আমি তুমি আমরা পর্ব -০১

বৃত্ত আপনি ঠিক কি চাইছেন বলুন তো?আর কতো চলবে এসব!”
অফিস থেকে মাত্রই এসেছে বৃত্ত তারই মাঝে ইসমাতের এমন কথায় বিরক্তি নিয়ে তাকায় বৃত্ত।
তারপরেও নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,
” কি বলতে চাচ্ছো তুমি?”
ইসমাত বললো,
” আমাদের সম্পর্কের কথা”
” কেন কি হয়েছে?”
ইসমাত চেঁচিয়ে বলে,
” কি হয়েছে আপনি জানেন না? আমাফের বিয়ের বয়স ২ বছর আর আপনি? আপনি আমাকে এই ২ বছরে কোনদিন নিজের স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেছেন?”
বৃত্ত শান্ত স্বরেই বলে,
” এক রুমে থাকছি এমন কি এক বিছানায় ঘুমোচ্ছি।সবাই জানে আমরা স্বামি স্ত্রী তাহলে আমি তোমাকে স্ত্রী হিসাবে স্বীকৃতি দিলাম না কিভাবে?”
ইসমাত তাচ্ছিল্য করে হাসলো।বললো,
” এক রুমে আর এক বিছানায় ঘুমোলেই কি স্বামি স্ত্রী হয়ে যায়?নাহ! হয় না! মনের মিল থাকা লাগে।যা আমাদের কখনোই ছিলো না।”
বৃত স্বাভাবিক কন্ঠেই বললো,
” তো এখন আমার এতে কি করার আছে?”
ইসমাত জলভরা নয়নে তাকালো।এই লোকটা কি আদৌ তার স্বামি?স্বামিরা বুজি এরকমই হয়?কোথায়? তার মা, বাবা আর শাশুড়ি মা, শুশুড়ের মাঝে কি সুন্দর ভালোবাসা।একজন ব্যাথা পেলে অন্যজন কাঁদে। বৃত্ত আদৌ কোনদিন আমার ব্যাথায় ব্যাথিত হয়েছে? না হয়নি! কোনদিন হয় নি?’ স্বামি ‘ এই নামটি ধারণকারি ব্যাক্তিটি যে একজন নারির কাছে কি তা হয়তো কোন নারি তা মুখে বলে বুজাতে পারবে না।নারিদের সবচেয়ে আপন এই স্বামি নামক মানুষটি।তাদের সকল ভালোবাসা, বিশ্বাস, দূঢ়তা সবটা ঘিরে থাকে তাদের স্বামিকে নিয়ে।কিন্তু স্বামির সোহাগ ক’জনে পায়?কোন কোন নারি পোড়াকপালিও হয় যাদের কপালে স্বামি সুখ মিলে না।তাদের মাজে একজন ইসমাত নিজেকে ভাবে।নাহলে বিয়ের দুবছরে কেন সে আজও তার স্বামির ভালোবাসা পেলো না।হ্যা তাদের বিয়েটা পারিবারিকভাবে ছিলো। কিন্তু বলে না সবাই বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হলেই না-কি আল্লাহ্ তায়ালা স্বামি স্ত্রীর মাজে এক অদ্ভূত মায়া সৃষ্টি করে দেন।সেই মায়া থেকেই আস্তে আস্তে জন্ম নেয় ভালোবাসা।ইসমাত তো সে কবেই নিজের স্বামিকে ভালোবাসে।কিন্তু বৃত্ত?ইসমাত আজও বৃত্তের চোখে নিজের জন্যে ভালোবাসা দেখেনি।কম তো চেষ্টা করেনি ইসমাত?তবে কেন সে নিজের স্বামির মনে নিজের জন্যে ভালোবাসা সৃষ্টি করতে পারলো না?তবে কি ইসমাত ব্যর্থ হলো এই সংসার নামক যুদ্ধে সেকি পরাজিত তবে?হয় পরাজিতই তো যে স্বামির ভালোবাসা পায় না।তার থেকে হতোভাগা নারি আর কেইবা হবে? ইসমাত ঢোক গিললো কষ্টগুলোকে ধামা চাপা দেওয়ার চেষ্টা করলো।কন্ঠনালিতে ব্যাথা করছে ইসমাতের।তবুও বহুকষ্টে বলে,
” আমাদের সম্পর্ক আর পাঁচটা স্বামি স্ত্রীর সম্পর্কের মতো নয়! আমি এই ২ বছরে কম চেষ্টা করেনি আপনার মনে আমার জন্যে ভালোবাসা তৈরি করতে।তবে হয়তো আমি ব্যর্থ।তাই শুধু কেন নিজেদের জীবনটাকে এলোমেলো করে রাখবো।আমাদের সম্পর্কের না এপাড় আছে না ওপাড়।আমরা মাঝ নদীতে ভাসছি।এর থেকে ভালো কোন একটা পথ বেছে নেওয়া!”
বৃত্ত মনোযোগ দিয়ে শুনলো।বুজার চেষ্টা করলো ইসমাত ঠিক কি বলতে চাইছে?কিন্তু বুজলো না সে।তাই প্রশ্ন করলো,
” কি বুজাতে চাইছো তুমি?”
” এইটাই যে আমাদের আলাদা হয়ে যাওয়া উচিত!”
বৃত্ত বিষ্মিত নয়জোড়া দিয়ে তাকালো ইসমাতের দিকে।এটা ইসমাত তো?কম তো অবহেলা সয্য করেনি মেয়েটা ; তাও কোনদিন আলাদা হওয়ার কথা বলেনি।তবে আজ কি শুনছে এসব বৃত্ত।বৃত্ত বললো,
” ইসমাত তুমি ঠিক আছো তো? কি বলছো এসব?”
” আমি ঠিকই বলছি যে সম্পর্কে কোন ভালোবাসা,মায়া,মহব্বত নেই।সে সম্পর্ক শতভাগ চেষ্টা করেও টিকিয়ে রাখা যায় না।এটলিস্ট জোড় করে তো কোন কিছুই হয় না।তাই আমি চাইছি আমরা এই জোর করে বাধা সম্পর্ক থেকে মুক্ত হয়ে যাই।বিয়ে নামক বন্ধনের সুতো একেবারে ছিরে ফেলি এইটাই ভালো হবে।”
কথাগলো বলার সময় ইসমাতের যেন কলিজা ফেটে যাচ্ছিলো।তাও বললো কথাটা।যদি তাকে হারানোর ভয়ে বৃত্ত তাকে আপন করে নেয় সেই আশায়।শতো তৃষ্ণা নিয়ে তাকিয়ে রইলো ইসমাত শুধু বৃত্তের একটা কথা ‘ আমাকে ছেড়ে যেওনা ইসমাত।’ কিন্তু ইসমাতের সকল আশা ভেঙে গুড়িয়ে দিলো বৃত্ত।তার স্পষ্ট কন্ঠ,
” কবে চাইছো ডিভোর্স!”
প্রচন্ড ঝটকা খেলো ইসমাত।নিজের কানকে বিশ্বাস করাতে পারছে না সে।এতোটা?এতোটা পাষাণ হৃদয়ের বৃত্ত।যে একবারও ইসমাতের ছোট্ট হৃদয়টা ভেঙে গুড়িয়ে যাবে ভাবলো না।ইসমাত যে বাঁচবে না বৃত্তকে ছাড়া বৃত্ত একবারও চিন্তা করলো না?এতো সহজেই মেনে নিলো?একটুও কি মায়া নেই ইসমাতের প্রতি।ইসমাতের হাউমাউ করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে।কিন্তু না ইসমাত আর কাঁদবে না।অনেক হয়েছে।ইসমাত চোখ বুজলো লম্বা করে শ্বাস টেনে নিলো।তারপর বললো,
” আমি আজ চলে যাচ্ছি আমাদের বাড়ি।তারপর বাবাকে বলে ডিভোর্সের ব্যবস্থা করবো।”
আর একটা কথাও বললো না ইসমাত।শুধু ধীর পায়ে হেটে রুম থেকে চলে গেলো।ওকে এইভাবে খালি হাতে যেতে দেখে বৃত্ত বললো,
” খালি হাতে কেন যাচ্ছো?কিছুই তো নিলে না?”
ইসমাত পিছু ফিরে তাকালো।বেদনাময় হাসি হেঁসে বলে,
” যখন মানুষটাই আমার হলো না! তখন তার দেওয়া জিনিসপত্র দিয়ে আমি কি করবো?”
ইসমাত আর পিছু ফিরে চাইলো না।একেবারে বাড়ি থেকে এক কাপড়েই বেড়িয়ে গেলো।হৃৎপিন্ডটা বড্ড ব্যাথা করছে।শ্বাস নিতে পারছে না। ঠিকমতো শ্বাস নিতে পারছে ও।বুকে হাত রাখলো শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা চালালো অনেক্ষন।চোখে সব কিছু ঝাপসা দেখছে ইসমাত।বহু কষ্টে রোডে চলমান একটা সিএনজি ভাড়া করে উঠে বসলো লোকটাকে বাড়ির ঠিকানা দিতেই।ড্রাইভার গাড়ি চালানো শুরু করে দিলো।
————-
শূন্য মস্তিষ্কে নিজের বাবার বাড়ির গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে ইসমাত।মিসেস আলিয়া মেয়ের এই করুন দোষা দেখে স্তব্ধ।এ কি হলো মেয়েটার?এমন বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে কেন তার মেয়েটাকে?ইসমাত মাথা ঘুরে পড়ে যেতে নিতেই মিসেস আলিয়া দ্রুত দুহাতে জড়িয়ে নিলো ইসমাতকে।ইসমাতকে ধরে রেখেই নিচে বসে পড়লো সে।ইসমাত আধখোলা চোখে মায়ের দিকে তাকালো।ভাঙা গলায় বলে ডেকে উঠে,
” মা!!!!!”
সে কি করুন ডাক।কিযে হাহাকার এই ডাকটায়।কষ্টে জর্জড়িত হয়ে এই হাহাকার ভরা করুন কন্ঠে ডাকলো মা বলে।ইসমাত চোখ বুজে ফেললো।মেয়েকে নিস্তেজ হয়ে যেতে দেখে মিসেস আলিয়া চিৎকার করে উঠলেন,
” ওগো ইব্রাহিমের বাবা, ইব্রাহিম দ্রুত আয়! আমার মেয়েটার কি হলো?”
আবারও ইসমাতের গালে হাত দিয়ে কান্না করে ডাকছে,
” ইসমাত! মা আমার! কথা বল মা।কি হয়েছে মা’কে বল! দেখিস মা সব ঠিক করে দিবে।”
মিষ্টার আজিজুর আর ইব্রাহিম নিচে এসে দেখে মিসেস আলিয়া দরজার সামনে বসে কাঁদছেন ওর উনার কোলে ইসমাত।বাবা-ছেলে একে অপরের দিকে তাকিয়ে দ্রুত সেদিকে ছুটলো।ইব্রাহিম মিসেস আলিয়াকে সরিয়ে দিয়ে তাড়াতাড়ি বোনকে কোলে তুলে নিলো আর তার বাবাকে বললো ডাক্তার ডাকতে।ইসমাতকে ইব্রাহিম রুমে এনে সুইয়ে দিলো।বোনটার চেহারা মলিন দেখাচ্ছে।চোখের কোন বেয়ে জল গড়িয়ে পড়লো।তার বোনটার কি এতো কষ্ট?তার বোনটা কাঁদছে কেন?নানান প্রশ্ন মনে জাগলেও তা স্তগিত রাখলো ইব্রাহিম।এখন বেশি ইম্পোর্টেন্ট ইসমাত।
প্রায় আধাঘন্টা পর ডাক্তার আসলো।কিন্তু তার আগেই ইসমাতের জ্ঞান ফিরেছে।কিন্তু জ্ঞান ফিরার পরে ইসমাত একটা কথাও বলেনি।মিষ্টার আজিজুর, মিসেস আলিয়া আর ইব্রাহিম নানান প্রশ্ন করেছে এর মাজে কিন্তু ইসমাত কিছুই বললো না।শুধু শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে উপরের দিকে।ডাক্তার এসে বিভিন্ন চেক-আপ করলো।তারপর বাকিদের দিকে তাকিয়ে মুঁচকি হেসে বলেন,
” মিষ্টির ব্যবস্থা করুন! আপনাদের মেয়ে মা হতে চলেছে যে।”
সকলের মুখে হাসি ফুটে উঠলো।হবেই বা না কেন এতো আনন্দের একটা কথা আর তারা খুশি হবে না?মিষ্টার আজিজু উচ্ছাসিত কন্ঠে বলেন,
” আমি এখনি মিষ্ট অর্ডার দিচ্ছি।ইব্রাহিম চল আমার সাথে আমি নিজে বেছে বেছে পুরো বাজারের সেরা মিষ্টি আনবো।”
বাবা-ছেলে আনন্দ সহিত চললেন মিষ্টি আনতে।মিসেস আলিয়া নিজের ঘরে গিয়ে পাঁচ হাজার টাকা এনে ডাক্তারকে দিলেন।তার একজন সার্ভেন্ট’স কে বললেন উনাকে এগিয়ে দিতে।এতো এতো আনন্দের মাজে যে একজন মানুষ কঠিন এক কষ্টের মাজে আছেন সেই খেয়াল কারো নেই।ইসমাত ঠোঁট চিপে কান্না আটকাবার চেষ্টা করছে।সে কি খুশি হবে না-কি দুঃখ প্রকাশ করবে।একদিকে মা হবার প্রাপ্তি অন্যদিকে নিজের সন্তানকে পিতার ভালোবাসা থেকে চিরতরে বঞ্চিত হতো হবে সেই কষ্ট।কি করবে ইসমাত?কিভাবে নিজেকে সামলাবে সে নিজেকে।ইসমাত নিজের পেটে হাত রেখে হুঁহুঁ করে কেঁদে দিলো।আহ! সেকি কান্না! আহ! কি এই নির্মম ভালোবাসা।মানুষকে যেমন বাঁচতে শিখায় এই ভালোবাসা আবার একেবারে শেষ করে দেয়।

#চলবে_______
#আমি_তুমি_আমরা!💙
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি💙
#পার্টঃ০১

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here