#তোমার_প্রেমের_ছোঁয়ায়💜
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি💜
#পার্টঃ১৫
দক্ষিনা বাতাস বইছে।বাতাসের সাথে ভেসে আসছে বেলিফুলের ঘ্রাণ।বাতাসের তীব্রতায় পুকুরের পানিতে ঢেউ তুলছে।পুকুরপাড়ে নানান রকম ফুল গাছগুলোতে ফুল ফুটেছে।আহি মনোযোগ সহকারে সব কিছু দেখছে।আর ভাবছে ঠিক কিভাবে আদিয়াতকে ওর জীবন থেকে সরানো যায়।মাথাটাও প্রচন্ড রকম ব্যাথা করছে।চোখপজোড়া বন্ধ হয়ে আসছে।তবুও নিজেকে সামলে রেখেছে আহি।আদিয়াতের সামনে সে নিজেকে দূর্বল প্রমান করতে চায় না।
আহিকে এমন চুপ-চাপ দেখে।আদিয়াত নিজেই বলে,
” কি ভাবছিস?”
আহি’র ফটাফট জবাব,
” ভাবছি আপনাকে কিভাবে আমার জীবন থেকে চিরতরে সরানো যায়।”
আদিয়াত চমকে উঠলো।কি বললো আহি এই মাত্র?কথাটা ঠিক হজম হচ্ছে না আদিয়াত।আহি বললেই হলো?আদিয়াত কখনই আহি’র থেকে দূরে যেতে পারবে না।কোনদিনও না।
” মানে?কিসব বলছিস?মাথা ঠিক আছে?”
আহি ঘুরে তাকালো আদিয়াতের দিকে।শান্ত চোখে তাকিয়ে বললো,
” আমার মাথা ঠিক আছে আপনার মাথা ঠিক নেই।”
আদিয়াত হাত দুটো মুষ্টিবদ্ধ করে নিলো।রাগমিশ্রিত কন্ঠে বললো,
” দেখ আহিয়ানা! আমাকে রাগিয়ে দিস না।ফলাফল খুব খারাপ হবে।”
আহি শক্ত কন্ঠে বলে,
” কি করবেন আপনি?হ্যা কি করবেন?আর কি চাই আপনার আমার থেকে।আমি মুভ অন করে ফেলেছি।তাহলে কেন আপনি আবারও আমাকে অতীতে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন?”
আদিয়াত চিৎকার করে বললো,
” মুভ অন করে ফেলেছিস,তাই না?কিসের মুভ অন হ্যা?আর কে তোর অতীত হ্যা?আমি তোর কোন অতীত নই।হ্যা অতীতে ছিলাম।তবে আমি তোর অতীতেও ছিলাম,বর্তমানেও আছি,আর ভবিষ্যতেও থাকবো। ”
আহি রেগে বলে,
” সেটা কখনই সম্ভব না।”
আদিয়াত রাগি চোখে তাকালো।বললো,
” কেন সম্ভব না একশোবার সম্ভব।আমি তোকে বিয়ে করবো।”
আহি তাচ্ছিল্য হাসলো।বললো,
” হাহ্! বিয়ে?তাও আমাকে?হাসালেন।আপনার মা আমার মতো এতিম মেনে নিবে তো?যখন ভালো ছিলাম তখনিই মেনে নিতে পারে নি।আর এখন তো আমি পৃথিবীর জঘন্যতম মেয়ে।আমি মদ খাই,সিগারেট খাই,ক্লাবে রাত কাটাই,জিন্স, ট্প্স এইসব পড়ি।আমার মাজে কোন ভালো দিক নেই।তাহলে কেন চান আমাকে বিয়ে করতে?”
আদিয়াত এইবার সেই অনাকাক্ষিত সত্যিটাই বলে ফেললো।
” কারন আমি তোকে ভালোবাসি।”
আহি চোখ বুজে নিলো।এটা কি বললো আদিয়াত?আহি’র সারাশরীরে কাঁপন ধরে গেলো।এই কথাটা, এই কথাটা শোনার জন্যে আহি কতো অপেক্ষা করেছে।দিন রাত আল্লাহ্ তায়ালার দরবারে সেজদা’য় কান্নাকাটি করেছে।ওর প্রতিটা মোনাজাতে আদিয়াত ছিলো।আজ ও শুনতে পেরেছে। নিজের ভালোবাসার মানুষটির মুখে ভালোবাসি শব্দটা শুনেছে কিন্তু আজ আহি তো চায় না এইটা।সে চায় না আদিয়াত ওকে ভালোবাসুক।চায় না! চায়না আহি কারো ভালোবাসা।বিধবাদের রঙ সাদা,তাদের ভালোবাসার রঙে রঙিন হওয়ার অধিকার নেই।
আহি নিজের কান্না আটকাবার যথা সাধ্য চেষ্টা করছে।আঁখিজোড়া মেলে তাকায় আদিয়াতের দিকে।আহির চোখজোড়া ভয়ানক লাল হয়ে গিয়েছে।আদিয়াত আবার বলে,
” আমি ভালোবাসি তোকে।সেই ছোট্টবেলা থেকে ছোট আহিয়ানাকে ভালোবাসি।ছোট আহিয়ানা যখন আমাকে ভয় পেয়ে লুকিয়ে যেতো তার সেই ভীতু চেহারা দেখে আমি প্রেমে পড়েছি।আমার আহিয়ানা তো এমন ছিলো না?কেন এমন হয়ে গেলি?ফিরে আয় না আমার আহিয়ানা! আমি যে বড্ড কাঙ্গাল তোর ভালোবাসার কাঙ্গাল।”
হঠাৎ আহি শব্দ করে হেসে দিলো।ওর হাসির ঝংকার চারদিকে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।হাসতে হাসতে আহি বলে,
” বাহ! খুব ভালো।এখন আমার জন্যে ভালোবাসা উতলিয়ে পড়ছে।তাই না?আর আমি যখন শতো কষ্ট নিয়ে বার বার আপনাকে বলেছিলাম।আমি আপনাকে ভালোবাসি।আমাকে ফেলে যাবেন না।তখন তো আমি খুব লাজুক ছিলাম।তাও নিজের লজ্জা সরম ত্যাগ করে বেহায়া হয়েছিলাম।আপনি কি করেছিলেন?আমাকে বেহায়া,নির্লজ্জ মেয়ে বলে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন।হ্যা আমি ভালোবাসতাম আপনাকে।কিন্তু এখন ভালোবাসি না।আর এখনি যদি আপনার প্রতি আমার ভালোবাসা থেকে থাকে।তাহলে তা আপনার প্রতি আসা তিক্ততায় ডেকে গিয়েছে।তাই চাইলেও আজ আমি আপনার ভালোবাসা গ্রহণ করতে পারবো না।”
আদিয়াত ভীষনভাবে রেগে গেলো।কেন পারবে না?সে তো ওর ভালোর জন্যেই বলেছিলো তাই না?কেন আহি বুজে না ওকে?কেন বুজে না যে আদিয়াত সত্যি ওকে ভালোবাসে।আদিয়াত তেড়ে গিয়ে আহি’র দু বাহু চেপে ধরলো।তাও প্রচন্ড শক্ত করে।ব্যাথায় আহি চোখ বুজে নিলো।তাও কিছু বললো না।ঠোঁটে ওর বিরাজমান এখনো তাচ্ছিল্যের হাসি।
আদিয়াত আহিকে ঝাকিয়ে চিল্লিয়ে বলে,
” কেন? কেন আমাকে ভালোবাসিস না?কেন বাসিস না?ওহ! ওই ছেলেটাকে ভালোবাসিস তাই না?এখন তো আমায় আর ভালো লাগবেই না।নতুন কাউকে পেয়েছিস তাই না?মুভ অন করে ফেলেছিস।কিন্তু আমি তো হতে দিবো না! ওই ছেলেটাকেও মেরে ফেলবো।তোকে মেরে ফেলে নিজেও মরে যাবো।বুজেছিস তুই?বুজেছিস?”
আহিকে প্রচন্ড জোড়ে ঝাকানোর কারনে আহির মাথা ব্যাথায় ছিরে যাচ্ছে।চোখে মুখে অন্ধকার দেখছে।শ্বাস আটকে আটকে আসছে।আহি’র রাগ উঠে গেলো।সে শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে আদিয়াতকে ধাক্কা মেরে দিলো।তারপর চিৎকার করে বলে,
” হ্যা!হ্যা ভালোবাসি আমি ওই ছেলেকে।সে আমার বেষ্টফ্রেবন্ড।আর বেষ্টফ্রেন্ড কে ভালোবাসলে সমস্যা কোথায়?জানেন বেষ্টফ্রেন্ড এর চেয়ে সেরে লাইফ পার্টনার আর কেউ হতে পারে না।বুজেছেন আপনি?আমি আদ্রকে……..”
আর বলতে পারলো।হঠাৎ আহি নাক মুখ দিয়ে গলগল করে রক্ত বের হয়ে গেলো।কি থেকে কি হলো?আদিয়াত থমকে দাড়ালো এটা কি হলো?আদিয়াতের স্নায়ু কাজ করা বন্ধ হয়ে গিয়েছে।আহি জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে নিতে ঢলে পড়ে যেতে নিতেই।আদিয়াত দ্রুত গিয়ে আহিকে দুহাতে জড়িয়ে ধরলো।বিষ্ময়ভরা নয়কে কাতরনন্ঠে ডেকে উঠলো,
” আহিয়ানা!!”
#চলবে_________
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাবেন।