#তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায়
#সিজন_০২
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
৩.
সাঁঝ বেলা একে অপরের সাথে মিশে অধর স্পর্শে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সাঁঝের এক হাত বেলার কোমরে রাখা আর বেলার দুই হাত সাঁঝের বুকের উপরের কোট আকড়ে ধরে আছে। দুজনেরই চোখ মুখে অপার বিস্ময়ভাবের চাপ ফুটে আছে দুজনই একই ভাবে একে অপরের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। হটাৎ করেই কোথায় থেকে কি হয়ে গেলো ওদের দুজনেই কেউ বুঝতে পারিনি। আর দুজনই এমন আকস্মিক স্পর্শে হতবিহ্বল হয়ে পড়ে। ওদের পাশে দাঁড়ানো সারা ওম বেদ নিশান রুহি চোখ বড় বড় করে সাঁঝবেলাকে দেখে নিয়ে একে অপরের চোখে তাকিয়ে আবার সামনের ওদের দিকে তাকায় আশে পাশে বাকিরাও তাকিয়ে ফ্রি-তে বিনোদন দেখছে।
একটু আগের ঘটনা, আজ বেলা ওম বেদ নিশান রুহি একসাথে মিলে বেরিয়েছিল শপিং করতে আজই তাদের গোয়ার শেষ দিন কালকে ফিরে যাবে নিজের শহর ব্যাঙ্গালোরে তাদের এখানের ইউনিভার্সিটি লাইফ শেষ হয়ে গেছে শুধু অ্যানয়্যাল প্রোগ্রামের জন্যে সব স্টুডেন্ট আটকে ছিল। বাড়ির ফেরার আগেই তাই শপিং করে নিচ্ছিলো সবার জন্যে। শপিং শেষে বেলা সারা ওম বেদ রুহি নিজেদের মধ্যে গল্প করতে করতে চলমান সিঁড়ির কাছে এসে খেয়াল না করে নিচের দিকে নামার এস্ক্যালেটারের দিকে থেকে সরে উপরে ওঠার দিকেই চলে গেছে তারা একে অন্যের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে বলতে আসছিল তাই কোনো খেয়াল ছিলনা। তাই সামনে যে কেউ আসছে বা তারা ভুল সাইটে চলে এসেছে সেটাই বুঝতে পারিনি আর সামনে পা বাড়ানোর সাথে লেগে যায় সামনের দিকে থেকে আসা ব্যাক্তির সাথে ধাক্কা। হটাৎ ধাক্কা সামলাতে না পেরে বেলা পড়ে যেতে নিলে হাতের শপিং ব্যাগ ছেড়ে নিজেকে পড়া থেকে বাঁচাতে সামনের ব্যাক্তির দিকে হাত বাড়িয়ে আকড়ে ধরে তাকে আর সামনের ব্যাক্তি ও হঠাৎ এমন ধাক্কা সাথে তাকে আকড়ে ধরতে কিছুটা সামনের দিকে ঝুঁকে গিয়ে কোমরে জড়িয়ে ধরে সাথে সাথে স্পর্শ হয় একে অপরের ওষ্ঠ। হটাৎ এমন আকস্মিক ঘটনায় এবার দুজন দুজনের মুখের দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকায়। বেলা পড়ে যাওয়ার ভয়ে চোখ চেপে বন্ধ করে নিয়েছিলো তবে নিজের ওষ্ঠে স্পর্শ পেতেই চোখ খুলে তাকিয়ে চোখ বড় বড় হয়ে বিস্ময়ে। তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে সাঁঝ।
এদিকে সাঁঝও কম অবাক হয়নি সেও বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে বেলার দিকে। সাঁঝও মলে এসেছিলো তার বিজনেস মিটিং ছিল মলের সেকেন্ড ফ্লোরে। সাঁঝ নিজের ফোনের দিকে ধ্যান দিয়েছিলো তাই সেও বেলার মত খেয়াল করেনি সামনে কে আছে তাই যখন সামনের ব্যাক্তি তাকে ধরে নিজেকে পড়া থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছিলো সে শুধু পড়ে যাওয়া থেকে ধরে নেওয়ার জন্যে কোমর আকড়ে ধরেছিলো কিন্তু তার পরিণাম হয়ে গেলো এই আকস্মিক অধরস্পর্শ।
সারা ওম বেদ নিশান রুহি একে অপরের দিকে চোখে তাকিয়ে চারপাশে নজর বুলিয়ে দেখে সবাই বিনোদন নিচ্ছে কেউ কেউ ছবি তুলছে। তাই সারা জলদি ডেকে ওঠে।
-“ভাইয়া! বেলা!
সারার ডাকে দুজনই চমকে ওঠে সাঁঝ বেলাকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে দেয়। বেলা ঠিক হয়ে দাঁড়িয়ে সাঁঝের দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে নিয়ে দ্রুত পা চালিয়ে ওপর দিকে গিয়ে নিচে যাওয়ার এস্ক্যালেটারে চেপে যায়। ওম বেদ নিশান সারা রুহি একবার সাঁঝের দিকে তাকিয়ে নিয়ে তারাও বেলার পিছু চলে যায়। এদিকে সাঁঝ বেলার যাওয়ার পথের দিকে চেয়ে থাকে তার মনে হলো বেলা যেনো এক প্রকার তার থেকে পালিয়ে গেলো তবে এটা শুধু লজ্জার জন্যে নয় সাথে আরো কিছু ছিলো ওই চোখে যা এড়াতে পালিয়ে গেছে তবে সত্যি কি তার থেকে এড়িয়ে যেতে পেরেছে কিছুক্ষণ একমনে তাকিয়ে থাকতে থাকতে সাঁঝের ঠোঁটের কোণে ফুটে ওঠে বাঁকা হাসি। সাঁঝের এক হাত চলে যায় তার ঠোঁটের উপরে যেখানে একটু আগেই সে না চাইতেও বেলার স্পর্শ পেয়েছে। এবার চারিদিকে তাকিয়ে দেখে নেয় তারপরই নিচে দাঁড়ানো তার গার্ডকে চারিদিকে পরিবেশ সামলাতে চোখের ইশারা করে সামনের দিকে এগিয়ে যায়।
————-
আজকে সবাই একসাথে তাদের শহরে ফিরছে পাঁচটা বছর তারা নিজের শহর ছেড়ে এই গোয়াতে থেকে পড়াশোনার জন্যে। ব্যাচেলর অফ আর্কিটেকচার কম্পিলিট করতে পাঁচ বছর বাইরে কাটিয়ে দিয়েছে। গোয়ার ইউনিভার্সিটিতে অ্যাডমিশন নেওয়ার পর আর নিজের শহর নিজের বাড়িতে যাওয়া হয়নি তাদের পড়াশোনার মাঝে পুরো গোয়া ঘুরে কাটিয়েছে। এই কয়েক বছরে বাড়িতে থেকে সবাই এসে মাঝে মাঝে দেখা করে গেছে তবে তারা যায়নি। আজ তাই এখানের পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে নিজের শহরে ফিরে যাচ্ছে।
এয়ারপোর্টে ভিতরে বসে আছে কিছুক্ষণ পরেই তাদের ফ্লাইট এর অ্যানাউন্সমেন্ট হবে। বেলা সারা রুহি বেদ ওম নিশান সব একসাথে আছে আর তাদের কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে। তবে এখানে সবাই স্বাভাবিক ভাবে নিজেদের মধ্যে কথা বললেও বেলা একদম চুপ করে বসে আছে কোনো কথা বলছে না কেমন একটা গুম হয়ে আছে। বাকিরাও লক্ষ করেছে আগের দিন থেকে কেমন একটা চুপ করে গেছে বেলা যা জিজ্ঞেস করা হচ্ছে তার হু হা করে উত্তর দিচ্ছে ঠিক ভাবে কথাও বলছে না।
বেলা একবার চোখ তুলে দূরে দাঁড়ানো সাঁঝকে দেখে যে এখন পকেটে এক হাত গুঁজে রেখে ফোনে কথা বলছে আবার কখনো হাত দিয়ে কপালের চুল উল্টে পিছনে ঠেলে দিয়ে ভ্রু কুঁচকে ঠোঁট কামড়ে রেখে কথা বলছে। কিছু মুহূর্ত সাঁঝের দিকে তাকিয়ে থাকার পর দ্রুত চোখ সরিয়ে নেয় বেলা। নিজের মাথায় একটা থাপ্পড় মারে নিজেকে স্বাভাবিক করে নেয়। কিছুপরে অ্যানাউন্সমেন্ট হতে সবাই ভিতরে চলে যায়। প্লেনে উঠে যে যার সিট অনুযায়ী বসে যায়। বেদ নিশান রুহি তিনজন একসাথে বসেছে আর অন্য দিকে সারা আর ওম একসাথে বসেছে। বেলা গিয়ে উইন্ডোর কাছে তার সিটে বসে পড়ে তার পাশের সিট এখনও খালি পড়ে আছে সেদিকে বেলা একবার তাকিয়ে নিয়ে জানালার বাইরে তাকায়।
কিছুক্ষণ পরই বেলা অনুভব করে তার পাশে কেউ এসে বসেছে। মাথা ঘুরিয়ে পাশে তাকাতে কিছুটা চমকে যায় বেলা তার পাশে সাঁঝ এসে বসেছে বেলা কিছুক্ষণ অবাক হয়ে সাঁঝের দিকে তাকিয়ে আবারো মাথা ঘুরিয়ে নেয়। বেলা যে এখানে বসে আছে সেটা সাঁঝ যেনো দেখতেই পাইনি এমন একটা ভাব করে বসেছে। বেলা মাথা ঘুরিয়ে আবারো উইন্ডোর দিকে তাকিয়ে বসে থাকে। সাঁঝ একবার কোনা চোখে তাকিয়ে দেখে মেয়েটা এখন চোখ বন্ধ করে নিয়েছে আর তার থেকে সরে কিছুটা গুটিয়ে বসে আছে। সে সকালেও খেয়াল করেছে মেয়েটা কেমন চুপ হয়ে গেছে। কালকের ঘটনা টা নিয়ে মনে হয় এখনও স্বাভাবিক হতে পারিনি। আর ফের এখন তাকে পাশে বসতে দেখে কেমন নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে। সাঁঝ বেলাকে কিছুক্ষণ দেখে নেয় তার মুখে বাঁকা হাসি ফুটে ওঠে আবারো। তবে সাঁঝের এই মুখের হাসি বেলা দেখতে পায়না। সাঁঝের মনে যে কি চলছে সেটা একমাত্র সাঁঝই জানে
প্রায় এক ঘণ্টা পরেই প্লেন ল্যান্ড করে ব্যাঙ্গালোর। সবাই একসাথে এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে আসে। তবে তারা এসে দাঁড়াতে না দাঁড়াতে হঠাৎ সামনে থেকে একটা মেয়ে ছুটে এসেই সাঁঝকে জাপটে জড়িয়ে ধরে। হঠাৎ করে এমন ঘটনা ঘটতে সবাই চমকে সাঁঝ আর ওই মেয়ের দিকে তাকায়। আর বেলার মুখে ফুটে ওঠে তাচ্ছিল্যের হাসি।
-“ওহ হো বেবি আই মিস ইউ সো সো মাচ । সাঁঝের গলা জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে।
-” দিশা সোজা হয়ে দাঁড়াও । সাঁঝ কিছুটা রুক্ষ ভাবে বলে ওঠে।
দিশা সাঁঝের কথা শুনেই চুপ করে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যায় তবে সাঁঝের হাত জড়িয়ে রাখে। বাকিরা এতক্ষণে ওদের দেখলেও এবার চোখ সরিয়ে নেয়। কারণ তাদের এই মেয়ের ঢং দেখার কোনো ইচ্ছে নেই। সারা ওম নিশান বেদ বেলা রুহি একটু সাঁঝ আর দিশাকে ছেড়ে একটু সামনে এগোতে তাদের পাঁচ জনের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে কেউ সাঁঝ আর দিশা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে।
চলবে…?