তোমাতেই আমি মগ্ন পর্ব -০৩

#তোমাতেই_আমি_মগ্ন 🌸
#পর্ব_০৩
#লেখক_ঈশান_আহমেদ

অনেমা বেগম পরম যত্নে অন্নার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।তবে অন্নার কান্না থামার নাম নেই।

মা কান্না থামিয়ে আমাকে সবটা বল।(অন্নার মা)

অন্না অনেমা বেগমকে ছেড়ে দিয়ে চোখ মুছলো। নিজেকে শক্ত করে বললো,

আম্মু আমি রেপড হয়েছি!(অন্না)

অন্নার কথায় অনেমা বেগম মনে হয় অনেক বড়সড় একটা ধাক্কা খেলো।তবু-ও নিজেকে শক্ত করে নরম সুরে অন্নাকে বললো,

আমাকে সবটা খুলে বল মা।(অন্নার মা)

এমন একটা কথা শুনে-ও অন্নার মা তাকে কিছু বললো না।আরো নরম সুরে জিগাসা সবটা বলতে বললো তাও মা বলে ডেকে।অন্নার মুখে হাসি ফুটলো।অন্না নিজেকে সামলে তার সাথে ঘটে যাওয়া সবটা তার মাকে বললো।

অন্না একভাবে কেঁদে চলেছে।অনেমা বেগমের চোখে পানি।তিনি অন্নাকে নিজের বুকে টেনে নিয়ে জড়িয়ে ধরলেন।

মা তুই যদি নিজের ইচ্ছায় ধর্ষিত হতি তাহলে দোষটা তোর ছিল।কিন্তু তুই তো নিজের ইচ্ছাতে ধর্ষিত হসনি।তোকে জোর করে…….

এটুকু বলে অনেমা বেগম থামলেন। এমন একটা কথা বারবার উচ্চারণ করতে উনার বুকটা কেঁপে উঠছে।অনেমা বেগম চোখের পানি মুছে অন্নাকে তার সামনে বসালেন।

শোন যে তোর সাথে এমনটা করেছে তুই তাকে শাস্তি দিবি।এমন একটা ঘটনা তোর সাথে ঘটেছে বলে যে তুই চুপ হয়ে থাকবি আর ঘরে মুখ লুকিয়ে থাকবি একদম নাহ্।ওই ছেলেকে তার অন্যায়ের শাস্তি পেতে হবে।ঘুরে দাঁড়াতে শিখতে হবে।আমি চাই তুই নিজেই ওই ছেলেকে তার অন্যায়ের শাস্তি দিস।আমি আর তোর বাবা সবসময় তোর পাশে আছি।(অন্নার মা)

অন্না মুচকি হাসি দিয়ে চোখের পানি মুছে ফেললো।

তুমি ঠিকই বলেছো আম্মু।আমি আর নিজেকে গুঁটিতে রাখবো না।ওই ছেলের অন্যায়কে প্রশয় দেওয়া যাবে না।তবে আম্মু আমার নিজেকে বোঝাতে কিছুদিন টাইম লাগবে।(অন্না)

অনেমা বেগম মৃদু হেসে অন্নার মাথায় হাত রেখে বললো,

যতদিন সময় লাগে তুই নে।তবে দিনশেষে যেন তোর মুখে এই হাসিটা থাকে।(অন্নার মা)

অন্না তার মাকে জড়িয়ে ধরলো।অনেমা বেগম অন্নার কপালে একটা চুমু দিল।



অনেমা বেগম মঈন সাহেবকে সবটা বললেন।মঈন সাহেব কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে জোরে জোরে অন্নাকে ডাকতে শুরু করলেন।অনেমা বেগমের মধ্যে একটা ভয় কাজ করছে মঈন সাহেব কিনা আবার অন্নাকে বকে!

মঈন সাহেবের ডাকার আওয়াজে অন্না রুমে থেকে দৌড়ে নিচে গেল।

কি হয়েছে বাবা?(অন্না)

মঈন সাহেব ছলছল চোখে অন্নার দিকে চেয়ে আছেন।চোখ থেকে চশমাটা খুলে টেবিলের উপর রেখে চোখটা মুছে নিলেন।ধীর পায়ে অন্নার দিকে এগিয়ে গেলেন।অন্নার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে অন্নার মাথায় হাত রাখলেন।

এতোকিছু ঘটে গেল একটি বার জানালি না?যাক জানাস নি সেটা তোর ব্যাপার।শোন নিজেকে সবসময় শক্ত রাখবি।একদম ভেঙে পড়বি নাহ্।আর আমি জানি তো আমার পাখি মা অনেক সাহসী।তবে একা একা কষ্ট না পেয়ে আমাদের-ও কষ্টের ভাগীদার বানালে পারতি।(অন্নার বাবা)

অন্না তার বাবাকে জড়িয়ে ধরলো।

/\

আবির একভাবে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে আছে।তাকিয়ে থাকার কারণ মোবাইলে সে অন্নার ছবি দেখছে।কানাডায় থাকতে এমন কোন দিন যায়নি যেদিন সে অন্নাকে মনে করেনি।অন্নার ছবি দেখেই সে অন্নাকে না দেখার কষ্টটা দমিয়ে রাখতো।কিন্তু এখন দু’জনে এক শহরে আছে তবে কতটা ব্যবধান।

আকরাম সাহেব আবিরের রুমে প্রবেশ করলো।চারিদিকে চোখ বুলাতেই দেখলো আবির বেলকনিতে বসে আছে।আকরাম সাহেব বেলকনির দিকে এগিয়ে গেল।গিয়ে দেখলো আবির খুব মনোযোগ সহকারে অন্নার ছবি দেখছে।আকরাম সাহেব হাসি দিয়ে আবিরের কাঁধে হাত রাখলো।আবির পিছনে ফিরে দেখে আকরাম সাহেব দাঁড়িয়ে আছে।

আবির হাসি দিয়ে উঠে দাঁড়ালো।

ডেড।(আবির)

আবির আকরাম সাহেবকে জড়িয়ে ধরলো।কিছুক্ষণ পরে ছেড়ে দিয়ে বললো,

কখন আসলে তুমি?(আবির)

এই তো একটু আগে।অন্নাকে অনেক ভালোবাসিস তাই-না?(আবিরের বাবা)

আবির মুচকি হাসি দিয়ে বললো,

তুমি তো সবটাই জানো।(আবির)

সব ঠিক হয়ে যাবে বাবা।তোর সাথে আমার কিছু জরুরি কথা আছে।(আবিরের বাবা)

বলো না ডেড!(আবির)

তুই কালকে একটু অফিসে যাস।একজন নিউ বিজনেস ম্যান আমাদের সাথে ডিল করতে চাচ্ছে।তবে তাকে আমার পছন্দ নাহ্।তাই আমাকে শাসিয়ে গেছে।বুঝতেই তো পারছিস বয়স বেড়েছে এইসব ঝামেলা এড়িয়েই চলি।(আবিরের বাবা)

কার এতো বড় সাহস তোমাকে শাসিয়ে যায়?আমি-ও দেখছি উনি কি করতে পারে!(আবির)

__🌻__

বেলকনির রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে অন্না।গভীর রাত চারিপাশ অন্ধকার।সবাই এই মুহুর্তে ঘুমে ব্যস্ত।তবে অন্নার চোখে ঘুম নেই।শুধু আছে চোখের কোণে পানি।অন্না একভাবে চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে।এই চাঁদের আলো তার বড্ড প্রিয়।তবে কেনো জানি এখন তার কাছে কোন কিছুই ভালো লাগে না!

অন্না রেলিং থেকে হাত সরিয়ে বেলকনিতে থাকা দোলনায় এসে বসলো।

আচ্ছা আবির বাবু কি আমায় সত্যি ভালোবাসে?নাকি উনি-ও ওই ফাহাদের মতো!তবে কেন জানি আবির বাবুকে বিশ্বাস করার ইচ্ছা হয়।বিশ্বাস তো করেই ছিলাম।এতোদিন ধরে তো উনার আসার দিন গুণছিলাম।তবে আমার সাথে যেটা হলো তারপরে আর কোন কিছু নিয়েই আগানো আমার পক্ষে সম্ভব নাহ্।আর আবির বাবু সবটা জানলে উনি-ও নিশ্চিত আমাকে দূরে সরিয়ে দিবে।(অন্না)



কাঁধে কারো স্পর্শ অনুভব হতে অন্না চোখ খুললো।তাকিয়ে দেখে অনেমা বেগম দাঁড়িয়ে আছেন।

অন্না তুই সারারাত কি এই দোলনায় শুয়ে ছিলি?(অন্নার মা)

আসলে আম্মু আমি দোলনায় বসে ছিলাম।তবে কখন ঘুমিয়ে গেছি জানি নাহ্ ঠিক।(অন্না)

পাগলি একটা।তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিচে আয়।কয়টা বাজে খেয়াল আছে তোর?ভার্সিটিতে যাবি না?(অন্নার মা)

আজকে ভালো লাগছে না আম্মু।আজকে যাবো নাহ্।(অন্না)

তোমার এই প্রতিদিন ভালো না লাগা রোগের জন্য তোমাকে উত্তর-মধ্যম দিতে হবে।(অন্নার মা)

অন্না হেসে দিলো।অনেমা বেগম মুচকি হেসে অন্নার দিকে তাকিয়ে আছেন।এই হাসিটা দেখার জন্যই তো অপেক্ষায় ছিল।

অন্না হাসি থামিয়ে বললো,
যে নাকি আমাকে একটা ফুলের টোকা দেয় না সে আবার উত্তম-মধ্যম দিবে?(অন্না)

এতোদিন কথা শুনেছিস তাই কিছু বলিনি।কথা না শুনলে তো দিতেই হবে।(অন্নার মা)

প্লিজ আম্মু আমি আজকে যাবো না।(অন্না)

আচ্ছা ঠিক আছে যেতে হবে না।ফ্রেশ হয়ে নিচে আয় তোর বাবা তোর জন্য নাস্তা নিয়ে বসে আছে।(অন্নার মা)

ওকে তুমি যাও আমি আসছি।(অন্না)

||🦋||

ফাহাদ হোসেন চৌধুরী গ্রুপের অফিসে এসে বসে আছে আকরাম চৌধুরীর অপেক্ষায়।তার অপেক্ষার অবসান ঘটলো।

আকরাম চৌধুরী সঙ্গে করে তার ছেলে আবির চৌধুরীকে নিয়ে অফিসে প্রবেশ করলো।যা দেখে ফাহাদ হোসেনের মুখে হাসি ফুটলো।

আবির আর আকরাম সাহেব ফাহাদের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।

হ্যালো মি.চৌধুরী সাহেব।(ফাহাদ)

বাবা তুমি তোমার কেবিনে যাও।আমি দেখছি।(আবির)

ফাহাদ আবিরের দিকে তাকালো।

আই সি!মনে তো হচ্ছে চৌধুরী সাহেবের ছেলে।আই এম রাইট?(ফাহাদ)

আকরাম সাহেব উনার কেবিনের দিকে চলে গেলেন।আবির চেয়ারে বসে মুচকি হেসে বললো,

ইয়েস ইউ আর রাইট।আমি-ই চৌধুরী সাহেবের ছেলে মানে আবির চৌধুরী।(আবির)

ওহ্ আচ্ছা যাক ভালোই হলো।দেখুন আমি আপনার বাবার সাথে ডিল করতে এসেছিলাম বাট উনি রাজি হচ্ছেন ন।বিকজ উনি অন্যায় কাজ করতে নারাজ।আসলে বুড়ো হয়েছে তো এতোকিছু বুঝে না।কিন্তু আপনি তো টাটকা যুবক আছেন।আপনার মাথায় এইসব ঢুকবে।সো ডিলটা কনফার্ম করে ফেলুন।(ফাহাদ)

আবির মুচকি হাসি দিলো,

আপনার শিক্ষা দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে গেছি।একজন মানুষের বয়স বাড়লে যে সে কিছু বুঝে না সেটা আপনাকে কে বলেছে?আপনি এখানে এসেছেন আমাদের জুসের মধ্যে আপনার কোম্পানির মদ মিলিয়ে দিয়ে বিজনেস বাড়াতে তাই-না?আপনার মদ বসে বসে আপনি গিলুন আর নিজেকে মাতাল হিসেবে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিন।আপনি যে মদ খেয়ে মাতাল হয়ে এখানে এসেছেন তা আপনার কথা শুনেই বুঝেছি।মানুষের ক্ষতি করে আপনাদের মতো আমরা ব্যবসা করি না।(আবির)

আপনি কিন্তু আমাকে অপমান করছেন আবির সাহেব।(ফাহাদ)

জাস্ট গেট আউট।(আবির চিৎকার করে বললো)

ফাহাদ উঠে দাঁড়ালো।কিন্তু সে দাঁড়াতে পারছে না টলছে।রাফসান এসে ফাহাদকে টেনে ধরলো।

আমি আপনাদের দেখে নিবো।(ফাহাদ)

আবির রাফসানকে উদ্দেশ্য করে বললো,
এই যে ফাহাদ সাহেবের চামচা।উনাকে এই মুহূর্তে এখান থেকে নিয়ে যান।(আবির)

রাফসান কিছু না বলে ফাহাদকে ধরে ধরে নিয়ে অফিস থেকে বের হয়ে গেল।আবির একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তার বাবার কেবিনে গেল।

//

রাফসান গাড়ি ড্রাইভ করছে।ফাহাদ তার পাশে বসে রাগে গজগজ করছে।

আমি তো ওই আবিরকে দেখে নিবো।(ফাহাদ)

বস ঝামেলা করে তো লাভ নেই।(রাফসান)

তুমি চুপচাপ গাড়ি চালাও।(ফাহাদ বিরক্তির সাথে বললো)

গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতে ফাহাদের চোখ আটকে গেল।

রাফসান গাড়ি থামাও।(ফাহাদ)

রাফসান এক সেকেন্ড দেরি না করে গাড়ি রাস্তার পাশে দাঁড়া করালো।

গাড়ি থামাতে বললেন কেন বস?(রাফসান)

ওই যে দূরে দাঁড়িয়ে আছে ওই মেয়েটা।(ফাহাদ)

রাফসান তাকিয়ে দেখলো অন্না দাঁড়িয়ে আছে।ফাহাদ গাড়ি থেকে নেমে ধীর পায়ে অন্নার পিছনে গিয়ে দাঁড়ালো।

হেই সুইটহার্ট!(ফাহাদ)

গলার আওয়াজটা কানে যেতেই অন্নার রুহু কেঁপে উঠলো।পিছনে ঘুরতে দেখলো ফাহাদ বাঁকা হাসি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে অন্না বাইরে এসেছিল।এখানে এসে যে নরপিশাচের সাথে দেখা হবে তা তার কল্পনার বাইরে ছিল।

অন্না কিছু না বলে হাত-মুখ শক্ত করে হাঁটা শুরু করলো।ফাহাদ দৌড়ে গিয়ে অন্নার সামনে দাঁড়ালো।

ওফ!অনেক রাগ হয়েছে তাই-না?কথা বলবে না আমার সাথে?(ফাহাদ)

পথ ছাড়ুন।(অন্না শক্ত গলায় বললো)

যদি না ছাড়ি?(ফাহাদ)

তাহলে এই রাস্তা ভর্তি মানুষের সামনে আপনার গালে সজোরে ঠাস ঠাস করে দুইটা থাপ্পড় মারবো।(অন্না চোখ রাঙিয়ে বললো)

অন্নার কথায় ফাহাদ জোরে হেসে দিলো।

আহা!কি সুন্দর ডায়লগ বললে।আমার মনটা একদম ভরে গেল।তোমাকে মেইবি আরেকদিন আমার রুমে নিতে হবে।(ফাহাদ)

ফাহাদের কথাগুলো শুনে অন্না আর সহ্য করতে পারলো নাহ্।ঠাস ঠাস করে ফাহাদের গালে দুটো থাপ্পড় বসিয়ে দিলো।ফাহাদ গালে হাত দিয়ে চোখ রাঙিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।চারিপাশে মানুষ এসে ভীড় জমিয়েছে।

তোকে এই দুইটা থাপ্পড় না তোকে জুতো দিয়ে মারলেও আমি শান্তি পাবো না।(অন্না)

অন্না চোখ গরম করে ফাহাদের সামনে থেকে চলে আসলো।ফাহাদ দাঁড়িয়ে বাঁকা হাসি দিলো।

এইসবে আমি অভ্যস্ত হয়ে গেছি মিস.অন্না।তবে তোমার এই তেজটা কিন্তু জোস লাগলো।(ফাহাদ)

ফাহাদ গাড়িতে উঠে চলে গেল।

#চলবে……………………….

[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার চোখে দেখবেন।নেক্সট না লিখে গঠনমূলক মন্তব্য করবেন তাহলে আমাদের লেখার আগ্রহ বেড়ে যায়!]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here