তোমাতে আসক্ত আমি পর্ব -৩৪

#তোমাতে_আসক্ত_আমি
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_৩৪

প্রতিদিনের মতো সকাল সকাল ঘুম ভা*ঙ*লো আবরারের। তবে আজকের সকাল টা অন্যরকম মনে হলো তার। বুঁকে ভা*রী ভা*রী অনুভব হওয়ায় মাথা উঁচু করলো সে। চোখে ধরা দিলো তার শুভ্র পরীর মুখ টা। দেখলো আরশি তার বুঁকে মাথা রেখে তার সাথে লে*প্টে নি*শ্চি*ন্তে ঘুমাচ্ছে। ঠোঁট বা*কি*য়ে হাসলো আবরার। এই মেয়ে রাতে তাকে জড়িয়ে ধরতে দিচ্ছিলো না। আর এখন কি সুন্দর তাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে। আরশির কপালে পড়ে থাকা ছোট ছোট চুলগুলো আলতো হাতে সরিয়ে দিলো আবরার। অতি সাবধানে আরশি কে বেডে শুইয়ে দিলো। কিছু সময় আরশির দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থেকে কপালে আলতো করে ঠোঁট ছুঁয়ালো সে। ঘুমের মাঝেই ন*ড়ে*চ*ড়ে উঠলো আরশি। আবরার আরশি কে ন*ড়া*চ*ড়া করতে দেখে সরে আসলো। ঘড়িতে সময় দেখে নিয়ে চলে গেলো ফ্রেস হতে। আজ পার্টি থেকে একটা মিটিং রাখা হয়েছে। তাকে সেই মিটিং এ জয়েন করতে হবে।

আবরার ওয়াশরুমে যাওয়ার কিছু সময় পর ঘুম ভা*ঙ*লো আরশির। হাই তু*লে উঠে বসলো সে। আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো আবরার নেই। ওয়াশরুম থেকে পানি পড়ার শব্দ ভে*সে আসছে। তাতে বুঝলো আবরার ওয়াশরুমে আছে। আরশি হাই তু*লে শরীর মো*চ*ড়া*তে লাগলো। এমন সময় ওয়াশরুমের দরজা খুলে বেরিয়ে আসলো আবরার। পরনে একটা স্যান্ডো গেঞ্জি আর প্যান্ট। গলায় টাওয়াল ঝো*লা*নো। আরশি চো*রা চোখে তাকিয়ে রইলো আবরারের দিকে। লোক টা কে শাওয়ার নেয়ার পর ভেজা এ*লো*মে*লো চুলে একটু বেশিই সুন্দর লাগে বলে মনে হলো আরশির। পরক্ষনেই আরশি নিজের বি*রো*ধি*তা করে বললো,

— না না লোক টা কে তো সবসময়ই একটু বেশি সুন্দর লাগে।

আরশির ভাবনার মাঝেই আবরার চুল মু*ছ*তে মু*ছ*তে বলে উঠলো,

— ছিঃ মিসেস অদ্ভুত চোখওয়ালি। তুমি তো দিন দিন ভা*রী লু*চু হয়ে যাচ্ছ! এভাবে চোখ দিয়ে গি*লে খাচ্ছ কেনো আমায়? আমি জানি আমি অনেক সুদর্শন। তাই বলে এভাবে তাকিয়ে থাকবে? আমার বুঝি লজ্জা করে না?

শেষের কথা লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে বললো আবরার। আবরারের ঢং দেখে মুখ বাঁ*কা*লো আরশি। বাঁ*কা চোখে তাকিয়ে বললো,

— আপনার দিকে তাকিয়ে থাকতে আমার ব*য়েই গেছে। সুন্দর না ছা*ই হুহ।

হাসলো আবরার। বললো,

— বুঝি বুঝি তুমি এখন লজ্জা পেয়ে এসব বলছো। যাই হোক লজ্জা পাওয়ার কি আছে আর এভাবে চো*রে*র মতো দেখারই বা কি আছে? আমি তোমারই জামাই। দেখতে ইচ্ছা হলে সোজাসোজি দেখতে পারো বুঝতে পেরেছো মিসেস অদ্ভুত চোখওয়ালি? এরপর থেকে যখনই দেখতে ইচ্ছা হবে পুরো অধিকারের সাথে বলবে ‘জামাই আপনাকে মন ভ*রি*য়া দেখিতে চাই, আপনি এখানে বসিয়া থাকুন’। আমিও বসে থাকবো। যদিও আমার আবার লজ্জা বেশি। ওভাবে তাকিয়ে থাকলে একটু লজ্জা লজ্জা করবে তবুও বউয়ের আবদার বলে কথা। রাখতে তো হবেই।

ফোঁ*স করে একটা শ্বাস ছাড়লো আরশি। এই লোকের সঙ্গে ত*র্ক করে লাভ নেই সে বেশ বুঝতে পেরেছে। উ*ল্টো এই লোক তাকে শুধু লজ্জাই দিবে। আরশি বুঝে না লোক টা এতো কথা কি করে বলে? আগে তো দেখলে মনে হতো মে*পে মে*পে কথা বলে। অথচ এখন একবার মুখ খুললে আর বন্ধ করা যায় না। লোক টা কি শুধু তার সাথেই এতো ব*ক*ব*ক করে নাকি?

আরশি কে চুপ থাকতে দেখে নিজেকে তৈরি করতে ব্য*স্ত হয়ে পড়লো আবরার। আরশি বেডের সাথে হেলান দিয়ে আবরারের সাজগো*জ দেখতে লাগলো। আবরারের স্টাইল দেখে আরশি বিড়বিড় করে বললো,

— এতো সাজ তো আমি মেয়ে হয়েও দেই না। আর এই এমপি সাহেব কে দেখো! কি স্টাইল করা হচ্ছে। বুঝি তো বুঝি, সবই মেয়েদের এট্রাক্ট করার ধা*ন্দা। শুধু শুধু লু*চু বলি না। নাহ এই বেটা কে একা ছাড়া যাবে না। কখন কোন শা*ক*চু*ন্নি এসে টা*ন দেয় বলা যায় না। কিছু একটা করতেই হবে।

আরশির ভাবনার মাঝে আবরার ফিটফাট হয়ে আরশির সামনে এসে দাঁড়ালো। আরশি কে পা থেকে মাথা পর্যন্ত স্ক্যান করলো সে। চোখ ছোট ছোট করে তাকালো আরশি। ঝাঁ*ঝা*লো কণ্ঠে বললো,

— এভাবে লু*চু ছেলেদের মতো তাকাচ্ছেন কেনো? নিজের নজর সংযত করুন।

আরশির কথা কানে তু*ল*লো না আবরার। আরশি কে আরও একবার প*র*খ করে ঠোঁট বা*কি*য়ে হাসলো সে। বললো,

— আমাকে লু*চু*র মতো তাকাতে তো তুমি বা*ধ্য করলে। আমার কি দো*ষ? সকাল সকাল এভাবে এ*লো*মে*লো হয়ে আমার সামনে বসে থাকলে আমার নজর তো যাবেই। ওয়েট,, ওয়েট তুমি আবার আমাকে এট্রাক্ট করার চেষ্টা করছো না তো মিসেস অদ্ভুত চোখওয়ালি? দেখো আমার অনেক জ*রু*রী একটা মিটিং আছে। তুমি এভাবে এই সময় আমাকে এট্রাক্ট করতে পারো না। রাতে যখন ফ্রি থাকবো তখন এট্রাক্ট করিও কেমন?

আবরারের কথায় কান গ*র*ম হয়ে আসলো আরশির। কোনোরকমে একবার নিজের দিকে তাকালো সে। নিজের অবস্থা দেখে আরও লজ্জা পেলো আরশি। ওড়না তার গায়ে নেই বললেই চলে। সে সম্পূর্ণ এ*লো*মে*লো বলা যায়। এতক্ষন ধরে এভাবে এ*লো*মে*লো হয়ে আবরারের সামনে ছিলো তা খেয়াল ই করে নি সে। আরশি তা*ড়া*হু*ড়ো করে ওড়না গায়ে জড়িয়ে নিলো। দ্রুত পায়ে বেড থেকে নিচে নামলো। উদ্দেশ্য একটাই, এক দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিবে। তাহলে যদি এই লজ্জা থেকে বাঁচা যায়!

পরিকল্পনা অনুযায়ী দৌড় দিলো আরশি। তবে ওয়াশরুম অব্দি পৌঁছাতে পারলো না। তার পূর্বেই হাত ধরে ফেললো আবরার। এক টা*নে নিজের কাছে নিয়ে এসে কোমর জড়িয়ে ধরলো। হঠাৎ স্পর্শে চ*ম*কা*লো আরশি। আবরার ফিসফিস করে বললো,

— পা*লা*চ্ছ কেনো মিসেস অদ্ভুত চোখওয়ালি? তোমাকে তো আমি সা*হ*সী ভেবেছিলাম। এখন দেখি তুমি মহা ভী*তু।

ছাড়া পাওয়ার জন্য ছ*ট*ফ*ট করতে লাগলো আরশি। আমতা আমতা করে বললো,

— পা*লা*চ্ছি কে বললো? আমি তো ফ্রেস হতে যাচ্ছিলাম।

ছাড়লো না আবরার। এক হাত উঠিয়ে আরশির ছোট ছোট চুল কানের পিছে গুজে দিয়ে বললো,

— তোমার কপালে পড়ে থাকা চুলগুলো আলতো হাতে সরিয়ে দেয়ার অধিকার টা সারাজীবনের মতো আমার হয়েছে ভাবতেই অনেক ভালো লাগছে জানো?

নিভু নিভু চোখে আবরারের দিকে চাইলো আরশি। দেখলো লোকটার ঠোঁটে তৃপ্তির হাসি। আরশি চেয়ে রইলো সেই হাসির পানে। নিজের বে*হা*য়া দৃষ্টি বহু ক*ষ্টে সংযত করলো আরশি। ন*ড়া*চ*ড়া করে বললো,

— ছাড়ুন দেখি। আমি ফ্রেস হবো তো। নিচেও তো যেতে হবে। অনেক লেট হয়ে গেছে অলরেডি।

এবার একটু গম্ভীর হলো আবরার। আরশির কোমর আরেকটু শ*ক্ত করে আঁ*ক*ড়ে ধরে বললো,

— আমার একটা জ*রু*রী মিটিং আছে। তাই যেতে হবে। সন্ধ্যার পর বাড়ি ফিরবো হয়তো। তুমি সাবধানে থেকো, ঠিকমতো খাবার খেও। আর আমার মায়ের কথামতো চলার চেষ্টা করো। আমার মা কিন্তু অনেক ভালো মানুষ। একটু গম্ভীর তবে তুমি ক*ষ্ট পাবে এমন কিছু কখনোই বলবে বা করবে না। হয়তো হুট করে তোমাকে মেনে নিতে তার একটু ক*ষ্ট হতে পারে। তবে একবার তার মনে জায়গা করে নিতে পারলে তোমাকে মাথায় তু*লে রাখবে। কয়েকদিন থাকলে এমনিতেই বুঝতে পারবে আমার মা কেমন মানুষ। আর কেউ উ*ল্টা*পা*ল্টা কিছু বললে মন খা*রা*প করবে না। যদিও তুমি কারোর কথা গায়ে মা*খা*র মতো মেয়ে না আমি জানি তবুও বললাম।

কথা শেষ করে আরশির কপালে একটা চু*মু খেলো আবরার। আর এক সেকেন্ড ও না দাঁড়িয়ে সোজা রুম থেকে বেরিয়ে গেলো সে। আরশি মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে রইলো প্রিয় মানুষটার যাওয়ার পানে। বিড়বিড় করে বললো,

— আমি ভু*ল করি নি এমপি সাহেব। আপনাকে জীবন সঙ্গী হিসেবে নির্বাচন করে আমি কোনো ভু*ল করি নি। বরং আপনাকে সৃষ্টিকর্তা আমার জন্য উপহারস্বরূপ পাঠিয়েছেন।

নিচে নেমে মিসেস বন্যা কে বিদায় জানালো আবরার। মিসেস বন্যা ব্রেকফাস্ট করে যেতে বললেও রাজী হলো না সে। বললো ওখানে গিয়ে খাবে। মিসেস বন্যা ও আর জো*র করলেন না। বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসলো আবরার। গাড়ি তে উঠার পূর্বে হঠাৎ নিজের রুমের বেলকনির দিকে তাকালো সে। আরশি কে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চমৎকার একটা হাসি উপহার দিলো আবরার। আবরার এভাবে হুট করে তাকাবে বুঝতে পারে নি আরশি। তবে আবরারের কাছে ধরা পড়ে যাওয়ায় আর সরলো না সে। আগের জায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। আবরার হাত না*ড়ি*য়ে বিদায় জানালো। আরশি ও নিজের অজান্তেই হাত না*ড়ি*য়ে বিদায় জানালো। ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি চলে আসলো তার। আবরারের গাড়ির যাওয়ার পানে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সে যতক্ষণ দেখা যায়।

চলবে?

(আস্সালামুআলাইকুম। আজকের পর্ব ছোট হয়েছে জানি তবে এটা বোনাস মনে করুন। কালকের পর্বে সবাই আবরার আরশি কে অনেক মিস করেছেন তাই আজকেই আরেক পর্ব দিলাম। কেমন লেগেছে আজকের পর্ব জানাবেন অবশ্যই আর ভু*ল-ত্রু*টি ক্ষ’মা’র দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here