তোমাতে আসক্ত পর্ব ২৫

#তোমাতে-আসক্ত

নীলচুড়ি (রোকসানা)

পর্ব (২৫)

অথৈ মাহিরের থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলেও কেন জানি পারলোনা। মাহিরের ছোয়ায় নিজের মধ্যে এক ভালোলাগার শিহরন কাজ করতে লাগলো। যা তার মন উপভোগ করতে চাইছে। অথৈর মনকে সায় দিতে খুব ইচ্ছে করলো। মাহিরকে আলতো করে জড়িয়ে নিয়ে চোখ বুঝতেই আরমানের মুখ ভেসে উঠলো,,

“”অথৈ!!””

আরমানের মুখে নিজের নাম শুনেই ঝট করে চোখ মেলে ফেললো অথৈ। মাহিরকে ধাক্কা দিয়েও যখন সরাতে পারলোনা ওর মুখটা উচু করে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিলো।

মাহির বেশ অবাক হয়ে অথৈর কাছ থেকে সরে আসলে অথৈ উঠে বসে। মাহির অথৈর দিকে করুনভাবে তাকাতেই ওর মুখ থেকে অস্পষ্ট স্বরে শুনতে পেলো,

“”আরমান!!!””

মাহির অথৈর দিকে হাত বাড়াতে নিলে অথৈ চিৎকার করে উঠে।

“”বের হয়ে যান এই রুম থেকে। আমার চোখের সামনে থেকে চলে যান।””

মাহির আর এক মুহুর্তও সেখান থাকলোনা। দ্রুত বাসা থেকে বেড়িয়ে এলো।

“”আজিজ,গাড়ী স্টার্ট দাও।””

আজিজ গাড়ীতে বসে পড়লো। গাড়ী চালাতে চালাতে নিজের সামনে থাকা আয়নায় নিজের স্যারকে দেখতে লাগলো। চোখ লালবর্ন হয়ে আছে। কিন্তু সেটা রাগ নয়,চাপা কষ্টের। পুরোচোখ ভিজে গেছে। পানি চিকচিক করছে মনে হচ্ছে একটু ছুয়ে দিলেই সকল বাধা পেরিয়ে গাল বেয়ে নিচে নেমে আসবে। আজিজের মনেও হালকা দাগ কেটে গেলো। আজ ২ বছর ধরে স্যারের সাথে আছে কই কখনোতো এমন দেখিনি। অথৈ মেম আসার পর থেকে স্যারের মনটা সবসময় মেঘলা হয়ে থাকে। এই বিয়েতে কি উনি খুশি নন? খুশি হবেনই কি করে হুট করে বিয়ে হয়ে গেলো,মেয়ের ব্যাপারে খোজ নেওয়ার সময়টুকুও পায়নি। আমার বিয়ের সময় তো কত খোজ খবর নিয়ে তারপর বিয়ে হলো। আর স্যারের মতো এমন নামিদামী লোকের এমন হুট করে বিয়ে হয়ে গেলো?””

“”স্যার,কোনো সমস্যা?””

আজিজের কথায় কোনো উত্তর না দেওয়ায় বুঝতে পারলো উনি হয়তো নিজের মধ্যে নেই। কোনো ভাবনার গভীরে ডুব দিয়েছেন। এমন সিচেয়েশনে ডিস্টার্ভ না করাটাই বেটার হবে ভেবে আজিজ নিজের কাজে মনোনিবেশ করলো।

আজ ক্লাসে কোনো পড়াই ঠিকমতো পড়াতে পারলোনা মাহির। বুকের ভেতরে চিনচিন ব্যথাটা একটু পরপর নাড়া দিয়ে উঠছে। আর চোখের কোনে পানি জমে যাচ্ছে। এভাবে কি ক্লাস নেওয়া যায়??? মাহির কিছু না বলে ক্লাস থেকে বেড়িয়ে এলো। প্রিন্সিপালের সাথে কথা বলে ভার্সিটি থেকে বেড়িয়ে নিজের গাড়ীতে বসে পড়ে।

“”আজ,এতো তাড়াতাড়ি আপনার ক্লাস শেষ,স্যার?””
“”বাগানবাড়ীতে চলো আজিজ।””

বাগান বাড়ী নাম শুনেই আজিজের বুজতে বাকি রইলোনা স্যারের মনের অবস্থা কি রকম।

“”আম্মু,আব্বু আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। আমাকেও তোমাদের কাছে নিয়ে যাওনা। নিজেকে বড্ড একা একা লাগে। আমি আর নিজেকে বয়ে নিয়ে যেতে পারছিনা। প্লিজ আম্মু নিয়ে যাওনা। তোমার কোলে মাথা রেখে ঘুমাতে ইচ্ছে করছে। তোমার হাতের খাবার খেতে ইচ্ছে করছে। আব্বু তুমিও কেন আমার কথা শুনোনা? আমার সাথে খেলবেনা? ঘুরতে নিয়ে যাবেনা? তুমিতো বলেছিলে আমার কাধে ভর করে মসজিদে নামাজ পড়তে যাবে তাহলে আজ কেন নেই তোমরা? আমাকে ছেড়ে কেন চলে গেলে??? কেন আম্মু???””

মাহির তার মা-বাবার কবরকে জড়িয়ে ধরে মনখুলে কাদতে লাগলো। হয়তো এই চোখের পানির সাথে নিজের কষ্টগুলো চলে যাবেনা কিন্তু মনটা একটুও তো হালকা হবে??

বাবা-মায়ের কবরের পাশেই মাহির কাদতে কাদতে ঘুমিয়ে পড়ে। আজিজ ডাকার সাহস পেলোনা। থাকনা কিছুটা সময় উনাদের কাছে।

বাসায় পৌছাতে পৌছাতে রাত হয়ে গেলো মাহিরের। দরজায় নক করতেই অথৈ এসে খুলে দিলো।

“”সারাদিন কোথায় ছিলেন,আপনি?””

অথৈর কথার জবাব না দিয়ে ভেতরে ডুকে গেলো সে। অথৈও পেছন পেছন এসছে আর প্রশ্ন করে যাচ্ছে।

“”কি হলো এমন চুপ করে আছেন কেন? এতবড় বাড়িতে আমার বুঝি ভয় লাগেনা? এভাবে আমাকে একা রেখে চলে যেতে আপনার বিবেক বাধা দিলোনা?? একটাবার বলে যাওয়ার প্রয়োজনবোধও করেনি? এই আপনার ভালোবাসা??””

মাহির কোনো প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে। হাতে মুখে পানি ছিটিয়ে নিয়ে বেড়িয়ে আসে।

“”আপনি কথা বলছেননা কেন? কি সমস্যা কি আপনার??””
“”খাবার খেয়েছেন?””
“”আমি আপনাকে কি বলছি আপনার কানে ঢুকছেনা? আগে ওগুলোর উত্তর দিন।””

মাহির নিজের ফোনটা বের করে রেষ্টুরেন্টে খাবারের জন্য অর্ডার দিতে নেয়। কিন্তু অথৈ তখন রাগের চরম পর্যায়ে। সে ফোনটা কেড়ে নিয়ে আছাড় মারে। মাহির শুধু একবার ফোনের দিকে চোখ বুলিয়ে নিয়ে রান্নাঘরে চলে গেলো।

অথৈ পেছন থেকে তারমতো কথা বলেই যাচ্ছে। তার ইচ্ছে করছে মাহিরের চুলগুলো ছিড়ে ফেলে পারলে মাহিরের পুরো শরীর খাচমি দিয়ে ভরে ফেলে। কিন্তু আজ কেন জানি তা করতে পারছেনা। তার তো আজ রাগ নয় অভিমান হচ্ছে। খুব অভিমান!!

“”নিন,খাবারটা খেয়ে নিন।””

অথৈকে টান দিয়ে চেয়ারে বসিয়ে নিয়ে খাবারের প্লেটটা সামনে এগিয়ে দেয় মাহির।

“”আমি কিছু খাবোনা। আগে আপনি আমার কথার জবাব দিন। জবাব না দিলে আমি কিছু খাবো….””

অথৈর মুখে মাহির খাবার গুজে দেওয়ায় অথৈ আর কিছু বলতে পারলোনা।

“”আমি তো বলছি কিছু খাবো…””

অথৈ কথা বলার জন্য মুখ খুললেই মাহির খাবার গুজে দিচ্ছে যার ফলে সে ঠিকমতো কিছু বলতে পারছেনা। রাগে অথৈর চোখ লাল হয়ে রসগোল্লার মতো বড় হয়ে যাচ্ছে।

এত খাবার চিবুতে গিয়ে অথৈর হিচকি উঠে যায়
মাহির দ্রুত পানিটা মুখে নেয়। কিন্তু অথৈ পানি না খেয়েই রুমে ছুটে চলে আসে। বিছানায় শুয়ে চাদরটা দিয়ে মুখ ঢেকে নেয়। আর চোখের পানি দিয়ে বালিশ ভেজাতে থাকে।

মাহিরের কিছু খেতে ইচ্ছে হলোনা। কেন খাবে সে? খেয়ে কিইবা হবে? তার তো বাচার কোনো ইচ্ছে নেই। মরে গেলেই বাচে। আত্মহত্যা পাপ না হলে হয়তো আজি গলায় রশি দিয়ে ফ্যানের সাথে ঝুলে থাকতো নয়তোবা কোনো রোডের পাশে রক্তাক্ত শরীরে গড়াগড়ি খেতো।

মাহিরের চোখ আবার ভিজে গেলো। চোখের পানি মুছে নিয়ে নিজের রুমে চলে আসে। অথৈর দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘনিশ্বাস নিয়ে ওর পাশ থেকে একটা বালিশ নিয়ে নিলো। মেঝেতে ফেলে শুয়ে পড়তেই অথৈর হিচকির শব্দ পায়। নিজের চোখদুটো হাতদিয়ে ঢেকে নিয়ে অথৈর উদ্দেশ্যে বলে,

“”আরমানকে খুব বেশি ভালোবাসেন তাইনা?””

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here