তোর আসক্তি পাগল করেছে আমায় পর্ব -৩৯

#তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায়
#সিজন_০২
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
৩৯.

-“মিস বেলা খান চৌধুরী নামে এতদিন যাকে চিনতেন সবাই সেই আমার স্ত্রী মিসেস বেলা সাঁঝ রওশন। আর আজকের দিনটা আমাদের জন্যে খুবই স্পেশাল কারণ শুধু প্রজেক্ট কম্পিলিটের জন্যে নয় এর থেকেও বড় কারণ আছে যার জন্যে আমরা ডেড লাইন হিসেবে এই দিনটি ঠিক করেছিলাম। সাঁঝ সবার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে।

-” প্লিজ আমাদেরকে আর অপেক্ষায় রাখবেন না বলেই দিন আর কি চমক আছে আমাদের জন্যে। ভিড়ের মধ্যে থেকে একজন চিৎকার করে বলে ওঠে।

-” হ্যাঁ একদম আমরা জানতে চাই।

-“স্যার কেন স্পেশাল বলেই দিন স্যার প্লিজ।

সাঁঝ সবার দিকে একবার তাকিয়ে দেখে কেমন ভাবে সবাই উত্তেজিত হয়ে আছে জানার জন্যে, দূরে দাঁড়ানো সামাদ সাহেবের দিকে তাকায় সাঁঝ দেখে তার দিকেই কেমন অদ্ভূত চোখে তাকিয়ে আছে আর তার পাশে দোলা মির্জা আগুন চোখে তাকিয়ে আছে, সাঁঝ ওদের দেখে নিয়ে এবার বেলার দিকে কিছুটা ঝুঁকে তাকিয়ে বলতে শুরু করে,

-” আজকের দিনেই এই তারিখে আমরা দুজন এক হয়েছিল একে অপরের নামে একে অপরের সাথে জুড়ে গিয়েছিলাম আজকের এই তারিখে আমরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলাম আজ আমাদের পঞ্চম বিবাহ বার্ষিকী।

হোয়াট?বিবাহ বার্ষিকী? বিয়ের পাঁচ বছর হয়ে গেছে? ওহ মাই গড আমরা কোথায় ভেবেছিলাম ওরা হয়তো বিয়ের অ্যানাউন্সমেন্ট করবে বা নিজেদের সম্পর্ক জাহির করবে কিন্তু এটা কি ছিল? আরে কেউ আমাকে জোরে চিমটি কাটো এটা আমি কি শুনছি ওরা বিয়ে করে নিয়েছে? উপস্থিত সবাই এক ঝটকাতেই যেনো মাটিতে আছাড় খেয়ে পড়েছে এমন অবস্থা। শুধু তাই নয় সামাদ সাহেবের অবস্থাও ঠিক একই রকম তিনি এতক্ষণ স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন কিন্তু এখন ওনার অবস্থা এমন যে এই মুহূর্তে ওনার মুখের মধ্যে দু রসগোল্লা একসাথে ঢুকে যাবে আর চোখ গুলোও ঠিকরে বাইরে বেরিয়ে আসবে। দোলা মির্জার অবস্থা আরও কিছুটা শোচনীয় তিনি তো কথাটা শুনতেই কিছুটা টোলে যায় সাথে চোখ মুখ ফ্যাকাশে ধারণ করে। তবে এদের মধ্যে সব থেকে কুল ভাবে দাঁড়িয়ে আছে ওম বেদ নিশান শান্তা সারিফ রুহি সারা জাকিয়া তাদের চোখে মুখে খুশির ঝলক দেখা যাচ্ছে।

-“স্যার আপনাদের এতদিন হয়ে গেছে বিয়ের কিন্তু আমরা কোনও খবরই পাইনি তার মানে বুঝতেই আপনারা কতটা ছুপা রুস্তম। অফিসের একজন স্টাফ সাহস করেই বলেই দেয়।

-” ঠিক তেমন নয় বলতে গেলে আমাদের বিয়ের বয়স পাঁচ বছর হয়ে গেছে ঠিকই তবে আমরা তার মধ্যে এক বছর মত যোগাযোগে ছিলাম বাকি সময়ে আমাদের কোনো যোগাযোগ ছিলো না, বিয়ের পরেই কয়েকমাস আর এই প্রজেক্ট চলাকালীন কয়েকমাস মিলিয়ে কিন্তু এক বছর টানা এক বছর নয়। সাঁঝ বলে ওঠে।

সাঁঝের এমন কথা শুনে সবাই যেনো আরো বেশি অবাক হয়ে গেছে তাদের মুখে বিস্ময় আর অবাকের ছাপ স্পষ্ট অবশ্যই এমন কথা শুনলেই কেউ অবাক হয়ে যাওয়ার কথা বিয়ে হচ্ছে পাঁচ বছর আর তাদের মধ্যে যোগাযোগ এক বছর এটা কেমন কথা? সাঁঝ সবার মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখেই আবারো কিছু বলতে যাবে তার আগেই বেলা সাঁঝের হাত চেপে ধরে সাঁঝ বেলার দিকে তাকাতে বেলা একবার সাঁঝের দিকে তাকিয়ে নিয়ে সবার দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করে,

-“আসলে আমাদের যখন বিয়ে হয় তখনও আমার প্রাপ্ত বয়স্ক হতে প্রায় এক বছর মত বাকি ছিল ধরতে গেলে হুট করেই কোনো প্রস্তুতি ছাড়াই আমাদের বিয়ে হয়ে গেছিলো তারপরেই আমি হায়ার স্টাডির জন্যে গোয়া চলে গেছিলাম আর ও এখানেই তো এই সময়ের ভিতরে আমাদের মধ্যে কোনো রকম যোগাযোগ ছিলোনা, না কোনো ফোনকল আর না কোনো দেখা সাক্ষাৎ আমার স্টাডির লাস্ট দিনই ও ওখানে উপস্থিত হয় আবার আমাদের দেখা হয় ঠিক পাঁচ বছর পর। আর এখন আমরা সবার সামনে।

-“ওহ মাই গড কত সুন্দর এত বছর দূরে দূরে থেকেও কত ভালোবাসা দুজনের মধ্যে। ভিড়ের মধ্যে থেকে একজন বলে ওঠে।

-” আচ্ছা হুট করে প্রস্তুতি ছাড়া বিয়ে মানে তাহলে তোমরা কি আগের থেকে পরিচিত ছিলে না?

-“হ্যাঁ আমারও একই প্রশ্ন তোমরা কি আগের থেকেই চিনতে না একে অপরকে?

-” তোমাদের মধ্যে কি কোনো প্রেম কাহিনী ছিল? থাকলে প্লিজ আমাদের বলো।

ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে সবাই একের পর এক চিৎকার করে বলে ওঠে। সাঁঝবেলার উদ্দেশ্যে সাঁঝ বেলার দিকে তাকিয়ে মিট মিট করে হাসছে সাঁঝ বেলার একটু আগের কথা শুনে ও মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে বেলার দিকে তাকিয়ে বেলা যে তাদের মধ্যে ঝামেলার ব্যাপার এড়িয়ে গেছে সেটা ভেবেও মনে মনে হাসে।

-“আমাদের চেনা পরিচিত বলতে আমি চিনতাম না কিন্তু ও আমাকে চিনতো ও আমাকে দেখেছিল কিন্তু আমি ওকে চিনতাম না বিয়ের আগের আমাদের চেনা জানা ছিল মানে চেনা জানা বলতে তার থেকেও বেশি কিছু, আর দু বছরের মাথায় ঠিক আমাদের বিয়ে হয়েছে ও যতোবার আমার সামনে এসেছিল ততবার ও মুখে মাস্ক পরে এসেছিল আমার সামনে আমি ওর পরিচয় আমাদের বিয়ের দিনই জেনেছি। বেলা মৃদু হেসে বলে ওঠে। বেলা সাঁঝের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে।

-“ওহোওওওও। সবাই একসাথে চিৎকার করে ওঠে।

-” ওহ মাই গড না দেখেই প্রেম বাহ বাহ আর আমাদের সাঁঝ সাহেব তো বড়ই চালাক বেলাকে আগেই দেখেছে কিন্তু নিজের চেহারা দেখাননি। ভিড়ের মধ্যে একজন ফিচেল কন্ঠে বলে ওঠে।

সাঁঝ বেলাকে নিজের দিকে আরও কিছুটা টেনে জড়িয়ে নেয় নিজের সাথে সবাই একসাথে হেসে খেলে আনন্দ করতে থাকে একে অপরের সাথে ছবি তুলতে থাকে আর সবাই ওদের দুজনকেই উইশেষ দিতে থাকে। তবে পার্টিতে উপস্থিত সবাই হাসি খুশি থাকলেও তিনজন মানুষের মুখে কোনো হাসি নেই দোলা মির্জা দিশা আর সামাদ রওশন, তবে এই নয় যে সামাদ সাহেব রেগে আছেন তিনি এখনও কিছুটা হতভম্ব হয়ে আছেন তার ছেলে এতদিন হয়ে গেছে বিয়ে করে নিয়েছে অথচ তাকে কিছু জানায়নি এতে কিছুটা কষ্ট পেয়েছেন তিনি তাই চেয়েও তিনি খুশি হতে পারছেন না, দিশার সাথে বিয়ে হয়নি তাই নিয়ে সামাদ সাহেবের তেমন কোনো মাথা ব্যাথা নেই শুধু তিনি কথা দিয়েছিলেন বলে তাই তাছাড়া তিনি নিজেও কোনো রকম জোরাজুরি করতে পছন্দ করে না।

————–

রাত এগারোটা দিকে পার্টি শেষ হয়ে যায় সবাই একসাথে রওশন বাড়িতে থেকে যায় ওম বেদ নিশান শান্তা সারা সারিফ জাকিয়া রুহি আগের থেকেই নিজেদের মতো করে ওদের রুমে জায়গা করে নিয়েছে তবে ওদের হাল চাল দেখে বোঝা যাচ্ছে যে তারা নিশ্চয়ই কোনো ঘট পাকাচ্ছে । সাঁঝ বেলার হাত ধরে বাড়িতে এন্ট্রি নেয় তবে দরজার কাছেই এসে থেমে যেতে হয় কারন দরজার মুখেই দাঁড়িয়ে আছে সামাদ সাহেব,বেলা
একবার সাঁঝের দিকে দেখে সাঁঝ একদম শান্ত ভাবে দাঁড়িয়ে আছে বেলা সামাদ সাহেবের দিকে তাকাতেই তিনি বাড়ির ভিতরে কাউকে আওয়াজ দেয় সাথে সাথে একজন মেয়ে এসে দাঁড়িয়ে যায় তার হাতে ধরা মিষ্টির প্লেট আর পানির গ্লাস। সামাদ সাহেব মিষ্টির প্লেট নিয়ে তার থেকে মিষ্টি কেটে বেলার সামনে ধরে বেলা একবার সাঁঝের মুখের দিকে দেখে নিয়ে মুখ হা করে নিয়ে নেয় সাথে পানি খাইয়ে দিয়ে তিনি সরে গিয়ে বাড়ির ভিতরে ঢোকার রাস্তা করে দেয়।

চলবে…?

ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন…। নিজেদের মতামত জানাবেন।

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here