তোর আসক্তি পাগল করেছে আমায় পর্ব -৩৮

#তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায়
#সিজন_০২
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
৩৮.
দূরে স্পট লাইটের আলোকিত হওয়ায় সেই দিকে সবাই উৎসুক নজরে তাকিয়ে থাকে সবাই পার্টির উপস্থিত সবার মুখ থেকে চিৎকার ভেসে ওঠে প্রেস মিডিয়ার লোকেরা তো তাদের ক্যামেরা থেকে ফটো আর ভিডিও নিতে শুরু করে দিয়েছে। ওম বেদ নিশান সারিফ রুহি জাকিয়া শান্তা সারা সবাই খুশিতে উৎফুল্ল হয়ে ওঠে সারা ভেবে পায়নি যে তার ভাই এমন ভাবে সবাইকে সারপ্রাইজ করে দেবে তার ভাই কিসের কথা বলেছিলো আর কেনো এতো শান্ত ছিল এবার বুঝতে পারে সারা, ওম আর বেদতো সিটি মেরে ওঠে।

দূরে স্পট লাইটে আর কেউ নয় বেলা দাঁড়িয়ে আছে। বেলা নিজেও কিছুটা নার্ভাস আর বিস্ময় নিয়ে মুখে হাসি টেনে সবার দিকে তাকিয়ে দেখছে সে নিজেও জানতো না আসলে সাঁঝ কি করতে চলেছে তবে একটু আগের সাঁঝের বলা কথা গুলো শুনেই বুঝতে পারে সাঁঝের উদ্দেশ্য। সাঁঝ বেলার দিকে এগিয়ে গিয়ে বেলার দিকে হাত বাড়িয়ে দেয় আর এই দৃশ্য দেখেই সবাই চিয়ার করে ওঠে। সাঁঝ বেলার হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে আবারও আগের জায়গায় ফিরে এসে দাঁড়িয়ে যায় সবার দিকে মুখ করে।

সারা এবার পাশের দিকে তাকিয়ে দেখে তাদের থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে দিশা মুখ কালো করে চোখে মুখে রাগ আর বিস্ময় নিয়ে সাঁঝবেলাকে দেখে যাচ্ছে শুধু দিশা নয় দোলা মির্জাতো রাগ ফুটছে শুধু কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারছেনা তবে দোলা মির্জার প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হচ্ছে সে আগের থেকেই বেলাকে চেনে শুধু তাই নয় এর মধ্যেই কিছুটা রহস্য মনে হচ্ছে কেমন ভাবে চোখ মুখ করে রয়েছে যেনো তিনি এখানে বেলাকে নয় কোনো ভূত দেখে নিয়েছে তবে তার চোখে মুখে রাগের ছাপ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। এইসবের মধ্যে সামাদ সাহেব পুরো যেনো স্ট্যাচু হয়ে গেছে কোনো প্রতিক্রিয়া যেনো বোঝা যাচ্ছে না তার। সাঁঝ বেলার হাত নিজের হাতের মধ্যে রেখে অন্য হাত বেলার কোমরে রেখে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়ে সামনের দিকে তাকায়।

-“মিস খান আর আপনি কি রিলেশনে আছেন এটাই আমাদের বলতে চাইছেন?

-” আপনারা কি এঙ্গেজমেন্ট করতে চলেছেন?

-” আপনারা কি এই প্রজেক্ট চলাকালীন সময়ে সম্পর্কে জড়িয়েছেন সেটাই কি এখন সবার সামনে আনতে চলেছেন?

-“স্যার বেলা খান চৌধুরী আর আপনি কি আজকে আমাদের সামনে আপনাদের সম্পর্কের কথা জানাতে চলেছেন?

-” আপনাদের কে এইভাবে দেখে মনে হচ্ছে আপনারা রিলেশনে আছেন তাহলে কি সেই নাম?

-” প্লিজ স্যার আমাদের আর অপেক্ষায় রাখবেন না আমাদের কে বলুন আপনার আর মিস বেলা খান চৌধুরীর মধ্যের সম্পর্কের নাম?

সাঁঝ আর বেলাকে এইভাবে দেখে মিডিয়া তো পাগল হয়ে গেছে একের পর এক প্রশ্ন করে জর্জরিত করে ফেলেছে ইতি মধ্যে আর সাঁঝও যেনো আজকে সুযোগ দিয়েছে তাদের প্রশ্ন করার বা হয়তো তাদের সম্পর্ক নিয়ে কার কি মতামত সেটাই জানতে চাইছে তাই এতক্ষণ চুপ করে ছিল।

-“মিট মাই ওয়াইফ বেলা সাঁঝ রওশন। সাঁঝ সবার উৎসুক মুখ দেখে হঠাৎ করেই বলে ওঠে।

কি? ওয়াইফ মানে স্ত্রী? সাঁঝ বিয়ে করেছে? এটা কি করে সম্ভব? সাঁঝের বউ? আজকে তাহলে এটাই অ্যানাউন্সমেন্ট করতে চেয়েছিলো? বিয়ে কবে করলো ওরা? ওহ মাই গড সাঁঝ রওশন বিয়ে করে ফেলেছে। আমরা তো ভেবেছিলাম কোনো সম্পর্ক বা এঙ্গেজমেন্ট অ্যানাউন্সমেন্ট করবে কিন্তু এত বিয়ের অ্যানাউন্স করে দিয়েছে? পার্টিতে উপস্থিত সবার মধ্যেই চাপা গুঞ্জন শুরু হয়ে গেছে সাঁঝের কথা শুনতেই।

দিশা তো যেনো সোজা আকাশ থেকে মাটিতে আছড়ে পড়েছে এমন অবস্থা সাঁঝের কথা শুনে সাঁঝ বিয়ে করেছে এটাই যেনো তার বিশ্বাস হচ্ছেনা। দিশার থেকেও খারাপ অবস্থা দোলা মির্জার তিনি যেনো এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না এটা যেনো কোনো ভাবেই সম্ভব হওয়ার ছিলোনা সাঁঝ আর বেলার বিয়ে যেনো এক প্রকার অসম্ভব ব্যাপার তার কাছে তাহলে এর মধ্যে কোনো কারণ আছে তার এই প্রতিক্রিয়ার আর কি হতে পারে সেই কারন? সামাদ সাহেব এখনও সেইরকম হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আজ যেনো তার এই ছেলে চমক এর উপর চমক দিয়েই যাচ্ছে কোথায় তিনি ভেবেছিলেন তার ছেলে তার কথা মত দিশা কে বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেছে কিন্তু কোথায় কি সাঁঝ যে এইভাবে বাজি পাল্টে ফেলবে তিনি ধারণা করেননি সাঁঝের শান্ত থাকার পিছনে যে এইরকম একটা বিস্ফোরণ ঘটানো কারণ থাকতে সেটা তিনি ঘূনাক্ষরেও বুঝতে পারিনি।

তবে সাঁঝ তো মাত্রই একটা সামান্য বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে বাকি তো এখনও বড় বড় বিস্ফোরণ ঘটানো বাকি আছে সামান্য এই ঘটনা শুনেই যদি সবার প্রতিক্রিয়া এই হয় তাহলে বাকি গুলো শুনলে কি হবে সবাই কি আর ঠিক থাকবে এটা একটা বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়।

সারা সবার মাঝেই থেকে সরে এসে দিশা দোলা আর তার বাবার পাশে এসে দাঁড়িয়ে যারা এখন পর পর পাশাপাশি দাঁড়িয়ে একভাবে সাঁঝবেলার দিকে তাকিয়ে আছে।

-“অসময়ে বর্ষা কাল হরিণে চাঁটে বাঘের গাল। সারা ওদের পাশে দাঁড়িয়ে বেশ জোরে বলে ওঠে।

সারার কথা শুনে তিনজনে ঘুরে সারার মুখের দিকে তাকায় ভ্রু কুঁচকে সারা ওদের তাকানো দেখে বাঁকা হাসে। সারা ওদের দিকে তাকিয়ে আবারো বলে ওঠে,

-” এই প্রবাদটা নিশ্চয়ই শুনা আছে আহারে কত কি আশা ছিল ঠিক সময়ে এসে অসময়ে বর্ষা কালের মত সব কিছুই ভেস্তে গেলো না আর নিজেদের বাঘ মনে করে সব কিছুই নিজের করায়ত্বে নেওয়ার চেষ্টা ঠিক ওই যে হরিণ এসে গাল চেঁটে দিলো কি কষ্ট না?

-” ওফ ফো আমারই ভুল কষ্ট কেনো হবে দেখেতো মনে হচ্ছে রাগ হচ্ছে আচ্ছা মনে মনে আগুন জ্বলছে না! আচ্ছা এই আগুনে কিছু খাবার তৈরী করা যাবে? সারা বিদ্রুপ করে ওঠে।

সারার কথা শুনে আগুনে ঘি পড়ার মত করে ফুঁসে ওঠে দোলা মির্জা আর দিশা আর সামাদ সাহেব ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে তার মেয়ের দিকে। সারা ওদের তাকানো কে কেয়ার না করে মুখ বাঁকা করে বলে ওঠে,

-“দেখবে আর জ্বলবে লুচির মত ফুলবে। এইতো সবে শুরু।

সারা ওদের দিকে তাকিয়ে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে আবারো ওম বেদ নিশান শান্তা রুহি জাকিয়া সারিফ সবার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে সাঁঝবেলাকে দেখতে থাকে।

-” বিয়ে কি করে হতে পারে ওদের এটা কি করে সম্ভব? না না এটা কিছুতেই হতে পারেনা ওদের বিয়ে হতেই পারেনা, কোনো ভাবেই সম্ভব নয়। দোলা মির্জা নিজের মনে বিড়বিড়িয়ে বলে ওঠে।

-” এই মেয়ে কোথায় থেকে আবার ফিরে এলো সাঁঝের জীবনে আর বিয়ে এটা কিভাবে সম্ভব হতে পারে এটার তো কোনো সম্ভাবনা থাকার কথা নয় বেলার তো এতদিন শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল তাহলে কিভাবে ফিরে এলো সাঁঝের জীবনে? দোলা মির্জা একভাবে নিজের মনে কথা বলতে থাকে।

দোলা মির্জা তার শকুনের দৃষ্টি দিয়ে বেলার দিকে দেখতে থাকে কিভাবে সাঁঝের সাথে দাঁড়িয়ে আছে যেনো তিনি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেনা তার সব প্ল্যানে পণ্ড করে দিয়েছে এটা ভাবতেই যেনো তার সারা শরীরে রাগের অগ্নিসংযোগ ঘটছে। আর দিশা তো কাঁদো কাঁদো চেহারা নিয়ে বেলা সাঁঝ কে দেখে যাচ্ছে কিভাবে দুইজন একে অপরের সাথে জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে ওখানে তো তার থাকার কথা ছিল কিন্তু এই মেয়ে কোথায় থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসার মত তার জায়গা নিয়ে নিলো?

চলবে…?

ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন..। নিজেদের মতামত জানাবেন ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here