#তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায়
#সিজন_০২
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
৪২.
সাঁঝ ধীর পায়ে এগিয়ে বারান্দার দিকে, বেলার পাশে ঘেঁষে দাঁড়িয়ে চোখ স্থির করে সামনে নিস্তব্ধতায় কেটে যায় কয়েক মুহূর্ত তারপরেই সাঁঝ তার মাথা ঘুরিয়ে চোখ স্থির করে বেলার মুখের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করে বেলাকে যে এই মুহূর্তে চুপচাপ হয়ে দাঁড়িয়ে দূরের দিকে তাকিয়ে আছে তবে তার মুখে ফুটে আছে একরাশ অভিমানের ছাপ যেটা চেষ্টা করেও সরিয়ে ফেলতে পারেনি মুখ থেকে, সাঁঝ বেলার মুখের অবস্থা দেখে নিঃশব্দে হাসে সে জানত এমনি কিছু হবে কারণ তার রানী যে বড়ই অভিমানীনি।
-“বেলা! মৃদু আওয়াজে ডেকে ওঠে সাঁঝ।
সাঁঝের নরম কন্ঠস্বর শুনেই বেলা অদূরে থেকেই চোখ ফিরিয়ে সাঁঝের দিকে দৃষ্টি নিবন্ধ করে চোখের কোণে ফুটে উঠছে আসতে আসতে বিন্দু বিন্দু অশ্রুকনা। সাঁঝ বেলার মুখের দিকে তাকিয়ে একহাত বাড়িয়ে টেনে নেয় নিজের বুকের উপর বেলাকে, চেয়ে ও বেলা উপেক্ষা করতে পারেনা এই বন্ধন। তাদের এতদিন বিয়ের বয়েস হয়ে গেলেও তা আজ সমাজের সামনে স্বীকৃতি দিলো যদিও এই নিয়ে কোনো মাথা ব্যথা কখনই ছিলোনা বেলার কারণ সমাজের স্বীকৃতি কি সেটা বড় কথা আসল মানুষটি তার কাছে বড় সেই যদি তার কাছে না থাকে তাহলে স্বীকৃতি নিয়ে কি করবে আর এতদিনের জমে থাকা রাগ কমে গেলেও অভিমান যে সেই একই আছে যা একটু একটু গলে গেলেও অবশিষ্ট এখনও বেঁচে আছে এত বছরের অভিমান কি এত সহজেই ভেঙে যাবে।
-“বেলা সুইটহার্ট ।
সাঁঝের ডাকে মাথা উঁচু করে তাকালে সাঁঝ দুই হাতের মাঝে বেলার মুখটা তুলে ধরে তার মুখের সামনে।
-” আমি জানি তোমার মনে এখন কি চলছে অনেক প্রশ্নরাই তোমার মনে উঁকি দিয়ে যাচ্ছে। তবে আমি প্রমিশ করছি কাল সকালের পর থেকে তোমার আছে সব কিছুই পরিষ্কার হতে শুরু করবে কেনো কিসের জন্যে তোমার আমার এই বিচ্ছেদ ছিল কেনো এতদিন আমি তোমাকে দূরে রেখেছিলাম নিজের থেকে। সাঁঝ মোলায়েম কন্ঠে বলে ওঠে বেলার কপালে কপাল ঠেকিয়ে ।
-“আমি তোমাকে ভুল বুঝিনি সাঁঝ তবে তোমার আমাকে ভুল বুঝিয়ে রাখাটা আমাকে কষ্ট দিয়েছে তোমার শীতল নির্বাক দৃষ্টি আমাকে জ্বালিয়ে দিয়েছে তোমার নির্লিপ্ততা আমাকে শেষ করে দিয়েছে এত বছর। কান্না ভাঙা গলায় বলে ওঠে বেলা।
-” আমি জানি সুইটহার্ট। সাঁঝ ধীর কন্ঠে বলে ওঠে।
-” আমি ওই মহিলার কোনো কথায় কোনো কিছুই বিশ্বাস করেনি তোমার এমন পাথর ও কঠিনতার জন্যে আমি চলে গিয়েছিলাম ভুলে থাকতে চেয়েছিলাম কিন্তু তা দাওনি প্রতিটা মুহূর্ত আমাকে তুমি তোমার কথা মনে করিয়ে গেছ। বেলা কান্না সিক্ত গলায় বলে ওঠে।
-” তুমি যেখানে আমার সেখানে আমি কি করে তোমাকে আমার কথা ভুলে থাকতে দেই বলো তুমি?
-” আমি অনেক কষ্ট পেয়েছি সাঁঝ। তুমি আমাকে খুব কষ্ট দিয়েছো। বেলা বলে ওঠে ।
-“আমি জানি সুইটহার্ট, তবে এবার তোমার সব কষ্ট আমি ভুলিয়ে দেবো আমার ভালোবাসা দিয়ে আর তারপরে কাল সকাল থেকে অনেক কিছুই হতে শুরু করবে যার দরুন তোমার কষ্ট দেখবে হাওয়া হয়ে গেছে। সাঁঝ গম্ভীর কন্ঠে রহস্যময় ভঙ্গিতে বলে ওঠে।
-” ম্যাডিকে তুমি কি করেছ সাঁঝ? বেলা হঠাৎ করেই প্রশ্ন করে ওঠে।
বেলার প্রশ্ন শুনে সাঁঝের মুখে বাঁকা হাসি ফুটে ওঠে, সাঁঝের আর বুঝতে বাকি থাকেনা সে বেলার কাছে ধরা পড়ে গেছে। বেলার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বলে ওঠে,
-” তোমার কি মনে হয় কি করতে পারি আমি?
-“তারমানে ওকে তুমি.. ।
বেলা বিস্ময় নিয়ে বলে ওঠে তবে কথার মাঝেই সাঁঝ বেলাকে থামিয়ে দেয়। কঠিন হয়ে বলে ওঠে সাঁঝ,
-“সাড়ে চার বছর ধরে ওকে সহ্য করে গেছি এটাই কি অনেক নয় আমার জন্যে?
সাঁঝের প্রশ্ন শুনে খানিকটা হতচকিত হয়ে যায় বেলা তারপরেই মুখে ফুটে ওঠে মৃদু হাসি। সে নিজেও জানে গোয়া যাওয়ার পর থেকে ম্যাডি নামের ছেলেটা সবসময় তাকে বিপদের ফেলার চেষ্টা করেছিলো তবে বেলা সব দিকে থেকেই নিজেকে সেফ করে নিত তার সাথে ছিল সাঁঝের নিবন্ধতা প্রতিটা মুহূর্ত বেলার উপর সাঁঝের কড়া নজর থাকতো তার লোকেরা সব সময়ে বেলার আশে থাকতো প্রটেক্ট করার জন্যে যেটা বেলারও অজানা ছিলনা সাঁঝ যে তাকে প্রতি মুহূর্তে নজরে রাখত এটা জানার পর সাঁঝের উপরে রাগ আর অভিমানটা আরো জাকিয়ে বসতো একটু একটু করে।
-“বেলা… ।
সাঁঝের ডাকে বেলা তার ঘোরে থেকে বেরিয়ে আসে দেখে এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে মানুষটা কেমন গভীর ভাবে বেলা ওই চোখের দিকে তাকাতেই বেলার সারা শরীর শিরশির করে কেঁপে ওঠে।
-” আজ আমাদের বিয়ের পাঁচ বছর পূর্ণ হয়েছে যদিও আমাদের সাথে থাকা কয়েকদিনের। সাঁঝ কিছুটা বলেই থেমে যায় বেলার মুখের দিকে তাকিয়ে।
তবে সাঁঝকে আর কোনো কথা বলতে না দিয়েই বেলা আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ধরে সাঁঝকে। বেলা জানে এই মানুষটা তাকে কতটা ভালোবাসে আর এখনও কিছুটা হয়তো কষ্ট পাচ্ছে তাকে কষ্ট দেওয়ার জন্যে তবে বেলা এই কষ্ট পেতে দেখতে পারবে না। তাকে বকুক মারুক যায় করুক না কেনো তবু সে হাসি মুখে মেনে নেবে কিন্তু এই মানুষটার কষ্ট সে দেখতে পারবে না। সাঁঝ ও আর কোনো কথা না বলেই বেলাকে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে থাকে। বাইরের হালকা বয়ে যাওয়া হাওয়ায় বেলার চুল এলোমেলো হয়ে যায় সাথে শরীরে শীতলতা বয়ে যায়। তবে একে অপরের সাথে মিশে থাকে একে অপরের শরীরে ওমে এই শীতলতা কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নিজেদের মধ্যে নিবন্ধ হয়ে আছে দুজনেই। দুজনের মনেই একই যন্ত্রণা কষ্টের মেলা বয়ে যাচ্ছে। তবে সেটা নিজের নিজের মধ্যে রেখে দিয়েছে একে অপরের স্পর্শে সব কিছুর না পাওয়া মিটিয়ে নিচ্ছে মুখে থেকে কোনো শব্দ ব্যবহার না করেও বুঝিয়ে দিচ্ছে নিজেদের মনের কথা।
কত সময় কেটে গেছে জানা নেই, সাঁঝ তার মুখে নামিয়ে এনে এবার বেলার কাঁধে গুঁজে শুষে নেয় বেলার শরীরের মিষ্টি ঘ্রাণ, একহাত ডুবে যায় বেলার চুলের ভাজে আর অন্য হাত বেলার উদরের উপরের ওড়না সরিয়ে স্পর্শ করে যায় উন্মুক্ত উদরে। সাঁঝের এমন স্পর্শে কেঁপে ওঠে বেলা আরো একটু বেশি করে আকড়ে ধরে সাঁঝের বুকের আরো গভীরে ঢুকে যায় বেলা। আসতে সাঁঝের হাত ঘুরে বেড়ায় বেলার শরীরের আনাচে কানাচে আর এতেই বেলা থেকে থেকেই কেঁপে ওঠে যেটা গভীর ভাবে উপভোগ করে সাঁঝ। সাঁঝ বেলাকে কিছুটা উত্যক্ত করার পরেই বেলার মুখের উপরে ঝুঁকে আসে এক হাত ঘাড়ে পিছন শক্ত হয়ে বসে বেলার মুখ তুলে ধরে তার একদম মুখের সামনে ছুয়ে ছুয়ে আছে তাদের অধর বেলা এতক্ষণ চোখ চেয়ে থাকলেও সাঁঝের নেশাগ্রস্ত গভীর চোখের দিকে তাকিয়ে বেলা চোখ চেপে বন্ধ করে নেয় তার শরীরের সমস্ত ভার ছেড়ে দেয় সাঁঝের শরীরে উপরে, তার হাত দুটো আকড়ে ধরে সাঁঝের কোমর আর বুকের কাছের শার্ট, হাতের নখ শার্ট ভেদ করে বিদ্ধ হয় চামড়ায় তবে এত কোনো বিকার হয়না সাঁঝের। ছুয়ে ছুয়ে থাকা অধর আসতে আসতে একে অপরের মাঝে ডুবে যেতে থাকে মিশে যেতে থাকে একে অপরের মাঝে স্পর্শ গভীর থেকে গভীর হতে শুরু করে। ওই অবস্থায় বেলাকে কোলে তুলে নিয়ে রুমের মধ্যে ঢুকে যায় সাঁঝ।
রাতের আঁধারে মিশে যেতে থেকে একে অপরের মাঝে সমস্ত রাগ অভিমান ভেঙে আবারো এক হয়ে ওঠে আজ তারা মেতে উঠেছে তাদের ভালোবাসার পরিণতির পথে পরিপূর্ণ ভাবে মিশে যায় একে অপরের মাঝে এক হয়ে যায় এতদিন অপেক্ষার পর।
কিন্তু এরপরে কি হতে চলেছে রওশন বাড়ি যে ইতি মধ্যেই ঘিরে গেছে কালো নিকশ অন্ধকারে ষড়যন্ত্রের মায়া জালে তাদের এই ভালোবাসার পরিণতি কি হতে চলেছে সব কিছুই ঠিক থাকবে নাকি আবারো ওঠা এই ঝড়ের মাঝে হারিয়ে যাবে সব কিছু?
চলবে…?
ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন..। নিজেদের মতামত জানাবেন ।
(