#তোমার_আসক্তিতে_আসি_আসক্ত
#নুশা_আহমেদ
#পর্ব_১২
রাতের আকাশে সূর্যের আগমন জানান দিচ্ছে পৃথিবীর বুকে এখন রাএির শেষ প্রহর চলছে। বিছানায় বসে জানালার সাথে হেলান দিয়ে চায়ের প্রতিটি চুমুকে তৃপ্তি বাহিকায় চোখ বন্ধ করছে আর ভাবছে সায়ানের করা হঠাৎ আক্রমণের কথা । ভাবতেও পারেনি নুশা সায়ান যে এমন হটাৎ করে এসে এমন কিছু একটা করবে । চায়ের কাপে আরেকটা চুমুক দিয়েই চোখ বন্ধ সেই মুহূর্ত গুলো ভাবতে লাগলো –
ফ্লাসবেক,,,
ঘোর লেখা কন্ঠে কেউ একজন কানের কাছে বলে উঠলো,
”ব্লাক ডায়মন্ড কেনো আমাকে এতো পুরাও তুমি….!
চমকে উঠে মাথা ঘুরিয়ে শব্দের উৎসের দিকে মুখ করতেই কেউ একজন গলার কাছে হাত ডুবিয়ে ঘাড় চেপে কাছে আনলো । রুম এখনো অন্ধকারে আচ্ছন্ন তাই লোকটার মুখ দেখতে না পারলেও তার বলা কথা একেবারে মস্তিষ্কের মধ্যে গিয়ে বলে উঠছে সে যে সায়ান , ডক্টর সায়ান চৌধুরী তাকে আগে জমের মতো ভয় পেলোও এখন কেনো জানি ভয় কাজ করে না । সায়ান এক হাত দিয়ে নুশার মুখ চেপে আছে আরেক হাত দিয়ে ঘাড় । নুশা কথা বলতে পারছে না মুখ থেকে শুধু ওম ওম শব্দ তুলছে সায়ান বুঝতে পেরে হাতটা সরিয়ে নিজেও নুশার থেকে সরে দাঁড়ালো আর রুমের লাইটটা জ্বালিয়ে দিলো মূহুর্তের মধ্যেই অন্ধকার রুম আলোকিত হয়ে গেলো । সায়ান লাইট জ্বালিয়ে পিছনে ফিরে নুশাকে দেখতে গেলে তারাতাড়ি চোখ ফিরিয়ে নেয় কারন নুশা শাড়ী পরে থাকায় তার পেট থেকে শাড়ী টা সরে গেছে যার ফলে পেটের কিছু অংশ দেখা যাচ্ছে । আর এদিকে নুশা এখনোও উপরের সিলিং ফ্যানের দিকে একমনে তাকিয়ে আছে তার শরীর যেন এখনো ভারী লাগছে নিশ্বাস ফেলতে কষ্ট হচ্ছে । ছেলদের এতো কাছে কখনো গিয়েছে কিনা মনে নাই তার। কিশোরী জীবনে এই প্রথম কোনো ছেলের এতো কাছে গিয়েছে তার জানামতে। নিজের ভেতরে কেমন একটা অদ্ভুত ফিল অনুভব করছে নুশা।
নুশাকে এমন স্টেচু হয়ে চুপচাপ থাকতে দেখে সায়ান নুশার দিকে না ফিরেই বলে উঠলো ,
– মেম শাড়ী টা একটু ঠিক করেন তা না হলে নিজেকে কন্ট্রোল করা কষ্ট সাধ্য হয়ে যাবে।
সায়ানের এমন কথা শুনে মূহুর্তেই কল্পনা জগৎ থেকে ফিরে এসে শুয়া থেকে উঠে বসে তাড়াতাড়ি শাড়ী ঠিক করে সায়ানের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে মারলো,,
-আপনি,, আপনি কখন আসলেন । আপনি না বলেছেন আপুর বিয়েতে থাকবেন না তাহলে,,,
আর কিছু বলার আগেই সায়ান পিছনে ফিরে নুশার চোখের দিকে চোখ রেখে বলে উঠলো,
-আমি আসাতে বুঝি তোমার অসুবিধা হচ্ছে ।
সায়ানের চোখের সাথে চোখ পরতেই নুশা সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে নিলো আর বলে উঠলো,,
-অসুবিধা ,, আমার কেনো অসুবিধা হবে…..!
সায়ান এবার নুশার কাছে গিয়ে নুশার পাশে বসে বললো,
-তাহলে,,,
-তাহলে কি ,, তাহলে কিছু না । মামি বলছে আপনার নাকি খুব জরুরি কাজ আছে আপনি আসতে পারবেন না তাই আমি আপনাকে জিজ্ঞেস করছি এখানে আমার কি অসুবিধা থাকবে। আমার কেনো অসুবিধা নেই আপনি আসাতে কারন আপনি আসলেই আমার কি না আসলেই আমার কি ।।
-তুমার কিছু না।
-নাহ আমার কিছু না আমার আবার কি হতে যাবে।
-ওমা আমি আসলে তো তুমি অন্য ছেলেদের সাথে মন মতো কথা বলতে পারবে না ।
নুশা এবার সায়ানের মুখের দিকে তাকিয়ে চোখে চোখ রেখে রাগী গলায় বলে উঠলো,
-এই একদম আজাইরা কথা বলবেন না। কারন আমার যদি কোনো ছেলেদের সাথে কথা বলার ইচ্ছেই থাকে তাহলে আপনি সামনে দাড়িয়ে থাকলেও আমি কথা বলতে পারবো।
-অহ তাই না (মুচকি একটা হাসি দিয়ে) তা আসো দেখি তুমি কেমনে আমার সামনে কোনো ছেলের সাথে কথা বলো।
সায়ানের হাসি দেখে যেনো এখন রাগ বেশি করে হচ্ছে নুশার তাই নুশা এখন সায়ানের থেকে মুখ সরিয়ে বলে উঠলো,
-আমি সে রকম মেয়ে না যেমন টা আপনি ভাবেন। আমি অন্য সব মেয়ে দের মতো ছেলেদের সাথে কথা বলার জন্য পাগল না ।
কিছুক্ষণ থেমে তাচ্ছিল্যের সূরে আবার বলে উঠলো ,
– হাহ’ তারপরও আমার আপনার কাছ থেকে শুনতে হয়েছে আমি দশ বারো প্রেম করি৷। তা বলি কি ভাই আপনি কি কোনো দিন আমাকে নিশাত ভাই ছাড়া আর কোনো ছেলের সাথে ঘুরতে দেখেছেন । আর না আপনি আমার কোনো প্রেমিক খোঁজে এনে আমার সামনে দাড় করাতে পারবেন।
নুশার এমন তাচ্ছিল্য সূরে বলা কথা শুনে সায়ানের মুখের হাসি অটোমেটিক বন্ধ হয়ে যায় আর মিন মিন সূরে অভিযোগ নিয়ে বলে উঠলো,
-শুধু কি আমি নিজেই একা মিথ্যা কথা বলেছি তুমি বলোনি
তুমিও অতো বলেছো আমি নাকি মাফিয়া । তুমিই বলো আমাকে কখনো মারধর করতে দেখেছো মাফিয়ারা তো খুনখারাপি করে আমি কয়টা খুন করেছি বলো ।
নুশা এবার সায়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,
– আমি ছবি দেখেছি আবার আমি শুনেছি তাই বলেছি।
-তাহলে আমার ক্ষেত্রে অতো সেরকম টা হতে পারে তাই না তোমার মতো আমিও তোমাকে ভুল বুঝেছি । তোমার মতো কেউ একজন আমাকেও তোমাকে ভুল বুঝতে বাধ্য করেছে।
-তাই বলে আপনি একবারও আমাকে জিজ্ঞেস করবেন না সত্যি টা ।
-তুমি নিজে একবারো আমাকে জিজ্ঞেস করছো সত্যি টা কি..? সত্যি টা না জেনেই তো সবাই কে বলে বেড়িয়েছো আমি মাফিয়া । কিন্তু আমি তো শুরু ফেমেলীর সামনে বলেছি তুমি রিলেশন করো এখানে অন্যায় টা কার বেশি বলো তুমার নাকি আমার।
-অবশ্যই আপনার “কারন আপনি বড়” ।
সায়ান এবার নুশার কথা শুনে মুখের সেই হাসিটা আবার ফিরিয়ে এনে এক হাত দিয়ে চুলে হাত দিয়ে মাথাটা নিচু করে খুবই ধীর কন্ঠে বলে উঠলো,
-হুম সব দোষ বড়দের দোষ ।
সায়ানের এমন কথা শুনে নুশাও মনে মনে হেসে উঠলো কিন্তু তার হাসিটা সায়ানের সামনে প্রকাশ করতে ইচ্ছুক না তাই বিছানা থেকে নেমে রুমের দরজা খুলে বাহিরে চলে এলো । বাহিরে এসে বুঝতে পারলো জামাইয়ের বাড়ির সবাই চলে গেছে তাই নুশা হাটতে হাটতে স্টেজের কাছে গিয়ে দেখতে পেলো নিশির পাশে ইমা বসে নিশির এক হাতে মেহেদী দিয়ে দিচ্ছে আর কয়েকজন মিলে কব কথা বলছে আর হাসাহাসি করছে। হঠাৎ করেই নিশির চোখ যায় তার ছোট বোন নুশার দিকে দাঁড়িয়ে আছে একা আর তাদের দিকে তাকিয়ে আছে তাই নিশি আরেক হাত দিয়ে নুশাকে ইশারা করে ডেকে বলে উঠলো এদিকে আসতে। নিশির মুখে নুশার কথা শুনে ইমাও নুশার দিকে তাকায় তখন নুশার আর ইমার দুইজনের দুইজনের দিকে চোখ পরে আর সাথে সাথেই দুইজন চোখ ফিরিয়ে নেয়। নুশা নিশির ডাকে নিশির কাছে গেলে নিশি তাকে৷ মেহেদী পরিয়ে দিতে বললে নুশা বলে,,
-আপু আমি তো সুন্দর করে মেহেদী পরাতে পারি না তুমি তো জানোই।
– যেমন পারিস তেমনই দে তো বেশি কথা না বলে।
নুশাও আর কথা না বলে নিশির পাশে বসে নিশির হাতে মেহেদী দিতে লাগলো। মেহেদী পরানো শেষ হলে কিছুক্ষণ আরো কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে যে যার মতো ঘুমিয়ে পরলো। সবার চোখে ঘুম আসলেও নুশার চোখে ঘুম ধরা দেয় না চোখ বন্ধ করলেই তখনকার কথা মনে পরে যায় ।
কল্পনা জগৎ থেকে ফিরে আসলো বাড়িতে মেহমান বাচ্চাদের কান্নায় । বাহিরেও সূর্যের আলো ফুটেছে পৃথিবী সূর্যের আলোয় আলোকিত হয়ে উঠছে । আজ আপুর বিয়ে , বিয়েটা আনন্দ হলেও কনে বিদায় টা খুবই দুঃখ জনক । নুশার এখই ভাবতে কান্না পাচ্ছে তার বোন তার থেকে দূরে চলে যাবে আরেক বাড়িতে থাকবে ।
#চলবে,,?#তোমার_আসক্তিতে_আমি_আসক্ত
#নুশা_আহমেদ
#পর্ব_১৩
“তোমার হাসিতে রজনীগন্ধা ফুটে
বিশাদ যেনো এক নিমিষেই টুটে ”
মোবাইল টা হাতে নিতেই যদি হঠাৎ আননোন নাম্বার থেকে এমন একটা মেসেজ আসে তা দেখলে যে কেউই অবাক হবে । শুধু অবাক না অনেক টাই আশ্চর্য হবে আর ভাববে মেসেজ টা কি কেউ তাকে পাঠিয়েছে নাকি অন্য কাউকে দিয়েছে ভুলে তার মোবাইলে চলে এসেছে। ভাবনার মাঝেই আবারও আরেকটা নতুন মেসেজ আসার শব্দ হলো সাথে সাথে সেই মেসেজ পরে সিওর মেসেজটা এই নাম্বারেই পাঠিয়েছে কারন মেসেজটি ছিলো,
“ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়ে নিজের কাজে মন দেন। মেসেজটা আপনার জন্যই ”
এই মেসেজ কে দিতে পারে সায়ান ভাই তো জানে না মোবাইল টা যে আজ নিজের হাতে ফিরে পেয়েছি আর সায়ান ভাই হঠাৎ করে এমন মেসেজ দিবে কেনো তাহলে কে দিতে পারে,,
ওয়াশরুম থেকে ইমা বের হয়ে দেখে ড্রেসিং টেবিলের সামনে মোবাইল হাতে নিয়ে আয়ানার দিকে তাকিয়ে খুব মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা ভাবছে নুশা। হাতে থাকা তোয়ালেটা নুশার দিকে ছুড়ে দিয়ে বলে উঠলো,
-মোবাইল পেয়ে হ্যাং হয়ে গেলি নাকি,,,!
হঠাৎ তোয়ালের আক্রমন আর ইমার কথায় আয়নার মাঝেই ইমার দিকে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
-ভিজা তোয়ালে দিয়ে ঢিল মারলি কেনো । হাত কি বেশি কামড়াকামড়ি করে এমন ছুড়াছুড়ি করার জন্য ।
ইমাও আয়নার মাঝেই নুশার চোখে চোখ রেখে বলে উঠলো,
-এভাবে তাকালেই কি আমি ভয় পেয়ে যাবো নাকি যে এভাবে তাকাস আমার দিকে। নাকি তুই মনে করস এভাবে তাকালে তোকে দেখতে ডায়নার মতো সুন্দর দেখা যায় । যদি এটা মনে করে থাকোস তাহলে আমি আগেই বলে দেই এভাবে তাকালে তোকে জগন্য ডাইনির মতো দেখা যায় তাই বান্ধবী হয়ে বান্ধবীর উপকারের জন্য বলে দিচ্ছি দয়া করে অন্য কারো সামনে এভাবে তাকাবি না।
ইমার কথা শুনে নুশাতো রেগে মেগে ফায়ার কি বলে এই মেয়ে তাকে নাকি ডাইনির মতো দেখা যায় । আয়না থেকে মুখ সরিয়ে পিছনে ঘুরে ইমার সামনাসামনি হয়ে বলে উঠলো ,
-তুই এতো বেশি কথা বলোছ কেনো। তোকে না আমি মানা করছি আমার সাথে কথা বলবি না। তাহলে এখন ছাবরার মতো কথা বলতে আছোস কেন।
-তোর মতো বেইমান না তো আমি যে বান্ধবীদের উপকার করার জন্য পিছিয়ে থাকবো।
-তাই নাকি তা অতি দয়াবান বান্ধবী আপনি আমার কোন উপকারে সামনে এসে দাড়িয়েছেন দয়া করে একটু বলবেন।
নুশার কথা শুনে ইমা নুশার সামনে থেকে সরতে সরতে বলে উঠলো,
-এখন আমার মুড নাই বলার যখন আসবে তখন বলবো এখন তাড়াতাড়ি রেডি হো জামাইয়ের বাড়ির লোকেরা আসার আগে খেতে হবে , খুব ক্ষুদার্থ আমি।
ইমার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আবার পিছনে ফিরে হাতের মোবাইলের দিকে একবার তাকিয়ে মোবাইলটা সাইট বাটনে চাপ দিয়ে বন্ধ করে টেবিলের উপর রেখে চিরুনি নিয়ে মাথা আঁচড়াতে লাগলো । ইমা নিজেও পিছন ফিরে নুশার দিকে তাকিয়ে আবার নুশার দিকে এগিয়ে এসে নুশার সাইটে দাঁড়িয়ে সামনে থেকে ক্রিম হাতে নিয়ে নিজের মুখে দুই হাত দিয়ে ঘসেঘসে দিচ্ছে । নুশা একবার আড়চোখে আয়নার মাঝেই ইমাকে দেখে নিলো তারবর আবার নিজেরা নিজেদের কাজে লেগে পরলো।
আজ নিশির বিয়ে সেই উপলক্ষে অনেকেরই অনেক কিছু পাওয়া হচ্ছে বলতে গেলে আজকের দিনটাই তাদের জন্য খুবই স্পেশাল মনে হচ্ছে। যেমন নিশি আর রিফাত আজকের দিতে এক হবে , তারা দুই জন কে পাবে। নুশা নিজের মোবাইল আজ নিশির বিয়ের উপলক্ষে আবার ফিরে পেয়েছে মা মেয়ের সম্পর্ক আবার আগের মতো হয়ে গেছে । সায়ান অল্প অল্প নুশাকে তার প্রতি কোনো কিছুর অনুভব করাতে পারছে শুধু এই বিয়ে উপলক্ষে । তা ছাড়া আরো দুইটা মানুষও খুব কাছা কাছি আসার সুযোগ পাচ্ছে ।
নিশি আজ জামদানী লাল শাড়ি পরেছে। শাড়ি টার জমিনটা লাল আর লাল জমিনের মাঝে সুনালী কাজ করা স্টোন বসানো । অসম্ভব সুন্দর শাড়ি টা সবার নজরেই লেগেছে শাড়ি টা । নুশা নেবি রঙের লেহেঙ্গা পরেছে ইমা গ্রিন রঙের গ্রাউন পরেছে । নুশা আর সায়ানের গতকাল রাতের পর আর দেখা হয়নি । না দেখেছে নুশা সায়ান কে আর না দেখেছে সায়ান নুশাকে। সায়ান নুশাকে খুঁজেছে কিন্তু নুশা তো আজ রুম থেকেই ভালো করে বের হয়নি তাহলে সায়ান দেখবে কিভাবে। সায়ান কাজের ফাঁকে ফাঁকে এদিক ওদিক তাকায় কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি নুশার দেখা সে পায়নি।
নিশিকে শুধু পার্লার থেকে সাজানো হয়েছে আর কাউকে না নিশিকে নানুর সাথে বসিয়ে নুশারা সবাই বাহিরে চলে আসলো বর এসেছে বর এসেছে বলতে বলতে। গেট সাজানো হয়েছে কিছু খাদ্য আবার কিছু অখাদ্যও সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে এখন বর সাহেব নিজ পছন্দে যা কেতে পারে দুই জাতই রাখা আছে সব কিছুই দুই জাত যেমন দুই প্লেট মিষ্টি একটা জ্বাল মিষ্টি আবার আরেকটা ভালো মিষ্টি কিন্তু দেখতে দুইটা এক রকম দেখা যায় , লেমন সরবত আবার আরেকটা নিম পাতার রস । গেটে দুই দল দাড়িয়ে আছে এপাশ আর ওপাশ মাঝ খানে লাল রঙের ফিতা। নুশার হাতে ফুলের মালা যা রিফাতকে পরানো হবে। বরের লোকজন কেচি চাচ্ছে ফিতাটা কাটার জন্য কিন্তু বউের লোকজন তা দিতে নারাজ কারন আগে তাদের দাবি মানতে হবে যত টাকা তারা চায় তত টাকা দিতে হবে তারপরই কেচি তারা পাবে । এতে আবার ঐপাশের রিফাতের সাথে দাঁড়ানো শুভ বলে উঠলো,,
– মানি না আমাদের বাড়ির বউ আমরা নিবে এখানে টাকা দেওয়ার কি আছে ।
নুশা কিছু বলতে যাবে তখন অনুভব করলো তার পাশে কোনো ছেলে দাড়িয়ে আছে তাই গাড় বাকি উপরে মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে সায়ান তার পাশে, সামনের দিকে তাকিয়ে আছে আর বলছে কেচি নেওয়ার আগে আমাদের পিচ্চি বাহিনীদের কথা মানতে হবে ভাইয়ারা তা না হলে কেচি পাবেন না আর আপনাদের বাড়ির বউকেও নিতে পারবেন না।
সায়ানের কথা শুনে নুশা সায়ানের দিকে তাকায় আর সায়ানও নুশার দিকে তাকায় আর বলে,
-কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো,,,! আমি তো ঠিকই বলছি টাকা না দিলে তোমরা কি কেচি দিবা বলো।
নুশা সায়নের উওরে কিছু না বলে আবার সামনে তাকায় এবার সরাসরি শুভর দিকে চোখ পরে শুভ কেমন করে যেনো তার দিকে তাকিয়ে আছে তার চাহনি অদ্ভুত যেটা সায়ানও লক্ষ করে আর এক হাত মুঠ করে ফেলে আর আরেক হাত দিয়ে নুশার হাত ধরে ফেলে। হটাৎ করে কারো হাতের স্পর্শে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখে সায়ন তার বাম হাতটা খুব শক্ত করে ধরে রেখেছে যেনো ছেড়ে দিলেই হারিয়ে যাবে ।
অবশেষে অনেক জোরাজুরি করে নুশারা শুভদের কাছ থেকে মাএ পাঁচ হাজার টাকা নিতে পারছে । শুভ টাকা দেয় আর বলে,
-দেখছেন বেয়ান আমরা কতো ভালো পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে দিছি আপনাদের।
নুশা শুভর কাছ থেকে টাকা নিয়ে বলে উঠে,
-এহ পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে বলে কতো ভালো কিপটা আপনারা মাএ পাঁচ হাজার টাকা ।
-নিতে চাইলে আরো নিতে পারেন সমস্যা নাই কিন্তু সোটা আপনি নিজে নিবেন অন্যরা না।
-তার দরকার নাই ।
-কেনো।
-আমরা রিফাত ভাইয়ের কাছ থেকে নিবো আপনার থেকে না ।
-আমি তো আপনাদের বলিনি আপনাকে বলেছি।
– না আমার নিজেরও দরকার নাই।
আর কিছু বলার আগেই ছেলে বাড়ির সবাই হৈচৈ লাগিয়ে দিলো তাই তাড়াতাড়ি রিফাতকে মালাটা পরিয়ে কেচি টা দিয়ে দেওয়া হলো। রিফাত কেচি দিয়ে ফিতা কেটে একটা মিষ্টি মুখে নিলো কপাল ভালো মিষ্টি টা ভালো মিষ্টিটা শেষ করে পানি খেতে নিলো পানি মুখে নিতে দেরি বের করতে দেরি না কারন পানিতে লবন মেশানো ছিলো ।
অবশেষে রিফাত আর নিশির বিয়ে টা কোনো ঝামেলা ছাড়াই হয়ে গেলো । এখন বিদায়ের পালা সবার চোখে পানি যাকে নুশা কখনো দেখেনি কান্না করতে সেই ব্যক্তিও আজ কান্না করছে তা আর কেউ না নুশার আব্বু। নুশার আম্মুও কান্না করছে আত্মীয় স্বজনরা প্রায় সবাই কান্না করছে নুশা কান্না করছে নিশি একবার নিশিকে ধরে কান্না করছে আবার নিশাত কে ধরে কান্না করছে । বিদায় বেলা আসলেই কষ্ট দেয় সবাই কে । নুশাকে সারাদিন কেউ খাওয়াতে পারে নাই অবশেষে নুশা সবাইকে মিথ্যা বলেছে যে সে খেয়েছে কিন্ত এখন এভাবে কান্না করায় বউ বিদায় দেওয়ার একটু পরই সবার সামনেই মাথা ঘুড়িয়ে পরে যায় আর সায়ান তাড়াতাড়ি এসে ধরে কোলে নিয়ে নেয় আর রুমে চলে আসে। সবার অবস্থায় করুন নুশার আম্মুর পাশে সায়ানের আম্মু আর নুশার বাবার কাছে সায়ানের আব্বু আর নিশাতের সাথে বসে আছে ইমা। হ্যাঁ ইমা আর নিশাত রিলেশনে আছে সেটা শুধু সায়ান জানে ।
________
পরের দিন সকালে সায়ানের আব্বু নুশার আব্বু আর একটা লোক বসা আছে লোকটাকে সায়ানের আব্বুর চিনা লাগলেও বুঝে উঠতে পারছে না কে হতে পারে তাই চুপ করে বসে আছে। লোকটা নিজের পরিচয় দেয় লোকটা রাজ্জাক হোসেন নুশাে আব্বুর বন্ধু খুবই ঘনিষ্ঠ তাদের সম্পর্ক । ব্যবসার উদ্দেশ্যই তাদের দেখা হয় আর এক সাথে থাকতে থাকতেই খুব বালো একটা বন্ধুত্ব হয়। রাজ্জাক হোসেন কে সায়ানের আব্বুর কেনো জানি অন্যরকম লাগছে কেনো যেনো মনে হচ্ছে প্রতিটা কথাই যেনো সাজানো মিথ্যা কথা । কিন্তু কিছু বলতে পারছে না। রাজ্জাক হোসেন কথায় কথায় নুশার বাবার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
-বন্ধু একটা কথা বলি কিছু মনে করিস না । নিশির বিয়ে টা হয়ে সব দিক থেকেই খুব ভালো হইছে কি বলোছ এমনিতেই আমার মানিক তোর বড় মেয়ের থেকে ছোট মেয়েকেই বেশি পছন্দ করেছে । এতে করে দেখ সব দিকেই ঠিক নিশি মামুনিও নিজের ভালোবাসার মানুষের কাছে চলে গেছে আর এমনিতেই আমার জানা মতে নুশা মামুনির কারো সাথে কোনো সম্পর্ক নাই তাই আমার বড় ছেলে আর তোর ছোট মেয়ের বিয়ে টা হলে ভালোই হবে । এতে করে আমাদের সম্পর্ক টা আরো ভালো হবে। তাই বলিকি নুশা মামুনি কোনো সম্পর্কে জড়ানোর আগেই আমার আর তোর উচিত এদেরকে এক করে দেওয়া এতে করে,,
আর কিছু বলার আগেই হাতে থাকা চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে সায়ানের আবাবু বলে উঠলো,
– আরে মশাই আপনি কি পাগল হয়ে গিয়েছেন নাকি । এক মেয়েকে বিদায় করছে একদিনও হয়নি আপনি আবার সেই ব্যাক্তিকেই বলছেন আরেক মেয়ে কে বিদায় দেওয়ার কথা । আপনি এতো পাগল হয়ে যাচ্ছেন কেনো কপালে তাদের বিয়ে থাকলে তো বিয়ে হবেই এতে এতো তাড়া হোরা করার কি দরকার ।
রাজ্জাক হোসেন এবার সায়ানের দিকে তাকিয়ে কিছুটা গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো,
-বলাতো যায় না নিশির মতো নুশারও অন্য কারো সাথে সম্পর্ক হয়ে যায় । তাই আগেই আমার ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে দিবো তাহলে নুশা মামনি তো আমার ছেলের কাছে আটকা পরে যাবে আর আমাদের সম্পর্ক টা আরো ভালো হবে।
#চলবে,