#তোমার_প্রেমের_ছোঁয়ায়💜
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি💜
#পার্টঃ০৮
চলছে গ্রীষ্মকাল প্রচন্ড উত্তাপ চারদিকে।গরমে মানুষের জীবন অতিষ্ট।তবুও কেউ থেমে নেই।শতো কষ্ট উপেক্ষা করে যে যার যার কর্মে স্থলে যাচ্ছে হাসিমুখেই।জীবন কারো জন্যে থেমে থাকে না।শতো কষ্ট হলেও এই জীবনের সাথে লড়াই করে এগিয়ে যেতে হয়।জীবনে পরিশ্রম না করে কেউ সাফল্য অর্জন করতে পারে না।আর জীবন থেকে ধোকা না পেলেও কেউ সামনে এগোতে পারে না। আমার বর্তমান আর ভবিষ্যতের চিন্তা করে আমরা কঠোর পরিশ্রম করে সামনে এগিয়ে যাই।কিন্তু আদৌ কি আমাদের অতীত আমাদের পিছু ছাড়ে।হয়তো কারো কারো ক্ষেত্রে অতীত ভুলে সামনে এগানো সহজ।কিন্তু আবার কারো কারো অতীত এতোটাই ভয়ানক হয় যে তাদের অতীত তাদের বর্তমান আর ভবিষ্যতকে ঘিরে ধরে রাখে আআষ্টেপৃষ্টে। ভার্সিটির সামনে নদীরপাড়ে বসেই নানা চিন্তা ভাবনা করছিলো আহি।তখনই আদ্র, ফাহিম, আয়রা আর তিয়া এসে আহি’র সাথে বসে পড়ে।আহি’কে এমন গম্ভীর মুখ করে থাকতে দেখে ফাহিম বলে উঠলো, ” আরে বউ কিচ্ছে তুমি এমন করে আছো কেন?”
আহি তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকায় ফাহিমের দিকে তারপর গম্ভীর গলায় বলে, ” আমি তোকে কতোবার বলবো এইসব বউ ফউ বলে আমাকে ডাকবি না!”
” আহা তুমি তো আমার বিয়ে করা পার্মানেন্ট বউ।”
আয়রা চোখমুখ কুচকে ফেলে ফাহিমের কথায়।এই ছেলেটা সবসময় এমন করে আর এমন আজব আজব ভাষা বলে যে আয়রার রাগ উঠে যায়।আয়রা বললো, ” লুচু ছেলেদের একটা কেন দশটা বউ হলেও চলে না তাদের আরো লাগে।”
তিয়া ফিক করে হেসে দিলো।ফাহিম ওর দিকে রাগি চোখে তাকাতেই মুখে আঙুল দিয়ে বসলো তারপরেও মুখ টিপে হাসছে সে।ফাহিম তেতে উঠে বললো, ” তুই সবসময় এমন আমার পিছে লাইজ্ঞা থাকোস ক্যা?তোর খাইয়া লইয়া কাম নাই।”
আয়রা আঙুল উঠিয়েই বলে, ” আমাকে চোখ রাঙানি কম দে। আমি কি তোকে ভয় পাই।একেবারে চোখ গেলে দিবো।”
ফাহিম তেড়ে যেতে যেতে বলে, ” আয়রা কুত্তিনি তোকে তো আমি…”
” তোরা দুটো থামবি না-কি এক লাত্থি দিয়ে দুটোকেই এই নদীতে ফেলে দিবো।”
আহির এমন দাঁতে দাঁত চিপে বলা কথায় থেমে যায় আয়রা আর ফাহিম।তারপরেও একেঅপরের দিকে তাকিয়ে রাগে ফোঁস ফোঁস করছে।
তিয়া মুখ চিপে হেসে বললো, ” খেলি তো দুটো খামোখা ধমকি ধামকি।”
” সাট আপ!”
আয়রা আর ফাহিম একসাথে তিয়াকে ধমক দিয়ে উঠে।তিয়া কান চেপে ধরে ককিঁয়ে উঠে,, ” মাগো আস্তে চিল্লা মহিষ কোথাকার।”
আদ্র এতোক্ষন এদের কান্ড দেখছিলো। আপাততো ওদের দিক থেকে চোখ সরিয়ে দৃষ্টি স্থির করলো আহি’র দিকে।দেখে আহি তার দিকেই তাকিয়ে আছে।আদ্র তাকাতেই আহি প্রশ্ন করে, ” কাল আমাকে ওইভাবে ক্লাব থেকে আনার মানে কি ছিলো?”
আদ্র এতে একটুও অবাক হলো না। কারন আহি যতো ড্রিংক্স করুক।ওর কখনো হুশ হারায় না।মাজে মাজে দু একটা কথা ভুলে যায়।তবুও পুরোপুরো ফিট থাকে।আদ্র নির্লিপ্ত ভঙিতে বলে, ” তো তোকে ওইভাবে ফেলে চলে আসতাম?”
আহি চাপা রাগ নিয়ে বললো, ” আমি কি কচি খুকি যে আমাকে তোদের গিয়ে নিয়ে আসতে হবে।আই ক্যান হেন্ডেল মাইসেল্ফ। ”
আদ্র নদীর দিকে নিজের দৃষ্টি স্থির করলো।শান্ত স্বরে বললো, ” হ্যা জানি! কিন্তু আমাদের চিন্তা হয় তোর জন্যে কেন এমন করিস?”
” আমার জন্যে শুধু চিন্তা করতে হবে না তোদের।আমি ভালোই আছি।শুধু আমাকে আমার মতো থাকতে দে।” আহি’র সোজা কথা।
তিয়া আহির কাধে হাত রাখলো।আহি তাকায় তিয়ার দিকে।তিয়া মুচকি হেসে বলে, ” আমাদের থেকে আর কতো কাল লুকিয়ে রাখবি আমরা জানি তুই এমন না।তোর মাজে একটা ছোট্ট কোমল,শান্ত আহি লুকিয়ে আছে।শুধু পরিস্থির স্বিকার হয়ে সে আজ চাপা পরে আছে।”
আহি ব্যাগ নিয়ে উঠে দাঁড়ায়।সামনে হাটতে হাটতে বলে উঠে, ” এমন কিছুই না।আমাকে তোরা যেমন দেখছিস আমি তেমনি।আমার মাজে ভালো কোন গুন নেই।”
ওরা সবাই উঠে দাড়ালো।আহির সাথে সাথে মিলিয়ে হাতটে লাগলো।ফাহিম দুষ্টু হেসে বলতে লাগলো, ” জানেমন তুমি তো জানো তুমি আমার জন্যে কি?উফ তোমার রূপের আগুনে প্রতিনিয়ত আমার হৃদয় পুরো ছাড়খার হয়ে যায়। বুকের ভীতর ধুপধাপ হাতুড়ি পেটা শব্দ হয় এইযে এখনো হচ্ছে শুনে দেখো।”
আহি পিছনে ফিরে কটমট দৃষ্টিতে তাকায় ফাহিমের দিকে।তারপর বলে, ” এখন তুই তোর এইসব ফাউল পেচাল বন্ধ না করলে আমি তোকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে তোর হারগোড় ভেঙে দিবো।”
ফাহিম ভয় পাওয়ার ভাণ ধরে বললো, ” উফ! বউ ভয় পেলাম তো।আমি মরে গেলে তুমি তো বিধবা হয়ে যাবে কলিজা তা কি করে হতে দেই বলোতো!”
ফাহিমের এমন দুষ্টুমি মাখা কথায় ওরা সবাই হেসে দেয়।আহি এইবার নিজেও না হেসে পারলো না।আসলেই এই ছেলেটা বড্ড দুষ্টু।এর কথায় না হেসে পারা যায় না।আসলেই জীবনে আর কেউ ওকে ভালোবাসুক বা না বাসুক ওর ভাই আর এই পাঁচজন যে ওকে প্রচন্ড ভালোবাসে তা আহি প্রতিনিয়ত উপলব্ধি করতে পারে।এরা যদি না থাকতো আহি হয়তো এই দুনিয়ায় আর থাকতো না।আজ যেভাইবেই হোক বেঁচে তো আছে সে তাও একমাত্র এদের কারনে।আহি গিয়ে ফাহিমকে জড়িয়ে ধরে।ফাহিমও বন্ধুকে পরম যত্নে আগলে নেয়।আহি কাঁদতে চায় না। কিন্তু ওর কান্না পাচ্ছে।তবুও কষ্টে কান্না আটকে ধরা গলায় বলে, ” তুই আসলেই চরম খারাপ।আমাকে না জ্বালালে তোর শান্তি হয় না তাই না?”
” প্রিয় বন্ধুর মন খারাপ আমি সয্য করতে পারি না।আর তুই তো আমার বউ।আমার কলিজাটাকে এই পেঁচি মুখে একটু ভালো লাগে না।”
আহি ফাহিম ছেড়ে দিয়ে সরু চোখে তাকায়।বলে,” আমি পেঁচিমুখি?”
ফাহিম জোড়পূর্বক হাসলো, ” না বউ কে বললো আমি এটা বলতে পারি বলো?”
আয়রা শয়তানি হাসি দিয়ে বলে,” হ্যা আহি ও বলেছে এটা আমি শুনেছি।”
ফাহিম রাগি গলায় আয়রাকে উদ্দেশ্য করে বললো, ” কুত্তা ছেম্রি তুই বন্ধু নামের শত্রু।আমার বউ আমারে ডিবোর্স দিলে তোরে আমি খাইছি।”
তিয়া হেসে বলে,, ” আগে নিজেকে সামলা।”
ফাহিম আহির দিকে তাকাতেই আহি ওর ব্যাগ দিয়ে ফাহিম কে মারতে লাগলো।ফাহিম মার খাচ্ছে আর লাফাচ্ছে, ” উফফ দোস্ত! আস্তে মার। আও ব্যাথা পাই রে আমি।আমি না তোর বর।বরকে এইভাবে কেউ মারে।আল্লাহ থাম নারে।”
আহি মেরেই যাচ্ছে,মেরেই যাচ্ছে।শেষে ফাহিম না পেরে দৌড় দেয় ওর পিছে পিছে আহিও ছুট লাগায়।মুখে আছে তার মিষ্টি হাসি।কিন্তু এই হাসিটা চিরস্থায়ী না তবুও হাসছে তো এটাই বা কম কিসে? আদ্র তাকিয়ে থাকলো আহির হাসির দিকে।মেয়েটাকে হাসলে বড্ড সুন্দর লাগে।ভয়ানক সুন্দর।আদ্র’র ভালোবাসাটা তখন তরতর করে বেড়ে যায় আহি’র প্রতি।কিন্তু মেয়েটা আদৌ কি বুজবে তার ভালোবাসা?তা জানা নেই আদ্র’র।শুধু সময়ের অপেক্ষায় সে আছে।আগে আহি’র অতীত জানতে হবে তারপর অন্য কিছু।
——————————–
ক্লাবের সামনে গাড়ি থামিয়ে নির্বিঘ্নে ক্লাবে প্রবেশ করলো আহি।দিক বেদিক না তাকিয়ে সোজা নিজের কেভিনে ডুকে গেলো।যাওয়ার সময় শুধু ম্যানেজারকে তার জন্যে মদ আর সিগারেট পাঠাতে বলে দিলো।এতোক্ষন ক্লাবের কর্ণারের টেবিলে বসে সবটা লক্ষ্য করলো আদিয়াত।ঠিক তাই সে যা ভেবেছে।কাল রাত্রে সে ভুল দেখেনি।এটা আহিয়ানাই।কিন্তু তার আহিয়ানা না।এ এক নতুন আহিয়ানা।যে আহিয়ানাকে আদিয়াত একদম চিনতে পারছে না একদম না। টাকনুর উপড়ে উঠানো জিন্স এর সাথে সাদা লং শার্ট কোমড়ে বেল্ট বাধা।চুলগুলো কোমড় পর্যন্ত ছেড়ে রাখা ব্রাউন কালার করা চুল।
আদিয়াত কাল প্লান করেই এখানে এসেছে।ওর যদি আহিয়ানার সম্পর্কে সব জানতে হয় তাহলে আগে এই ক্লাবে এসেই আহিয়ানা সামনে ওকে ধরা দিতে হবে।আহিয়ানা থেকেই সব জিজ্ঞেস করতে হবে।এই কারনে আদিয়াত অনেক্ষন আগে থেকেই সোহেব আর জাহিনকে নিয়ে এখানে এসে অপেক্ষা করছিলো।
——————————
আহি সোফায় চোখ বুজে সুয়ে ছিলো দরজায় ঠক ঠক আওয়াজ পেয়ে চোখ খুলে সোজা হয়ে বসে বলে উঠে, ” কাম ইন!”
দরজা ঠেলে ভীতরে প্রবেশ করে ওয়েটার।আহি’র বলা সবকিছু নিয়ে এসেছে।আহি চোখের ইশারায় টেবিলে সব রাখতে বললো।ওয়েটার টেবিলে সবকিছু রেখে চলে গেলো।আহি এইবার ওয়াইনের বোতল খুলে গ্লাসে ঢেলে নিলো তারপর সিগারেটের প্যাকেট খুলে একটা সিগারেট মুখে পুরে যখন লাইটার জ্বালাতে যাবে।তখনি কেউ একজন তার হাত চেপে ধরে।আহি তাকায় দেখে একজন পুরুষের হাত।আহি গেলো রেগে।রেগে লাল হয়ে মুখ তুলে তাকাতেই আহির সারা শরীর শীতল হয়ে আসলো।মুখ থেকে আপনা আপনি সিগারেট টা পরে গেলো।এ কি দেখছে সে?ও কি স্বপ্ন দেখছে না-কি বাস্তব।এটা কি করে হতে পারে?আদিয়াত এখানে আসবে কোত্থেকে?আদিয়াত তো আমেরিকায় আছে।আর দেশে আসলেও ওর কাছে কেন আসলো।এটা তো হবার নয়! তবে কি সে স্বপ্ন দেখছে?সেই মুখ,সেই কালচে খয়েরি ঠোঁট জোড়া,পুরু ভ্রু-যুগল,ঘন পাপড়িযুক্ত কালচে বাদামি চোখজোড়া যেই চোখের চাহনীতে আহি ডুবে যেতো গভীর ভালোবাসার সাগরে।এইগুলো কি করে সম্ভব। না সে স্বপ্নই দেখছে।এর আগেও তো আদিয়াত তার স্বপ্নে এসেছিলো।তবে সেদিন তো আহি ঘুমোচ্ছিলো আজ তো তেমন কিছুই না। এমন কি সে নেশাটাও করেনি এখনো।তাহলে? আহি আর কিছু বলার আগেই আদিয়াত আহির মুখে রুমাল চেপে ধরে।নাকে কিছু একটার তীব্র গন্ধ আসতেই আস্তে আস্তে চোখ বুজে ফেলে আহি।ঢলে পড়ে আদিয়াতের বুকে।আদিয়াত পরম যত্নে আহিকে বুকে আগলে নেয় তারপর স্বযত্নে কোলে তুলে নেয়।কেভিনের বাহিরে বের হতেই স্বস্তির নিশ্বাস নেয়।কানে ব্লটুথ লাগানো আদিয়াতের।আদিয়াত বলে,
” কাজ শেষ আহিয়ানা আমার কাছে।এখন আমি ক্লাব থেকে বের হলেই ক্লাবের ইলেকট্রিসিটি দিবি তার আগে না।”
আসলে আদিয়াত ওই ওয়েটারের পিছে পিছে আহির কেভিনে আসছিলো ওয়েটার কেভিনে ডুকতেই আদিয়াত দরজার পিছনে লুকিয়ে পরে তাই আহি খেয়াল করেনি।ওয়েটার যেতেই আদিয়াত নিজের কাজ সেরে ফেলে।তারপর আদিয়াতের কথা মতো সোহেব আর জাহিন ক্লাবের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়।যাতে আদিয়াত খুব সহজেই আহিকে নিয়ে বের হতে পারে ক্লাব থেকে।আর তাই হলো।আদিয়াত অতি সাবধানে আহিকে নিয়ে ক্লাব থেকে বের হয়ে গেলো।আহিকে নিয়ে গাড়িতে বসতেই আদিয়াত ফোনের অপরপাশে সোহেব আর জাহিনকে উদ্দেশ্য করে বলে,” পাওয়ার অন করে দিয়ে জলদি ক্লাবের পিছনের রাস্তায় আয় আমি ওখানেই আছি।”
” আচ্ছা যা তুই আমরা আসছি।”
আদিয়াত গাড়ি নিয়ে পিছনের রাস্তায় চলে গেলো।কিছুক্ষন পর সোহেব আর জাহিনও এসে পড়লো।ওরা এসে গাড়িতে উঠতেই আদিয়াত জিজ্ঞেস করে, ” ওল ফাইন!”
জাহিন হাসি মুখেই বলে, ” ইয়াহ! সব ঠিক আছে।”
সোহেব আহিকে দেখিয়ে বলে উঠলো, ” ওর কি খবর?চেঁচামেচি করেছে।”
আদিয়াত একপলক তাকালো আহি’র দিকে।দীর্ঘ এক তপ্ত নিশ্বাস ফেলে বললো, ” না বিষ্ময় ভরা চোখে তাকিয়ে ছিলো।আমাকে দেখে অনেকটাই শক পেয়েছিলো আর আমি সেই সুযোগটাই কাজে লাগিয়ে নিয়েছি।”
” তাহলে চল যাওয়া যাক।”
সোহেবের কথায় সম্মতি দিয়ে আদিয়াত গাড়ি স্টার্ট দিয়ে ড্রাইভে মনোযোগ দিলো।তবুও ড্রাইভিং এর ফাঁকে ফাঁকে সে আহি কে দেখতে একদম হাত ছাড়া করছে না।কতোদিন পর মেয়েটাকে এতো কাছ থেকে দেখছে আদিয়াত।বড্ড নিষ্ঠুর এই পৃথিবী নাহলে কেন এমনটা হলো তাদের সাথে?কেন হলো?
#চলবে_______