#তোর আসক্ত❤
#পর্ব – ৪
#writer_শিফা_আফরিন_মিম
🍁
রুমে কারো আসার শব্দ পেয়ে রুপসা একটু নড়েচড়ে বসে। ভয়ে যেনো তার দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। নিশ্বাস টাও যেনো ঘন হয়ে আসছে।
অনেকখন পরও কারো কোনো সারা না পেয়ে রুপসা মাথাটা একটু উঁচু করে দেখে আয়ান সোফায় বসে আছে। চেহারায় তার স্পট রাগের ছাপ। রুপসা অনেক ভয় পেয়ে যায়। ভয়ে আয়ান কে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আয়ান ঝড়ের গতিতে রুপসার কাছে এসে তার হাত টা পিঠের সাথে মোচড়ে ধরে।
রুপসা ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠে।
আয়ান – তোর দেখছি রংয়ের শেষ ছিলো না। আমার ভেতরে আগুন ধরিয়ে তুই ঐ ছেলে গুলোর সাথে সেলফি তুলছিলি?
রুপসা – বিয়ের দিন সবাইতো চায় বর বউ দের সাথো ছবি তুলতে। তাতে ক্ষতি কী? — বলার সাথে সাথেই আয়ান রুপসার গাল টা খুব জোরে চেঁপে ধরে।
আয়ান – ক্ষতি কী তাইনা? তোকে কত বার বারন করেছিলাম বিয়েটা করিস না। আমাকে মুক্তি দিলে তোরই ভালো হতো বুঝছিস। এবার যে তোকে সারা টা জীবন কষ্টে কাটাতে হবে। তার জন্য শুধুমাত্র তুই দায় বুঝেছিস।
রুপসা কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। সে মনে করেছিলো আয়ান হয়তো শুধরে গেছে। এই ছয় দিনে একবারও রুপসার সাথে খারাপ ব্যাবহার করেনি। এমনকি দেখাও করেনি।
কিন্তু আজ আয়ান ঠিকই নিজের আসল রুপটা দেখিয়ে দিয়েছে। রুপসার চোখে মূহুর্তেই পানি চলে এলো।
আয়ান রুপসার গাল টা ছেড়ে দিয়ে তার পাশে ধুপ করে বসে পড়ে। রাগে যেনো আয়ানের সারা শরীর কাঁপছে। অগ্নদৃষ্টিতে রুপসার দিকে তাকাতেই রুপসা চোখ নামিয়ে নেয়।
আয়ান রুপসার ঘোমটা টা একটানে খুলে ফেলে এগিয়ে যেতেই রুপসা পিছিয়ে যায়। ভয়ে যেনো তার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।
আয়ান রেগে রুপসাকে একটানে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। তারপর নিজের সমস্ত রাগ রুপসার ঠোঁটে ঝাড়ছে। রুপসা প্রানপনে চেষ্টা করছে আয়ানের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়াতে কিন্তু পারছে না। আয়ান তাকে আরও চেঁপে ধরে ঠোঁট কামড়ে ধরে।
এবার রুপসা ব্যাথা সহ্য করতে না পেরে আয়ানকে এলোপাথাড়ি কিল ঘুষি দিতেই থাকে। কিন্তু তাতে আয়ানের বিন্দু মাত্র পরিবর্তন নেই। সে আগের মতোই রুপসার ঠোঁটে কামড় দিয়ে যাচ্ছে। রুপসাও একসময় ক্লান্ত হয়ে ছোটাছুটি করা বন্ধ করে দেয়।
বেশ সময় পর আয়ান রুপসাকে ছেড়ে দিয়ে খাট থেকে নেমে যায়। রুপসার ঠোঁট থেকে রক্ত বের হচ্ছে তা সে ভালো করেই বুঝতে পারছে। রুপসা নিজের ঠোঁটে চেঁপে ধরে কেঁদেই যাচ্ছে তাতে আয়ানের বিন্দু মাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই।
আয়ান – ন্যাকা কান্না বন্ধ করে খাট থেকে নেমে আয়।
রুপসা – ম মানে?
আয়ান – তুই কী ভেবেছিস তোকে আমার সাথে বিছানায় শুতে দিবো?
রুপসা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আয়ানের দিকে। একটা মানুষ এতোটা নির্দয় কিকরে হতে পারে!
রুপসা – তাহলে আমি কোথায় শুবো?
আয়ান – জাহান্নামে যা তাতে আমার কী? কিন্তু আমার বিছানায় শুতে পারবি না এটাই চাই।
রুপসার চোখ দুটো আবারও ভিজে আসছে। আয়ান এতোটা কষ্ট দিবে ভাবতে পারেনি। এখনো পর্যন্ত তার ভুল টা কী সেটাই জানতে পারলো না!
আয়ান রুপসার হাত ধরে টানতে টানতে বেলকনিতে নিয়ে যায়।
হাতে করে একটা চাদর আরেক টা বালিশ নিয়ে যায়। বেলকনিতে রুপসাকে দাড় করিয়ে চাদর আর বালিশটা ছুড়ে মারে রুপসার দিকে। তারপর বেলকনির দরজা টা লাগিয়ে সেখান থেকে চলে আসে।
রুপসা বেলকনিতে বসে পড়ে। চোখের পানি জেনো বাঁধ মানছে না আজ!
আয়ন বেলকনির দরজা টা লাগিয়ে দিয়ে সোজা ছাদে চলে যায়। ইচ্ছে করছে সব কিছুই আবার আগের মতো করে দিতে। হ্যা সেটাই করবে। সব কিছুই আবার আগের মতোই ঠিক করে দিবে।
প্রায় অনেক রাত পর্যন্ত আয়ান ছাদে থাকে। তারপর রুমে এসে বিছানায় শুয়ে পড়ে। বেলকনিতে যে তার বিয়ে করা বউ আছে সে খেয়াল নেই।
আর রুপসা পুরোটা সময় কাটিয়েছে ভয়ে ভয়ে। বেলকনিতে একা থাকা তো দূরের কথা কোনো দিন কল্পনা ও করেনি এমন কিছু তার সাথে ঘটবে! আজ এই সময়টা হয়তো আয়ানের সাথে বেলকনিতে বসে কাটানোর কথা ছিলো! দু’জন একসাথে বসে রাতের আকাশ উপভোগ করতো সাথে কফি হলেও মন্দ লাগতো না! কিন্তু কি ভাগ্য তার!
ভোরে আজানের শব্দে রুপসার ঘুম ভাঙে। ভাঙলেও উঠে বের হওয়ার মতো ক্ষমতা তার নেই। কারন বেলকনির দরজা টা ভেতর থেকে লাগানো। আর আয়ান হয়তো এখনো ঘুমাচ্ছে তাই দরজা খুলে নি।
রুপসা অনেকখন বসে থাকে বেলকনিতে। কয়টা বাজে তাও বুঝতে পারছে না। হাতের ফোন টাও রুমে। হটাৎ দরজায় কারো নক করার শব্দ পায়। মনে হয় কেউ তাদের ডাকছে। কিন্তু যে এসেছে সে তো আর জানেনা রুপসা ঘরে নেই। থাকলে হয়তো কবেই বাহিরে যেতো। অনেক খন ডাকার হটাৎ বেলকনির দরজা টা খুলে আয়ান।
রুপসা আয়ানের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ঘুমঘুম অবস্থায় আয়ান কে কী মায়াবী লাগছে!
আয়ান রুপসার দিকে একবারের জন্য ও তাকায় নি। সে তাকানোর প্রয়োজন বোধ করে না।
আয়ান – তুমি উঠে রুমে যাও। কেউ এসেছে বোধহয় তোমাকে এখানে দেখলে সন্দেহ করবে। আমি চাইনা আমাদের মধ্যকার কিছু অন্য কেউ জানতে পারুক।
রুপসা উঠতেই আয়ান চট করে বালিশ টা আর চাদর টা হাতে নিয়ে নেয়। যা দেখে রুপসা মুচকি হাসে।
রুপসা – কান্ড দেখো উনার! অন্যদের ভয়ও করে আবার আমাকেও কষ্ট দিবে হুহহহ। রুপসা রুমে এসে দরজা খুলে দিতেই দেখে আয়ানের মা।
রুপসা – মা আসুন।
আয়ানের মা – না মা আসবো না তুমি উঠলে কিনা দেখতে আসলাম অনেক বেলা হয়েছে নিচে আসো না তাই ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম আমার যা ছেলে!
রুপসা আয়ানের মার কথা শুনে সাথে সাথেই ঘড়ির দিকে তাকায়। সত্যিই তো অনেক বেলা হয়ে গেলো!
রুপসা – মা আমি এখনি ফ্রেশ হয়ে নিচে আসছি।
আয়ানের মা হটাৎ খেয়াল করে রুপসার ঠোঁট কেটে ফুলে আছে কিছুটা রক্ত ও দেখা যাচ্ছে।
আয়ানের মা – একি তোমার ঠোঁটে কি হলো? (চিন্তিত হয়ে)
আয়ানের মার কথা শুনে রুপসা একটু ভয় পেয়ে যায় সাথে লজ্জা ও। কি বলবে উনাকে?
রুপসা একবার আয়ানের দিকে তাকিয়ে দেখে সে দিব্যি ফোন টিপছে এমন ভান করে আছে যেনো তার মায়ের কথা গুলো তার কানে পৌঁছায় নি।
রুপসা – মা আসলে আমি কাল রাতে পড়ে গিয়ে ব্যাথা পেয়েছিলাম। আপনি একদম চিন্তা করবেন না। বেশি লাগে নি।
আয়ানের মা – চিন্তা করবেন না বললেই বুঝি চিন্তা হবেনা? ( তুমি লুকালেও আমি ভালো মতোই বুঝতে পেরেছি তুমি পড়ে গিয়ে ব্যাথা পাওনি নিশ্চয় আয়ান কাল তোমাকে মেরেছে।)
রুপসা – মা বললাম তো বেশি একটা লাগেনি। ঠিক হয়ে যাবে দেখবেন।
আয়ানের মা – আচ্ছা নিচে আসো ফ্রেশ হয়ে। আয়ান তুই ও আয়।
আয়ানের মা চলে গেলে রুপসা একটা নীল রংয়ের জামদানি শাড়ি বের করে। ওর নীল রং টা খুবই প্রিয়। বেশির ভাগ কাপড়ই নীল।
আয়ান ফোন টিপেই যাচ্ছে। তারপর ল্যাপটপ টা হাতে নিয়ে কিছু কাজ করে নেয়। আজ অফিসে যেতে পারবে না কারন তার মার করা বারন! এক সপ্তাহ নাকি বাসায় থাকতে হবে আর রুপসাকে নিয়ে ঘুরতে হবে।
যেই মেয়েকে সহ্যই করতে পারে না তাকে নিয়ে কিনা ঘুরতে যাবে! আজ না গেলেও কাল পরশু ঠিকই সে চলে যাবে। তাই আজকের কাজ টা না হয় ল্যাপটপে সেরে নিবে। অনেক খন যাবৎ আয়ান কাজ করে যাচ্ছে।
তারপর রুপসা ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসে।
টাওয়েল দিয়ে লম্বা কালো চুল গুলোর পানি নিচ্ছে।
ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে আয়নায় আয়ানকে দেখে। হটাৎ তার মাথায় একটা দুষ্টবুদ্ধি আসে। টাওয়েল টা ঘাড়ে রেখে চুল গুলো হাতে নিয়ে আয়ানের সামনে গিয়ে আয়ানের মুখের সামনে নাড়তেই ল্যাপটপ সহ আয়ানের মুখেও পানি পড়ে।
আয়ান মারাত্মক রেগে একটা আছাড় মেয়ে ল্যাপটপ টা পাশে রাখে। আয়ানের রাগ দেখে রুপসা কয়েকটা ঢোক গিলে। কেনো যে মজা করতে গেলো এখন তো মনে হচ্ছে এই লোকটা তাকে কাঁচা চিবিয়ে খাবে। ভয়ে রুপসার দম যায় যায় অবস্থা!
আয়ান চোখ গরম করে রুপসার দিকে তাকাতেই স্তব্ধ হয়ে যায়। একে তো মনে হচ্ছে কোনো রাজ্যের পরী! এতো সুন্দর ও মানুষ হয়? আয়ানের জেনো চোখ সরছে না। তার উপর আবার ভেজা চুলের পানি গুলো ফোটা ফোটা পড়ছে।
আয়ান একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রুপসার দিকে। রুপসা ভয় পেলেও এখন আয়ানের তাকানো দেখে বেচারি লজ্জা ও পাচ্ছে। রুপসা লজ্জামাখা মুখ নিয়ে আয়ানের সামনে থেকে চলে যায়। ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাড়ায়।
আয়ান এখনো রুপসার দিকে তাকিয়েই আছে। হটাৎ মনে হলো কোনো এক সুন্দরী মেয়ের জন্য তার ভাইকে হারাতে হলো! সব মেয়েরাই এক!
মূহুর্তেই রাগে আয়ানের চোখমুখ লাল হয়ে গেছে।
আয়ান উঠে রুপসার কাছে যেতেই রুপসা আরও লজ্জা পেয়ে যায়। আয়নায় দিকে তাকাতেই পেছনে আয়ানের রাগি লুক টা দেখে লজ্জা যেনো হাওয়া হয়ে গেলো! এবার ভয়ে মনে হচ্ছে বেচারি কেঁদেই দিবে।
রুপসা – ক কি হয়ে…
কিছু বলার আগেই আয়ান রুপসার ঘাড় থেকে টাওয়েল টা নিয়ে গলায় পেচিয়ে ধরে। রুপসার চোখ গুলো বড় বড় হয়ে গেছে।
রুপসা – ক কি করছেন?
আয়ান রুপসার গলায় আরও পেচিয়ে ধরে টাওয়েল টা এতে রুপসার দম বন্ধ হয়ে আসছে।
আয়ান – আমার কাজে জ্বালাতন করার সাহস তোকে কে দিয়েছে শুনি? আমার কাজে বিরক্ত করিস? বউ হতে চাস আমার? তোর বউ হওয়া বের করবো। নিজে যখন যাবি না তোকে একেবারে মেরেই আমি মুক্ত হবো। (দাঁতে দাঁত চেঁপে)
রুপসা বার বার আয়ানের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়াতে চাইছে কিন্তু পারছে না এদিকে তার দমও বন্ধ হয়ে আসছে।
কিছু সময় পর আয়ান নিজেই রুপসাকে ছেড়ে দেয়। রেগে রুপসার দিকে তাকিয়ে আছে।
রুপসা গলায় হাত দিয়ে কাশতে থাকে। আয়ানকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই এক দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায় রুপসা।
চলবে…