তোমাতেই আমি মগ্ন পর্ব -০২

#তোমাতেই_আমি_মগ্ন 🌸

#পর্ব_০২

#লেখক_ঈশান_আহমেদ

আবির কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে অন্নার বাবার পাশে গিয়ে বসলো।

আচ্ছা আঙ্কেল অন্নার কি কিছু হয়েছে?(আবির)

কই না তো।আমার জানা মতে তো কিছু হয়নি।(অন্নার বাবা মঈন সাহেব)

না আপসেট দেখালো মনে হয়!(আবির)

ও যা দুষ্টামি করে।মনে হয় ভার্সিটিতে পাগলামি করে এসেছে এতোক্ষণ তাই ক্লান্ত।একটু পরে ঠিক হয়ে যাবে।(অন্নার বাবা)

আবির অন্নার বাবার কথা শুনে মুচকি হাসি দিল।

🦋

অন্না রুমে এসে ব্যাগটা বিছানায় ফেলে বালিশে মুখ গুজে কাঁদতে শুরু করলো।অন্না নিজেকে কিছুতেই সামলাতে পারছে না।কি করবে সে!

দরজায় দাঁড়িয়ে মেয়ের নাম ধরে ডাকছেন অনেমা বেগম।তার বুকের মাঝে অজানা ভয় কাজ করছে অন্নাকে নিয়ে।যেই মেয়ে ভার্সিটি থেকে দৌড়ে এসে রান্নাঘরে যায় মাকে দেখতে সেই মেয়ে নাকি রুমে দরজা লাগিয়ে বসে আছে।

অন্না মা, দরজাটা খোল।তোকে সেই কালকে দিয়ে দেখি না।তুই তো জানিস তোকে না দেখে থাকতে আমার কতোটা কষ্ট হয়!(অন্নার মা)

অন্না তার মায়ের গলা পেয়ে উঠে বসলো।ওড়না দিয়ে তাড়াতাড়ি নিজের চোখ মুছে ফেলে।তবে তার শ্বাস খুব দ্রুত গতিতে চলছে।একভাবে কান্না করার জন্য এমনটা হচ্ছে।অন্না জোরে জোরে শ্বাস ফেলে নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলো।মুখে হাসির রেখা টেনে দরজা খুলে দিলো।

অনেমা বেগম অন্নার মুখের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।তার মনে এক ধরনের খটকা লাগছে।কারণ অন্নাকে দেখে ভালো করেই বুঝতে পারছে অন্না এতোক্ষণ কেঁদেছে।তবে কান্নার কারণ কি সেটা সে কিছুতেই ভেবে পাচ্ছে নাহ্।

অন্না তার মায়ের সামনে থেকে রুমে চলে আসলো।অনেমা বেগম মেয়ের পিছনে পিছনে রুমে ঢুকলেন।

অন্না কি হয়েছে তোর?(অন্নার মা)

অন্না স্বাভাবিক ভাবে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বললো,

কি আবার হবে আম্মু?আমার বড্ড খিদে পেয়েছো।খেতে চলো।(অন্না)

অন্না আমাকে মিথ্যা বলিস না।তোর চোখ ফুলে গেছে।তার কারণ হলো তুই এতোক্ষণ কেঁদেছিস।তবে কেন সেটা আমি জানতে চাই।(অন্নার মা)

অন্না কিছুক্ষণ চুপ থেকে হাসি দিয়ে বললো,

আরে আম্মু তুমি-ও না কি যে বলো!আমি কাঁদবো কিসের জন্য?আসলে কি হয়েছে জানো আমার প্রচুর এলার্জি হচ্ছে কারণ আমি দিশাদের বাড়িতে ইলিশ মাছ খেয়েছিলাম।তুমি তো জানোই ইলিশ খেলে আমার কেমন এলার্জি হয়।(অন্না)

অন্না যেটা নিষেধ সেটা কেন খেতে গেলি?আমার কোন কথাই তো তুই শুনবি নাহ্।আচ্ছা ফ্রেশ হয়ে নিচে আয়।আবির আর তোর বাবা বসে আছে তোর জন্য।(অন্নার মা)

আবির বাবু কেন এসেছে আম্মু?(অন্না)

তুই তো জানিস সবটা।(অন্নার মা)

আম্মু উনাকে এগুলো বাদ দিতে বলো।আমি আগেও রাজি ছিলাম না আর এখন……..(অন্না)

অন্না এটুকু বলে থেমে গেল।তার চোখ ছলছল করছে।তবে সে নিজেকে সামলে রাখার অযথা চেষ্টা করছে।

অন্না তাড়াতাড়ি তার মায়ের সামনে থেকে কার্বাডের সামনে চলে গেল কাপড় বের করতে।অনেমা বেগম তার মেয়ের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন।তার মন বলছে অন্নার সাথে কিছু ঘটেছে।আর অন্না সেটা তার থেকে লুকানোর বৃথা চেষ্টা করছে।

অনেমা বেগম অন্নার কাছে গিয়ে তার কাঁধে হাত রাখলো।

অন্না তুই যে আমার থেকে কিছু লুকানোর চেষ্টা করছিস আমি তা বুঝতে পারছি।তবে হ্যাঁ মায়ের কাছে থেকে কিছু লুকানো-টা ঠিক নয়।(অন্নার মা)

অনেমা বেগম মৃদু হাসি দিয়ে অন্নার মুখ থেকে চলে গেলেন।অনেমা বেগম যেতেই অন্নার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো।

আম্মু তোমাকে আমি সত্যিটা বলতে পারলাম নাহ্।(অন্না)

অন্না ওয়াশরুমে গিয়ে চেঞ্জ করে রুম থেকে বেরিয়ে নিচে নেমে আসলো।আবির অপলক দৃষ্টিতে অন্নার দিকে তাকিয়ে আছে।তাকিয়ে থাকাটা স্বাভাবিক।অন্নাকে অপূর্ব লাগছে লাল-কালো থ্রি-পিসে।তবে অন্নার মুখটা দেখে আবিরের মনে বিভিন্ন প্রশ্নের দানা বাঁধছে।অন্নার মুখটা এমন মলিন কেন?সে কেন-ই বা এমন আনমনে হাঁটছে?যেই মেয়ে সারা বাড়ি মাতিয়ে রাখে সে এমন চুপ হয়ে আছে কেন?

অন্না এসে তার মায়ের পাশের চেয়ারে বসলো।আবির অন্নার সোজাসুজি বসে আছে।অন্না একবার তাকিয়ে চোখ নামিয়ে ফেললো।

অন্না খাবার খাচ্ছে না শুধু নাড়ছে।

তুই খাচ্ছিস না কেন পাখি মা?(অন্নার বাবা অন্নাকে আদর করে ডাকে)।

আমি-ও অনেকক্ষণ ধরে খেয়াল করছি।অন্না তুমি খাচ্ছো না কেন?এনিথিং ইজ রং?(আবির)

না সব ঠিক আছে।আর বাবা আমি খাচ্ছি তো।আসলে শরীরটা ভালো লাগছে না।তাই খেতে মন চাচ্ছে না।(অন্না)

আমি খাইয়ে দিলে ঠিকই খেতে ইচ্ছে করবে।(অন্নার মা)

অন্নার মা ভাত মাখিয়ে অন্নার মুখের সামনে ধরলো।অন্না মুচকি হাসি দিয়ে খেয়ে নিলো।আবির এক দৃষ্টিতে মা মেয়ের দৃশ্য দেখছে।আবিরের চোখের কোণে পানি জমে আসলো।অনেমা বেগম আবিরের দিকে তাকিয়ে দেখেন আবিরের চোখে পানি।

আবির তুমি কাঁদছো কেন বাবা?(অন্নার মা)

আবির চোখের পানি মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো,

আসলে মায়ের কথা হঠাৎ মনে পড়ে গেল।মা তো আমাদের মাঝে নেই।নাহলে হয়তো মা-ও আমাকে এভাবে খাইয়ে দিতো।(আবির)

অনেমা বেগম মুচকি হাসি দিয়ে বললো,

আমি-ও তোমার মা তাই-না!হা করো আমি তোমায় খাইয়ে দিবো।(অন্নার মা)

আন্টি তার কিন্তু কোন দরকার ছিল না।(আবির)

তোমাকে বললাম না হা করতে।(অন্নার মা)

আবির আর কথা না বাড়িয়ে হা করলো।অনেমা বেগম আবিরকে খাইয়ে দিলো।



আচ্ছা রাফসান কালকের মেয়েটাকে কেমন লেগেছিল তোমার?(ফাহাদ)

ভালোই তো স্যার।মেয়েটা কিন্তু অনেক সুন্দর ছিল।(রাফসান)

রাফসানের কথায় ফাহাদ বাঁকা হাসি দিল।

ঠিকই বলেছো তুমি।আমি তো ও-কে ভুলতেই পারছি না।(ফাহাদ)

স্যার আজকে কাউকে নিয়ে আসবেন না?(রাফসান)

না মুড নেই।(ফাহাদ)

ফাহাদ হুইস্কির বোতল হাতে নিয়ে টলতে টলতে তার রুমের দিকে চলে গেল।রাফসান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।

__🌼__

অন্না তার রুমের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে।তার মুখে এক চিলতে পরিমাণ হাসি নেই।এই জগতের সবকিছু তার কাছে বিরক্ত লাগছে।তার মন চাইছে এই ব্যস্ত শহরের কোন এক অজানা পথে হারিয়ে যেতে।যেখানে গেলে তার জীবনের কালো দাগ দূর হয়ে যাবে।

হালকা কাশির শব্দে অন্নার ধ্যান কাটলো।পিছনে ফিরে দেখে আবির উজ্জ্বল মুখে তার রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে আছে।

আপনি এখানে?(অন্না)

তোমার সাথে কিছু কথা ছিল।(আবির)

ভিতরে আসুন।(অন্না)

আবির রুমের ভিতরে এসে অন্নার সামনে দাঁড়ালো।

আপনি কি সেই আগের কথাগুলো বলতে এসেছেন?এই যে আপনি আমাকে ভালোবাসেন?আমাকে বিয়ে করতে চান?এম আই রাইট?(অন্না)

তোমার জ্ঞানের প্রশংসা করতে হয় দেখছি।তবে কি জানো আমি আজ এই ধরনের কিছুই বলতে আসিনি।(আবির)

তাহলে কেন এসেছে এখানে আবির বাবু?(অন্না)

একটা জিনিস জানো তোমার মুখে ‘আবির বাবু’ ডাকটা শুনতে বড্ড ভালো লাগে।(আবির)

আমি যেটা জানতে চেয়েছি সেটার উত্তর দিন।(অন্না)

আবির হাসি দিয়ে বললো,

দুই বছর আগে তোমাকে বিরক্ত করা ছেড়ে দিয়ে কানাডায় চলে গিয়েছিলাম জেনো তুমি শান্তিতে থাকো।আসলে তোমাকে না আমি অনেক ভালোবাসতাম।বাসতাম বললে ভুল হবে এখনো বাসি।কিন্তু কি জানো আমার ভালোবাসা তোমার কাছে নিতান্তই মজা!কারণ তোমার মতে বড়লোকের ছেলেরা ভালোবাসতে জানে না।তারা নাকি মেয়েদের সাথে নোংরামি,বদমাশী করে!সেই জন্য তোমাকে যতবার বলেছি ‘ভালোবাসি’ তুমি ফিরিয়ে দিয়েছো।তাই এখন ডিসিশন নিয়েছি তোমাকে আর এই ভাঙা রেকর্ড বলে জ্বালাবো না।আমার বিশ্বাস তুমি নিজে একদিন আমাকে বলবে,’আমি আপনাকে ভালোবাসি আবির বাবু’।আমি সেই অপেক্ষায় না হয় থাকবো অনুলতা।(আবির)

‘অনুলতা’ ডাক শুনলে অন্নার বুকটা কেঁপে উঠে।আবিরের মুখে অনুলতা ডাক শুনলে অন্নার মাঝে এক অজানা ভালো লাগা কাজ করে।কারণ আবির অনেক ভালোবাসা জড়িত কণ্ঠে ‘অনুলতা’ বলে ডাকে।

আবির অনেক আগে থেকেই অন্নাকে অনুলতা বলে ডাকে।তবে এর কারণ এখনো অজানা অন্নার কাছে।

অন্না নিজেকে সামলে চোয়াল শক্ত করে বলতে শুরু করলো,

আমি যেটা ভাবতাম সেটাই সত্য।আর আমি তার প্রমাণ-ও পেয়েছি।আর আপনি যেটার অপেক্ষায় থাকবেন বললেন সেটা কখনোই পূরণ হবে না।সব ইচ্ছা পূরণ হয় না আবির বাবু।আর এখন আমি এমন জায়গায় আছি আমার সব ইচ্ছাগুলো মরে গেছে।আর আমার নিজের-ও ইচ্ছে করছে না আর বেঁ……..(অন্না)

অন্না আর কিছু বলার আগে আবির তার মুখ চেপে ধরলো।

অন্না কোন পরিস্থিতিতে মরে যাওয়ার কথা বলবে না।এটা বদঅভ্যেস।তোমার কি হয়েছে সেটা আমি জানি না।তবে আমার মন বলছে তোমার সাথে কিছু ঘটেছে।কারণ একটা মেয়ে এভাবে পাল্টে যেতে পারে নাহ্।(আবির)

আবির অন্নার মুখ থেকে হাত সরিয়ে ফেললো।অন্না এক দৃষ্টিতে আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে।

মুখ ওভাবে ধরার জন্য সরি।আল্লাহ হাফেজ ভালো থাকবে।আমি এখন চলে যাচ্ছি।তবে হ্যাঁ আবার চলে আসবো কিন্তু!(আবির)

আবির মুচকি হাসি দিয়ে অন্নার রুমে থেকে বেরিয়ে চলে গেল।অন্না কিছুক্ষণ আবিরের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে বিছানায় শুয়ে পড়লো।

এমন অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে আমি কিভাবে বেঁচে থাকবো?আমি আর সহ্য করতে পাচ্ছি না।নাহ্!অন্না তুই এভাবে ভেঙে পড়তে পারিস না।তোর বেঁচে থাকতে হবে আর ওই নরপিশাচকে উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে।তবে কিভাবে?(অন্না)

—-

ব্রিজের সামনে গাড়ির উপরে শুয়ে আছে আবির।চারিদিকে অন্ধকার জানান দিচ্ছে সন্ধ্যা হয়ে গেছে।তবে তাতে আবিরের কোন হেলদোল নেই।সে একভাবে আকাশে পানে চেয়ে আছে।বুকের ভিতরে অজানা ব্যাথা তাকে কুঁকড়ে খাচ্ছে।অন্না কি কখনোই তার হবে না?তার কি দোষ সে একজন বড়লোকের ছেলে?

প্লিজ আমাকে এতোটা কষ্ট দিও নাহ্ অনুলতা।আমি আর সহ্য করতে পারছি নাহ্।(আবির চিৎকার করে বললো)

//

অন্না চোখ খুলতে দেখলো অনেমা বেগম তার পাশে বসে আছে।

আম্মু তুমি কখন এসেছো?(অন্না)

এই তো কেবলই।তোর জন্য কফি নিয়ে এসেছিলাম।দেখলাম তুই ঘুমাচ্ছিস তাই আর ডাকিনি।(অন্নার মা)

হ্যাঁ বোধহয় চোখটা লেগে গেছিলো।(অন্না)

অনেমা বেগম খেয়াল করলো অন্নার গলার কিছু কিছু জায়গায় নখের আঁচড়ের দাগ।যা দেখে অনেমা বেগম কিছুটা অবাক হলেন।অন্নার গলায় এমন দাগ কেন?

অন্না বিছানা থেকে উঠতে যাবে অনেমা বেগম তার হাত টেনে ধরলো।

অন্না আমাকে সত্যিটা বল।কি হয়েছে তোর?তোর গলায় নখের আঁচড়ের দাগ কেন?(অন্নার মা)

অনেমা বেগমের কথায় অন্না কিছুটা ভয় পেয়ে গেল।নিজেকে সামলে বললো,

আরে আম্মু……(অন্না)

অন্নাকে থামিয়ে অনেমা বেগম বললেন,

ব্যাস!তুই এখন আমাকে মিথ্যা কোন এক্সকিউজ দেখাবি নাহ্।আমি বাচ্চা নাহ্।আমি সবটা বুঝতে পারি।(অন্নার মা)

অন্না তার মায়ের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে তাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো।

#চলবে………………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here