তোমার প্রেমের ছোঁয়ায় পর্ব -২৬ ও শেষ

#তোমার_প্রেমের_ছোঁয়ায়
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পার্ট_২৬ (লাস্ট পার্ট)
আহি বারান্দায় আনমনে আকাশের দিকে তাকিয়ে অস্রু ঝরাচ্ছে।সবাই তার অতীত নিয়ে তাকে কথা শোনাচ্ছে।কেন এমন করে সবাই?ওর দিকটা কেউ চিন্তা করে না কেন? জীবনে কতো কিছু ঘটে যায়।তাই বলে কি এতে ওর হাত থাকে? না কখনই না।সে তো কিছুই করিনি।দুঃখ কষ্টগুলো সব আল্লাহ্’র তায়ালার হাতে থাকে।আহি যখন এসব ভাবতে ব্যস্ত। ঠিক তখনই একজোড়া হাত ওর পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে।আহি জানে এটা কে? এটা ওর ভালোবাসা। ওর আদিয়াত।আহি তবুও চোখ বুঝে রইলো।আদিয়াত এইবার আস্তে করে বলে, ‘ মন খারাপ?’

আহি মৃদ্যু হেসে উত্তর দেয়, ‘ নাহ।আপনি সাথে আছেন তো।এখন আর মন খারাপ নেই।’

একটু থেমে আবার বলে, ‘ অনুষ্ঠান তো শেষ না?আপনি এখানে কি করছেন?’

আদিয়াত আহিকে ঘুরিয়ে নিজের দিক ফিরালো।আহির গালে হাত রেখে ধীর কন্ঠে বলে, ‘ অনুষ্ঠান শেষ করে দিয়েছি।’

আহি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতে।আদিয়াত নিজেই বলে, ‘ ওই মহিলাকে আচ্ছা মতো বলেছি।কতোবর সাহস আমাকে বউকে কথা শোনায়।আর মন ভালো লাগছিলো না।তাই অনুষ্ঠানও শেষ করে দিয়েছি।শোন আহি,কেউ তোমাকে অযথা কথা শোনালে প্রতিবাদ করতে শিখো।কেন এরকম চুপ করে থাকো।মৌনতা ধারন করে রাখলেই মানুষ ভাবে তুমি দূর্বল।কেন অন্যের কাছে নিজেকে দূর্বল প্রকাশ কর।তুমি নিজেকে স্ট্রোং রাখবে আহি।আবেগি হবে শুধু আমার কাছে। কি বলেছি বুঝেছো?’

আহি মাথা নাড়ালো।তারপর আদিয়াতের বুকের মাজে মাথা রাখলো।এই লোকটার বুকে যে শান্তি পায় আহি।আর কোথাও পায় না। আহি নিজের মৃত্যুর সময় শেষ নিঃশ্বাসটাও এই লোকটার বুকেই নিতে চায়।

আদিয়াত আহিকে নিজের বুকের মাজে আরো চেপে ধরলো।তারপর আলতো হাতে আহির চুলগুলো ঘার থেকে সরিয়ে ঠোঁট ছোঁয়ালো আহির ঘারে।আহি দুহাতে আদিয়াতের পিঠ খামছে ধরলো।এতে আদিয়াত যেন আরো পাগল হয়ে গেলো।এলোমেলো হয়ে গেলো সকল অনুভুতি।খুব করে কাছে পেতে চাইছে আজ আহিকে।একেবারে নিজের মাজে বিলীন করে দিতে চাইছে।আদিয়াত নেশাক্ত কন্ঠে বলে, ‘ আহি তোমাকে ভালোবাসতে চাই।অনেক অনেক ভালোবাসতে চাই।’

আহি মাথা উঠিয়ে আদিয়াতের কপালে নিজের ঠোঁটের স্পর্শ দিয়ে আবারও মুখ গুজলো আদিয়াতের বুকে।আদিয়াত আহিকে কোলে তুলে নিলো।সে বুজেছে আহিও আজ আদিয়াতের ভালোবাসার নদীতে ডুবতে চায়।
আদিয়াত আহিকে বিছানায় সুইয়ে দিলো।নেশা ভরা চোখে তাকিয়ে রইলো আহির দিকে।আহি চোখ বুজে ঘনঘন শ্বাস নিচ্ছে। আদিয়াত নিজের গায়ের পাঞ্জাবিটা খুলে।বিছানায় সুয়ে থাকা আহির শরীরে নিজের ভর ছেরে দিলো।আহি চোখজোড়া খুললো।নিভু নিভু দৃষ্টি মেলে তাকালো আদিয়াতের দিকে।আদিয়াত আস্তে আস্তে আহির কপালে, গালে, থুতনীতে ঠোঁটের স্পর্শ দিতে লাগলো।তারপর কিছুক্ষন একদৃষ্টিতে আহির দিকে তাকিয়ে থেকে আহির ঠোঁটে নিজের ঠোঁট জোড়া চেপে ধরে চুমু খেতো লাগলো।আহি কেঁপে উঠে দুহাতে অর্থ’র পিঠ সজোড়ে খামছে ধরে।আদিয়াতের হাতের শীতল স্পর্শ আহির আচঁলের ফাকে ওর কোমড়ে বিচরন করছে।আহির কাঁপতে কাঁপতে নিশ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম। আদিয়াত এইবার আহির ঠোঁট ছেরে আহির শাড়ির আচঁল খুলে নিয়ে আহির গলায় মুখ ডুবিয়ে দিলো।ভালোবাসার মাতাল স্পর্শে ভরিয়ে দিতে লাগলো তার আহিকে।আজ এতো বছরের সকল অভিমান গলে গেলো দুটি ভালোবাসার মানুষদের তীব্র ভালোবাসায়।মিলেমিশে একাকার হয়ে গেলো দুটি মন,দুটি আত্মা, দুটি শরীর।থাকবে না আর কোন বাধা বিপত্তি।রবে শুধু ভালোবাসা ভালোবাসা আর ভালোবাসা
___________

তিনবছর পর,,,,,,,,,,,

হস্পিটালের করিডোরে অনবরত পায়চারি করছে আদিয়াত।ঘেমে নেয়ে একাকার ও।পাশেই সিয়ার হাত ধরে দাড়িয়ে আছে নিহান।সিয়া আর নিহানেরও বিয়ে হয়েছে দেড় বছর চলছে।সিয়া প্রেগনেন্ট ছ’মাসের। আর আহির ডেলিভারি হচ্ছে।সেইজন্যেই সবাই হস্পিটালে এসেছে।
নিহানের হাত থরথর করে কাঁপছে।সিয়া ভ্রু-কুচকে বলে, ‘ কি হয়েছে আপনার? কাঁপছেন কেন?’

নিহান কাপা কন্ঠে বলে, ‘ আহির কতোটা কষ্ট হচ্ছে।ওর চিৎকারে আমার কলিজা ছিরে যাচ্ছে।আর তোমার সময় তো মনে হয় আমি নিজেই আগেই অজ্ঞান হয়ে যাবো।’

সিয়া বিরক্ত হয়ে দাঁতে দাঁত চিপে বলে,’ এটা সব মেয়েদেরই কষ্ট হয়।আর আমার জন্যে আপনার এতো দরদ দেখে না আমার বিরক্ত লাগছে।এহহ বিয়ের আগে তো সেই ভাব নিয়ে চলতেন।মানে সিয়া নামের কেউ যে তার জন্যে পাগল সেদিকে ধ্যানই দিতো না।অথচ তলে তলে আমাকে বিয়ে করে বাসরও করে ফেলতো মনে মনে। বজ্জাত লোক। আমার সব মনে আছে।একবার শুধু বেবি আসুক।আমি আর সে মিলে।আপনার মাথার সব চুল ছিরে ফেলবো।’

নিহান করুন চোখে তাকালো সিয়ার দিকে তারপর মনে মনে বলে, ‘ এমনিতেই তো দিনরাত আমার জীবনটাকে ঝালাপালা করে দিচ্ছে বাচ্চা গর্ভে আসার পর থেকে।তারপর বাচ্চা আসলে আমি তো শেষ হয়ে যাবো।একসাথে দুটো বাচ্চা সামলাতে গিয়ে।’

এদিকে সিয়া নিহানের এমন ফেস দেখে এই সিরিয়াস সময়েও হাসতে ইচ্ছে করছে।তবুও হাসলো না। নিজেকে সামলে নিলো।
———-
আদিয়াত অস্থির হয়ে বার বার বলছে, ‘ এতো সময় কেন লাগছে?আর কতোক্ষন লাগবে? ও এতো চিৎকার কেন করছে?ওর কি বেশি কষ্ট হচ্ছে?আমি কি একবার ভীতরে যাবো?আমি গেলে হয়তো ভয় পাবে না।’

আদিয়াত মা নিজের ছেলেকে বার বার শান্ত হতে বলছেন।আদিয়াত অস্থির হয়ে আহির কেভিনের সামনে যেতেই বাচ্চার কান্না শব্দ ভেসে আসে।সাথে সাথে সবাই ‘ আলহামদুলিল্লাহ!! ‘ বলেন। কিছুক্ষন পর নার্স সাদা তোয়ালে পেচানো একটা ফুটফুটে বাচ্চা এনে আদিয়াতের হাতে দিয়ে বলে, ‘ স্যার, আপনার ছেলে হয়েছে।’

আদিয়াত তাকালো নিজের ছেলের দিক।কি সুন্দর লাগছে।পিটপিট চোখে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।বুকের মাজে প্রশান্তির হাওয়া বইছে।ও বাবা হয়েছে।এটা ওর ছেলে।ভাবতেই কেমন যেন নিজেকে পৃথিবীর সর্ব সুখি মানুষ মনে হচ্ছে। আদিয়াত এইবার ধরা গলায় বলে, ‘ নার্স।আমার স্ত্রী?’

নার্সটি হেসে দিয়ে বলে, ‘ তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ্য আছেন?আপনি গিয়ে দেখা করে আসুন।’

আদিয়াত ওর ছেলেকে ওর মায়ের হাতে দিলো।সবাই বেবিকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরলো। আদিয়াত আহির কেভিনে ঢুকে দেখে আহি বেডে সুয়ে আছে।আদিয়াতকে দেখে মলিন হাসলো।আদিয়াত দ্রুত পায়ে এগিয়ে গিয়ে আহির কপালে চুমু খেলো।ভেজা কন্ঠে বলে,’ ধন্যবাদ বউ।পৃথিবীর সবথেকে সুন্দর অনুভূতির সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্যে।অনেক অনেক ধন্যবাদ।’

আহি হেসে নিজেও দূর্বল হাতজোড়া দিয়ে জড়িয়ে ধরলো।আদিয়াত এইবার আহির ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো।দরজা নক করার শব্দে দুজনে সরে আসে।নার্স এসে বাচ্চাটিকে আহির কোলে দিয়ে যায়।আদিয়াত চুমু খেলো আহির কপালে তারপর বেবির কপালে।আহি ছলছল চোখে আদিয়াতের উদ্দেশ্যে বলে,’ আমাদের সন্তান আদিয়াত।’

আদিয়াত হেসে আহি আর বেবিকে আলতো হাতে জড়িয়ে নিয়ে বললো,
‘ হ্যা! আমাদের সন্তান।তোর আমার ভালোবাসার চিহ্ন। ভালোবাসি বউ। অনেক বেশি ভালোবাসি।’

‘ আমিও ভালোবাসি।’

এদিকে কেভিনের দরজার সামনে নিহানের ফোনে আদ্র আর সিয়ার ফোনে এশা, আদিয়াত আর আহিকে দেখছে
আর ছলছল চোখে হাসছে।আজ তারা দূর থেকে নিজের ভালোবাসার মানুষদের সুখী দেখে নিজেরাও খুশি।
এশা আর আদ্র মনে মনে দুজনে একই কথা বললো,

‘ আর আমিও দূর থেকে অনেক ভালোবাসি।সারাজীবন ভালোবাসবো।’

।।।।।।সমাপ্ত।।।।।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here