পর্ব_১৬ #নিশাত_জাহান_নিশি “আরে এ আবার জিগ্যেস করার কি আছে? টয়া নিশ্চয়ই বেটার ফিল করছে। এমন সৌভাগ্য কার হয় বল? হিরোয়িনের বুকে হঠাৎ হিরোর এন্ট্রি!” এদের দুজনের টিটকারি পূর্ণ কথা বার্তা শ্রবণ মাএই যেনো আমার মেজাজটা মুহূর্তের মধ্যেই চটে বসল। আমি মরছি আমার অসুস্থ কোমড়ের যন্ত্রনায়। আর এরা কিনা করছে আমায় নিয়ে ব্যঙ্গ, বিদ্রুপ? কোথায় এসে আমাকে একটু টেনে তুলবে, কোথায় ব্যাথা হচ্ছে জানতে চাইবে, কোমড়ের ব্যাথাটা দ্রুত সাড়ানোর জন্য কিছু টোটকা দিবে। তা না! এরা করছে আমায় নিয়ে রসিকতা? সিরিয়াসলি? মানা যায় এসব? ঐদিকে আমার কাজিনরা ও যে মুখ টিপে হাসতে ভারী ব্যস্ত তা ও বেশ আন্দাজ করতে পারছি আমি। মানে সব গুলা একই পাষন্ড ক্যাটাগরির। কেউ কারো থেকে কোনো অংশে কম নয়! নিরুপায় হয়ে আমি নিজেই কোমড়ের অত্যধিক ব্যাথাযুক্ত অংশটায় হাত বুলিয়ে চোখ, মুখ বিদঘুটে ভাবে খিঁচে বন্ধ করতেই পরশ ভাইয়ার উদ্বিগ্ন কন্ঠ আমার কর্নকুহরে প্রতিধ্বনিত হলো। লোকটা যেনো বিষন্ন গলায় আমায় শুধিয়ে বলছেন,, “পেইন হচ্ছে বেশি? আমি হেল্প করব?” অমনি মিলি আপুর বাজখাই গলার স্বর আমার কর্নকুহরে উচ্চশব্দে প্রতিধ্বনিত হলো। আপু খুব গলা উঁচিয়ে পরশ ভাইকে শুধিয়ে বললেন,, “আপনি এখানে কি করছেন পরশ? আপনার তো নিচে থাকার কথা। এখানে আমরা কাজিনরা মিলে নাচের প্র্যাক্টিস করছি। প্লিজ আপনি এখন নিচে যান।” পরশ ভাই অধিক রাগান্বিত হয়ে প্রত্যত্তুর করার পূর্বেই পিয়াস ভাই মিলি আপুকে শুধিয়ে বললেন,, “তোমার এই খানে প্রবলেমটা কোথায় হচ্ছে মিলি? নিয়ম তো এটাই। যেখানে টয়া থাকবে, সেখানে পরশ ও থাকবে!” “কি কখন থেকে টয়া, পরশ, টয়া, পরশ করছেন? হিরো, হিরোয়িন করছেন? তখন থেকে কি সব লাগিয়ে রেখেছেন আপনারা?” “কেনো? তুমি বুঝতে পারছ না? টয়া এবং পরশের সম্পর্কটা?” “না পারছি না। বুঝতে চাইছি ও না। আপনারা প্লিজ যান এখান থেকে। আমরা এখন প্র্যাক্টিস করব!” ইতোমধ্যেই পরশ ভাই এক রোঁখা কন্ঠে বললেন,, “টয় পুরোপুরি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত কোনো প্র্যাক্টিস হবে না এখানে। সো অযথা চেঁচিয়ে লাভ নেই!” কথায় চট জলদি ইতি টেনে পরশ ভাই উনার ডান হাতটা আমার দিকে এগিয়ে নিম্ন আওয়াজে বললেন,, “উঠে এসো।” পরশ ভাইয়ার থেকে দৃষ্টি ঘুড়িয়ে আমি আপুর দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই হঠাৎ আঁতকে উঠলাম। ভয়ঙ্কর রাগী দৃষ্টিতে আপু আমার পানে চেয়ে আছেন। এক্ষনি বুঝি বিস্ফোরন ঘটবে ঐ রক্তিম আঁখিদ্বয়ে। শুকনো ঢোক গিলে আমি দৃষ্টি ঘুড়িয়ে পরশ ভাইয়ার উদ্বিগ্ন দৃষ্টিতে তাকালাম। অতঃপর ব্যাথায় কুঁকিয়ে উঠে আমি ডান হাতটা এগিয়ে দিলাম পরশ ভাইয়ার দিকে। এক টানে পরশ ভাই আমাকে চিৎ হয়ে শোয়া অবস্থা থেকে উঠিয়ে নিলেন। সম্পূর্ণ সোজা হয়ে দাঁড়াতে না পারলে ও ত্যাঁড়া ব্যাকা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম আমি। কোমড়ের ডান পাশের অংশটায় হাত রেখে আমি নিম্ন আওয়াজে আর্তনাদ প্রকাশ করার পূর্বেই পরশ ভাই আহত গলায় পিয়ালী আপুকে উদ্দেশ্য করে বললেন,, “পিয়ালী যা তো। টয়াকে নিয়ে একটু আম্মুর রুমে যা। আই হোপ সো আম্মুর সাইড ব্যাগে নিক্স, মুভ বা বাম জাতীয় কিছু একটা থাকবে। টয়ার ব্যাথা যুক্ত জায়গাটায় একটু মাসাজ করে দিস। আই থিংক কিছুক্ষন পর ব্যাথাটা আয়ত্তে চলে আসবে।” অশ্রুসজল দৃষ্টিতে আমি পরশ ভাইয়ার বেদনাহত দৃষ্টিতে তাকাতেই পরশ ভাই শুকনো মুখে ম্লান হেসে ফুটিয়ে বললেন,, “ডোন্ট বি স্যাড৷ ঠিক হয়ে যাবে!” তাৎক্ষনিক মাথা নুঁইয়ে নিলাম আমি। পরশ ভাইয়ার নির্দেশ মোতাবেক পিয়ালী আপু আমায় নিয়ে ধীর গতিতে হেঁটে চিলিকোঠা থেকে প্রস্থান নিয়ে সোজা ছাদের সিঁড়ির দিকে অগ্রসর হলেন। যদি ও কদম বাড়াতে ভীষন কষ্ট হচ্ছিলো আমার। তা ও মানিয়ে নিচ্ছিলাম এই দুর্বিষহ পরিস্থিতির সাথে নিজেকে। প্রায় আধ ঘন্টা যাবত কোমড়ে বাম লাগিয়ে ব্যাথা যুক্ত জায়গাটায় মাসাজ করার পরই যেনো আমার কোমড়ে একটু স্বস্তি মিলল। হাঁটতে, চলতে বেশ একটা কষ্ট, ব্যাথা বা অসুবিধে পরিলক্ষিত হচ্ছিলো না। ভাগ্যিস এই সময়টাতে আন্টি উনার রুমে ছিলেন না। নয়তো হাজারটা প্রশ্ন, রাগ, জেদ, অত্যধিক সন্দেহের মুখোমুখি হতে হতো! রাত ৭ টা বেজে ২০ মিনিট বাজছে ঘড়িতে। পার্লারের মেয়েদের আগমন ঘটেছে প্রায় ১০ মিনিট পূর্বে। প্রথমে বিয়ের কনে কে সাজিয়ে এরপর নীলা, স্নিগ্ধা পালাক্রমে সব কাজিনরা সাজব আমরা। সেই সুযোগে আমি নিজের রুমে মিউজিক ছেড়ে নাচের রিএসসেল করতে মগ্ন হয়ে পড়লাম। ঐ সময় তো নাচটা ঠিকভাবে তুলতেই পারি নি ঐ পরশটার হটকারিতার জন্য। তাই এখনি একটু সুযোগ মিলল নাচ টা সঠিক ভাবে তুলার। রুমের দরজাটা হালকা ভেজিয়ে আমি প্রায় দশ মিনিট যাবত রিএসসেল করার পর যেই না মিউজিকের তালে রাউন্ড শেইফে ঘুড়তে যাবো অমনি মনে হলো পেছন থেকে কেউ আমার কোমড় চেঁপে ধরেছেন! মানে পেছন থেকে আমায় জড়িয়ে ধরেছেন! ঘটনার আকস্মিকতায় পর পর শুকনো ঢোক গিলে আমি প্রকান্ড চোখে ঘাড়টা বাঁ দিকে ঘুড়াতেই পরশ ভাইকে চোখ বুজে থাকা অবস্থায় দেখতে পেলাম। লোকটা আমার ঘাঁড়ে মুখ ডুবিয়ে দিব্যি তপ্ত শ্বাস নির্গত করতে ব্যস্ত প্রায়। মনে হচ্ছে যেনো এক আসক্তিময় মোহ মায়ায় আচ্ছন্ন হয়ে আছেন লোকটা। না বলা কিছু অনুভূতির অন্তরালে ভীষনভাবে হারিয়ে যাচ্ছেন। একটু একটু করে আমার সমস্ত কোমড় জুড়ে উনার কোমল হাতের স্পর্শ বিরাজ করতে আরম্ভ করল। লোকটার এই উষ্ণ ছোঁয়া যে আমার সমস্ত সহ্য ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে লোকটা কি বিন্দুমাএ আঁচ করতে পারছেন না? উত্তেজনায় ক্ষনে ক্ষনে আমার লোমকূপদ্বয় সমান বেগে শিউরে উঠছে। অব্যক্ত কিছু আকাঙ্ক্ষা, ভালো লাগা প্রকট ভাবে ঝেঁকে বসেছে। সারা শরীর জুড়ে মৃদ্যুমন্দ হিমেল হাওয়া বইছে। বরফ গলতে বুঝি মাএ আরম্ভ করেছে! পরম আবেশে আমি আঁখি যুগল বদ্ধ করতেই পরশ ভাই হঠাৎ আমার ঘাঁড়ে দীর্ঘ এক চুমো এঁকে ঘোর লাগা স্বরে আমায় শুধিয়ে বললেন,, “আর ইউ ফাইন নাও?” সম্মতি ফিরে পেতেই আমি তাড়াহুড়ো করে পরশ ভাইয়ার হাতের বাঁধন থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে প্রায় দু ফুট দূরত্বে গিয়ে দাঁড়ালাম। লোকটাকে সামনে থেকে পূর্ণ দৃষ্টিতে অবলোকন করা মাএই আমার রাগী আঁখিদ্বয় মুগ্ধতায় গোলাকৃতির হয়ে গেলো। গাঢ় নীল রঙ্গের সুতি কাপড়ের এক আকর্ষনীয় পাঞ্জাবি পরিহিত অবস্থায় দন্ডায়মান লোকটা। কৃষ্ণ রঙ্গের চুল গুলোতে হালকা লাল রঙ্গের একটু গ্লেইসের ছোঁয়া মিলছে। চুলগুলো জেল দিয়ে এমনভাবে সেট করা মনে হচ্ছে যেনো পৃথিবী উলোট পালোট হয়ে গেলে ও চুল গুলো বিন্দু পরিমান এদিক থেকে ওদিকে হবে না! ঠোঁটের কোনে এক মুগ্ধ করা হাসি লেগে আছে যার বিপরীতে চোখ ফেরানো বড্ড দায় হয়ে পড়েছে। চোখের মধ্যিখানে বিরাজমান নিকষ কালো মনিটা যেনো ঝলঝল করে জ্বলে উঠছে। সেই মনিটাতে সুস্পষ্টভাবে কেবলি মাএ আমার প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠছে! খোঁচা খোঁচা দাঁড়ির ভাঁজে এক ধরনের গাঢ় গভীর ভালো লাগা টের পাচ্ছি আমি। ইচ্ছে করছে দাঁড়ি গুলোকে আলতো হাতে একটু ছুঁইয়ে দিতে। লোকটাকে দেখতে দেখতে কোথায় যেনো একটা হারিয়ে যাচ্ছি আমি! ঠিক ঠাওড় করতে পারছি না। সত্যি বলছি! পাঞ্জাবি পরিহিত অবস্থায় লোকটাকে সত্যিই যেনো দ্বিগুন লম্বা, চওড়া, ফিট, হ্যান্ডসাম এবং ড্যাশিং দেখতে লাগছে! সমস্ত বিশ্লেষণ ক্ষমতার উর্ধ্বে চলে গেছে উনার এই অত্যধিক সুদর্শন রূপ! মিনি হার্ট এ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা ক্রমশ এগিয়ে আসছে আমার! না জানি আজ কতো কতো মেয়ের স্বপ্নের পুরুষ হয়ে উঠবেন এই সুদর্শন লোকটা। মিলি আপু নির্ঘাত আজ আমার চেয়ে ও বড় সড় হার্ট এ্যাটাক করবেন। পূর্ব থেকেই বেশ ধারনা করতে পারছি আমি! আমার পিনপিতন মৌনতা উপলব্ধি করা মাএই পরশ ভাই বুকের উপর দু হাত বেঁধে ক্রুর হেসে আমার দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে বললেন,, “কি? মুগ্ধ তো? প্রেমিক হিসেবে ঠিক কতোটা সুদর্শন মনে হচ্ছে আমায়?” রাগী ভাব নিয়ে আমি যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে লোকটাকে শুধিয়ে বললাম,, “আগে বলুন? আপনি আমার রুমে কি করছেন?” তাৎক্ষণিক মিউজিকের সুইচ টা অফ করে পরশ ভাই দ্রুত পায়ে হেঁটে আমার সম্মুখস্থ হয়ে বললেন,, “আমার দৃষ্টিতে দৃষ্টি মিলিয়ে বলো সবদিক থেকে প্রেমিক হিসেবে আমায় ঠিক কতোটা গ্রহনযোগ্য মনে হচ্ছে? আই মিন কতোটা যোগ্যতাসম্পন্ন মনে হচ্ছে?” “পিকচার পার্ফেক্ট প্রেম আমি চাই না! যে উভয় দিক থেকে সমভাবে আপনাকে পার্ফেক্ট হতে হবে! আমি অন্তত মনে করি না প্রেমিকের মাপকাঠি তার যোগ্যতায় হয়। প্রেমিকের যোগ্যতা তো কেবলমাএ তারাই খুঁজে, যারা প্রেমিককে শুধু প্রেমিক হিসেবেই পেতে চায়! প্রেমিককে তৃতীয় কোনো পক্ষের কাছে অতিব সুদর্শন এবং অধিক যোগ্যতা সম্পন্ন বলে হাইলাইট করতে চায়! আমি কিন্তু বাধিত নই প্রেমিককে কোনো তৃতীয় পক্ষের কাছে হাইলাইট করার। তাছাড়া আমি যাকে ভালোবাসব না? তাকে শুধু প্রেমিক হিসেবে নয় অর্ধাঙ্গ হিসেবে ও পেতে চাই! আপনি পূর্বে ও যেমন আমার দৃষ্টিতে সঠিক যোগ্যতাসম্পন্ন ছিলেন, এখনো ঠিক তেমনই আছেন। আপনার আকস্মিক এই পরিবর্তনে আমি মোটে ও নতুন করে আপনার যোগ্যতায় প্রেম খুঁজতে যাবো না।” পরশ ভাই মৃদ্যু হাসলেন। অতঃপর আমার কাঁধে মাথা ঠেঁকিয়ে মন্থর গলায় বললেন,, “কোনো প্রেমই বোধ হয় পিকচার পার্ফেক্ট হয় না। প্রতিটা প্রেমেই রোজ ঝগড়া হয়, মাসে একবার হলে ও ছাড়াছাড়ি হয়! বছরের দু, এক বারের ও অধিক সময় ধরে তাদের মুখ দেখাদেখি বন্ধ থাকে! এরপরে ও এসব প্রেম গুলো টিকে থাকে কেনো জানো? সে প্রেম গুলোতে ছেড়ে যাওয়ার কথাটা অনেকবার উঠলে ও থেকে যাওয়ার বদ অভ্যাসটা বরাবর বেশিই প্রাধান্য পায়!” “এতোই যেহেতু বুঝেন, তাহলে নিজেকে হঠাৎ যোগ্য প্রমাণ করতে উঠে এভাবে উঠে পড়ে লেগছেন কেনো? আপনি কোন দিক থেকে অযোগ্য শুনি?” “প্রিয়তমাকে যেনো তেনো ভাবেই হোক, আমি ব্যাস ইমপ্রেস করতে চাই! হৃৎস্পন্দন থমকে যাচ্ছে আমার! প্রেমিকাকে যতক্ষন অবধি না হাসিল করতে পারব আমার ব্যাহত মনের উত্থান ঘটবে না!” “যতসব ফালতু কথা আপনার। দেখি সরুন। ঐ সময় তো আপনার জন্যই নাচটা ঠিকভাবে তুলতে পারলাম না!” “আমি হেল্প করব?” “কিভাবে করবেন? নাচতে জানেন নাকি আপনি?” “ট্রাই করতেই পারি!” “নাচের স্বভাবটা কি আপনার ও আছে?” “উঁহু। তবে তৈরী করতে হবে। প্রেয়সীকে অন্য কারো সাথে জুটি মিলিয়ে নাচতে দেওয়া যাবে না মোটেও!” ভীষন হাসি পেয়ে গেছে আমার। হু হা শব্দে আমি হেসে উঠতেই পরশ ভাই হঠাৎ আমার কাঁধ থেকে মাথা উঠিয়ে আমার মেহেন্দি রাঙ্গা হাত দুটো চোখের সামনে মেলে ধরে খুব মনযোগের সহিত কিছু একটা খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন আর ভ্রু যুগল কিঞ্চিৎ উঁচিয়ে তৎপর গলায় আমায় বললেন,, “আমার নামটা কোথায় লিখা আছে? কই খালি চোখে তো পড়ছে না।” তড়িঘড়ি করে আমি হাত দুটো পেছনের দিকে গুটিয়ে কম্পিত গলায় লোকটাকে শুধিয়ে বললাম,, “আপনার নাম আমি অযথা আমার হাতে লিখতে যাবো কেনো? রুম থেকে এক্ষনি বের হোন বলছি!” ঠোঁটের আলিজে ক্রুর হাসি ফুটিয়ে পরশ ভাই হেলে দুলে রুম থেকে প্রস্থান নিচ্ছেন আর বলছেন,, “বাঁ হাতের আর্ট করা ঠিক মাঝখানের লতাটায় আমার নামটা যে অতি যত্নের সহিত খোদিত হবে তা ভাবতেই পারি নি আমি! কিছু জিনিস দেখলে ও শান্তি লাগে!” পরশ ভাই রুমের বাইরে পদার্পন করতেই কোথা থেকে যেনো পিয়ালী আপু এবং পায়েল এসে পরশ ভাইয়ার সম্মুখীন হলেন। দুজনই সন্দেহভরা দৃষ্টিতে পরশ ভাইকে শুধিয়ে বললেন,, “এই ভাইয়া? তুমি এই রুমে কি করছ হুম?” পরশ ভাই বড্ড অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে মাথা নুঁইয়ে পেছনের চুল গুলো হালকা টেনে বেশ ইতস্তত গলায় বললেন,, “একটা দরকারে এসেছিলাম!” শো শো বেগে পরশ ভাই প্রস্থান নিলেন। সঙ্গে সঙ্গেই পিয়ালী আপু এবং পায়েল হু হু শব্দে হেসে আমার দিকে এগিয়ে এলেন। পিয়ালী আপু হাসি থামিয়ে মৃদ্যু স্বরে আমায় বললেন,, “চলো চলো। স্নিগ্ধা, নীলার সাজ কমপ্লিট৷ এবার আমাদের পালা।” বিনিময়ে আমি ও ম্লান হেসে বললাম,, “চলো!” , , ঘড়িতে রাত প্রায় ৯ টা ৩০ মিনিট বাজছে। রুম্পা আপুকে নিয়ে আমরা সব কাজিনরা বাইরে হলুদের স্টেইজের দিকে রওনা হলাম। রুম্পা আপু সহ আমাদের সবার মাথার উপরে ছাউনি হিসেবে লাল বিশাল দোপাট্টা টেনে নিয়ে যাচ্ছেন পিয়াস ভাই, পরশ ভাই, হিমেশ ভাই এবং জিহাদ ভাই। আশেপাশে পাড়ার সব মেয়েরা ভীড় জমিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। গেস্টদের মধ্যে বিভিন্ন ছেলেরা বেশ ভাব সাব নিয়ে আমাদের টুকুর টুকুর দেখছে। যেনো তেনো প্রকারেই হোক তারা যেনো আজ আমাদের ইমপ্রেস করেই ছাড়বেন! কেউ আমাদের দেখে চুল ঠিক করছেন তো কেউ চোখের চশমা টেনে উপরে তুলছেন! ছোট বাচ্চা কাচ্চারা মিউজিকের তালে তালে ধেই ধেই করে নাচছে। আমাদের দেখা মাএই পুরো স্টেইজে হৈ হৈ, রৈ রৈ পড়ে গেছে। ক্যামেরা ম্যান এক পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন তো অন্য পাশে ভিডিও ম্যান দাঁড়িয়ে ভিডিও করছেন। মোদ্দা কথা, আমরা এখন ফুল ফোকাসে আছি। মিলি আপু কেনো জানি না রাগে ফুস ফুস করে বার বার আমার দিকে দৃষ্টিপাত করছেন। সুন্দর তো আমার চে মিলি আপুকে অধিক লাগছে! পরশ ভাই ফিদা হলে তো একমাএ মিলি আপুতেই হবেন! আমাতে কেনো হবেন? বোকা মেয়েটা আসলেই বুঝতে চায় না! আপুর থেকে দৃষ্টি ঘুড়িয়ে আমি পাশ ফিরে তাকাতেই হঠাৎ চমকে উঠলাম। ওমা এ তো দেখছি পরশ ভাই আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন! একটু আগেই তো লোকটাকে দেখেছিলাম আমার ঠিক পেছনের দিকটায় দাঁড়িয়ে থাকতে। এখন তো দেখছি এই লোক একদম আমার পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছেন। ইশশ… এতক্ষনে বোধগম্য হলো আমার! মিলি আপু কেনো রাগী দৃষ্টিতে আমায় জাস্ট খেয়ে নিচ্ছিলেন! বেহায়া লোকটার চোখের পলক যেনো পড়ছেই না আমার থেকে! কি প্রমান করতে চাইছেন লোকটা? লোকটার চেয়ে বুঝি অত্যধিক সুন্দর লাগছে আমায়? লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে আমার। লোকটা কি আদৌ বুঝতে পারছে না? লোকটার এই নেশাময়ী বেহায়াপনা চাহনিতে আমি লজ্জায় শত রঙ্গ ধারন করছি নিমিষেই? মুখের আদলে কি সেই লজ্জার গাঢ় রংটা ও স্পষ্টত না? লজ্জায় হালকা হেসে আমি মাথা নুঁইয়ে মিলি আপুকে নিয়ে স্টেইজে উঠতেই কি হলো জানি না হঠাৎ পরশ ভাই আমাকে শক্ত হাতে টেনে স্টেইজের ঠিক পেছনের দিকটায় নিয়ে নিলেন। জায়গাটা সম্পূর্ণ নিরিবিলি। লাল, নীল, সবুজ ঝাড়বাতির আলোতে পরিবেশটা অত্যধিক রঙ্গিন হয়ে উঠেছে। নিমিষের মধ্যেই পরশ ভাই আমায় প্যান্ডেলের ভারী বাঁশের সাথে চেঁপে ধরে আসক্তিভরা দৃষ্টিতে মন্থর গলায় বললেন,, “অনিন্দ্যনীয় সৌন্দর্যের অধিকারিণী তুমি। দৃষ্টি ঝলসে এলো আমার তোমার শরীরের ঐ উজ্জ্বল ফর্সা বর্ণে পরিহিত তুলতুলে মিষ্টি রংটায়! আর চোখ দুটো! হায়! বড্ড সাংঘাতিক ভাবে দৃষ্টিহরন করছে আমার। চোখে গাঢ় রেখায় কাজল পড়লে বুঝি সব মেয়েদেরই এমনিতেই একটু বেশি সুন্দর দেখায়? মুখ শ্রী তে এক নিদারুন মায়াবী রং ফুটে উঠে? মনে হচ্ছে যেনো আমি নির্দ্বিধায় এই চোখে চোখ রেখে তোমার হৃদয় অবধি পৌঁছে যেতে পারব! আর ঠোঁটে? কি রং পড়েছ এটা? মেজেন্টা কালার বোধ হয়! অনেকটা বেশিই মানিয়েছে রংটা তোমার ঐ প্রশ্বস্ত ওষ্ঠদ্বয়ে। কানের দুলে, কপালের কালো টিপে, হাতের গুচ্ছ খানিক চুড়িতে, সরু উন্মুক্ত খোলা চুলে বোধ হয় আমি অজানা কোনো বন্দরে নিজের অস্তিত্ব খুঁজে পাচ্ছি! এতোটা মোহ মায়ায় আকৃষ্ট করছ কেনো আমায়? জ্ঞান হারাবার উপক্রম হয়েছে প্রায়!” “মিলি আপুকে দেখেছেন? আমার চেয়ে ও দ্বিগুন রূপসী লাগছে আপুকে। যেমন ফিটফাট শরীরের ধরন, তেমনি একটু সাজেই নীলাঞ্জনা লাগছে! আমি মেয়ে মানুষ হয়ে ই আপুর থেকে চোখ ফেরাতে পারছিলাম না। আর আপনি ছেলে হয়ে কিভাবে পারলেন আপুর থেকে চোখ সরাতে?” “শরীরের ফিটফাট ধরন দেখে কখনো কোনো মেয়ের প্রতি আমার চোখ পড়ে নি! বুকের উচ্চতা বা নিম্নাঙ্গের গভীরতায় কখনো প্রেম প্রকাশ পায় না! কারো চোখের দিকে দু সেকেন্ড তাকিয়ে যদি চোখ ফেরাতে ইচ্ছে না হয় তবেই তাকে আমি প্রেম ভাবি! মোটে ও আমি পুরুষতন্ত্রের রক্ষিতা হতে চাই না! যে পুরুষতন্ত্রে শুধু শরীরের নেশাই প্রাধান্য পায়!” ইতোমধ্যেই প্যান্ডেলের বাঁ পাশ থেকে অকস্মাৎ মিলি আপুর খড়তড় গলার স্বর ভেসে এলো। মিলি আপু যেনো রূঢ় কন্ঠে কাউকে শাসিয়ে বলছেন,, “তোমার সাহস হয় কি করে? আমার হাত ধরে আমাকে এই শুনশান জায়গায় টেনে আনার?” #চলবে…?