তোমাতেই পূর্ণ আমি পর্ব -০২

#তোমাতেই পূর্ণ আমি
#পর্ব -২
#লেখিকাঃআসরিফা সুলতানা জেবা

দুদিন আগেও যে মানুষ গুলো আমাকে ছেলের বউ বানাতে চেয়েছিল আজ বিধবা জানতেই বের করে দিল ।এটাই হয়ত আমার ভাগ্য। মেনে নিলাম আমি।এই সমাজে টিকে থাকতে হলে তোর অনেক লড়তে হবে শ্রেয়সী।আম্মু কি বলতেন ভুলে গেছিস?ভালো খারাপ মিলিয়েই দুনিয়া। প্রত্যেক টা মানুষ কেই এই সমাজে লড়াই করে বাঁচতে হয়।ছোট বেলায় মায়ের কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনতে পারছিস অথচ এখন লড়াই করতে পারছিস না?লজ্জা হওয়া উচিত তোর।হয় লড়াই করে বেঁচে থাক নাহয় হার মেনে মরে যা।নিজেকে নিজেই কথাগুলো বলে চোখের জল মুছে উঠে দাঁড়ালাম আমি।

হাতের দুই হাজার টাকা ব্যাগে ভরে নিলাম।আজ মাসের দুই তারিখ। বাড়ির মালিক হয়তো বাসা ভাড়ার জন্য আজই হাজির হবেন।খুব কর্কশ স্বভাবের লোক ওনি।মায়া দয়া বলতে কিছুই নেই তার।মাস শেষ হলে সাথে সাথেই ভাড়া চায় ওনার।কারো অসুবিধা ও বুঝতে চায় না।এতকিছু ভেবে তো আর লাভ নেই এটা তো ওনার হক।কিভাবে চলব আমি?দুটো টিউশনির চার হাজার টাকা দিয়ে পড়ালেখা,বাসা ভাড়া,যাবতীয় খরচ চালানো সম্ভব হবে না। দু’ মাসেই হাফিয়ে উঠেছি আমি।কিভাবে কাটাব বাকি জীবনটা?চারপাশের মানুষগুলো এতো কঠোর কেন?সুখ তো কপালে কখনোই ছিল না বাঁচার জন্য ও কতো লড়তে হচ্ছে। —কথা গুলো ভেবেই হাঁটা ধরলাম ফুটফাট ধরে।উদ্দেশ্য বাসায় যাওয়া।রিকশা নিয়ে আর এক টাকাও খরচ করতে চাই না।বিলাসিতা একদম যায় না আমার সাথে কারণ বেঁচে থাকায় তো দায় হয়ে পড়েছে।

শ্রেয়া কে চলে যেতে দেখে দূর থেকে দৃষ্টি নিবদ্ধ মানুষটাও গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে গেল।

শ্রেয়া আজ কিন্তু ভাড়া দিতে হবে–রীতি আপুর কথায় তার দিকে ফিরে তাকালাম আমি।রীতি আপু আর আমি একসাথে থাকি এই বাসায়।ওনি আমার আপন কেউ না তবুও মেয়েটা আমার খুব কাছের হয়ে উঠেছে এই দু মাসে।প্রিয়ুর বড় আপুর ফ্রেন্ড হন ওনি।সেই সুবাদেই ওনার সাথে এখানে থাকা আমার।রীতি আপুর ফ্যামিলি অবস্থা ভালো না। পরিবারের খরচ তাকেই চালাতে হয়।ছোট একটা কোম্পানিতে জব করেন ওনি।দু’জন মিলিয়ে ভাড়া দেই বাসার।ব্যাগ থেকে তিন হাজার টাকা বের করে ওনার হাতে দিয়ে বললাম-“বাড়িওয়ালা বা ওনার ছেলে যেই আসুক ভাড়াটা দিয়ে দিও আপু।যদি ওনার ছেলে আসে তবে বলবে আমি বাসায় নেই। টিউশনিতে গেছি।তুমি তো জানোই ঐ ছেলে কেমন?”

–হুম আমি বলে দিব।কিন্তু এভাবে কদিন শ্রেয়া?আজ আমি সহ থাকি তাই তুৃমি কিছুটা সাহস নিয়ে থাকতে পারো।যদি কখনও আমি না থাকি তবে একা কিভাবে থাকবে?আজ বাড়িওয়ালার মাতাল ছেলে পিছু নিয়েছে কাল হয়তো অন্য কেউ নিবে।জীবনে তো প্রটেকশন প্রয়োজন আছে তাই না?এতো সুন্দর একটা মেয়েকে সারাক্ষণ এভাবে মনমরা হয়ে থাকতে দেখে একদম ভালো লাগে না।দোয়া করব আল্লাহ যেন তোমায় প্রটেক্ট করার একজন মানুষ দেন যে এই সুন্দরী কে আগলে রাখবে।

রীতি আপুর কথায় একটু হাসলাম আমি।নিজের গাল থেকে আপুর হাত টা হাতের মুঠোয় নিয়ে বললাম–শ্রেয়সী নিজেকে নিজে দিব্যি প্রটেক্ট করতে পারে আপু।

ফোনের শব্দে আপুর হাত টা ছেড়ে দিয়ে ব্যাগ থেকে মোবাইল টা হাতে নিয়ে দেখলাম প্রিয়ু কল দিয়েছে। উফ্ বাসায় গিয়েছে একঘন্টা ও হবে না পাগল মেয়ে বার বার ফোন দেওয়া শুরু করেছে।কল রিসিভ করতেই প্রিয়ুর আতঙ্ক কন্ঠ ভেসে আসল।ভয় পেয়ে গেলাম আমি।

—কি হয়েছে প্রিয়ু? নুসাইবা আপুর কিছু হয়নি তো?বেবী ঠিক আছে?

—ঠিক আছে।

—তাহলে এভাবে আতঙ্কিত হয়ে কথা বলছিস কেন?আংকেল আন্টির শরীর ভালো আছে?

—সবাই একদম ফিটফাট আছে।কিন্তু তুই কতক্ষণ ফিট থাকবি জানা নেই আমার।ভীষণ ভয় হচ্ছে শ্রেয়া।তোর কিছু হলে খুব কান্না পাবে আমার।

প্রিয়ুর আবোল তাবোল কথায় মেজাজ খারাপ হতে লাগল।বিরক্তির সুরে বললাম,,

—উল্টা পাল্টা কি বলছিস প্রিয়ু?আন্টি কি আজ তোকে মাইর দিসে নাকি কোনো আকাম করে এসে আমায় ব্যবহার করে আন্টি থেকে বাঁচার ফন্দি আঁটতে ফোন দিয়েছিস?

—-এমন কিছুই না।আমি খুব ভালো মেয়ে তুই ভালো করেই জানিস।প্রিয়ু কখনও কোনো দোষ করে না?(গর্বের সাথে)

—ওমা তাই নাকি?বাহ!!আপনি তো ভীষণ লক্ষী মেয়ে।

–হু।যেইটা বলার জন্য ফোন দিয়েছি শোন।(আতঙ্কিত কন্ঠে)

—আবারও আতঙ্ক কন্ঠ। আচ্ছা বল কি জন্য ফোন দিয়েছিস।

—তূর্য ভাইয়া তোকে ছাড়বে না শ্রেয়া।ওনার ক্ষমতা,,জেদ,,রাগ সম্পর্কে তোর কোনো আইডিয়া নেই। সবচেয়ে বড় কথা ভার্সিটির টিচার দের প্রিয় ছাত্র ওনি।

–কার প্রিয় অপ্রিয় এসব জানতে চাইছি আমি?(ধমক দিয়ে)আর তুর্য কে?ক্যাম্পাসের ওই বেয়াদব ছেলেটা?

–চুপ শ্রেয়া।আর এমন বলবি না।তোকে কিভাবে বাঁচাব ওই টেনশনে আছি আমি।

—যতই টপ সপ হোক বেয়াদব ছেলে ওনি।আর আমার জন্য টেনশন করতে হবে না তোর।ওনি বাঘ না ভালুক ও না।আজাইরা কথা বলার জন্য ফোন দিয়ে আমার সময় নষ্ট করছিস কেন?খেয়ে দেয়ে ঘুমাব আমি।ফোন রাখ।

—তুই তো কিছু জানিস না।আমাদের ডিপার্টমেন্টের মিহি থেকে খবর পেয়েছি আমরা চলে আসার পর তূর্য ভাইয়া রেগে মেগে ক্যান্টিনের দিকে এগিয়ে যায়।

—আবার ওই বেয়াদব, বদমেজাজী ছেলের নাম নিচ্ছিস?ফোন রাখছি।

—প্লিজ দোস্ত পুরো কথা শুন।আমি তো তোর ভালোই চাই তাই না কলিজা?

–হয়েছে এতো প্যাঁচাল না করে তাড়াতাড়ি বল প্লিজ।

—ক্যান্টিন থেকে মোটা একটা লাঠি এনে তুর্য ভাইয়া নিজের পুরো গাড়ির কাঁচ ভেঙে ফেলেছে।কারণ তুই ওনার গাড়িতে ছুয়েছিস। তাই রাগে জিদে নিজের গাড়ি নিজেই নষ্ট করেছেন। সবার সামনে নাকি চিল্লিয়ে বলেছেন ওই মেয়েকে কিছুতেই ছাড়ব না আমি।এমন শিক্ষা দিব আমার পায়ে ধরে ক্ষমা চাইবে আকুতি মিনতি করবে।ওনার কথায় সবাই কেঁপে উঠেছেন।আমারও শরীর কাঁপছে এই কথা শুনে।কি দরকার ছিল শ্রেয়া ওনার সাথে তর্কে জড়ানোর? ওনার কথা মেনে চলে সবাই ক্যাম্পাসে।আমার তো ভয় করছে তোকে ক্যাম্পাস থেকে যদি বের করে দেয়!

প্রিয়ুর কথা শুনে সাথে সাথে ফোনটা কেটে দিলাম আমি।একটা মানুষ এতো খারাপ কি করে হতে পারে?এতো অহংকার ওনার?ওনাকে ভয় পাচ্ছি না আমি।ভয় হচ্ছে যদি আমায় ভার্সিটি থেকে বের করে দেয়!পড়ালেখা টা চালিয়ে যাওয়া অনেক জরুরি আমার জীবনে বাঁচতে হলে।নতুন কোনো ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পর্যাপ্ত পরিমাণ টাকা আমার নেই। প্রিয়ুর বাবার আর্থিক সাহায্যে ভর্তি হয়েছি এই ভার্সিটিতে।বই টুকু কেনার ও সাধ্য নেই আমার প্রিয়ুর থেকে বই এনে নোট করে পড়ি।এই মুহূর্তে বের করে দিলে কি করব আমি।হাঁটু ভেঙে বসে পড়লাম নিচে পাতানো বিছানায়।ভার্সিটিতে পড়তে হলে নিজের এই অসহায় পরিস্থিতির জন্য নিজের কাছেই হেরে যেতে হবে আমার।প্রিয়ু ঠিকি বলে-যখন প্রতিবাদ করার প্রয়োজন হয় তখন করি না অযথা কারণে যায় প্রতিবাদ করতে।একের পর এক ঝামেলায় পড়ছিস তো শ্রেয়া।আবারও লড়তে হবে তোকে,,তবে এবার নিজের মাথাটা নিচু করে।


টিউশনি শেষ করে বাসায় যাচ্ছি। রিকশা নেই নি বলে হেঁটে যেতে অনেকটাই দেরি হয়ে যাচ্ছে। প্রায় আট টা বেজে গেছে।ল্যাম্পপোস্টের আলোয় কিছুটা ভয় নিয়ে হেঁটে যাচ্ছি আমি।প্রতিদিনই ভয়ে থাকি।তবে কেন জানিনা আজ ভীষণ ভয় লাগছে।হঠাৎ মনে হল আমার পিছু পিছু কেউ আসছে।ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি একটা ছেলে আমার পিছু নিচ্ছে।ছেলেটার চেহারা মৃদ্যু আলোতে তেমন বুঝা যাচ্ছে না।বুকটা ধুক করে উঠল আমার।যতই বলি আমি নিজেকে নিজে ঠিক প্রটেক্ট করতে পারব তবু্ও একজন ছেলের শক্তির কাছে আমার শক্তি কিছুই না।কাঁপা কাঁপা হাতে হাতরিয়ে ব্যাগ থেকে পেপার স্প্রে টা নিলাম।কাছে আসলেই চোখ বরাবর স্প্রে করে দিব।নিজের সেফটির জন্যই এটা রাখা।তাড়াতাড়ি করে পা চালাতে লাগলাম।ছেলেটাও পা চালিয়ে কাছে আসতেই তাড়াতাড়ি করে স্প্রে করতে যাবো তার আগেই ছেলেটা চেচিয়ে উঠল—-হেই স্টপ।ডোন্ট ডু দিস জেরি।

জেরি ডাকে চমকে উঠলাম আমি।কে জেরি? ছেলেটা পাগল নয়তো?এখানে কোনো আলো ও নেই। মোবাইলের ফ্লাশ অন করল ছেলেটা।আলোতে ছেলেটার চেহারা ভেসে উঠতেই বলে উঠলাম—আপনি?আপনি তো ঐ বেয়াদব তূর্য চৌধুরীর বন্ধু তাই না?আজ ক্যাম্পাসে তার সাথে দেখেছিলাম আপনাকে।

ফিক করে হেসে দিল আয়ুশ।শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,,

–জ্বী জেরি সাহেবা আমি ওই বেয়াদব তূর্যর শুধু ফ্রেন্ড না বেস্ট ফ্রেন্ড।আমি আয়ুশ। আর তুর্য খুব বেয়াদব তাই না?

জেরি কেন ডাকছে বার বার লোকটা।পাগল নাকি?তুই ও তো পাগল শ্রেয়া। এই লোকটা ঐ বেয়াদব তুর্য ভাইয়ার বেস্ট ফ্রেন্ড আর তার কাছে তুর্যর ব্যাপারে বদনামি করে একদমই নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারা যাবে না।তাই ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলাম,,,

—আপনি আমায় জেরি কেন ডাকছেন?অদ্ভুত আমার নাম শ্রেয়সী।শ্রেয়সী উচ্চারণ করতে না পারলে শ্রেয়া বলে ডাকবেন।

কথাটা বলে সামনের দিকে হাঁটা ধরলাম আমি।লোকটা কে খারাপ মনে হচ্ছে না।তবুও সাবধানের মাইর নাই তাই সামনের দিকে হাঁটতে লাগলাম।

—তুমি ছোটবেলায় টম এন্ড জেরি কার্টুন দেখতে?টম এন্ড জেরি কার্টুনে যেমন সারাক্ষণ ওরা জগড়া লেগেই থাকতো সকালে তূর্য আর তুমি যখন জগড়া করছিলে তোমাদের দু’জনের জগড়া টাও ঠিক ওদের মতো লেগেছে।আমি তো বেশ উপভোগ করেছি।তূর্য যদি রাগ না করতো তবে আমি তাকে টম বলে ডাকতাম।(হেসে)

–তাই বলে আপনি আমায় জেরি ডাকবেন?(ওনার দিকে তাকিয়ে)

–অবশ্যই।বাই দ্যা ওয়ে তূর্যর ওমন ব্যবহারের জন্য দুঃখিত।কিন্তু তূর্য অনেক ভালো মনের একটা মানুষ। তুমি,,,

ওনাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে বলে উঠলাম–হয়েছে হয়েছে আর বলতে হবে না ওনার কথা।ওনার এতো গুণগান দিয়ে আমি কি করব? আপনি আমার পিছু পিছু কেন আসছেন?আপনি কি আমায় ফলো করছিলেন?

–একদম না।বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম রাস্তার মোড়ে।তূর্য ও ছিল।তখনই দেখলাম গলি থেকে বের হয়ে আসছো তুমি।আর কিছু ছেলে কু-দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল তোমার দিকে।তাই ভাবলাম পিছু পিছু গিয়ে তোমায় একটু এগিয়ে দিয়ে আসি।শত হোক আমাদের ক্যাম্পাসের স্টুডেন্ট তুমি।সিনিয়র হিসেবে এতটুকু তো করতেই পারি আমি।(হেসে)

–ধন্যবাদ। সামনেই আমার বাসা।ভালো থাকবেন ভাইয়া।

কথাটা বলে দ্রুত পা চালিয়ে চলে আসলাম আমি।উপর দিয়ে যতই কঠোরতা দেখাই না কেন ভালোই হয়েছে ওনি এগিয়ে দিয়েছেন।

———————–

ক্লাসে বসে আছি।স্যার এই মাত্র বের হয়ে গেলেন।আমার পাশে বসে ঠকঠক করে কাঁপছে প্রিয়ু। এই মেয়ে কে দেখে যে কারোই মনে হবে বর্ষার মৌসুমেই শীতের আগমন ঘটেছে। বিরক্তি নিয়ে পাশ ফিরে প্রিয়ুর দিকে তাকালাম আমি।

–কি রে?শীত কি বেশি লাগছে?কম্বল দিব একটা?

–তুই মজা করছিস?আমি তোর জন্য টেনশনে শেষ আর তুই মজা করছিস?যা কোনো কথা বলব না তোর সাথে।

–রিলেক্স প্রিয়ু।এতো টেনশন করার কিছুই নেই। যা হবে পরে দেখা যাবে।এখন অন্তত ক্লাসে মনোযোগ দে।স্যার ঢুকেছে ক্লাসে।

–তুই তূর্য ভাইয়াকে সরি বলে দে।দেখিস ওনি মাফ করলেও করতে পারে।

—হুম বলব।আমি অনেক ভেবেছি ওনি যেমনই হোক আমাদের সিনিয়র তো।ওমন ব্যবহার করা উচিত হয়নি।তাই সরি চেয়ে সব মিটমাট করে ফেলব।তোর আর কাঁপতে হবে না।


ক্লাস শেষে অডিটোরিয়াম রুমের সামনে এসে দাঁড়ালাম আমরা।ভিতর থেকে কারো সুরেলা কন্ঠ ভেসে আসছে।খুবি সুন্দর ভয়েস।” আমি তোর চোখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে চাই তোকে” গানটা গাইছে।দরজার কাছে দাড়িয়ে পুরোটা গান শুনলাম আমি আর প্রিয়ু।হয়তো নবীন বরণ অনুষ্ঠানের জন্য প্রেকটিস করছে।মিহির কাছে জেনে আসলাম তূর্য ভাইয়াকে এখানে পাওয়া যাবে।মিহি মেয়েটাকে ইনফর্মার বললে ভুল হবে না।সব নিউজ পাওয়া যায় তার কাছে।সেই কারণেই এখানে আসা।দরজা থেকে উঁকি দিয়ে দেখলাম তূর্য ভাইয়ার হাতে গিটার।তার মানে এই বদমেজাজি লোকটাই এতো সুন্দর করে গাইছিলেন।থাক এতো ভেবে লাভ নেই যা করতে আসছি তাই করে যাই।দরজার আড়াল থেকে ধীরে ধীরে ভিতরে ঢুকলাম আমি।আমার পেছনে প্রিয়ু এখনও কেঁপে যাচ্ছে। মন চাইছে এই মেয়েকে উগান্ডা পাঠিয়ে দেই।একটা মানুষ এতো ভীতু কি করে হতে পারে?কই অন্য সময় তো বাঘিনী হয়ে উঠে।

ভিতরে ঢুকে দেখলাম আয়ুশ ভাইয়া,,তূর্য ভাইয়া,,কালকের বাকি দুটো ছেলে আর দুটো মেয়ে ও আছে।হয়তো মেয়ে দুটো ও তাদের ফ্রেন্ড। শ্রেয়া কে দেখেই গিটার টা রেখে উঠে দাঁড়াল তূর্য।রাগী কন্ঠে বলে উঠল-স্টপ দেয়ার।

–সরররি,,,

—হোয়াট?(ভ্রু কুঁচকে)

আমি এক নিঃশ্বাসে বললাম,,–কালকের জন্য সরি ভাইয়া।আমি একদম বুঝতে পারি নি।আমার জন্য এই ভার্সিটিতে পড়া খুব জরুরি। প্লিজ স্যারদের কাছে নালিশ করে আমায় বের করে দেবেন না।প্লিজ।

শ্রেয়ার এভাবে এক নাগাড়ে কথা বলায় হেসে দিল বাকি সবাই।মুচকি হাসল আয়ুশ।এগিয়ে এসে বলল —ইটস ওকে জেরি।তূর্য কিছু করবে না।

স্বস্তির একটা নিঃশ্বাস ফেললাম আমি।পিছন ফিরে চলে যাব বাঁকা হেসে বলে উঠল তূর্য,,,—ইটস নট ওকে আয়ুশ।

ওনার কথায় থমকে গেলাম আমরা দু’জনে। প্রিয়ুর কাঁপুনি দ্বিগুণ বেরে গেল।তূর্য ভাইয়ার দিকে তাকালাম আমি।থমকে গেলাম আবারও তার দিকে তাকিয়ে। কালো টি শার্ট আর কালো জ্যাকেটে তার সৌন্দর্য কালকের থেকেও আরো বেশি বেড়ে গেছে।তাড়াতাড়ি করে মাথা নত করে ফেললাম।
শ্রেয়ার থেকে কিছুটা দূরে এসে দাঁড়াল তূর্য।মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল,,–আমি কি তোমাকে ক্ষমা করেছি?

–ক্ষমা চেয়েছি তো ভাইয়া।(মাথা নিচু করে বললাম)

–ক্ষমা চাইলেই কি ক্ষমা পাওয়া যায়?(হেসে)

–ক্ষমা করা মহৎ গুণ ভাইয়া।

—ওহ তাই নাকি?এতো গুণ দিয়ে কি করব বলো?তবে তোমায় ক্ষমা করতে পারি এক শর্তে?

পাশ থেকে আয়ুশ ভাইয়া বলল–থাক না তূর্য।

—কেন থাকবে?আর তুই এতো দরদ দেখাচ্ছিস কেন এই মেয়ের জন্য? এই মেয়ে সিনিয়র দের রেসপেক্ট পর্যন্ত করতে পারে না।

—ছোট মানুষ।বাদ দে,,,

—আমার ব্যাপারটা আমায় হ্যান্ডেল করতে দে আয়ুশ।

তূর্যর কথায় চুপ হয়ে গেল আয়ুশ ভাইয়া।আমি মাথা তুলে বললাম–কি শর্ত ভাইয়া?আমি আপনার যেকোনো শর্তে রাজি।

—নিশি এই মেয়ের নামটা তুল লিস্টে নাচে পার্টিসিপেট করার জন্য।

তূর্য ভাইয়ার কথায় চমকে উঠলাম আমি।এটা কেমন শর্ত?ক্ষমা পাওয়ার জন্য নাচতে হবে?অসম্ভব। মুখটা মলিন হয়ে এল শ্রেয়ার।সে খুব ভালো নাচে তবে জীবনের এমন এক পরিস্থিতিতে নাচা তার পক্ষে সম্ভব না।বেশ বুঝতে পেরেছি নাচ গান এইসবে আমি রাজি হব না।তাই ইচ্ছে করেই শাস্তি দেওয়ার জন্য এমন এক শর্ত দিলেন ওনি।
আমি করুন চোখে তাকাতেই তিনি হাসি দিয়ে বলে উঠলেন—

–শর্ত মানলেই ক্ষমা একসেপ্ট করা হবে।নয়তো জানো তো কি হবে???নাও ডিসিশন ইজ ইউরস।

কথাটা বলেই বড় বড় পা ফেলে বেরিয়ে গেলেন ওনি।সাথে বাকি সবাই ও।আমি এখনো থম মেরে দাড়িয়ে রইলাম।খারাপ কি আর সাধে বলি,,,!!!

চলবে,,,

(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here