#তোমার_প্রেমের_ছোঁয়ায়💜
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি💜
#পার্টঃ০৪
আহমেদ ভীলায় আজ খুশির আমেজ।আজ কতোদিন পর পুরো পরিবার মিলে একসাথে বশে দুপুরের খাবার খাচ্ছে।সেহরা জাহান ছেলের প্লেটে এটা ওটা তুলে দিচ্ছেন জোড় করে।তা দেখে সিয়া মুখ ফুলিয়ে বলে,
–” বাহ! ছেলেকে পেয়ে আমাকে তো চোখেই পরে না।”
সেহরা জাহান আদিয়াতের প্লেটে গরুর গোস্ত তুলে দিতে দিতে বলেন,
–” তুই তো সবসময় এখানেই আছিস।আর এতোদিন তো তোকেই খাইয়ে দিয়েছি।আর আজ আমার ছেলে পাঁচ বছর পর এসেছে।তারপরেও তুই এই কথা বলিস?”
সিয়া মিথ্যে কান্না দেখিয়ে বলে,
–” আমাকে কেউ ভালোবাসে না।”
হাসান আহমেদ মেয়ের দিকে হাসিমুখে তাকালেন বলেন,
–” কে বলেছে আমার আম্মুকে কেউ ভালোবাসে না।আমি ভালোবাসি তো।নেও এইবার ‘আ’ করো তো।”
সিয়ার মুখের সামনে এক লোকমা ভাত মাখা ধরে আদুড়ে গলায় বলে হাসান আহমেদ।সিয়া খুশিতে গদগদ হয়ে বাবার হাতে ভাত খেয়ে নেয়।তারপর মুখ ভেংচি মেরে বলে,
–” আমার পাপা আমাকে ভালোবাসে।হুহ্!”
আদিয়াত হাসিমুখে এইবার নিজের মাকে বলে,
–” আম্মু অনেক হয়েছে আমি নিজে নিয়ে খেতে পারবো।তুমি এইবার বস তো। এইবার তুমি খাও।”
আদিয়াতের জোড়াজুড়িতে সেহরা জাহান খেতে বসে পড়লেন।আদিয়াত অনেকক্ষন যাবত উশখুশ করছে একটি কথা জিজ্ঞাস করার জন্যে কিন্তু সাহস জোগাতে পারছিলো না।কিন্তু এইবার আর মুখ বুজে রইলো না।খাওয়ার মাজেই সে আমতা আমতা করে বলে উঠে,
–” আচ্ছা! আসার পর থেকে আহিয়ানা কে দেখছি না।কোথায় ও?”
————-
আহি লাঞ্চ করছিলো এমন সময় হঠাৎ করে বিষম খেয়ে উঠলো।কাঁশতে লাগলো লাগাতার নিহান বোনকে হঠাৎ এমন করতে দেখে দ্রুত পানির গ্লাস ওর সামনে ধরে ওকে পানি খাইয়ে দিতে লাগলো।আর পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।
পানি খাওয়া শেষে নিহান জিজ্ঞেস করে,
–” এখন ঠিক আছিস?”
–” হুম!”
নিহান এইবার হালকা রাগ দেখিয়ে বলে,
–” কিভাবে খাচ্ছিস?আস্তে ধীরে খা।”
আহি বিনা দ্বিধায় বলে উঠে,
–” আদ্র,তিয়া,ফাহিম,আয়রা অপেক্ষা করছে আমাকে যেতে হবে।”
নিহানের মা এইবার কটাক্ষ করে বলে উঠেন,
–” হ্যা হ্যা! আবারও যাবে ছেলেদের সাথে লাগালাগি করতে।আর মদ খাইয়া ফিট হয়ে পড়ে থাকতে। আর আমার ছেলেকে তো ফ্রিতে পেয়েছে এই বেহায়া মেয়ে ক্লাবে গিয়ে নেশায় বুত হয়ে পড়ে থাকবে আর আমার ছেলে প্রতিদিন একে কোলে করে নিয়ে আসবে।আমার ছেলেটারেও এখন ওর ধ্বংশ খেলায় যোগ দিছে।”
দাদি ধমকে উঠলেন,
–” বউমা তোমার মুখটা আল্লাহ্ ওয়াস্তে বন্ধ রাখো।অযথা কেন এসব কথা তুলো।”
–” হ্যা আমি বললেই দোষ আর এই মেয়ে দুধে ধোঁয়া তুলসি পাতা।”
প্লেটে অর্ধেক খাবার রেখেই আহি ব্যাগ নিয়ে উঠে চলে যায়।এদিকে দাদি আর নিহান একেরপর এক ডাক দিতে থাকে কিন্তু আহি কারো কথা না শুনেই চলে যায়।আহি যেতেই নিহান তার মায়ের দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
–” তোমার এই ব্যবহারের কারনে না জানি কবে আমিও এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাই।”
প্লেটে হাগ ধুয়ে ধুপধাপ পা ফেলে চলে যায় নিহান।
দাদিও আর খেতে পারেন না তিনিও উঠে চলে যান।সবাই যেতেই নিহানের মা বিরবির করে বলে,
–” কবে যে নিহানের বাবা আসবে আল্লাহ্ জানে।লোকটার তো পরশু আসার কথা।আমি একা এদের সাথে পেরে উঠবো না।উনি আসুক।”
নিহানের মা সার্ভেন্ট্সকে খাবার টেবিল গুছাতে বলে নিজের রুমে চলে যায়।
—————
খাবার টেবিলে পিনপতন নিরবতা।এতোক্ষন যেখানে খুশির আমেজ ছিলো সেখানে এখন ভড় করেছে একরাশ গাম্ভীর্যতা।আদিয়াত বুজতে পারছে না সে কি এমন বললো যাতে সবার হাসি মুখে এমন ছায়া নেমে এলো।আদিয়াত জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
–” কি হলো?তোমরা এমন চুপ-চাপ হয়ে গেলে কেন?আহিয়ানা কোথায়?”
সেহরা জাহান ফুস করে নিশ্বাস ফেলে বলে উঠে,
–” নেই!”
আদিয়াত চমকে মায়ের দিকে তাকায়।তারপর জোড় পূর্বক হেসে বলে,
–” নেই মানে?ভার্সিটিতে আছে বুজি?সেকি জানেনা যে আজ আমি আসবো!আর জানলেও তাহলে আজ ভার্সিটি কেন গিয়েছে।”
সেহরা জাহান তীক্ষ্ম নজরে তাকায় ছেলের দিকে তারপর গম্ভীর স্বরে বলে,
–” ভার্সিটিতেও যায়নি ও।”
–” তাহলে কোথায় আছে?রুমে আছে বুজি?আমি এসেছি জেনেও কেন নিচে নামলো না।আচ্ছা আমি ডাকছি ওকে।”
আদিয়াত আহি’র নাম ধরে ডাকতে লাগলো।সিয়া এইবার সয্য করতে না পেরে চেঁচিয়ে বলে উঠে,
–” আহি আপু আমাদের ছেড়ে চলে গেছে।সে নেই এখানে।আহি আপু সেই পাঁচ বছর আগেই চলে গেছে এখান থেকে।”
আদিয়াত বিষ্ময়ভরা চাহনী নিক্ষেপ করে সিয়ার দিকে।অবিশ্বাস্য কন্ঠে বলে,
–” চলে গেছে মানে?”
–” বাংলা কথা বুজোনা?চলে গেছে মানে চলে গেছে।”
আদিয়াত নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না।আহি চলে গেছে।পাঁচ বছর আগেই চলে গেছে।আচ্ছা! সে কি তাহলে ওর সাথে অভিমান করেই চলে গিয়েছে।আদিয়াত ওর ভালোবাসাকে দূরে ঠেলে দিয়েছিলো বলেই কি অভিমান করে চলে গেছে।কিন্তু আদিয়াত তো ওর ভালোর জন্যেই এমনটা করেছিলো।আহি কেন বুজলো না আদিয়াতকে।আদিয়াত নিজেকে সামলে নিয়ে জিজ্ঞেস করে,
–” কোথায় চলে গেছে?”
সিয়া মন খারাপ করে উত্তর দেয়,
–” জানি না।”
এইবার হাসান আহমেদ টেবিলে জোড়ে বারি দিয়ে বলেন,
–” আর একটা কথাও যেন এই বিষয়ে না উঠে এই বাড়িতে এই আমার শেষ কথা।”
হাসান আহমেদ চলে যান নিজের রুমে।সেহরা জাহান ও ছেলেমেয়ের দিকে একবার তাকিয়ে থেকে তিনিও ছুট লাগান স্বামির পিছনে।সিয়া নিজের ভাইয়ের দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে ও নিজেও চলে যায় রুমে।আদিয়াত সেখানে কিছুক্ষন থম মেরে বসে থাকে।মস্তিষ্কে তার হাজারো এলোমেলো ভাবনা।পাঁচ বছর হয়ে গিয়েছে আহিয়ানা এই বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে।আর ও জানে না।কেন সে জানে না?কেন ওকে সবাই এই কথা জানালো না।মনে এক চাপা দুঃক্ষ নিয়ে নিজের রুমে চলে যায় আদিয়াত।
—————
দুপুর দুটো বাজে পাঁচ বন্ধু নদীর পাড়ে এই কড়া রোদের মাজে বিশাল বটগাছের ছায়া তলে বসে নিজেদের আড্ডায় মেতে আছে।এই অতীষ্ট গরমেও যেন প্রানবন্ত লাগছে।
আদ্র ভ্রু-কুচকে এতোক্ষন আহি’র দিকে তাকিয়ে ছিলো।এইবার সে জিজ্ঞেস করে,
–” তোর এক্সেক্টলি কি হয়েছে বলবি?”
আহি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,
–” আমার আবার কি হবে?”
–” সেটাই তো জিজ্ঞাস করছি।”
ওদের কথার মাজে বা-হাত ডুকিয়ে দিয়ে ফাহিম বলে,
–” এই তোরা কোন বালের কথা কছ?বিয়ার আগে আবার কি হইবো?”
আয়রা চোখমুখ কুচকে ফেলে ফাহিমের কথায়।তারপর ধরাম করে একটা ঘুশি দিয়ে বসে ফাহিমের পিঠে।ফাহিম ব্যাথাতুর আওয়াজ করে বলে,
–” এই গিরগিটির ছাও! তোর বাপের কোন সম্পত্তিতে আমি ভাগ বসাইছি যে তুই আমারে কথায় কথায় কিল মারোছ?”
আয়রা তার কুচকানো ভ্রুজোড়া আরেক ধাপ কুচকে ফেললো।তেজী গলায় বলে,
–” তুই যদি আর একবার এইসব ফাউল কথা বলিস তো তোকে আমি এক লাত্থি মেরে এই নদীতে ফেলে দিবো।”
ফাহিম উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
–” নেহ পারলে আমারে এই নদীতে ফালাইয়া দেখা।যদি না পারোস তো তোর খবর আছে।”
আয়রা উঠতে নিলেই তিয়া ওর হাত ধরে থামিয়ে দেয়।বিরক্ত গলায় বলে,
–” উফফ!! তোরা কি শুরু করলি?এমন টম এন্ড জেরির মতো সারাদিন কেন লেগে থাকিস?”
আয়রা রাগে ফুসতে ফুসতে বলে,
–” এই উল্লুকরে বল এইসব উলটাপালটা কথা থামিয়ে দিতে।নাহলে তোর মাথা ফাটিয়ে দিবো।”
তিয়া এইবার আহি’কে উদ্দেশ্য করে বলে,
–” আহিয়ানা তুই কিছু বল…..”
আহি দ্রুত হাত উঠিয়ে তিয়াকে থামিয়ে দেয় গম্ভীর গলায় বলে,
–” আহিয়ানা না অনলি আহি।জাস্ট কল মি আহি ওকে?”
আদ্র ভ্রু-কুচকে তাকিয়ে থাকে আহি’র দিকে। মেয়েটার সাথে ওদের বদ্ধুত্ব পাঁচ বছরের অথচ আজ পর্যন্ত ও কাউকে নিজের পুরো নাম ধরে ডাকতে দেয়নি।অথচ ওর নামটা কতো সুন্দর ‘ আহিয়ানা তাবাস্সুম যীনাত ‘ কিন্তু ও ডাকতে দেয় না হয় আহি বলে ডাকতে বলে নাহয় যীনাত কিন্তু আহিয়ানা বলে ডাকতে দেয়না।কি এমন কারন এর পিছনে যা আজও ওরা জানতে পারলো না।
আদ্র দীর্ঘশ্বাস ফেললো। এই মেয়েকে কিছু বলে লাভ নেই।এই মেয়ে চলে নিজের ইচ্ছায়।কাল এতো করে বললো ক্লাবে যেতে না ওদের সাথে আদ্রদের বাড়িতে আড্ডা দিতে কিন্তু সে কিছুতেই মানলো না।যখন অনেক রাত হয়ে যায় আদ্র আহিকে নিতে গিয়ে দেখে তার আগেই নিহান এসে গেছে আহিকে নিতে।তাই আদ্র আর আগ বাড়িয়ে আর যায়নি।আদ্র আর কথা বাড়ালো না বন্ধুমহলের আড্ডায় মেতে উঠলো।
#চলবে_______
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কেমন হয়েছে জানাবেন।সুন্দর মন্তব্য আশা করছি সবার থেকে।ভালোবাসা নিবেন।