আমি তুমি আমরা পর্ব -০২

#তুমি_আমি_আমরা💜
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পার্টঃ০২
ডিভোর্স পেপার হাতে নিয়ে বসে আছে বৃত্ত।অবাক দৃষ্টিতে শুধু তাকিয়ে আছে পেপারটার দিকে।ডিভোর্স পেপারের সাথে একটা চিঠিও আছে।বৃত্ত চিঠিটায় আবার চোখ বুলালো।

‘ বৃত্ত সাহেব!,

আবেগ নিয়ে আর কোন কথা বলবো না।অনেক হয়েছে দু’টো বছর অনেক চেষ্টা করেছি আপনার ভালোবাসা পাবার কিন্তু পাইনি।এই জনমে আর পাবো না তা আমি জানি।তাই আমাদের সম্পর্কের বিচ্ছেদ হওয়াটাই ভালো আমি মনে করি।স্বামি স্ত্রীর সম্পর্ক শুধু শারিরীক সম্পর্ক অব্দি না! এখানে ভালোবাসা,সম্মান,বিশ্বাস প্রয়োজন।যা আমাদের সম্পর্কে কোনকালেই ছিলো না।আশা করি আপনি ভালো আছেন।ভালো তো থাকবেনই আমি যে নেই।আমি থাকলেই আপনার সমস্যা হয়। আর হবে না।আমি আর নেই আপনার কাছে।এইবার নিজের মতো করে জীবন চালিয়ে নিন।আর কিছু বলবো না।নতুন জীবনসঙ্গী নিয়ে ভালো থাকবেন।আসসালামু আলাইকুম।

ইতি,
আপনার কেউ না!’

বৃত্ত চিঠিটা পড়লো অনেকবার পড়লো।বুকের কোথাও একটা ব্যাথা হচ্ছে অসয্য ব্যাথা।আজ প্রায় এক সপ্তাহ ইসমাত নেই বৃত্তের কাছে।এতে তো বৃত্তের খুশি হওয়ার কথা কিন্তু বৃত্ত পারছে না খুশি হতে।কোথায় একটা শূন্যতা গ্রাস করছে তাকে।বৃত্ত পুরো রুম জুড়ে চোখ বুলালো ইসস! কি অবস্থাটা নাই হয়েছে।সব কিছু এলোমেলো আর নোংরা।কাজের মেয়েটা বা আর কতোদূর করবো।আগে ইসমাত থাকতে কি সুন্দর দেখাতো পুরো বাড়িটা।আর এখন? পুরো বাড়িটাই বুজি ইসমাতের জন্যে কাঁদছে।আচ্ছা! বৃত্ত ও কি কাঁদছে?বৃত্ত চোখের কোনে আঙুল নিয়ে দেখে তার চোখের কোণে জল।হ্যা বৃত্ত কাঁদছে।ইসমাতের শূন্যতা আজ তাকে কাঁদতে বাধ্য করেছে।এই কঠিন হৃদয়ের বৃত্ত আজ বুকের যন্ত্রনা সইতে না পেরে কাঁদছে।বৃত্ত চোখের কোণে জল মুছলো।তারপর পকেট থেকে ফোন বের করে তার মা’কে ফোন দিলো।রিং হচ্ছে কিন্তু ফোন ধরছে না কেউ।এটা আজ না শুধু!ইসমাত চলে গেছে শোনার পর থেকে তার মা আর ওর সাথে কথা বলে না।তবুও আজ বৃত্ত থামলো না। মা’র সাথে তার কথা বলা লাগবেই।ইসমাতকে ছাড়া তার চলা অসম্ভব তা এই কয়দিনে সে বুজে গেছে।ইসমাতকে সে নিজের অজান্তেই ভালোবেসে ফেলেছে।যা ইসমাতের অনুপস্থিতিতে সে বুজেছে।বৃত্ত ফোন দিতেই থাকলো দিতেই থাকলো।

মিষ্টার এবং মিসেস শেখ এসেছেন নিজের পুত্রবধুকে দেখতে।এর আগেও একবার এসেছিলো ইসমাত চলে এসেছে সেটা শোনার পর।সেদিন আসার পরেই জানতে পারেন তাদের নাতি-নাতনি আসতে চলেছে।তারা তো আনন্দ আত্মহারা।তারা ইসমাতকে বুজাতে চেষ্টা করে তাদের সাথে আসার জন্যে।কিন্তু ইসমাত নারাজ সে আর যাবে না।যার জন্যে সে এই বাবা মা কে পেয়েছে সেই যদি তাকে না চায় তাহলে তাদের বাড়ি গিয়ে সে কি করবে?কিন্তু ইসমাত নিজেকে ভাগ্যবতি ভাবে এতো ভালো শশুড় বার শাশুড়ি পেয়ে।ইসমাতের মা,বাবা, ভাই তারাও অনেক চেষ্টা করে ইসমাতকে বুজানোর আর তারা এও বলে যে বৃত্তকে তার মা হবার কথা জানাতে।কিন্তু ইসমাত যখন তাদের বলে তারা যদি বেশি জোড়াজুড়ি করে তাহলে ইসমাত এইখান থেকেও চলে যাবে।তাকে আর কোথাও পাবে না কেউ।সেই ভয়ে তারা দমে যায়।বৃত্তকে কেউ জানায় না যে সে বাবা হতে চলেছে।
মিসেস শেখ ইসমাতকে ভাত খাওয়াচ্ছেন।ইসমাত কিছুই খেতেয় চায় না।খেলেও বমি করে ফেলে পেটে রাখতে পারে না কিছু।মিসেস শেখ বিরক্ত হচ্ছেন বারবার নিজের ছেলে এতো ফোন কল দেওয়ার জন্যে।জোড় করে লাস্ট নোকমা ভাত মুখে দিলো তিনি ইসমাতের তারপর বৃত্তের কল রিসিভ করলেন।
কল রিসিভ হতেই বৃত্তের অস্থির কন্ঠ,
” হ্যালো মা!”
মিসেস শেখ কিছু বলতে নিবেন তার আগেই ইসমাত দৌড়ে বাথরুমে চলে গেলো।মিসেস শেখ বুজতে পারলেন ইসমাত আবারও বমি করবে।তাই তিনিও ইসমাতের পিছন পিছন ছুটলেন।
” ইসমাত মা! আস্তে দৌড় দে। ব্যাথা পাবি। আমি আসছি দারা।”
তিনি গিয়ে ইসমাতকে ধরলেন।অনেক্ষন বমি করে ইসমাত ক্লান্ত হয়ে পরে।মিসেস শেখ হাক ছেড়ে ইব্রাহিমকে ডাকলেন।উনার আওয়াজ পেয়ে ইব্রাহিমের সাথে সাথে মিসেস আলিয়া আর মিষ্টার আজিজুর ও মিষ্টার শেখ ওএলেন।ইব্রাহিমি বোনকে কোলে তুলে নিলো।তারপর বিছানায় এনে সুইয়ে দিলো।এরই মাজে মিসেস আলিয়া ছেলের সবাইকে বাহিরে যেতে বললেন।তারাও বেড়িয়ে গেলেন।মেয়েটা এই কয়দিনেই বেশ শুকিয়ে গেছে।শুকোবেই না কেন?একে তো সে প্রেগনেন্ট তার উপর স্বামির সাথে বিচ্ছেদ।মেয়েটা একদম ভেঙ্গে পড়েছে।মিসেস আলিয়া মেয়েকে মগে করে পানি এনে হাত মুখ ধুইয়ে দিলেন।জামা খুলে শরীর পুছিয়ে দিলেন।কাজের মেয়েটা এর মাজে দুধ নিয়ে হাজির।মিসেস শেখই আনতে বলেছে।দুধ দেখেই ইসমাত দু-হাতে মুখ চেপে ধরলো।করূন গলায় বলে,
” আমি এটা খাবো না মা! প্লিজ খাবো না।আমার বমি পায়।”
মিসেস শেখ আদুড়ে গলায় বলে,
” না মা এভাবে বলে না।এটুকু না খেলে শরির একেবারে ভেঙে পড়বে।একটু খেয়ে নেও।”
” খাবো না প্লিজ।” ইসমাত বললো।
মিসেস আলিয়া মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।বললেন,
” শোন তুই আর ইব্রাহিম পেটে থাকতেও আমার এমন লাগতো এমন কি তোর শাশুড়িরও এমন লাগতো যখন বৃত্ত উনার পেটে ছিলো।তাই বলে কি আমরা খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি?উহু! আমরা জোড় করে খেতাম।কারন আমাদের সময় অতো ডাক্তার, নার্সের এতো সুবিধা ছিলো না।বেশিরভাগ মানুষের নরমাল ডেলিভারিতেই বেবি হতো।কিন্তু এখন তো সিজারিয়ান সেকসন চালু হয়েছে।কিন্তু সিজার করানো ভালো না মা।যতো খেয়ে নিজের শরীর সুস্থ্য রাখবি নরমাল ডেলিভারিতেই বেবি হবে।আর তুই আর আর তোর বেবি দুজনেই সুস্থ্য থাকবি।প্লিজ সোনা মা একটু খেয়ে নে।নিজের পেটে নিজের সন্তানের জন্যে হলেও খেয়ে নে।”

ইসমাত ভাবলো।আসলেই তো সে যদি না খায় তাহলে তার বেবি তো কষ্ট পাবে।তার বেবির শরীর খারাপ করবে।না! ও চায় না ওর বেবিকে কষ্ট দিতে।ওর বাবা থাকবে না তো কি হয়েছে? সে একাই পারবে ওর বেবিকে সুস্থ্যভাবে পৃথিবীর আলো দেখাতে মানুষের মতো মানুষ করতে।এখন তো ওর বেঁচে থাকার এই একটাই কারন।ইসমাত চোখে জল নিয়ে দুই মায়ের দিকে তাকালো।বললো,
” আমার বেবি অনেক স্ট্রোং হবে।ও কিছুতেই কষ্ট পাবে না।সহজে ভেঙে পড়বে না ওকে আমি ঠিক সেইভাবেই বড় করবো।আমি ওকে মা,আর বাবা দুজনেরই ভালোবাসা দিবো।অনেক অনেক আদড় আর ভালোবাসা দেবো।যাতে ও বাবার শূন্যতা না অনুভব করে।আমার বেবি সুস্থ্যভাবেই এই পৃথিবীতে আসবে তোমরা দুই মা দেখে নিও।আমি খাবো অনেক অনেক অনেক খাবো।বমি হলেও আবার খাবো।! এই জান্নাত দে আমায় দুধ দে আমি দুধ খাবো।”

জান্নাত দুধ এগিয়ে দিতেই ইসমাত গটগট করে অর্ধেক গ্লাস দুধ এক নিশ্বাসে খেয়ে ফেললো।কষ্ট হচ্ছে তাও সে অনেক কষ্টে পুরো দুধটুকুই খেলো।খাওয়া শেষ হতেই ইসমাতের কেমন যেন লাগতে শুরু করলো।তারপরেও বললো,
” মা আমি এখন ঘুমোবো আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেও।”
দুই মা’ই গেলেন মেয়ের কাছে দুপাশে বসে ইসমাতের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন।আর তার মেয়ের দুঃখে নিজেদের চোখের জল বিসর্জন দিচ্ছেন।কতো হাসিখুশি একটা ফ্যামিলি থাকতো আজ যদি বৃত্ত ইসমাতকে ভালোবাসতো।কতোই না আনন্দ হতো।ইসমাতের চোখের পানি থামার নামই নেই।বেহায়া চোখের জল গুলো এমন এক মানুষের জন্যে ঝড়ছে।যার কাছে ওর চোখের পানির কোন দাম নেই।
ইসমাত চোখ বুজে থেকেই বলে,
” আমি আমার সন্তানের কাছে ওর বেস্ট মা হয়ে দেখাবো।দেখো তোমরা মা আমার।”

এদিকে মিসেস শেখ তখন ইসমাতকে ধরতে গিয়ে আর ফোন কল কাটতে তার মনেই ছিলো না।যার ফলে আজ বৃত্ত সব জেনে নিলো।কান থেকে ফোন সরালো বৃত্ত।বিষ্মিত চাহনি নিয়ে তাকিয়ে আছে ফোনের দিকে সে।এতো বড় একটা খুশির কথা সে বাবা হবে এটা কেউ ওকে জানানো পর্যন্ত প্রয়োজন মনে করলো না।অবশ্য কেনই বা বলবে।বৃত্ত এমন একটা জঘন্য কাজ করার পর কেইবা আর তার খোঁজ খবর রাখবে?নাহ! বৃত্ত আর বসে থাকবে না।ইসমাতকে তার চাই চাই আর তা যেকোন মূল্য।এখন তো আরও বেশি চাই। তার একটা হ্যাপি ফ্যামিলি চাই যেখানে সে, ইসমাত আর তাদের সন্তান সুখে শান্তিতে থাকবে।বৃত্ত ইসমাতকে ফিরিয়ে আনবেই।এতে বৃত্তের যা করা লাগে সে করবে।কিন্তু ইসমাতকে ফিরিয়ে আনবেই।

#চলবে__________
ভুল ক্ষমা করবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here