ফুলস্লিভ কামিজের দুই পাশ লম্বা ধারালো পিনের আচড়ে একটানে ছিঁড়ে ফেলল। ইতিমধ্যে জামার বেশিরভাগ জায়গা ছেঁড়া হয়ে গেছে ওদের। যার কারনে আমার শরীরের অনেক অংশ-ই দেখা যাচ্ছে আর সামনে তামাশা দেখতে দাঁড়ানো ভার্সিটির উৎসুক ছেলেদের বেশিরভাগ-ই লোলুপ দৃষ্টি তাকিয়ে আছে আমার অর্ধ-উন্মুক্ত শরীরের দিকে । কেউ কেউ আবার ভিডিও করছে এই দৃশ্য।
“গাইস এক বালতি পানি। কুইক। আকিবডা কৈ গেল শালা বা*; কামের সময় কোনডারেই পাওয়া যায় না ভা**-এর জাতগুলা।”
আমার সবগুলো চুল নিজের হাতের মুঠোয় উপরদিকে টেনে রাখা মেয়েটা বলল। সাথে সাথেই বালতিভর্তি পানি এসে পড়লো আমার গায়ে। ঠান্ডায় শরীরের হাড় পর্যন্ত কাঁপছে। মেয়েগুলো আমার চুলের মুঠি আরও শক্তভাবে চেপে ধরে পেটাতে লাগল। আগে দুইজন ছিল; এখন চার-পাঁচজন মিলে মারছে। মাটিতে ফেলে পা দিয়ে ঠেলছে। এই দৃশ্যে হাততালি আর আনন্দধ্বনি করছে অন্যরা। যতবার আমি ব্যথায় কেঁদে উঠি ওদের ছেড়ে দিতে অনুরোধ করি হাততালির আওয়াজ তত-ই বেড়ে যায়। আমার দুইহাত আমার-ই ওড়না দিয়ে বেঁধে নেওয়া যাতে ওদের কাজে বাধা না আসে। অবশ্য হাত খোলা থাকলেও ওদের মতো ভয়ংকর মেয়েদের সামনে আমি কিছুই না।
ভয়ে লজ্জায় অপমানে আমি কাঁদছি আর আমার অবস্থা দেখে আশেপাশের মানুষ আনন্দে পাচ্ছে। শুধু মার-ই নয়, মারের সাথে ইট-পাথর জুতা কাদার দলা যে যা পারছে আমাকে ছুঁড়ে মারছে। আর আমার গায়ে লাগলেই সবাই মিলে উল্লাসধ্বনি করছে
“এখানে এত ভীড় কিসের? কি করছিস তোরা?”
পিছন থেকে কথাটা শোনামাত্র আমাকে যারা চুলের মুঠি ধরে মারছিল সবাই মুঠি আলগা করে সরে গেল। মানুষজন দুই পাশে সাইড হয়ে রাস্তা ফাঁকা করে দিল। প্রথমে আমি কিছুই বুঝলাম না একটু পরে দেখলাম কালো গেন্জি পড়া লেটেস্ট মডেলের বাইক নিয়ে একজন এগিয়ে আসছে। তার মুখ দেখা যাচ্ছে না কারণ মাথায় হেলমেট। সবার মধ্যে চাপা গুন্জন শুরু হল “ভি.পি আসছে ভি.পি আসছে”। সব মেয়েরা পলকহীন চোখে লোকটার আসার দিকে চেয়ে আছে। আর আমার আত্মা ভয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। তারমানে এই সেই ভি.পি যার গার্লফ্রেন্ডকে অপমান করার কারনে আমার এই অবস্থা।
এবার আসুন পরিচয়টা দিয়ে নেই। আমি সারা। বাবা’মা-র দুইমাত্র সন্তানের ছোট সন্তান। বাবা কলেজের প্রফেসর, মা গৃহিণী। আমার একজন বড় ভাই আছে। অত্যন্ত রাগী, বোনকে চব্বিশ ঘন্টা নজরে রাখে যার দৌলতে আমার একটাও বয়ফ্রেন্ড জুটে না। অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে নতুন ভর্তি হয়েছি। কিন্তু ভার্সিটির প্রথম দিনেই ঝামেলা শুরু।
ভার্সিটির প্রথম দিন। আমি, ফারিহা আর আজমী এক ভার্সিটিতে চান্স পেয়েছি। আমরা তিনজন হচ্ছি একে অপরের জান-প্রান-কলিজা কেউ কাউকে ছাড়া এক সেকেন্ড-ও থাকি না যেন জন্মের আগে থেকেই একজন আরেকজনের বেস্টি ছিলাম। ভার্সিটির প্রথম দিন ভাইয়া আমাকে আর ফারিহাকে নামিয়ে দিয়ে গেল। আর বলে গেল সবাধানে থাকতে কারন এখানকার পোলাপান অনেক ডেন্জারাস আর তাদের অনেক পাওয়ার। আমার ভাই আমাকে নিয়ে সবসময় বেশি চিন্তা করে। কখনোই একা ছাড়ে না।
ফারিহা: ওয়াও সারা দ্যাখ ক্যাম্পাসটা কত্ত বড়! কত সুন্দর। ক্লাস শুরু হতে টাইম আছে চল্ ঘুরে আসি।
আজমী: হ চল্।
অত:পর আমরা তিনজন মিলে ক্যাম্পাস ঘুরছি। যাই দেখি একদম অবাক হয়ে যাই। কত সুন্দর সাজানো-গোছানো সবকিছু। আজমী তো পুরা পাগল হয়ে গেছে। যাই দেখছে সাথেই সাথেই সেলফি নিচ্ছে। এমনকি ডাস্টবিনের সাথেও সেলফি তুলল। একশোরকমের পোজ দিচ্ছে আর আমরা ছবি তুলছি।
“ওই ফারি পাগলরে থামা। মাথামুথা গরম হইয়া যাইতাছে। ক্যামেরা ম্যান পাইছেনি আমগোরে!”
“দোস্ত আরেকটা..আরেকটা ছবি উঠামু।”
সারা: আচ্ছা এত ছবি দিয়া তুই করবিডা কি। তর না দুইদিন আগে ব্রেকাপ হইল।
আজমী: সেইজন্যই তো তুললাম…নতুন একটা পটাইতাছি। ওইটারে ছবি পাঠামু।
সারা: তোরে কি খাওয়াইলে ভালো হবি বল্ তো।
“এই যে এই মেয়েরা এদিকে আসো তো।” ডাক শুনে তিনজনে ঘুরে তাকালাম। খটকা লাগল কিছুটা আমরা তো ক্যাম্পাসে একদম নতুন আমাদের ডাকে কেন?
তিনজন-ই গেলাম।
: জ্বি আপু বলেন।
: তোমরা নতুন? ফার্স্ট ইয়ার?
: জ্বি।
: তোমাদের মধ্যে যেকোনো একজন আসো।
: কেন আপু?
: জুনিয়র জুনিয়রের মতো থাকবে। এত প্রশ্ন করবে না। যা করতে বলছি তাই করো।
আমি গেলাম। সেই মেয়েটা আমাকে অন্য একটা মেয়ের কাছে নিয়ে গেল। মেয়েটা পায়ে পা তুলে ভাব নিয়ে বসে আছে চারপাশে অনেক ছেলেমেয়ে। সবাই তার হুকুম তামিল করতে ব্যস্ত। একটা ছেলে সিগারেট ধরিয়ে মেয়েটার মুখে দিল। আরেক ছেলে কাঁচের ছোট ছোট গ্লাসে কিছু ঢেলে মেয়েটাকে দিচ্ছে। মেয়েটা দেখতে খুব সুন্দর। পরনে স্কিন টাইট টপস আর শর্ট হাফপ্যান্ট, মুখে ভারী মেকাপ, পায়ে হাইহিল, স্ট্রেইট চুল। চেহারাতে অহংকার বোঝা যায়।
মেয়েটি আমাকে দেখেই তার পা এগিয়ে দিল, নে পরিষ্কার কর্।
আমি: মানে? বুঝলাম না।
মেয়েটি রাগী দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকাল। অন্য একটা ছেলে বলল, মেধা আপুর জুতায় কাঁদা লেগেছে। পরিষ্কার করে দে।
আমি: আমি উনার জুতা পরিষ্কার করব কেন? আমি চাকর নাকি উনার?
মেধা: হ্যা চাকর। এখানে যে মেয়েরা পড়তে আসবে সবাই এই মেধার চাকর। মেধার গোলামি খাটবি তো এই ভার্সিটিতে টিকবি।
আমি: স্যরি আপু। আমি এই ভার্সিটিতে নিজের যোগ্যতায় চান্স পেয়েছি। এখানে টিকার জন্য আমি কারো গোলামি খাটব না। আর আমি কারো কেনা চাকরানী নই যে যার তার জুতা পরিষ্কার করব।
“কিহ এত বড় কথা বললি তুই? চিনিস আমাকে, আমাকে চিনিস?” মেধা মেয়েটা বাঘের মতো লাফিয়ে উঠল।
“দেখো মেয়ে নিজের বিপদ ডেকে এনো না। মেধা আপুকে তুমি চেনো না। সো উনি যা বলে তাই করো।”
“স্যরি উনি যা বলে তা আমি করতে পারব না। আর ওনাকে চেনার-ও আমার দরকার নাই।”
বলেই সেখান থেকে চলে এলাম। পরে ভার্সিটির-ই কিছু আপু জানাল এই মেধা মেয়েটা ডেন্জারাস। সে এই ভার্সিটির ভি.পি প্লাস ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানের ছেলের গার্লফ্রেন্ড। তার বাবাও ট্রাস্টি বোর্ডের একজন মেম্বার। ভার্সিটির সব মেয়ে তার আন্ডারে রাখে।
পরেরদিন ভার্সিটিতে এসে আমার সঙ্গে কি কি হলো দেখতেই পেলেন।
ভি.পি বাইকটা আমার মাথা বরাবর ব্রেক কষে হেলমেটটা খুলল। ভি.পি-র চেহারা প্রথমবার দেখে স্তব্ধ হয়ে গেলাম। আমার দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম। হে আল্লাহ! এই পরীক্ষায় ফেললে আমায়? আমি আবার আমার ফেলে আসা অতীতের মুখোমুখি।
চলবে
#তোমারই_আছি_আমি
#sara_Mehjabin
পর্ব-০১