তোমাতে আসক্ত পর্ব ২৬

#তোমাতে-আসক্ত

নীলচুড়ি (রোকসানা)

পর্ব (২৬)

মাহিরের চোখ আবার ভিজে গেলো। চোখের পানি মুছে নিয়ে নিজের রুমে চলে আসে। অথৈর দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘনিশ্বাস নিয়ে ওর পাশ থেকে একটা বালিশ নিয়ে নিলো। মেঝেতে ফেলে শুয়ে পড়তেই অথৈর হিচকির শব্দ পায়। নিজের চোখদুটো হাতদিয়ে ঢেকে নিয়ে অথৈর উদ্দেশ্যে বলে,

“”আরমানকে খুব বেশি ভালোবাসেন তাইনা?””

অথৈর দিক থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে মাহির নিজের মতো করে কথা আউড়াতে লাগে,,

“”আপানার সাথে আজকে খুব গল্প করতে ইচ্ছে করছে,অথৈ। আপনি কি শুনবেন আমার গল্প?””

অথৈ বিছানায় শুয়ে বালিশ ভিজিয়ে মাহিরের কন্ঠ শুনার অপেক্ষায় কান খাড়া করে নিয়েছে। কিন্তু কেন জানি মাহিরের কোনো কথার উত্তর দিতে ইচ্ছে করছেনা। সে মনে প্রানে চাচ্ছে বলতে,হুম,আমি আপনার সব কথা শুনবো মাহির,সব শুনবো।

“”ছোটবেলা থেকেই আমার তেমন কোনো বন্ধু হয়ে উঠেনি। সত্যি করে বলতে গেলে আমার কখনো দরকারি পড়েনি। আমার আম্মু আব্বু সারাক্ষন আমাকে নিয়েই বিজি থাকতেন। তাই তারাই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে যায়। আর আব্বু? সেতো পারলে কাজ রেখে আমাকে নিয়ে সাড়া বাড়ি মাতিয়ে রাখতেন। আম্মুর বকুনি খেয়ে তারপর অফিসে যেতে হতো আব্বুকে। অন্যরা বাবা মা মানে কি বুঝে আমি জানিনা কিন্তু আমার কাছে আব্বু আম্মুকেই মনে হতো আমার পৃথিবী। এমনি হৈ হুল্লোড় দিন কাটাতে কাটাতে আমি ৮ বছরে পা দেয়। সেই খুশিতে আব্বু আমাকে আর আম্মুকে নিয়ে ঘুরতে বের হতে চাই। আমিতো দারুন খুশি। আব্বুর সাথে ঘুরা মানেই নানান অদ্ভূত তথ্য পাওয়া। সবাই রেডি হয়ে গাড়ীতে বসতেই হঠাৎ করেই আমার ইচ্ছে জাগে আজ আমি ড্রাইভ করবো। কিন্তু তখনো আমি গাড়ী ড্রাইভের অ আা ও জানিনা। আম্মু অনেক নিষেধ করা সত্বেও আমার আব্বু রাজি হয়ে যায়। তিনি চাননি আমার জন্মদিনে আমার মন খারাপ থাক। তাই খুশি মনেই আমাকে ড্রাইভিং সিটে বসিয়ে আব্বু পাশে বসে পড়ে যাতে আমাকে শিখিয়ে দিতে পারে। আব্বুর কথা মতো আমি অনেকটাই শিখে গিয়েছিলাম। এক পর্যায়ে আমি আব্বুকে জোর করে সরিয়ে দিয়ে নিজে নিজে ড্রাইভ করতে থাকি। কিন্তু বলেনা মায়ের নিষেধকে অগ্রাহ্য করতে নেই? কিন্তু আমিতো করেছিলাম আর তাই সে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে যায়। আমার এই হাত দিয়ে। অথৈ দেখেন,আমি এই নিজের দুই হাত দিয়ে আমার আম্মু আর আব্বুকে মেরে ফেলেছি।””

মাহির শুয়া থেকে উঠে পাগলের মতো কান্না করতে থাকে আর নিজের হাতদুটো দিয়ে মেঝেতে ঘুষি দিতে থাকে। অথৈ দ্রুত শেয়া থেকে উঠে এসে মাহিরের মাথাটা নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নেয়। মাহির তবুও থামেনা সে অনর্গল পাগলামি করতে থাকে আর কান্না করতে থাকে।

“”অথৈ,আমাকে ছুবেননা,আমি একটা খুনি,নিজের হাত দিয়ে নিজের বাবামাকে খুন করেছি। আমার বেচে থাকার কোনো অধিকার নাই। আমি চাইলেও এই পৃথিবী আমাকে বাচতে দিবেনা।””

মাহিরের পাগলামি দেখে অথৈও অজান্তেই কান্না করে দেয়। আর মাহিরকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে নেয়।

“”মাহির,আপনি কাদবেননা প্লিজ। আপনি কেন খুনি হতে যাবেন আপনি তো ইচ্ছে করে এমনটা করেননি?””

অথৈ মাহিরকে শান্তনা দিয়ে থামাতে পারছেনা। সে কান্না করেই যাচ্ছে।

“”অথৈ,বিশ্বাস করেন এই পৃথিবীতে আমাকে ভালোবাসার মতো কেউ নেই। আমি একদম একা খুব একা।””
“”কে বলেছে কেউ নেই? খালামনিরা আছে। আমি আছি। আমাকে আপনি চোখে দেখতে পারছেননা?””

মাহির অথৈর বুক থেকে নিজের মাথাটা তুলে নিয়ে অথৈর চোখে চোখ রাখে।

“”কিন্তু আপনিতো আমায় ভালোবাসেননা। আপনি আরমানকে ভালোবাসেন। আমি আপনার লাইফে জোর করে ঢুকে পড়েছি। আপনাকে জোর করে এখানে এনে বন্দি করে রেখেছি। আপনি তো নিজের ইচ্ছায় আমার পাশে থাকছেননা।””

অথৈ কিছু বলতে নিলে মাহির অথৈকে থামিয়ে দেয়। অথৈকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শুয়িয়ে দেয়।

“”চিন্তা করবেননা। আমি ঠিক আছি। একটু ইমোশনাল হয়ে পড়েছিলাম। ভাববেননা আপনাকে উমোশনাল ব্লেকমিল করছি!””

মাহির নিজের চোখের পানি হাত দিয়ে মুছে নেয়। আর অথৈর শরীরে চাদর দিয়ে ঢেকে দেয়।

“”ঘুমিয়ে পড়ুন। অনেক রাত হয়ে গেছে।””

মাহির অথৈকে রেখে ওয়াশরুমে চলে যায়। অথৈর চোখ আবার ভিজে যায়।

সকালের মিষ্টিরোদে অথৈর ঘুম ভেংগে যায়। চোখ মেলতেই মাহিরকে ওয়াশরুম থেকে বের হতে দেখে। টাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে এদিকেই আসছে। অথৈ এটা ভেবে পায়না ও যখন ঘুম থেকে উঠে ঠিক তখনি কি উনার সাওয়ার নিয়ে বের হতে হয়? মাহিরের দিকে ভালোভাবে তাকাতেই মুখটা কেমন কেমন জানি লাগছে। কাল রাতের কথা মনে পড়তেই অথৈর মনটা ছেত করে উঠে। উনি এতো কষ্ট মনে পুষে রেখেছিলেন? উনাকে দেখে কখনো বুঝতেই পারিনি। কখনো কি বুঝার চেষ্টা করেছিলাম?

মাহির একটা নেভি ব্লু কালারের শার্ট হাতে নিয়েই অথৈর দিকে তাকায়। কি মনে করে শার্টটা রেখে পাশ থেকে একটা টি-শার্ট নিয়ে পড়ে নেয়।

“”আজকে আমার শার্ট ছিড়তে ইচ্ছে করছেনা। আপনি নির্ভয়ে পড়তে পারেন।””

অথৈর কথায় হালকা হাসি উপহার দিয়ে চুলটা আচড়াতে থাকে মাহির।

অথৈর এবার রাগ হলো। আমি বললাম শার্টটা পড়তে তাও পড়লোনা? নাকমুখ ফুলিয়ে মাহিরের সামনে দাড়ায়।

“”বলছিনা আজকে আমি শার্ট ছিড়বোনা। তবুও পড়ছেননা কেন?””
“”এমনি!””
“”এমনি আবার কি? আপনি কি এখনো পিচ্ছি আছেন যে টি-শার্ট পড়তে হবে? আপনি এখন বিবাহিত।””
“”আপনাকে কে বললো বিবাহিতরা টি-শার্ট পড়েনা?””
“”জানিনা। আপনি ওটা পড়বেন নাকি তাই বলেন।””
“”ইচ্ছে করছেনা।””

অথৈ রাগে দাত কড়মড় করতে করতে মাহিরের টি-শার্টে হাত দিতে গেলেই ওর হাতদুটো মাহির ধরে ফেলে।

“”আমি বাইরে অপেক্ষা করছি। আপনার হাতে ৩০ মিনিট আছে। এর মধ্যে রেডি হয়ে আসুন। মনে থাকে যেন Only 30 minutes.””

মাহির আর কিছু না বলে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। অথৈ খুশিতে লাফাতে থাকে তারমানে উনি আজকে আমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবেন? How romantic! অথৈ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দ্রুত ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো।

মাহির বাইরে অপেক্ষা করতে করতে বোর হয়ে যাচ্ছে। হাতের ঘড়িটাতে তাকাতেই আরো বেশি রাগ হয়। ৩০ মিনিটের জায়গায় ১ ঘন্টা হতে চলেছে অথচ উনার আসার নাম গন্ধই নেই!! মাহির খানিকটা বিরক্ত নিয়ে অথৈকে ডাকার জন্য পা বাড়াতেই চোখগুলো বড় হয়ে যায়। সামনে এ সে কাকে দেখছে? লাল শাড়ীতে অথৈকে পুরো প্রথম দিনের মতো বউ বউ লাগছে। মাহির মুগ্ধ নয়নে অথৈকে দেখতে লাগে।

“”আমি এখানে আপনি ওইদিকে কি দেখছেন?””

মাহিরের ভ্রম কাটতেই অথৈকে নািজের পাশে দেখতে পায়। খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে যায়।

অথৈ এদিক ওদিক তাকিয়ে কোথাও আজিজকে দেখতে না পেয়ে মাহিরকে প্রশ্ন করে।

“”আজিজ ভাই কোথায়?””
“”আসেনি।””
“”তাহলে গাড়ী চলাবে কে?””
“”আপনি।””
“”আমি মানে?””
“”সেদিন তো আপনি ড্রাইভ করেই আমাকে বাসায় নিয়ে এসেছেন। ওইদিন তো আপনার ড্রাইভিং দেখার সুযোগ হয়নি। তাই আজকে আফসোসটা পুরন করে নিবো। নিন তাড়াতাড়ি উঠুন।””

অথৈ বিড়বিড় করে মাহিরকে গালি দিতে থাকে। এতো কষ্ট করে শাড়ি পড়লাম,সাজুগুজো করলাম ড্রাইভার হওয়ার জন্য? ইচ্ছে করছে এই গাড়ীটা উনার গলার সাথে ঝুলিয়ে দেয়। অসহ্য!!

মাহির তখন থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে অথৈকে দেখে নিচ্ছে। হয়তো আর কোনোদিন দেখা হবেনা। মাহিরের বেশ মন খারাপ হলো আজকেই কেন উনাকে এভাবে শাড়ী পড়তে হলো? উনি কি আমাকে একটা কাজও ঠিকমতো করতে দিবেননা?? আমি যে আরেকবার তার শাড়ীর কুচির প্রেমে পড়ে গেলাম!!

মাহিরের লুকিয়ে লুকিয়ে তাকানোটা অথৈর বেশ মজা লাগছে। মুচকি মুচকি হাসিও দিচ্ছে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here