ছাড়িস না।আর ফুচকা যা হলো তোর প্রিয় খাবার।তুই তা না খেয়ে চলে আসলি।(তিথি)
আরে তেমন কিছুই না।আজকে আমার ভালো লাগছে না।(অন্না)
তোর চোখ-মুখ এমন শুকনো হয়ে আছে কেন?তুই সকালে কিছু খেয়ে আসিস নি?(দিশা)
না আর এই কারণেই আমি ফুচকা খাইনি।খেতে ইচ্ছে করছিল না।তাই না খেয়েই চলে এসেছি।(অন্না)
আজকে তো ক্লাস নাই তেমন।শরীর ভালো না আসার কি দরকার ছিল?চল আমাদের সাথে ক্যান্টিনে গিয়ে নাস্তা করবি।(নিতু)
আমার খেতে ইচ্ছে করছে না।(অন্না)
খেতেই হবে তোকে।(দিশা)
তিন বান্ধবী মিলে জোর করে অন্নাকে ক্যান্টিনে নিয়ে গেল।খাবার সামনে নিয়ে অন্না নাড়ছে।তবে কিছু খাচ্ছে না।
অন্না খাচ্ছিস না কেন?খেয়ে নে।(দিশা)
অন্না আর নিজেকে আটকে রাখতে পারলো না।অন্না হু হু করে কেঁদে দিল।
অন্না কি হয়েছে তোর?কাঁদছিস কেন?(তিথি)
অন্না আমাদের সত্যিটা বল।আমাদের বানানো গল্প বলবি নাহ্।আমরা ঠিকই বুঝতে পারছি তোর সাথে কিছু ঘটেছে।(নিতু)
অন্না তার সাথে ঘটে যাওয়া সবকিছু ওর তিন বান্ধবীকে বলল।সবার চোখে পানি।তিনজনে একসাথে অন্নাকে জড়িয়ে ধরল।
এতোকিছু ঘটে গেল।আর তুই আমাদের একটি বার-ও জানালি নাহ্।(দিশা)
আর অন্না এইসব ভুলে যা।এগুলো ভেবে কষ্ট পাস না।(তিথি)
চাইলেই কি ভুলে যাওয়া যায়!(অন্না)
ওই নরপিশাচের নামটা খালি বল।ও-কে এখনি গিয়ে খুন করে ফেলবো।(নিতু)
দিশা ও তোর বার্থডে পার্টিতে এসেছিল।(অন্না)
মানে?নাম কি ওর?(দিশা)
ফাহাদ হোসেন।(অন্না)
কি?তার মানে ওই বিজনেস ম্যান ফাহাদ।(দিশা)
ওহ্ উনার সাথে তো আমাদের কথা হয়েছিল।দিশার বাবার বিজনেস পার্টনার।(তিথি)
হুম তবে ওই ছেলে এতো খারাপ!আমি বাবাকে আজই যেয়ে বলবো ওর সাথে সব বিজনেস ডিল ক্যান্সেল করে দিতে।বাবা-মা নেই দেখে এমন গুনাহ-র কাজ করে বেড়াচ্ছে।ও-কে তো জলন্ত আগুনে ফেলে দেওয়া উচিত।(দিশা)
বিজনেস ডিল ক্যান্সেল করলে ওর আর কি হবে!আরেকজনের সাথে ডিল করে নিবে।কিন্তু আমার সাথে যেটা হলো সেটা তো আর ঠিক হবে নাহ্।(অন্না)
অন্না থমকে গেল।তার এই মুহূর্তে নিজেকেই নিজের কাছে ঘৃণা লাগছে।
–
–
–
অন্না ভার্সিটি থেকে বাড়ি গিয়ে দেখল আবির আর তার বাবা বসে গল্প করছে।
আবির বাবু এখানে?(অন্না মনে মনে বললো)
আবির অন্নাকে দেখে অন্নার কাছে এগিয়ে আসলো।
অন্না কেমন আছো?(আবির)
আপনি?(অন্না)
হ্যাঁ আমি।কালকে কানাডা থেকে দেশে এসেছি।(আবির)
অন্না আর কিছু না বলে মলিন হাসি দিয়ে ওর রুমের দিকে চলে গেল।আবির ভ্রু কুচকে অন্নার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
অন্নার কি কিছু হয়েছে?ও-কে কেমন জানি টেনসড দেখাচ্ছে।(আবির মনে মনে বলল)
#চলবে……………………………….
#তোমাতেই_আমি_মগ্ন 🌸
#পর্ব_০১
#লেখক_ঈশান_আহমেদ
[