# তোমার_নেশায় !
,
,
(১৭+১৮)
,
,
কঠিন হৃদয়ের মেয়ে তৃষ্ণা!
.
.
.
রুপাঞ্জন বাবার কথা মতো ওই বাসা ত্যেগ করে।
ভেবেছিলো ব্যেপার টা এখানেই চুকে যাবে। কিন্তু
অতিত যে এতো সহজে মানুষের পিছু ছাড়েনা। রুপাঞ্জন
কোনো কাজে মন বসাতে পারছেনা, সারাক্ষন রুপশার
ভাবনায় ভিবোর হয়ে আছে। অফিস যাওয়া ছেড়ে
দিয়েছে, মেয়েদের সাথে দেখা করা বন্ধ করে এখন শুধু
ঘরের এক কোনে বসে থাকে। আশ্রাফ খান ছেলের এই
অবস্থা দেখে খুবই চিন্তা পড়ে যান। রুপাঞ্জন যদি
এইভাবে ডিপ্রেশনে চলে যায় তাহলে তার বিজনেস
গোল্লায় যাবে। গত পাচ বছর ধরে রুপাঞ্জনের কারনেই
বিজনেস টা একটা ভালো পজিশনে দাড়িয়েছে এখন কি
কোথাকার কোন মেয়ের জন্য এইভাবে আমার বিজনেস
বরবাদ হয়ে যাবে? না, ওই আহসান চৌধুরী আগে আমার
বোনের লাইফ নষ্ট করেছে আর এখন ওর মেয়ের কারনে
আমার ছেলে……….
আমি যদি আগে জানতাম এইভাবে প্রতিশোধ নিতে
গিয়ে হিতে বিপরিত হবে তাহলে কখনই এই মেয়ের সাথে
রুপাঞ্জনের বিয়ে হতে দিতাম না। এখন এইভাবে হাত
গুটিয়ে বসে থাকলে হবেনা, আহসান চৌঃ আর তার
মেয়ের একটা ব্যবস্থা আমাকে করতেই হবে, প্রয়োজনে
আরো দুইটো খুন করতে ও আমি পিছপা হবো না। তার আগে
রুপাঞ্জন কে একটা ভালো সাইক্রাইটিস কে দেখাতে
হবে। যেভাবে হোক ওকে নরমাল লাইফে ফিরিয়ে আনতে
হবে। এইবলে উনি ওনার ম্যনেজার কে ফোন দিলেন।
,
:– ইয়েস স্যার! বলুন।
,
:– ম্যনেজার শহরের বেস্ট সাইক্রাইটিস এর এপয়েনমেন্ট
নাও! ইমিডিয়েটলি।
,
:– ওকে স্যার, হয়ে যাবে।
,
:– আর ওই ফ্ল্যট টার ব্যেপারে কি খবর?
,
:– স্যার একজন ডিলার আড়াই কোটিতে ফ্ল্যেট টা নিতে
রাজি আছে। যদি বলেন…….
,
:– আমি আর কি বলবো, ওই ফ্ল্যেট একটা আপদ। যত
তাড়াতাড়ি পারো বিদায় করো।
,
:– ওকে স্যার! হয়ে যাবে।
,
:– হুম বাই!
,,,,,,,
রুপাঞ্জন ফুফির হাত ধরে বসে আছে। ওর চোখের কোনে
জল চিকচিক করছে।
,
:– ফুফি আম সরি। আমি তোমাকে দেওয়া কথা পুরন
করেছি। ওকে ভালোবাসায় অনেক কষ্ট দিছি এতো কষ্ট
দিছি যে ও মরার আগ পর্যন্ত আমাকে ভুলবেনা। কিন্তু
ফুফি আমি জানিনা কিভাবে ওকে কষ্ট দিতে দিতেই
ভালোবেসে ফেলেছি। ও এখন আমার নেশা হয়ে গেছে
ফুফি, ওকে আমার খুব প্রয়োজন। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে
ওকে ছাড়া। বিলিভ করো ভালোবাসা কতোটা সুন্দর আর
ঝন্ত্রনাদায়ক সেটা ও আমার জিবনে না এলে বুঝতাম না।
তুমি জানো আমি কিছুতেই শান্তি পাচ্ছিনা, ওর নেশা
আমার ভিতর টা পুড়িয়ে চারখার করে দিচ্ছে। আমি
ভেবেছিলাম ওকে বাসা থেকে তাড়িয়ে দিলে আমি
অনেক খুশি হতে পারবো কিন্তু না ফুফি, আমি একটুও খুশি
হতে পারিনি। আমি ওকে ছাড়া ভালো নেই ফুফি! তুমি
আমাকে ক্ষমা করো আমি তোমার অনুমুতি ছাড়া ওকে
ভালোবেসে ফেলেছি। কিন্তু তুমি চিন্তা করোনা তুমি
বলা ছাড়া আমি কোনদিন ওকে ফিরিয়ে আনব না। আমি
তোমাকে সত্যি অনেক ভালোবাসি ফুফি। তোমার জন্য
সব পারবো। তুমি প্লিস সুস্থ হয়ে যাও প্লিস!!
রুপাঞ্জন কাঁদছে ওর কান্নার যে শেষ নেই। সবাইকে যে
নিজ নিজ কর্মফল পেতে হয়। এটাই যে দুনিয়ার নিয়ম।
কাউকে কাদিয়ে কেউ কখন ও সুখি হতে পারেনা।
আশ্রাফ সাহেব এসে দেখেন ওনার ছেলে কাঁদছে। উনি
ছেলের কাধে হাত রেখে বললেন,
:– যা হওয়ার হয়ে গেছে, এখন তৈরী হয়ে নাও। আমরা
সাইক্রাইটিস এর কাছে যাবো।
,
:– ড্যেড তুমি কি ভাবছো? আমি কি পাগল হয়ে গেছি।
,
:– নো মাই সান! তুমি পাগল হবে কেন? তুমি কয়েদিন ধরে
মানসিক সমস্যায় ভুগছো সেটার ট্রিটমেন্ট করাতেই
আমরা সাইক্রাইটিস দেখাবো।
,
রুপাঞ্জন চোখ মুছে নিজের রুমের দিকে চলে গেল।
আশ্রাফ সাহেব ও ড্রইং রুমে বসে ছেলের জন্য অপেক্ষা
করতে লাগলেন। অন্যদিকে রুপাঞ্জন ফুফির রুম থেকে
যাওয়ার পর ফুফির চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়তে লাগল।
জোরে কান্না করতে গিয়ে ও উনি থেমে গেলেন। ওনার
যে অনেক কিছু বলার আছে রুপাঞ্জন কে। কিন্তু অনেক
চেষ্টা করে ও উনি বলতে পারলেন না।
,
অন্যদিকে রুপশা ওর বাবার সাথে চা বাগান ঘুরে দেখছে।
আহসান চৌঃ চান ওনার মেয়েটার মন টা একটু ভালো
হোক। তাই হাটুর ব্যেথা থাকা সত্তেও মেয়ের কাছে
সেটা গোপন করে নিয়ে এসেছেন চা বাগান ঘুরতে।
বাগান দেখতে ভালোই লাগছে। দুপাশে চা বাগান আর
মাঝখান দিয়ে হেটে যাচ্ছি আমি। ইচ্ছা করছে এই
বাগানেই একটা ছোট্ট কুড়েঘর বানিয়ে থাকি। পিছন
ফিরে বাবাকে বলতে যাব কুড়েঘরের কথা তখনই মাথা টা
হঠাৎ ভারি হয়ে এলো চোখের সামনে সব অন্ধকার হয়ে
গেল। তারপর আর কিছু মনে নেই।
রুপশা জ্ঞান হারানোর পর ওর বাবা আর কেয়ারটেকার
ধরাধরি করে ওকে বাসায় নিয়ে আসে। তারপর ডাক্তার
কে কল দিয়ে বাসায় আসতে বলেন আহসান চৌঃ।
ডাক্তার এসে রুপশাকে চেকাপ করেন আর একটা
ইঞ্জেকশান দেন। কিছুক্ষন পর ধীরে ধীরে রুপশা চোখ
খুলল। রুপশার বাবা ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞাস করলেন,
:– ডাক্তার ওর কি হয়েছে? কাল থেকে ওর শরিল খারাপ।
হাস্পাতালে নিতে হবেনা তো??
,
:– আরে কি বলছেন আহসান সাহেব? মিষ্টি নিয়ে আসুন,
আপনি খুব শিঘ্রিই নানা ভাই হতে চলেছেন। রুপশা ২ মাস
থেকে প্র্যেগনেন্ট। এই অবস্থায় এইগুলা নরমাল।
,
ডাক্তারের কথা শুনে আহসান সাহেবের মুখ অন্ধকার হয়ে
এলো। কি হবে এবার ওনার মেয়ের। আর ওর সন্তান ও তো
কত হতভাগা যে বাবা থাকা সত্তেও কোনদিন বাবার
আদর পাবেনা।
এদিকে রুপশার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। সে এটা
শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলনা। জোরে চিৎকার
দিয়ে আবার জ্ঞান হারালো।
যখন জ্ঞান ফিরল দেখতে পেলাম বাবা আমার মাথায়
হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। আমি তাড়াতাড়ি উঠে বসলাম।
বাবা একটু চুপ থেকে বললেন,
:– কি আর করবি মা? এইটাই ছিল তোর ভাগ্য!
,
:– না বাবা এটা কিছুতেই হতে পারেনা!!! ওই খুনির বংশধর
কে আমি আমার মধ্যে বড় হতে দিব তুমি ভাবলে কি করে?
,
:– দেখ মা! ওর বাবা পাপ করেছে, এতে ওই নিষ্পাপ শিশুর
কি দোষ।
,
:– বাবা ওর দোষ একটাই ওর বাবা খুনি। ওর বাবা
প্রতারক! আমি একজন প্রতারকের ছেলেকে কিছুতেই
মেনে নিতে পারবোনা।কিছুতেই না!!
,
;– জিদ করিসনা রুপশা মা। একটু ভেবে দেখ একটা প্রান
কে হত্যা করা কত বড় পাপ।
,
:– বাবা তুমি কেন ভুলে যাচ্ছা ওই আশ্রাফ খান আমার মা
কে খুন করেছে। সেটা পাপ না??
,
:– আমি জানি সেটা পাপ। কিন্তু ওরা হচ্ছে সমাজের
মানুষ রুপি হিংস্র পশু। তুই যদি এই শিশুকে হত্যা করিস
তাহলে ওই পশুদের আর তোর মধ্যে পার্থক্য কোথায়???
আর তুই কেন ভুলে যাচ্ছিস ও তোর ও সন্তান!
,
এই কথা বলে বাবা চলে গেলেন। আমি আজ কাঁদতে চেয়ে
ও পারছিনা। আমার সন্তান হয়ত সত্যি পৃথীবির সবচেয়ে
অভাগা যে ওর নিজের মা ঈ ওকে হত্যা করতে চাইছে।
কিন্ত আমি যে নিরুপায়। কি করে ভুলে যাবো ওর বাবা
আমার জিবনের সব শেষ করে দিয়েছি। ওর দাদার
কারনেই আজ আমি আমার মায়ের আদর থেকে বঞ্চিত। ও
কার পরিচয় বড় হবে। ও যখন ওর বাবার কথা জিজ্ঞাস
করবে তখন আমি কি বলবো, ওর জন্ম হওয়া টা ওর বাবার
কাছে একটা রিভেঞ্জ ছিল মাত্র।না, ওর কোনো
অধিকার নেই এই পৃথীবির আলো দেখার। ওর পাপি বাবার
পাপি সন্তানের কালকেই শেষ দিন হবে।
বাবাকে গিয়ে জানিয়ে দিলাম কালকে আমি হস্পিটাল
এ যাব এভোরশান করাতে। বাবা কিছু না বলে কান্না
করতে করতে রুমে চলে গেলেন। আমি পারবোনা ওই
প্রতারক এর কোনো স্মৃতি আমি নিজের মাঝে ধারন
করতে পারবোনা। আমি ওই লোকটা কে শুধু ঘৃন্না করি,
শুধুই ঘৃন্না!
,
# তোমার_নেশায় !
,
(১৮)
.
ভোরের আলো ফুটতেই ঘুম ভেঙে গেলো। আজকের ভোর
টা খুবই বিষাদময় লাগছে, আজ যে আমার সন্তান কে আমি
নিজেই হত্যা করবো। আজকের প্রকৃতি তে যেন কষ্টের
কালো আধার নেমে এসেছে। চারদিকে ঘন কুয়াশা এটাই
প্রমান করছে যে আমি তাদের সৌন্দর্য উপভোগ করার
যৌগ্য নই। আমি যে প্রকৃতির মতোই সুন্দর একটা প্রান কে
শেষ করব। কি করবো আমি যে নিরুপায়। নাস্তা করে
বেরিয়ে পড়লাম। বাবা সারাটা পথ আমার সাথে একবার
ও কথা বলেনি। কি বলবে কিছুই যে বলার নেই। ভাবতে
ভাবতে গাড়ি হাস্পাতালের সামনে এসে থামল। গাইনি
বিভাগে ডুকে আমার মতো অনেক মেয়েকেই দেখলাম
যারা তাদের আনওয়ান্টেড চাইল্ড কে চিরতরে বিদায়
করতে এসেছে। বাবা আমার এপয়েনমেন্ট আগে নিয়ে
রেখেছিলেন তাই আর দুজন মহিলার পরই আমার
সিরিয়াল। ওয়েটিং রুমে বসে থাকতে ভালো লাগছেনা।
তাই ভাবলাম হাস্পতালের চারদিক টা একটু ঘুরে দেখি।
আমি উঠতেই বাবা বললেন,
:–কোথায় যাচ্ছি?? কিছুক্ষন পর তোর সিরিয়াল।
,
:– বাবা বসে থাকতে ভালো লাগছে না। একটু হেটে
আসি।
,
:– আচ্ছা আশেপাশে থাকিস।
,
:- ওকে।
,
ওয়েটিং রুম থেকে বেরিয়ে আনমনে হাটতে লাগলাম।
হঠাৎ করে একটা মহিলার সাথে দাক্কা খেলাম। আমি
মহিলা টা সরি বলে আবার হাটতে লাগলাম দেখলাম
মহিলা টা লোকজনের কাছে ভিক্ষা চাইছে। কিন্তু
দেখে ভিক্ষারি মনে হয়না। আমি ও এগিয়ে গিয়ে
মহিলা টা কে কয়টা টাকা দিলাম। মহিলা খুশি হয়ে চলে
গেল। আমি হাটতে হাটতে বারান্দায় চলে এলাম।
দেখলাম সেখানে একটা ছোট বছর দেড়েকের মেয়ে শিশু
কান্না করছে। কিছুক্ষন পর একটা মহিলা এসে বাচ্ছা টা
কে কোলে নিল তারপর বাচ্চার হাতে পাউরুটি দিতেই
সে কান্না থামিয়ে পাউরুটি খেতে লাগল। ভালো করে
চেয়ে দেখলাম এই মহিলা টা আর কেউ নয় যাকে একটু
আগে সাহায্য করেছিলাম সেই মহিলা। মহিলা তার
শিশুকে খুব আদর করে কোলে বসিয়ে খাওয়াচ্ছে।
কিছুক্ষন পর পর চুমু খাচ্ছে বাচ্ছা কে। আমি অজান্তেই
হেটে গেলাম ওদের দিকে কেন জানিনা ওই মা শিশু কে
ওইভাবে দেখতে এক অন্যরকম অনুভুতি হচ্ছে। আমি এক
দৃষ্টে ওদের দেখছি।
,
:– আফা কিছু বলবেন??
মহিলার প্রশ্ন শুনে ঘোর কাটল।
,
:– কি হইল আফা, কিছু বলবেন??
,
:– না..মানে এটা কি আপনার বাচ্ছা।
,
:– হ্যা গো, এটা আমার কলিজার টুকরা। আমার বেচে
থাকার একমাত্র অবলম্বন।
,
:– আপনার বর কোথায়?
,
এই প্রশ্ন শুনে মহিলার মুখ মহুরতেই অন্ধকার হয়ে গেল। সে
আচলে মুখ ডেকে কাঁদতে লাগল।
,
:– আমার বর এক বছর হলো মারা গেছে আফা।
,
:– ওও আম সরি।
,
:– আমার বর আর আমার খুব সুখের সংসার ছিল। উনি একটা
ফ্যাক্টরি তে কাজ করতেন। ওখানেই এক দুর্ঘটনায়
উনি……..
তখন আমার মেয়েটার বয়স মাত্র দেড় মাস। আমার
শশুরবাড়ির লোকজন আমায় আর আমার মেয়েকে অপয়া
বলে বাড়ি থেকে বাইর করে দেয়। বলে আমি নাকি
নিজের বর কে খেয়েছি এবার ওদের খাবো। সেদিন
কাঁদতে কাঁদতে নিজের বাপের বাড়িতে গিয়ে
উঠেছিলাম কিন্তু ভাইয়ের বউ সোজা বলে দিল তাদের
অভাবের সংসারে তারা নতুন বোঝা নিতে পারবেনা।
আমার অন্ধ মা তার জমানো কিছু টাকা দিয়ে বিদায়
করে দেয় আমায়। আফা আমার জায়গায় অন্য কেউ হইলে
এতদিনে আত্মহত্যা করতো। আমি ও চেয়েছিলাম কিন্তু
পারিনি আমার মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে। ওই টুকু
মেয়েকে নিয়ে লোকের বাড়ি কাজ করে করে ওকে
এতো বড় করেছি। মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে এই নিষ্ঠুর
পৃথীবি ছেড়ে অনেক দুরে চলে যাই তখন আমি আমার
মেয়ের দিকে তাকাই ওর দিকে তাকালে আমি বেচে
থাকার সাহস পাই, সংগ্রাম করার জোর পাই। আফা, এই
আমার সপ্ন একদিন আমার মেয়ে আমার সব দুঃখ
গোছাবে। মেয়ের জন্য সব করতে রাজি আমি!
আপনার কি কারও অসুখ হইছে?? ওও আফা কথা বলছেন না
কেন?
,
আমি যেন মহিলার কথার মধ্যে ডুবে ছিলাম। নিজের
অজান্তেই চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়তে লাগল। একটা
মা তার সন্তানের জন্য কত সংগ্রাম করতে পারে। ওই
মহিলার কিছুই নেই অথচ ওর সন্তান কেই ও ওর সব সম্পদ
মনে করে বেচে আছে।
,
:– এতো ধৈর্য আপনার? আমি সত্যি অবাক হচ্ছি।
,
:– কি যে বলেন আফা! আল্লাহ এই জন্যই তো মেয়েদের
এতো বড় দায়িত্ব দিয়েছেন। মা হওয়ার দায়িত্ব, কারন
মেয়েরা ধৈর্য নিয়েই নিজের সন্তানের জন্য সব বিপদ
মোকাবিলা করে। সন্তানের জন্য পুরো দুনিয়ার সাথে
লড়াই করতে পারে, তার সন্তান যে তারই একটা অংশ।
যেটা একটা পুরুষ মানুষ কিছুতেই পারবেনা। সন্তান বাবা
ছাড়া ঠিকই বড় হতে পারে কিন্তু মেয়ের স্নেহ, মমতা
ছাড়া একটা সন্তানের জিবনে কত কষ্টা, কত লড়াই করতে
হবে। তাই তো আমি গর্ব করে বলতে পারি আমি একজন
মা!!!
,
,
মহিলার কথা শুনে আমার গায়ের রোম দাড়িয়ে গেছে।
আমি যেন নিজের ভর নিতে পারছিনা। তখনই বাবা এসে
ডাকলেন আমায়,
,
:– চল তোর সিরিয়াল এসে গেছে!
,
:– বাড়ি চলো বাবা।
,
:– কি?? কেন তোর সিরিয়াল চলে এসেছে…
,
:– বাবা আমি বুজতে পেরেছি আমি অনেক বড় পাপ করতে
যাচ্ছিলাম। ও তো কোনো পাপ করেনি, অন্যের পাপের
শাস্তি আমার সন্তান কেন পাবে? আমি নিজের সন্তান
কে হত্যা করে নিজেকে পশু হিসেবে পরিচয় দিতে
পারবোনা বাবা। বাড়ি চলো প্লিস! আমার সন্তান বাঁচবে
বাবা, আমার পরিচয় বাঁচবে।
,
বাবা নিমিষেই কেদে ফেললেন। কিন্তু আমি জানি এই
কান্না সুখের। আমার মাথায় হাত রেখে বললেন,
,
:– আমি জানতাম আমার মেয়ে এরকম একটা জঘন্য কাজ
কখনই করতে পারেনা। বাড়ি চল মা, তোর যে এখন খুব
যত্নের প্রয়োজন। আমার নানু ভাই আসবে যে।
,
আমি লজ্জা পেয়ে বললাম,
:– চলো।
,
গাড়িতে উঠে বসতেই। বাবা আমাকে রেখে এপয়েনমেন্ট
টা ক্যেন্সেল করতে গেলেন। আমি পেটে হাত রেখে
বললাম,
:– তোর কিছু হবেনা সোনা! তোর মা তোর জন্য সব
পারবে, সব!!
…………………………………
,
রুপাঞ্জন আর আশ্রাফ খান ডাঃ ফজলে আবেদ এর
চেম্বারে বসে আছেন। তিনি একজন মনো বিজ্ঞানি।
ডাঃ ফজলে আহমেদ প্রথমে আশ্রাফ খান কে জিজ্ঞাস
করলেন,
,
:– ওনার সাথে কি কোনো এক্সিডেন্ট হয়েছে যার
কারনে উনি খুবই শক হয়ে আছেন??
,
:– আসলে ডাক্তার আমার ছেলের ওয়াইফ মানে আমার
বউমা রুপশা খান কে ও খুব ভালোবাসত মাসখানেক আগে
রুপশা একটা এক্সিডেন্টে মারা যায় তখন থেকে আমার
ছেলে এমন হয়ে আছে।
,
:– ওও আচ্ছা! আপনি একটু বাইরে গিয়ে ওয়েট করুন আমি
পেশেন্টের সাথে পার্সোনালি কথা বলবো।
,
:– ওকে ডাক্তার!
,
আশ্রাফ খান বেরিয়ে যেতে ডাক্তার নিজের চেকাপ
রুমে ডুকলেন। দেখলেন রুপাঞ্জন একটা চেয়ারে
অন্যমনস্ক হয়ে বসে আছে। উনি রুপাঞ্জন এর সাথে প্রথমে
ফ্রি হওয়ার চেষ্টা করলেন। একজন সাইকোলজিস্ট এর
এটাই কাজ রোগির মনে যা চলছে তা বের করে আনা
এবং সে চিন্তা থেকে মুক্ত করা। রুপাঞ্জন কে
ট্রিটমেন্ট দেওয়ার পর ও একে একে রুপশা আর ওর সাথে
ঘটে যাওয়া সব কথা বলল। কিভাবে সে রুপশা কে ঠকিয়ে
প্রতিশোধ নিয়েছে আর ওকে তাড়িয়ে দেওয়ার পর ওর
নেশায় পাগল হয়ে যাচ্ছে। ডাক্তার ফজলে আবেদ ধৈর্য
নিয়ে সব শুনলেন। তারপর টেবিলে সঝোরে আঘাত করে
বললেন,
What nonsense?? আপনারা কি মানুষ? মানুষ হয়ে কি
করে এমন কাজ করলেন। একটা মেয়ের জিবন এইভাবে
ধধংস করে বলছেন এখন ওকে ভালোবাসেন? ও মাই গড না
জানি মেয়েটা এখন কি সিচুয়েশানে আছে।
ডাক্তারের চেঁচামিচি শুনে আশ্রাফ খান ভিতরে
ডুকলেন।
,
:– মিঃ আশ্রাফ খান, আপনাদের বিজনেস রুপ অনেক
দেখেছি। আজ পশু রুপ ও দেখে ফেলেছি। বেরিয়ে যান
আমার চেম্বার থেকে এখানে কোনো পশুর চিকিৎসা
হয়না।
,
:– Mind your language! আপনি ভুলে যাচ্ছেন আপনি
আশ্রাফ খানের সাথে কথা বলছেন।
,
:–I know, যান বেরিয়ে যান।,
,
,
আশ্রাফ খান রাগে গিজ গিজ করতে করতে বেরিয়ে
গেলেন। এতোটা অপমানিত তাকে কখনই হতে হয়নি। ওই
পুচকে ডাক্তারের এতো সাহস আমার ছেলের সাথে
মিসভিহেব করে। এর শেষ দেখে ছাড়ব আমি!! তিনি
কপালের ঘাম মুছে ম্যানেজার কে কল দিয়ে চেঁচামেচি
করেতে লাগলেন। রুপাঞ্জন একপাশে দাড়িয়ে ভাবছে,
জানিনা রুপশা এখন কেমন আছে? ও কি কখন ও আমাকে
ক্ষমা করবে???
আমি কি ওর ক্ষমা পাওয়ার যৌগ্য??????
,