তোমার প্রেমের ছোঁয়ায় পর্ব -২৩

#তোমার_প্রেমের_ছোঁয়ায়💜
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি💜
#পার্টঃ২৩
ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে মাত্রই।নিকষ কালো আধার রাত্রী পেরিয়ে কমলা রঙের দীপ্তি ছড়িয়ে উদয় হচ্ছে সূর্যি মামা।পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ।আজান শেষ হয়েছে প্রায় অনেক্ষন হলো।পিটপিট করে চোখ মেলে তাকায় আহিয়ানা।সে অদ্ভূত এক মধুর ধ্বনি শুনতে পারছে।সেই শব্দগুলো একেবারে হৃদপিন্ডে কি আঘাত করছে।মিষ্টি এক যন্ত্রনা হচ্ছে বুকের বা-পাশটায়।এক সুরালো মধুর ধ্বনি, ঢিপ,ঢিপ,ঢিপ,ঢিপ।আহিয়ানা তন্দ্রাভাব কেটে যেতেই চোখ বড় বড় করে তাকালো।আরে সে তো আদিয়াতের বাহুবন্ধনে আবদ্ধ।লোকটা তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে ঘুমোচ্ছে।আদিয়াতের হৃদপিন্ডের ধুকপুকানির আওয়াজটাই এতোক্ষন পাচ্ছিলো আহিয়ানা।তার মানে সে কাল পুরো রাত আদিয়াতের বুকেই ঘুমিয়েছে।মনটা ভালো লাগায় ছেয়ে গেলো।কাল রাতের কথা মনে পরতেই একরাশ লজ্জা এসে ভর করলো ইয়াসিবার চোখে মুখে।সে এখন বউ,অর্ধাঙ্গিনী,স্ত্রী। কার?আদিয়াতের।হ্যা আদিয়াতের স্ত্রী সে।কথাটা যতোবার আহিয়ানার মন আর মস্তিষ্ক জানান দেয়।ভালো লাগার চরম সীমানায় পৌছে যায় আহিয়ানা।আহিয়ানা এক ধ্যানে ঘুমন্ত আদিয়াতের দিকে তাকালো।কি নিস্পাপ বাচ্চাদের মতো লাগছে।এই লোকটা তার স্বামি।যাকে সে সেই ছোট বেলা থেকে মনে প্রানে ভালোবেসে এসেছে।ওর প্রতিটি মোনাজাতে যাকে চেয়েছে।আল্লাহ্ তায়ালা তাকেই দিয়েছেন।ইয়াসিবা আর কোন দুঃখ নেই।এই লোকটা ওর পাশে থাকলে আর কিছু চায় না ও।আদিয়াতের বাহুতে যেন ওর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে পারে এইটাই মনে প্রানে দোয়া চাইলো আহিয়ানা।
আহিয়ানা আর কোন অভিমান রাখতে চায় না।সে আবার নিজের আগের জীবন ফিরে পেতে চায়। যে আহিয়ানা পাগলের মতো আদিয়াতকে ভালোবাসতো তার জন্যে সব করতে রাজি ছিলো।সেই আহিয়ানা হতে চায়।কিন্তু পরিমুহূর্তে কিছু একটা ভেবেই মন খারাপ হয়ে গেলো আহিয়ানার।আদৌ কি সে পারবে আগের আহিয়ানা হতে?ও একটা বিরাট তাকমা নিয়ে ঘুরছে।সমাজের কাছে সে তো ফেলনা।তার কোন দাম নেই।সে ডিভোর্সি। আর আদিয়াত? সে তো এক উত্তম পুরুষ।যাকে সব মেয়েই তার স্বামি রূপে গ্রহন করার জন্যে পাগল।সেখানে আহিয়ানার মতো একটা মেয়ে কি আদিয়াতের যোগ্য?

-” সমাজ কি বললো?না বললো।কি ভাবলো? না ভাবলো।এতো সব চিন্তা করে তো লাভ নেই আহিয়ানা।তুই আমি কিভাবে সুখে থাকবো সেটাই ম্যাটার করে।তুই আমাকে আর আমি তোকে মেনে নিয়েছি কি-না সেটা ম্যাটার করে।আর আমরা দুজন দুজনকে পাগলের মতো ভালোবাসি।সেখানে সমাজের কথা চিন্তা করে আমাদের মাজে দূরত্ব আনা একদম বোকামি হবে আহিয়ানা।”

মুচকি হেসে আদিয়াত কথাগুলো বলেই।আহিয়াবার কপালে গাঢ়ো এক চুমু খেলো।আহিয়ানা অবাক নয়নে তাকিয়ে আছে আদিয়াতের দিকে।এই লোকটা তার মনের কথা বুজলো কিভাবে?সে তো মুখ ফুটে কিছু বলেনি?তাহলে?

আদিয়াত আহিয়ানাকে বুকে নিয়েই উঠে বসলো।আদূরে গলায় বললো,

-” এতো চিন্তা করে লাভ নেই।চল আগে আমাদের বিয়ের প্রথম দিনটা নামাজ পরে শুরু করি।”

আহিয়ানার আধার মুখে আবার হাসি ফুটে উঠলো।ও নিজেকে আদিয়াত থেকে ছাড়িয়ে উঠতে নিলেই আদিয়াত ঝট করে আহিয়ানাকে কোলে তুলে নেয়।আহিয়ানা দ্রুত দুহাতে আদিয়াতের গলা জড়িয়ে ধরলো।অস্থির কন্ঠে বললো,

-” আরে কি করছেন আপনি?ছাড়ুন। আমি একাই যেতে পারবো।”

আদিয়াত ওয়াশরুমের দিকে আগাতে আগাতে বললো,

-” আমি যা করছি আমাকে কর‍তে দে।নাহলে কোলে নিয়ে সোনা মিনি ছাদ থেকে ফেলে দিবো।”

আহিয়ানা মুখ ফুলিয়ে বললো,

-” বিয়ের পরের দিন থেকেই এমন ধমকা ধমকি শুরু করলেন?”

আদিয়াত ভ্রু উচু করে তাকাতেই চুপ হয়ে যায় আহিয়ানা।আদিয়াত নিঃশব্দে হাসলো।তারপর আহিয়ানাকে নিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে দুজনে ফ্রেস হয়ে ওযু করে নামাজ পরে নিলো।নামাজ শেষে আদিয়াত বললো,

-” তুই মিনি ছাদে যা।আমি কফি নিয়ে আসছি।”

আহিয়ানা ছোট্ট আওয়াজে বললো,

-” আপনি কেন যাবেন?আমিই যাচ্ছি।”

আদিয়াত তীক্ষ্ম চোখে তাকাতেই আহিয়ানা ভৌদৌড়ে একেবারে মিনি ছাদে চলে গেলো।সেখানের দোলনায় বসে আদিয়াতকে মনে মনে অনেক ভয়ানক বকাও দিলো।
এদিকে আদিয়াত আহিয়ানাকে এইভাবে ভয় পেতে দেখে হাসতে হাসতে কফি আনতে চলে গেলো।

—–

-” দরজা খোল এশা মামুনি।”

-” মা আমার দরজা খোল এইভাবে কাল থেকে নিজেকে ঘরবন্ধি করে রাখলে কিভাবে হবে?”

-” মা দরজা খোল।পাগলামো করিস না।”

এক নাগারে এশাকে ডেকে চলেছে এশার বাবা মা।কিন্তু এশা টু শব্দও করছে না।কেন যেন ওর গলা দিয়ে কোন আওয়াজই বের হচ্ছে না।কন্ঠনালিতে কথাগুলো আটকে বাজেভাবে ব্যাথা করছে।এতো কষ্ট,এতো যন্ত্রনা কিভাবে সহ্য করবে সে?সবটা তো মেনে নিয়েছিলো।আদিয়াত আর আহিয়ানা যেন সুখে থাকে সেই দোয়া করেছিলো ও।তবে আজ কেন?এতো কষ্ট লাগছে।কেন মনে হচ্ছে ওর কলিজাটা কেউ ওর বুক চিরে বের করে ছিন্নভিন্ন করে দিচ্ছে।নিজের মন, মস্তিষ্ক সব শূন্য মনে হচ্ছে।বুকটা হাহাকার করছে।নিজেকে পাগল, পাগল লাগছে ওর।দুহাতে চুল টেনে ধরে সারাঘর পায়চারি করলো।কিভাবে সে এই কষ্টগুলো কমাবে?কিভাবে? এশা কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে ওয়াশরুমে ছুটলো।কল ছেড়ে ইচ্ছামতো চোখে মুখে পানি দিলো।তারপর ওযু করে জায়নামাজ বিছিয়ে আল্লাহ্ তায়ালার দরবারে এই কষ্ট যাতে কমে যায় সেই দোয়া করলো।

-” হে রাব্বুল আলামিন।আমার কষ্টগুলো কমিয়ে দেও।আমাকে সবটা সহ্য করার ক্ষমতা দেও আল্লাহ্।আমি যেন নিজেকে সামলাতে পারি।আমি কান্না থামাতে পারতেছি না আল্লাহ্।কিন্তু আমি তো কাঁদতে চাই না।কেন কাঁদবো?আদিয়াত তো সুখে আছে তাই না?আমার ভালোবাসার মানুষটি সুখে থাকলেই তো আমি সুখি।আর কি চাই বলো?হে আমার প্রতিপালক,পরম দয়াশীল আমাকে তুমি শক্তি দেও।আমার বুকটা কষ্টে ফেটে যাচ্ছে আল্লাহ্।আমাকে এই কষ্ট থেকে নিস্তার দেও।আমার ভালোবাসার মানুষটি যেন সুখে থাকে আল্লাহ্।আমার দোয়াগুলো কবুল করো। আমি তোমার দরবারে আজ ভিক্ষা চাইছি হে আমার রাব্বুল আলামিন।আমার দোয়া কবুল করো।”

এশা আল্লাহ্ দরবারে হাউমাউ করে কাঁদছে।ওর প্রতিটি আর্তনাদ যেন কতোশতো কষ্টে মোড়ানো তা বলে বুজানো সম্ভব না।তবুও সে সামলে উঠবে।নিজের মনকে সামলাবে।কাঁদবে না,ভেঙ্গে পরবে না।
ইসস, ভালোবাসা হারানোর যন্ত্রনা যে মৃত্যু যন্ত্রনা থেকেও বেশি।এর থেকে মৃত্যুও ভালো।ভালোবাসায় যেমন সুখ বিরাজমান আবার দুঃখ ও বিরাজমান।তবে এক তরফা ভালোবাসাগুলো সত্যিই অনেক পবিত্র।
—–

আহিয়ানা দোলনায় বসে পা দোলাচ্ছিলো।তখনি আদিয়াত ধপ করে কফি হাতে ওর পাশে বসে পরলো।আহিয়ানা চমকে উঠে।সে ভয় পেয়ে গিয়েছিলো।

-” এইভাবে কেউ বসে?আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম তো।”

আদিয়াত একটা কফির মগ আহিয়ানার হাতে দিয়ে কিছু বললো না।সামনে উদয়মান সূর্য উঠা দেখতে লাগলো।আহিয়ানা এখনো তাকিয়ে আছে আদিয়াতের দিকে।সূর্যের হালকা হলদে আলোতে কি সুন্দর দেখাচ্ছে আদিয়াতের মুখশ্রী।নামাজ পরায় যেন চেহারার সৌন্দর্য দ্বিগুন বেরে গিয়েছে।
এই লোকটার সব কিছুই সুন্দর।তার চুল! ওই সিলকি চুলগুলো আহিয়ানার এলোমেলো করে দিতে ইচ্ছে করে।তার কপাল! এই কপালে গভীরভাবে নিজের আদুরে স্পর্শ দিতে ইচ্ছে করে।তার চোখ! সেই চোখের সাগরে আহিয়ানার তলীয়ে যেতে ইচ্ছে করে।তার গাল।ওই ফর্সা গাল দুটো টেনে দিয়ে বাচ্চাদের মতো আদর কর‍তে ইচ্ছে করছে।ফর্সা নাকটা টেনে লাল করে দিতে ইচ্ছে করে।আর ঠোঁটে! এক ঢোক চিপলো আহিয়ানা।এই ডার্ক রেড ঠোঁটজোড়াতে।নাহ, আর ভাবতে পারলো না।লজ্জায় ওর গাল দুটো লাল হয়ে গেলো।এমতাবস্থায় আদিয়াতের আরো ভয়ানক একটা কথায় আরো নেতিয়ে গেলো মেয়েটা।

-” আমার দিকে তাকিয়ে, আমাকে নিয়ে নানান চিন্তা করে লজ্জায় লাল নীল হয়ে যাচ্ছিস।এখন আমি যে তোকে এইভাবে দেখে বেসামাল হয়ে যাচ্ছি।সেটা কি হবে?আমার বুকে যে তুই আগুন ধরিয়ে দিচ্ছিস।তোর আগুনে জ্বলসানো রূপ দিয়ে তার কি হবে?বলতে পারিস?”

#চলবে________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here