তোর আসক্তি পাগল করেছে আমায় পর্ব -১২

#তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায়
#সিজন_০২
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
১২.
বেলা সামনের দিকে একবার তাকিয়ে দেখে সামনের লোক এখনও তার দিকে তাকিয়ে আছে আর তার থেকে কিছুটা দূরে একদম শান্ত ভঙ্গিমায় দাঁড়িয়ে আছে। বেলা তার পাশে দাঁড়ানো সাঁঝের দিকে তাকায় সেই এখনও ভয়ংকর রাগী ভাবে তাকিয়ে আছে এক্ষুনি যদি সাঁঝকে না থামানো না যায় তাহলে কি ঝড় শুরু হবে তার ঠিক নেই। বেলা সাঁঝের পাশে আরেকটু সরে দাঁড়িয়ে সাঁঝের মুঠো হয়ে থাকা হাত নিজের হাতের মধ্যে ধরে নেয়। সাঁঝ নিজের হাতের উপর কোমল স্পর্শ পেতেই পাশে তাকায় দেখে বেলা তার দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় শান্ত হতে বলছে, সাঁঝ বেলার চোখের দিকে কিছু সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রাগটাকে নিজের মধ্যে দমিয়ে নেয়। নিজের হাতের উপর থাকা বেলার হাতটা ঘুরিয়ে নিজের মধ্যে নিয়ে নেয়। আকাশ তার বসের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে নেয় তারপরেই আর.এমের দিকে এগিয়ে যায়।

-” মিস্টার মেহতা আমরা বসে কথা বলি প্লিজ। আকাশ বলে ওঠে।

আকাশের ডাকে নিজের দৃষ্টি সরিয়ে নেয় বেলার উপর থেকে থতমত খেয়ে তাড়াতাড়ি বসার ইশারা করে নিজেও বসে পড়ে। সাঁঝ একবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে নিয়ে এগিয়ে গিয়ে বসে পড়ে তার হাতের মুঠোতে এখনও বেলার হাত আকড়ে রেখেছে।

-“আমরা এখানে যে কাজের জন্যে এসেছি সেই কাজ শুরু করি? সাঁঝ কঠিন গলায় বলে ওঠে।

-” হ্যাঁ, একদম। আর.এম বলে ওঠে।

সাঁঝ কোনো কথা না বলে আকাশের দিকে তাকায় আকাশ তার কাজ শুরু করে আর সাঁঝ চুপচাপ শান্ত হয়ে বসে থাকে। বেলা সাঁঝের এই চুপ থাকা দেখে অস্থির হয়ে ওঠে কারন সাঁঝের এইভাবে একদম চুপ হয়ে যাওয়া মানে কোনো ঝড়ের ইঙ্গিত, তা বেলা বাইরে থেকে শান্ত হয়ে থাকলেও ভিতরে ভিতরে প্রচণ্ড অস্থির হয়ে উঠেছে। আকাশ আর.এম থেকে দেওয়া কিছু ফাইল সাঁঝের দিকে এগিয়ে দেয় সাঁঝ একবার আর.এমের দিকে তাকিয়ে নিয়ে ফাইল দেখে নেয়। তবে সাঁঝ কিছুই বলেনা তার হয়ে পুরো সামাল দেয় আকাশ পুরোটা সময়ে সেই কথা বলে আর.এমের সাথে আর আর.এম কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে বেলার দিকে একবার করে তাকায়।
বেলার সামনে বসা লোকটার দৃষ্টি দেখে অস্বস্তি হয় তার এই লোকের দৃষ্টি সহ্য হচ্ছেনা কেমন একটা যেনো তাকে মেপে মেপে নিচ্ছে চোখ দিয়ে তার নিজেই মনে হচ্ছে ওই চোখ দুটো তুলে নেয়, তারপরেও নিজেকে সামলে নেয় নাহলে এটা যুদ্ধ ক্ষেত্রেই পরিনত হতে বেশি সময় নেবেনা।

-” মিস্টার মেহতা আমরা এই কন্ডিশনে ডিল সাইন করবো যদি আমাদের দেওয়া প্রত্যেকটা কন্ডিশন মানেন তাহলে আমরা সাইন করতে রাজি আছি। আকাশ একবার সাঁঝের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে।

-” অবশ্যই আমি রাজি আছি। আর.এম ঠোঁট বাঁকা করে বেলার দিকে তাকিয়ে হেসে বলে ওঠে।

আকাশ ফাইল এগিয়ে দিতেই আর.এম সাইন করে দেয় শেষে সাঁঝও সাইন করে। তবে সাঁঝের ঠোঁটের কোণে ছিল বাঁকা হাসি যেটা কেউ লক্ষ না করলেও বেলা ঠিক করেছে।

-” এস.আর কিছু মাইন্ড না করলে একটা কথা জিজ্ঞেস করতে পারি? আর.এম বেলার দিকে তাকিয়ে নিয়ে সাঁঝের উদ্দেশ্যে বলে ওঠে।

-” বলুন ।গম্ভীর ভাবে বলে ওঠে।

-“আপনার সাথে থাকা এই মিস কে? না মানে আপনাকে তো কোনো মেয়ের সাথে দেখা যায়না তাই! এই মিস কি আপনার বিশেষ কেউ নাকি? আর.এম বলে ওঠে ।

সাঁঝ কিছু বলতে মুখ খুলবে তার আগেই বেলা আর.এমের উদ্দেশ্যে বলে ওঠে।

-“বিজনেস পার্টনার! আমরা রিসেন্ট প্রজেক্টে পার্টনারশিপে আছি।

-“ওহ! নাইস টু মিট ইউ। আর.এম বলে ওঠে তের্ছা ভাবে হেসে।

বেলা মুখে কিছু বলেনা শুধু প্লাস্টিকের হাসি ঝুলিয়ে নেয়। তবে নিজের হাতের উপর চাপ প্রয়োগ হতে বেলা কেঁপে ওঠে, বেলা সাঁঝের দিকে তাকাতেই তার আত্মা কেঁপে ওঠে চোখ লাল করে তার দিকে তাকিয়ে আছে। আজযে তার কপালে ভীষণ দুঃখ কষ্ট আছে সেটা বুঝতে পারে বেলা তার উপরেই যে সাঁঝ ক্ষেপে গেছে তার একটু আগের বলা কথায়।

সাঁঝ বেলার হাত টেনে ধরে নিজের পাশে দাঁড় করিয়ে নেয়। আকাশ আর.এম এগিয়ে এসে সাঁঝের সাথে হাত মেলায়। আর.এম একবার বেলার দিকে তাকিয়ে সেই একইরকম হাসি দিয়ে আকাশের সাথে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। ওদের বেরিয়ে যেতে দেখে বেলা ঢোক গেলে, সে যতো নিজেকে কঠিন সাহসী রাখুক না কেনো সাঁঝের কাছে আসলেই সে দুর্বল হয়ে পড়ে সাথে সাঁঝের এই রাগী রূপে সে ভয় পায়। সাঁঝের বেলার হাত নিজের হাতের মধ্যে রেখেই দরজার দিকে এগিয়ে যায়। তবে রুম থেকে বেরিয়ে না গিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দেয়। বেলা ভেবেছিলো হয়তো সে এই যাত্রায় বেঁচে গেছে কিন্তু তার ভুল ধারণা সাঁঝ রুমের দরজা বন্ধ করে বুঝিয়ে দেয়। বেলা বাইরে থেকে নিজেকে সাহসী রেখে সাঁঝের দিকে মুখ তুলে তাকায় দেখে তার দিকে কেমন করে তাকিয়ে আছে।

সাঁঝ বেলার হাত ধরে টান মেরে ঘুরিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে দাঁড় করিয়ে দেয়, বেলা একবার তার পাশে পিছনে তাকিয়ে নিয়ে সাঁঝের দিকে তাকায়। বেলা চেয়েও মুখ দিয়ে একটা শব্দও বের করতে পারেনা বাইরে নিজেকে স্বাভাবিক রাখলেও ভিতরে ভিতরে সে অস্থিরও ভয় পেয়ে আছে। আগেই বলা হয়েছে বেলা সাঁঝের কাছে আসলে দুর্বল হয়ে পড়ে আর তার রাগী রূপে সে ভয় পায়। তাই সে নিজেকে যতো কঠিন করে রাখুক তার মনে যতো সাঁঝের জন্যে রাগ অভিমান জমা হয়ে থাকনা কেনো সে সাঁঝের কাছে আসা কে কখনই চেয়েও বাঁধা দিতে পারেনা তার কাছে আসলেই সে দুর্বল হয়ে পড়ে।

সাঁঝ বেলার দিকে এগিয়ে এসে শরীরের সাথে ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বেলার কোমরে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে নিজের শরীরের সাথে মিশিয়ে নেয় তাদের মধ্যে যে সামান্যতম ফাঁকা ছিল সেটাও পূরণ করে নেয়। সাঁঝের হাত কোমরে চেপে বসে বসতেই বেলা ব্যাথায় চোখ কুঁচকে ফেলে সাঁঝের হাতের দৃঢ় স্পর্শ অনুভব করতে বুঝতে পারে সাঁঝের রাগ কোনো অংশেই কমেনি। সাঁঝ বেলার মুখের দিকে তাকিয়ে ঝুঁকে বেলার মুখের একদম সামনে চলে আসে বেলার মুখের উপর আছড়ে পড়ে সাঁঝের তপ্ত নিঃশ্বাস সাথে বেলা চোখ চেপে বন্ধ করে নেয় সাঁঝের তার এত কাছে আসা তার মুখের উপর আছড়ে পড়া উষ্ণ নিঃশ্বাস সাঁঝের আগ্রাসী স্পর্শ সব কিছু মিলিয়ে বেলাকে অস্থির করে তোলে তার শরীরে শিহরন খেলে যায় অনুরণন শুরু হয় শ্বাস প্রশ্বাস বেড়ে যায় সাথে কেঁপে কেঁপে ওঠে। তখনই কানে আসে ঘোর লাগা কঠিন কন্ঠ।

-“তুমি আমার বিজনেস পার্টনার তাইনা মিসেস বেলা? শুধুমাত্র আমার সাথে পার্টনারশিপে আছো তাইতো? আমি তোমার আর কেউ না শুধু বিজনেস পার্টনার ছাড়া! তাহলে তো এবার আমাকেই বোঝাতে হয় তোমায় আমি শুধু তোমার বিজনেস পার্টনার নই তোমার হোল লাইফ পার্টনার ইউ আর মাই প্রোপার্টি, মাই ওয়াইফ, যাতে ভুল করেও এরপর থেকে তোমার মুখ থেকে আমাকে না চেনার উক্তি না আসে সেটাই তোমাকে বুঝিয়ে দেবো।

সাঁঝের কথায় বেলার শিরদাঁড়া বেয়ে শীতল স্রোত বয়ে যায় সাথে কেঁপে ওঠে। সাঁঝের শরীরের সাথে বেলার কাঁপন সাঁঝ বুঝতে পারে সে গভীর চোখে বেলার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। সাঁঝের ঘোর লাগা অথচ কঠিন কন্ঠ শুনে বেলা চোখ পিট পিট করে তাকায়, বেলার ঠোঁট দুটো তিরতির করে কাঁপছে সাথে চোখের পলক ও বারবার বন্ধ হচ্ছে। সাঁঝ এক পলক বেলার চোখের দিকে তাকিয়ে বেলার অধরযুগল আকড়ে ধরে নিজের মধ্যে, সাঁঝের এমন করাতে বেলা কেঁপে উঠে চোখ বন্ধ করে নেয় বেলা দু হাত সাঁঝের বুকের উপর দিয়ে তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতে চাইলে সাঁঝ আরো দৃঢ় করে বন্ধন, আরো বেশি আগ্রাসী হয়ে ওঠে। বেলা চেয়েও নিজেকে ছাড়াতে পারেনা বরং সাঁঝের স্পর্শে একটু একটু করে গলতে শুরু করে। সাঁঝের ভিতরের এতক্ষণে জমে থাকা রাগ সবটাই বেলার উপর দিতে থাকে, বেলা সাঁঝের বুকের কাছে কোট শক্ত করে চেপে ধরে ছটফট করতে করতে শান্ত হয়ে যায় এক সময়। একে একে মেনে নিতে থাকে সাঁঝের স্পর্শ, তার চোখের কোন বেয়ে গড়িয়ে পড়ে কয়েক ফোটা অশ্রুকনা তবে সেটা কষ্ট দুঃখের নাকি অন্যকিছু সেটা জানা নেই।

চলবে….?

ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন..। নিজেদের মতামত জানাবেন ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here