#তোমারই_আছি_আমি
পর্ব-০২
#sara_mehjabin
নিজের চোখকেই বিশ্বাস হতে চাইছে না। এটা কি দেখলাম আমি? আকাশভাইয়া ফিরে এসেছে। তারমানে এই ইউনিভার্সিটির ভি.পি আকাশভাইয়া। আর বড়মামা ভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান। কথাগুলো আগে জানলে কখনো এখানে ভর্তি হতাম না।
আকাশভাইয়া আমাকে দেখে অস্থিরভাবে ছুটে আসল। আমার শরীরে চোখটা খুলে রাখারো শক্তি নেই। তারপরও তাকে একবার দেখার লোভে সব ব্যথা উপেক্ষা করে চোখ খুললাম। সাতটা বছর,, প্রায় সাতটা বছর পর আমার আকাশভাইয়াকে দেখলাম। ওর দিকে একটুও তাকাব না ভাবছি তাও মন চাইছে ওকেই দেখে যাই। তুমি আমাকে এত কষ্ট দিয়েছ এত ঠকিয়েছ যে তোমার মুখ দেখতেও আমার ঘিন্না লাগে আকাশভাইয়া। কিন্তু এতগুলো বছরে তোমার ঐ মুখটা দেখার জন্য আমার চোখ তৃষ্ণার্ত হয়েছিল।
আকশভাইয়া ধীরে ধীরে আমার মাথার কাছে বসল। ব্যথা-যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছি আমি। তা দেখে আকাশভাইয়া দুই চোখ লাল করে ফেলল। শক্তভাবে আঙ্গুলগুলো একত্রে মুষ্টিবদ্ধ করল। ভাইয়ার যখন খুব বেশি রাগ উঠে যায় তখনই এরকম করে।
“কে ওর এই অবস্থা করেছে? এক্ষুনি সামনে আয়।” আকাশভাইয়ার চিৎকারে পুরো ক্যাম্পাস কেঁপে উঠল।
অনেকক্ষণ পার হয়েও ভয়ে কেউ মুখ খুলছে না তাই আকাশভাইয়া আবারো ধমকে উঠল, ওকে কারা কারা র্যাগিং করেছিস স্বীকার কর্। নাহলে এইখানের সবার কপালে দুঃখ আছে।
আচমকা আকাশভাইয়া আমার পাশ থেকে উঠে গেল। ফারিহা আর আজমী দুইজনে আমাকে ধরে রেখেছে। খুব ভয় পেয়ে আছে ওরা। দুজনেই কাঁদছে।
এদিকে আকাশভাইয়া উপস্থিত ছেলেগুলোকে ইচ্ছামতো মারছে। যেহেতু আকাশভাইয়া ভি.পি. তাকে কিছু বলার সাহস কারো নেই। যারা এতক্ষণ আমার মার খাওয়া দেখে মজা নিচ্ছিল তারাই এখন আমার চেয়ে ডাবল মার খাচ্ছে। কিন্তু আকাশভাইয়ার এহেন আচরনে আমি একদম অবাক হয়ে গেলাম। তাহলে কি আজো ও আমার কষ্ট সহ্য করতে পারে না? আমার কষ্টে কষ্ট পায়? কিন্তু তা কেন হবে! আমরা তার কষ্ট-ই সহ্য করতে পারি না যাকে আমরা সত্যি ভালবাসি। আকাশভাইয়া তো আমাকে সত্যি ভালবাসে না। সত্যি ভালবাসলে আমাকে ঠকাত না।
আজমী: খুব ভালো হইছে। উচিত শিক্ষা হইছে। আকাশভাইয়া আরো পিডান। আমরা আপনার পাশে আছি।
ফারিহা: সারা দ্যাখ আকাশভাইয়া তর অপমান হইছে দেখে কত রেগে গেছে। পোলাগুলারে কেমনে মারতাছে দ্যাখ। আমার মনে হয় আকাশভাইয়া তোরে এখানো ভালবাসে।
সারা: কক্ষনোই না। আমাকে ভালবাসলে সেইদিন আমি যা দেখেছি সব কি মিথ্যা ছিল! আমার চোখের সামনে ও মেধাকে লিপকিস করেছিল সাত বছর আগে।
আকাশভাইয়ার মার খেয়ে ছেলেগুলো লাশের মতো পড়ে আছে। যে মেয়েগুলো এতক্ষণ আমাকে মারছিল তারা ভয়ে কাচুমাচু হয়ে গেছে। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আকাশভাইয়া ওদেরকে বলল, মাকসুদুল সাদাত আকাশ মেয়েদের অসম্মান করে না। সো এইবারের মতো বেঁচে গেলি। নেক্সট টাইম আর মেয়েমানুষ ভাবব না। ওদের চেয়েও (ছেলেদের দেখিয়ে) খারাপ হাল হবে তোদের।
মেধা এতক্ষণ আশ্চর্যান্বিত হয়ে দেখছিল আকাশের কাজ আর রাগে ফুঁসছিল। যে মেয়েটা তাকে অপমান করেছে আকাশ সেই মেয়েটার জন্য এত রিঅ্যাক্ট করল!
মেধা রেগে বলল, হোয়াটস রং উইথ ইউ আকাশ? তুমি জানো এই ছোটলোক মেয়েটা আমার মুখের ওপর কথা বলেছে। আমাকে অপমান করেছে।
আকাশ: তো কি হয়েছে? তারজন্য তোমরা ওকে মারবে কেন? যে তোমাকে অপমান করেছে আমি তাকে নিজে শাস্তি দেব।
আকাশভাইয়ার কথা শুনে আমি একদম স্তব্ধ হয়ে গেছি। তারমানে এইজন্য আকাশভাইয়া ওদেরকে মারল।
মেধা: উফ তুমিও না এমন এমন কান্ড ঘটাও টেনশনে পড়ে যাই।
আকাশভাইয়া: তো তুমি কি ভাবছিলে? আমি এই মেয়েটাকে বাঁচানোর জন্য এসব করেছি! হা হা হা। কি করে ভাবলে যে তোমাকে অপমান করেছে আমি তাকে বাঁচাবো? ওকে তো আমি নিজে শাস্তি দিতে চাই।
আমার দিকে রক্তবর্ণ চোখে তাকাল আকাশভাইয়া। তারপর আমাকে হাত ধরে টানতে শুরু করল, চল্
সারা: যাবো না। আপনার সঙ্গে কোথাও যাব না আমি।
ফারিহা: ছিঃ আকাশভাইয়া আপনি এত খারাপ! সারা
আপনার কি ক্ষতি করেছে,,ওকে এত কষ্ট দেন কেন?
আকশভাইয়া আমাকে “চল্ আমার সাথে” বলে টানাটানি করে নিয়ে যেতে চেষ্টা করে। কিন্ত আমি কিছুতেই যাচ্ছি না দেখে আমাকে টেনে কোলে তুলে নিয়ে যেতে থাকে।
আকাশভাইয়া আমাকে একটা বদ্ধ ঘরে এনে কোল থেকে ফেলে দিল। আচমকা আকাশভাইয়ার কোল থেকে পড়ে গিয়ে অনেক ব্যথা পেলাম আমি। ব্যথায় কেঁদে ফেললাম। আকশভাইয়া সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে আমার চুলের মুঠি ধরে টেনে তুলে একটা চেয়ারে বসায়। তারপর একটা শক্ত দড়ি দিয়ে আমার হাত-পা বাঁধতে শুরু করে। আমি শুধু কেঁদেই যাচ্ছি আর বলছি, ছেড়ে দিন আমাকে। আমি এখানে থাকব না।
আকাশভাইয়া আমাকে চেয়ারের সঙ্গে বেঁধে চুলের মুঠি টেনে বলে, আমি যতক্ষণ না আসব তোকে এখানেই থাকতে হবে।
বলেই আমার মুঠি ঝাকিয়ে দরজা লাগিয়ে কোথায় যেন চলে গেল।
চলবে