তোর আসক্তি পাগল করেছে আমায় পর্ব -০১

-“বস কাজ হয়ে গেছে ওই বেলা মেয়েটা আজ মরবে। জীবনের মত ওই মেয়ের সব তেজ আজ ভেঙে গুড়ো গুড়ো হয়ে যাবে। আজকের রেস জেতা আর হবেনা তার আগেই একদম উপরে চলে যাবে। বলেই বিশ্রী হেসে ওঠে রেজা।

-” রেস তো আজ আমিই জিতবো। আজ কেউ আমাকে এই কম্পিটিশনে হারাতে পারবে না আর ওই বেলা তো আজকেই শেষ। বলেই শয়তানি হেসে ম্যাডি।

ইতি মধ্যে সবাই ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে সবাই বাইক নিয়ে রেডি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এখান থেকেই তাদের বাইক রেস শুরু হবে। অপেক্ষা শুধু তাদের রেস শুরুর সিগন্যাল পাওয়া। চারদিকে থেকে স্টুডেন্টদের চিৎকার শোনা যাচ্ছে তাদের সবার মুখে যার যার পছন্দের রেসারের নাম নিয়ে তাদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য চিৎকার করছে তবে বেশির ভাগ সবার মুখে একটাই নাম শোনা যাচ্ছে। সময় হয়ে এসেছে ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে থাকা এল.ই.ডি তে টাইম তুলে দেওয়া হয়েছে আর কিছু সেকেন্ডের মাঝে স্টার্টিং উঠে যাবে। ট্যাগ লাইনে সারি সারি দাঁড়ানো বাইকের পাশে এসে দাঁড়ায় আরো একটা বাইক সাথে সাথে পুরো ক্যাম্পাস চিৎকারে ভরে যায়। এখন সবার মুখে একটাই নাম।

-“বেলা বেলা বেলা বেলা ।

বেলা এসে বাইক নিয়ে দাঁড়ানো পর পরই স্ক্রিনে স্টার্টিং উঠে যায় সাথে সাথে সবাই বাইক টেনে বেরিয়ে যায়। বেলা একবার তার পিছনে বসা সারা কে দেখে নিয়ে চোখের ইশারা করে বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। আজকের রেসে দুজন করেই আছে একজন বাইক ড্রাইভ করছে আর একজন পিছনে বসে রাস্তা চিহ্নিত করছে। প্রতিবছরই এই রেস হয়ে আসছে বি.আই.টি.এস পিলানি গোয়া ইউনিভার্সিটিতে তবে প্রতিবারই আলাদা আলাদা সেকশনে থাকে। এবারেও তাদের নতুন একটা রোড এক্সপ্লোর করতে দেওয়া হয়েছে।

ক্যাম্পাসে দাঁড়িয়ে বাকি স্টুডেন্ট গুলো এল.ই.ডি স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে যাচ্ছে যেখানে এই রেস এর ভিডিও ফুটেজ দেখানো হচ্ছে। এখানে স্টুডেন্ট ছাড়াও ইউনিভার্সিটি প্রিন্সিপাল প্রফেসর সাথে আছে আরো একজন ভি.আই.পি মিস্টার সাঁঝ রওশন। প্রিন্সিপালের সাথে দাঁড়িয়ে তিনিও স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে রেস দেখে যাচ্ছেন তবে তার চোখ আটকে আছে লাল কালো বাইকের দিকে যেটা একদম শেষে এসে দাঁড়িয়ে ছিলো ট্যাগ লাইনে।

বেলা বাইকের স্পিড তুলে শেষের থেকে শুরু করে এবার একে একে পাশ করে সবাই কে পিছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে। সারা বেলার পিছনে বসে রাস্তার উপরে থাকা সাইন বোর্ড দেখে রাস্তার নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছে আর বেলা সেই মতো বাইকের স্পিড নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। রাস্তা প্রায় শেষের দিকে হয়ে এসেছে তবে সামনে এখনও পাঁচ জন রয়েছে তাদের টপকে যেতে পারলেই কেল্লাফতে। বেলা স্পিড ফুল বাড়িয়ে দিয়ে বাইক টেনে এগিয়ে যায় এক এক করে পাশ করতে থাকে। একদম সামনে এগিয়ে যাচ্ছে ম্যাডি আর তার পিছনে বসে আছে রেজা যে পথ নির্দেশনা দেওয়ার সাথে সাথে পিছনে মাথা ঘুরিয়ে বেলা কে দেখে নিচ্ছিলো তবে এবার বেলা কে নিজেদের একদম কাছে চলে আসতে দেখে রেজা ভ্রু কুঁচকে ফেলে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে যায়।

-“বস মেয়েটা আমাদের ধরে নিয়েছে প্রায়। রেজা বলে ওঠে।

-” মানে তুইতো বললি বাইকের ব্রেক কেটে দিয়েছিস তাহলে এরপরেও কি করে এখনও টিকে আছে তাও এই রাস্তায়। ম্যাডি বাইক চালাতে চিৎকার করে বলে ওঠে।

-“বস বুঝতে পারছিনা আমি কিছুই আমি তো ব্রেক কেটে দিয়েছিলাম তাহলে কি করে এখনও আছে আমি জানি না এতক্ষণ তো খাদে পড়ে যাওয়ার কথা এই পাহাড়ি রাস্তা থেকে তারপরেও কি করে আছে। রেজা বলে ওঠে।

ম্যাডি আর কোনো কথা না শুনে বাইকের স্পিড বাড়িয়ে জোরে চালাতে থাকে। তবে কিছু সেকেন্ডের মধ্যে বেলা একদম ম্যাডির পাশে চলে আসে। বেলা একবার মাথা ঘুরিয়ে ম্যাডির দিকে ভয়ঙ্কর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে নিয়ে পাশ কেটে বেরিয়ে যায় বাইক টেনে ম্যাডি চেয়েও আর ধরতে পারেনা বেলাকে। এদিকে ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে সবাই এল.ই.ডির দিকে তাকিয়ে ছিল তবে বেলাকে ম্যাডির থেকে আগে বেরিয়ে যেতে এবার সবাই আবারো চিৎকার করে উঠে সবাই ক্যাম্পাসের উল্টো সাইটে চলে যায় যেখানে রেসের এন্ড পয়েন্ট করা হয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই বেলা বাইক নিয়ে এন্ড পয়েন্ট ক্রস করে ফেলে তবে বাইক দাঁড় করাতে পারেনি। সারা পিছন থেকে চিৎকার করে সবাইকে সরে যেতে বলে ক্যাম্পাসের থাকা সাইটে গাছের সাথে গিয়ে ধাক্কা মেরে উল্টে পড়ে যায় বেলা ও সারা। এদিকে বেলার বাইকের এই অবস্থা দেখে সবাই ভয় পেয়ে যায় আর ওদের পড়ে যেতে দেখে ওম নিশান বেদ রুহি চিৎকার ওদের দিকে এগিয়ে আসে। সারা বেলা দুজনই দুদিকে উল্টে পড়ে গেছে। ওম রুহি গিয়ে বেলাকে টেনে তোলে আর নিশান ওম গিয়ে সারা কে তোলে। দুজনের অল্প একটু করে কেটে ছড়ে গেছে বেলা উঠে দাঁড়িয়ে মাথায় থেকে হেলমেট খুলে ফেলে সাথে সাথে ঝরঝর করে পিঠ ছাড়িয়ে কোমর ছুয়ে যায় চুল। বেলা সারার দিকে এগিয়ে গিয়ে সারাকে জড়িয়ে ধরে সাথে ওম নিশান বেদ রুহিও ওদের জড়িয়ে ধরে।

সাঁঝ এতক্ষণ দূর থেকে দেখছিল এতক্ষণ শুধু বেলার চোখ দুটোই দেখা যাচ্ছিলো মাথায় থেকে হেলমেট খুলতে মুখ দেখা গেছে তবে আবারো এখনও মুখের একপাশ দেখা যাচ্ছে আর সাঁঝ তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়েই তাকিয়ে আছে সেই দিকে। প্রিন্সিপাল প্রফেসর সবাই এগিয়ে যায় বেলাদের দিকে এমন একটা দুর্ঘটনা ঘটতে ঘটতে বেঁচে গেছে।

-“বেলা সারা তোমরা ঠিক আছো তো? আর বাইকের ব্রেক কিভাবে ফেল করলো? প্রিন্সিপাল জিজ্ঞেস করে ওঠে।

-” ইয়েস স্যার আমরা একদম ঠিক আছি। আর বাইকের ব্রেকফেল আগেই হয়েছিলো তবে বুঝতে পারিনি শুধু সামান্য তম কানেকশন করিয়ে রেখেছিলো পার্টসের সাথে। তবে সেটা মাঝ রাস্তায় গিয়ে পুরো পুরি ভাবে খুলে যায়। বেলা গুরু গম্ভীর ভাবে বলে ওঠে।

-” ওহ মাই গড এই হঠাৎ ব্রেক কিভাবে ফেল করলো তোমরা আগের থেকে বাইক চেক করে নাওনি। তোমরা যে ঠিক আছো এটাই অনেক। প্রিন্সিপাল আতকে উঠে বলে।

-” যার শেষ ভালো তার সব ভালো প্রতিবার এর মত এবারও তুমিই রেস জিতলে চলো এবার ট্রফি তোমাদের জন্যে অপেক্ষা করছে। প্রফেসর রীতি বলে ওঠে।

প্রফেসর রীতির কথায় সবাই হেসে সামনের দিকে পা বাড়ায়। তবে সারা পিছন থেকে কারোর ডাকে থেমে যায় সাথে ওম বেদ নিশান রুহিও। সারা পিছন ঘুরে তাকায় সাথে সাথে তার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। বেলা মাথা ঘুরিয়ে দেখে প্রিন্সিপাল এর সাথে দাঁড়িয়ে আছে এক সুদর্শন পুরুষ। বেলা ভ্রু কুঁচকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে থাকে।

-“সারা।

-“ভাইয়া।বলেই সারা দৌড়ে গিয়ে গিয়ে সেই সুদর্শন পুরুষ কে জড়িয়ে ধরে।

-“এই তাহলে সারার ভাইয়া মিস্টার সাঁঝ রওশন। রুহি ওম বেদ নিশান বেলার পাশে দাঁড়িয়ে ফিসফিসিয়ে বলে ওঠে।

-” হুম তাইতো মনে হচ্ছে। ওম বলে ওঠে।

বেলা কয়েক মুহূর্ত তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকে সাঁঝের দিকে তারপরে চোখ ঘুরিয়ে তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ওম বেদ নিশান রুহিকে দেখে নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যায় কারণ সারা তার ভাইয়ের সাথে আছে আর তার ভাইয়ের সাথে তাকে কিছু মুহূর্ত একা ছেড়ে দেওয়া দরকার তারা কিছু পরে চলে আসবে তাই বেলা এগিয়ে যায় বাকিদের সাথে।

-“সারা তুই ঠিক আছিস কিছু হয়নি তো? আর ব্রেকফেল কিভাবে হলো তোরা বাইক আগে চেক করে নিসনি কেনো? সাঁঝ জিজ্ঞেস করে ওঠে।

-” না ভাই আমি একদম ঠিক আছি কিছুই শুধু একটু ছড়ে গেছে এইযা আর বাইক আমরা আগেই চেক করে নিয়েছিলাম। মাঝ রাস্তায় গিয়ে বুঝতে পারি তবে চিন্তার কিছু ছিলোনা বেলা ব্যালেন্স করে চালিয়ে নিয়েছে ও খুব ভালো বাইক ড্রাইভ করে এর আগেও অনেকবার খুব ভয়ানক ভাবেই বাইক ড্রাইভ করেছে তাই কোনো প্রবলেম হয়নি।

-“বাইক চেক করে নিয়েছিলিস যখন তাহলে ব্রেকফেল কি করে হলো? সাঁঝ ভ্রু কুঁচকে বলে ওঠে।

-“ব্রেকফেল যে কে করেছে সেটা জানি তবে এবার তার যে কি অবস্থা করবে বেলা সেটা সে এখনও পর্যন্ত জানে না। সারা নিজের মনে বলে ওঠে।

-“মানে? সাঁঝ সারার কথার সারমর্ম বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করে ওঠে।

-“ওহ কিছুনা ভাইয়া চলো সবাই চলে গিয়েছে আমাদেরও যেতে হবে। বলেই সারা সাঁঝের হাত টেনে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।

এদিকে ক্যাম্পাসের এক পাশে দাঁড়িয়ে রেজা ও ম্যাডি রাগে ফুলছে সে এবারেও সফল হতে পারিনি। বেলাকে মেরে ফেলার চেষ্টা টাও বিফলে গেলো সে যতবার এই মেয়েকে বিপদে ফেলতে গেছে ঠিক কোনো না কোনোভাবে বেঁচে গেছে কিন্তু এবারের হার টা ঠিক মেনে নিতে পারছেনা ম্যাডি তাই রাগে প্রতিহিংসাতে ফেটে পড়ছে হিংস্র চোখে তাকিয়ে আছে বেলার দিকে আর মনে মনে আবারো প্ল্যান করছে বেলাকে মারার।

তবে ম্যাডি কি জানে এবার তার সাথে কি হতে চলেছে? বেলা যে তার জন্য কি ব্যবস্থা করে রেখেছে অ্যাপ্প্যায়ন করার জন্য? বেলা যে তার সাথে ভয়ংকর কিছু করতে চলেছে সেটা জানলে হয়তো আর বেলাকে মারার প্ল্যান না করে এতক্ষণ নিজের গা ঢাকা দিত ম্যাডি। তবে এবার দেখার পালা ম্যাডির সাথে কি হয়।।

চলবে…?

ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন। নিজেদের মতামত জানাবেন ।

#তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায়
#সিজন_০২
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
#সূচনা_পর্ব

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here