#তোমাতে_আমি_মুগ্ধ (শেষ′পর্ব)
#ফারহানা_জান্নাত
“তুমি একজন মেডিকেল স্টুডেন্ট হয়ে ও এটা বুঝতে পারলে না! যাই হোক আসল কথায় আসি, বেবি নষ্ট হয়ছে।”
“ম্যাম আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে, আমার বেবি আসবে কই থেকে! আমি তো…”
“হ্যা এটা তো আমি ও ভাবছি, আমি তো শুনছিলাম তুমি অবিবাহিত। হেই তোমার বয়ফেন্ড এর কোনো কেস এখানে আছে নাকি? তোমরা মেয়ে’রা ও না।”
“এসব কি বলছেন! দেখেন আমার কোনো বয়ফেন্ড নাই। আর আমি বিবাহিত, ডাঃ আহনাফ শাহরিয়ার ওয়াইফ আমি।”
“কিহ! আহনাফ বিয়ে করছে? কিন্তু তাহলে এতো কেয়ারলেস হলে কিভাবে! স্টুডেন্ট থাকা কালিন বেবি কনসিভ করছো কেনো? আর বেবি’টা তোমাদের ভুলের জন্য নষ্ট হয়ছে।”
“এমটা হতে পারে না”
–রুমাইশা মুখে হাত দিয়ে কেঁদে উঠে। সকালে ক্লাসে আসার পর অতিরিক্ত পেট ব্যাথার জন্য ডাক্তার রাহি’র কাছে আসে। তারপর কিছু চেকাপ করে জানতে পারে রুমাইশা ২ মাসের প্রেগন্যান্ট। আর বাচ্চা’টা নষ্ট হয়ছে তাদের ভুলের জন্য। রাহি কিছুটা চিন্তিত হয়ে বলে,
“বুঝলাম না কাঁদছো কেনো? কি হতে পারে না বলবা! আমার তো এবার গন্ডগোল লাগছে। থামো আহনাফ হসপিটালে আছে ওকে ফোন করি।”
“না, না প্লিজ ম্যাম ফোন করবেন না। আহনাফ জানতে পারলে আমাকে মেরে ফেলবে।”
–রাহি ফোন না করে মেসেজ করে আহনাফ’কে আসতে বলে। রাহি এবার রুমাইশার দিকে তাকিয়ে বলে,
“কি হয়েছে সত্যি করে বলো’তো। তোমাকে এমন নার্ভাস লাগছে কেনো?”
“আহনাফ আমাকে মিথ্যা বলছে, তার মানে সেই রাতে বিজয় আমার সাথে..”
–রুমাইশা এবার জোরেই কেঁদে উঠে, বাচ্চা নষ্ট হওয়ার জন্য সে কষ্ট পাচ্ছে না। বাচ্চা’টা যে অন্য কারো সেটা ভেবেই তার কষ্ট হচ্ছে। দরজা খোলার শব্দ রুমাইশা নিজেকে গুটিয়ে নেয়। আহনাফ রুমাইশা’কে এখানে দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেলে।
“তুমি এখানে কি করছো?”
“আমাকে ছুঁবে না তুমি, আমি অপবিত্র।”
“মানে!”
–আহনাফ ধরতে গেলে রুমাইশা সরে যেতে চায়। রুমাইশা’র ব্যাবহারে রাহি কিছুটা অবাক হয়। আহনাফ এবার ধমক দিয়ে বলে,
“কি সমস্যা আমার থেকে দূরে যাচ্ছো কেনো? আর তুমি রাহির কাছে কি করছো! রাহি কি হয়ছে, ডাকলি কেনো?”
“তুই বিয়ে করছিস একবার তো জানালি না। যাই হোক, তো বউ’য়ের ২মাসের বেবি নষ্ট হয়ছে। আর সেটা শোনার পর থেকে এমন কান্না করছে। তোদের মাঝে কি ঝামালা হয়ছে?”
“ও, বাট বেবি আসার কথা না তো। ভালো করে চেকাপ করছিস?”
“হুম এই দেখ রিপোর্ট।”
–আহনাফ রিপোর্ট হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখে। তারপর হাত থেকে রিপোর্ট রেখে রুমাইশা হালকা ভাবে জড়িয়ে বলে,
“বাচ্চা নষ্ট হয়ছে এটা নিয়ে এমন কান্না করতে হবে নাকি! তোমার বয়েস কম। এসব নিয়ে চিন্তা করো না তো, যাও তুমি এখন বাসায় যাও।”
“আহনাফ তুমি তো ১ মাস আগে দেশে আসছো। তাহলে আমি দু মাসের প্রেগন্যান্ট কিভাবে হতে পারি?”
–এবার আহনাফ রুমাইশা’কে ছেড়ে দেয়। রুমাইশা ভয় পেয়ে শক্ত করে শার্ট আঁকড়ে ধরে। রুমাইশা আবার বিরবির করে বলে,
“এর আগে তুমি তো আমার কাছে আসো নাই আহনাফ। তাহলে, সেদিন কি বিজয় ওরা আমার সাথে কিছু করছিলো? তুমি আমাকে মিথ্যা বলছো কেনো আহনাফ।”
“আহনাফ তোদের কাহিনি’টা আমাকে বলবি?”
“আরে কিছু না, মেডিসিন লিখে দে, ও অসুস্থ আমি এখন ওকে নিয়ে বাসায় যাচ্ছি। তুই স্যার’কে বলে দেশ আমি আজ আসবো না আর।”
–প্রায় ৩০ মিনিট পড় আহনাফ রুমাইশা’কে নিয়ে বাসায় আসে। রুমাইশা এখনো জড়িয়ে ধরে কান্না করছে। আহনাফ রুমে রুমাইশা’কে বসিয়ে পানি এগিয়ে দেয়,
“এটা খেয়ে নেও, আমি বলছি সব।”
“তুমি আমাকে মিথ্যা বলছো কেনো? আমি মরে যাবো আহনাফ৷ আমার শরীরে অন্য কারো স্পর্শ।”
“উফ বেশি বোঝো কেনো! এটা আমার সন্তান ছিলো। আমি ছাড়া তোমাকে কেউ স্পর্শ করার সাহস পায় নি। পাগলামি কেনো করছো?”
“তুমি মিথ্যা বলছো”
“আগে কান্না থামাও, এটা বলো, সেদিন তোমার জামা কে চেঞ্জ করায় দিসে?”
–রুমাইশা কান্না বন্ধ করে আহনাফে’র দিকে তাকায়। আহনাফ ফোন বের করে বেশ কিছু ছবি দেখায়। সেটা দেখে রুমাইশা কান্না বন্ধ করে রেগে যায়। রাগি কন্ঠে বলে,
“নির্লজ্জ, এসব পিক কেউ উঠায় নাকি? আর আমাকে এসব বিষয়ে বলো নাই কেনো! আমার সরলতার সুযোগ নিছো।”
“এ জন্য বলি নাই, ভাবতে আমি জোর করছি। তুমি নিজেই তো ছবি দেখলে, কিভাবে আমার ইজ্জত হরণ করছো তুমি।”
“চুপ একটা কথা ও বলবা না। তোমার জন্য আমার বাচ্চা”
–রুমাইশা আহনাফে’র গলা জড়িয়ে কেঁদে দেয়। আহনাফ মুঁচকি হাসে, একটু আগে মেয়েটা কান্না করছিলো কেনো! আর এখন করছে আর এক কারণে। আহনাফ বিছানায় গাঁ এলিয়ে দিয়ে বলে,
“২ মাসে বুঝতে পারো নাই বেবি আসছে! মানে কতো’টা কেয়ারলেস তুমি বুঝছো? পড়ে তোমার সাথে আমার এক হওয়া। মেডিসিন নেওয়া, সব মিলিয়ে বেবি’টা নষ্ট হয়ছে।”
“আমি বুঝতে পারি নাই।”
“তা পারবে কেনো! আমার সাথে ঝগড়া করতে হলে খুব পারো। এই ১ মাস জালিয়ে মারছো আমাকে।”
“এভাবে বলছো কেনো?”
–আহনাফ রুমাইশা’কে হাতার ইশারায় নিজের পাশে শু”তে বলে। রুমাইশা তাড়াতাড়ি এসে জড়িয়ে বুকে মাথা রাখে। আহনাফ একটু জোরে হেঁসে দিয়ে বলে,
“এমন ভাবে দৌড়ে আসলে, যেনো আমি কাছে আসতে দেই না। আর একটা সুযোগ পেয়ে দৌড়ে আসলে।”
“তুমি আমার কাছে পুরনো হবে না, সব সময় নতুন থাকবে। নতুন জিনিসের প্রতি আগ্রহ মানুষের বেশি থাকে। তাই তোমাকে সব সময় নতুন রুপে দেখবো।”
“তা এতো ভালোবাসা কই থেকে জন্ম নিলো? আর এতো দূর্বল কেনো তুমি! প্রথম দিন আমাকে দেখা মাত্র চোখে পানি।”
“হিহি বুঝবা না, ঐটা নাটক ছিলো। আমি এতোটা ও দূর্বল না। কিছু ছেলে আছে যারা চায় মেয়ে’রা তাদের জন্য কাঁদুক। আর কিছু ছেলে আছে এসব পছন্দ করে না। তো তুমি চোখের পানি সহ্য করতে পারো না। আর সেইটা আমি কাজে লাগাইছি, হিহি।”
“এতো বুদ্ধি নিয়ে ঘুমাও কিভাবে?”
“তোমার বুকে তো ঘুমায়।”
–আহনাফ আর রুমাইশা কথা বলতে বলতে রুমাইশা আহনাফে’র বুকে ঘুমিয়ে যায়। সময় চলমান, কেটে গেছে ১৭ বছর। রুমাইশা চট্রগ্রামের একটা হসপিটালে নিয়োগ আছে বর্তমান। আহনাফ নিজে ও বদলি নিয়ে চট্টগ্রাম চলে আসছে। রাহুল, আহনাফ সবাই এখন এক বাড়িতেই থাকে। আহনাফ আর রুমাইশার ছেলে রুদ্র শাহরিয়া। রাহুল আর রিতুর ২য় সন্তান হুমায়রা বর্তমান বয়েস ৩ বছর। রুদ্রের ৪ বছরের ছোট। ড্রইং রুমে সবাই বসে আছে, এমন সময় রুদ্র ফেমেলির এলবাম নিয়ে বসে।
“মাম্মাম তোমার আর বাবাই’য়ের বিয়ের সময় আমাকে কই রাখছিলে?”
–রুমাইশা ভ্রু কুঁচকে ফেলে, তাকে আবার কই রাখবে! জন্ম তো হয়নি তখন তার। তা ছাড়া ওদের বিয়ের কোনো ছবি নাই। হুট করে একদিন দু’জন বউ বর সাজিয়ে কিছু ছবি সৃতি হিসাবে রেখে দেয়। রুমাইশা রাগ নিয়ে বলে,
“তখন তোমার জন্ম হয়নি রুদ্র। সে জন্য আমাদের সাথে তোমার ছবি নাই।”
“আচ্ছা দীদুনের বিয়ের সময় কি বাবাই হয়ছিলো?”
–রুদ্রের দিকে এবার সবায় নজর দেয়। আহনাফ বসে বসে মজা নিচ্ছে। রুমাইশা তাকে কয়দিন থেকে বড্ড জানাচ্ছে, সে জন্য নিজে রুদ্র কে এসব শিখিয়ে দিছে সে। রুমাইশা কিছুটা ধমক দিয়ে বলে,
“না, তখন তোমার বাবাই ছিলো না। আরো অনেক পড়ে তোমার বাবাই হয়ছে।”
“তাহলে দীদুনের বিয়ের সময় বাবাই কই থেকে আসলো? বলো তুমি আমাকে কই লুকিয়ে রাখছিলা। কেনো তোমার বিয়ের সময় আমাকে সাথে নেও নি।”
“বাবাই আমি তোমাকে নিতে চাইছি, কিন্তু তোমার মাম্মাম বলছে! তুমি ছোট সে জন্য সাথে নেয় নি।”
“আহনাফ কি বলছো! তখন তো ওর জন্ম হয়নি। মামুনির সাথে তোমার ছবি আছে কারণ, মামুনির বিবাহ বার্ষিকির ছবি এসব।”
“বাবাই মাম্মাম আমাকে নেয় নি, মাম্মাম অনেক পঁচা।”
“হ্যা সোনা, মাম্মাম অনেক পচাঁ দেখছো? তোমাকে বিয়ের সময় নেয় নি। চলো তুমি আর আমি থাকবো না।”
“রুদ্র চুপ করো, বললাম তো তখন তোমার জন্ম হয় নি। তুমি অনেক পড়ে হয়ছো। তোমার যখন বিয়ে হবে তখন তোমার বাবু’রা ছবিতে থাকবে না।”
“আমি কি তোমাকে বিরক্ত করি মাম্মাম?”
“কেনো!”
“তাহলে আমি এই ছবিতে নাই কেনো।”
–রুদ্র কথাটা বলে মাটিতে গড়াগড়ি শুরু করে। ৭ বছরের বাচ্চা যদি এমন করে তাহলে জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠবে। রুদ্রের কান্না দেখে হুমায়রা রুদ্র কাছে এগিয়ে এসে বুকে উঠে। তারপর বুকে প্রসাব করে রুদ্রের মতো কাঁদতে থাকে। রুদ্র সেসব দেখে জোরে কেঁদে দেয়। এবার সবাই হেঁসে উঠে। রুমাইশা উঠে হুমায়রাকে কোলে নেয়, সেটা দেখে রুদ্র বলে,
“বাবাই দেখছো মাম্মাম হুমায়রাকে কোলে নিছে, আমি কাঁদছি আমাকে কোলে নেয় নি। মাম্মাম আমাকে ভালোবাসে না।”
“রুদ্র তুমি বড়, আর হুমায়রা ছোট, সে জন্য ওকে কোলে নিলাম। এখন চুপচাপ উঠে খাওয়া দাওয়া করবা চলো। এসব কান্না দেখার ইচ্ছে আমার নেই। ছুটির দিন এই ছেলের জন্য শান্তিতে থাকতে পারি না।”
“আমাকে বিয়ের সময় কেনো নেওনি মাম্মাম, তুমি পঁচা অনেক পঁচা”
“বউ, ছেলেকে সামলাবে নাকি এখন আমি ছেলের মতো কান্না শুরু করবো?”
–আহনাফে’র কথায় রুমাইশা বিরক্ত হয়। একটা কে সামলাতে পারছে না, আর এখন বড় গাধা এসে হাজির। আহনাফ কানে কানে বলে,
“বেশি না একটা কিস দেও, তাহলে রুদ্র কে থামিয়ে দিচ্ছি।”
“বুড়া হয়ছো তাও এসব ঢং শেষ হয়নি তাই না!? আমার সামনে থেকে সরো।”
–আহনাফ এবার রুদ্রের পাশে গিয়ে রুদ্রের মতো মাটিতে উপুর হয়ে কান্না শুরু করে। সবাই থতমত খেয়ে যায় আহনাফে’র কান্ডে। রুদ্র বাবাই’য়ের কান্না দেখে এবার চিল্লিয়ে কান্না করে। আহনাফ তার মম আর ডেড এর দিকে তাকিয়ে কান্নার সুরে বলে,
“মম তুমি তোমার বিয়ের সময় আমাকে সাথে নেও নি কেনো। আমি কি খুব পঁচা ছিলাম? আমাকে কেনো নেও নি মম।”
–মালিহা খান হা হয়ে যায়, সবাই ভাবে রুদ্রের সাথে আহনাফে’র মাথা খারাপ হয়ে গেছে। রুমাইশা নিজের মাথায় বাড়ি দিয়ে বলে,
“আল্লাহ কি দিছো আমার কপালে, না এদের থামাতে হলে এদের মতো কান্না করতে হবে।”
–রুমাইশা নিজে ও মাটিতে বসে নেকা কান্না শুরু করে। রুদ্র মাম্মাম এর কান্না সহ্য করতে পারে না। সে জন্য মাম্মামের কাছে এসে গলা জড়িয়ে ধরে। আহনাফ রুদ্রের দেখা দেখি নিজেও এসে গলা জড়িয়ে নেয়। আহনাফে’র মা বাবা সুরসুর করে সেখান থেকে কেটে পড়ে। আর রেখে যায় সুখের হাঁসি।
_______________সমাপ্তি______________
[বিদ্র: গল্প সাজাতে গিয়ে অনেকটা ঝামালার মাঝে পড়ে গেছিলাম আমি। প্রথমে পুরো প্লট না সাজিয়ে গল্প লিখছিলাম। সে জন্য মাঝখানে গল্পটা বিরক্তিকর হয়ে উঠছে। সব শেষে বলবো ভুল গুলো সবাই ক্ষমা করবেন। যারা সাপোর্ট করছেন, ভুল ধরিয়ে দিছেন সবাইকে ভালোবাসা। নতুন লেখালেখির জন্য এমন ভুল হচ্ছে আমার। আশা করি ভুল করলে শুধরে দিবেন সবাই। আর একটা কথা, রুমাইশার বাচ্চা”মিতে সবাই বিরক্ত। তবে আমি ২০ বছরের মেয়ে’কে ও দেখছি ভালোবাসা পাওয়ার জন্য ছেঁচড়া’মি করছে। যাই হোক সব দিক দিয়ে বিবেচনা করে এটা লেখা।]