তোর আসক্তি পাগল করেছে আমায় পর্ব -০২

#তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায়
#সিজন_০২
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
.২.
অন্ধকার ক্লাস রুমের মধ্যে হাত পা বাঁধা অবস্থায় পড়ে আছে মেঝেতে মুখের মধ্যে কাপড় গোজা তার জন্যে মুখ দিয়ে শুধু গোঙানির আওয়াজ ছাড়া আর কিছুই শোনা যাচ্ছে না। ছাড়া পাওয়ার জন্যে হাত পা ছটকাচ্ছে তারপরও নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে পারছেনা। বাইরে প্রোগ্রাম হচ্ছে লাউড মিউজিক বাজছে তাই এই সামান্যতম গোঙানির আওয়াজ বাইরে কারোর কানে যাওয়া সম্ভব নয়। আজ ইউনিভার্সিটির অ্যানোয়াল প্রোগ্রাম হচ্ছে অডিটোরিয়াম হলে তাই সবাই সেখানেই আছে এখন এই বিল্ডিং এ কেউ আসবে ও না।

এরই মধ্যে ক্লাস রুমের দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে আসে কেউ অন্ধকারের জন্যে মুখ দেখা যাচ্ছে না। তবে কিছুক্ষণের মাঝে অন্ধকার কেটে গিয়ে রুম আলোয় আলোকিত হয়ে পড়ে। মাথা তুলে দরজার দিকে মাথা তুলে তাকাতে দেখা যায় বেলাকে হকিস্টিক হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পাশে ওম বেদ নিশান রুহি সারা ও দাঁড়িয়ে আছে তাদের হাতেও হকিস্টিক। বেলা রুমের ঢুকে এসে মেঝেতে পড়ে থাকা ম্যাডি আর রেজার পাশে হাঁটু মুড়ে বসে। ওম বেদ রুহি সারা রুমের ভিতরে ঢুকে গিয়ে দরজা আটকে দেয়।

ম্যাডি আর রেজা এবার বুঝতে পারে তাকে তুলে এনে এখানে এভাবে বেলায় বেঁধে রেখেছে এটা বুঝতে পারার পর তার চোখ মুখ রাগে লাল হয়ে গেছে। মুখ দিয়ে গো গো আওয়াজ বের হচ্ছে মাথা নাড়িয়ে ম্যাডি কথা বলতে চাইছে বুঝতে পেরে বেলা হাত বাড়িয়ে মুখের থেকে কাপড়টা সরিয়ে দেয়।

-“বেলা তোর সাহস কি করে হয় তুই আমাকে এইভাবে কেনো তুলে এনে বেঁধে রেখেছিস? ম্যাডি চিৎকার করে বলে ওঠে।

-” এই বেলা আমাদের কে এই ভাবে কেনো বেঁধে রেখেছিস খুলেদে বলছি নাহলে খুব খারাপ হবে। পাশে থেকে রেজা বলে ওঠে।

রেজার কথা শুনে বেলা ভ্রু কুঁচকে পাশে তাকাতে দেখে ওম রেজার সামনে বসে ওর মুখ দিয়ে কাপড় টা সরিয়ে নিয়েছে তাই যে মুখ দিয়ে আওয়াজ বেরিয়েছে সেটা বুঝতে পারে। বেলা এবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে ম্যাডির দিকে তাকায়।

-“আচ্ছা ম্যাডি তোর কখনো জামাই আদর খাওয়া হয়েছে? বেলা জিজ্ঞেস করে ওঠে।

-” মানে? ম্যাডি ভ্রু কুঁচকে বলে ওঠে।

-“মানে হলো কেউ কি তোকে কখনো জামাই আদর করেছে? করেনি তো? তবে চিন্তা নেই আজ আমরা তোকে জামাই আদর করবো। বেলা একটা শান্ত শীতল কন্ঠে বলে ওঠে।

ম্যাডি এবার ভ্রু কুঁচকে বেলাকে লক্ষ করে সে এতক্ষণ রাগে চিৎকার করলেও সে এবার তার অবস্থানটা বুঝতে পারে তার হাত পা বাঁধা আর তার সামনেই বেলা হকিস্টিক নিয়ে বসে আছে বেলার মুখ থমেথমে হয়ে আছে ম্যাডি না চাইতেও এই মুহূর্তে বেলাকে দেখেই ভয় পেয়ে যায়। বেলার ওই কঠিন দৃষ্টি যেনো তাকে পুড়িয়ে দিয়ে যাচ্ছে। এদিকে বেলার পাশে দাঁড়িয়ে ওম বেদ নিশান সারা রুহি হেসে ওঠে।

-” আচ্ছা ম্যাডি তোর কি মনে হয় আমার বাইকের ব্রেকফেল কিভাবে হলো? বেলা হাতে হকিস্টিক ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলে ওঠে।

বেলার কথা শুনে এবার ম্যাডি পুরোপুরি ভাবে চমকে যায় তার আর বুঝতে বাকি নেই যে বেলা বুঝতে পেরেছে এই সব কিছুর পিছনে সে আছে। ম্যাডিকে কিছুটা ভীতগ্রস্থ হয়ে তাকিয়ে আছে।

-“কিরে মুখে কথা আটকে গেছে? বোবায় ধরেছে নাকি? তবে চাপ নেই তুই মুখে না বললেও একটু পরেই ঠিক তোর মুখ থেকে কথা বেরিয়ে আসবে। ঠিক কথা কিনা জানি না তবে চিৎকার বেরিয়ে আসবে। বেলা বলে ওঠে।

-” এই বেলা তুই কিন্তু বেশি কথা বলছিস তু…

রেজার পুরো কথাটা শেষ করতে দেইনি তার আগেই বেলা রেজার মুখে একটা ঘুষি বসিয়ে দেয়। ঘুষি খেয়ে রেজা উল্টো দিকে হয়ে পড়ে যায় হাত পা বাঁধা থাকার জন্যে। ওম পাশে হাঁটু গেড়ে বসে রেজা আবারো তুলে বসিয়ে দেয়। ঠোঁটের একপাশে কেটে গিয়ে রক্ত পড়ছে। বেলা ঘুষিটা মুখ বরাবর মেরেছে তাই এই অবস্থা। রেজার অবস্থা দেখে ম্যাডি বেলার দিকে তাকায় দেখে রাগে অগ্নিকন্যা হয়ে গেছে। এর আগেও সে বেলার রাগের কথা লোকমুখে শুনেছে তবে কখনো দেখার সৌভাগ্য হয়নি তবে আজ চাখ্যূস প্রমাণ সে পেয়ে গেলো।

-“তোর সাহস দেখে সত্যি আমি অবাক হয়ে গেছি এতদিন পিছন থেকে অনেক কিছু করার চেষ্টা তুই করে গেছিস তারপরেও তোকে কিছু বলিনি। কিন্তু তুই আজ তোর লিমিট ক্রস করে ফেলেছিস ব্রেকফেল করিয়ে তুই আমাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিস শুধু আমাকে না তুই আমার সাথে সাথে সারা কেও মারার প্ল্যান করেছিলি আজ। কেনো সারা তোর কি ক্ষতি করেছিলো? আমি নাহয় তোর পথে বাঁধা ছিলাম কিন্তু সারা সেতো সব কিছুর থেকে তারপরেও তুই তাকেও তোর চিপ প্ল্যানের মধ্যে রেখেছিলি। এবার তুই বুঝবি বেলার কাছের মানুষদের ক্ষতি করার কি শাস্তি হয় আমাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিস তার কি শাস্তি হয়। বেলা রাগে বজ্র কঠিন কন্ঠে বলে ওঠে।

বেলার এমন গলার আওয়াজ শুনে রেজা কেঁপে ওঠে এতক্ষণ সে হম্বিত্মবি করলেও এখন সে একদম ভীত শান্ত হয়ে গেছে। আর গাড়ির ব্রেক তো সেই কেটেছে তারমানে সেও আজ অক্কা পাবে ভয় ভয় চোখে বেলার দিকে তাকাতে দেখে বেলা হকিস্টিক হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে গেছে আর চোখের পলক ফেলতে না ফেলতে সেটা ম্যাডির উপর প্রহার হতে শুরু করে দিয়েছে এদিকে ওম বেদ নিশান মিলে রেজা কে বলের মত করে পেটাচ্ছে। যন্ত্রণায় দুজনের মুখ দিয়ে চিৎকার বেরিয়ে আসছে তারপরেও ওদের কারোর থামার নাম নেই। চিৎকারের আওয়াজ রুম ভেদ করে বাইরে বেরিয়ে পৌঁছে যাচ্ছে তবে এতে কোনো হেলদোল নেই বেলাদের কারণ সবাই প্রোগ্রামে অডিটোরিয়াম রুমে আছে এখানে কেউ আসবে না আর না কেউ ওদের যন্ত্রণাময় এই চিৎকার ও শুনবে তাই মনের সুখে পিটিয়ে লাল করে যাচ্ছে।

তবে ওদের সবার চিন্তা ধারা কে ভুল প্রমাণিত করে রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে এক আগুনত্বক যে এতক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ওদের সব কথা শুনে গেছে। ক্লাস রুমের জানালার পাল্লা কিছুটা খোলা থাকায় সে সেখান থেকে ভিতরের দৃশ্য দেখছে। তবে তার মুখেও রাগ বিদ্যমান হাত মুঠো করে দেখে যাচ্ছে আগুন চোখ নিয়ে। ম্যাডি আর রেজার এই মার খেয়ে এই যন্ত্রণায় চিৎকার করাকে সামান্য বলে মনে হচ্ছে তার। তার মন চাইছে ম্যাডিকে মেরে কেটে পিস পিস করে তার কুত্তার দিয়ে খাওয়াতে। কারন এই ম্যাডি তার প্রিয় জান কে মেরে ফেলতে চেয়েছিলো।

বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা আগুনত্বক আর কেউনা স্বয়ং সাঁঝ রওশন নিজেই দাঁড়িয়ে আছে। সাঁঝ বেলা সারা আর বাকিদের একসাথে দল বেঁধে একসাথে বের হতে দেখে নিয়েছিলো আর সব থেকে অবাক করা বিষয় ছিল তাদের হাতের হকিস্টিক। সাঁঝ বাইরে এক কোনায় দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলেছিলো ভিতরে আওয়াজ শুনতে না পেয়ে বাইরে এসেছিল আর তখনই এদের কে এই ভাবে যেতে দেখে সাঁঝ ভ্রু কুঁচকে কিছুটা সন্দেহ নিয়ে ওদের পিছু করে আর এখানে এসে দাঁড়িয়ে শুরু থেকে ওদের প্রত্যেকটা কথা শুনে তার আগের পারদ হাই হয়ে যায়। ওই ছেলে দু’টো তার বোনকে মারতে চেয়েছিলো তার জান কে বিনা দোষে মেরে ফেলতে চাইছিল সাথে ওই মেয়েটা কেও। আর আজ যদি মেয়েটা ভালো বাইক ড্রাইভ করতে না পারতো আর যদি কোনো দুর্ঘটনা হয়ে যেত তাহলে না সাঁঝ আর ভাবতে পারছেনা তার এই বোন তার কাছে সব থেকে দামী ছোটো থেকে সে একটা ফুলের টোকা ও লাগতে দেইনি আর সেই বোনকে মেরে ফেলতে চেয়েছিলো শুনেই মনে হচ্ছে এই দুজন কে মেরে পিস পিস করে কাটতে। ভিতরের দিকে তাকিয়ে দেখে ওই ছেলে দু’টো কে মেরে রক্তাক্ত করে দিয়েছে। এটা দেখেই সাঁঝ তার রাগ দমন করে নিয়ে ওখান থেকে বেরিয়ে যায় সে যে এখানে থেকে এতক্ষণ ভিতরে সব কিছু দেখ ছিল সেটা জানাতে চায় না তাছাড়া অনেকক্ষণ হয়েছে সে প্রোগ্রাম থেকে গায়েব হয়েছে হয়তো এতক্ষণ তার খোঁজ চলছে তাই বেরিয়ে যায় ওখান থেকে। সে এই ছেলে দুটোকে পরে দেখে নেবে আজ সামান্য মার খেয়ে বেঁচে গেছে তবে এত সহজেই কি সাঁঝ রওশনের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়? কখনোই না সাঁঝ রওশন কখনো তার শত্রু কে বাঁচিয়ে রাখেনা পাল্টা আঘাত করার জন্যে আর এত তার বোন কে মারার প্ল্যান করেছিলো তাহলে সে কি করে ছেড়ে দেবে এই ছেলে কে?

চলবে….

ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন…। নিজেদের মতামত জানাবেন ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here