তোমাতে আসক্ত পর্ব ২৮(শেষ)

#তোমাতে-আসক্ত

নীলচুড়ি (২৮)

পর্ব (২৮)

মাহির অধির আগ্রহে অথৈর দিকে তাকিয়ে রয়েছে। অথৈ মাহিরের ঠিক কাছাকাছি এসে দাড়িয়ে তার চোখের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। অথৈর রক্তরাঙা চোখ দেখে মাহির ভয় পেলে যায়। অথৈ তার চোখের পলক না ফেলেই মাহিরের টি-শার্ট দুহাতে খামচে ধরে। আর মাহিরকে অবাক করে সজোরে টান দিয়ে ছিড়ে ফেলে।

“”আমার খুব শখ ছিলো আপনার একটা টি-শার্ট ছিড়বো। শেষ ইচ্ছেটা পুরন করে নিলাম। আসতে পারেন।””

মাহির সেখানে আর এক মুহুর্তও দাড়ালোনা। নিজের নিশ্বাসটাকে বন্ধ রেখে চলে এসেছে। কিছু কিছু ভালোবাসার পুর্নতা না পাওয়াটাই হয়তো বেশি মানানসই হয়।

“”দুদিনেই তোর শরীরের কি অবস্থা হয়েছে,অথৈ? একটু তো নিজের খেয়াল রাখবি? মাহিরের জন্য যদি তোর এতোই কষ্ট হয় তাহলে ওর কাছে চলে যাচ্ছিস না কেন? শুধু শুধু নিজেও কষ্ট পাচ্ছিস আর ওকেও কষ্ট দিচ্ছিস। তুই আসলে কি চাস অথৈ?””

বাবার কথায় অথৈ খাবারের প্লেটটা সরিয়ে উঠে চলে আসে। পেছন থেকে বাবার ডাক তাকে দমাতে পারেনি। আমি কি চাই আমি নিজেই জানিনা,তোমাকে কি বলবো বাবা?? তোমার মেয়ের ইচ্ছে শক্তি লোপ পেয়েছে। সে মনে প্রানে চাচ্ছে মাহিরের কাছে চলে যেতে কিন্তু অদৃশ্য এক বাধা তাকে যেতে দিচ্ছেনা।

অথৈ সারারাত কান্না করতে করতে বালিশ ভিজিয়ে ফেলেছে। একটু পর পর ফোন চেক করছে কিন্তু মাহিরের কোনো কল বা মেসেজ সে পায়নি। উনি এতো দ্রুত আমাকে ভুলে গেলো? কাছে নাইবা আসলো একটাবার কি ফোন করে জানতে ইচ্ছে করেনা আমি কেমন আছি??? আমি কি এতোটাই পর হয়ে গেলাম??

অথৈর খুব ইচ্ছে হলো মাহিরকে কল দিয়ে ইচ্ছে মতো বকে নিতে কিন্তু কেন জানি পারলোনা। ফোনটা ঢিল মেরে ফেলে দিলো। কান্না করতে করতে এক সময় চোখ লেগে আসে। গভীর ঘুমে তলিয়ে যায়।

“”অথৈ,তুমি আবার কান্না করছো? তোমার কান্না আমার সহ্য হয়না তুমি জানোনা? আমার যে খুব কষ্ট হয়।
“”সরি আরমান। আমি ইচ্ছে করে তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনি। আরমান তোমাকে একটু জড়িয়ে ধরি? আমার খুব জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে।””
“”কাকে! আমাকে নাকি মাহিরকে?””
“”….””

অথৈ চুপ করে ড্যাবড্যাব করে আরমানের দিকে তাকিয়ে রইলো।

“”মাহির ভাইয়াকে খুব ভালোবেসে ফেলোছো তাইনা?””
“”আরমান!””

আরমান অথৈর সামনে এসে ওর চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,

“”পাগলি,আমার ছেলেমানুষির প্রমিস তুমি এখনো ধরে রেখেছো? আমাকে দেওয়া ওই ছোট্ট প্রমিস যে তোমাকে এতো কষ্ট দিচ্ছে তার জন্য আমার কতটা কষ্ট হচ্ছে জানো? তখন তো আমি না বুঝেই তোমার কাছে প্রমিস করিয়ে নিয়েছিলাম যে আমাকে ছাড়া তুমি আর কাউকে ভালোবাসবেনা। তখন কি জানতাম ভালোবাসা কখনো প্রমিসে আটকে থাকেনা?? জানলে এমন প্রমিস আমি কখনো করাতামনা অথৈমনি। এই আরমান তোমাকে অনেক ভালোবেসেছে কিন্তু কখনো তার চোখের পানি তোমার চোখে পানি আনতে পারেনি। কিন্তু মাহির ভাইয়ার চোখের পানি ঠিকই পেরেছে। অথৈ আমার প্রতি তোমার ভালোবাসা না মায়া কাজ করতো। আজ তোমাকে তোমার প্রমিস থেকে মুক্ত করে দিলাম। মনে রাখবে তোমার চোখের পানি নয় তোমার মুখের হাসিতেই আরমান হাসে। ভাইয়া তোমার জন্য অপেক্ষা করছে অথৈমনি!””

অথৈ বিছানা থেকে লাফ দিয়ে উঠে বসে। চারপাশে আরমানকে খুজতে থাকে কিন্তু কোথাও সে আরমানকে দেখতে পায়না। তবে কি সে এতক্ষন স্বপ্ন দেখছিলো??? বাহিরের রোদের আলো অথৈর গালটা ছুয়ে জানান দেয় সকাল হয়ে গেছে। অথৈ গুটি গুটি পায়ে জানালা থেকে পর্দাটা সরিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকে। আজকের সকালটা অন্যরকম লাগছে। খুবই মিস্টি অথৈ প্রান ভরে নিশ্বাস নিয়ে চেচিয়ে ফুল্লরীকে ডাকতে লাগে।””

“”ফুল্লরী এক কাপ কড়া করে চা বানাতো। মনটা যেন তোর নামের মতো ফুরফুর হয়ে যায়।””
“”অহনি আনতাছি আপা।””

অথৈ সাওয়ার নিয়ে বের হয়ে আসে। সেই লাল শাড়ীটা পড়ে নিয়ে হালকা সেজে নেয়।””

“”আপা আপনি কি কোনোহানে যাবেন?””
“”হুম,আমাকে কেমন লাগছেরে?””
“”পুরাই টুকটুক বউ।””
“”টুকটুক বউ মানে?””
“”আমাগো গেরামে লালশাড়ী পড়া বউগোরে ভালোবেসে টুকটুক বউ বলে।””
“”টুকটুক হোক আর ঠুকঠুক হোক বউ লাগলেই হলো।””
“”হ,নেন চাটা খেয়ে বলেন তো কেমন হয়ছে?!””

অথৈ অনেক্ষনধরে ভার্সিটির ভেতর ঘুরঘুর করে পায়চারী করছে।। ঠিক জায়গায় আসলাম নাকি কে জানে। আজিজ ভাইতো এই ভার্সিটির কোথায়ই বললো, ডিপার্টমেন্টও ঠিক আছে। উনার কথা অনুযায়ী মাহির এখন ক্লাসে আছে। কি করি? হাত পা কেমন ঠান্ডা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। অস্থির অস্থিরও লাগছে একা একা আসা ঠিক হয়নাই ফুল্লরী নিয়ে আসা দরকার ছিলো। এমন যদি হয় উনাকে দেখে আমি ওখানেই হার্টঅ্যাটাক করে বসছি। তখন কে আমাকে হসপিটালে নিয়ে যাবে? হার্টবিট যেভাবে দৌড়াচ্ছে ৯০%সিউর আমি হার্টঅ্যাটাক করবো। এখন কি করি??!!!

অথৈ শাড়ীর কুচিটা ঠিক করে কয়েকবার লম্বা নিশ্বাস নিলো। তারপর হাটা ধরে। কয়েককদম হাটতেই মাহিরের কন্ঠ পায় অথৈ।

মাহির ভেবেছিলো কয়েকদিন ভার্সিটিতে আসবেনা কিন্তু সারাদিন একা একা বাসায় থাকলে একাকিত্ব গ্রাস করে নেয় যেটা একদিনেই সে ভালো করে বুঝে ফেলেছে। খালামনিকে ফোন দিয়ে বলে দিয়েছে ইমিডিয়েটলি বাসায় আসতে নাহলে তার ভাগিনাকে গলায় রশি দিয়ে ঝুলতে দেখবে। ক্লাসে ঠিকমতো পড়াতে না পারলেও সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে।

মাহির হোয়াইট বোর্ডে কিছু একটা একে স্টুডেন্টদের দিকে তাকিয়ে লেকচার স্টার্ট করলো,

“”স্টুডেন্টস..””

মাহির আর কিছু বলার সুযোগ পেলোনা। কোনো এক লালপরী এসে তাকে গভীরভাবে জড়িয়ে ধরে আছে। যার দিকে তাকাতে হয়নি শুধু তার নিশ্বাসের শব্দ বুঝে ফেলেছে কে সে।

মাহিরও চোখ বুঝে অথৈকে জড়িয়ে নিতে যাবে ঠিক তখনি ক্লাসের ছেলেমেয়েরা সিটি দিতে থাকে আর হাসাহাসি করতে থাকে।

“”এসব কি করছেন অথৈ? সবাই হাসছে। ছাড়ুন আমাকে।””
“”আমার ভয় লাগছে।””
“”কেন?””
“”তেলাপোকা।””
“”কোথায় তেলাপোকা?””

অথৈ মাহিরকে ছেড়ে দিয়ে বিড়বিড় করে বলে,

“”আমার এক্ষুনী আপনার বাসায় যেতে হবে। আমার কিছু ইম্পোর্টেন্ট জিনিস রয়ে গেছে।””
“”কিন্তু…”””

মাহিরের কথা না শুনেই অথৈ বেরিয়ে আসতে থাকে।

সেদিনের ন্যায় আজকেও অথৈ গাড়ী চালাচ্ছে। খুব মনোযোগ দিয়েই চালাচ্ছে নাহলে মাহিরের চোখে চোখ পড়লে এখন লজ্জায় মরে যাবে যে। সে এখন কোনোভাবেই মাহিরের দিকে তাকাবেনা।

মাহিরও চুপচাপ সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ অথৈর আগমনটা কি আসলেই সত্যি না কি মিথ্যা কিছুতেই বুঝতে পারছেনা। আমি কি পাগল হয়ে গেছি??

গাড়ী থেকে নেমে সোজা মাহিরের রুমে ঢুকে কিছু খুজার চেষ্টা করতে লাগে অথৈ। মাহির দুয়ারের সামনে দাড়িয়ে অথৈর কান্ডকারখানা পর্য়বেক্ষন করছে।

দুর! কি করতে এসে কি করছি। হঠাৎ করে এতো লজ্জা আমার কোথা থেকে আসলো?

“”কিছু পেলেন কি?””

মাহিরের কন্ঠে অথৈ কেপে উঠে। ওয়াড্রভের ড্রয়ার খুলে সবজিনিস আউলাজাউলা করতে থাকে। কিছু খুজতে চাইলে তো পাবো??

অথৈ বেশ অস্থিরতা নিয়ে খুজাখুজি করায় ব্যাস্ত।

মাহির মুচকি মুচকি হাসি নিয়ে অথৈর দিকে এগিয়ে আসে। পিঠভর্তি চুলগুলো সরিয়ে অথৈর ঘাড়ে একটা চুমু খেয়ে নেয়।

“”অভিনয়টা খুব বাজে হচ্ছে,তোথৈপাখি।””
“”কিসসসের অঅভিনয়য়য়?””

অথৈ তুতলিয়ে কথা বলতে বলতে সরতে চায়। কিন্তু মাহির অথৈকে আরো চেপে ধরে।

“”স্টুডেন্টভরা ক্লাসে আমাকে জড়িয়ে ধরতে লজ্জা লাগেনি আর এখন এতো লজ্জা?””
“”আমি কি ইচ্ছে করে…””
“”আমি খুব ভালো করেই জানি আপনি তেলাপোকা ভয় পাননা। মিথ্যেটাও গুছিয়ে বলতে পারেননি??””
“”তেলাপোকা দেখে তো ভয় পায়না কিন্তু আপনার ক্লাসে অনেকবড় তেলাপোকা ছিলো তাই…””

মাহির নিজের একটা হাত শাড়ির ভাজের নিচ দিয়ে অথৈর পেটে স্পর্শ করে আরেকটু নিজের দিকে নেয়।

“”আমার থেকেও বড় তেলাপোকা?”””

অথৈ কি বলবে বুঝতে পারছেনা। তার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। এতোটা লজ্জার শিকার হবে জানলে সে কখনো আসতোনা!!!”””

অথৈকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয় মাহির।

“”কি হলো বললেননা,আমার থেকেও বুঝি অনেক বড় ছিলো?”””

অথৈ মাহিরের দিকে তাকাতে পারছেনা। চোখ বন্ধ করে নিয়েছে। কিছুটা কাপতে থাকে। লজ্জায় নাক,মুখ লাল হয়ে গেছে।

“”আপনার সব জিনিস আমি আজিজকে দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি। তারপরও আপনি ইম্পোর্টেন্ট জিনিস আমার ভার্সিটিতে খুজতে গিয়েছেন???”””
“”আরে ওটা….””
মাহির নিজের আংগুল দিয়ে অথৈর ঠোট চেপে ধরে।

“”হুশশশশ! আপনার কি মনে হয় আমি কিছু বুঝিনা? এবার যখন নিজের ইচ্ছায় এ বাড়িতে এসেছেন আর বের হতে পারবেননা। অনেক কষ্ট দিয়েছেন আমায় শাস্তি তো আপনাকে পেতেই হবে।””

অথৈ ভয়ে নিজের শাড়ি চেপে ধরে। মাহির ওকে কোলে নিয়ে বিছানায় শুয়িয়ে দিয়ে নিজেও শুয়ে পড়ে।

“”আমি বাসায় যাব…””

মাহির নিজের হাত দিয়ে অথৈর মুখ চেপে ধরে পকেট থেকে ফোন নিয়ে খালামনিকে কল দেয়।

“”খালামনি আগামী সাতদিন তুমি বাসায় আসবেনা। যদি আসো তাহলে আমি বের হয়ে যাবো।””

মাহির টুপ করে কলটা কেটে ফোনটা বালিশের পাশে রেখে দেয়।

“”আপনি এখনো চোখ বন্ধ করে আছেন,তোথৈপাখি? চোখ খুলুন বলছি।””
“”….””
“”কি হলো চোখ খুলবেন নাকি আমি কামড়ে দেবো?””

অথৈ পিঠপিঠ করে চোখ মেলতেই মাহির একটা হাসি দিয়ে অথৈর ঠোটে চুৃুমু খেয়ে নিলো।

“”বেশরমমমমমমমমমমমমমমমমমমম'”‘

সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here